



শুভ্রাংশু চন্দ, সাশ্রয় নিউজ ★ কলকাতা: একদিকে যখন রাজ্যজুড়ে উৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে, ঠিক তখনই হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সাধারণ মানুষের কপালে। কারণ, এ বছরের রথযাত্রার দিন শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে উল্লেখ যে, ক’য়েকটি জেলায় ইতিমধ্যেই সর্তকতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে পুরুলিয়া (Purulia), বাঁকুড়া (Bankura) এবং ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জেলার মানুষের জন্য এই পূর্বাভাস যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আধিকারিকদের মতে, পঞ্জাব থেকে উত্তর বাংলাদেশ পর্যন্ত একটি পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখা সক্রিয় রয়েছে, যার ফলে রাজ্যের দক্ষিণ ও পশ্চিমের একাধিক জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের ওপর একটি ঘূর্ণাবর্তও কাজ করছে, যা বাতাসের গতি ও বৃষ্টিপাতের মাত্রা আরও বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা।

বুধবার থেকেই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা (South 24 Parganas), পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore), পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore), ঝাড়গ্রাম (Jhargram), পুরুলিয়া (Purulia) এবং বাঁকুড়া (Bankura) জেলায়। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই জেলাগুলিতে ৭০ থেকে ১১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেইসঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না দফতর। হাওয়া অফিস সূত্রে আরও উল্লেখ, “এই মুহূর্তে রাজ্যের উপর যে ধরনের অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে, তাতে বৃষ্টির পূর্বাভাসকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। বিশেষ করে যেসব এলাকায় জনসমাগম বেশি হয়, সেসব জায়গায় প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে।” বৃহস্পতিবারও একই রকম পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে আলিপুর হাওয়া অফিস সূত্রে জানানো হয়। হুগলি (Hooghly), দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা (South 24 Parganas), পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর (East and West Midnapore), ঝাড়গ্রাম (Jhargram), পুরুলিয়া (Purulia), বাঁকুড়া (Bankura) এবং পশ্চিম বর্ধমান (West Bardhaman) জেলায় বজ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় রথযাত্রার দিন শুক্রবার। ওই দিন বিশেষ করে পুরুলিয়া (Purulia), বাঁকুড়া (Bankura) ও ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জেলায় ভারী বৃষ্টির সর্তকতা জারি হয়েছে। রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
শহর কলকাতা (Kolkata) এবং তার সংলগ্ন এলাকায় যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত বৃষ্টির প্রকোপ কিছুটা কম ছিল, তবুও রথের দিন কী পরিস্থিতি হবে, তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।রবিবার ও সোমবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকলেও, হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায়। বজ্রবিদ্যুৎসহ দু-এক পশলা বৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা। অন্যদিকে, উত্তরের জেলাগুলিও রয়েছে সতর্কতার আওতায়। বিশেষ করে কোচবিহার (Cooch Behar), দার্জিলিং (Darjeeling) ও জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায় বুধবার থেকেই ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সেই আশঙ্কা খানিকটা কম থাকলেও, শনিবার ও রবিবার আবারও দার্জিলিং (Darjeeling), কালিম্পং (Kalimpong), আলিপুরদুয়ার (Alipurduar), কোচবিহার (Cooch Behar) এবং জলপাইগুড়িতে (Jalpaiguri) ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত চলতে পারে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুরুলিয়ার পরিবহন কর্মী সঞ্জীব দত্ত (Sanjeev Dutta) বলেন, “রথের দিন বর্ষার প্রকোপ থাকলে ভীষণ অসুবিধা হবে। সাধারণ মানুষ যেভাবে অংশ নেন, সেটা বিঘ্নিত হতে পারে।” এদিকে জেলা প্রশাসনগুলিও পরিস্থিতি অনুযায়ী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাস্তা মেরামত, নিকাশিনালা পরিষ্কার এবং জল জমলে দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। এই আবহাওয়ার পূর্বাভাস একদিকে যেমন কৃষকদের জন্য আশার বার্তা, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় কিছুটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষত রথের মত গুরুত্বপূর্ণ দিনে যদি বৃষ্টির দাপট বেড়ে যায়, তা হলে তা হবে এক বড় চ্যালেঞ্জ।সব মিলিয়ে রথযাত্রার আগে থেকেই আবহাওয়ার খবরে চোখ রাখতে হচ্ছে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ, সবাইকেই। এখন দেখার, প্রকৃতি শেষমেশ কেমন মুখ দেখায় বাংলার রথযাত্রায়।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Physical Abuse | উদয়পুরে আতিথেয়তার মুখোশে বর্বরতা, ফরাসি পর্যটকের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে চাঞ্চল্য
