Sasraya News

Travelog, Pink City | পিঙ্ক সিটি : রাজস্থানের জয়পুরে একদিন

Listen

সৌমি নন্দ ✪ সাশ্রয় নিউজ : পিঙ্ক সিটি (Pink City) নামে বিশ্ববিখ্যাত জয়পুর (Jaipur)। রাজস্থানের (Rajasthan) রাজধানী এই শহর শুধু গোলাপি রঙের প্রাসাদ আর বাজারের জন্য নয়, এক ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলার জন্যও পরিচিত। ১৭২৭ সালে রাজা জয় সিংহ দ্বিতীয় (Jai Singh II) এই শহর গড়ে তুলেছিলেন। বলা হয়, এটি ভারতের প্রথম পরিকল্পিত শহর, যার প্রতিটি রাস্তা, বাজার, দুর্গ, প্রাসাদ ও মন্দির নিখুঁত জ্যামিতিক পরিকল্পনার সাক্ষী।পথে যেতে যেতে প্রথমেই চোখে পড়ে হাওয়া মহল (Hawa Mahal)। ‘প্যালেস অফ উইন্ডস’ (Palace of Winds) নামেও খ্যাত এই স্থাপত্যকীর্তি এমনভাবে তৈরি, যাতে প্রাসাদের রাজা-রানীরা বাইরে তাকাতে পারেন, অথচ পথচলতি মানুষ তাঁদের দেখতে না পারে। একাধিক ছোট বড় ঝরোখা (Jharokha) আর জালির কাজ করা জানালা যেন বাতাস আর আলোর খেলা তৈরি করে। রিয়া চক্রবর্তী নামে একজন ভ্রামণিক (Riya Chakraborty) বলেন, “হাওয়া মহলের প্রতিটি ইট যেন রাজপুতানার বীরত্ব আর নারীর গোপন দৃষ্টি দুটোই ধারণ করে রেখেছে।”

কখনও কেল্লা আর প্রাসাদের গল্প, কখনও রঙিন হাটের গল্প, কখনও বা উটে চড়া রোদে মরুভূমির গান। কেউ বলেন, এ শহর নবরঙের, কেউ বলেন, ইতিহাসের। তবে সকলের কথাই মিলে যায় এই শহরের রাজকীয়তায়, আতিথেয়তায়, আর নিঃশব্দে বইতে থাকা বালির হাওয়ায়। শহরটি দেখলে বোঝা যায়, ভারতবর্ষ শুধু প্রযুক্তি আর আধুনিকতার জন্যই নয়, তার বুকে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, স্থাপত্য, শিল্পকলা আর অতিথিপরায়ণতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

এই শহরকে পিঙ্ক সিটি (Pink City) নামটি দেওয়া হয়েছিল ১৮৭৬ সালে। সে বছর ব্রিটিশ প্রিন্স অফ ওয়েলস (Prince of Wales) সফরে এসেছিলেন, আর তাঁর অভ্যর্থনার জন্য তৎকালীন মহারাজা রাম সিংহ (Ram Singh) গোটা শহরকে গোলাপি রঙে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। সেই ঐতিহ্য আজও বহন করে চলেছে জয়পুর। জয়পুর মানেই শুধু হাওয়া মহল নয়, বরং অ্যাম্বার ফোর্ট (Amber Fort), জয়গড় ফোর্ট (Jaigarh Fort), সিটি প্যালেস (City Palace) এবং জান্তার মন্তর (Jantar Mantar)-এর মতো অপূর্ব দর্শনীয় স্থান। অ্যাম্বার ফোর্টের গা বেয়ে সূর্যের আলো যখন নামে, তখন এর হলুদ-গোলাপি রঙ বদলে যায় সোনালি ছোঁয়ায়। সিটি প্যালেসে ঢুকলেই চোখে পড়ে শানদার দরবার হল, শীতল বাগান আর মিউজিয়াম, যা রাজপুতানার রাজাদের জীবনযাত্রার গল্প বলে। জয়পুরের বাজারগুলোও আলাদা আকর্ষণ। জোহরি বাজার (Johari Bazaar) বা বাপু বাজার (Bapu Bazaar) সর্বত্রই আছে লেহেঙ্গা, বাদামি চুড়ি, মিনাকারি গয়না, রাজারানীদের স্টাইলের নকশিকাঁথা ও বেদুইন চাদরের সম্ভার। বাপু বাজারে দেখা হল কলকাতার পর্যটক দেবাংশু নাথ (Debanshu Nath)-এর সঙ্গে। তিনি জানালেন, “জয়পুর না এলে রাজস্থানের স্বাদই পাওয়া যাবে না। এখানকার বাজারে হাঁটলে মনে হয়, ইতিহাসের মধ্যেই হাঁটছি।” শুধু তা-ই নয়, শহরের খাওয়া-দাওয়াও মনে রাখার মতো। দাল বাতি চুরমা (Dal Baati Churma), লাল মাংস (Laal Maans), কের সাংরি (Ker Sangri) আর গেহুঁ কা শিরা (Gehu ka Sheera) এই শহরের রন্ধনশিল্পের সম্পদ। জয়পুরের স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলিতে গেলে রাজস্থানি হস্পিটালিটির পূর্ণ আস্বাদ মেলে।

-প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র, সংগৃহীত 

রাজস্থান ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাস অবধি সময়টি সবচেয়ে ভাল। এই সময় আবহাওয়া মনোরম থাকে, তাপমাত্রা ৮-২৬ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হয় জয়পুর লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল (Jaipur Literature Festival), যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ ও পাঠকরা জড়ো হন। এছাড়াও, দীপাবলি (Diwali) ও গঙ্গৌর (Gangaur)-এর মতো উৎসব জয়পুরের সংস্কৃতিকে আরও রঙিন করে তোলে। শহরের আরেক প্রান্তে আছে জল মহল (Jal Mahal)। মানসাগর লেকের (Man Sagar Lake) মাঝখানে দাঁড়ানো এই প্রাসাদকে দেখে মনে হয় যেন জলে ভেসে আছে। তবে পর্যটকরা ভেতরে যেতে না পারলেও, লেকের পাড়ে বসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, “জল মহল যেন জয়পুরের হৃদয়। এখানে বসে থাকলে বোঝা যায়, কেন এই শহর এত প্রেমের।”

Read | Cherthala Travelog : সবুজ জলরেখায় হারিয়ে যাওয়া, চের্থালা ভ্রমণ

জয়পুরের প্রতিটি কোণেই একেকটি গল্প। কখনও কেল্লা আর প্রাসাদের গল্প, কখনও রঙিন হাটের গল্প, কখনও বা উটে চড়া রোদে মরুভূমির গান। কেউ বলেন, এ শহর নবরঙের, কেউ বলেন, ইতিহাসের। তবে সকলের কথাই মিলে যায় এই শহরের রাজকীয়তায়, আতিথেয়তায়, আর নিঃশব্দে বইতে থাকা বালির হাওয়ায়। শহরটি দেখলে বোঝা যায়, ভারতবর্ষ শুধু প্রযুক্তি আর আধুনিকতার জন্যই নয়, তার বুকে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, স্থাপত্য, শিল্পকলা আর অতিথিপরায়ণতার এক অপূর্ব মেলবন্ধন। তাই পর্যটকদের জন্য বার্তা একটাই, ভ্রমণের তালিকায় রাজস্থানের নাম থাকলে জয়পুরকে বাদ দেবেন না। এখানে প্রতিটি সকাল আর প্রতিটি সন্ধ্যা এক একটি নতুন গল্প শোনায়, যার রঙ আজও গোলাপি।

ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক ও সংগৃহীত 
আরও পড়ুন :Kandy Honemoon Travelog | মধুচন্দ্রিমায় ক্যান্ডি: প্রেম, প্রকৃতির আতিথেয়তায়

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read