



শ্রেয়সী মজুমদার ★ সাশ্রয় নিউজ : প্রেমের কোনও নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কখনও সেটা হয় চুপিসারে শুরু হওয়া এক আড়াল-আবডালে লুকানো অনুভব, আবার কখনও তা হয়ে ওঠে এক নজরে বুকের ভিতর ধাক্কা দেওয়া বিদ্যুৎচমক। শাহরুখ খান (SRK / Shah Rukh Khan) যখন প্রথম গৌরী ছিব্বার (Gauri Chhibber)-কে দেখেছিলেন, বয়স তখন মাত্র ১৮। আর গৌরী? সবে ১৪।

সে বয়সে প্রেম মানেই তো এক বিস্ময়-ভরা অনুভব, ঠিক যেমনটা ছিল ওদের শুরু।দিল্লির পঞ্চশিলা ক্লাবে সেই প্রথম দেখা।

গৌরী নাচছিলেন একজন ছেলের সঙ্গে। চোখে চোখ পড়তেই একরাশ টান, অচেনা অনুভব। শাহরুখ এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে নাচবে?” কিন্তু গৌরীর উত্তর ছিল, “আমি প্রেমিকের সঙ্গে এসেছি।” পরে জানা যায়, প্রেমিক নয়, আসলে দাদা।

একটা ছেলেকে এভাবে ঠেকাতে তখনও সাহস দরকার ছিল, আর গৌরী সেটা করেছিল দারুণ কৌশলে। প্রথম ডেট ছিল খুবই ছোট।

মাত্র পাঁচ-ছয় মিনিট। কিন্তু শাহরুখ পিছু ছাড়ার লোক নন। ফোন নম্বর জোগাড় করেন, ‘শাহিন’ নাম দিয়ে ফোন করেন বাড়িতে। সে এক অন্যরকম দিন। তখন শাহরুখ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, পাশাপাশি কাজ করছেন নাটকে, সিরিয়ালে। মায়ের মৃত্যুর ধাক্কা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়ে বুঝলেন, জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঁচার নামই প্রেম।

শাহরুখ ছিলেন গৌরীর প্রতি প্রবল পজেসিভ। গৌরী যদি খোলা চুলে বেরোতেন, তাতে নাকি এসআরকে রীতিমতো রেগে যেতেন।

একবার এমনই এক ঝগড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গৌরী জন্মদিনের দিনে একাই মুম্বই পাড়ি দেন। কোনও কিছু না জানিয়ে, কোনও খবর না দিয়ে।
শাহরুখ সেই খবর পেয়ে পকেটে মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে পৌঁছে যান মুম্বই। সেই ১০ হাজার টাকাই দিয়েছিলেন গৌরীর মা। দিনভর খুঁজেও যখন মেলেনি গৌরীর খোঁজ, ঠিক তখনই সমুদ্রতটে ঘটে এক সিনেমার মতো ঘটনা দু’জনের মুখোমুখি দেখা। দীর্ঘক্ষণ কাঁদেন, জড়িয়ে ধরেন। বুঝে যান এ প্রেম কোনও অস্থায়ী অনুভূতি নয়, এ তো আসলে জীবনপথের সবচেয়ে শক্ত ভিত। একদিন নিজের ফিয়াট গাড়িতে বসেই গৌরীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শাহরুখ। কিন্তু প্রেমের গল্প যতই রূপকথার মতো লাগুক, বাস্তব ছিল কঠিন। গৌরী ছিলেন গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, আর শাহরুখ মুসলিম ঘরের ছেলে। সমাজের চোখে এই সম্পর্ক তখনও অস্বস্তিকর। শুধু তাই নয়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে গৌরীর পরিবার জানতেই পারেনি, ছেলে আসলে ‘শাহরুখ খান’। ভিন্ন নাম দিয়ে সম্পর্কের শুরুর দিকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন এসআরকে। এমন খবর প্রকাশ হয়েছিল সর্বভারতীয় সংবাদপত্রেও।

১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর সাত পাকে বাঁধা পড়েন তাঁরা। তখনও শাহরুখ বলিউডে স্টার নন। নিজের স্যুট কেনার টাকাও ছিল না। ‘রাজু বন গ্যয়া জেন্টলম্যান’ ছবির কস্টিউম ডিজাইনারের থেকে স্যুট ভাড়া নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

এক নিঃস্ব স্বপ্নবাজ তরুণ, এক অনিশ্চিত পথ। গৌরী সে পথেই পা বাড়িয়েছিলেন নিঃসংকোচে।গৌরীকে শুরুতে সিনেমা কোনও ভাবেই টানত না। কিন্তু স্বামীর প্রতি ভালবাসা তাঁকে নতুন পথে নিয়ে যায়। প্রযোজনার দায়িত্ব নেন। ‘ম্যায় হুঁ না’, ‘ওম শান্তি ওম’, ‘ডিয়ার জিন্দগি’-র মতো সিনেমার পেছনে থাকেন তিনি। একসময় শাহরুখের স্বপ্নে নিজের আত্মা ঢেলে দেন গৌরী। এই সমান্তরাল যাত্রাই তাঁদের আলাদা করে তোলে। বলিউডে স্ট্রাগলের সময়েও গৌরী সঙ্গ ছাড়েননি। সন্তানদের জন্ম ১৯৯৭-এ আরিয়ান (Aryan), ২০০০ সালে সুহানা (Suhana), আর ২০১৩-তে আবরাম (AbRam) প্রেম ও পারিবারিক বন্ধনের পরিণত প্রতীক হয়ে উঠেছে। শাহরুখ বহুবার বলেছেন, “গৌরী না থাকলে আমি কিছুই হতাম না।” গৌরীও কোনও রাখঢাক না রেখে বলেন, “আমি চাই ভালবাসা শুধু ‘মন্নত’-এর চার দেওয়ালের মধ্যেই থাকুক। আমরা যেমন, তেমন থাকি। সেটাই সবচেয়ে জরুরি।”

আজ, এত বছরের পথচলার পরেও তাঁদের একসঙ্গে দেখা যায় পার্টিতে, সিনেমার প্রিমিয়ারে, পারিবারিক ছুটিতে বা সন্তানদের পাশে। তাঁদের হাসি, চোখে চোখ রাখা, কিংবা একে অন্যের কথা বলা সবটাই বলে দেয়, ভালবাসা তখনই নিখাদ, যখন তা সময়ের পরীক্ষায় টিকে যায়। বলিউডে অনেক প্রেম এসেছিল, আলো ছড়িয়েছিল, হারিয়েও গিয়েছে। কিন্তু শাহরুখ-গৌরী যেন সে ইতিহাসের ব্যতিক্রম। তাঁরা দু’জন মিলে গড়েছেন এক ভালবাসার প্রতীক, যা শুধু পর্দার নয়, বাস্তব জীবনেরও এক অনবদ্য অধ্যায়।প্রেম যখন সময়ের সঙ্গে আরও স্থায়ী, আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে, তখনই সে হয়ে ওঠে কিংবদন্তী আর শাহরুখ-গৌরী? তাঁদের প্রেম তো আজকের প্রজন্মের কাছে নিছক এক গল্প নয়, এক বিশ্বাস। যে বিশ্বাস বলে প্রথম দেখা, ছোট্ট মিথ্যে, একলা শহরে খোঁজার ব্যাকুলতা, কিংবা নাম ভুল বলে প্রেম জেতা! সবটাই ঠিক, যদি শেষ দৃশ্যটা হয় একই ফ্রেমে, হাত ধরা ছবিতে।
সব ছবি: সংগৃহীত
আরও খবর : Amir Khan : কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খুললেন আমির খান
