



শিশুমন : প্রাথমিক শিক্ষা, অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষিকা…
বর্তমান সময়কালে প্রায় সমস্ত মা ও বাবা-ই চিন্তিত তাঁদের সন্তানের মন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। অনেকেই আবার অতি চিন্তায় পড়ে যান, তাঁদের সন্তানটি ঠিক মতো বড়ো হচ্ছে তো? লিখেছেন : সানি সরকার
মনের খাবার? তা আবার কেমন? তেমন আবার হয় নাকি? সত্যিই হয় কি? চলুন দেখি, এই ছোট্ট জিনিসটি আসলে কেমন! হ্যাঁ, ছোট্ট অথচ এর বিস্তৃতি কত একটু দৃষ্টি ফেরালেই আমরা অবাক হব!
বাংলায় খুব প্রচলিত একটি কথা আছে, মনকে যেমন সওয়াবে তেমন সইবে। এ কথাটি খুব প্রচলিত সত্যি ও সত্যি। ‘মন’ শব্দটি খুব ছোট কিন্তু তীব্রতা অভাবনীয়। আর মন-ই হল মানবদেহের পাকশালা ও পাঠশালা দু-ই। সেটা কেমন? তাহলে তলিয়ে যেতে হয় অনেক। কিন্তু এই লেখায় আমরা অত দূর পর্যন্ত যাব না। আমরা এখানে শুধু দেখব, মন কীভাবে শরীরকে পরিচালন করে, একজন নেতা বা ক্যাপ্টেনের মতন-ই।
একটি শিশুমন সাদা খাতার মতো পরিষ্কার থাকে, তা তো কারও অজানা নয়। তাহলে কীভাবে একটি শিশুমনকে সুস্থ্য, শিক্ষিত ও পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে দেয়া হয়? মনে রাখতে হবে, একজন শিক্ষার্থীর মনোযোগ তৈরি হয় তার শিশুকাল থেকেই। কিন্তু কেমন করে? চমৎকার উদাহরণ দিয়েছেন বিশিষ্ট কবি, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক তরুণ সান্যাল। অধ্যাপক সান্যাল একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন : একজন শিশুর মানসিক পরিবর্তন হয় সে যখন নিজের ভাষায় কথা বলে তখন থেকেই। অর্থাৎ শিশুবেলা থেকে। ওঁ-আরও বলেন : একজন শিশুর প্রথম শিক্ষক তার অভিভাবক। আর সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তার মা। শুধু তা-ই নয়, একটি শিশুর প্রথম বর্ণ পরিচয় হয় তার মায়ের কাছেই। অর্থাৎ এখানে কোনও দ্বিধাই নেই, একজন শিশুর প্রথম শিক্ষক তার মা। অধ্যাপক সান্যাল খুব চমৎকারভাবে ওই দুই সাক্ষাৎকার শিকারীকে বলেছিলেন, একটি শিশু কীভাবে স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে তার অভিভাবক বাবা-মায়ের থেকে পাঠ গ্রহণ করে। তাঁর বলার ধরণ ছিল এরকম : ওই যে দেখছ আকাশ, আকাশে আলোর মতো আসলে এগুলো তারা। তারা রাতের আকাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ওই যে দেখছ, পেটে আলো নিয়ে ঘুরছে ওগুলো আসলে পতঙ্গ, নাম জোনাকি। ওই যে দেখছ, আকাশে হলুদ, গোল থালার মতো। ওটা চাঁদ। ও-আমাদের রাতের প্রকৃতিতে আলো দেয়। আর ওই যে দেখছ, জলের ওপর ভেসে যাচ্ছে কিছু, স্রোতে প্রবাহমান ওটা নদী। এবং নদীর ওপর ভাসমান ওগুলো নৌকো। আমরা নৌকোয় করে যাতায়াত করি।…
তাহলে একটি বিষয় পরিষ্কার করে দিলেন অধ্যাপক সান্যাল, একজন শিশুর মনের ভিতরে তার মা-বাবা বা অভিভাবক প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি খুব সচেতন ও কখনও অচেতনভাবেই গেঁথে দেন। যে-শিক্ষা ও শিক্ষকের ঋণ শিশু আজীবন বহন করে। আবার এই যে তাঁদের ভূমিকা, তা সাধারণ কথোপকথনের মাধ্যমেই। এই কথোপকথনই শিশুমনের খাদ্য, তেমনি তা শিশুর মনকে পুষ্ট করে তোলে। তাঁরা একজন দায়িত্বশীল শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন নিভৃতেই।
ওপরের প্যারাগ্রাফ থেকে এটা স্পষ্ট : যখন একজন শিশুর অনুভূতি হয় ও ইমাজিন করতে শেখে তার মনের ভাষা বা কথা বলতে শেখে আর আগে থেকেই। ওই সময় মনকে তার মা বা অভিভাবক কল্পনা করতে শেখান। কল্পনা শব্দটি নিয়ে আবার কোনও কোনও মনোবিজ্ঞানীদের ভেতর মতপার্থক্য আছে। কেউ মনে করেন, কল্পনা বলে আমরা যা ভাবি, বা চিন্তা করি তা আমাদের মনের ভেতর জ্বলতে থাকা অনবরত খননের বহিঃপ্রকাশ অর্থাৎ সত্যিকারের কল্পনার বাস্তবায়ন। সুতরাং কল্পনা এই শব্দটির প্রয়োগ মনের শক্তি বা ক্রিয়া-কলাপের স্ফূরণ করা। আবার আরেক দল এঁদের একদম নস্যাৎ করে দেননি। বরং তাঁদের যুক্তির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন আরও একটু। যেমন, একজন শিশুকে যা শেখানো যাবে তা-ই শিখবে। যা ভাববে ভবিষ্যতে তা-ই বাস্তবায়িত হবে। যেমন একজন সদ্য কিশোর-কিশোরীকে যখন কেউ জিজ্ঞেস করেন, তুমি আরেকটু বড় হয়ে ভবিষ্যতে কী হতে চাও? ও-তখন অকপটে উত্তর দেয়, আমি শিক্ষক, মহাকাশচারী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, নেতা… হব। প্রত্যেকের ইচ্ছে মন-এর ভেতর ঘূর্ণন তৈরি করে ও একেকটি আকার ধারণ করে। কারণ এই যে প্রকাশ ও মনস্কামনা বহিঃপ্রকাশ তা আসলে ওর মনের অভ্যন্তরে অচেতনে বেড়ে ওঠা ইচ্ছের ক্ষরণ।
মনে রাখতে হবে : একজন শিশুর অনেক অনেক সুন্দর ও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ বাঁধা থাকে তার মা-বাবা (অভিভাবক) ও প্রাথমিক শিক্ষকদের হাতে। তেমনি অনেক বড়ো ও ভূমিকা থাকে চারপাশের পরিবেশেরও।
ছবি : প্রতীকী
