



সাশ্রয় নিউজ ★ নতুন দিল্লি : অবশেষে অপেক্ষার অবসান। ইলন মাস্কের (Elon Musk) মালিকানাধীন স্পেসএক্সের (SpaceX) সংস্থা স্টারলিঙ্ক (Starlink) ভারতে ব্যবসা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি লাইসেন্স পেয়ে গেল। ২০২২ সাল থেকে যে স্বপ্নপূরণের দিকে চেয়ে ছিল সংস্থাটি, তার বাস্তবায়ন ঘটল ২০২৫-এর জুনে। শুক্রবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সূত্রে প্রকাশ, কেন্দ্রের টেলিকম মন্ত্রক স্টারলিঙ্ককে দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার অনুমতি দিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার বা মাস্কের তরফে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি।স্টারলিঙ্ক মূলত একটি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা, যার লক্ষ্য হল, পৃথিবীর প্রত্যন্ততম অঞ্চলেও স্থিতিশীল ও গতিশীল ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। ‘লো আর্থ অরবিট’ বা ‘LEO’-তে ঘুরতে থাকা ক্ষুদ্রাকৃতির স্যাটেলাইটগুলির মাধ্যমেই তারা বিশ্বব্যাপী এই পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে। স্টারলিঙ্কের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ১৬০-২০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে থাকা এই স্যাটেলাইটগুলির সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৬,৭৫০। এই নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করেই লক্ষ লক্ষ গ্রাহক আজ স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। ভারতের মতো জনবহুল ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে স্টারলিঙ্কের প্রবেশ নতুন দিগন্তের সূচনা করবে বলেই মনে করছেন প্রযুক্তিবিদরা। হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, উত্তর-পূর্বের পাহাড়ি অঞ্চল কিংবা মরুপ্রবণ রাজস্থান প্রভৃতি, যেখানে এখনও পর্যন্ত স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল, সেই সব জায়গায় স্টারলিঙ্ক হয়ে উঠতে পারে অন্যতম ভরসা। বিশেষত, দেশের গ্রামীণ ও দুর্গম এলাকাগুলিতে ডিজিটাল বিভাজন ঘোচানোর ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা নিতে পারে। সূত্রের খবর যে, এই লাইসেন্স পাওয়ার ফলে স্টারলিঙ্কের সঙ্গে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ ভারতের দুই বৃহৎ টেলিকম সংস্থা এয়ারটেল (Airtel) ও রিলায়্যান্স জিয়ো (Reliance Jio) তাদের পরিকল্পনায় এগোতে পারবে। মার্চ মাসে স্টারলিঙ্কের মূল সংস্থা স্পেসএক্সের সঙ্গে একটি শর্তাধীন চুক্তিতে পৌঁছেছিল এয়ারটেল। এরপর জিয়োও একই পথে হেঁটে মাস্কের সংস্থার সঙ্গে হাত মেলায়। তবে, সেই সব চুক্তির কার্যকারিতা নির্ভর করছিল ভারত সরকারের লাইসেন্স অনুমোদনের ওপর। এবার সেই সঙ্কট কেটে যাওয়ায় দেশের দুই প্রধান টেলিকম সংস্থা স্টারলিঙ্কের প্রযুক্তির সহায়তায় নিজেদের নেটওয়ার্ক বিস্তারে ঝাঁপাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কেন্দ্র এখনও অ্যামাজনের (Amazon) প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা ‘কুপিয়ের’ (Kuiper)-কে এ ধরনের কোনও লাইসেন্স দেয়নি। ফলে ভারতের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাজারে স্টারলিঙ্কের প্রাথমিক সুবিধা ও একচেটিয়া দখল নিশ্চিত হল বলেই অনেকে মনে করছেন।
Amir Khan : কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুললেন আমির খান
তবে এই সুখবর এল এমন এক সময়, যখন ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে চলছে তুমুল ঝড়। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)-এর সঙ্গে তাঁর তিক্ততা প্রকাশ্যে এসেছে। মাস্ক প্রশাসন থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনেন, যার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহল মাস্কের সংস্থাগুলির উপর সরকারি ভর্তুকি ও চুক্তি বাতিলের হুঁশিয়ারি দেয়। সেই আবহে মাস্কের সংস্থাগুলির শেয়ারবাজারে পতন ঘটে এবং কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। ঠিক এমন সময়ে ভারতের বাজারে স্টারলিঙ্কের এই লাইসেন্সপ্রাপ্তি মাস্কের জন্য এক বড় প্রাপ্তি এবং তা তাঁর সংস্থার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে বলেই মত পর্যবেক্ষকদের। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, ভারত সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভবিষ্যতের ‘ডিজিটাল ভারত’ নির্মাণে একটি সাহসী পদক্ষেপ করল। কারণ, এখনকার দিনে ইন্টারনেট শুধুই বিনোদন ব যোগাযোগের মাধ্যম নয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা, এমনকি প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি। সেক্ষেত্রে স্টারলিঙ্কের মতো বিশ্বমানের প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ভারতে প্রবেশ করলে দেশের ‘ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ এক নতুন দিশা পাবে। স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার নজর স্টারলিঙ্ক কবে এবং কোথা থেকে ভারতে পরিষেবা চালু করবে, সেই দিকেই। শুধু শহর নয়, গ্রামের মাটিতে যদি স্টারলিঙ্ক সত্যিই প্রতিশ্রুতি মতো ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে পারে, তবে এই প্রযুক্তিগত উদ্যোগ হয়ে উঠবে ভারতের নতুন ডিজিটাল বিপ্লবের ভিত্তি।
ছবি : সংগৃহীত
আরও :Lipstick : লিপস্টিক থাকবে অটুট, খাওয়ার পরেও! জানুন রূপটান বিশেষজ্ঞদের ৫টি গোপন টিপস
