Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Sasraya News, Literature Special, April 28, 2024।। সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল।। এপ্রিল ২৮, ২০২৪

Listen

সম্পাদকীয়

 

প্রতিটি জীবনের আত্মদর্শনের প্রয়োজন। নিজেকে জানার প্রয়োজন। নিজেকে জানতে না শিখলে অপরকে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অপর বলতে মূলত-ই বার্হিক দর্শনকে বোঝাচ্ছি।
যে-কোনও যোগীপুরুষ-ই বা আধ্যাত্মিক গুরু প্রায় প্রত্যেকের ভাষায় উল্লেখিত আছে যে, আগে নিজেকে চিনতে হবে। বুঝতে হবে। জানতে হবে…। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে মুক্ত হতে হবে। তাহলেই একটি জীবন তাঁর সম্পূর্ণ মহিমা ও লীলার সম্মুখ দর্শন করতে পারবে।
প্রেম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং ভয়ঙ্কর দর্শন। প্রেম যে হৃদয় করতে শিখেছে সে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের মায়াময়তাকে আপন করে নিয়েছে। আর যে হৃদয় প্রেমকে হিংসে ও অহঙ্কারের আসনে বসিয়েছে, সে সবসময় জ্বলতেই থেকেছে।
মানুষের জীবনের অস্তিত্ব কেবলমাত্র সুখ ভোগের জন্য নয়। অথচ, মানুষ সুখ ভোগের চিন্তায় মগ্ন হয়ে থাকে। ফলে, প্রেম তার আসন থেকে সরে দাঁড়ায়। অর্থাৎ প্রেমও মোহের জালে জড়িয়ে পড়ে।
মন, গুপ্ত মন একটি স্বচ্ছ মন খুঁজে বেড়ায়। অথচ কোনও স্বচ্ছ মন পেলে গুপ্ত মন তাঁকে ধরা দেয়। ফলে মানব-জীবনে একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়। 

 

 

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন 

মৃত্যু হবে না কোনোদিন

 

 

মৃত্যুর পর ফিরে এসে আমি অন্য কেউ
অন্ধকার আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে
রূপান্তরিত হচ্ছি প্রতিদিন
কখনো পাখি উড়ছি আকাশে
কখনো বৃক্ষ নামছি মাটিতে
মাথার উপর কোনো শিরস্ত্রান নেই
এক সময় যোদ্ধা ছিলাম
যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে থেকে
আমার চুলগুলো ঘাস
চোখ দু’টো পাথর আর
পা দু’টো ক্রুশ
যে দেশের জন্য আমি লড়ছি তার কোনো মানচিত্র তৈরি হয়নি
যে শহরে আমার জন্ম
তা এখন ইতিহাসের পৃষ্ঠা
বাইবেলের বাপ্তিস্ম মুছে গেছে স্মৃতি থেকে
আমাকে উদ্ধার করতে নূহের নৌকা ছুটে আসবে না
সামনে যা দেখি সব মৃত
পেছনে প্রত্যেকে নগ্ন
সবার হাতে আমলনামা
আমাকে পাহাড় টেনে তুলছে চূড়ায়
আর সমুদ্রের ঢেউ ভাসিয়ে নিচ্ছে অতলে
ক্ষুধার্ত আমার জন্য আকাশ পাঠায় মান্না- সালুয়া
কিন্তু মাটিতে পড়ার আগেই
কেড়ে নেয় মুসার সৈনিকেরা
জানি ত্রাতা ঈসা আর আসবে না
পুনরুত্থানও হবে না
আর আমার মৃত্যুও হবে না কোনোদিন
মরতে ভুলে গেছি আমি

 

 

 

পরাণ মাঝি 

জুঁই পাখি

 

 

ও জুঁই পাখি
করিস তুই কত সুরে ডাকাডাকি
না প্রেম , না স্পর্শ, না, না-র ঘরে
বল – পরম অনাদরে কে যায় পারে

তবু চুপিসারে এসেছি গোপন অভিসারে; বাজা দেখি বাঁশি সেই সুরে
জাতপাতহীন সকাল দুপুর রাত্রে

মনমেঘ হ; পড় ঝরে অঝোরে; ঝর্ণা যেমন গান করে সুরে সুরে
সেই গোপন মনপুরে,আর থাকিস না দূরে ; আয় ঢুকে পড়ি দুঃখ সুখের সংসারে

করিস না এত কানাকানি
আয় এক সাথে ধানভানি

হায় রে-
কে দেখালো এমন স্বপ্ন সাত সুরের ওপারে
এই তো রয়েছি ইট-কাঠ-পাথরের শহরে

মন রে
তুই বাহাদুর; কেন চলে যাস সাত সমুদ্দুর;তেরো নদী পারে
বাস্তবে আয় ফিরে
ওই দ্যাখ – রোদের প্রেম শিশিরে শিশিরে

ভাঙলো স্বপ্ন; আসি রে
টা টা নয় ,নয় বাই বাই ;
পারলে আয় গান গাই এক সুরে

 

 

 

 

 

মিতা নূর 

কেউ থেকে যায় শুধু স্মৃতির পাতায়

 

 

বন্ধ হয়ে যায় সব তীব্র অভিমানে
ফিকে হয়ে যায় কিছু গল্পের রং,
তবু স্মৃতির দেয়াল থাকে রঙিন।
কিছু পিছুটান পিছু ছেড়ে যায়
তবু মন বার বার তাঁকেই,
ঘুরে দেখে প্রতিদিন..!

সত্যিই জীবন বরই অদ্ভুত
না চাইলেও কেউ থেকে যায়,
জীবনের পুরো অধ্যায়!
আবার সত্যি ভালোবাসা পেয়েও
বুকভরা যন্ত্রনা দিয়ে,
কেউ থেকে যায় শুধু স্মৃতির পাতায়।

 

 

 

 

রোকসানা রহমান 

অন্তহীন নৈঃশব্দ্যে 

 

 

চারদেয়ালের ভিতর সেঁটে থাকার নামই
কি জীবন।
এই বেঁচে থাকা সমুদ্র ফেনা মেখে
গভীর রাতে সমস্ত উজার করে
লাণ্ছনা-অপমান ছিলো একগ্লাস
নোনাজলের মতো।
শিউরে উঠেছিলাম সেই রহস্যের ভিতর
আর সাহসী হয়ে উঠেছিল
আমার ঝুকে পড়া মাথা
ক্ষতচিহ্নের উপর শান্ত জীবনের
সময়ের দৃশ্যপট স্নায়ুর দ্শ্যপট
সময়ের ভিতর নিজেকে খুঁজে পেল
যে একদিন বজ্রের ভয়ে কম্পমান ছিল।
সম্পর্ক,এক কাল্পনিক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না।
তাই আজ চলমান আলোক রশ্মির
শক্তিকে অনুভব করে মুক্ত হয়েছি
কালের অন্ধকার বন্ধন থেকে
অন্তহীন নৈঃশব্দ্যে।

 

 

 

🍁গল্প

 

 

কুন্তল দাশগুপ্ত 

আকাশ ভোলা মেয়েটা

 

 

গুটগুট ক’রে নেমে এলো উঠোনে।
একটা সোনা মেয়ে।

ঐ গাছটার সঙ্গে ভালোবাসা ছিল ওর।
নেই।
রয়েছে, কাটা গুঁড়ির অবশেষ- বিক্ষত, করুণ মৃতদেহ।
আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ছিল ঘুম ছেঁড়া ভোরে সারা উঠোন জুড়ে মেহগনির।

কত একলা সময় ও-কাটিয়েছে গাছের ছায়ায়। গাছটা ওকে ভালোবেসে একটা দু’টো হলদে পাতা ঝরিয়ে দিত।
ভারি আদরে সেই পাতা জমিয়ে রাখতো সোনা মেয়ে।
চুপ ক’রে শুনতো গাছ কত কথা বলে। সে ওর খেলাঘরের সঙ্গী।
ওর আশ্রয়।

আকাশটা দূর থেকে চেয়ে ব’সে থাকত।
মেয়ে ভারি ব্যস্ত ছিল তার একলা গাছের সঙ্গ নিতে। মেয়ের খুশীতে অস্তরাগের মোহে নিজেকে রঙিন করে তুলত আকাশ। মেয়েটা জানত না।

গাছের নীরব আর্তনাদে মেয়ের নরম টুকু ছিন্নভিন্ন হচ্ছিল আজ, শিউরে উঠছিল ভোরের নরম।
মেয়ের সাধের গাছ অনাক্রান্ত রইল না।
কালকেতু- বিষ ওগরালো।
প্রথম রক্তাক্ত হল মেয়ে।
তার অবিশ্রান্ত রক্ত মোচন কারো চোখে পড়ল না।

কেবল আকাশ ভারি মেঘলা হল।

 

_____________________________________________

সেদিন নদীর জল ভুষুন্ডি কালো। আকাশ মুখ কালো ক’রে আছে যে। নদীর বুকের রং-বাহার যে আকাশের-ই দেওয়া তা মেয়ে বোঝেনি। অতল জলের ডাক পাওয়া মেয়ে, আকাশের দিকে চাইবার অবসর কৈ তার! সে নামল। তার সোনার পাতা জোড়া ঢেকে নিল নদীজল।

_____________________________________________

 

 

মেয়েটা নিজেকে আটকাতে পারল না। তার আবেগ বইছিল হাওয়া। সেই হাওয়ায় ভর করে মেঘবান হল আকাশ। ঝুঁকে পড়ল মাটির দিকে। মেয়েটা তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে নেমে এল বারান্দা থেকে উঠোনে। মেহগনির কাটা পড়া গুঁড়িটার অবশেষে মুখ রাখলে।
ঠোঁটে শুষে নিতে চাইলে মেহগনির সমস্ত যন্ত্রণা।

মাথার ‘পরে আকাশ চেয়েছিল। সে তৃষ্ণা অনুভব করতে লাগলে ঐ ঠোঁটের, যে তার রোদে পোড়া সব জ্বালা শুষে নেবে।

মেয়েটা আকাশের ঐ তৃষ্ণার কথা জানলে না। অত দূরের দিকে তার চাইবার অবসর কৈ। সে তখন তার মেহগনির আর্ত পাতাগুলিতে তার নরম হাতের ছোঁয়া দিতে দিতে মেহগনি হারানোর শোকে গলে পড়ছে…

আকাশ আর পারল না। নেমে এলো অঝোরে ঐ সোনা মেয়ের অশ্রু আড়াল করতে।

অঝোর ধারাপাতে স্নাত হচ্ছিল মেয়ে। ওর অশ্রু কাউকে দেখতে দিতে চায়নি আকাশ।
সোনা মেয়ে বুঝতেও পারল না আকাশ তাকে প্রাণ ভরে আদর করে গেল নিজেকে গলিয়ে ওর একান্ত শোকে।

সেই প্রথম শোক।
সেই প্রথম হাসি-আড়াল।
মেয়েটা শিখে নিল চলতে চলতে হাসি দিয়ে এক আকাশ দুঃখ আড়াল করতে।

রোদে ভিজে ভিজে আকাশ সেদিন মেহগনির গভীরতায়। হাওয়া উঠল শনশনিয়ে। আকাশের বুক উথলে উঠল- মেয়েটা উঠে এসেছে ছাদে। আকাশ বৃষ্টিকে ডাকাডাকি করতে লাগল। বৃষ্টি তখন অনাবৃষ্টির সঙ্গে তুমুল লড়ছে। তার বঙ্কিম নীল অসি মুহুর্মুহু ঝলসে উঠছে। ঐ হাওয়া, ঐ ডাক, ঐ ঝলসানি মাখছিল মেয়েটা। ওড়না তার উড়ছিল, পালের মতন উঠছিল ফুলে ফুলে। বৃষ্টির লড়াই তখন শেষ। প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অনাবৃষ্টিটা মরেছে। আকাশকে বৃষ্টি ডেকে বললে- নিয়ে যাচ্ছি তোমার মেঘ।

আকাশ বললে, দিয়েই তো আমার সুখ।

একদানা, দু-দানার পর শয়ে-শয়ে, হাজারে-হাজারে, অর্বুদে-অর্বুদে হিরে কুঁচি নেমে আসতে লাগল, ছড়িয়ে পড়তে লাগল চরাচরে।

দু’হাত ছড়িয়ে চোখের পাতা বন্ধ ক’রে ঊর্ধমুখে ভিজছিল মেয়েটা। এমন শিহরণ সে আগে কখনও বোঝেনি। তার ঠোঁট ফাঁক হলো। চুম্বন মুদ্রা! কৈ আগে তো এমন…। ছাদের সেই নির্জনে নিজে নিজেই ভারি লজ্জা পেলে সে। ছড়ানো হাত বুকের কাছে জড়ো হল, মাথা পড়ল ঝুঁকে, পায়ে লাগল অবতরণের তাড়া। এই ব্রীড়াটুকু ভারি সনাতন, ভারি প্রাকৃতিক। বৃষ্টি শেষের আকাশ উঠল ঝিকমিকিয়ে। মেঘ-ছেঁড়া রোদ এসে দেখল ছাদে মেয়ে নেই।

বড় হয়ে উঠল মেয়েটা।

তখন মেয়ে নবম শ্রেণী, তখন মেয়ে শাড়ি।
একটা নদীর সাথে দেখা হল তার‍। মহা চঞ্চল। ঘাট-ফেরতা। কিন্তু নদীর বুকে ভারি রং-বাহার। মেয়ে মোহিত হয়ে দেখে আর ওর পায়ের কাছে- ছলাৎ-ছল, ছলাৎ-ছল, ছলাৎ-ছল গভীর স্বরে গল্প বলে নদীর জল।

যেখানে নদীর অতল জলের ডাক সেখানে মেয়ে ডুব দিতে ইচ্ছে গেল। আকাশ চোখ পাকিয়ে মানা করলে। মেয়ে চোখ তুলে দেখলেই না। সেদিন নদীর জল ভুষুন্ডি কালো। আকাশ মুখ কালো ক’রে আছে যে। নদীর বুকের রং-বাহার যে আকাশের-ই দেওয়া তা মেয়ে বোঝেনি। অতল জলের ডাক পাওয়া মেয়ে, আকাশের দিকে চাইবার অবসর কৈ তার!
সে নামল। তার সোনার পাতা জোড়া ঢেকে নিল নদীজল। শীতল ছোঁয়ায় মেয়ের দহনগুলো জুড়িয়ে যাচ্ছিল। সে ক্রমশ গভীর থেকে আরও গভীরে প্রবেশ করছিল। যে বিন্দুতে মেয়ের পূর্ণ নিমজ্জন ঠিক সেই বিন্দুতে নদী খাত বদল করল।

নিমজ্জনের পূর্ণ স্বাদ থেকে প্রত্যাখ্যানের পঙ্কে নিক্ষিপ্ত হল মেয়ে।

চুড়ান্ত জীবনি শক্তির জোরে পাঁকে পোঁতা মেয়ে পঙ্কজ হয়ে হেসে উঠলে। তার হাসির বিভায় আকাশ উঠল মেদুর হয়ে। এত এত দিন আকাশ-ভোলা মেয়েটা কী জানি কী ভেবে চাইলে আকাশে।

আকাশ আর পারল না। এতদিনের অবরুদ্ধ আবেগের বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে আকাশ ভেঙে পড়ল।
মেয়ের কাছে সে ভারি দূর্যোগ।

সে হাত জোর করে বারবার বলছিল- হে বিরাট শান্ত হও।

মেয়ের পিছু পিছু ছেঁড়া ছাতা মাথায় আসছিল এক ছেলে। দুর্যোগ থেকে বাঁচতে মেয়ে ঐ ছেঁড়া ছাতায় নিলে আশ্রয়।

আকাশ ক্রমে শান্ত হয়ে এল।
তারপর—
ছোট হতে ছোট হতে হতে হতে আটকে রইল ছাতার ঐ ছেঁড়াটুকুতে। 🦋

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

 

শারাবান তহুরা 

নীলাম্বরী

 

 

আকাশে এখনো শ্রাবণ আসেনি
অনুরাগের আকাশ জুড়ে
সকাল থেকে খসে পরা রোদ
অদেখার মাঝে কাছাকাছি তবুও সংগোপনে।
আষাঢ় শ্রাবণে বাঁধলে এসে ঘর
গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা ফুটেছিল সাদা মেঘের কোলে
ভ্রমর এলো মাতাল হাওয়ায় শ্রাবণ গন্ধ মেখে
তুমি এলে…
শ্রাবণ ধারা তোমার যুগল চোখে নিয়ে।
জৈষ্ঠ্য আসে আগুন ঝরানো উদাসী বুকের মাঝে
আমার দরোজায় পুরছি অবিরত
শ্রাবণে কদম ডালে বৃষ্টি যদি নামে
অস্থির বুঝি এই অবেলায়!
নীলাম্বরীর আঁচল বলো কি ভাবে উড়াই!

 

 

 

অসীম দাস 

তোমার তুমি মুক্ত ধ্রুবক 

 

 

দৃষ্টি-ধোয়া বৃষ্টি মাখাও অষ্টপ্রহর মনে
ধূসর হওয়া শক্ত ভীষণ গোধূলি চুম্বনে।

পিছল ঠোঁটে মুগ্ধ মেঘের শরৎবর্ণ হাসি
পূরাণ পলির গর্ভে ফোটায়- তোমায় ভালোবাসি।

তিলের খবর দিও না থাক, মরবো মন্থনে
সন্ন্যাসী নই, ব্যতিক্রমী অসাংসারিক বনে।

আমার কানেই তোমার কণ্ঠ হরিনাভির যাদু
আমার আমি’র মৃত্যু হলে থাকবে না সুস্বাদু।

স্বত্ব তোমার, সত্তা তোমার বহুর মাঝে এক
সংসারী ঘ্রাণ আষ্টেপৃষ্টে বাঁধলে পলিপ্যাক।

সত্তা শুধু বাড়ছে আয়ুর নিয়ম অনুযায়ী
তোমার তুমি মুক্ত ধ্রুবক, মনের মধুপায়ী।

 

 

 

শাওন আসগর

যে যাবার সে যাবেই

 

 

যে যাবার সে যাবেই
যে নামবার নামবেই ঠিক গন্তব্যে তার
এই যে দীর্ঘ যাত্রা ধাবমান ট্রেন
ক্ষণে ক্ষণে বিরতি জৌলুশে আঁধারে
কেউ জানে না কারো গোপন পথের ঠিকানা বিন্দু বিসর্গ
কাঁধে ঝোলানো জমির দলিল পরিচয়পত্রের ফটোকপি
সেসব নিয়ে নামবেই মনের চাওয়ায় উজ্জল হাসির ভেতর।

কিছু কিছু মানুষ ওতপ্রোত জড়িয়ে থাকে কথা ও প্রেমে
পথিমধ্যে দীর্ঘ বয়ানে করাতের ধার ঠুনকো বেলুন
মুখোশে আবৃত তাহাদের মন
স্বার্থ ঝুলে থাকে নিয়নের আলো নিয়ে বেদনার হ্যাঙ্গারে
এসব বুঝতে পারা বা না পারা জরুরি কিছু নয়
মানুষ তবু ছুটছে, ছুটবে ট্রেনে
অথচ তার গর্দানেই রাখা আছে মৃত্যুর ছুরি
তবু সে নামবে উত্থানে
সাহসের সাথে
যোদ্ধার মতো নামবে পতনেও
ঝড় ও বসন্তে শব্দহীন হয়ে ।

আর যে যাবার সে যাবেই।

 

 

 

🍁গল্প 

 

 

সাকী সোহাগ 

দাগ 

 

 

 

হনা মা আমার দরজা খোল, খোল বলছি। অহনা? ও অহনা? মা গো আমার দরজাটা খোল প্লিজ! আমি তোর খালামণি না? প্লিজ খোল!
আপি খোল গো দরজাটা। প্লিজ আপি খোল বলছি! ও আপি আমাদের কথা কেন শুনছো না?

 

______________________________________________

অহনা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে উঠে এসে দৌড়ে খালামণির রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। শুধুই কি দরজা? অহনার মনে হচ্ছিল জীবনের দরজাটাই আজ বন্ধ করে দিক।

______________________________________________

 

স্ত্রী সন্তানের ডাকেও যখন সাড়া দিচ্ছিল না রুমের দরজা আটকিয়ে রাখা অহনা, তখন আবজাল সাহেব নিজেই ডাকতে শুরু করলেন। ডাকতে ডাকতে চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলেন ভয়ে-
অহনা মা আমার, আমার লক্ষ্মী মা, দরজাটা খোলো। আমি তোমার বাবা সমতুল্য খালু বলছি মা। এমন একটি দিনে কোন বাজে কিছু করিও না মা। ও মা খোলো, খোলো, খোলো…!

বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। বাড়ির উঠনে তখনও অনেকেই আবজাল সাহেবের একমাত্র ছেলের গায়ে হলুদ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। তখনো বিষয়টা ওভাবে ছড়িয়ে পরেনি। বাড়ির মধ্যে এরা টেনশনে থাকলেও বাড়ির বাহিরে ওরা সাউন্ড সিস্টেমে ভোজপুরী গান লাগিয়ে নাচানাচি করছে আর রাসেলের গায়ে হলুদ মাখাচ্ছে।

একটু পরে অহনা দরজা খুলে বাহিরে আসে। ওর খালামণি ওরে দেখে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না! এই বিয়েতে বোন বা বোন জামায় কেউ আসেনি। না আসার অনেক বড় একটা কারণ আছে। তবে খালাত ভাইয়ের বিয়েতে অহনা এসেছে এটা নিয়ে ওর বাবা মায়ের তেমন কোন সমস্যা নেই। কারণ ঝামেলাটা হচ্ছে দুই ভায়রার মধ্যে। দুই বোনের মধ্যে। ছেলেমেয়েদের উপর তার প্রভাব কেন পড়বে? কিন্তু মূল ভয়টা আসলে এখানেই। যেহেতু অহনার বাবা মা কেউ আসেনি। সেহেতু ওর কিছু হলে আজ বড় ক্ষতি হয়ে যেত আবজাল সাহেবের। অনেকেই অনেক কথা বলতো।

অহনা চোখের পানি মুছে ভ্যানিটিব্যাগ কাঁধে তুলে নিল। একটু কান্নাতেই চোখ দু’টো ফুলে উঠেছে। চোখে পানির দাগ গাল থেকে যায়নি তখনও। ফর্সা রঙের মেয়ে অহনা। লম্বাও অনেক। মাথায় লম্বা কালো চুল। অনেক সুন্দর চেহারার অধিকারী মেয়েটা। তবুও ভাগ্যের পরিহাসে আজ সে ডিভোর্সী। আর আজ এই বিয়ে বাড়িতে এটাই তার কাল হয়ে দাঁড়ালো।

খালার বাড়িতে গতকাল এসেছে। আসার পর থেকে বেশ আনন্দ করছিল অহনা। ঘটনা ঘটেছে রাসেলের গায়ে হলুদ দেওয়ার সময়। হাতে হলুদ নিয়ে রাসেলের গালে দিতে যাবে ঠিক সেই সময় রাসেলের এক বান্ধবী বলে উঠল,
অহনা আপু এই থামো থামো। কী করছো তুমি? তুমি জানো না ডিভোর্সী মেয়েরা কুমার বা কুমারীদের গায়ে হলুদ দিতে পারে না। আরে এতে যে অমঙ্গল হবে আপু। তুমি দিও না প্লিজ।
অহনা সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকে উঠে এসে দৌড়ে খালামণির রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। শুধুই কি দরজা? অহনার মনে হচ্ছিল জীবনের দরজাটাই আজ বন্ধ করে দিক। কিন্তু খালা খালুর মিনতিতেই সে আর তা করতে পারেনি। লজ্জায় মাথাটা নিচু হয়ে আসছিল। ওখানে অনেকগুলো মেয়ের সামনে রাসেলের বান্ধবী কথাটা না বললেও পারতো। অহনা ডিভোর্সী এটা সত্য। কিন্তু কেউ একটাবার জানতেও চায় না অহনা আদৌ সংসার করেছে কিনা? কী দোষ ছিল মেয়েটার? কী এমন অপরাধ করেছিল সামনাসামনি না দেখেই শোয়েবকে কবুল বলে। একটা বছর শোয়েবের মায়ের দেখভালো করাই কী অহনার অপরাধ? একটা বছর শোয়েবের জন্য অপেক্ষা করাই কী অহনার ভুল? হয়তো বা। আর আজ সেই ভুলের জন্যেই মানুষের এমন কথা শুনতে হয়। মানুষের কথা শুনতে হয় বাবা মাকেউ।

দেশের মাটিতে পা রাখার পর শোয়েবের চেহারাটাই পাল্টে গেল। শুধুই চেহারা? পাল্টে গেল চরিত্র। পাল্টে গেল বিবেক। ঘরে বউ রেখেও অর্পার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছে প্রবাস থেকে। এয়ারপোর্টে নেমেই অর্পাদের বাসায় গেছে। সেখানে অর্পার সঙ্গে চার দিন থাকার পর নিজ বাড়িতে আসে শোয়েব। শার্ট পরা যৌবনের নালা দেখানো অর্পার সঙ্গে রাত্রি যাপন করার পর আর কতটাই বা ভালো লাগতে পারে গ্রামের সাদাসিধে শাড়ি পরা নারী অহনাকে? 🦋

 

 

 

🍁কবিতা

 

 

 

 

হাসান হিমাদ্রি 

দেবতার নির্বাসন…

 

 

স্রষ্টা! সে-তো নিরাকার জানি
তবু কেন তাঁর ত্রয়ী রূপ?
দেব-তর্পণ অঞ্জলি পেশ
বিশ্ব শান্তি স্বরূপ,
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব’তো অপরূপ।।

ওঁম-জপ শেখা মাত্র, প্রতি হাতেই মারণাস্ত্র
যেন রক্ত নেশার ভঙ্গি,
সরস্বতী এসে বিদ্যা দিলেন, সুর-বীনা পথ সঙ্গী।
চির সাশ্রয় রোধে অপচয়, অগাধ ধনরত্ন উদয়
রাগিণীর ঠাটে মৃদঙ্গ হাতে, গণেশ’ও বাদ্যযন্ত্রী।।

কৃষ্ণের ঠোঁটে বংশী তোলে, সুরের মুর্ছনা
সব ছাপিয়ে ধ্বংস নাথের, এই কি কামনা?
অর্জুনা তীরে কর্ণ ক্রোধে, অবতার পৃথিবীতে
পান্ডব মাতা কুন্তী কাঁদে, আপন পুত্র বিয়োগে
পিতৃ-তর্পণ অঞ্জলিরূপ
স্রষ্টার ত্রয়ী শক্তির রূপ
ব্রহ্মা, বিষ্ণু শিব’তো অপরূপ।।

মেঘ-মালায় সূর্য রাজে, ঐরাবতে ইন্দ্র সাজে
বজ্র নিনাদ শব্দে,
ত্রিশূল গদা ব্রক্ষ্মাস্ত্রে, স্বর্গ মর্ত বিদীর্ণ হলো
বিভৎস এক দ্বন্দ্বে,
হঠাৎ’ই কেন নিঃশব্দে, একতাবদ্ধ দেবতা কূল
পাতাল ফুঁড়ে ওপ্রান্তে।।

তাই মাতম নৃত্যে ডমরু তালে
বিষের নীলে কৈলাস দোলে
জটা কেশে চাঁদের আলো
নটরাজ শিব শম্ভু ছলে
বিদ্ধংসী হয়ে উঠলো।
বিতাড়িত হেথা সব দেবতা
আমাদের কি রইলো?
হন্নে হয়ে মানব খোঁজে
শান্তি কোথায় পালালো।
তার চেয়ে বরং প্রণামী স্বরূপ
ওঁম ধ্বনিতেই স্বস্তি আসুক
যেখানেই থাকো ত্রয়ী দেবতা
ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব অপরূপ।।

 

 

 

দূর্গাদাস মিদ্যা 

নদী ও জীবন

 

 

নদী সে তো শুধু নদী নয়
বহমান জীবনের পরিচয়।

 

 

উপলব্ধি 

 

মৃত্যুতে জীবনের কী এমন ক্ষতি?
মৃত্যুই জীবনের শেষ পরিণতি।

 

বন্ধুত্ব

 

আকাশ সে যত দূরেই হোক
তাঁর কাছে প্রিয় এই মর্ত্যলোক।

প্রেম

 

সারাদিন আমি তার কথা ভাবি
মে মেটায় আমার মনে দাবী।

অনুভব

 

একা কিছুতেই ভালো লাগে না
তাকে না পেলে চিত্ত জাগে না।

 

 

 

 

শূন্যতা রাহমান 

জীবনের প্রায় কাছাকাছি

 

আমার চোখে আকাশের ছায়া পড়ে
মেঘেদের ছায়া পড়ে
পড়ে সাদা বিরানভূমির চাঁদের ছায়াও
আমি সুন্দর হয়ে ফুটে থাকি নিজের অনুভবে
আমি অন্ধকারের সাথে কথোপকথনের আড়ালে
ঢলে পড়ি বাতাসের তীব্র কাধে
জল ভেঙে ঢুকে যাই নদীর কালো গর্ভাশয়ে
রেললাইন ধ’রে আমি হাঁটি অনন্ত অসীমের শেষ প্রান্ত অবধি
আমি শিমুলের চূড়ায় ভেসে থাকি
আমি কার্পাস তুলোয় ফেটে যাই বিপন্ন বিষ্ময়ে
আমি প্রদীপের পাশে প্রদীপ হয়ে জ্বলি
শ্মশানের পাশে শ্মশান হয়ে প্রচন্ডভাবে ধ’রে উঠি
সাগরের কাছে গিয়ে আমি ব’লে আসি ;
আমার আসলে ব্যক্তিগত কোনো দুঃখ নেই
আমি বুকের বাম পাশে পাঁজর খুঁজে পাই,
হৃদয় ব’লে কিছু পাই না, পাই সেখানে অসীম শূন্যতা
কী ভীষন একা আমি
শত শত কোটি কোটি একা মানুষদের মতো!

 

 

 

 

মোঃ সেলিম মিয়া

বিদায় ঘন্টা 

 

 

শুরু হলো জীবন সেদিন নেংটা দিনের খেলা,
সময়ের সাথে পাল্লা ঘড়ি সাগরে ভাসিয়ে ভেলা।
সাগরের কুল পাইবো খোঁজে আশায় দিনাতি পার,
জীবন প্রদীপ ডুবু ডুবু আজ নিস্তার পাবো কি তাঁর?
শৈশব কৈশোর যৌবন পেড়িয়ে পৌরে কাটছে বেলা,
এই বুঝি এলো শেষ ডাক পালাবার পথ নাহি খোলা?
নিকির পাল্লা শূন্য খালি পাপের পাল্লা ভারি,
সাড়া জীবন কামিয়ে পাপ আবসুসে মরি মরি!
সময় থাকতে সময়ের সওদা তওবা জবে মরি।
কালেমা নসিব হয়গো যেনো মোহাম্মদের ধ্বনি!

 

 

 

এইচ আলিম 

তার ঠোঁ‌টের উপাখ‌্যাণ

 


ঠোঁট তার ডা‌লিম ফু‌লের মত,
যত‌ দিন যায় ততই বিক‌শিত হয়,
যত বর্ষা পায় ততই স‌তেজতা মাখে।

ঠোঁট তার ফোটা পলা‌শের তরবা‌রি
যত সময় নেয় ততই হৃদয় কে‌টে দেয়
যত চকচক ক‌রে ততই মন কা‌ড়ে

ঠোঁট তার সাদা কা‌লো সংসার
যত রাত গভীর ততই নেশা ধরায়
যত কা‌ছে থা‌কে তত স্বপ্ন বো‌নে

ঠোঁট তার বিকা‌লের বৃ‌ষ্টি
যত ঝ‌ড়ে ততই উঠান ভি‌জে
যত গ‌র্জে ততই কা‌ছে টা‌নে

ঠোঁট তার কমলা র‌ঙের আঁচল
যত বাতাস পায় ততটায় জ‌ড়ি‌য়ে যায়
যত জ‌ড়ি‌য়ে রা‌খে ততই বু‌কে বসত গ‌ড়ে।

 

 

 

 

কাসেম আলী রানা

আলীমহল

 

 

আঁচলের গিঁটে বেঁধে রেখেছো ভালোবাসা-শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে উঁকি দেয় শরীরি কারুকাজ!
আমি আজন্ম মৌমাছি, রানী মৌমাছির বুকে বেঁধেছি- আলীমহল!
মহলের পাথরে পাথরে লুণ্ঠিত হয় যৌবন, শ্রমের মূল্য ভেসে যায় ঋতুমতি জোয়ারে!
উজানের ডাকে কাঙ্গাল হয়- একজন বানভাসি জীবন্ত অনাহারি!
শাড়ির এমন উথাল- পাতাল সুনামির তাণ্ডবে আমাকে পিষ্ট না করলে কি হতো না?
আমি কেমন করে উষ্ণ লাভার করতলে ফসিল হয়ে থাকবো অনাদিকাল?

লুণ্ঠন করে লুটেরা সাজো, তাঁতিকে করো আসামী।
তুমি চাঁদ, আমি কলঙ্ক! আমার চোখে পাথর জমে;
পাথরকে ভাবো সতীন!

শাড়ির আঁচলের লুটোপুটি মহামায়া আমার বুকে চিরতরে বন্দী করো।
আলীমহল ; আলোকিত হয়! লেলিহান আগুনে চারিদিক পুড়ে অঙ্গার হয় নিষ্ঠুর নির্মমতায়!

এমন দাবা খেলা শিখলে কোথায়? কে তোমার মনের জীয়ন কাঠি নাড়ানাড়ি করে? শরীর দিয়ে কি হবে ; মন না থাকলে অভিসারে?

তোমার শাড়ির কুঁচির ভাঁজ,আঁচলের উঁচু-নিচু মাদকতা,
শরীরি ভাঁজে ভাঁজে মাটিতে লুটিয়ে পড়া চাঁদহীন জোছনার আহবান,আমাকে ভিখারি করেছে,
তুমি মিষ্টি করে সৃষ্টি করো নিঃশ্ব ছন্দময়তা!

আমি আজ দু’হাত পেতেছি, কতকাল দাঁড়িয়ে আছি পাহাড়পুরের বিলুপ্ত সভ্যতার মতো, আমাকে আর কতকাল রাখাল বানাবে?
রাখালরা শুধুমাত্র চোখে চোখে পাহারা দেয়,আর শাড়ীর সূতারা ভোগ করে সর্বকালের সর্ব সুখ!

 

 

🍁ধারাবাহিক গদ্য / পর্ব ৫ 

 

 

দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায় 

প্রমা 

 

 

র-বাড়িগুলো সব পুরনো সেকেলে একটা বন্ধু-বান্ধব এলে ঘরে কোথায় বসবে?
টুকু টুকুর বাবাকে প্রশ্ন করে,
জানো সর্বাণী মৈত্রের বাড়ি কত বড়ো?
দুর্গাপুজো হয়, কত লোকজন, কি সুন্দর সব সাজানো গোছানো। আর আমার কিছু নেই, ভাঙা গোলপাতার ছাউনি ওলা একটা বাইরের ঘর, সেখানেই বসার চৌকিপাতা, আর ভাঙা একটা চেয়ার। টুকুর বাবা বলল, তোর এ দুঃখ আমি আর রাখব না তোর জন্য একখানা ভালো ঘর বানিয়ে দেব। একটা ঘর করতে সে লরি ভর্তি সিমেন্ট, বালি, লোহা মাল-মেটেরিয়াল কিনে ফেলল। গোল পাতার ঘর ভেঙে পাকা নতুন ঢালাই দেওয়া ঘর বারান্দা সিঁড়ির ঘরের মাথায় ঠাকুর ঘর, সে এলাহি ব্যাপার! ঘরটা শেষ করেই ইলেকট্রিক এনে, পাখাটা চালিয়েই টুকুর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ল।
হাই প্রেসার-
একদিন সকালে উঠে দেখি খুবই শরীর খারাপ,
সরলকে ডাক্তার ডাকতে বললাম। সরল ডাক্তার আনল ডাক্তার হাসপাতালে দিতে বললে। তারপর তোর দাদা মশাই আর হাসপাতাল থেকে ফিরে এলো না। মাত্র ৫০ বছর বয়সেই স্ট্রোক হয়ে আমাদের পর করে দিলে। তোর দাদা মশাই কে নিয়ে আমার আর পৃথক সংসার করার সুযোগ এ জীবনে হল না।

 

______________________________________________

অপরপক্ষে জাল দলিল করার দায়ে যার জেলে যাওয়ার কথা তার সঙ্গে তোর বাবা মানে টুকুর বর হাত মিলিয়ে কেশটা তুলে নিলে। বললে তোমরা ভাই বোনে আধা আধা ভাগ করে নাও, বাড়ি অর্ধেক ওদের হয়ে গেল।

______________________________________________

 

শোকে পাথর হয়ে একভাবে দু-তিন দিন পড়ে রইলাম !
কি থেকে কি হয়ে গেল-
পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে বললে,
হ্যাঁ গো রাঙ্গাদি ,তোমার শুধু নিজের কথা ভাবলেই চলবে? মেয়েটার কথা কে ভাববে?
ওঠো খাও নিজের দেখভাল করো।
নিজের মেয়ের কিছু ব্যবস্থা নাও। শক্ত হও, এরকম সবারই হয়, তা বলে কেউ এমন বোকার মতন পড়ে থাকে-

শাশুড়ি ও এদিকে খাওয়া বন্ধ করেছে। পৌষের কনকনে ঠাণ্ডায় মেঘলা আকাশ চিরে, তখনই চিলের মতন আমার আকাশ জুড়ে ঘুরতে লাগল লালমনি।
আমাকে নিঃস্ব করে দেওয়ার অভিসন্ধিতে মেতে উঠল-
রাতারাতি বাচস্পতি পাড়ার লোকজন ধরে একখানা উইল বানিয়ে ফেলল। বলাই বাহুল্য লালমনির বাবার বাড়ি বাচস্পতি পাড়াতে। (বাবার বাড়ির লোকেরা কখনো তার প্রতি কোন কর্তব্য পালন না করলেও এই অন্যায় কাজে তাকে সমর্থন জানালো।) এরপর টুকুর ঠাকুমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেওয়ার দিন আমাকে আর টুকুকে এই নতুন ঘরে পুরে শেকল তুলে দিল।

মিথ্যা সাক্ষী। মিথ্যাবাদী ডাক্তার। পাড়ার কিছু (তোর দাদা মশায়ের শত্রু পক্ষের) লোকজন সকলের সহায়তায় পয়সার বিনিময় সব ব্যবস্থা পাকা করে,  সেই উইলে শাশুড়িকে দিয়ে সেদিনই স্বাক্ষর করিয়ে নিলে। আমরা ঘর থেকে প্রাণপণ চেঁচামেচি করতে,  আদ্যাপীঠের মন্দিরের মিস্ত্রীরা এসে খুলে দিল। তারপর দিন থেকেই লালমনির গিন্নি পোনা চরমে উঠল।

প্রাণ থাকতে বুড়ি কিছুতেই ওদের উইলে সই করতে চাইছিলেন না, তবে সেদিনই বা সইয়ের বিষয়ে এত আগ্রহ কেন দেখা দিয়েছিল, তা জানা গেল পরের দিনে। পরের দিন তিনি ইহলোক ত্যাগ করলেন-!
এটা ঘোষিত হল।
কিন্তু মৃত্যু তার আগেই,
আগের দিনই হয়েছিল!
তাই জন্যই ওই দিনে ওরা উইলে সই করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।
শুধু ছেলের মৃত্যুর কটা দিন পরে না মরে, যদি টুকুর ঠাকুমা কটা দিন আগে মারা যেতেন, তাহলে এ সমস্ত কোনও ঘটনা ঘটতে পারত না। সবই আমাদের নিয়তি দু’বেলা আমাদের মা মেয়েকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলতে লাগল। কারণ সব সম্পত্তি তোর দাদা মশাই মারা গেছে বলে টুকুর ঠাকুরমার হয়ে গেছে। আর টুকুর ঠাকুমা সবকিছুই উইল করে ওদের নামে দিয়ে দিয়েছে সুতরাং তোমাদের মা মেয়ের আর কিছু নেই, এবাড়িতে। তোমরা এ বাড়ি ছেড়ে যত শীঘ্র সম্ভব চলে যাও।

এসব কথা শুনে আমার ছোট ভাই ও নিকটস্থ এক ভগ্নিপতি মিলে কোর্টে কেস ফাইল করে দিল। কেস চলতে লাগল। তাই ওদের সঙ্গে আমাদের কথা বলা বন্ধ হল। মা মেয়ে আলাদা তোলা উনুনে রান্না করে খেতে লাগলাম।
সুযোগ বুঝে যযমানদের মধ্যে একজন ইনকমপ্লিট বাড়িটার মাথায় টিন দিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করে।
বাকি টিন, সিমেন্ট, বালি, ইট, দিয়ে নিজের একখানা ঘর বানিয়ে ফেলল।
তবু আমরা চুপচাপ রইলাম, অসময়ে লোক চটানো চলে না এর মাস খানেক পরে টুকুর বন্ধুর বাড়ি, টুকু গেলে টুকুকে টুকুর বন্ধুর মা বললে, তোর আর বিয়ে হবে না।
আমি যে বললাম, আমার জামাই এর বন্ধুর সঙ্গে তোর বিয়ে দিয়ে দিতে, তোর মার কানে সেটা ঢুকল না।
মা মেয়ে একা কিভাবে মামলা মোকদ্দমা সম্পত্তি সামলাবি।

ভীতু আমি সবসময় ভয় পেয়ে শেষ হয়ে গেলাম। ওর বন্ধুর মার কথা মত হতদরিদ্র ঘরের একটা সামান্যে চাকুরে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলাম। আমার ভাইয়ের এতে ঘোর আপত্তি থাকায় বিয়েতে উপস্থিত হলো না ।মানুষটা যাবার ৬ মাসের মাথায় যাহোক করে বিয়ে দিয়ে দিতে হলো, বিয়ে দিতে গিয়ে দোলপিঁড়ির মোড়ের জমি ও বিক্রি করতে হল, নগদের টাকা মেটাতে- ক্ষতিই ক্ষতি হতে লাগল।
মানুষ যখন একটা ভুল করে তখন মানুষের বুদ্ধি ভ্রম ঘটে, সে পরপর ভুল করতেই থাকে! আমারও তাই হল।

দাদা মশায়ের শত্রু পক্ষরা ওই জমিটা ক্লাবের বলে দখল করে নিতে চেয়েছিল, সেই জমি কোর্টে কেস করে উদ্ধার করেছিল কত কষ্ট করে পরিস্থিতির শিকার হয়ে তোর দাদা মশায়ের শখের অত কষ্টের জমিটা আমি হারালাম শত্রু পক্ষের আবারও  জয়জয়কার। অপরপক্ষে জাল দলিল করার দায়ে যার জেলে যাওয়ার কথা তার সঙ্গে তোর বাবা মানে টুকুর বর হাত মিলিয়ে কেশটা তুলে নিলে। বললে তোমরা ভাই বোনে আধা আধা ভাগ করে নাও, বাড়ি অর্ধেক ওদের হয়ে গেল।

আবারও তোর দাদা মশায়ের শত্রুপক্ষের জয় হল। আমার হাতের চারগাছা চুড়ি বেচে তোর দাদামশাই রান্নাঘর আর গোয়ালঘর বানিয়ে দিয়েছিল, সে আর আমার ভোগ হলো না। সেগুলো ওদের দিকে পড়ে গেল। আমার বুকের যন্ত্রণা ধিক ধিক করে জ্বলে,
আমার আর কোন কিছুই খেতে ইচ্ছা হয় না। এভাবেই সব সৎ ব্যক্তির চিরকাল সর্বনাশ আর অসতের জয়জয়কার।

প্রমা দিদাকে আবার ফিরে প্রশ্ন করল, তা দলিলে কি লেখা ছিল?

সে অনেক কথা বাপরে বাপ ! উইলে লেখা ছিল নয়না দেবীর বর্তমানে দুই পুত্র মারা গেলে, সম্পত্তির ৫০ শতাংশ ছোট ছেলে অবিবাহিত থাকায় মার হয়ে গেছে.। অপরপক্ষে বিবাহিত পুত্রের অর্ধেক মায়ের আর অর্ধেক বউ ও মেয়ের, অর্থাৎ বারোয়ানা চার আনা ভাগ।

যখন দেখল, উইল টি জাল খুব শীঘ্রই ধরা পড়ে যাবে এবং কিছুই পাবে না, তখন ওরা বুদ্ধি খাটিয়ে তোর বাবাকে রাজি করাল যে, আধা মানে চার আনা আছে, তার জায়গায় আট আনা পাচ্ছে, তোরা তো বেশি পাচ্ছিস, অর্থাৎ এতেই রাজি হয়ে যেতে না হলে বড় বিপদ হবে। বিপদটা যে কার হত সেটা কেউই বুঝতে চাইল না। আমার পক্ষে দাঁড়ানোর কোনও লোক ছিল না, তাই এই বিভাজন আমাকে মেনে নিতে হল। এর সঙ্গে যোগ হল টুকুর শ্বশুরবাড়ির সমস্যা। (ক্রমশ…) 🦋

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

এম. এ. করিম

নুরজাহান

 

 

মেঘনার বুকে ভাসমান
নাম তার নুরজাহান
জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম এক-
ছোট ডিঙি আর
বুক ভরা অভিমান,

যাযাবর নুরজাহান এই তার পরিচয়
নিত্য সে ভেসে বেড়ায় নদীর বুকে
ছোট খানি তরি তার
ঝড় বৃষ্টি তাতে কি ভরষা আল্লাহর
বেঁচে আছি এইতো বেশ
নেই কোন অভিযোগ,

সখ শুধু পান আর সুপারির মাঝে
মোটা কাপড় আর খাবার
সকাল দুপুর সাঁজে
নেই কোন আনন্দ তার
আছে অনেক অভিমান
পাওয়ার জন্য নয় কপালের লিখন।

নুরজাহান সে এক যুদ্ধা যুদ্ধ করে
নদীর জোয়ার ভাটার সাথে বৈঠা হাতে
প্রতিনিয়ত ভাগ্যের সাথে
আমৃত্যু এই যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিরস্ত্র হাতে।

স্বপ্ন অনেক দু চোখে তাহার
যদি পাই অনেক বেশি মাছ
পেট্টি ভরে খেয়ে পরে ঘুমাবো বার মাস।

 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

কবিতা নতুন ভোর

 

 

ভোরের আলো ফুটতেই মনের অন্ধকার চোরাবালির গলিগুজিতে আঁক কাটে,
অসংখ্য রং বেরঙের প্রজাপতি
যেন জরায়ুর নাড়ি ছিঁড়ে অসংখ্য
আলোর ফুটকি ইশারায় ডাকে।
অন্ধকারের শেষে আলোর বেশে
রঙে রঙে রঙিন হয়ে রঙের হাওয়ায়
ভেসে গিয়ে নতুন আলোর ঠিকানায়।
দুটো মন নানা উত্থান পতনে
বাঁধনছাড়া নূতনের ডাকে।
যেমন ক্লান্ত হরিনী সারারাত সংগ্রামে
বাঁচিয়ে নিজেকে মেলে ধরে ক্লান্ত শরীর
ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশে।
রাতের যন্ত্রণাগুলো কুয়াশা হয়ে
সূর্যের আলোয় টলমলে নতুন ভোর।

 

 

 

 

অভিজিৎ দত্ত 

প্রকৃত মানুষ

 

মানুষ পৃথিবীর সেরা প্রাণী
একথা তো আমরা সবাই জানি
কিন্ত মানুষের মধ্যেই কেন
এত অশান্তি,বিভেদ, দুর্নীতি?
কে এরজন্য দায়ী?

মানুষ হয়ে জন্ম নিলেই
হয় না কেউ প্রকৃত মানুষ
তারজন্য দরকার চেষ্টা, অধ্যবসায়
লেখাপড়ার চর্চা আর বিনয়।

ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখ
দেশ-দুনিয়ার যত ভালো কাজ
করেছে যেমন মানুষ
ক্ষতিও করেছে ততো।

জীবন তো আমরা
একবারই পাই
তবে বৃথা কেন করছো
এর অপচয়?

প্রকৃত মানুষ হতে
নিজেকে তৈরী করো
দেশ ও দশের কাজে
নিজেকে নিয়োজিত করে
উদাহরণ তৈরী করো।

 

 

 

 

সুফিয়া শিউলি 

নিদারুণ বাস্তবতা

 

সে পাহাড়ে মাথা রাখে
সাগরের ঢেউয়ে দোল খায় দেহ…
ফুল-পাখি-লতা-পাতার-
স্বপ্নঘুমে বিভোর থাকে তার চিত্ত!
জেগে থাকে আগুনপোড়া ঘাস
জেগে থাকে ঘুণধরা গাছ
মড়াডালে ক্লান্ত পাখি
রোদপোড়া উড়ন্ত পতাকার লাঠি!
এক নাবিকের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় তারা
এক যোদ্ধার স্বপ্নবিলাস ছেড়ে
জেগে ওঠার অপেক্ষায় তারা…
নতুন করে গাঢ় সবুজে-
লাল সুর্য দেখার অপেক্ষায় তারা…।

 

 

 

বুলবুল আহমেদ 

খাই খাই 

 

চতুর্দিকে চলছে শুধু
খাই আর খাই,
ভূমি খেকো বলছে ওরে
কোথায় ভূমি পাই।

বালু খেকো ঘুরছে সদা
নদ-নদীর ঘাটে,
ইজারাদারের নষ্টামিতে
ভরে গেছে হাটে।

লুটেরার দল ব্যাংক লুটে
নিচ্ছে কোটি টাকা,
অসহায়ের ঋণ শোধে
বসত-ভিটা ফাঁকা।

দোকানপাটে চাঁদাবাজি
আরেক খাই খাই,
আতি-পাতি মাস্তানদের
পকেট খালি নাই।

অফিস আদালতে দেখছি এখন
খাওয়ার দলটা ভারী,
সবাই মিলে চেটে পুটে
করছে বাড়ি-গাড়ি।

গ্রামে-গঞ্জে পাতি নেতার
অভাব কোথাও নাই,
ওদের দাপটে গরীব দুঃখী
ঘর ছেড়ে পালাই।

রাজনীতির ভণ্ডামিতে
ভরে গেছে দেশ।
শিক্ষাঙ্গনে ধর্ষণের
উৎসব হয়নাকো শেষ।

নাই নাই খাই খাই
কোথাও নাই খালি,
উচিত কথা বললে সবাই
দিবে আমায় গালি।

 

 

 

শাহী সবুর

অবুঝ মন

 

 

তুমি যাকে ভালোবাসো সে কি তোমায় ভালোবাসে?
মনরে তুমি ভেবে দেখো সময় কাটাও কার বা আশে?
তোমার চোখে ঝরলে পানি তার চোখে কি পানি ঝরে?
তোমার গায়ে লাগলে আঘাত সে কি তখন কেঁদে মরে?
যার পথো চেয়ে তোমার ঘুম আসে না নিশিত রাতে,
সে জন হয়তো তোমায় ভুলে ঘর বেঁধেছে অন্যের সাথে।
ছোট্ট একটা পৃথিবীতে মানুষ চলেন নানান রঙ্গে,
মনরে তুমি ভেবে দেখো করবে খাতির কার বা সঙ্গে?
চতুর্পাশে বহুরূপী রূপ চেনা সে কঠিন এখন,
ভুল ঠিকানায় পৌঁছে গেলে মন তুমি কি করবে তখন?
নকল প্রেমের ভিড়ের মাঝে পালায় গেছে ভালোবাসা,
প্রেম পিরিতি ফ্যাশন এখন হায় না পূরণ মনের আশা।
মোবাইলে ভালোবাসা বিকিয়ে দেয় সস্তা দামে,
ছলচাতুরি চলছে এখন পবিত্র সেই প্রেমের নামে।
একজন মানুষ হয়ে এখন দশ জনারে বিলায় মন,
বাইরে থেকে দেখায় সাদা ভিতরে কয়লার মতন।
প্রতারকের প্রতারণায় খাঁটি প্রেমিক দেশান্তরে,
প্রেম তো এখন সোনার হরিণ ধরবে তাকে কেমন করে?
স্বার্থপর এই পৃথিবীতে নেই এখন আর রীতিনীতি,
তবু কবির অবুঝ এ মন খুঁজে বেড়ায় প্রেম পিরিতি।।

 

 

 

 

দেবব্রত সরকার 

স্বাদ

 

 

আঙ্গুল তুলো না।
চোখ রাঙিয় না।
তোমার শব্দের ভাঁজে আমাকে লুকিয়ে রেখেছ।
আমি মাটি। আমি বায়ু। আমি জল। আমি আগুন।  আমি আকাশ
তবুও বুঝলে না।
আসলে বিজ্ঞানের ছাত্র।
সাহিত্য বা দর্শনের প্রশ্ন বিচিত্র
প্রেম আর প্রেম।
আর বিজ্ঞানের প্রশ্ন খোঁজা।
আমার অস্তিত্ব। শুরু থেকে শেষ।
আমাকে খোঁজার চেষ্টা কোরনা
বৃথা জীবন যাবে
আবার আসতে হবে
আমার নামের হাহাকারের জন্য
তখন আমি লীলা করে যাব
আর তুমি শক্তি নিয়ে খেলবে বারুদ বারুদ শব্দ।
বলি দেবে অজস্র নিষ্পাপের
যখন খ্যান্ত হবে। ধীরে ধীরে একাকিত্বব পাবে
আর পৃথিবীর সমস্ত মায়া খুঁজে পাবে…
তারপর বিজ্ঞান থেকে সাহিত্যে এলে
বুকে টেনে নেব।
জেনে রেখ আমার স্বাদ শুধুই প্রেম।

 

 

 

সানি সরকার

হরিণ ও ছয়টি দানব 

 

 

জন্মের কান্নার পর পৃথিবী জেনে ছিল

কোথাও একটা বিপর্যয় হল

প্রতিটি গীর্জায়, মসজিদ, মন্দির থেকে

জানান দেওয়া হল, একটি বিপর্যয় ঘটেছে

তারপর ছটা দানব, ছয় দিকে

ঘিরে নিয়ে ঘুরল হরিণটিকে

একদিন খুব অস্বাভাবিকভাবেই মাটির গন্ধ পেল হরিণটি

এবং কোনও ঝড় হল না, প্লাবন হল না, ঘুমিয়ে পড়ল হরিণটি

জঙ্গলের ভেতর ছয়টি দানবকে খুঁজল প্রতিবেশীরা

ছয়টি দানব ঘুমন্ত হরিণটির ছয় দিকে দাঁড়িয়েই হাসছে

 

 

 

ছবি : প্রীতি দেব, দেবব্রত সরকার, তাহমিনা শিল্পী ও আন্তর্জালিক 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment