



সাশ্রয় নিউজ ★ নতুন দিল্লি : রাজনীতির মাঠে মতাদর্শের বিভাজন যতই তীব্র হোক না কেন, কখনও কখনও প্রশংসার শব্দ সত্যিই সীমা ভেঙে আসে। এমনই এক নজির তৈরি করলেন কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ শশী তারুর (Shashi Tharoor)। কংগ্রেস বনাম বিজেপি দেশের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত বিভাজনরেখা। কিন্তু সেই ভেদরেখায় অপ্রত্যাশিত প্রশংসার সুর শোনা গেল থারুরের কণ্ঠে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) ‘ভারতের প্রধান সম্পদ’ আখ্যা দিলেন তিনি।
সম্প্রতি ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক কলামে শশী তারুর লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শক্তি, গতিশীলতা ও ইচ্ছাশক্তি বিশ্বমঞ্চে ভারতের জন্য একটি অপরিসীম সম্পদ। এই নেতৃত্ব আরও প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।” তাঁর কথায়, ভারতে তিনটি ক্ষেত্র প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও ঐতিহ্য আগামী দিনে বৈশ্বিক কৌশলের চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। এই গতিময় নেতৃত্ব ভারতকে আরও ন্যায্য, নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক মহলে বিস্ময়ের ঢেউ তুলেছে। কারণ শশী থারুর শুধুমাত্র কংগ্রেসের চারবারের সাংসদ নন, বরং দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরের বুদ্ধিজীবী চিন্তাভাবনার মুখ হিসেবে বিবেচিত। তবে এটাই প্রথম নয়, যখন দলীয় অবস্থানের বাইরে গিয়ে নিজের মত প্রকাশ করেছেন তিনি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ভরাডুবির পর, কংগ্রেসের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে ২৩ জন নেতা চিঠি দিয়েছিলেন সনিয়া গান্ধীকে (Sonia Gandhi), তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন তারুর। তাঁর এই প্রশংসা হঠাৎ আসেনি। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি পাঁচটি দেশ সফর করেন থারুর, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে। এই সফরে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বার্তা দেন বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে। সেখানেই তিনি উপলব্ধি করেন, মোদির নেতৃত্ব আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতকে যেভাবে তুলে ধরছে, তা একটি বড় কূটনৈতিক সম্পদ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে থারুরের বক্তব্য নিছক সৌজন্য নয়, একটি সুসংহত রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষণও বটে। তাঁর মতে, ২০২৫ সালের ভারতের প্রেক্ষিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে ভারত একটি নৈতিক উদ্দেশ্যে লড়েছিল, বাংলাদেশকে মুক্ত করাই ছিল সেই সময়ের স্পষ্ট লক্ষ্য। কিন্তু এখনকার প্রেক্ষিতে কেবল পাকিস্তানের দিকে গোলা ছোঁড়া কোনও কৌশল নয়। কূটনৈতিক স্তরে শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রচেষ্টাই ভবিষ্যতের পথ।” এই বক্তব্য অবশ্য কংগ্রেসের মূল সুরের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। বিশেষত যখন সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতির পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতারা বারবার তুলনা টানেন ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) ১৯৭১ সালের নেতৃত্বের সঙ্গে। জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh), অধীর চৌধুরী (Adhir Chowdhury) সহ একাধিক নেতা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন তুলেছেন, “সবাই কি ইন্দিরা হতে পারেন?” ঠিক সেই মুহূর্তেই থারুরের অবস্থান যেন এক ব্যতিক্রমী বুদ্ধির আলোকরেখা।
সম্প্রতি কেরলের ভিঝিনজাম (Vizhinjam) আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যায় শশী থারুরকে। তিরুঅনন্তপুরমের (Thiruvananthapuram) চারবারের এই সাংসদ সেখানে উপস্থিত থেকে তাঁর কৌশলী রাজনৈতিক অবস্থানকেই যেন আরও স্পষ্ট করে দেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, এটি থারুরের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ মনোভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ, যিনি বরাবরই ব্যক্তিগত বিশ্লেষণকে দলীয় অবস্থানের চেয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। যদিও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনই তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবু দলীয় অন্দরে এই অবস্থান যে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেবে, তা বলাই বাহুল্য। একদিকে যখন দেশজুড়ে মোদী-বিরোধী মনোভাবকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিরোধীরা, তখন কংগ্রেসেরই এক বর্ষীয়ান সাংসদের মুখে এই সরব প্রশংসা নিঃসন্দেহে মোদীর পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা। আবার তা কংগ্রেসের ভিতরেও চিন্তার খোরাক জোগাবে ব্যক্তি ভাবনা বনাম দলীয় শৃঙ্খলার সীমারেখা নিয়ে। এই মুহূর্তে যখন ২০২৪-এর ভোটোত্তর রাজনীতিতে প্রতিটি অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তখন শশী থারুরের মন্তব্য শুধু এক প্রশংসাবাক্য নয়, এটি একটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ইঙ্গিতও হতে পারে। এখন দেখার, কংগ্রেস এই মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ বলেই উড়িয়ে দেয়, না কি নতুন কোনও আলোচনা ও মেরুকরণের সূচনা হয় দলের অভ্যন্তরে।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Virat Kohli | জীবন বদলে দেওয়া তিন বই পড়ে বিরাট হলেন ‘বিরাট’
