



মনের দরজা 🍁
আসাদুল্লা সরকার শেল্ফ হেল্প সম্পর্কে লেখালেখি ও নীরবে পড়াশোনা করেছেন বেশ অনেকগুলি বছর থেকে। আত্মোন্নতি বিষয়ক মনস্তাত্ত্বিক লেখাগুলি ইতিমধ্যেই পাঠকদের সহায়ক হয়ে উঠেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব সময় ও ভবিষ্যতের দিক্ নির্দেশ লেখকের লেখার একটি বড় দিক। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল ওঁর একটি লেখা।
মনের গতিপ্রকৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি
জীবনের ছোট ছোট ঘটনাকে আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেমন ধরা যেতে পারে, কখনও শিশুদের আমরা বলে থাকি: পড়াশোনা না করলে ভিখিরিদের মত হয়ে যাবে। কিন্তু এই বিষয়টিকেই যদি আবার ঘুরিয়ে বলি, পড়াশোনা করলে ভিখিরিদের দশা আসবে না। বরং ভিখিরিদের জন্যে একটি ভাল জগৎ তুমি তৈরি করে দিতে পারবে। তাহলে শিশুটির মনে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সারাদিনে এরকম অনেক কথাই আমরা সচেতন বা অবচেতনে বলে থাকি, যা নেতিবাচক বিষয়কে প্রাধান্য দেয়। মনোবিজ্ঞান বলছে, একটা নেতিবাচক চিন্তা একটা ইতিবাচক চিন্তার থেকে অনেকগুন বেশি শক্তিশালী।
_____________________________________________
ভাঙা চাঁদের রাত্রিকে উপেক্ষা করেও পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ মনের আঙিনায় আলোকিত হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ মনের এই ইতিবাচক দৃষ্টিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। মানসিকতার মধ্যেই গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত করে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক শক্তিকে দূর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। ঠিক যেমনটি জিহ্বা প্রতিনিয়ত ধাক্কা দিতে দিতে মুখের মধ্যে আটকে থাকা মাংস টুকরোকে বের করতে থাকে।
________________________________________
মানব-মনের কর্মশালায় দু’জন কর্মচারী সবসময়ের জন্যেই বিশেষভাবে নিযুক্ত আছে। একজন ‘না’ সূচক কর্মচারী; যার দায়িত্ব হল কি করে মানবমনকে তার সাফল্য না কারণগুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করা। যা মানবমনকে সেই দিকে ধাবিত করে যাতে সফল্য না আসে।
কিন্তু ‘হ্যাঁ’ সূচক কর্মচারী ইতিবাচক বিষয়কে খুঁজে-খুঁজে বের করে নিয়ে আসে। এই হ্যাঁ সূচক কর্মচারী মানবমনকে ধীরে-ধীরে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হতে পারে ইতিবাচক সংখ্যা অনেক কম, কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যক বিষয়ের মধ্যেই তা মনকে চালিত করে। আর মানবমন উদ্বুদ্ধ হয়ে সাফল্যের জগতে পৌঁছে যায়। তাহলে এই কর্মশালায় কোন কর্মচারীকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত তা প্রত্যেকটি মানুষকে নিজেই ঠিক করে নিতে হবে।
মানব মনের স্থিতি-ই তার জীবনের গতিপথকে ত্বরান্বিত করে। আমরা বিষয়টিকে আরেকটু গভীরে গিয়ে দেখতে পারি। সবাই জানি, মানব মনের দুটি স্তর আছে। ১. সচেতন মন, ও ২. অবচেতন মন। সচেতন মন হল বাইরের স্তর ও অবচেতন মন হল মনের গভীরের স্তর। কিন্তু মজার বিষয় হল, সচেতন মন অবচেতন মনকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যভাবেও বলা যায়, অবচেতন মন সচেতন মনের অধীনে কাজ করে। যে-কোনও বিষয়ে যে-কোনও সিদ্ধান্ত সচেতন মন অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই অবলম্বন করে। চাইলে সেটা পরিবর্তনও করতে পারে। কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেটা অবচেতন মন অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর মনের আরও অসীম গভীরে পৌঁছে গিয়ে সাধারণ সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। যা সচেতন মনের আয়ত্তের বাইরে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন এসে যায়, মনের কোনও ভুল সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করার জন্যে কি অবচেতন মন লড়াই শুরু করে? উত্তর হবে, হ্যাঁ। একটি মানুষ চাইলে মহানতার শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারেন। অথবা আশ্চর্যজনক কিছু আবিষ্কার করে মানব-জীবনকে আরও সহজ-সরল করে দিতে পারেন। অন্যদিকে সচেতনভাবে নেওয়া ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। বাইবেল-এ যথার্থই বলা হয়েছে:’Ask, and it shall be give you, seek and ye shall find; knock, and it shall be opened unto you.’ মানুষ যেটা মন থেকে চাইবেন সেটাই তিনি পেয়ে যাবেন কিন্তু চাইবার আকাঙ্ক্ষা বা তীব্রতা মনের গভীরকে বিদ্ধ করে হওয়া চাই। মানুষ-ই তাঁর আত্মার অধিনায়ক এবং পরিণতির স্রষ্টা।
মানবতার বাহক হিসেবে মানুষ তাঁর মানসিকতায় ইতিবাচক চিন্তাকে প্রাধান্য দেবেন এটাই কাম্য। ইতিবাচক চিন্তা মানুষকে গভীর রাত্রিতেও সূর্যের শোভনীয় আলোর আশা জাগিয়ে তুলবে। ও-মনের গভীরে ‘কাঁটাযুক্ত’ গাছের পরিবর্তে গোলাপ বাগান দেখতে পাবেন। শুধু তা-ই নয়, ক্ষুদ্র-দৃষ্টিকে দূর করে দূরদর্শী এবং ধৈর্যশীল হয়ে উঠবেন। ভাঙা চাঁদের রাত্রিকে উপেক্ষা করেও পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ মনের আঙিনায় আলোকিত হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ মনের এই ইতিবাচক দৃষ্টিকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। মানসিকতার মধ্যেই গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত করে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক শক্তিকে দূর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে। ঠিক যেমনটি জিহ্বা প্রতিনিয়ত ধাক্কা দিতে দিতে মুখের মধ্যে আটকে থাকা মাংস টুকরোকে বের করতে থাকে। একই পদ্ধতিতে মানবমনের জানলাগুলো ধূলিকণা মুক্ত হয়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। বাইরের জগতের ভালো কিছু পরিবর্তন মানবমনের গভীরে প্রবেশ করে তাকে আরও উন্নত এবং সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে। মনে রাখা উচিত, একটা ভালো বিষয় আরও অজস্র ভালো বিষয়কে আকর্ষণ করতে থাকে। মানুষের মন এক্ষেত্রে চৌম্বকীয় শক্তির মত অসংখ্য ভালো বিষয়কে আকর্ষণ করে টেনে নিয়ে আসে, যা সামনের রাস্তাকে আরও বেশি উৎকর্ষময় ও আরও সুযোগে পরিপূর্ণ করে তোলে।
সুতরাং মানুষকে আরও সজাগ হতে হবে, সে-যেন অজানতে অবচেতনে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ফেলেন। যথোপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-ভাবনা এই সমাজকে সবসময় সঠিক দিক নির্দেশ করবে। মানব-জীবনে সৃষ্টিকর্তার সব থেকে আশ্চর্যজনক পুরস্কার হল, মানব মন। আর এই পুরস্কারের মাহাত্ম্যকে যদি আমরা যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করি তবে এই সংসার, এই সমাজ, এই সভ্যতা আর অবশ্য-ই ‘মানব মন’ আরও উন্নত থেকে উন্নততর স্তরে পৌঁছে যাবে। 🦋 🦋
ছবি : সংগৃহীত
