



সাশ্রয় নিউজ ★ কলকাতা : গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে ফের ঘনাচ্ছে কালো মেঘ। বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমাংশ ও সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ফের তৈরি হয়েছে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল। এর প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় শুরু হয়েছে বৃষ্টির দাপট। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া, উত্তাল হবে সমুদ্র। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এই নিম্নচাপ আগামী কয়েক দিনে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে ও তার জেরে রাজ্যে টানা দু-তিন দিন থাকতে পারে আবহাওয়ার অস্থিরতা।আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, “উচ্চ ঘূর্ণাবর্তের ফলেই উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তার লাগোয়া উপকূলীয় অঞ্চলে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এটি দ্রুত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়ের দিক দিয়ে সরবে।” তাঁর কথায়, নিম্নচাপটি খুব শক্তিশালী না হলেও এর সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। ফলে প্রভাব পড়বে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়।আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কলকাতা-সহ হাওড়া (Howrah), হুগলি (Hooghly), পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর (East & West Midnapore), দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা (South & North 24 Parganas), বীরভূম (Birbhum) এবং ঝাড়গ্রাম (Jhargram) জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাস। একই সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আলিপুর দফতরের পূর্বাভাস, “দক্ষিণবঙ্গের উপরে মৌসুমি বায়ু খুবই সক্রিয়। নিম্নচাপ কাটলেও এর প্রভাবে বৃষ্টি থামবে না। বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির ধারা বজায় থাকবে।”
সূত্রের খবর, বিশেষ করে রথযাত্রার দিন, অর্থাৎ শুক্রবার (২৮ জুন), দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় প্রবল বৃষ্টিতে ভাসার আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন রথযাত্রা কমিটি ইতিমধ্যে রথের দিন পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারের ‘আলমবাজারের রথ’ কমিটির আহ্বায়ক শুভাশিস ভট্টাচার্য (Subhashis Bhattacharya) বলেন, “বৃষ্টির জন্য বহু জায়গায় জল জমে যায়। তাই আমরা এবছর রথের রুট কিছুটা বদল করেছি। আবহাওয়ার গতিপথ দেখে রথের সময়ও সামান্য পিছোতে পারে।” এদিকে, নিম্নচাপের কারণে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রের অবস্থাও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা (Red Alert)। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। কোথাও কোথাও দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছতে পারে ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এর ফলে সমুদ্র হবে উত্তাল, জলযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া দফতর সূত্রে উল্লেখ, “সমুদ্রে যাওয়ার জন্য এখন আদৌ উপযুক্ত সময় নয়। মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের আগামী ক’য়েক দিন গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী গ্রামগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে।” ইতিমধ্যেই দীঘা (Digha), মন্দারমণি (Mandarmani), বকখালি (Bakkhali)-সহ উপকূলের বহু এলাকায় প্রশাসনের তরফে শুরু হয়েছে প্রচার। জেলাশাসক স্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্লক অফিস পর্যন্ত সতর্কতামূলক বার্তা পাঠানো হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রীনা আচার্য (Reena Acharya) জানাচ্ছেন, “আমরা উপকূলবর্তী এলাকা গুলিতে লাউডস্পিকারে বারবার ঘোষণা করছি। পর্যটকদের বলছি, কেউ যেন জল নামেন না। মৎস্যজীবীদের জেটিতে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, এই নিম্নচাপ বেশিদিন থাকবে না। শনিবার (২৯ জুন) নাগাদ এর প্রভাব ক্রমে হ্রাস পেতে শুরু করবে। তবে তার পরেও দক্ষিণবঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। এর পেছনে দায়ী থাকবে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা। আবহাওয়াবিদ সঞ্জয় ভট্টাচার্য (Sanjay Bhattacharya) বলেন, “জুলাইয়ের শুরু পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে রোজ বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে। কৃষির পক্ষে এটা ভালো হলেও শহরাঞ্চলে জনজীবনে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।” সপ্তাহের শেষে এমন নিম্নচাপের আগমন রথযাত্রা, পর্যটন ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে যেমন প্রভাবিত করতে চলেছে, তেমনই আবার কিছু জেলায় এই বৃষ্টির জলই হতে পারে চাষিদের আশার আলো। তবে এখনই পূর্বাভাসের দিকে চোখ রাখা ছাড়া উপায় নেই দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের।
ছবি: প্রতীকী
আরও পড়ুন : SCO Conference | এসসিও-তে ভারত স্পষ্ট করে দিল, সন্ত্রাস নিয়ে আপস নয়
