Sasraya News

Musical Village of Mali | মালির কিরিনার ঘরে ঘরে সঙ্গীতের জন্ম, একটি সুরে বাঁধা গ্রাম

Listen

শুভ্রাংশু চন্দ ★সাশ্রয় নিউজ : কখনও কখনও সুরই হয়ে ওঠে অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্বেরই এক বিরল উদাহরণ পশ্চিম আফ্রিকার মালি (Musical Village of Mali) দেশের দক্ষিণের ছোট্ট গ্রাম কিরিনা (Kirina)। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘর, ধুলো উড়তে থাকা কাঁচা পথ, ছেঁড়া জামা-কাপড়ে জর্জরিত মানুষ।সব মিলিয়ে এক হতদরিদ্র গ্রাম। অথচ এই রুক্ষ মাটিতে সৃষ্টির সোনার ফসল ফলছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। কারণ, এ গ্রামের প্রতিটি মানুষ কোনও না কোনও ভাবে জড়িত সঙ্গীতচর্চায়।

মালির সুরেবাঁধা গ্রাম। আফ্রিকা। ছবি : সংগৃহীত।

স্থানীয় গবেষকরা আন্দাজ করেন টানা ৭৫টি প্রজন্ম ধরে কিরিনার বাসিন্দারা গান গেয়ে চলেছেন। আট থেকে আশি প্রত্যেকেই গায়ক, বাদক, বা নৃত্যশিল্পী। এমনকী শিশুদের প্রথম খেলনাই সেখানে বাদ্যযন্ত্র। কেউ শেখে কোরা (Kora)। কোরা একধরনের তারের যন্ত্র, কেউবা বাজায় বালা (Balafon), যা কাঠের জ়াইলোফোন। কারও হাতে থাকে জেম্বে (Djembe), কারও কাঁধে দুনুন (Dunun)। গানের মধ্যে দিয়েই সেখানে রোজকার জীবনযাপন। কখনও খাবার পেলেও গাইতে কেউ ভোলে না।গ্রামটির একটি বড় অংশ গ্রিয়ট (Griot) সম্প্রদায়ের। তাঁরা ঐতিহ্যগতভাবে কবি, ইতিহাসবিদ ও সঙ্গীতজ্ঞ। মধ্যযুগীয় আফ্রিকায় মৌখিক ইতিহাস রক্ষার গুরুদায়িত্ব ছিল এদের উপর। কিরিনার ইতিহাস ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে শুরু হলেও সঙ্গীতের ধারা সেখানে কোনওদিন থেমে যায়নি। স্থানীয় কৃষকরা সকালে মাঠে হাল ধরেন। রাতে রেওয়াজ করেন। এমনকী জমিতে কাজের সময়ও গেয়ে যান হাজার বছরের পুরনো লোকগীতি।

এই মাটির গন্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে একটি ব্যতিক্রমী সঙ্গীত বিদ্যালয়। ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল ‘ইকোল দে মিউজ়িক দে কিরিনা’ (Ecole de Musique de Kirina)। এটি এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগ। এই স্কুলে শেখানো হয় কোরার তার টানা থেকে শুরু করে তালবাদ্যের ছন্দে পা ফেলা পর্যন্ত সব কিছু। শুধু শেখানোই নয়, সুযোগ দেওয়া হয় বিশ্বমঞ্চে গান পরিবেশনেরও। এখানকার একাধিক তরুণ শিল্পী এর মাধ্যমে দেশের বাইরেও পৌঁছে গেছেন। এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মতে, “কিরিনার ঐতিহ্য অনন্য। আমাদের কাজ, এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও ছড়িয়ে দেওয়া। অনেকেই গানকে পেশা করতে চান, আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” স্কুল প্রাঙ্গণে তৈরি হয়েছে রেকর্ডিং স্টুডিয়ো, বড় নাচের ঘর। দেশজ সঙ্গীতের আধারে গড়ে উঠছে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশনা। আবার ওই গ্রামে আয়োজিত হয় ১৫টি সঙ্গীত অনুষ্ঠানের একটি। তখন যেন জেগে ওঠে গোটা কিরিনা। শুধু গ্রাম নয়, আফ্রিকার বহু জায়গা থেকে মানুষ আসেন এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। উল্লেখ্য যে, বিশ্বসঙ্গীতের দরবারেও কিরিনার প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় বহু শিল্পীকে। পশ্চিম আফ্রিকার সেনেগালের কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী বাবা মাল (Baaba Maal) নিজে কিরিনায় গিয়ে স্থানীয়দের গান রেকর্ড করেছেন। তাঁর মতে, “এই গ্রামের গানের মধ্যে যে আত্মা রয়েছে, তা আধুনিক স্টুডিয়োতেও খুঁজে পাওয়া যায় না।”

আফ্রিকার সঙ্গীত মানচিত্রে মালি দেশের অনেক শিল্পী ইতিমধ্যেই ইতিহাস গড়েছেন। আলি ফার্কে তুরে (Ali Farka Touré), ফাতোউমাতা দিয়াওয়ারা (Fatoumata Diawara), সালিফ কেইতা (Salif Keita), ওউমোউ সাঙ্গারে (Oumou Sangaré), আমিনাতা কামিসোকো (Aminata Kamissoko), তাঁদের কেউ কিরিনার বাসিন্দা না হলেও, তাঁদের সুরের উৎস এক। এঁরা সকলেই মালি দেশের মাটির সঙ্গে জড়িত, আর সে মাটির গন্ধ মিশে আছে কিরিনার প্রতিটি গানে। বিশ্বের বহু উন্নত শহরে যেখানে সঙ্গীত ধীরে ধীরে ‘পণ্যে’ পরিণত হয়েছে, সেখানে কিরিনা যেন এক ব্যতিক্রমী বাতিঘর। এখানে সুর কোনও বিলাসিতা নয়, বরং বেঁচে থাকার ভাষা। দারিদ্র্যের গায়ে জড়ানো সুরের চাদর। এই কিরিনা আজ বিশ্ববাসীর কাছে এক অনুপ্রেরণা।

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Sneha Ullal | ঐশ্বর্যর ছায়া থেকে নিজের আলাদা পরিচয়, ভাইজানের ‘নকল রাই’ স্নেহা কি ফিরছেন রুপালি পর্দায়?

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read