Sasraya News

Wednesday, March 19, 2025

Travel Story : পবিতরার পথে…

Listen

অমরজিৎ মণ্ডল শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। লেখালেখি করতে ভালবাসেন। প্রকাশিত হয়েছে অমরজিৎ-এর একটি হাইকু-এর গ্রন্থ। ঘুরে বেড়ানো তাঁর নেশা। নতুনকে দেখার কৌতুহল তাঁকে ভ্রমণ পিপাসু করে তোলে। তাঁর লেখা একটি ভ্রমণ কাহিনী, সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায়। 

 

পবিতরার পথে…

অ ম র জি ৎ  ম ণ্ড ল

ভারতের উত্তর পূর্ব সীমান্তের মুখ্য প্রবেশদ্বার আসাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য সমৃদ্ধ আসাম সর্বদা পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আবার তার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা আঁকা-বাঁকা ব্রহ্মপুত্র নদ রাজ্যের সৌন্দর্যকে আরও নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ করে তুলেছে। ব্রহ্মপুত্র নদকে আসামের প্রাণকেন্দ্রও বলা হয়। কেননা, এই নদকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক বনানী। গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ইত্যাদি। আর জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্যের কথা বললে প্রথমেই মাথায় ভেসে আসে কাজিরাঙা, মানস প্রভৃতির কথা। আসামের আরও একটা উল্লেখযোগ্য অভয়ারণ্য হল পবিতরা অভয়ারণ্য। আমাদের আজকের ভ্রমণস্থল সেখানেই।

পূর্ব নির্ধারিত নির্ঘন্ট অনুযায়ী সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম গণ্ডারের অবাধ রাজ্যপাট দর্শনে। ব্রহ্মপুত্ৰ নদীর  দক্ষিণ পাড়ে গুয়াহাটী থেকে প্রায় ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত মরিগাঁও জেলার মায়ং গ্রাম। ইতিহাস কথিত কালা জাদু এই মায়ং গ্রামের সঙ্গে জড়িত। তবে সেটা আমাদের ভাবার বিষয় না। এখন আর এমন ঘটনা শোনা যায় না। এই মায়ং এর প্রায় ৩৮ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ‘পবিতরা’ অভয়ারণ্য। এখানে প্রাপ্ত পৃথিবী বিখ্যাত ‘ভারতীয় একশৃঙ্গ গণ্ডার’ পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ। এই অভয়ারণ্যে গণ্ডারের সংখ্যার ঘনত্ব পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অনেক সময় অভয়ারণ্যের বাইরে থেকেও নাকি গণ্ডার দেখা যায়।

আমাদের গাড়ি ব্রহ্মপুত্ৰের পাড় দিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশকে অতিক্রম করে ছুটে চলেছে। কখনও পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা পথ, আবার কখনও বা চিরসবুজ বন জঙ্গল। আবার মাঝে মধ্যে পাহাড়ি ছোট নদী ব্রীজ। সব কিছুকেই পেছনে ফেলে আমরা পৌঁছে গেলাম সেই আকাঙ্খিত পবিতরা অভয়ারণ্যে। চোখে পড়ল দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রাখা অভয়ারণ্যের সেই  প্রবেশদ্বার ও তার আশপাশের প্রকৃতির মনোরম বেশভূষা। প্রাণীবিদ্যার ছাত্র হয়েও কখনও অভয়ারণ্যে যাওয়া হয়নি। জাতীয় উদ্যান বা অভয়ারণ্য শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় পড়েছি। তাই বন্যপ্রাণী ও তার পরিবেশ দেখার আগ্রহ বাকীদের থেকে আমার একটু বেশি। পবিতরা অভয়ারণ্যের কথা আমাদের সম্মানীয় সন্দীপ স্যর বলেছিলেন। ওঁ-নিজেও প্রাণীবিদ্যার ছাত্র। সেই সূত্রে এই বিষয়ে অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। কেননা অনেক গবেষণার কাজে ওঁ-যুক্ত। আর বহুবার এখানে এসেছেন। তাই যেটুকু তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম তা স্যর ও গুগল থেকে। মূল প্রবেশ দ্বারের ঠিক বামদিকে সাফারি বুকিং এর অফিস। অভয়ারণ্যে প্রবেশ করতে হলে বনবিভাগের অনুমতি সাপেক্ষ গাড়িতেই যেতে হবে। আগে থেকে সাফারি বুকিংএর কোনও ব্যবস্থা না থাকায় সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি সাফারি বুক করলাম। ভাগ্য অসম্ভব ভাল না হলে সাফারির টিকিট পাওয়া যায় না।

সাফারি ভ্রমণে ব্যবহৃত প্রত্যেক জিপসিতে সর্বাধিক ছয়জন যেতে পারবে। এই হিসেব আমরা অনুযায়ী তিনটে জিপসি বুক করেছিলাম। আমি মধুমিতা দি ও জেসমিন উঠে পড়লাম মাঝের সিটে। দীপঙ্কর, অনুপ দা ও বুদ্ধদেব দা পেছনের সিটে। সামনের সিটে বসে থাকা বনবিভাগ অনুমোদিত গাইড ও সারথি আমাদের স্বাগত জানালেন। 

আসাম বেড়াব আর কাজিরাঙা সাফারি করব না তা কখনও হতে পারে না। ঠিক এমন ভাবনাই সকলের মধ্যে থাকে। এমন কি আমাদেরও তা-ই ছিল। তবে কিছুটা হলেও ঝুঁকি নিয়ে আমরা এখানে। তাই সবটাই ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিয়েছি। যাই হোক, পবিতরা অভয়ারণ্য নিয়ে দু-চার কথা বলে রাখা যাক। পৃথিবী বিখ্যাত ভারতীয় একশৃঙ্গ গণ্ডারের বিচরণভূমি পবিতরা ১৯৮৭ সালে অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। গণ্ডার ছাড়াও বুনো মোষ, বুনো শূকর এবং গোটা অভয়ারণ্য জুড়ে রয়েছে নানা প্রজাতির বন্যজন্তু ও পাখির বসবাস। গণ্ডার দর্শনের অভিলাষে জঙ্গলের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা দিলাম। মোরাম বিছানো এবড়ো-খেবড়ো পথ দিয়ে জঙ্গলের আড়ম্বরকে সঙ্গে নিয়েই পবিতরায় প্রবেশ করলাম।

__________________________________________

গাইড দেখালেন এক বিশালাকার গণ্ডার।  আপনমনে কিছু খাচ্ছে। আর কিছুতেই নিজেদের উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলাম না। ডাক দেওয়ার কত চেষ্টা করলাম। এবার আওয়াজ আর কানে পৌঁছল না। কারণ অনেক দূরে ছিল গণ্ডারটি ।গাইড ব্যাপারটা জানেন, তাই আমাদের বারণ করলেন না

__________________________________________

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজের বর্ণময়তায় আমরা অভিভূত। অরণ্যের প্রতিটি ভাঁজে চির সবুজ ধরা দিচ্ছে। এদিকে মধুমিতা দি তাঁর নিজের কাজে ব্যস্ত। সেলফি তোলায় ব্যস্ত। যেটা সে হামেশাই করে থাকে। সত্যি কথা বলতে খুব ভাল সেলফিও তোলে। তাই তো তাকে আমরা সেলফি ক্যুইন বলেই ডাকি। কিছুটা এগোতেই হঠাৎ জিপসি থামল। প্রায় হুমড়ি খাওয়ার মত অবস্থা। কিছু বলতে যাব এমন সময় বাম দিকে তাকাতে বললেন গাইড। গাড়ি থেকে প্রায় কুড়ি মিটার দূরে উঁকি মারছে পবিতরার শাহেনশা। অত কাছ থেকে গণ্ডার দেখে আমরা ভীষণ উত্তেজিত। উচ্ছ্বাস ধরে রাখা কোনও মতেই সম্ভব না। হৈ-হট্টগোল না করার জন্য সতর্ক করলেন গাইড, 

-কেউ গাড়ি থেকে নামবেন না বা গণ্ডারকে বিরক্ত করবেন না।

তবে বেশ কিছু ছবি তোলার সুযোগ দিলেন গাইড। আর তাতেই মধুমিতা দি’র সেলফি তোলা বন্ধ করে গ ণ্ডারের ছবি তোলা শুরু। আমিও ছবি তোলার পাশাপাশি কিছুক্ষণের ভিডিও করে মুহূর্তকে ক্যামেরা বন্দী করলাম। আমরা উসখুশ করছি আরও একটু কাছ থেকে দেখার জন্য। গাড়ি থেকে নামতে যাব এমন সময় গাইড আবারও সতর্ক করলেন। এরই মধ্যে মধুমিতা দি বলে উঠল, 

-গণ্ডারটা মনে হয় মারা গেছে। দেখ্ কোনও  নড়াচড়া করছে না।

এই বলেই মধুমিতা দি একটু ডাক দেওয়ার চেষ্টা করল। ঠিক তখন গাইড এবার রেগে গিয়ে

-এভাবে ডাক দেবেন না। আগেও বলেছি আপনাদের। যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। ও-ঘুমাচ্ছে। দূর থেকেই দেখুন। এর আগে কত ঘটনা ঘটেছে।

গণ্ডার বলতে এতদিন জেনে এসেছি প্রচণ্ড মারমুখী পশু। সুযোগ পেলেই খড়্গ বাগিয়ে ধেয়ে আসে। আর তারপর কি হয় না বলাই ভাল। তাই আমরা সকলে নিশ্চুপ। এত অল্প সময়ের মধ্যে যে গণ্ডার মহোদয়ের দর্শন পাব তা ভাবা অকল্পনীয়। এমন সময় গণ্ডারটা নড়েচড়ে উঠল। মনে হয় আমাদের সব কথা শুনতে পেয়েছে। বুঝলাম, গণ্ডারের চামড়া মোটা হলেও কান খুব তীক্ষ্ণ। এবার উঠে দাঁড়াল। তার ভয়ানক দৃষ্টি আমাদের উপর পড়ল। যাতে কোনও বিপদ না আসে সেই জন্য গাইড চালককে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দিলেন। আবার চলা শুরু। ছেড়ে আসতে একটুও ইচ্ছে করছিল না। আমরা জঙ্গলের মেঠো পথ দিয়ে এগিয়ে চললাম। পার হলাম একটা ছোট নদী। যদিও নদীতে কোনও জল ছিল না। গাইড জানালেন  বর্ষাকালে প্রচুর জল থাকে এই নদীতে। তখন সাফারি ভ্রমণ বন্ধ থাকে। গুগলে পড়েছিলাম, পবিতরায় গণ্ডার দেখতে পাওয়ার সুযোগ একশো শতাংশ থাকে। যাত্রা শুরুর প্রায় পাঁচশো মিটারের মধ্যে গণ্ডার দর্শন তা-ই প্রমাণ করল।

সবুজের সমারোহ, পাখির কলতান ও রংবাহারি ফুল দেখে মনে হচ্ছে গভীর জঙ্গলের দিকে আমরা এগোচ্ছি। রাস্তার দু’পাশে ঝুঁকে থাকা অরণ্যকে ভেদ করে ছুটে চলল আমাদের জিপসি। খানিকটা যেতেই মনে হল যে, জঙ্গলের চেহারাও যেন হঠাৎ পাল্টে গেল। বন্য পরিবেশের নির্জনতাকে বাড়িয়ে জঙ্গলের গভীরে আমরা  প্রবেশ করলাম। সূর্যের আলো এখানে ঠিক মত পৌঁছয় না। তাই গাছের ফাঁকের তীর্যক মৃদু আলো পরিবেশকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। মাঝেমধ্যে কোনও অজানা শব্দে গা শিউরে উঠছে। ভয় পাচ্ছি না বললে ভুল হবে, তবে গাইডের ভরসায় পরিবেশটাকে অনুভব করার সুযোগও পেয়ে যাচ্ছি। 

জঙ্গলের যত গভীরে প্রবেশ করছি ততই সরু হচ্ছে রাস্তা। সারথি আবার গাড়ি থামালেন। গাইড আবারও দেখালেন এক বিশালাকার গণ্ডার। আপন মনে কিছু খাচ্ছে। আর কিছুতেই নিজেদের উত্তেজনা চেপে রাখতে পারলাম না। ডাক দেওয়ার কত চেষ্টা করলাম। এবার আওয়াজ আর কানে পৌঁছল না। কারণ অনেক দূরে ছিল গণ্ডারটি। গাইড ব্যাপারটা জানেন, তাই আমাদের বারণ করলেন না। গুমোট জঙ্গলের গা ছমছমে রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ ও বন্য পরিবেশের নির্জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আবার এগিয়ে চললাম আমরা।

অবিরাম পাখির কুজন ও আমাদের গাড়ির শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে পেছন থেকে গান জুড়লেন অনুপ দা, “আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলি রে / অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…”।অনুপ দা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র। আঞ্চলিক গানে খুব ভাল দক্ষতা। গভীর এই ঘন জঙ্গলে ডুবতে যাতে না হয় এবং ঠিক কূলকিনারা খুঁজে পাই সেই আশাতেই আমরাও তালে তাল মেলালাম। ছবি তোলায় কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকায় পুরো রাস্তা জুড়ে চলতে থাকল আমাদের ভিডিও রেকর্ডিং ও সেলফি। এভাবেই আমরা প্রায় এক কিলোমিটার ঘন জঙ্গল পেরিয়ে এলাম। সময় যে কীভাবে কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। অনেকক্ষণ বাদে সূর্যের মুখ দেখতে পেলাম। জঙ্গলের প্রতিটি ভাঁজে লুকনো রহস্যময়তা থেকে বেরিয়ে এসে এবার চোখে পড়ল নিঃসঙ্গ ফাঁকা মাঠ। রাস্তার দু’ধারে ছোট বড় কোনও গাছেরই চিহ্ন নেই। প্রকৃতি এখানে যেন চরম নিষ্ঠুর। কিছু দূর এগোতেই গাড়ির চাকা আবার থমকে গেল। সামনে দেখি আমাদের আগের দুটো জিপসি দাঁড়িয়ে আছে। সূর্য্যি মামা ততক্ষণে ঠিক মাথার উপরে। এবার একটু গরম অনুভব হচ্ছে। তাই একটু জল খেলাম। এখানে কোনও বাধা না থাকায় গাড়ি থেকে নামলাম। কাছাকাছি জীবজন্তুর বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। স্বাভাবিকভাবে বিপদও নেই। চারিদিকে  মাঠ আর মাঠ। আমাদের আগের গাড়ির দাদাদের সঙ্গে দু’চার কথা সেরে নিলাম। তাঁদের এই সময়ের সফর কেমন ছিল খোঁজ নিলাম। এদিকে মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অস্থিরতাও কাজ করছে। এত দূর থেকে এসে মাত্র দুটো গণ্ডার দেখব, এমনই চিন্তা ভাবনার মাঝে গাইড দৃষ্টি আকর্ষণ করে দূরে কিছু দেখার কথা বললেন। চোখ ঘোরাতেই দেখি এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য। কিছুটা দূরে গণ্ডারের রমণীয় বিচরণভূমি। এতক্ষণ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলাম। এখন তার ক’য়েকগুণ বেশি সংখ্যক গণ্ডার। চোখ বিশ্বাস করতে পারছে না। আমাদের ওখানে যেমন গরু, ছাগল ইত্যাদি চরে এখানে ঠিক গণ্ডারও তার শাবক। আমরা সকলেই বাকরুদ্ধ। স্বভাবতই আমরা বেশ উত্তেজিতও। বিখ্যাত কাজিরাঙ্গাতেও এত গণ্ডার একসঙ্গে দেখা যায় কিনা সন্দেহ। আরও কাছ থেকে দেখার উদ্দশ্যে কিছুটা এগোতেই গাইডের বাধা এল। একমাত্র বনবিভাগের কর্মীদের অনুমতি আছে সেদিকে যাওয়ার।

ঘড়িতে প্রায় দু’টা বাজে। গাইড জানালেন, আমাদের সাফারি ভ্রমণ শেষের দিকে। এবার ফিরতে হবে। আমাদের গণ্ডার দর্শন করাতে পেরে গাইডও কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। আর আমাদের ভ্রমণও বিফলে গেল না। যতটা আশা করেছিলাম, তার থেকেও অনেক বেশি পেলাম। আজ বইয়ের পাতায় দেখা স্বপ্নের ইচ্ছেপূরণ হল। একে একে আমরা সবাই জিপসিতে উঠলাম। এবার ফেরার পালা। ভাবলাম, ওই একই পথে ফেরা হবে। আবার দেখা হবে সেই গণ্ডারগুলির সঙ্গে। কিন্তু তা আর হল না। একরাশ উত্তেজনা নিয়ে নির্জন মেঠো পথ ধরে এগিয়ে চললাম। কিছুটা যেতেই চোখে পড়ল রাস্তার দু’ধারে বুনো মোষদের রোদ পোহানো। সবুজ ক্ষেত ও নিঃশব্দ প্রকৃতির মাঝে পাখিদের কুজন শুনে আবার সেই বসুন্ধরার কোলে ফিরে এলাম। 

নগরজীবন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বন-জঙ্গলের রহস্যময় ধূসর মেঠো পথ ছেড়ে যেতে কিছুতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। সাফারি ভ্রমণের সময় সীমিত। মন এখন বিষণ্ণ। এমন সময় চালক গাড়ি থামিয়ে বললেন, আমরা পৌঁছে গিয়েছি। এখানেই সাফারি ভ্রমণ শেষ। ভাল থাকবেন। যাওয়ার সময় জিপসিতে কোনও ছবি তোলা হয়নি। তাই বিষন্নতা কাটানোর জন্য জিপসিতে কিছু ছবি তুললাম। কখনও দাঁড়িয়ে, আবার কখনও চালকের সিটে বসে স্টিয়ারিং হাতে। এবার একে একে গাড়ি থেকে সবাই নামলাম। এরপর চালক ও গাইডকে কিছু বকশিস্ দিয়ে সাফারি ভ্রমণের ইতি টানলাম।

দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল ছুঁই-ছুঁই। সেই সকালে চা ও বিস্কুট খেয়েছিলাম আর মাঝে ক’য়েকবার জল। এখন পেটে ইঁদুরের দৌঁড়া-দৌঁড়ি শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই আর দেরি না করে দুপুরের খাবার রাস্তার পাশে এক হোটেলে সারলাম। খাওয়া শেষ করেই পবিতরার মূল প্রবেশ দ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। দেখার বিশেষ কিছু নেই এখানে। অফিস ও কিছু তথ্য মূলক বোর্ড। সামনেই চোখে পড়ল লোহার ব্রীজ। খুব বড় না হলেও খুব ছোটও না। আমি তো ছুটলাম ব্রীজের দিকে। কোনও মুহূর্তেকে ছাড়া যাবে না। দেখার বিশেষ কিছু না থাকায় অনেকেই এল না। আবার অনেকে ক্লান্ত। ব্রীজের উপর থেকে নদীর অপরূপ দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করলাম। পবিতরা ছেড়ে এবার ঘরে ফেরা। একরাশ রঙিন স্মৃতি নিয়ে আমরা মায়ং গ্রাম ত্যাগ করলাম। 

👉 কীভাবে যাবেন? 

কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে গুয়াহাটি পৌঁছে যাবেন। প্রাইভেট গাড়ি বুক করে সোজা অভয়ারণ্য। আগে থেকে সাফারি বুক করার ব্যবস্থা নেই। বর্ষাকালে সাফারি ভ্রমণ বন্ধ থাকে। শীতকাল উত্তম সময়।

ছবি : লেখক 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment