



নাহিদ হাসান রবিন বাংলাদেশে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ের পটভূমিতে প্রচুর ছোটগল্প লেখেন বাংলা ভাষার এই লেখক। ওঁর গল্পের টানে বিভোর হন পাঠকরা। সাশ্রয় নিউজ-এর নভেম্বর মাসের পাতায় রইল এই লেখকের একটি ছোটগল্প।
রুপালি রঙমাখা রমণী
নাহিদ হাসান রবিন
ভাদ্রের ঘুঘু ডাকা তপ্ত দুপুরে আমি গেলাম ওর বাসায়। এই সময়টা কারও বাসায় যাওয়ার জন্য বেমানান হলেও, অনেকটা বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল ওই সময়টাতে। তীব্র রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ওর বাসার গেটে গিয়ে ওকে ডাকলাম। বেশ ক’য়েকটি ডাক দেয়ার পরেও, ভেতর থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। পাশের বাড়িতে ক’য়েক শত লোকের সমাগম। একটা অনুষ্ঠানে এসেছে সবাই। অনেকেই দেখছে আমি গেটে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। বিষয়টা আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হল। কারণ পানসির মাচায় বসে স্রোতের অনুকূলে চলা কোনও যাত্রী নই আমরা, বিরুদ্ধ স্রোতে গন্তব্যহীন চলা দুই যাত্রী। মাত্র এক মিনিটের অপেক্ষার মাঝে মনের ভেতর নানান ভাবনা ঘুরপাক খেয়ে গেল। একবার ভাবলাম ফিরে যাই। আবার ভাবলাম, আরেকবার ডাকি। তাতেও কাজ হল না। এমন তো হবার কথা না। আগে থেকেই কথা ছিল, আমি এই সময়ে আসব। পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে ওর নম্বরে কল দিলাম। সংযোগ দেয়া সম্ভব হল না। মনটা এবার ফিরে আসার জন্য তাগাদা দিল। তবুও আরেকবার কল দিলাম। এবার রিং হল, রিসিভ হল না। হরিণাক্ষীর মতো ডাগর ডাগর দুটো চোখ মেলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এক অপরূপা রমণী। আমি পোড় খাওয়া জীবনের ধূসর দেয়াল ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকে দেখলাম। ব্যালকনির গ্রীল ভেদ করে সূর্যের আলো এসে পড়েছে ওর শরীরে। মনে হল, পুরো শরীর রুপালি রঙে মাখা। আমার দু’চোখ আনন্দে ছলছল করে উঠল। ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে ভেতরে ডাকল।
____________________________________________
ওর সুডৌল উন্নত বুক আমার বুকে লাগতেই উষ্ণতায় কেঁপে উঠল দুটো শরীর। আমার লোমকূপগুলো কি এক আনন্দে জেগে উঠল। ওর নিঃশ্বাসের ঘ্রাণে আমি মাতোয়ারা হয়ে ওর কোমরের পেছনে চেপে ধরলাম। একটা সুখানুভূতি ওর মাঝেও স্পষ্ট হয়ে উঠল। শক্ত করে চেপে ধরল আমায়। আমিও পরম ভালবাসায় বুকের সঙ্গে নিবিড় করে রাখলাম। চুমুতে ভরে দিলাম ওর মুখমণ্ডল। তৃপ্তির পরশে ও-চোখ খুলতে পারেনি।
_____________________________________________
চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মতো হালকা আলোয় পরিপাটি করে সাজানো ঘরের মধ্যে এখন শুধু আমরা দু’জন। খানিকটা সময় কারও মুখে কোনও কথা ছিল না। হয়ত অধিক আনন্দে দু’জন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। খানিক পরেই দু’জনের কথার যেন খই ফুটল। আমার খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। মাত্রই পাশের বাড়িতে দাওয়াত সেরে ওর বাসায় ঢুকেছি। তবুও কি ছাড়ে; আইসক্রিম আর রসমঞ্জুরী খেতেই হল। ইচ্ছে করল, নিজ হাতে ওকে একটু খাইয়ে দেই। ওর দিকে হাত বাড়াতেই পরম আনন্দে তা মেনে নিল। মুখে তুলে দিতেই ওর হাতের স্পর্শে আমি এক পরম তৃপ্তির ছোঁয়া অনুভব করলাম। প্রশান্তিতে ভরে গেল হৃদয়। আমি খেয়াল করলাম, ও-নিজেও ভেতরে ভেতরে এক পরম তৃপ্তিতে পুলকিত হল। কতদিন পর ওর সঙ্গে আমার দেখা মনে করতে পারছি না। তবে এমন একাকীভাবে পাওয়া এই প্রথম। এমন ফাঁকা বাড়িতে একজন মহিলার সাথে বসে সময় কাটানো, আমার কাছে বেশ আপত্তিকরই মনে হচ্ছিল। ওর সরল ভালবাসা আর আন্তরিকতায় মুহূর্তেই তা ভুলে যাই। আমি খেয়াল করছিলাম, বিভিন্ন কাজের ছলে ও-সুযোগ পেলেই আমার শরীর ছুঁয়ে দেয়। আমি আনন্দে সাঁতার কাটি তখন।
ওর রান্না ঘরের জানালার গ্রীল ঘেঁষে তরতাজা বুনোগাছ লকলকিয়ে উঠেছে। পাশের বাড়ি থেকে জানালা ভেদ করে কিছু দেখার উপায় নেই। দু-হাত প্রসারিত করে ওকে বুকে ডাকলাম। একটু শান্তির আশায় পর-পুরুষের বুকে যাওয়া অপরাধ জেনেও লজ্জাবতীর মতো আমার বুকে এল। ওর সুডৌল উন্নত বুক আমার বুকে লাগতেই উষ্ণতায় কেঁপে উঠল দুটো শরীর। আমার লোমকূপগুলো কি এক আনন্দে জেগে উঠল। ওর নিঃশ্বাসের ঘ্রাণে আমি মাতোয়ারা হয়ে ওর কোমরের পেছনে চেপে ধরলাম। একটা সুখানুভূতি ওর মাঝেও স্পষ্ট হয়ে উঠল। শক্ত করে চেপে ধরল আমায়। আমিও পরম ভালবাসায় বুকের সঙ্গে নিবিড় করে রাখলাম। চুমুতে ভরে দিলাম ওর মুখমণ্ডল। তৃপ্তির পরশে ও-চোখ খুলতে পারেনি। ইচ্ছে করল চিবুকে চিবুক ঘষে নিবিড় আলিঙ্গনে কাটিয়ে দেই প্রহরের পর প্রহর। ঠিক সেই সময় চৌকাঠের ওপাশে খিলখিল করে হেসে ওঠে নিন্দুকের দল। নিজেদের সংযত করে নিলাম।
বিদ্যুৎ চলে গেল, চার্জার ফ্যানটা নিয়ে এসে খাটের উপর রেখে, ও বসল ঠিক আমার সামনে। আমি দু’চোখ ভরে ওর পবিত্র মুখখানা দেখলাম। ওর হাস্যজ্জ্বল মুখখানা আমাকে পলক ফেলতে দিচ্ছে না। শ্রাবণ মাস হলেও, বৃষ্টির কোনও দেখা নেই। কেমন ভ্যাপসা গরম। এই সময়টাতে চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করে। আজ অবশ্য ঘুম পালিয়েছে। ইচ্ছে করছে, কোনও নির্জন প্রান্তরে হিজল গাছের নিচে সবুজ ঘাসের বিছানায় বসে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে জীবনের না বলা কথাগুলি বলি। ইচ্ছে করছে আমার কোলে ওর মাথা রেখে মোহন বাঁশিতে সুর তুলি,
‘তুই যদি আমার হইতি রে
আমি হইতাম তোর
কোলেতে বসাইয়া তোরে
করিতাম আদর’…
একটা ঘোরের মধ্যে কতটা সময় পার হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি কেউ-ই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, চলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। খানিকটা ধমকের সুরেই ও বলল, দেরি আছে। এখনি যাওয়া কেন? ওর অধিকারমাখা এমন কথায় আমিও সুবোধ বালক হয়ে যাই। চলতে থাকে দু’জনের কথা আর কথা।
তিন-তিনটি ঘন্টার স্মৃতি বুকে নিয়ে বিকেলের সোনালি রোদ গায়ে মেখে বাড়ির পথ ধরি। মনে পড়ে বিদায়ের সময় ওর বুকে টেনে নিয়ে আমাকে চুমু দেয়ার কথা। আহ্ পরম তৃপ্তিতে ভরে গিয়েছিল আমার হৃদয়। মুখরিত নগরীতে লাল, নীল, বেগুনী নানান রঙের পোশাক পরা হাজারও রমণীদের ঢল। কোনও দিকে আমার মনোযোগ নেই। চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি ছবি ‘রুপালি রঙমাখা রমণী’। 🦋
অঙ্কন : প্রীতি দেব
👉সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও স্বরচিত গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস, প্রবন্ধ…
👉ই-মেল : sasrayanews@gmail.com
