



পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ★ সাশ্রয় নিউজ : তিন মাস মুখ দেখাদেখিও হয়নি। ফোনেও কথা নয়। একদা ভারতীয় ড্রেসিংরুমের সবচেয়ে মার্জিত, নিঃশব্দ অথচ ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ (VVS Laxman) তখন যেন এক অনুচ্চারিত অভিমানে সরে গিয়েছিলেন সতীর্থদের থেকে। কারণ একটাই ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের জন্য দল গঠনের সময় অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) পরামর্শে তিনি বাদ পড়েছিলেন। আর সেই জায়গায় সুযোগ পেয়েছিলেন অলরাউন্ডার দিনেশ মোঙ্গিয়া (Dinesh Mongia)। এই সিদ্ধান্ত নিয়েই আবার আলোচনায় মহারাজ, যা নিজেই স্বীকার করলেন সদ্য এক সাক্ষাৎকারে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি বিশেষ সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিরে গেলেন সেই সময়ের দুঃসহ স্মৃতিতে। বললেন, “অনেক সময়ই বিশ্রাম বা দল থেকে বাদ দিলে খেলোয়াড়েরা কষ্ট পায়। লক্ষ্মণ তো আমার সঙ্গে প্রায় তিন মাস কথা বলেনি। পরে আমি ওকে নিজে ফোন করে বলি, যে কেউ এই সিদ্ধান্তে হতাশ হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বিশ্বকাপে আমরা দারুণ খেলি, ফাইনাল অবধি যাই। তাতে ও খুশিও হয়েছিল।”
Read : Sourav Ganguly : সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: এক লড়াকু অধিনায়কের কাহিনি

২০০৩ সালের বিশ্বকাপে লক্ষ্মণকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কারণ তার ওয়ানডে রেকর্ড ততদিনে তেমন আহামরি ছিল না। ৮৬ ম্যাচে ২৭.৫৫ গড় আর ৬৭ স্ট্রাইক রেট তখন কোনওভাবেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাকা করার মতো ছিল না। তার বদলে মোঙ্গিয়া ব্যাট ও হাত ঘুরিয়ে বোলিং দু’দিকেই ভূমিকা রাখতে পারতেন। আর সেটাই চেয়েছিলেন তৎকালীন কোচ জন রাইট (John Wright) ও অধিনায়ক সৌরভ। সৌরভের কথাতেই নির্বাচকেরা লক্ষ্মণকে বাদ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। পরে নির্বাচক কিরণ মোরে (Kiran More) জানিয়েছিলেন, “আমরা সবাই চেয়েছিলাম লক্ষ্মণকে রাখি। কিন্তু সৌরভ ও জন রাইট স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দলে একজন অলরাউন্ডার দরকার। তখন মোঙ্গিয়াকে বেছে নেওয়া হয়।” এর জেরে লক্ষ্মণ শুধু সৌরভের সঙ্গে নয়, নির্বাচকদের সঙ্গেও বহুদিন কোনও যোগাযোগ রাখেননি বলে সূত্রের খবর।

উল্লেখ্য যে, ঘটনাই তখন সংবাদমাধ্যমে বিস্তর আলোড়ন তোলে। বহু সমর্থক মনে করেছিলেন, লক্ষ্মণের মতো একজন টেকনিক্যাল ব্যাটারকে না নেওয়া চূড়ান্ত অবিচার। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্য ফাইনাল অবধি পৌঁছনো ও দলগত ছন্দ অনেক প্রশ্নকে তখন নিস্তব্ধ করে দেয়। তবে লক্ষ্মণের কেরিয়ারে এই ব্যাকফুটে যাওয়াটা ছিল ক্ষণস্থায়ী। বিশ্বকাপের পরে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। সেই পাকিস্তান সফরে ভারতের ঐতিহাসিক প্রথম সিরিজ জয়েও ছিল তাঁর বড় অবদান। সৌরভ সেই কথাই মনে করিয়ে বলেন, “ও জানত, সিদ্ধান্তটা কোনও ব্যক্তিগত অভিমানে ছিল না, বরং দলের প্রেক্ষাপটেই এমনটা করতে হয়েছিল।”

এইসব পুরনো আলোচনা যখন আবার ফিরে আসছে সংবাদপত্রের পাতায়, ঠিক তখনই এক অন্য বিতর্কে জড়িয়েছেন ভারতের বর্তমান সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্থ (Rishabh Pant)। হেডিংলে টেস্টের তৃতীয় দিনে বলের অবস্থা নিয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে তিনি এমনভাবে বল ছুঁড়ে দেন, যা হয়তো তাঁকে আইসিসি-র আচরণবিধি ভাঙার দায়ে শাস্তির মুখে ফেলতে পারে। ঘটনাটি ঘটে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৬১তম ওভারের পর। সিরাজের বলে চার মারার পর পন্থ আম্পায়ার পল রাইফেল (Paul Reiffel)-কে বল পরিবর্তনের অনুরোধ জানান। কিন্তু আম্পায়ার বলের আকৃতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সেটি ফেরত দেন। সেই সময় পন্তের চোখেমুখে অসন্তোষ ফুটে ওঠে এবং তিনি বলটি রাগে ছুঁড়ে দেন, যদিও আম্পায়ারের দিকে নয়। এই আচরণে আইসিসি’র আচরণবিধির ২.৮ এবং ২.৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে পন্তকে ম্যাচ ফি’র জরিমানা তো হবেই, সঙ্গে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে বলে আশঙ্কা। তবে এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে ম্যাচ রেফারির ওপর। একদিকে ক্রিকেটারদের অভিমান ও বন্ধুত্বের গল্প, অন্যদিকে ক্রিকেট মাঠে রাগ ও নিয়মভাঙা। দুই চিত্রে ফুটে উঠছে খেলার বাইরে থাকা সেই মানবিক নাট্যরূপ, যা ক্রিকেটকে শুধু ব্যাট-বলের খেলা নয়, সম্পর্কের টানাপড়েনেও এক অনবদ্য আখ্যান করে তোলে।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Rishabh Pant : ঋষভ পন্থের ব্যাটে ইতিহাস : মুখ ফিরিয়ে নিলেন গাওস্কার
