



মেসিকে এঁকেই অনন্য অধ্যায় সূচনা করল গ্রামের ছেলে কিরণ
সাশ্রয় নিউজ ★ কলকাতা : কিরণ চন্দ্র মণ্ডল। ছবি এঁকেই ভবিষ্যতে অনেক দূর পাড়ি দিতে চান। তার আগে আর্ট কলেজে চান্স পাওয়াই লক্ষ্য। যখন ছবি আঁকেন, নিজেকে সম্পূর্ণ সেই ছবির ভেতর প্রোথিত করে ফেলেন। একজন শিল্পীমনের সবটুকু দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ছবির প্রাণ। তবে ঠিক কীভাবে একটি ছবির ভেতর তিনি প্রবেশ করেন? তা নিজেও জানেন না। কিন্তু একবার ছবির ভেতর নিজেকে সেঁধিয়ে দিলেই আর পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে কোনও সম্বিত থাকে না। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে এমনই ঘটেছে।

কী হয়েছিল সেই মুহূর্তে? সম্প্রতি আর্জেন্টিনা ফুটবলে বিশ্ব চাম্পিয়ন হয়। ঠিক সেই সময়ই মেসিকে নতুন করে চেনেন, মুর্শিদাবাদ জেলার কোদলা গ্রামের কিরণ চন্দ্র মণ্ডল। তবে খেলা নিয়ে কিরণের আলাদা কোনও আবেগ বা আগ্রহ নেই। তাহলে মেসির ছবি আঁকলেন কেন? অকপটে জানান কোদলা উচ্চ বিদ্যালয়-এর এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, না। খেলা নিয়ে একদমই আগ্রহ নেই। দেখলাম, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতল। মেসিকে নিয়ে তোলপাড় চাদ্দিক। আমি ওঁকে দেখলাম। একটা মুখের ভেতর কত কিছু খেলা করে! ওই মুখের ভেতর আবেগ, যুদ্ধ করার আগুন, বিষাদ, আনন্দ সবকিছু মিলেমিশে গিয়েছে। আমার প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, ছবিটি সময়ের একটা সম্পদ হয়ে থাকবে নিজের কাছে। প্রায় দু-মাস ছবিটির পেছনে সময় গিয়েছে। ওই দু-মাস আমি আমার ভেতর ছিলাম না। ভুলে গিয়েছিলাম, নাওয়া-খাওয়া, ঘুমনো। এবং শারীরিকভাবে অসুস্থও হয়ে পড়ি। তখন প্রতিদিন ভোরের গোধূলি পেরিয়ে আমি সূর্যোদয় দেখতাম।

কিরণ জানান, আঁকার স্যর একটি Exhibition করেন। পাশের গ্রাম কাঁঠালিয়াতেই। স্যরের ওই উদ্যোগ আমার খুব ভাল লাগে। সেই Exhibition- এ অনেকের অনেক ছবির ভেতর আমার আঁকা ‘মেসি’ ফার্স্ট হয়। বেশ আবেগাপ্লুত হয়ে ও-বলেন, যদি সুযোগ পাই কোনও দিন আমার আঁকা ছবিটি লিওনেল মেসি-এর হাতে তুলে দেব! কবে? কীভাবে? জানি না! ও-অত বড় মাপের একজন সেলিব্রিটি!

মানুষের মুখ আঁকতে ভালো লাগে ওঁর। মুখ দেখতেও। মুখের ভেতর থেকেই কিরণ ছবির একাত্মতা অর্জন করেন। তাই কিশোর শিল্পী, কেবল পোর্টেট আঁকেন। না, রঙ তুলিতে নয়। পেন্সিল-চারকোলে। কেন? রঙ ভালো লাগে না বুঝি? কিরণ জানান, না ঠিক তা নয়। আসলে এই দুইয়ের একটা গল্প আছে। কী গল্প?
কিরণ জানান, তাঁর বাবা ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর সঙ্গে ভারসাম্য না থাকার জন্য খুব অল্প বয়সেই কাজ নিতে হয়। এখনও অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন সন্তোষজনক নয়। তবে বাবা নবকুমার মণ্ডল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবহন নিগম-এ কন্ট্রাকচ্যুয়াল কাজ করেন। পরিবারের সমস্ত চাহিদা মেটান। মানুষটিকে আর কখনওই রঙতুলি কিনে দেওয়ার জন্য জোর করতে ইচ্ছে হয়নি। (স্মিত হেসে) দেখুন না, আমি তো চারকোল ও পেনসিলের সঙ্গে দিব্য আছি। সাধ্যের ভেতর! তবে আমি যে অন্য আঙ্গিকে কাজ করতে পারি না, এটা নয়। ওয়াটার কালার করতেও ভাল লাগে। কিন্তু চারকোল ও পেন্সিলের সঙ্গে অদ্ভূত সখ্য হয়ে গিয়েছে।

বাড়িতে ছোট ভাই কৃষাণুও চমৎকার ছবি আঁকে বলে জানান কিরণ। বাবা, মা, ভাই, ঠাকুমা, জ্যেঠু, জ্যেঠিমা, কাকু, কাকিমা, দাদা, ভাই-বোন নিয়ে মজার সংসারিক পরিমণ্ডল কিরণের। তাঁর কথায়, যৌথ পরিবারের মজাই আলাদা। জানেন, আমাদের পরিবারে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা উনুন জ্বললেও আমাদের হৃদয় কিন্তু একটিই। এই নবীন শিল্পীর শিল্পকলায় কোনও নিয়মিত প্রশিক্ষক ছাড়াই তুলির টান হৃদয়ের টান হয়ে গিয়েছে।
