



কুন্তল দাশগুপ্ত-এর বসন্তের কবিতাগুচ্ছ
[পর্যায়— বিপ্রলব্ধা]
বিফলা
একটু সাহসী হতে পারলে না কেন!
না হয় খোঁপায় পরতাম বনফুল
দু’কানে থাকত ঝুটো মুক্তোর দুল
জড়িয়ে থাকত সুখ— আলোয়ান যেন।
আঠারো-র বেড়া কবেই হয়েছি পার।
পলাতকা লেখা হতই না হয় ফিরে।
হয়ে উঠতাম কবিতা ছোট্ট নীড়ে,
যদি মুছে নিতে কৃষ্ণ অন্ধকার।
আসব বলেও এলে না সন্ধিকালে।
আকাশে আগুন জ্বাললো কৃষ্ণচূড়া।
অগ্নি দূষণ— কী মৃত্যু লোভাতুরা!
কৃষ্ণ-কুঞ্জ ছাইল অগ্নি-জালে…
পুড়ে পুড়ে খাক কুঞ্জে পাখির ডাক
তবুও শুনেছি বসন্ত-উৎসবে।
ভুলে যাওয়া হোরি খেলুক তাহলে সবে।
আমার দগ্ধ কুঞ্জ— কৃষ্ণ থাক…
[পর্যায়– খণ্ডিতা]
প্রগলভা
কুটো নেড়ে দুই টুকরো কি আর করো?
কাজটা তো শুধু পয়সাটি আয় করা,
আর, তাইতেই মাথা কেটে নাও হাতে!
পাঁচ তরকারি কম হয়ে গেলে পাতে
যে ভাবে তাকাও, মনে হয় বলি, ‘ধরা—
দ্বিধা হও, আর তাতে ডুবে তুমি মরো’।
টিঁকে গেলে শুধু ছিলাম ব’লেই পাশে—
নইলে কে আর কুড়িয়ে আনত তুলে!
নইলে কে আর ছুঁয়ে দিত স্বপ্নিল!
হয়ে উঠত কে অবগাহনের বিল!
দাঁড়াত কে বলো বন্ধ দরোজা খুলে?
কিম্বা জমাতো রেকারিং মাসে মাসে?
মুরোদ তোমার জানা আছে ওস্তাদ।
বাঁশিটা কেন যে বাজাতে শিখলে ভালো!
তবে না শিখলে, কীকরে যে বলতাম:
‘আমার কৃষ্ণ-মরণ— আমার আলো’।
[পর্যায়— উৎকণ্ঠিতা]
অচেতনা
কৃষ্ণচূড়ার আগুন মেখেছি গায়।
কৃষ্ণ-কাজে কটাক্ষ কেরামতি।
নীল জিন্স আর টপ ভারি সুখ পায়
জড়িয়ে ধরতে এই গোধূলির জ্যোতি।
স্মার্ট-মোবাইল অফ করা আছে ঠিক,
কেউ ডিস্টার্ব করতেই পারবে না।
তোকে ভেবে বসে থাকব চুপটি ক’রে
না বলা কথায় ভ’রে দেব দশদিক।
আমার নীলিমা ছোঁয়, তোর আগ্রহ?
এইটা জানতে চেয়েছি বারংবার।
তোর মতো করে তোকে চাইবার আগে
করতে চেয়েছি প্রাধান্য বিস্তার
আজকে আমার আত্ম-প্রেমের খেলা
আমার দিকেই উপহাস ছুঁড়ে মারে।
যে পথ গিয়েছে প্রেম-যমুনার পারে,
সে পথ চিনতে করেছি দারুণ ভুল।
চোখ-ফাটা রঙে চোবানো ব্রাসের স্ট্রোকে
শূন্য আঁকছি নভোনীল ক্যানভাসে
জেনেছি শূন্য অসীম সম্ভাবনা
যাকে বুকে ধরে পার্ক আর আমি একা।
কৃষ্ণচূড়া ও পলাশ-শিমুল মাখা
পৃথিবীর যত কৃষ্ণ দীর্ঘশ্বাস
গোধূলির এই চুরি যাওয়া আলো ছুঁয়ে
ফুঁপিয়ে উঠছে তীব্র এ মার্চ মাস।
[পর্যায়— অভিসার]
বর্ষাভিসারিকা
ঝড়ের দাপটে গাছের হচ্ছে নত।
মেঘ গর্জনে প্রলয় হুহুংকার
সঙ্গে রয়েছে ধারাপাত অবিরল
পথ ভরিয়েছে ড্রেন ওপচানো জল
তাই ভেঙে ভেঙে এগোচ্ছে দুর্বার
জনহীন পথ রাঙাচ্ছে চোখ কত!
তবু পথ চলা কুঞ্জের অভিসারে!
কাজ-কুমারীর প্রতিটি পদক্ষেপে
থমকে যাচ্ছে প্রবল কুলিশ পাত।
ভুখা পেট দিয়ে সাজানো কুঞ্জ-রাত
পাঁচ বাড়ি খাটা খাবার পেলেই মেপে
কৃষ্ণ-প্রাপ্তি ঘটে যায় সংসারে।
বর্ষা রাত্রে বিঘন বৃষ্টি সুরে
বেজে ওঠে বাঁশি গোটা চরাচর জুড়ে।
ছবি : আন্তর্জালিক
