



নবারুণ দাস ★ সাশ্রয় নিউজ : সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। ধীরে ধীরে ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। এরপর দেখা যায়, গায়ে হলুদের পর দিনটিতে, যেটি নতুন জীবনের শুরু হিসেবে বিবেচিত, সেখানেও নামল অঝোর ধারা। সাজগোজ, প্যান্ডেল, ক্যাটারিং থেকে শুরু করে বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতায় হঠাৎ এই বর্ষণ যেন বিঘ্ন ঘটাতে উদ্যত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই বৃষ্টি কী কেবলই ভোগান্তি নিয়ে আসে? না কি এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক অনুচ্চারিত আশীর্বাদ?

অনেকেই মনে করেন, এমন শুভ দিনে বৃষ্টিপাত শুধু প্রকৃতির খেয়াল নয়, এর একটি গভীর অর্থও রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, বিয়ের দিন বৃষ্টি হওয়া মানেই শুভ সংকেত। জ্যোতিষী অনিরুদ্ধ ঘোষ (Aniruddha Ghosh) বলেন, “বৃষ্টির জলে যেমন সমস্ত ময়লা ধুয়ে মাটি আবার সতেজ হয়ে ওঠে, ঠিক তেমনই বিয়ের দিন এই বর্ষণ নবদম্পতির জীবন থেকেও দুর্ভাগ্য দূর করে দিয়ে আশীর্বাদ বয়ে আনে।” আবার, প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে বৃষ্টি ও বর্ষাকে শুধু প্রকৃতির ঘটনাই নয়, উর্বরতার প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়। মাটি যেমন বৃষ্টির ছোঁয়ায় নতুন জীবন পায়, তেমনি নবদম্পতির জীবনও এই বৃষ্টির সঙ্গে সৃষ্টিশীলতা ও সুখের ইঙ্গিত পায় বলে মনে করেন মনোবিদ শ্রাবণী রায় (Shrabani Roy)। তাঁর মতে, “বিয়ের দিন বৃষ্টি মানেই প্রকৃতি নবদম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের জীবন এক নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে। সন্তান, সৃজন ও সুখের ধারায় তারা আবদ্ধ থাকবে।”

বাস্তবিক দিক থেকে দেখতে গেলে বিয়ের দিন বৃষ্টি কিছুটা চ্যালেঞ্জও বয়ে আনে। যেমন: যাতায়াতে সমস্যা, অনুষ্ঠানের দেরি, বা সাজসজ্জা নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু অনেকেই বলেন, এই খারাপ দিকগুলিকে ছাপিয়ে যায় বর্ষার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও তাৎপর্য। কলকাতার একটি অভিজাত বিয়ের ইভেন্ট প্ল্যানার শ্রীময়ী বসু (Shrimoyee Basu) বলেন, “অনেক যুগলই এখন ইচ্ছে করেই বর্ষাকালে বিয়ের দিন ঠিক করছেন। কারণ তাঁরা চান এই দিনটা স্মৃতিময় হোক। আর বৃষ্টির মধ্যে বিয়ে মানেই একটা অন্যরকম রোমান্টিক আবহ।”
জ্যোতিষশাস্ত্রে আরও একটি আকর্ষণীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বিয়ের সময় ‘গাঁটছড়া’ নিয়ে। পাত্র-পাত্রীর পোশাকের গিঁটটি যখন বৃষ্টির জলে ভিজে যায়, তখন তা সহজে খোলা যায় না। এটি কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, সাংকেতিক অর্থেও তাৎপর্যপূর্ণ। বর্ষার জলে গিঁট ভিজে দৃঢ় হয়ে যায়। একে বিবাহবন্ধনের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। এই বন্ধন যেন সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়। জ্যোতিষী মধুমিতা ব্যানার্জি (Madhumita Banerjee) বলেন, “এই ধরনের বৃষ্টিতে ভেজা গাঁটছড়া মানেই ঐ দম্পতির সম্পর্ক সুদৃঢ়, দীর্ঘস্থায়ী এবং পরীক্ষিত। প্রকৃতিও সেই গাঁট বেঁধে দিচ্ছেন স্বয়ং।”

আরও একটি ব্যাখ্যা রয়েছে এই বৃষ্টিকে ঘিরে। বিয়ের দিন বৃষ্টি হওয়া মানে নবদম্পতির ভবিষ্যৎ অর্থে ও আনন্দে পূর্ণ হবে। অর্থাৎ, এই বৃষ্টি শুধুমাত্র বর্ষার জল নয়, একপ্রকার সৌভাগ্যের বন্যাও বটে। বিয়ের মতো পবিত্র একটি অনুষ্ঠানে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নবজীবনের সূচনা করে দেয়। এই প্রসঙ্গে সমাজতত্ত্ববিদ ড. সম্যক সেন (Dr. Samyak Sen) বলেন, “বৃষ্টি মানেই শুধু কাদা নয়, সেটা একটা মনস্তাত্ত্বিক রোমান্টিসিজমও। বিয়ের মতো আবেগঘন অনুষ্ঠানে বৃষ্টি একপ্রকার নিরব সাক্ষী। প্রকৃতি যেন নিজেই উপস্থিত হয়ে আশীর্বাদ জানাচ্ছে।” অনেক নবদম্পতি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বলেন, বৃষ্টিতে ভেজা সেই মুহূর্তটুকু যেন সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে যায়। গানের সুরে যেমন বৃষ্টি ফিরে ফিরে আসে, তেমনি জীবনের গানে এই বৃষ্টি হয় হৃদয়ের ছোঁয়া।
বিয়ের দিন বৃষ্টি হোক বা না-হোক, প্রেম, প্রতিশ্রুতি আর পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে জীবন সব সময়েই হয়ে ওঠে সুন্দর। তবে প্রকৃতি যখন এমন দিনে নিজে থেকেই উপস্থিত হয়, তখন তা শুধু জল নয়, বরং আশীর্বাদের ছোঁয়া হয়। আর এই বৃষ্টিই হয়তো বলে যায় “এই বন্ধন সহজে ছিন্ন হওয়ার নয়, কারণ এটা শুধু দু’জন মানুষের নয়, এটা প্রকৃতিরও পছন্দ।”
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Chanakya : চার্ণক্য দর্শনে আধুনিক বার্তা জীবনসঙ্গিনী শুধু সহচরী নয়, ব্যবসার সঙ্গীও হোন
