Tammana Khatun Incident | বোমার শিকার শিশুর বাড়িতে ক্ষতিপূরণ নিয়ে বিতর্ক, হুমায়ুন কবিরকে ফিরিয়ে দিলেন তামান্নার পরিবার

SHARE:

সাশ্রয় নিউজ ★ নদীয়া : ভোট-পরবর্তী হিংসার জ্বালায় নদিয়ার কালীগঞ্জে প্রাণ গেল এক চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তামান্না খাতুনের (Tamanna Khatun)। বোমার আঘাতে নিথর ছোট্ট শরীর। কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা গ্রাম। মঙ্গলবার সেই নিথর শোকস্তব্ধ পরিবেশে পৌঁছলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির (Humayun Kabir)। সঙ্গে ছিল একটি খয়েরি খাম, যেখানে ছিল ‘সামান্য কিছু টাকা’। উদ্দেশ্য ছিল ক্ষতিপূরণ। কিন্তু সেই সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ গ্রহণ করলেন না শিশুটির মা।সোজাসাপ্টা প্রত্যাখ্যান। প্রশ্ন, কিসের ক্ষতিপূরণ? কিসের জন্য এই অর্থ? তামান্নার মা বেদনাহত কণ্ঠে বললেন, “কীসের জন্যে?… কীসের জন্যে? এমন শোক আমায় দেখাবেন না। আমি কিন্তু ধৈর্য রাখতে পারছি না।” হুমায়ুন কবির তখন চেষ্টা করলেন বুঝিয়ে বলার, “এখানে আমার ফোন নম্বর আছে। যোগাযোগ করবেন কোনও অসুবিধা হলে… সামান্য কিছু টাকা আছে…”। কিন্তু কথাগুলি শেষ হওয়ার আগেই কেঁদে ফেলেন তামান্নার মা। পাশে থাকা এক প্রতিবেশী মহিলা বলে ওঠেন, “ওঁর আর কে আছে টাকা নেবে?”

এই দৃশ্য রাজনীতির বাইরে নয়। বরং রাজনীতির হিংসাই এই মৃত্যুর কারণ বলে মনে করছেন এলাকাবাসীর একাংশ। যদিও হুমায়ুন কবির তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে বলেন, “আমি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন করি। আমার যাই পরিচয় থাক না কেন…”। কিন্তু তামান্নার মা তীব্র ক্ষোভে প্রশ্ন করেন, “আপনি কোথা থেকে এসেছেন?” বিধায়ক বলেন, “কলকাতা থেকে…”। তারপরেই বিস্ফোরণ। মৃত শিশুর মা বলেন, “অথচ যেই মেয়েটা ভোট চাইতে এল (নবনির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক আলিফা খাতুন (Alifa Khatun), আমার মা চলে গেল, একবারও আসতে পারল না?” এখানেই ক্ষোভ সীমা ছাড়ায়। চারপাশে জমে ওঠে উত্তেজনা। রাজনীতির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভে মুখর হয় মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বিধায়ক হুমায়ুন কবির নিজেও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “প্রতিটা মানুষের এই অপরাধের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা উচিত। যার কাছে বোমা থাকবে, তিনি কোন ধর্মের, কোন দলের সেটা দেখার দরকার নেই। এটা সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “আমি তো জানি কারা এমন বোমা মারে… তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানুষের মুখ খোলা উচিত।” ঘটনার পর থেকেই তামান্নার মৃত্যু নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। শিশুর উপর এমন বর্বর হিংসার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়েও। কেন আগাম সতর্কতা ছিল না? কেন হিংসা প্রতিরোধে ব্যর্থ হল পুলিশ? শিশুটির পরিবার সরাসরি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে।

এক সময় প্রতিবাদী কণ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকা হুমায়ুন কবিরের মুখেও দেখা গেল হতাশা। শোক আর রাগে মিশে থাকা জনরোষের সামনে একরকম চুপ করেই দাঁড়িয়ে থাকলেন তিনি। তাঁর কণ্ঠেও ঝরে পড়ে অসহায়তা, “আমার মনে হয় এদের পাশে দাঁড়ানোটা মানবিক দায়িত্ব, এর বাইরে কিছু না।” তবে তামান্নার পরিবারের সেই মানবিকতার প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো মানসিকতা নেই এই মুহূর্তে। একটাই কথা তাঁদের মুখে, “মেয়ে চলে গেছে। এখন আর কিছুতে কিছু হবে না।” এটাই হয়ত সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বার্তা। শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, মানুষের হৃদয় আর বিশ্বাস ফেরানোর দায় এখন রাজনীতির কাঁধে। আর সেই দায় কতটা পালন করা হবে, তার উত্তর সময়ই দেবে। আপাতত নদীয়ার কালীগঞ্জের নিঃসাড় সন্ধ্যা কেবল কান্নায় ভরে আছে এক শিশুর অকালমৃত্যুর শূন্যতায়।

ছবি : সংগৃহীত 
আরও পড়ুন : CM Mamata Banerjee |দীঘায় রথযাত্রার ঢাকে কাঠি, পৌঁছলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

আরো পড়ুন