



পিনাকী চৌধুরী :: ভারত তো বটেই, এমনকি সারা বিশ্ব এই নামেই চেনে মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রকে (Cyclone Man Mrutyunjay Mahapartra) অনেকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে বশ করবার ক্ষমতা রাখেন এই বিশিষ্ট মানুষটি। অতীতে ফণী, আমফান, তিতলি সহ একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সঠিক পূর্বাভাস দিয়ে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এমনকি সম্প্রতি যে ‘দানা’ নামক ঘূর্ণিঝড় কোথায় ল্যান্ড ফল করবে, সেই বিষয়ে বৈদেশিক আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইটগুলো যখন বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ল্যান্ড ফলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, তখন দিল্লির মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র এবং তাঁর টিম পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, দানা ঘূর্ণিঝড় ওড়িশার ভেতর কণিকা থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মাঝামাঝি কোথাও আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড়। বাস্তবে হয়েছিলোও তাই। ‘দানা’ ঘূর্ণিঝড় ওড়িশায় আছড়ে পড়েছিল। ১৯৭১ সালে এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ওড়িশার উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালিয়েছিল। গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ছয় বছর বয়সী এক বালক (পড়ুন মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র) হাঁ করে দেখেছিল প্রকৃতির সেই তাণ্ডবলীলা। বস্তুতঃ তাঁদের পরিবার এবং সারা গ্রামের ফসল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পুরো একবছর ধানের পরিবর্তে তাঁদের গমের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র পরবর্তীকালে ভেবেছিলেন কীভাবে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া যায়, যাতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়!পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তিনি চাঁদি পুরে DRDO অফিসে কাজে যোগদান করেন। কিন্তু সেই কাজে তাঁর মন বসল না। ১৯৯২ সালে তিনি পুণের আইএমডি-তে (IMD) যোগদান করেন। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে তিনি কর্মরত। ২০১৯ সালে মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাস্তবে ২০০৭ সালের আগে পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের চেষ্টায় ২০০৯ সাল থেকে আবহাওয়া বিজ্ঞানে ব্যাপক উন্নতি হতে থাকে, সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নতুন নতুন আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা শুরু হয়, যার ফলে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম ভবিষ্যতবাণী, বাতাসের গতিবেগ ইত্যাদি বিষয়ে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয় ভারতে। প্রসঙ্গত, মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) -এর স্থায়ী সদস্য।
ছবি : সংগৃহীত
