



🍂কবিতাগুচ্ছ
কবি আমিনা তাবাসসুম এই সময়ের একজন উল্লেখযোগ্য তরুণ কবি। কবিতার স্রোতকে প্রতিহত করে নিজের কাব্যভাষা ও কাব্যরীতিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তার এ অবধি কাব্যপরিক্রমা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কবি কবিতার বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন। এবং একটি নিজস্ব পাঠকমণ্ডলী তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বসবাসকারী এই কবি প্রথাগতভাবে সাম্মানিক বাংলা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে কবির একান্ত জগৎ (বলা ভাল নেশা) বিভিন্ন পুস্তক পাঠের ভেতর নিজেকে আবৃত রাখা। সম্পাদনা করেন ‘আসা’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা। বাংলা ভাষার এই তরুণ কবির ইতিমধ্যে প্রকাশিত দু’টি কাব্যগ্রন্থ ‘দু’মুঠো চুমুর দিব্যি’ ও ‘মরণ-দ্যোতক’। আমিনার প্রকাশিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘প্রণত ছায়া প্রণম্য আগুন’। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতাগুচ্ছ। 🍁
আমিনা তাবাসসুম
ধর্মই কি ঈশ্বর
উদ্ভিন্ন চিন্তা ভেঙে ভেঙে পড়ে
‘অহং’ -শরিয়তি?
অথবা বৈষ্ণব?
কেবল ভক্তি নিয়ে কাটাকুটি খেলা
ব্রিফকেসে বন্দী বিশ্বাসের
প্রাণপণে চিৎকার
বেঁচে থাকা
রোজ ম’রি
মরে মরে বেঁচে থাকা
সমুদ্রের চাঁদ ছুঁয়ে তোমাকে পেয়েছি
গির্জার আলো ঘিরে
আদব, গোলপোস্টে উদ্বায়ু
জাদুকরী সন্তান-সন্ততি
সব ছেড়ে চলে আসি-
আহত পাখির মতো প্রেমিকের ওম
মিশে যেতে যেতে
মিশে যেতে যেতে
যুদ্ধবন্দী বুকে লাজুক চুম্বন
এখন
ধর্ম বলতে আমি তোমাকেই বুঝি
এবং ঈশ্বরও…
শামুকমিথুন
মুখচ্ছবি ঘিরে
একটা দুটো তিনটে
নেমে নেমে আসছে আলো, সিঁড়ি
কখনও একটা সমুদ্র ভেসে যায়
পাহাড়, অরণ্য
কিছুই তো বাঁধোনি
অবিশ্বাস্য নিরুপম আগুন
মোহনীয়, কমল, উদগ্রীব
শোয়ানো শামুকের ভিতর
পৃথিবীর কনকশালি
এখনও নিভে যায়নি
বাস্তুর ভিত ভেঙে গড়ে তোলা বাসর
কালিন্দীর জল, ঘট
বায়বীয় আয়ু ঘিরে প্রেম তুমি
এসেছো, আসছো
যেভাবে উত্তাল ঢেউ
উত্তাল কেউ
বুকের মধ্যে আসে
অনন্তেতর এই চিন্ময়ী প্রেম
পলকে পলকে তোমার অতিবৃষ্টির ভাবনায় চেতনা হারাই
আবার পলকেই বুকের রক্ত ছলকে ওঠে
তুমি সেই সৃষ্টির আদি লগ্নের প্রথম প্রেমিক
যে তার প্রেমিকাকে
বহু বহু যুগ ধরে বুকের খুব গোপন
এবং একান্ত নিজের খাঁচাটিতে
আটকে রেখেছিল
সেখানে নিরাশা আসে না
হতাশা অথবা দুঃখের রূপবৈচিত্র্য
ভেঙে ভেঙে পড়ে স্তরে স্তরে
অনন্তের থেকে তোমাকে পেয়েছি
অনন্তের থেকে তোমার স্পর্শ
একটা জীবন প্রেম ছাড়া
আর কী দিয়ে ভরে রাখতে পারে?
প্রণত ছায়া প্রণম্য আগুন
দূর থেকে সব নদী এক
সব আলো নদী
ঝরে পড়ে
হেসে ওঠে
ভেসে যায়
তারার আদর থেকে সবটুকু প্রেম
আর সবটুকু হৃদয়
তুমি তাকে ভুল বোঝো রোজ
অন্যায়ে ফুঁসে
রোজ রোজ
অথচ মেঘের থেকে ছুটি নিয়েছে যে পথিক
তাকে সুখ দেবে বলে
তাপ দাও
আগুন দাও
এবং ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত অন্ধকার
তার বুকে রেখে
মৃত্যুর নিশ্চয়তা দাও
এরপরেও
ওই নদী বেঁচে থাকে
আঘাতের ছিদ্র দিয়ে সুখ খুঁটে খায়
হে নির্দয় স্বার্থান্বেষী
এখানে পথিকের সুখ
এখানেই মানসীর সুখ
গাছেদের সব ছায়া সুনিবিড়
মাটি
স্বচ্ছতোয়া
খরস্রোত
নাকছাবির বিপাশা ভাঙল
চুম্বন পরাগ থেকে প্রসব করি
কুমকুম কাজল লিপস্টিক
আমার সিঁথিলগ্নে বাহুলগ্নে
তোমার আমিষ নিরামিষ পালক ছুঁয়ে রাখা মান্দাস
ডানদিকে লজ্জা গণ্ডুস
তোমার হালকা গোলাপী ঠোঁটে
একতারা হতে হতে
শিশিরগন্ধ, ফিশ ফ্রাই, মণিপদ্ম
সব মিশিয়ে ফেলি
তারপর
তোমার শরীর স্নানে
সাভানা প্রেইরি তৈগা
চিরে নিতে নিতে, নিংড়ে নিতে নিতে
ক্যামোফ্লেজ বাঘবন্দী খেলা
উঠছে নামছে, নামছে উঠছে
আগুন, বরফকুচি
শেষ পর্যন্ত তোমার অরণ্যে ডুবে যাওয়া
চাঁদ ও বেলিফুলের গর্জন
রাহুগ্রস্ত প্রেম ও সংকরায়ণ
ছুটন্ত ট্রেনের ভেতর অনন্তের ডাক থাকতে পারে না
অথচ বাইরের ফেলে ফেলে আসা রাজপথ
ঘর সংসার আলো রেখে
আমরা অনন্তের ডাক শুনছি
সীমার একধাপ নিচে থেকেই
আকাশ এখন শুভ্র নীল চাদর বিছিয়ে রেখেছে
যেন তোমার কোমল হৃদয়ের কোথাও
আঘাত না লাগে
অভাব না বোঝ
তোমার ঠোঁটের পাড়ে ছুঁয়ে যাওয়া
অদ্ভুত মোলায়েম হাসি
স্টেশনের স্থিরতায় দাঁড়িয়ে থাকতে শেখেনি
আর শেখেনি বলেই
তোমার কাছে এলে বুঝতে পারি
প্রেমে মিলিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কা নেই
থাকতেও পারে না
নকশালী বারমুডা
সময় ছিঁড়ে বেরোতে বেরোতে
নকশালী বারমুডা শেকল পাখি হয়ে যায়
ধান চাপা আলো আগুন রোদ্দুর মেখে
এক কোণে স্বপ্নের উলুধ্বনি
নিছক মেঘমদির করে তোলে
নিভন্ত চুল্লির থেকে স্নানকক্ষ
রতির আলাদিন
শীত থৈ থৈ শ্বাশত পোর্তুলিকা
এসব ভাবতে বসিনি বলেই
নিজের ঈর্ষণীয় স্তনের দবদবা বরফকুচি
শান্ত পালকসন্তান হয়ে
বরাবর কান ঘেঁষে চলে গেছে
একদিন বসন্তের নীল বন্যতায়
কোনো মানুষ সেসব দেখেনি
দেখেনি ফড়িং অথবা
গাংশালিক
দীর্ঘ দেবদারু রহস্য
নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছে দিন
এগিয়ে চলেছি তুমি আমি
ও এই রাতের স্তব্ধতা
আমার ঠোঁটের ওপর
মৃত্যু প্রতিদিন ভাব জমায়
এখানে হিংস্র আলেয়া নেই
মরীচিকার মতো
দু চোখে বেঁধে রাখি
পাষণ্ড নীরবতা
একটা নক্ষত্র
ক্রমশ বুকের গভীরে জায়গা করে নিচ্ছে
এখানে ফিরে যাওয়ার পথ নেই
ঈশ্বর সে পথে এঁকে দিয়েছেন
দীর্ঘ দেবদারু রহস্য
এবং আমাদের অনন্ত ঠিকানা
ঝিমিয়ে পড়া সন্ধ্যা
সারাদিন কেবলই ঘুম পায়
কিন্তু ঘুমোতে পারি না
চারিদিকে এত এত মশাল
এত এত আলোর মিছিল
তবুও
অন্ধকার গিলতে থাকে
সন্ধার ঝিমিয়ে পড়া বিষন্নতা
কিছুদূরে শেয়ালের ডাক
ঘাই হরিণীর বুক থেকে উঠে আসছে কান্না
পাখিটি তখনও আমার হৃদয়ে
চুপচাপ শুয়ে আছে
এই মুহূর্তে একটা নতুন সকালের জন্ম
একাকীত্ব দূর থেকে আরও দূরে
ক্রমশ এবং ক্রমশ
মিলিয়ে যাচ্ছে…
নূর-এ-তালাফুজ
ঘর ভর্তি অন্ধ আলোর সুদ
তাই
শালিক অথবা চড়ুই পাখিটি
নিলামে রাখে প্রকৃতির বাৎসল্য
নরম কেকের থেকে উৎসাহ ঝরে
গরম সমুদ্র থেকে উচ্ছ্বাস
মৃত ভাবতে থাকা আগুন
আসলে গুনতে থাকে জলের ঘনীভূত শব্দ
আমি কোনো অভিযোগ করিনা
সাহারার দক্ষিণ থেকে হেঁটে চলি গোবির বুকে
আবার নক্ষত্র থেকে সমুদ্রের পথ
নদীর তীরে বসে থাকে আর্তনাদ
খণ্ড খণ্ড মেঘ আর
বেলোয়ারি সৌন্দর্যের উৎসুক মন
একটা থেমে না যাওয়া নৌকো
চলতেই থাকবে
চলতেই থাকবে
যতক্ষণ সময়ের বুকে আশার মাহাত্ম্য
এই আনত তরাজু অর্ধযতির
লভ্যাংশ থেকে দুটো কবিতা পাড়লাম সমদুরত্বে
তারপর গোলা-বারুদ-ভয়
মিশিয়ে নিয়ে তৈরি হলো ঘটনাক্রম।
এখন আর নিঃশর্ত নেই কিছু
এলোমেলো গণ্ডি পেরিয়ে কথাদের দূর্বলতা অনেক।
তাই বিদায় দিই না অপরাহ্নকে
সমুদ্র হাতছানি দিয়ে ডাকলে
সরবত বানাতে সুবিধা হতে পারে
এ ভেবে কতক্ষণ আর মোরগের ডাক শোনা!
ঘড়িতে হাফ সেঞ্চুরির পর
তিল তিল করে তৈরি করা লভ্যাংশের ইমারত
উন্মাদ কবিতা উপোসী
তোমার সম্বোধনে আমি তখন “মঙ্গল গ্রহের ভূত”
ক্ষুধা নেই
পিপাসা নেই
জ্বলন্ত অঙ্গারে শুধু কবিতার স্বাদ-
এসবের লুকোচুরি শেষে
ক্ষিপ্ত পাগল হই
উন্মাদ কবিতা উপোসী
য খ ন ত খ ন।
কিন্তু এ বুক-
কচ্ছপ শিশুর মতো শুকনো।
তাই,
ঝাঁকে ঝাঁকে আর্তনাদ চিরে
অদৃশ্য চক্ষে আঁকি নিকোটিন খেলা।
চন্দনরূপিম
ভাঙা দেরাজ থেকে সবটুকু স্মৃতি ছেঁকে
ফেলে আসি
বিরাগ উপকূলে
বুকের মধ্যে নিম্নচাপ প্রতিদিন
প্রতিদিন খলবল করে
রাজকীয় অনুরাগ, রূপচন্দন
এসব ছিড়ে খুঁড়ে তোমার কাছে বসি
কোজাগরী আহ্লাদ আসে চোখের সম্মুখে
অথচ প্রতি পল ডুবে যায়
তিন কাটা যন্ত্রের মধ্যে
তবু তুমি-আমি ‘আমরা’ হলেই
তুমুল আলোড়ন ওঠে
জ্যোৎস্নার গভীরে
🍁অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
