Sasraya News

Suchitra Sen : মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জীবনের মোড় ঘোরানো গল্প : একটি ইতিহাস

Listen

সাশ্রয় নিউজ ★ তনুজা বন্দ্যোপাধ্যায় : পুরী, উনিশ শতকের শেষদিক। সাগরের ঢেউ তখনও হয়ত জানত না তারা সাক্ষী হতে চলেছে এক ভবিষ্যতের মহানায়িকার জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় মোড় নেওয়ার। সময়টা ১৯৪৭-৪৮। বাংলাদেশের পাবনা জেলার এক কিশোরী রমা দাশগুপ্ত, বয়স মাত্র ১৬। মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন পুরী। কে জানত, সমুদ্রের নোনাজলে পা ভিজিয়েই লেখা হয়ে যাবে বাংলা চলচ্চিত্রের এক কিংবদন্তীর জন্মকথা? রমা তখন স্রেফ এক কিশোরী। অভিনয়ের কোনও নামগন্ধও নেই জীবনে। না কোনও আলোর ঝলকানি। না নামজাদা পরিবারের মর্যাদা। সে সময়ের কোনও সিনেমা অনুরাগী নিশ্চয়ই ভাবেননি, এই মেয়েটিই একদিন হয়ে উঠবেন সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। যার নাম শুনলেই আজও সত্তর-আশির দশকের সিনেমাপ্রেমীদের চোখ ভিজে ওঠে।

সুচিত্রা সেন। ছবি : সংগৃহীত

সেই পুরী সফরে পরিবারের সঙ্গে থাকার সময় একদিন সকালে রমা একা একাই হাঁটতে বেরিয়েছিলেন সমুদ্রতটে। তাঁর সেই নির্জন হাঁটার মুহূর্তেই নজর পড়ে যায় অন্য এক পর্যটক পরিবারের দিকে। সেই পরিবারেই ছিলেন দিবানাথ সেন (Dibanath Sen)-এর মা।

সুচিত্রা সেন। ছবি : সংগৃহীত

বলিউড বা টলিউড নয়, একেবারেই এক সাধারাণ ঘরোয়া দৃশ্য। কিন্তু এই দৃশ্যই বদলে দেয় ইতিহাস। দিবানাথ সেন ছিলেন কলকাতার বালিগঞ্জ নিবাসী, একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর মা সেদিন রমার মধ্যে দেখে ফেলেন ভবিষ্যতের ‘পুত্রবধূ’। প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়ে যায় রমাকে। এরপর আর দেরি হয়নি। সোজা রমার বাবা করুণাময় দাশগুপ্তের (Karunamoy Dasgupta) কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেন ছেলের বিয়ের। কোনও ছবির চিত্রনাট্য নয়। বাস্তব জীবনেই শুরু হয় সেই নাটকের পরবর্তী দৃশ্য। রমার বাবা এই প্রস্তাবকে সম্মতি জানান। ক’য়েক মাসের মধ্যেই ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় দিবানাথ এবং রমার।

সুচিত্রা সেন। ছবি : সংগৃহীত

এখানেই থেমে থাকেনি সেই সমুদ্রতটের গল্প। বিয়ের পর স্বামীর হাত ধরেই রমা পা রাখেন টলিপাড়ার (Tollywood) স্টুডিওর অন্দরে। শোনা যায়, দিবানাথই প্রথম উৎসাহ দেন স্ত্রী’কে তাঁর প্রতিভার জায়গায় নিজেকে মেলে ধরতে। তখনকার দিনে সমাজে নারীকে পর্দার আড়ালেই রাখতে চাইত পরিবার। অথচ দিবানাথ নিজে রমার গান ও অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাকে সম্মান করে তাঁকে স্টুডিওতে নিয়ে যান। ১৯৫২ সালে মুক্তি পায়নি ঠিকই, তবে ‘শেষ কোথায়’ (Shesh Kothay) ছবিতে তাঁর ডেবিউ হয়। তারপর একের পর এক চলচ্চিত্র, একের পর এক জনপ্রিয় জুটি। উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর সঙ্গে তাঁর রসায়ন হয়ে ওঠে কালজয়ী। কিন্তু এ পথ সহজ ছিল না। প্রথম ছবি মুক্তি না পাওয়ার পরেও হাল ছাড়েননি রমা। বরং নিজের প্রতিভা এবং অধ্যবসায়ের উপর ভরসা রেখে এগিয়ে গেছেন। নিজের নাম বদলে নে। রমা থেকে হয়ে ওঠেন সুচিত্রা। আর তারপর ইতিহাস জানে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলা সিনেমার ‘মহানায়িকা’ (Mahanayika)

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। ছবি : সংগৃহীত

তবে এই সাফল্যের পেছনে যেটা থেকে যায়, সেটা হল এক মেয়ের নির্জন মুহূর্তের মধ্যে হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এক সাক্ষাৎ। যে সাক্ষাৎ একদিন তাঁকে এনে দেবে স্বামী, পরিবার এবং ভবিষ্যতের এক নতুন রাস্তা। হয়ত পুরী সৈকতের সেই সকালটা না থাকলে বাংলা চলচ্চিত্রও হারিয়ে ফেলত তার সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। সুচিত্রা সেন ছিলেন বরাবরই নিজেকে নিয়ে গুটিয়ে থাকা একজন মানুষ। অভিনয়ের বাইরে কখনওই তিনি পছন্দ করতেন না নিজেকে সংবাদ শিরোনামে দেখতে। প্রাইভেসি ছিল তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। কিন্তু ভাগ্য যেন নিজের কলম দিয়ে লিখে রেখেছিল তাঁর নাম সিনেমার পাতায়। আর সেই লেখার সূচনা হয়েছিল এক সহজ, সাদামাটা পারিবারিক ভ্রমণ থেকে। সুচিত্রা সেনের জীবনের এই অধ্যায় হয়ত অনেকেই জানেন না, কিংবা জানলেও ভুলে গেছেন। কিন্তু এটুকু বলা যায়, যে সমুদ্র সৈকতে এক কিশোরী একদিন হেঁটে বেড়িয়েছিলেন, তার ঢেউ আজও যেন বলে যায় সেই কাহিনি। এই কাহিনি কোনও স্ক্রিপ্ট নয়, কোনও পরিচালকের কল্পনাও নয়। এই কাহিনি বাস্তবের। এক জীবনের। এক মহানায়িকার জন্মের।

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন :

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read