Sasraya News

Sunday, March 16, 2025

J.K. Rowling : “বৃহত্তর কল্পনার জাদু শক্তিকে আমরা আমাদের অভ্যন্তরেই বহন করি” : জে.কে. রোওলিং 

Listen

“বৃহত্তর কল্পনার জাদু শক্তিকে আমরা আমাদের অভ্যন্তরেই বহন করি” : জে.কে. রোওলিং 

ব্রিটিশ সাহিত্যিক জে.কে. রোওলিং (J.K. Rowling) হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮ সালে একটি বক্তৃতা রেখেছিলেন। হ্যারিপটার-এর স্রষ্টার সেই বক্তৃতা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে। রোওলিং হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কী বলেছিলেন? লিখলেন : মেঘশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় 

০০৮ খ্রিস্টাব্দে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘কমেন্সমেন্ট’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত জে. কে. রোওলিং (J.K. Rowling) নব্য স্নাতকদের উদ্দেশ্যে একটি চমৎকার বক্তব্য রাখেন। তাঁর ওই বক্তব্যটিকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগে তিনি জীবনে ‘ব্যর্থতা’র মাহাত্ম্যের কথা বলেন এবং দ্বিতীয় ভাগে ‘কল্পনা’ তথা উদ্ভাবনী শক্তির ক্ষমতা নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। প্রথমেই উপস্থিত দর্শকবৃন্দকে অভিবাদন পূর্বক এই আসরে বক্তব্য রাখার কথা চিন্তা করে জে. কে. রোওলিং যে ওজন কমিয়ে ফেলেছেন তার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। নিজের গ্র্যাজুয়েশন ডে’র স্মৃতি চারণার মাধ্যমে আবারও রসিকতা করে বলেন ঠিক যেভাবে সেদিনের আসরে বলা একটা বর্ণও তিনি আজ মনে করতে পারেন না, তেমনি রোওলিং আশা রাখেন আজকে তাঁর বক্তব্যও কারুর ভবিষ্যতের পথে তেমন কোনও প্রভাব ফেলবে না।

ছবি : সংগৃহীত

 

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অ্যাকাডেমিক সাফল্যের দিনে তাঁর জীবন প্রলব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ব্যর্থতার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে চান। আজকের জে. কে. রোওলিং (J.K. Rowling) যখন পিছন ফিরে তাকান, তখন একুশ বছরের সদ্য গ্র্যাজুয়েট নিজেকে নিয়ে তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। তখন তিনি নিজের Ambition আর নিকটজনের তাঁর প্রতি (expectation) আশার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন। তিনি বরাবর ঔপন্যাসিক হতে চাইতেন, কিন্তু দারিদ্র জর্জরিত ও কলেজের গণ্ডি না পেরনো তাঁর বাবা-মা বলতেন, সখের উপন্যাস কখনও জীবিকা হয়ে উঠতে পারে না। তাঁরা চাইতেন মেয়ে ভোকেশনাল ডিগ্রী নিক। অবশেষে জে. কে. রোওলিং আধুনিক ভাষা সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। তবে তাঁর আগ্রহ কেন্দ্রীভূত ছিল গ্রীক পুরাণ ও ক্লাসিক সাহিত্যেই।

দারিদ্র্য সন্তানকে ছুঁয়ে যাক এ কোনও বাবা-মায়েরই কাম্য নয়। তবু জে. কে. রোওলিং-এর জীবনের গোড়ার দিকের বছরগুলোতে অভাব এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। অভাব বয়ে এনেছে ভয়, অপমান, মানসিক চাপ, ডিপ্রেসনের মতো আরও অনেক কঠিন স্তর। নিজের চেষ্টায় দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারাটা গর্বের বিষয়। কিন্তু রোওলিং তাঁর ছাত্রাবস্থায় অভাবকে নয়, ভয় পেতেন ব্যর্থতাকে। ক্লাসের (শ্রেণী কক্ষের) বদলে দিনের পর দিন ক্যাফেটেরিয়ায় গল্প লিখে সময় কাটানো সত্ত্বেও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটাই ছিল একমাত্র সাফল্যের মাপকাঠি। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাঁর বিশ্বাস প্রতিভা ও সুশিক্ষা ভাগ্যের মোহ থেকে কাউকে সুরক্ষিত রাখতে পারে না, তাই তারাও নিশ্চয় কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছেন কখনও। তবে হাভার্ড গ্র্যাজুয়েট হিসাবে হয়ত তারা এখনও আসল ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়নি। তাদের মধ্যে হেরে যাওয়ার ভয় হয়ত আছে, কিন্তু তাদের ব্যর্থতার সংজ্ঞা অনেকটাই সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের সাফল্যের কাছাকাছি। কারণ তাদের উড়ানের শুরুটাই হাভার্ডের মতো উচ্চ শিখরজাত।

ছবি : সংগৃহীত

 

ব্যর্থতার মাপকাঠি সকলের নিজস্ব হওয়া উচিৎ। তবে দুনিয়া প্রতি পদক্ষেপে কিছু ক্রাইটেরিয়া (?) চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ব্যর্থতা নির্ধারণ করতে চায়। সেই প্রথা অনুযায়ী স্নাতক হওয়ার সাত বছর পরে রোওলিং ছিলেন সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ। স্বল্প মেয়াদী বিবাহ, চাকুরিহীনতা, সন্তানের একাকী অভিভাবক হওয়া থেকে শুরু করে মাথার ছাদটুকু কেবল বাকি রেখে আধুনিক ব্রিটেনে যতটা গরীব হওয়া যেতে পারে, উনি ঠিক ততটাই অনটনে ছিলেন। মেয়ের জীবনে অভাবজনিত যে দুঃস্বপ্নকে বাবা-মা চিরকাল সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, সেই দারিদ্র্যই তাঁকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলেছিল। এই সময়টা রোওলিং- এর জীবনের অন্ধকারতম সময়। তখনও ধারণা ছিল না যে এক রূপকথা সুলব্ব সমাধান তাঁর জন্য অপেক্ষা করে আছে। তাই এই সময়টুকুতে তিনি বুঝেছিলেন,  অসাফল্য অপ্রয়োজনীয়কে ছেঁটে ফেলতে শেখায়, স্বরূপ চিনতে শেখায়। সমস্ত এনার্জিকে কেন্দ্রীভূত করে লক্ষ্য পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে শেখায়। তিনি মুক্ত হতে পেরেছিলেন কারণ তাঁর সবচেয়ে বড় ভয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি বেঁচেছিলেন তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে। সঙ্গে ছিল এক পুরনো টাইপ রাইটার আর এক বিশাল অভিপ্রায়। সর্বনিম্ন স্তরে পড়ে থাকা পাথরের ওপরেই গড়ে উঠল জীবনের ভিত্তি। তিনি বলেন, “তোমরা হয়ত আমার মতো ব্যর্থ হবে না, কিন্তু জীবনে ব্যর্থতা ভূমিকা অনস্বীকার্য, যদি না খুব সাবধানে পা ফেলা হয়! আবার অতি সতর্ক হয়ে কাটানো জীবন তো বাঁচাই নয়, সেক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবেই তুমি ব্যর্থ!”

ছবি : সংগৃহীত

 

অকৃতকার্যতা তাঁকে অভ্যন্তর থেকে দিয়েছে সুরক্ষাকবচ, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, নিয়মানুবর্তিতা আর অমূল্য বন্ধুত্ব যা কোনও পরীক্ষার সাফল্য দিতে পারেনি। এই উপলব্ধি মানুষকে বানায় প্রাজ্ঞ ও দৃঢ়, ভবিষ্যতে জীবনযুদ্ধের উপযুক্ত। আজ ফিরে তাকিয়ে তিনি একুশ বছরের তরুণী রোওলিংকে বলতে চান, ব্যক্তিগত জীবনে আনন্দ কোনও অর্জিত সাফল্যের চেকলিস্ট নয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সি.ভি. গোটা জীবন নয়, যদিও বেশিরভাগ মানুষই এই দু’টোকে সমার্থক করে ফেলেন। জীবন কঠিন, জটিল এবং মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে – এই সত্য বিনম্রতার সঙ্গে মেনে নিলে উত্থান-পতনের দিনগুলি সহজে পার করা যায়।

ছবি : সংগৃহীত

 

বক্তৃতার দ্বিতীয় ভাগে তিনি আলোচনা করেন ‘কল্পনা’ বিষয়ে। এই উপলব্ধি তাঁর কল্পনা প্রসূত বিখ্যাত হ্যারি পটারের বকলমে তাঁর জীবন বদলে যাওয়ার জন্য নয়। ছোটদের ঘুম পাড়ানি নৈশ-কাহিনির চেয়ে অনেক বড় প্রেক্ষাপটে তিনি কল্পনার গুরুত্বের কথা বলতে চেয়েছেন। যা আমাদের সঙ্গে ঘটেনি তাকে কল্পনা করে প্রকৃতপক্ষে অনুভব করার উদ্ভাবনী ও রূপান্তরকারী ক্ষমতা মানবজাতির এক বড় অংশের নরক যন্ত্রণাকে সহমর্মিতার সঙ্গে  আামাদের উপলব্ধি করার শক্তি দেয়। হ্যারি পটারের জন্মের আগে রোওলিং- এর জীবনের অন্যতম গঠনমূলক অভিজ্ঞতাটি বয়ে এনেছে তার শুরুর দিনের এক জীবিকা। তিনি তখন লন্ডনের Amnesty International’s Headquarters -এর ‘আফ্রিকান রিসার্চ ডিপার্টমেন্টে’ কর্মরত। সর্বগ্রাসী শাসনের কবলচ্যূত, তাড়াহুড়োয় কোনও মতে লেখা কিছু চিঠি তিনি সেই ছোট্ট অফিসে বসে পড়েছেন, যারা বন্দী হওয়ার ভয়কে অতিক্রম করে বহির্বিশ্বকে জানাতে চেয়েছে তাদের দুর্দশার কথা। তিনি উধাও হয়ে যাওয়া সেই সব মানুষের ছবি দেখেছেন যাদের আত্মীয়রা মরিয়া হয়ে তাদের এমনেস্টিতে পাঠিয়েছিল। উনি পড়েছেন অত্যাচারিতদের সাক্ষ্য, দেখেছেন তাঁদের ক্ষতচিহ্নের ছবি। অপহরণ আর ধর্ষণের সরাসরি বিচারের প্রত্যক্ষদর্শীর হাতে লেখা বিবরণ তিনি পড়েছেন। সেখানে তাঁর অনেক সহকর্মীরাই ছিলেন পালিয়ে আসা রাজনৈতিক বন্দী। কারণ তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন।

ছবি : সংগৃহীত

 

অফিসে অনেক মানু্য এসে জানতে চাইতেন, ফেলে আসা আপনজনের খবর। অথবা নিজের খবর পৌঁছে দিতে চাইত তাঁদের কাছে। সমবয়সী এক আফ্রিকান যুবকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছেলেটির ওপর হওয়া অত্যাচার তাকে মানসিক রোগী বানিয়ে দেয়। ভিডিও ক্যামেরার সামনে সেই বর্বরতার বিবরণ দিতে গিয়ে সে প্রচণ্ড কাঁপতে থাকে। লম্বা চওড়া যুবক যেন ছোট বাচ্চার মতোই দুর্বল। জর্জরিত ছেলেটিকে তাঁর অস্থায়ী ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার সময় সে রোওলিঙের হাত ধরে ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা জানানোর সৌজন্যটুকু জানাতে ভোলেনি। আরেকদিন ফাঁকা করিডোর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক অশ্রুতপূর্ব আর্তনাদ শুনে চমকে ওঠেন। গবেষক তাঁকে করিডোরে দেখে আর্তনাদকারী যুবকটির জন্য তক্ষুনি গরম পানীয় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান। আসলে তিনি সবে মাত্র সেই যুবককে তাঁর মায়ের মৃত্যুদণ্ডের কথা জানিয়েছেন যা আসলে সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করার জন্য শাস্তির-ফল।

এই কাজটি করার সময় প্রতিদিন জে. কে. রোওলিং- এর মনে হয়েছে, একটি গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে আইন আছে, বিচারের অধিকার আছে, জন্মাতে পেরে তিনি ভাগ্যবতী। ক্ষমতা পাওয়া অথবা টিকিয়ে রাখার জন্য এক মানবের অন্য মানুষের প্রতি অশুভ নিষ্ঠুর আচরণ তিনি প্রতিদিন দেখেছেন। এই সমস্ত কিছু তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। আবার উল্টোদিকে, সেই অফিসেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন মানবিকতার জয়। এম্নেস্টিতে কর্মরত হাজার হাজার মানুষ, যাঁরা অত্যাচারিত নয়, বন্দী নয় – তাঁরা নিপিড়ীত  মানুষগুলির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সহমর্মিতার সংযুক্ত শক্তি যেমন বহু প্রাণ বাঁচিয়েছে, তেমনি বন্দীদের মুক্ত করতে পেরেছে। দৈনিক জীবনে ভালো আর সুরক্ষিত থাকা অতি সাধারণ মানুষরা সম্মিলিতভাবে অত্যাচারিত মানবগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে – যাঁদের তারা চেনে না আর কখনও চিনবেও না। এই মহাযজ্ঞের অণুমাত্র হতে পারাটা রোওলিং- এর জীবনের এক বিরাট অনুপ্রেরণা। তিনি আরও বলেন, “মানুষের মধ্যে
প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছাড়াই শেখার ও বোঝার যে ক্ষমতা আছে তা বিশ্বের অন্য যে কোনও প্রাণীর চেয়ে মানবজাতিকে আলাদা করে। মানুষ নিজেকে অন্যের জায়গায় রেখে ভাবতে পারে, অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হতে পারে। এই ক্ষমতা কোনও জাদুর চেয়ে কম নয়। নৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থেকে সহানুভূতির সঙ্গে সঠিক মাত্রায় এই ক্ষমতাকে নিপূণভাবে ব্যবহার করা উচিৎ।” অনেকেই নিজের এই কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগায় না। তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতার আরামদায়ক দায়রাতেই থেকে যেতে চায়। ভাবতে চায় না, যদি তাদের জন্ম অন্য কোথাও হতো, তাহলে কী হতে পারত! তারা অন্যের চিৎকার শুনতে পায় না, বন্দীর খাঁচায় উঁকি দিতে চায় না। অনায়াসে নিজেদের মন আর মগজের দরজাগুলো সেই সব কষ্টের জন্য বন্ধ করে রাখতে পারে, যা তাদের ব্যক্তিগতভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে না।

ছবি : সংগৃহীত

 

রোওলিং বলেন, “হয়তো কোনও সময় আমারও লোভ হয়েছে ওদের মতো হওয়ার জন্য, কিন্তু তারপরেই মনে হয়েছে তাঁদের দুঃস্বপ্ন আমার চেয়ে কিছু কম হতেই পারে না। কারণ কুয়োর ব্যাঙ হয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছে মানসিকভাবে কেবল ভয়ের জন্ম দিতে পারে যা আদতেই দুঃস্বপ্ন বয়ে আনবে। আমি মনে করি, যাঁরা জেনেশুনে এড়িয়ে যায়, তাঁরাই ভীতু, তাঁরাই অমানবিক দানবকে জাগিয়ে তোলে ও মদতপুষ্ট করে। দানবের মুখোমুখি না হওয়া মানেই নিজের ঔদাসীন্যের মাধ্যমে সেই অশুভ আঁতাতে যোগ দেওয়া।” গ্রীক সাহিত্যিক প্লুটার উক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা নিজের অভ্যন্তরে যা কিছু অর্জন করি তাই দিয়েই বহির্বিশ্বে বাস্তবকে পরিবর্তন করা যায়।” বহির্জগতের সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র অনিবার্য। শুধুমাত্র আমাদের অস্তিত্বের মাধ্যমে আমরা অন্য মানুষের জীবনকে ছুঁতে পারি। এরপর রোওলিং হার্ভার্ডের ছাত্রছাত্রীদের সম্বোধন করে বলেন, “তোমাদের অনন্য মেধা, শিক্ষা, পদমর্যাদা আর পরিশ্রম দিয়ে তোমরা মানুষকে ঠিক কতটা ছুঁয়ে যেতে পারবে? তোমাদের জাতীয়তা ভিন্ন ভিন্ন হলেও তোমাদের এক বড় অংশ বিশ্বের সর্বাধিক শক্তির অধিকারী হতে চলেছ। তোমাদের ভোট, তোমাদের জীবনযাত্রা, তোমাদের প্রতিবাদ, সরকারের প্রতি ন্যায্য কারণে চাপ সৃষ্টি করার অনন্য ক্ষমতা – এই সবকিছুর প্রভাব শুধু দেশের সীমানায় আবদ্ধ নয়, বরং সুদূর প্রসারী। এটাই তোমাদের বিশেষ ক্ষমতা, আবার এটাই তোমাদের ভার। যদি তোমরা তোমাদের পদমর্যাদা আর প্রভাবকে শব্দহীনদের ভাষা হিসাবে কাজে লাগাও, যদি নিজেদের কেবল ক্ষমতাবান হিসেবে চিহ্নিত না করে ক্ষমতাহীনের পাশে গিয়ে দাঁড়াও, যদি তোমরা নিজেদের কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই সব মানুষের জীবনগুলি নিজের ভিতর অনুভব/ ধারণ করতে পার, যাদের কাছে তোমার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই তাহলে তোমাদের জন্য শুধু তোমার পরিবার গর্বিত হবে না, সেই উৎসবে তাঁরাও যোগ দেবে যাঁদের জীবনে তোমরা সদর্থবহ পরিবর্তন আনতে পেরেছ। আমাদের দুনিয়াকে রূপান্তরিত করতে কোনও জাদুমন্ত্রের প্রয়োজন নেই। সেই বৃহত্তর কল্পনার জাদু শক্তিকে আমরা আমাদের অভ্যন্তরেই বহন করি।”

ছবি : সংগৃহীত

 

বক্তৃতার অন্তিম চরণে জে. কে. রোওলিং তাঁর সহ-স্নাতক বন্ধুদের কথা বলেন, তাঁরা আজও একই সুতোয় বাঁধা। প্রতিকূলতার সময় তিনি সেই বন্ধুদের কাছেই আশ্রয় পেয়েছেন। হ্যারি পটারের রেফারেন্স এনে মজা করে বলেন, এই বন্ধুদের নামে তিনি অনায়াসে আর নির্ভয়ে ভয়ঙ্কর ‘ডেথ ইটারস’দের নামকরণ করেছেন এবং বদলে আজও আদালতের সমন পেতে হয়নি। গ্র্যাজুয়েশনের সময় সেই বন্ধুত্বের মধ্যে ছিল বিপুল স্নেহ, প্রবাহী সময়ের অফুরন্ত অভিজ্ঞতা আর ফ্রেমে বন্দী কিছু অমূল্য মুহূর্ত – যা পরে প্রাইম মিনিস্টার পদের জন্য ভোটে দাঁড়ালে কলেজ পাশের এক জ্বলন্ত প্রমাণ হতে পারত! সব শেষে বলেন, মস্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এমনই সুন্দর বন্ধুত্ব আর আগামী জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানান। বলেন, দীর্ঘ নয়, জীবন হওয়া উচিৎ সুন্দর!

ছবি : সংগৃহীত 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment