Sasraya News

Uttarakhand | টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল

Listen

সৌরভ বসু ★ দেহরারুন : উত্তর ভারতের পাহাড়ি রাজ্য উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand) ও হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh) একটানা প্রবল বর্ষণের ফলে বিপর্যয়ের মুখে। পাহাড় ধসে, রাস্তাঘাট ভেঙে, বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সঙ্কটে বিপর্যস্ত বহু জনপদ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক। মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। প্রশাসনের তরফে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে কিছুটা অসহায়ই তারা।উত্তরাখণ্ডে ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের (Yamunotri National Highway) অবস্থা। সোমবার উত্তরকাশী (Uttarkashi) পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) জানিয়েছে, সিলাই বান্দ (Silai Band) ও ওজরি (Ojri) অঞ্চলের মাঝে সড়কের দু’টি অংশ জলের তোড়ে একেবারে ধুয়ে গিয়েছে। সেখানে যাতায়াত কার্যত বন্ধ। পুলিশ জানায়, ‘‘রাস্তা সারানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হওয়ায় সময় লাগবে।’’ একই পোস্টে পুলিশ আরও জানিয়েছে, ব্রহ্মকাল (Brahmakhal) ও মাহারগাঁও (Mahargaon)-এর মাঝেও ধস নামায় রাস্তা বন্ধ। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে ভগ্নস্তূপ সরানোর কাজ।

টানা বৃষ্টির জেরে ক্ষতির হিসেব দীর্ঘ হচ্ছে। তেহরি গঢ়ওয়াল (Tehri Garhwal) জেলায় শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই বৃষ্টি হয়েছে ৭৯.২ মিলিমিটার। বহু জায়গায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। আগ্রাখাল (Agrabhal), চাম্বা (Chamba), জাখিন্দর (Jakhindar), দুঘামান্দার (Dughamandar)-এর মতো অঞ্চলে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে জনপদ। এর মধ্যেই চাম্বা ব্লকে দেখা দিয়েছে পানীয় জলের অভাব। বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বলে সূত্রের খবর। এমন পরিস্থিতিতে গত রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বারকোট (Barkot)-এর কাছে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে চারধাম যাত্রা (Char Dham Yatra)। উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন। নিখোঁজ অন্তত ৭ জন। যদিও জেলা প্রশাসনের আশঙ্কা, নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

অন্য দিকে, একে টানা বৃষ্টি, তার উপর পাহাড়ি নদীগুলির জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে, চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh)। বিশেষত বিপাশা নদীর (Beas River) জল ফুলেফেঁপে উঠেছে। কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বন্যার সতর্কতা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নদীর পাশবর্তী জনপদে সতর্কতা জারি করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে মানুষকে। সূত্রের আরও খবর, সরকারি হিসেব অনুযায়ী, গত ২০ জুন থেকে ঝড়, ধস ও বৃষ্টিজনিত নানা দুর্ঘটনায় হিমাচলে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টাতেই মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। হিমাচল বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের (State Disaster Response Force) মতে, পাহাড়ি রাজ্যে অতিবৃষ্টির কারণে শিলাস্তর সরে গিয়ে যেকোনও সময় ধস নামতে পারে। ফলে পর্যটকদের হিমাচলের দুর্গম এলাকায় না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি (Pushkar Singh Dhami) পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন, ‘‘যে সব এলাকায় ধস বা সড়ক ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্গঠনমূলক কাজ চলছে। সাধারণ মানুষ যেন ভয় না পান। প্রশাসন তাদের পাশে আছে।’’ অন্যদিকে, হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুক্কু (Sukhvinder Singh Sukhu) বলেন, ‘‘মানুষের জীবন যেন রক্ষা পায় সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য। দুর্যোগ মোকাবিলার দলগুলিকে সর্বোচ্চ সর্তকতা বজায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে।’’ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের পাশাপাশি ক্ষোভও বাড়ছে। চাম্বার এক বাসিন্দা সুরেশ ঠাকুর (Suresh Thakur) জানান, ‘‘বিদ্যুৎ নেই, জল নেই, রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, আমরা বাঁচব কী করে? প্রশাসন তো বহু ক্ষেত্রে পৌঁছতেই পারছে না।’’

আবহাওয়া দফতরের আগামী ক’য়েক দিনের পূর্বাভাসে আশার আলো কম। আগামী ক’য়েক দিন উত্তর ভারতে বর্ষা আরও সক্রিয় থাকবে বলে জানানো উল্লেখ। এমনকী, আরও একাধিক জায়গায় ধস ও বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ। সেই আশঙ্কাতেই উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলের একাধিক জেলার স্কুল-কলেজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, পাহাড়ি রাজ্যগুলির বর্ষার এই ভয়াবহ রূপ আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কী ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে মানুষ প্রকৃতির রোষে পড়লে। এবং একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলছে, এই দুর্যোগ রুখতে যথাযথ প্রস্তুতি কি সত্যিই ছিল প্রশাসনের?

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | Issue 71, 29th June 2025 | Sunday | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৯ জুন ২০২৫, সংখ্যা ৭১| রবিবার

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read