



সাশ্রয় নিউজ ★ মিলন দত্ত : তরুণদের জীবনে শরীর ও মনের অনেক পরিবর্তন আসে। আবেগ, কৌতূহল, সম্পর্ক—সবকিছু মিলিয়ে নিজেদের চেনা আর বোঝার এক গভীর সময় এটি। আর এই সময়েই বারবার সামনে আসে একটি শব্দ—”সেক্স” (Sex) বা “যৌনতা”। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এই বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এখনও অনেক পরিবারে নিষিদ্ধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচর্চিত, আর বন্ধুমহলে বেশিরভাগ সময় ভুল তথ্যে ঘেরা। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে—সেক্স বা যৌনতা কী? আর তরুণ বয়সে এর প্রয়োজনীয়তাই কতটা?

সেক্স (Sex) বা যৌনতা শুধুই শারীরিক নয়, মানসিকও। সেক্স বা যৌনতা মানে কেবল শারীরিক সম্পর্ক নয়। এটি ভালবাসা, ঘনিষ্ঠতা এবং পারস্পরিক সম্মতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক ধরনের মানসিক ও শারীরিক সংযোগ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে— সুস্থ যৌন জীবন তরুণদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। মানসিক চাপ কমায় এবং সম্পর্কের গভীরতা তৈরি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন সম্পর্কের সময় মানবদেহে অক্সিটোসিন, ডোপামিন ও এন্ডরফিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা স্বাভাবিকভাবে মন ভাল রাখে এবং স্ট্রেস কমায়।

শারীরিক উপকারিতার দিকও আছে। তরুণ বয়সেই শরীরের যত্ন নেওয়া সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত, নিরাপদ ও সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক শারীরিকভাবে অনেক উপকার করে। যেমন—
১. হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে—হালকা ব্যায়ামের মতো কাজ করে সেক্স।
২. ইমিউন সিস্টেম ভাল থাকে—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩. ঘুম ভাল হয়—যৌন পরবর্তীতে শরীর আরাম পায়, ঘুম গভীর হয়।
৩. সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়—
সেক্স একটি সম্পর্ককে শুধু শারীরিকভাবে নয়, আবেগিকভাবেও গভীর করে। প্রেমিক-প্রেমিকা বা জীবনসঙ্গীদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ভরসা তৈরিতে যৌন সম্পর্কের ভূমিকা রয়েছে। তবে এই সম্পর্ক যেন সবসময় সম্মতির ভিত্তিতে হয়—এটা কিন্তু সবচেয়ে জরুরি।

আজকাল তরুণরা সম্পর্ক শুরু করলেও অনেকেই জানেন না, সম্পর্ক মানে কেবল ঘনিষ্ঠতা নয়, বরং সম্মান। পরস্পরের অনুভূতির মূল্য দেওয়া এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করাও এর বড় অংশ।
সচেতনতা না থাকলে ঝুঁকি
যৌনতা যদি না-জানা পথে পরিচালিত হয়, তবে তা হতে পারে বিপজ্জনক। ভুল তথ্য, পর্নোগ্রাফি নির্ভর কল্পনা বা বন্ধুদের গসিপ থেকে পাওয়া জ্ঞান অনেক সময় বাস্তব জীবনে সমস্যা তৈরি করে। যেমন:
১. অনিরাপদ যৌনতা থেকে এসটিডি (যৌনবাহিত রোগ) ছড়াতে পারে।
২. অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
৩. মানসিকভাবে অপরিপক্ব অবস্থায় যৌন সম্পর্কে জড়ালে হতে পারে বিষণ্ণতা, আত্মবিশ্বাস হ্রাস ইত্যাদি।
যৌন শিক্ষা: লজ্জার নয়, জীবনের প্রয়োজন
বিশ্বজুড়ে বহু দেশ এখন স্কুলেই যৌনতা নিয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা করছে। কারণ তারা জানে, সেক্স বা যৌন সম্পর্কে জানা মানেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। তরুণদের উচিত—
১. নিজেদের শরীর ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানা।
২. সম্মতি ও সম্পর্কের মূল্যবোধ শেখা।
৩. নিরাপদ যৌন আচরণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

কখন নয়?
সবার আগে মনে রাখতে হবে—যৌন সম্পর্কে জড়ানো মানেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া নয়। বয়স যতই হোক, যদি আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত না হন বা সম্পর্কটি ভরসাজনক না হয়, তাহলে ‘না’ বলাই শ্রেয়। আত্ম-সম্মান, নিজের সিদ্ধান্ত এবং সুরক্ষা—এই তিনটি বিষয় আপনাকেই রক্ষা করতে হবে।
তরুণদের জীবনে যৌনতা একটি বাস্তবতা, যা এড়িয়ে যাওয়া নয়, বরং বুঝে গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সেক্স বা যৌনতা মানেই অশ্লীল কিছু নয়। এটি মানব জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা ভালবাসা, সম্মান ও সচেতনতায় বিকশিত হয়। তরুণ প্রজন্ম যদি সচেতন থাকে, নিজের শরীর ও মনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, এবং সম্পর্ককে বোঝার সময় নেয়—তবে ভবিষ্যৎ হবে সুস্থ, নিরাপদ এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।
মনে রাখুন, “জানাই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা”। যৌনতা নিয়ে জানুন, বুঝুন, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিন।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Koel Mallick : বাংলা সিনেমার রাজকন্যা কোয়েল মল্লিক
