



সাশ্রয় নিউজ ★ লস অ্যাঞ্জেলেস : লস অ্যাঞ্জেলেসের (Los Angeles) প্যালাডিয়াম মঞ্চ এবার হতে চলেছে এক ইতিহাসের সাক্ষী। আসছে ২৫ জুলাই ২০২৫-এ, সেখানে আয়োজিত হবে এক অভূতপূর্ব ও প্রতিযোগিতা। বিশ্বের প্রথম স্পার্ম দৌড় (Sperm Race)। অলিম্পিক নয়, কোনও বৈজ্ঞানিক প্রদর্শনী নয়, এটি এমন এক ব্যতিক্রমী আয়োজন, যেখানে মাইক্রোস্কোপিক পর্যায়ের ট্র্যাকে প্রতিযোগিতা করবে মানুষের স্পার্ম, সরাসরি সম্প্রচারিত হবে লাইভ অনুষ্ঠানে, আর দর্শকেরা দেখবেন এক রুদ্ধশ্বাস ‘যুদ্ধ’, UCLA বনাম USC!
এই আয়োজনের উদ্যোক্তা ‘স্পার্ম রেসিং’ (Sperm Racing) নামের একটি স্টার্টআপ, যারা পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব (Male Infertility) বিষয়ে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র তথ্য দিয়ে নয়, মজার ছলে, প্রযুক্তির সঙ্গে একত্রে এক নতুন ঘরানার স্বাস্থ্য-আন্দোলন গড়ে তুলতেই এই প্রতিযোগিতা। “স্বাস্থ্য সচেতনতা মানে শুধু নীরস তথ্য নয়, এ একধরনের খেলা, একধরনের পারফরম্যান্সও। এবার সেই পারফরম্যান্সে নামছে স্পার্ম!” মন্তব্য করেছেন স্টার্টআপটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মিলার (Jack Miller)।
উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিযোগিতাটি আয়োজিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন গ্লোবাল হেলথ রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি ছয়জনে একজন পুরুষ কোনও না কোনও বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যায় ভুগছেন। স্পার্ম কাউন্ট হ্রাস, গুণগতমানের অবনতি ও দেহে টেস্টোস্টেরনের ভারসাম্যহীনতা এখন ক্রমেই উদ্বেগজনক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রসঙ্গত, এই প্রতিযোগিতার মূল আকর্ষণ হল, একটি ক্ষুদ্র মানব প্রজননতন্ত্রের অনুকৃতি (micro-replica of the female reproductive tract), যা আধুনিক বায়োইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়েই চলবে বিভিন্ন অংশগ্রহণকারী দলের স্পার্মের প্রতিযোগিতা। থাকবে স্ক্রিনে লাইভ ব্রডকাস্ট, স্পোর্টস ধারাভাষ্য, সংবাদ সম্মেলন। এবং আশ্চর্যজনকভাবে বাজি ধরারও সুযোগ! উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, “এই ইভেন্ট হবে তথ্য, প্রযুক্তি, মজা আর সচেতনতায় ভরপুর এক নতুন যুগের সূচনা।”
UCLA (University of California, Los Angeles) এবং USC (University of Southern California) এই দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে চলবে এই ‘স্পার্ম যুদ্ধ’। আয়োজনের আগে নেওয়া হচ্ছে কড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা, যাতে অংশগ্রহণকারী স্পার্মগুলোর গতি, কার্যক্ষমতা ও গুণগতমান একে অপরের সঙ্গে তুলনীয় হয়। এ যেন এক বৈজ্ঞানিক অলিম্পিক!
স্টার্টআপটির প্রযুক্তি প্রধান ডা. মারিয়া টরেস (Dr. Maria Torres) জানান, “যে জিনিসটি এতদিন শুধুই ল্যাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এবার আমরা তাকে জনসমক্ষে আনছি। এর মাধ্যমে পুরুষরা যেমন নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হবেন, তেমনই সমাজে বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে লুকিয়ে থাকা ট্যাবুও ভাঙবে।” এই অভিনব উদ্যোগ ইতিমধ্যেই বিনিয়োগকারীদের নজর কেড়েছে। সান ফ্রান্সিসকোর একাধিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মের সহায়তায় এই প্রকল্প ইতিমধ্যে ১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি ফান্ডিং সংগ্রহ করেছে। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং বিনোদনের অপূর্ব মিশ্রণে গঠিত এই ইভেন্ট ঘিরে আগ্রহও তুঙ্গে। জানা যায় যে, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গেলে শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়া যথেষ্ট নয়। অংশগ্রহণকারীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে বিস্তারিত মেডিক্যাল ইতিহাস, জীবনযাত্রা সংক্রান্ত তথ্য এবং মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ। প্রতিটি স্পার্ম নমুনা সংরক্ষিত হচ্ছে কড়া নিরাপত্তায় ও পরীক্ষার পর তা ব্যবহার করা হবে প্রতিযোগিতার জন্য। ইভেন্টটির উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন প্রতিযোগিতা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভারত, জার্মানি, জাপান এবং ব্রাজিল-সহ বেশ কিছু দেশ এই ধারণায় ইতিমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সমালোচনার মুখেও পড়েছে এই আয়োজন। কিছু চিকিৎসক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলছেন, স্পার্মের মতো সংবেদনশীল বিষয়কে জনপ্রিয় বিনোদনের রূপ দেওয়া অনুচিত। তবে উদ্যোক্তাদের জবাব, ‘‘সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কখনও কখনও চমক লাগানোও প্রয়োজন। আমরা দায়িত্বশীলভাবেই বিষয়টিকে তুলে ধরছি।’’
এই ‘স্পার্ম রেস’ শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়। এ যেন এক বৈজ্ঞানিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আলোড়নের সূচনা। যেখানে স্বাস্থ্য, লিঙ্গ-ভাবনা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক নতুন ভাষা। এবং সম্ভবত, আগামী দিনে এটাই হয়ে উঠবে আধুনিক যুগের স্বাস্থ্যসচেতন সমাজের প্রতীক। আগামী ২৫ জুলাইয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। প্রশ্ন শুধু একটাই, কে জিতবে এই অদ্ভুত দৌড়ে? UCLA না USC? আর বড় প্রশ্ন, এই স্পার্ম যুদ্ধ কি বদলে দেবে পুরুষদের স্বাস্থ্য ভাবনার ভবিষ্যৎ?
ছবি: প্রতীকী
আরও পড়ুন : Amit Shah | DNA : বিমানের ধ্বংসস্তূপে ছড়ানো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, DNA পরীক্ষায় চলছে শনাক্তকরণ
