



জয়ী বিশ্বাস ★ সাশ্রয় নিউজ : সাদা-কালো ছবিতে ধরা পড়েছে এক নিবিড় দৃষ্টির চাহনি। খোঁপা বাঁধা চুল। চোখের ভাষায় কেমন যেন পুরনো দিনের সুগন্ধ। আর এই ছবিগুলো সামনে এলেই নেটমাধ্যমের অনেকেই যেন খুঁজে পান একটাই নাম, সুচিত্রা সেন। আর তারপর থেকেই নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী আরাত্রিকা মাইতি (Aratrika Maity)। ঘটনার সুত্রপাত, তাঁর সদ্য একটি ফটোশুটের কয়েকটি সাদা-কালো ছবি নিয়ে ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়ছে চর্চা। অনেকেই তাঁর অভিব্যক্তিকে তুলনা করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়িকা’ সুচিত্রা সেনের সঙ্গে। যদিও অভিনেত্রী নিজে এই তুলনায় মোটেও খুশি নন। বরং খানিকটা বিরক্ত এবং ব্যথিত হয়ে মুখ খুলেছেন। এক কথায়, তিনি জানিয়ে দিয়েছেন—সুচিত্রা সেন একটাই, তাঁকে অনুকরণ করা যায় না, করা উচিতও নয়। ‘‘আমি যখন কোনও ছবি দিই, দেখছি সঙ্গে সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এতদিন ভাবতাম, মানুষ ভালবাসা থেকে বলছেন। কিন্তু এখন দেখছি, এতে একটা অস্বস্তিকর চাপ তৈরি হচ্ছে। আমি এখন ফটোশুট করলেও ইচ্ছে করে সাদা-কালো ছবি দিচ্ছি না। এই তুলনার জন্যই নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছি,’’ বলছেন আরাত্রিকা।

ছোট পর্দার জগতে আরাত্রিকার জায়গা তৈরি হয়েছে নিজের অভিনয়গুণে। তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আত্মবিশ্বাসী মুখাবয়ব, সংলাপ বলার ধরন এবং চরিত্রে ডুবে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়েছে। কিন্তু সেলিব্রিটির এই যাত্রাপথে একটানা তুলনার বোঝা যেন তাঁকে নানাভাবে আহত করছে।

তিনি বলেন, ‘‘আমার ছবি দেখে যদি মানুষ সুচিত্রা সেনের কথা মনে করেন, সেটা আমার জন্য গর্বের। কিন্তু যখন প্রতিটি ছবির নিচে একঘেয়ে করে বলা হয়, ‘এই তো সুচিত্রার ছায়া’, তখন প্রশ্ন জাগে, আমার নিজস্বতা কোথায়? অভিনেত্রী হিসেবে আমি নিজের জায়গা তৈরি করতে চাই, কোনও আইকনের ছায়ায় নয়।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সক্রিয় আরাত্রিকা। নিয়মিত ফলোয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, পোস্ট করেন কাজ ও জীবনের নানা মুহূর্ত। কিন্তু সম্প্রতি এই তুলনার প্রবণতা তাঁকে কিছুটা দূরে সরে যেতে বাধ্য করেছে। ‘‘ফেসবুক খুললেই এখন একটা আতঙ্ক কাজ করে। আবার যদি কেউ বলেন, আমি মহানায়িকাকে অনুকরণ করছি! অথচ আমি নিজে জানি, সুচিত্রা সেন যা ছিলেন, তা কোনও দিন ছোঁয়া যাবে না।’’

এই প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ ও মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে পরিচিত মুখদের নিয়ে তুলনা নতুন নয়। তবে তা যখন অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে যায়, তখন ব্যক্তি ও তার সৃজনশীলতাকে বাধা দেয়। অভিনেত্রী হিসেবে আরাত্রিকা হয়ত প্রেরণা নিতে পারেন সুচিত্রা সেনের অভিনয় থেকে কিন্তু তাঁর নিজস্ব অভিব্যক্তি, নিজস্ব পরিসর তৈরি করাটাই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, ইন্ডাস্ট্রির মধ্যেও এই তুলনার রেশ টানছেন অনেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক জানান, ‘‘আরাত্রিকার মধ্যে একটা পুরনো দিনের সৌন্দর্য আছে, এটা ঠিক। কিন্তু তাই বলে তাঁকে সুচিত্রা সেনের ছাঁচে ফেলে বিচার করাটা ভুল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমন শিল্পী পাওয়া কঠিন, যাঁরা নিজস্ব অভিব্যক্তি নিয়ে কাজ করেন। তাঁকে স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে দিতে হবে।’’ অন্যদিকে, আরাত্রিকার কথায়, ‘‘আমি শুধু চাই, মানুষ আমাকে আমার অভিনয়ের জন্য মনে রাখুক। আমি যাঁকে শ্রদ্ধা করি, তাঁকে নকল করতে চাই না। আমি চাই আমার একটা আলাদা পরিচিতি হোক। আমি চাই, আমার ছবি দেখে মানুষ বলুক, এটা আরাত্রিকার নিজস্ব অভিব্যক্তি।’’
নেটমাধ্যমে এই তুলনার ঘনঘটা কি থামবে? উত্তরের অপেক্ষায় থাকতেই হয়ত আরাত্রিকা আবার নিজের মতো করে নতুন কিছু সৃষ্টি করবেন এই আশাতেই তাঁর অনুরাগীরা। কারণ, এক মহানায়িকার ছায়া ছুঁয়ে যাওয়া নয়, নিজস্ব আলোয় উদ্ভাসিত হয়েই কোনও শিল্পীর পথচলা সত্যি হয়ে ওঠে।
সব ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Ratan Tata : রতন টাটা একটি অনন্য জীবনের নীরব রূপকথা
