



সাশ্রয় নিউজ ★ ওয়াশিংটন : নেপালের নাগরিকদের জন্য এক দশক ধরে চলা অভিবাসন ছাড়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চলেছে আমেরিকা (USA-NEPAL) বলে সূত্রের খবর। ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে মার্কিন সরকার যে ‘টেম্পোরারি প্রোটেক্টেড স্টেটাস’ বা টিপিএস (TPS)-এর সুবিধা চালু করেছিল, তা এ বার তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সূত্রের এও খবর, সম্প্রতি আমেরিকার অভিবাসন দফতর (USCIS) একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, আগামী ৫ অগস্টের পর এই সুবিধা আর কার্যকর থাকবে না। ফলে হাজার হাজার নেপালি অভিবাসীর ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
২০১৫ সালের ২৪ জুন, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত নেপালের নাগরিকদের সহানুভূতির জায়গা থেকে এই বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা করেছিল মার্কিন সরকার। এর মাধ্যমে নেপালের নাগরিকেরা আমেরিকায় অস্থায়ী ভাবে আইনি নথিপত্র ছাড়াই বসবাসের সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে এই ছাড় ২০১৬ সালের অক্টোবরে আরও দেড় বছরের জন্য বাড়ানো হয়। এর পরবর্তী বছরগুলোতেও দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এই ভূমিকম্পের ঘটনা প্রায় এক দশক আগের, এমন যুক্তি দিয়ে এখন ওই ছাড় তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের তরফে।হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১২,৭০০ নেপালি নাগরিক টিপিএস (TPS) -এর সুবিধার আওতায় রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৫,৫০০ জন ইতিমধ্যেই স্থায়ী বাসিন্দা (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) হিসাবে মার্কিন মুলুকে বসবাসের বৈধ অধিকার অর্জন করেছেন। কিন্তু বাকিদের অর্থাৎ ৭,০০০-এরও বেশি মানুষকে এখন বাধ্যতামূলক ভাবে আমেরিকা ছাড়তে হতে পারে যদি তাঁদের কাছে অন্য কোনও বৈধ অভিবাসন নথি না থাকে।
বৈদেশিক বিশেষজ্ঞ মহলের দাবী, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়বেন সেই সব নেপালি অভিবাসীরা, যাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গত এক দশকে আমেরিকায় বসবাস শুরু করেছিলেন। তাঁদের অনেকেরই সন্তানরা ইতিমধ্যেই আমেরিকায় পড়াশোনা শুরু করেছে। কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে তাঁদের জীবনে অনিশ্চয়তার ছায়া নেমে এসেছে।যদিও অভিবাসন দফতরের তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, আগামী ৫ অগস্ট পর্যন্ত এই ছাড় কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে টিপিএস সুবিধা পাওয়া ব্যক্তিরা যদি অন্য কোনও বৈধ ভিসা বা অভিবাসন পন্থার জন্য আবেদন করতে চান, তবে তাঁরা তা করতে পারবেন। কিন্তু তেমন কিছু না হলে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আমেরিকা ছেড়ে যাওয়াটাই একমাত্র উপায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির প্রতিফলন নয়, বরং এতে আমেরিকায় কর্মরত নেপালি অভিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ বহু অভিবাসী গত দশকে স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা, নির্মাণ শিল্প, হোটেল ও রেস্তোরাঁ শিল্প প্রভৃতি নানা খাতে তাঁরা কর্মরত। তাঁদের হঠাৎ চলে যাওয়ায় স্থানীয় শ্রমবাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।অন্যদিকে, অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্ট পরিবর্তন হলে আবার এই টিপিএস সুবিধা চালু হতে পারে, এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ অতীতেও বহুবার টিপিএস-এর সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অবস্থানের উপর নির্ভর করেছে।ফলে, বর্তমানে যাঁরা এই সুবিধার উপর নির্ভর করে আমেরিকায় রয়েছেন, তাঁদের সামনে সময়সীমা যতই থাকুক, বাস্তবে এ এক কঠিন অনিশ্চয়তার অধ্যায়। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, বিকল্প খুবই সীমিত। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ শুধু অভিবাসন নীতির কঠোর সিদ্ধান্তই শুধু নয়! তা আরও একবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মানবিকতার মাপকাঠিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সাধারণ মানুষের জীবনে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Elon Musk : ‘ঋণের দাসত্ব নয়!’ ট্রাম্পের বিল বাতিলের ডাক ইলন মাস্কের
