Sasraya News

Wednesday, June 18, 2025

SSC Teachers protest : শিয়ালদার পথে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিবাদ, পুলিশের ধরপাকড়, উত্তপ্ত পরিস্থিতি

Listen

সাশ্রয় নিউজ ★ কলকাতা, ৩০ মে: শিয়ালদার রাস্তায় যেন টানটান উত্তেজনা। শুক্রবার সকাল থেকেই চারপাশে পুলিশি বেষ্টনী। শিয়ালদা চত্বর কার্যত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, চাকরি হারানো এসএসসি শিক্ষকদের (SSC Teachers protest) অর্ধনগ্ন মিছিলের ডাক ছিল এদিন। তাঁদের দাবি, নতুন করে পরীক্ষা নয়, বরং হকের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এসএসসি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা নতুন পরীক্ষা দিতে রাজি নন, বরং তাঁরা চান তাঁদের ‘হকের চাকরি’ ফিরিয়ে দিতে।

প্লা কার্ড হাতে চাকরিহারা শিক্ষিকা। ছবি সংগৃহীত

কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই, পুলিশি তৎপরতায় একের পর এক চাকরিহারা আন্দোলনকারীকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। শিয়ালদা চত্বরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা আন্দোলনকারীদের ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। পুলিশের স্পষ্ট ঘোষণা, ‘জমায়েতে অনুমতি নেই, তাই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, চোখে পড়ল, শিয়ালদা চত্বরে দুই মহিলা চাকরিহারা শিক্ষিকা রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদেরও ধরে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তাঁরা বারবার পুলিশের কাছে প্রশ্ন করেন, “আমায় কেন নিয়ে যাচ্ছেন? সরে যেতে বলেছিলেন, সরে গেছি। তবুও কেন?” কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি।একজন আন্দোলনকারী প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় চিৎকার করে বলেন, “আমায় কেন তুলছেন, আমি কী করেছি?” সেই প্রশ্নও থেকে গেল অনন্ত আকাশের দিকে।

শুধু রাস্তায় থাকা নয়, রেল স্টেশন, মেট্রো স্টেশনের বাইরেও পুলিশি নজরদারি তীব্র। পুলিশ সন্দেহভাজন মনে হলেই প্রশ্ন করছে, “আপনি ২০১৬ সালের প্যানেলের চাকরি হারা প্রার্থী?” দেখা হচ্ছে আইডি, মোবাইল ফোন। এমনকি মোবাইলে ‘২০১৬ প্যানেলের’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থাকলেই প্রিজন ভ্যানে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একজন চাকরিহারা বলেন, “আমি আন্দোলনে আসিনি, বিকাশ ভবনে যাচ্ছিলাম। তবুও আমাকে সন্দেহ করে ধরে নিয়ে যাওয়া হল।” চলছিল টানা ধরপাকড়। শিয়ালদা চত্বরে চারটি ডিভিশনের ডিসি-র উপস্থিতি স্পষ্ট করেছে পুলিশের প্রস্তুতি। কোনও জমায়েত তৈরি হওয়ার আগেই আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, “আমরা হকের চাকরি চাই। পরীক্ষা নয়। নতুন করে আবার পরীক্ষা নেওয়া মানে আমাদের লড়াইয়ের অপমান।” পুলিশ প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে, “শিয়ালদা চত্বরে অনুমতি ছাড়া জমায়েতের কোনো অনুমতি নেই। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”একদিকে পুলিশি কড়াকড়ি, অন্যদিকে চাকরি হারানো শিক্ষকদের ক্ষোভ—শহরের বুকে যেন প্রতিবাদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। এর শেষ কোথায়, সেই প্রশ্নই এখন আকাশে-বাতাসে ভাসছে।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের পুলিশী ধরপাকড়। ছবি : সংগৃহীত 

সূত্রের খবর, শিয়ালদা চত্বর থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলা চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় থানায়। সেখানে তাঁদের বসিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ। অনেকে ক্ষোভে-অভিমানে হাহাকার করেন, “কোন অপরাধ করেছি আমরা?” কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন, কেউ আবার চুপ করে বসে থাকেন হতাশায়।
অন্যদিকে, মিছিলের ডাক যাঁরা দিতে পেরেছিলেন, তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে প্রতিবাদের সুর তোলেন। লাইভ ভিডিও করে জানান, “এই দমননীতি আমাদের লড়াই থামাতে পারবে না। আমরা আবার পথে নামব।” চাকরিহারা শিক্ষকদের অভিযোগ, “যেখানে সুপ্রিম কোর্ট বলছে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা হোক, সেখানে আমাদের সরাসরি নতুন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার শুরু থেকে শুরু করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হল কেন? হক কে নেবে ফিরিয়ে?”
উল্লেখ্য, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদরা প্রশ্ন তুলছেন, “যেখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত, সেখানে এভাবে রাস্তায় নামা মাত্রই ধরে নিয়ে যাওয়া কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতির পরিপন্থী নয়?” এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে প্রশাসনিক সূত্রে খবর, “নতুন পরীক্ষা নেওয়া নিয়েই সরকার এগোতে চায়। আন্দোলনকারীদের দাবি মানা হবে না।”
শিয়ালদা থেকে নবান্ন পর্যন্ত অর্ধনগ্ন (প্রতীকী)  মিছিলের ডাক ছিল প্রতীকের মতো। সেটি সম্পূর্ণভাবে পুলিশি প্রতিরোধে ব্যর্থ হল বটে, কিন্তু আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধ করা গেল না। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, “লড়াই এখানেই শেষ নয়, লড়াই চলবে। রাজপথ আমাদের আওয়াজে মুখর হবে, যতক্ষণ না আমাদের হকের চাকরি ফেরত পাই।”
এই প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে আরও জায়গায়। অন্যান্য চাকরিহারা প্রার্থীরাও নতুন করে সংগঠিত হচ্ছেন। দেখা যাক, প্রশাসনের এই শক্তি প্রদর্শনের পরও কতটা সংগঠিত থাকে এই প্রতিবাদের আগুন। এ লড়াইয়ের শেষ কোথায়? কবে হবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান? সেই প্রশ্ন আজ রাজপথ থেকে নবান্নের করিডোর পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment