



সাশ্রয় নিউজ ★ বিনোদন ডেস্ক : সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানো, আবার পরদিন ভোরে ডেকে ওঠা আর অফিস ছুটির ঘণ্টা গোনার ফাঁকে প্রতিদিন যুদ্ধে নামেন হাজারো কর্মরত মা (Working hour for New Mothers) জীবনের এই কষ্টসাধ্য সমীকরণে এক নতুন সুর তুললেন বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন (Deepika Padukone) ন’মাসের কন্যা দুয়াকে রেখে কাজের জগতে ফিরেই দীপিকা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আগের মতো ১২-১৪ ঘণ্টা নয়, তাঁর কাজের সময়সীমা হোক আট ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ। আর সেই কথাতেই যেন এক তীব্র প্রশ্ন উঠে এল, কর্মজীবী মায়েদের প্রতি কি এখনও সহানুভূতির ঘাটতি রয়ে গিয়েছে? বলিউডের গ্ল্যামারের আড়ালে দীপিকার এই বক্তব্য যেন ছুঁয়ে ফেলেছে অনেক বাস্তব সমস্যাকে। তাঁর মতে, এক জন সদ্য মা হওয়া নারীর ক্ষেত্রে আট ঘণ্টা কাজই যথেষ্ট। মাতৃত্বের সংবেদনশীল সময়ে অতিরিক্ত চাপ একজন নারীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মক্ষেত্রে সাময়িক সহানুভূতি তো তাঁরা প্রাপ্যই।

অভিনেত্রীর এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে পাশে দাঁড়িয়েছেন। নেহা ধুপিয়া যেমন ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘‘যাঁদের সন্তান এখনও ছোট, তাঁদের কিছুটা বাড়তি সহানুভূতি প্রয়োজন। এটা বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন।’’ কর্মরত মা হিসেবে দীপিকার দাবি তাঁর কাছে পুরোপুরি যৌক্তিক। কিন্তু এই দাবির পেছনে শুধু আবেগ নয়, রয়েছে এক বাস্তব চিত্রও। আজকের দিনে কর্মজীবী মায়েরা কেবল দফতরের কাজ নয়, বাড়ির সমস্ত দায়িত্বও সমানভাবে বহন করেন। অফিসের ১০-১২ ঘণ্টার পরেও সন্তানের পড়া, খাওয়া, গল্প, তাঁরা সব সামলে রাত জেগে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত হন। অথচ এই পরিশ্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানে খুব কমই সহানুভূতির আশ্বাস মেলে। দীপিকা হয়ত সেই অনুপস্থিত সংবেদনশীলতার দিকেই আঙুল তুলেছেন। এই প্রসঙ্গে সইফ আলি খানের বক্তব্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনিও বাবা হিসেবে নিজেকে অনেক সময়ে অসফল মনে করেন, যখন কাজের চাপের জন্য ছেলেদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন না। তাঁর মতে, কাজ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই পরিবারকেও সময় দেওয়া জরুরি। খাবার টেবিলে একসঙ্গে বসা, রান্নাঘরে সন্তানকে সাহায্য করা এগুলোই জীবনের আসল সাফল্যের পরিমাপ। অজয় দেবগন, যিনি কাজলকে সঙ্গে নিয়ে দু’টি সন্তানকে বড় করেছেন, তিনিও দীপিকার দাবিকে যুক্তিসম্মত বলেই মনে করেন। তাঁর মতে, একজন মা যদি আট ঘণ্টার কাজ চান, তবে যে কোনও দায়িত্ববান পরিচালকই সেটা বুঝবেন। এখানে একটুও ছাড় দেওয়ার নয়। এই চাওয়াটা যেন মায়েদের অধিকার হিসেবেই বিবেচিত হয়।
তবে এই আলোচনার মধ্যেও বিতর্ক থেমে থাকেনি। পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গার ছবি ‘স্পিরিট’ থেকে দীপিকার সরে যাওয়া নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, এভাবে কাজের সময় বেঁধে দেওয়া কি পেশাগত দৃষ্টিতে ঠিক? একাংশ পরিচালক হয়ত ভাবছেন, এত সীমাবদ্ধতা নিয়ে তারকা অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করাটা কষ্টকর হবে। তবু সেই বিতর্কের মাঝেও মণিরত্নমের মতো বর্ষীয়ান পরিচালক দীপিকার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘সদ্য মা হয়েছেন এমন এক জন নারীর নিজের ও সন্তানের প্রয়োজন বোঝা দোষের নয়। এই চাহিদা একটি পরিণত সমাজের ইঙ্গিত।’’ তবে প্রশ্ন উঠছেই, দীপিকার এই দাবি কি কেবল তারকা হওয়ার কারণেই আলোচনার কেন্দ্রে? আর পাঁচজন অফিসগামী মা যদি একই দাবি তোলেন, তবে কি তাঁদের কথাও এত গুরুত্ব পাবে? কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্ব নিয়ে আজও একরকম নীরবতা কাজ করে, যেখানে সন্তান সামলে নিজের কাজ ঠিকমতো করার লড়াইটা একজন নারীকে একাই লড়তে হয়। দীপিকা হয়তো সেই নীরবতার পর্দা সরিয়েই আলো ফেললেন এক অত্যন্ত জরুরি প্রশ্নে। এই দাবি আদৌ পূরণ হবে কিনা, কিংবা বলিউডের বাইরের কর্মক্ষেত্রেও কি তা ছড়িয়ে পড়বে সে উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু এতদিন পরে অন্তত কেউ তো বললেন, একজন মায়ের কাজ কেবল অফিসের টেবিলেই শেষ নয়, বাড়ির ছোট্ট বিছানাটাও তাঁর কর্মক্ষেত্র। আর সেখানে সময়ের হিসেব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আরও বেশি মানবিক।
ছবি : সংগৃহীত
আরও খবর : Elon Musk : ‘ঋণের দাসত্ব নয়!’ ট্রাম্পের বিল বাতিলের ডাক ইলন মাস্কের
