প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ কলকাতা : বর্তমান ব্যস্ত জীবনে সুষম আহার মানে শুধু স্বাস্থ্যকর খাদ্য নয়, এটি পুরো জীবনধারাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু প্রতিদিনের খাবার পরিকল্পনা করা, যেখানে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং ফাইবারের সঠিক ভারসাম্য থাকবে, তা অনেকের জন্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। হার্ভার্ডের টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ (Harvard T.H. Chan School of Public Health) সম্প্রতি এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী ৫টি মূল কৌশল সাজিয়েছেন, যা সুষম আহারকে সহজ এবং কার্যকর করে তোলে।
প্রথম কৌশলটি হল, দিনের খাবারের অর্ধেক অংশ সব্জি এবং ফল দিয়ে ভরাট রাখা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অনুশীলন খনিজ উপাদান এবং ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করে, হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তবে আলুকে সাধারণত স্বাস্থ্যকর সব্জি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “আলুতে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ থাকে, যা দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ করতে পারে। তাই সব্জি নির্বাচনে বিভিন্ন রঙের শাকসবজি ও মৌসুমি ফলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।” দ্বিতীয় কৌশলটি হল, খাবারের থালায় সব্জি ও ফলের অর্ধেক অংশের পাশাপাশি দানাশস্যেরও অন্তত এক তৃতীয়াংশ রাখা। এটি দেহের কার্বোহাইড্রেট চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা ব্রাউন রাইস, কিনোয়া এবং আটা জাতীয় দানাশস্য গ্রহণের পরামর্শ দেন। পুষ্টিবিদ ডা. সুমিতা মিশ্র (Sumita Mishra) বলেন, “দানাশস্য ও শস্যজাত খাবারের সঠিক ব্যবহার দেহের শক্তি উৎপাদন বজায় রাখে এবং হঠাৎ ক্ষুধার অনুভূতিও কমায়।”
তৃতীয় কৌশলটি হলো ভাল মানের তেলের ব্যবহার। খাবারে তেলের গুরুত্ব অনেক, কারণ এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ভিটামিন শোষণ ও চর্বি হজমে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞরা অলিভ, ক্যানোলা, সয়াবিন এবং সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। “তেলের মান ভালো হলে এটি হৃদযন্ত্রের জন্যও উপকারি, পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে,” বলেন পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ডা. অরুণিমা দে। চতুর্থ কৌশলটি হল, সঠিক পানীয় নির্বাচন। দিনে চা, কফি এবং পর্যাপ্ত জল গ্রহণ করা উচিত। দুগ্ধজাত খাবার দিনে দু’বারের বেশি না খাওয়া এবং মিষ্টি জাতীয় পানীয় সম্ভব হলে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত চিনি ও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও মেটাবলিজমের ভারসাম্য বজায় থাকে। ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলেন, “মিষ্টি পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চললে দেহের সুস্থতা অনেকাংশে বজায় থাকে।”
শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল নিয়মিত শরীরচর্চা। শুধুমাত্র ডায়েটের মাধ্যমে ওজন কিছুটা কমানো সম্ভব হলেও, শরীরচর্চার সঙ্গে মিলিয়ে ডায়েট করলে সার্বিক সুস্থতা আসে। হার্ভার্ডের গবেষকরা বলেন, “সুষম আহার এবং দৈনন্দিন ব্যায়াম একসাথে করলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।”
এই ৫টি কৌশল মেনে চললে সুষম আহারের পরিকল্পনা কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদে সহজ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, খাবারকে শুধু পুষ্টিকর হিসেবে দেখা নয়, এটি একটি জীবনধারা হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। ফলমূল, শাকসবজি, শস্য, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর তেলের সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস তৈরি করলে স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি এবং দৈনন্দিন শক্তি সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে। সুতরাং, সুষম আহার শুধু একটি খাদ্য পরিকল্পনা নয়, এটি আপনার জীবনের প্রতিটি দিনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ভিত্তি। আজ থেকেই এই ৫টি সহজ কৌশল অনুসরণ করলে, সুস্থ এবং উজ্জীবিত জীবনধারার পথ খোলা।
ছবি : সংগৃহীত ও প্রতীকী
আরও পড়ুন :




