Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Tour & Travel : আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে…

Listen

ঐতিহাসিক মন খোঁজ খোঁজ। জানা গেল মহাভারতের বনপর্বে পান্ডবদের অজ্ঞাত বাসের সময় এখানে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান ছিল তাঁদের। সেই সময় ভীম তাঁর একটি গদা এখানে পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলায় এই অঞ্চলে এমনটা অসম্ভব ছিল না মোটেই। পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে সে গল্প আজ ও অব্যাহত গ্রামবাসীদের কাছে। আমার মন বড় খুঁতখুঁতে আচ্ছা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এই গপ্পটি  কী জানতেন না! লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় 

 

 

মাদের সমাজে কিছু নতুন বাহানার সংযোজন হয়েছে। যেমন ধরুন এই বসন্তে পলাশ দেখতে পুরুলিয়া যেতে হবে, নাহলে এই জীবনে বসন্তের রূপ না কী ধরা পড়বে না। সুন্দরের আহ্বান চলে সেখানে। ‘লালপাহাড়ির দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা…’। কিন্তু আমরা যারা গাঙ্গেয় মফস্বল শহরে থাকি তারা কী সকলেই বসন্তের রূপ থেকে সত্যিই বঞ্চিত! কৃষ্ণমাটিতে কী রাঙাপলাশ নেই তবে ? আমার অবশ্যই এমনটা মনে হয় না। আসল কথা হল চোখ। সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন নিজের শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখবেন কত সুন্দর এই বসন্তের রূপ। এখানে প্রকৃতি তার সমস্ত পসরা নিয়ে হাতছানি দিচ্ছে আপনাকে।

 

 

গঙ্গার ওপারে রাধার ঘাট থেকে শুরু করে ফরাস ডাঙা ঘাট বরাবর রাস্তায় দুপাশে রয়েছে পলাশ, শিমূল, আমের মুকুল, সজনের ফুল, কচি পাতা, মাঠের মধ্যে ফুটে আছে ঝিঙে ফুল। অদ্ভুত রূপ তার। এরই মাঝে মাঝে কিছু জংলা গাছ আর কিছু বাঁশ ঝাড়ের মর্মর ধ্বনি।

 

ছবি : সংগৃহীত

 

পাতাদের ঝরে পড়ার ছন্দে হৃদয় বলে উঠবেই , ‘ঝরা পাতা গো আমি তোমাদের দলে…’। আসলে আমাদের সময় বড় কম। তাই এগুলো আমাদের চোখে পড়ে না। বাঁদর লাঠি ফুলগুলোকে আমরা ঠিক পরিচিত গোত্রের মধ্যে ‌ফেলতে চায় না তাই কবিগুরু ওকে অমল ত্রাস নাম দিয়ে গেছে। অবহেলায় ফুটে আছে আকন্দ, ধুতুরা আর ঘেঁটু ফুল বা পরিচিত নাম ভাট ফুল। এগুলো আমরা বাজার থেকে শিবরাত্রির প্যাকেজ হিসেবে কিনে আনি। আসলে মন্দির তৈরির আগে মানুষ বড় বৃক্ষকে দেবতা হিসেবে ঠাঁই দিয়েছিল। আর এসব পুজো করতেন ওইসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। দারিদ্র্যের সঙ্গে যাদের নিত্যবাস। স্বভাবতই এইসব বন ফুল আর ফল সাধারণভাবে এসব পুজোর উপাচার‌ হয়ে উঠেছিল এমনটাই ধারণা। এদের মধ্যে সর্ব প্রাচীন দেবতা হলেন শিব। শিবের পুজোর উপাচারগুলোও সরল এবং সাধারণ। ব্যাধের গল্প আমরা প্রায় সকলেই জানি। এত অল্পে তুষ্ট হন বলেই তিনি আশুতোষ। শিবের আবার অনেক রকম দিক আছে। যেমন তিনি নেশাটেশা করেন তাই সাধারণ মানুষের ভিড়েও তাঁকে দিব্য মানিয়ে যায়। বেশভূষার কোনো আড়ম্বর নেই। ঠিক যেমনভাবে আমরা অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষকে নিজেদের মনে করতে পারি , মনের কথা শেয়ার করতে পারি কতকটা ওইরকম। যাইহোক শিব মন্দির তাই বাংলার প্রায় প্রতিটি শহর, গ্রাম এমনকি জেলার অলিতে গলিতেও দেখা যায়। মন্দির থাকলে আবার কিছুটা মাহাত্ম্য থাকতেই হয় নাহলে সাধারণ মানুষের বয়েই গেছে তাঁকে মান্যতা দিতে!

 

ছবি : সংগৃহীত

 

এতক্ষণ পড়ার পর সকলের এটাই মনে হবে বসন্তের সঙ্গে শিব বাবাজী কোথা থেকে উদয় হলেন। আসলে বসন্তের রূপ দেখতে দেখতে এই শিব বাবাজীর দর্শন পাওয়া গেল। কিন্তু এটা কী! এতো মনে হচ্ছে লোহার এক বিশেষ দণ্ড। গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে আসল কথায় আসা যাক।

 

ভীমেশ্বর শিবমন্দির। ফরাসডাঙ্গা। ছবি : লেখক

 

ফরাস ডাঙা ঘাট পেরিয়ে এসে দেখা গেল জঙ্গলের মধ্যে এক প্রাচীন শিব মন্দির। এখানে উনি ভীমেশ্বর নামে পরিচিত। কিন্তু ভীম কিভাবে জড়িয়ে‌ গেল! এই ইতিহাস খোঁজ করতে গিয়ে আবিষ্কার হল এক লোহার গদার শেষের অংশটি।

ইতিহাস কিন্তু একসময় আমার ভীষণ প্রিয় বিষয় ছিল। অতএব, ঐতিহাসিক মন খোঁজ খোঁজ। জানা গেল মহাভারতের বনপর্বে পান্ডবদের অজ্ঞাত বাসের সময় এখানে কিছু সময়ের জন্য অবস্থান ছিল তাঁদের। সেই সময় ভীম তাঁর একটি গদা এখানে পুঁতে রেখে গিয়েছিলেন। অবিভক্ত বাংলায় এই অঞ্চলে এমনটা অসম্ভব ছিল না মোটেই। পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে সে গল্প আজ ও অব্যাহত গ্রামবাসীদের কাছে। আমার মন বড় খুঁতখুঁতে আচ্ছা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা এই গপ্পটি কী জানতেন না! হতে পারে উনি ভাবতেই পারেন‌ দেশের মানুষ ওঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। যেইভাবা সেই কাজ। অপর একজন মানুষ বললেন, ” নবাব না কী হাতীর পায়ে শেকল বেঁধে এই গদা তোলার বহুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন”। যাইহোক যদি ধরেও নিতে হয় এই গল্প মনগড়া তথাপি অন্যদিকে ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন প্রকাশ পেয়েছে বারংবার একথা অস্বীকার করা যায় না।

 

ছবি : সংগৃহীত

 

মন্দিরটির সংস্কারের কাজ চলছে। মন্দিরের পাশে খোলা জায়গায় যেসব প্রস্থর খন্ড রাখা রয়েছে সেগুলোর আকৃতি এবং বয়স দুই প্রাচীন। কিন্তু মন্দিরের বাইরে খোলা অবস্থায় পড়ে‌ রয়েছে এটাও ভীষণ অবাক করেছে। যাইহোক ফাল্গুনে শিব তো আসবেন কারণ বসন্তের শিবরাত্রির দিনটিতেই তো তার বিবাহের লগ্ন। কাজেই নটরাজের বিবাহ মাসে প্রকৃতি সাজবে সেইটেই তো স্বাভাবিক। শিব হলেন আদি পিতা এবং মা গৌরী হলেন ধাত্রী মাতা। এই দুই এর মিলনে প্রকৃতি তার সর্বস্ব ঢেলে দেবেন এইটেই স্বাভাবিক। অদ্ভুতভাবে এর মধ্যে চোখে পড় একটি গাছ। ওর পাতাগুলো বড় ছোটো ছোটো কতকটা কামিনীর মতন। স্থানীয় মানুষের পরিভাষায় এ না কী জিলিপি গাছ। ছোট্ট ছোট্ট ফুল হয় হালকা বাসন্তী রঙা।কতকটা নাকছাবির ফুলের মতন। ফলগুলো না কী অবিকল জিলিপির মতন হয় । স্থানীয় ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা তুলে তুলে খায়। মন্দিরের পাশেই একটি বড় বাঁধানো বটবৃক্ষ। সেখানে প্লাস্টিকে ঢিল মুড়ে অনেকেই মানত করে যান। জানি না সেসব পূর্ণ হয় কী না! তবে চারিদিকে জঙ্গলের শোভা বড় সুন্দর। যেন অপরূপা ফাল্গুন। বসন্ত বড় ক্ষণিকের জন্য স্থায়ী হয় পৃথিবীতে এ নিয়ে কবি লেখকদের অভিমানও বিস্তর। কিন্তু যা কিছু সুন্দর তার স্থায়ীত্ব কম না হলে যে তার কদর কমে যায়। প্রকৃতি জানে কাকে কখন ঠিক কতটুকু দিতে হবে। প্রকৃতি তার অকৃপণ দানের অবহেলা সহ্য করতে পারেন না। তাই তো নেমে আসে দুর্যোগ। পুরুলিয়া নয় নিজের শহরের আশেপাশে হেঁটে দেখুন। এই ভরা প্রেমের মরসুমে কত রঙের বাহার।‌
নিজের জায়গার‌ এমন সৌন্দর্য্য অবহেলা করে হারিয়ে ফেলছেন না তো! ‘আহা ,আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে,কত পাখি গায়’। পথে চলতে চলতে দেখুন ফিঙে, দোয়েল, শুনুন ডাহুক আর ঘুঘুর ডাক। আসলে চোখের কদর করতে শেখাটাই আসল শিক্ষে। নাহলে এসব কথা তো অন্তর্জালেই ধরা দিতে পারে। কিন্তু নিজে হারিয়ে যান‌ প্রকৃতির কাছে। নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করে দেখুন। পলাশ দেখতে যাওয়া এখন বোধকরি সামাজিক স্ট্যাটাসে রূপান্তরিত হয়েছে! ওদের তো অভিমান হতে পারে! …. কী পারে না…?

ছবি : লেখক ও সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | 2 March 2025, Issue 54| সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২ মার্চ ২০২৫ | সংখ্যা ৫৪

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment