



রীতা বিশ্বাস পান্ডে : “আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ” —এই মন্ত্রটি রামকৃষ্ণ মিশনের মূল ভিত্তি। এর অর্থ হল “নিজের মুক্তি এবং জগতের কল্যাণের জন্য”। স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্ত্রটিকে রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিক্ষা এবং আদর্শের উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছিলেন। এই মন্ত্রটি রামকৃষ্ণ মিশনের সকল কর্ম ও চিন্তাধারার মূল চালিকাশক্তি।
‘যত মত তত পথ’ হয়ত শুধু সহিষ্ণুতার কথাই বলে না, বরং বিভিন্ন পথে সত্যকে উপলব্ধি করার সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করে।
‘অহিংসা পরম ধর্ম’ এবং ‘যত মত তত পথ’—- প্রায়শই আমার মনে বিরক্তির উদ্রেক করত। প্রথমটি শুনে মনে হত, যেন সব অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে। আর দ্বিতীয়টি যেন আপোষকামীতার নামান্তর, যেখানে কোনও দৃঢ় অবস্থানের প্রয়োজন নেই। এই দর্শনগুলি আমার কাছে কেমন যেন দুর্বল এবং বাস্তবতাবর্জিত মনে হত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি এতকাল আমার অগোচরেই এসব মেনে চলতাম। শক্তির মনপ্রাণ দিয়ে আরাধনা করি।
আজকে এই রামকৃষ্ণ মিশন আমার এই দীর্ঘদিনের ধারণাকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে রামকৃষ্ণ মিশনের একটি দিক উঠে এসেছে। সেখানে শুধু শান্তির বাণী নয়, বরং সমাজের নানা অসংগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার এক ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে।
এটা জানার পর আমার মনে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। মনে হচ্ছে, হয়ত আমি এইসব দর্শনকে এক সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলাম। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ শুধুমাত্র নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করার কথা বলে না, বরং সম্ভবত এর একটি গভীরতর অর্থ রয়েছে —-মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে শক্তিশালী হয়ে অন্যায়ের মোকাবিলা করা। তেমনই ‘যত মত তত পথ’ হয়ত শুধু সহিষ্ণুতার কথাই বলে না, বরং বিভিন্ন পথে সত্যকে উপলব্ধি করার সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত করে।
আমরা প্রায়শই কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট দিক দেখেই একটি সামগ্রিক ধারণা তৈরি করে নিই। কিন্তু বাস্তবতা হয়তো আরও জটিল এবং বহুমাত্রিক। একটিমাত্র দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সবকিছু বিচার করা হয়ত ভুল। আমি এখন রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যান্য দিকগুলি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। হয়ত আমার পুরনো ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ছিল, অথবা হয়ত আমি তাদের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এতদিন ধরে এড়িয়ে গিয়েছি। এই নতুন আলোয় আমাকে নিয়ে আসার জন্য আমি রামকৃষ্ণ মিশনকে ধন্যবাদ দি।
ছবি : সংগৃহীত
