The Heart Stone | Rabindranath Tagore : ‘দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা’

SHARE:

হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় : আজ ২৬ জুন বিশ্বের ইতিহাসে একটি অভিশপ্ত দিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজের- হাতে – গড়া একমাত্র ভাস্কর্য—পাষাণহৃদয় (The Heart Stone) – নিলামে উঠবে। ফেসবুকের দৌলতে এই খবরটিও নিলামে উঠছে একথা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। আমি খুব সাধারণ মেধার একজন মেয়ে, তাই বোঝার ক্ষমতাও খুব সাধারণ। আমার সাধারণ বুদ্ধিতে কিছু প্রশ্ন রাখছি, আশাকরি বিদ্বজ্জনেরা এর উত্তর দিতে সক্ষম হবেন।

১. ১৮৮৩-এর অক্টোবর-নভেম্বরে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের সমুদ্র পর্বতময় কারোয়ারে যখন বাইশ উত্তীর্ণ রবীন্দ্রনাথ সপরিজন ভ্রমণ করেছিলেন সেইসময়ে একটি কোয়ার্টজাইট পাথরকে হৃদয়াকারে কেটে এর উপরে কাদম্বরীকে লক্ষ্য করে রচিত একটি চতুষ্পদী কবিতা খোদাই করেন—
” পাষাণ হৃদয় কেটে
খোদিনু নিজের হাতে
আর কি মুছিবে লেখা
অশ্রুবারিধারাপাতে(?)

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনস্মৃতিতে মৃত্যুশোকে নিজেই যা লিখছেন তাতে করে এটাই একমাত্র স্মৃতি হিসেবে তুলে না রেখে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এত বড় স্মৃতিটা হস্তান্তরের কারণ খুব স্পষ্ট হল না। তবুও হস্তান্তর হয়েছে একথা প্রমাণিত। সুইসাইড নোটের মোচ্ছব তো খুব সাধারণ বিষয় সেখানে। এই নোংরা কথাগুলোর সিকিতম কোনো ভিত্তি,কোনো প্রমাণ ছাড়া নিশ্চিত লেখা হয়নি। আর যদি হয়েও থাকে এদেশের মানুষ নিশ্চিত পাঁচ লক্ষ কপি কিনে তাঁকে সিংহাসনে বসিয়েছেন। কেন তাঁকে বিদ্বজ্জনেরা এসে লেখকের আসন থেকে টেনে নামালেন না।?

 

এবার যাঁরা কবি অথবা সাহিত্যিক বলুন তো এই লেখাটির অর্থ আপনাদের কাছে কী খুব কষ্টসাধ্য মনে হচ্ছে! নিশ্চিত নয়। এর অর্থ এটা নিবেদন ধরে নিতেই পারি। আশাকরি একমত হবেন। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষ ছিলেন।

২. এর গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কেন? ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাইয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বধূরূপে কাদম্বরী যুগপৎ জোড়াসাঁকোয় এবং রবীন্দ্রনাথের জীবনে আবির্ভূত হওয়ার পর তখন থেকেই দু’জনের যে- সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেই সম্পর্ক ১৮৮৩ -এর অক্টোবর-নভেম্বরে প্রায় শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছিল, যেহেতু ১৮৮৩ -এর ডিসেম্বরে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হবে এবং ১৮৮৪ -র এপ্রিলে কাদম্বরী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উপর অভিমান করে আত্মহত্যা করবেন। এই লেখাটির লেখক অন্তত তাই লিখেছেন।

এবার আপনাকে আমার প্রশ্ন— আপনার লেখায় উঠে এসেছে বৌঠান ও রবীন্দ্রনাথের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সেটা তলানিতে ঠেকেছে এটাও আপনি নিশ্চিত করে বলছেন! খুব ভালো। এরপর শেষ লাইনে এসে জ্যোতিদাদার কোর্টে বল ফেলে দিলেন। দোষী তাহলে কে? মানে কার দোষ বলে আপনি ভাবছেন বা আর পাঁচজনকে ভাবতে বাধ্য করছেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর না জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। কারণ আপনি যুক্তি দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে! কিন্তু কী সেই সম্পর্ক! এটাও মানুষের মনে প্রশ্ন উঠবে তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অতি সন্তর্পনে দোষী সাব্যস্ত করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে জ্যোতি দাদাকে মূল আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। বেশ ভালো। আর ফেসবুকের মানুষ ধন্য ধন্য করলেন। মাঝখান থেকে রঞ্জনবাবু কিছু গালিগালাজ খেলেন। যদিও তাঁর স্বপক্ষে কোনো কথা বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। কারণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত এত বড় দার্শনিক আমার তো মনে হয় না জন্মেছেন বলে।পরবর্তীতে আপনার যুক্তি দাঁড়াল এই যে কাদম্বরী দেবীর এ বিষয়ে কোনো সাড়া ছিল না। ব্রহ্মবান্ধবের পরিভাষায় এটা হল ‘an unrequited love.’ মেনে নিলাম। তাহলে আপনার পরিভাষায় যেটা দাঁড়াল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভালোবাসা ছিল একপক্ষের অর্থাৎ খুব লজিক দিয়ে বলতে হয় তিনি এই মহিলার ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করেছিলেন! তাহলে এক্ষণে প্রমাণিত হল রবীন্দ্রনাথ অন্তত প্রেমিক ছিলেন দেবতা নয়। এবং খুব সঙ্গত কারণেই তিনি কাদম্বরী দেবীকে ‘পাষাণী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তারমানে এখানে আপনি বলতে চাইলেন কাদম্বরী দেবী রবিঠাকুরের সাহচর্য চাননি। কিন্তু সাহচর্যের আবেদন যে সবসময় যৌণ হতে হবে এমন ধারণার বশবর্তী হলেন কেন? একজন মানুষের সান্নিধ্য তো সবসময় খারাপ বার্তা ছাড়া আর কিছুই দেবে না এমনটা কোথায় লেখা আছে? আর যদি লেখা নাও থাকে তাহলে এসব কথা নতুন করে তুলে আপনি কি রবি ঠাকুরের প্রেম বা সম্পর্কের বিষয় মানুষের মনে উস্কে দিচ্ছেন না। একটু ভাবুন। রঞ্জন বাবু কী লিখেছেন সেটা জরুরী না রঞ্জন বাবু কত টাকা মিথ্যে দিয়ে ব্যবসা করলেন তাকে তুলোধুনা করতে চাইছেন সেটাও একটিবার ভাবুন। কবি বা লেখক তাঁর কল্পনায় কী কী আঁকবেন সে অধিকার কিন্তু একমাত্র তাঁর নিজস্ব। তবে অবশ্যই আমি তাঁকে সমর্থন করি না কারণ যে মানুষটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে নোংরা কাটাছেঁড়া করে তাঁকে আমি মানুষ বলেই মনে করি না। আপনার একথার যুক্তি আমি শেষে দিচ্ছি।

৩. এই উপহারের হস্তান্তরের গল্প বা তথ্য সবটাই শুনলাম। কারণ এই অসমবয়স্ক মানুষটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনের খবর রাখতেন। খুব ভালো কথা। যেখানে সবকিছু প্রমাণ লোপাট করে দেওয়া হল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনস্মৃতিতে মৃত্যুশোকে নিজেই যা লিখছেন তাতে করে এটাই একমাত্র স্মৃতি হিসেবে তুলে না রেখে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এত বড় স্মৃতিটা হস্তান্তরের কারণ খুব স্পষ্ট হল না। তবুও হস্তান্তর হয়েছে একথা প্রমাণিত। সুইসাইড নোটের মোচ্ছব তো খুব সাধারণ বিষয় সেখানে। এই নোংরা কথাগুলোর সিকিতম কোনো ভিত্তি,কোনো প্রমাণ ছাড়া নিশ্চিত লেখা হয়নি। আর যদি হয়েও থাকে এদেশের মানুষ নিশ্চিত পাঁচ লক্ষ কপি কিনে তাঁকে সিংহাসনে বসিয়েছেন। কেন তাঁকে বিদ্বজ্জনেরা এসে লেখকের আসন থেকে টেনে নামালেন না? তাঁদের যুক্তিগুলো কী আভিজাত্য হীন বাঙালির জন্য? উত্তর দিন। কোথায় বাঙালি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা?

৪. আজ সেটা নিলামে উঠছে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অথবা যাঁরা এই ভারপ্রাপ্ত মানুষজন তাঁরা চুপচাপ কেন? কারণ আমরা এতদিনে বুঝতে পারছি প্রতিবাদ করে কোনও লাভ নেই। অর্থাৎ বাঙালির মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এবার শেষ কথায় আসি, আপনি একটিবার দেখার সুযোগ পেয়েছেন ও সৌভাগ্যবান মনে করছেন নিজেকে। খুব ভালো কথা। কিন্তু আপনার এই পোস্টটি দেখার পর আমি ভীষণভাবে কষ্ট পেয়েছি কারণ আপনি আবার নতুন করে রঞ্জন বাবুর মুখের কাছে মাছ ধরলেন। এটা নিয়ে আবার উনি কল্পনায় বসবেন এবং আমাদের প্রাণের ঠাকুরকেও নিলামে তুলতে পিছুপা হবেন না।বযাইহোক আমি আবার কাল রাত্রে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনস্মৃতির মৃত্যুশোক পড়তে শুরু করলাম এক জায়গায় এসে আমার চোখ আটকে গেল—– “তখন সমস্ত জগতের দিকে চাহিয়া মনে হইতে লাগিল, এ কী অদ্ভুত আত্মখন্ডন…! এই একটি মাত্র কথা আমাকে বারবার…”

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | Issue 70, 21st June 2025 | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | সংখ্যা ৭০, ২২ জুন ২০২৫| রবিবার

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

আরো পড়ুন