Sasraya News

Monday, March 31, 2025

Indian Population : ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আসন পুনর্বিন্যাস

Listen

ভারতে সাধারণত গর্ভধারণ হয়ে থাকে ১৯-৪৯ বছরের মহিলাদের মধ্যে। অস্থায়ী ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে কন্ডোম এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা(NFHS-5) বলছে, ৯.৪ শতাংশ মহিলা সুস্থ থাকাকালীন একাধিক সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। প্রায় ২১ মিলিয়ন মহিলা গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার সুযোগ নেয় না। সরকারি বেসরকারি কোনও এজেন্সিও ওই মহিলাদের কাছে পৌছতেও ব্যর্থ হয়। যদিও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নারীর স্বাধীন অধিকার আছে। লিখেছেন : দীপেন্দু চৌধুরী 

 

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

শ্চিমবঙ্গ সহ দেশের যে কোনও রাজ্যের একটি শহরতলি বেছে নিলেই হবে। দক্ষিণ কলকাতার শহরতলি বারুইপুর বা সোনারপুর। ছোট্ ছোট শহরের প্রধান বাজার বা চারমাথার মোড়। গিজ গিজ করছে মানুষ। মানুষ আর মানুষ। দুর্গাপুজো, ঈদ, খ্রিস্টমাস বা বড়দিনের উৎসবের সময়ের কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন থাকে না। উত্তর বা দক্ষিণ শহরতলির ট্রেনে উঠলেও একই অভিঞ্জতা। থিক থিক করছে মানুষ আর মানুষ। জনবিস্ফোরণ। বিশ্বায়ন উত্তর সময়ের জনবিস্ফোরণ। ভারতে জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালের ৯-২৮ ফেব্রুয়ারি। জনগণনার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ হয় একমাস পরে ৩১ মার্চ, ২০১১। ২০১১ সালে জনগণনায় ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১,২১০,১৯৩৪২২ কোটি। বা ১৩০ মিলিয়ন। কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২১ সালে দেশে আদমশুমারি স্থগিত হয়ে যায়। ২০২৪ সালে ১৬তম ভারতীয় জনগণনা দু’রকম ভাবে হওয়ার কথা। বাড়ি গণনা এবং জনসংখ্যা।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

কিন্তু তার আগে যে বিষয়টা নজর কাড়ছে সেটা হল গুজব। ভারতে নাকি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেশি। এবং সরকারি উদ্যোগে পরিবার পরিকল্পনায় অংশ নিতে আগ্রহী নয় তারা। ভিত্তিহীন এই তথ্য দাবী করছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিনকেও জনসংখ্যার নিরিখে একদিন টপকে যাবে ভারত। এর সঙ্গেই যুক্ত আছে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক বিষয়। যেমন সামাজিক অপ্রাচুর্য, অনাহার, শিশু অপুষ্টি বা দুর্ভিক্ষ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন।

 

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

ভারতের জনবিস্ফোরণ এই আশঙ্কাকেও তরান্বিত করছে। একটি দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আর্থ-সামিজক ও জলবায়ুর উপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।

 

২০১৯-২১ দু’টি স্বাস্থ্য বছরে কমে হয় ২.০ শতাংশ। ২০২০ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘দ্য ইন্সটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যাড এভ্যালিউশন’ সমীক্ষা রিপোর্ট। ওই রিপোর্টেই উল্লেখিত তথ্য উঠে এসেছে। ওই রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যা ২০৪৮ সাল নাগাদ আনুমানিক ১.৬ বিলিয়ন হতে পারে। সম্প্রতি একই কথা বলছে, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। তাদের বক্তব্য ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। কিন্তু বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে, জনবিস্ফোরণ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে পরিষেবা এবং লগ্নির চাহিদার ক্ষেত্রে।

 

আমাদের দেশের ক্ষেত্রে অভিযোগ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় পরিকল্পিত ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ মানে না। যদিও এই অভিযোগ নতুন কিছু নয়। পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অঞ্জতার সুযোগ নিয়ে এই ধরণের অপপ্রচার চলছে স্বাধীনতা উত্তর সময়কাল থেকেই। একুশ শতাব্দীতে এসে যেটা আরও প্রকট হয়েছে। বিয়টাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের রাজনীতিও বলছেন সমাজতত্ববিদরা। এই ধরণের ভুল তথ্য থেকে তৈরি হয় সামাজিক অস্থিরতা। নীতি তৈরির ক্ষেত্রেও সমস্যা ডেকে আনে। যেমন কঠোর ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ করার নীতি। বিষয়টা আন্তর্জাতিকস্তরেও আলোচিত।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

ভারতে সাধারণত গর্ভধারণ হয়ে থাকে ১৯-৪৯ বছরের মহিলাদের মধ্যে। অস্থায়ী ভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে কন্ডোম এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার হয়। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা(NFHS-5) বলছে, ৯.৪ শতাংশ মহিলা সুস্থ থাকাকালীন একাধিক সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। প্রায় ২১ মিলিয়ন মহিলা গর্ভনিরোধক ব্যবস্থার সুযোগ নেয় না। সরকারি বেসরকারি কোনও এজেন্সিও ওই মহিলাদের কাছে পৌছতেও ব্যর্থ হয়। যদিও একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নারীর স্বাধীন অধিকার আছে। সে সন্তানধারণ করবে কী করবে না। এখানে কোনও রকমের নিশেধাঞ্জা থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। যেমন কেরল এবং তামিলনাড়ু রাজ্যে সন্তানধারণের স্বাধীনতা যে কোনও পরিবারের আছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি পরিবার স্বাধীন ভাবে সিধান্ত নিতে পারে।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন। তৃতীয় দফায় সরকার গঠনের পরে চলতি আর্থিক বছরের বাজেটে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ টানার কথা। কী ভাবে এই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব তার জন্য মোদী সরকার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরির কথাও ভাবছে। উল্টো পথে হাঁটছেন এনডিএ জোট সরকারের অন্যতম শরীক তেলেগু দেশমের প্রধান তথা অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু। তিনি ঘোষণা করেছেন, তাঁর সরকার সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আইন তৈরির চিন্তা-ভাবনা করছে। কারণ রাজ্যের জনসংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বয়স্কদের হার বাড়ছে। একই সমস্যা তামিলনাড়ুতে। কিছুদিন আগে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন গণবিবাহের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন, আপনারা কেন ১৬টি সন্তানের লক্ষ্য নিচ্ছেন না? তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের জনসংখ্যার হার কমতে থাকলে যুবশক্তির হারও কমে যাবে। পাশাপাশি লোকসভায় তামিলনাড়ুর প্রতিনিধিত্ব কমবে। ফলে কেন্দ্রীয় কর বন্টনে রাজ্যের ভাগও কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব শৈলজা চন্দ্র বলছেন, সন্তান উৎপাদনের হার এ ভাবে বদলানো যাবে না। গত কয়েক দশক ধরে দক্ষিণের রাজ্যগুলি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এখন আচমকা বেশি সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে লাভ হবে না।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ ভারত। ভবিষ্যতে চিনের জনসংখ্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS-5)-এর রিপোর্টে প্রকাশ, ভারতের শিশু জন্মহার নিম্নগামী ছিল। ১৯৯২-৯৩ স্বাস্থ্য ক্যালেন্ডারে ছিল ৩.৪ শতাংশ অন্যথায় ২০১৯-২১ দু’টি স্বাস্থ্য বছরে কমে হয় ২.০ শতাংশ। ২০২০ সালে ‘দ্য ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘দ্য ইন্সটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যাড এভ্যালিউশন’ সমীক্ষা রিপোর্ট। ওই রিপোর্টেই উল্লেখিত তথ্য উঠে এসেছে। ওই রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে, ভারতের জনসংখ্যা ২০৪৮ সাল নাগাদ আনুমানিক ১.৬ বিলিয়ন হতে পারে। সম্প্রতি একই কথা বলছে, এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। তাদের বক্তব্য ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। কিন্তু বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে, জনবিস্ফোরণ নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে পরিষেবা এবং লগ্নির চাহিদার ক্ষেত্রে।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

জনবিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণে নতুন একটি প্রস্তাবের কথা বলছে বিরোধী দলগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া জোট’। গত বছরের এপ্রিল মাসে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের নেতৃত্বে ‘অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন ফর সোশ্যাল ফোরাম’ একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। ‘সামাজিক ন্যায় বিষয়ক’ ওই আলোচনা চক্রে বিরোধী দল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এসপি, আরজেডি, আপ, বিআরএস, এনসি এবং সিপিএম নেতৃত্ব অংশগ্রহণ করে। সমস্ত বিরোধী দলের নেতৃত্ব যৌথভাবে জাতিভিত্তিক জনগণার দাবি তোলে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ইস্যুর পাশাপাশি চর্চার বিষয় দেশের আসন পুনর্বিন্যাস। বেশ কিছুদিন হল তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে আসন পুনর্বিন্যাস ইস্যুতে সরব। নতুন জনগণনার পরে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হলে তামিলনাড়ু সহ দক্ষিণের রাজ্যগুলির লোকসভা আসন কমে যাবে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি নতুন জনগণনায় লাভবান হবে। ওই রাজ্যগুলির আসন সংখ্যা বেড়ে যাবে। এই আশঙ্কায় স্ট্যলিনের নেতৃত্বে ডিএমকে সহ দক্ষিণের কয়েকটি রাজনৈতিক দল বেশ কিছুদিন থেকেই সরব। পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশারও আসন কমে যাওয়ার কথা। যৌথ অ্যাকশন কমিটি তৈরি করে ২২ মার্চ ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। ওই বৈঠকে বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা গেলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাননি। তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, বিহার সহ তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোট আছে। ওই চারটে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে পুনর্বিন্যাস হচ্ছেও না। ২১ মার্চ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু পোড় খাওয়া নেতার মতোই বিষয়টা খুঁচিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ভাষা নিয়ে ডিএমকে বিভাজনের বিষ ছড়াচ্ছে।’ স্ট্যালিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ আগেই তুলেছিলেন।
২২ মার্চের বৈঠক প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে ডিএমকের শীর্ষনেতা স্ট্যালিন বলেছেন, ‘এটি নিছক বৈঠক নয়। এক আন্দোলনের সূচনা, যা দেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবে। আমরা একসঙ্গে ন্যয্য পুনর্বিন্যাসের লক্ষ্য পূরণ করব।’ ২২ মার্চ স্ট্যলিনের ডাকা জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির প্রথম বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাশ করান হয়েছে। লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে মোদী সরকারের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকলেই একমত।

ছবি : প্রতীকী। সংগৃহীত

 

বিভিন্ন দলের নেতারা উদ্বেগ জানিয়েছেন। এবং লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস আরও ২৫ বছরের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে সর্বস্মমতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে।
ওই দিনের মহা বৈঠেকে উপস্থিত ছিলেন, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার, সিপিআই নেতা বিনয় বিশ্বম, বিআরএস নেতা কেটি রাম রাও, বিজেডি নেতা সঞ্জয় বর্মা এবং এমআইএমের ইমজিয়াজ জলিল। কিছুদিন আগে সংসদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের রাহুল গাঁধি দাবি করেছেন, জাতি গণনার ৭০ শতাংশের বেশি কাজ তেলেঙ্গানা সরকার শেষ করে ফেলেছে। খুব তাড়াতাড়ি ওই সরকার বিস্তৃত তথ্যও প্রকাশ করবে। বিরোধীদের চাপে কেন্দ্রীয় সরকার যদি জাতগণনা করতে বাধ্য হয় তাহলে আসন পুনর্বিন্যাসের নিয়মে কি পরিবর্তন করা হবে? এখন ভেবে দেখার বিষয় ভারতের জনসংখ্যা সত্যিই নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন আছে? না নেই? থাকলে কোন পথে হবে?

ছবি : প্রতীকী ও সংগৃহীত

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | 23 rd March 2025 | Issue 57 || রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল, ২৩ মার্চ ২০২৫। সংখ্যা ৫৭

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment