Sasraya News

AI Pregnancy | AI প্রযুক্তিতে মা হওয়ার স্বপ্নপূরণ, ২০ বছরের পরিশ্রমে শেষমেশ ফুটল হাসি

Listen

শিবপ্রসাদ মণ্ডল ★ সাশ্রয় নিউজ : বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) নানা প্রয়োগ ইতিমধ্যেই চমক সৃষ্টি করেছে। তবে সম্প্রতি এমন এক ঘটনা সামনে এসেছে, যা শুধু প্রযুক্তির জয়গানই নয়, একটি পরিবারের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়া এক দম্পতি অবশেষে মা-বাবা হতে চলেছেন। আর এই অলৌকিক ফলের পেছনে রয়েছে এক AI টুলের সাফল্য বলে সূত্রের খবর। এই দম্পতির পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে, তবে জানা গিয়েছে, তাঁদের সন্তান নেওয়ার চেষ্টা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলছিল। IVF (In-Vitro Fertilization) প্রক্রিয়াতেও তাঁরা অন্তত ১৫ বার চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রতিবারই বিফল হন। একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ, চিকিৎসা, পরীক্ষানিরীক্ষা সবই ব্যর্থ হয়। অবশেষে তাঁদের মুখে হাসি ফোটায় এক নতুন AI প্রযুক্তি STAR (Sperm Tracking and Recovery)। এটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Columbia University)।

STAR কীভাবে বদলে দিল ভবিষ্যৎ?

STAR (স্মার্ম ট্র্যাক অ্যান্ড রিকোভারি) একটি উন্নত AI-ভিত্তিক মাইক্রোফ্লুইড টুল, যা বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এর কাজ মূলত পুরুষের বীর্যের মধ্যে থেকে জীবিত শুক্রাণু খুঁজে বের করা, যেগুলো সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এই টুলটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও নিখুঁতভাবে কাজ করে। প্রথম ধাপে, এই যন্ত্র একটি মাইক্রোফ্লুইডিক চিপের সাহায্যে বীর্যের সব উপাদানকে আলাদা করে। এরপর হাইস্পিড ইমেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইক্রোস্কোপিক ফ্রেমে ছবি তোলে। সেখান থেকে AI ভিত্তিক মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম বিশ্লেষণ করে কোন শুক্রাণু জীবিত রয়েছে, সেটি চিহ্নিত করে।

এই প্রযুক্তির সহ-উদ্ভাবক ডঃ মাইকেল টেসলার (Dr. Michael Tesler) কথায়, “আমরা জানতাম যে, অনেক সময় শুক্রাণু এতটাই দুর্বল বা কমসংখ্যক থাকে যে, তা চোখে বা সাধারণ পদ্ধতিতে ধরা পড়ে না। AI সেই জায়গাগুলোতে গিয়ে এমন শুক্রাণুগুলিকে খুঁজে বের করছে যা আগে সম্ভব ছিল না।”

যেখানে মানুষ থেমে যায়, AI এগিয়ে চলে

এই পদ্ধতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল এর দক্ষতা ও গতি। সাধারণত যেখানে একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান দু-তিন দিনেও শুক্রাণু খুঁজে না পেতে পারেন, সেখানে STAR প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ৪৪টি জীবিত শুক্রাণু শনাক্ত করতে সক্ষম। ও সেটিও এমনভাবে, যাতে শুক্রাণুর কোনও ক্ষতি না হয়। এমনই এক নমুনায় এই দম্পতির সমস্যার সমাধান করে STAR। দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর বীর্যে কোনও জীবিত শুক্রাণু ধরা পড়ছিল না। STAR-এর সাহায্যে অবশেষে এমন কিছু শুক্রাণু চিহ্নিত করা সম্ভব হয় যা দিয়ে স্ত্রীকে গর্ভবতী করা সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্যের পর গবেষক দলের আর এক সদস্য ডঃ সামান্থা গ্রিন (Dr. Samantha Green) বলেন, “এই টুল শুধু এক দম্পতির জীবন বদলাল না, বরং ভবিষ্যতে আরও বহু দম্পতির আশার আলো হয়ে উঠবে।”

এক পরিবার, এক প্রযুক্তি, এক যুগান্তকারী গল্প

২০ বছর ধরে নিঃসন্তান এই দম্পতির জীবনে একসময় একরকম অবসাদ নেমে এসেছিল। জীবনের সবচেয়ে গভীর কামনা পূর্ণ না হওয়ায় মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। শেষমেশ প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগের পরামর্শ দেন এক চিকিৎসক। তাতেই খুলে যায় জীবনের নতুন দরজা। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই মহিলা গর্ভবতী ও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। মা ও আগত সন্তান দুজনই সুস্থ রয়েছেন। পরিবারের একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় জানিয়েছেন, “আমরা এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এত বছরের অপেক্ষা শেষে আমাদের পরিবারে নতুন প্রাণ আসছে, এটাই পরম আশীর্বাদ।” এই ঘটনা নতুন করে দেখিয়ে দিল, বিজ্ঞানের অগ্রগতি শুধুমাত্র যন্ত্র-নির্ভর নয়। বরং মানুষের জীবনে বাস্তব আনন্দ এনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা রাখে। AI এখানে শুধুই একটি টেকনোলজি নয়, বরং এক আশাবাদের নাম—যেখানে বিজ্ঞান ও মানবিকতা এক সুতোয় গাঁথা।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Musical Village of Mali | মালির কিরিনার ঘরে ঘরে সঙ্গীতের জন্ম, একটি সুরে বাঁধা গ্রাম

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read