



সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে…
ছুঁয়েছি তোমার আচরণ রিপুর মায়ায়
আটকে রাখার ছলনায় আমার কায়ায়
বেঁধেছি জীবন কখনও তোমার আদরে
ভুলেছি মায়ের স্নেহবোধ শীতের চাদরে
🍂গল্প / এক
স্বপ্ন-ভঙ্গ করে ভীষণ লড়ে তিনি পরাজিত হননি। চারিদিকে কি হয় কি হয় ভাব! পত্র-পত্রিকায় শিউরে ওঠা খবরা-খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন জীবন সঙ্গিনী দময়ন্তী। বেতার, প্রচার মাধমে দেখা গেল বিজয়ের ছবি। বন্দী শিবিরে। সাহসে ভর করে ছুটে গেলেন পত্রিকা অফিসে, গেলেন সরকারি দপ্তরেও। কীভাবে মুক্তি পাবে বিজয়…
গল্প নয়
কুণাল কান্তি দে
দিল্লী বিমান বন্দরে দেখা না হলে জানতে পারতাম না পঞ্চাশ বছর ধরে অপেক্ষা করে আছেন, যে নারী তাঁর বীর স্বামী পাইলট ক্যাপ্টেন বিজয় তাম্বেকে কি ফিরে পাবেন? এ দেশের ব্যাডমিন্টন তারকা পাঁচ বারেরও বেশি অর্জুন পুরস্কার পাওয়া খেলোয়াড় দময়ন্তী তাম্বে অগ্নি সাক্ষী করে বিয়ে করেছিলেন যাকে তাঁর সঙ্গে ‘সাজানো ঘর’ বাঁধতে জীবন শুরু করেছিলেন। দুর্ভাগ্য মাত্র দুই বছরের কম সময়ে দেশ মাতৃকার সেবার জন্য আকাশে লড়াই করে শত্রু সেনাকে পরাজিত করবে। তখন কতই বা বয়েস? দময়ন্তীর তেইশ, স্বামীর তিরিশের ও কম। দুর্জয় সাহস। ১৯৭১/১৯৭২ সালে পাকিস্তান-এর সঙ্গে ভারতের মহারণ। স্থল, জল, আকাশে বারুদের গন্ধ। মরনপণ লড়াই। স্বপ্ন-ভঙ্গ করে ভীষণ লড়ে তিনি পরাজিত হননি। চারিদিকে কি হয় কি হয় ভাব! পত্র-পত্রিকায় শিউরে ওঠা খবরা-খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন জীবন সঙ্গিনী দময়ন্তী। বেতার, প্রচার মাধমে দেখা গেল বিজয়ের ছবি। বন্দী শিবিরে। সাহসে ভর করে ছুটে গেলেন পত্রিকা অফিসে, গেলেন সরকারি দপ্তরেও। কীভাবে মুক্তি পাবে বিজয় তারই উদ্যোগ। সহানুভূতি, আবেগে ভেসে গেল, দেশ। শুধুমাত্র এক বিজয় ছাড়াও এমন অনেক বীর সন্তান আছেন তাদের জন্য কুটনৈতিক প্রয়াস চলল। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপক প্রচার প্রসার হল। ‘সাজানো ঘর’ তেমনি পড়ে রইল। কখনও বিজয়ের বাবা শশুর মশায়ের সঙ্গে দিল্লী কলকাতা, সংসদের অলিন্দে, রাষ্ট্রপতি ভবনে কীভাবে মুক্ত করে আনা যায়, এই চিন্তায় নূতন সাহস সঞ্চয় করে নুতন ভাবে পদক্ষপ। পাকিস্তান সরকার -এর কাছে জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যার সঙ্গে দেখা করা। ছোটাছুটি থামেনি। যুদ্ধ থেমেছে। নূতন দেশের জন্ম হয়েছে, প্রশাসক বদল হয়েছে। কিন্ত দময়ন্তীর পথ চলা পঞ্চাশের বেশি বছর হয়ে গেল। দীর্ঘ লড়াই করেও ক্লান্তি নেই। বয়েস সত্তর পেরিয়েছে। বেঁচে থেকে যে স্বামী বাড়ি ফিরতে পারেননি। :HOPE DIES LAST IN WAR’ গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। বিজয়দের কথা লেখা সেই বইয়ে। দেশের আমজনতা সহানুভূতি দেখিয়েছে, প্রশাসকের দল অসহায় অনুভূতি জানিয়েছেন। কিন্তু ৭৩ বছরের দময়ন্তী পর পর INTERVIEW দিয়ে চলেছেন ‘সাজানো ঘর’ একই ভাবে আছে। বিমান বন্দরে বসে এক নারীর বীরত্বের কথা শুনেও ইতিবাচক উত্তর দিতে পারিনি। সাজানো ঘর কতদিন সাজানো থাকবে জানি না! বিজয় কী ঘরে ফিরবে? কেউ কি ভরসা দেবে? চোখের জল আর নেই দময়ন্তীর।
তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা🍁
🍂কবিতা
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
অন্য আলাদিন
অপেক্ষার গাছ দাঁড়িয়ে বিরক্তমুখ গরম
আপ্রাণ যুদ্ধের শেষে ক্লান্ত সব হতাশার গাছ বাড়ে
অপেক্ষার গাছ আর হতাশার গাছ বেড়ে চলে
সমান্তরাল
তারা দেখে একে অন্যকে,মনে হয় চেনে,
মেপে নেয় চোখের ফিতেয়
দীর্ঘতর প্রতীক্ষার বেলাও একদিন শেষ হয়
মরোমরো গাছে হঠাৎ মুকুল ও ফুলের উৎসব
সমান্তরাল সেই গাছেরা সাদাকালো ছবি রেখে
কোথায় যেন চলে যায়
গল্পও প্রাণ পায় ‘নিয়োগপত্র’- নামে অদ্ভুত পুরস্কার
হাতে নিয়ে বিশ্বাসই হয় না, সাফল্যের দুরূহকাহিনি
হাঁপানির রুগী বাবা উঠে বসে, রক্তাল্পমুখ মায়ের
হাসিমুখ স্বর্গের ছোঁয়া লেগে ফেরে
শ্যাওলা মাখা ঘরে জ্বলে ওঠে অফুরন্ত আলো
বিস্ফারিত চোখ, ঈর্ষান্বিত চোখ, অবিশ্বাস চোখ
একই মিছিলে হাঁটে…
একপাশে ভালোবাসা চোখে লাজুক হাসি…
গল্পগুলো লেখা হয়, স্বচক্ষে দেখি দেখতে দেখতে
ঘণ্টা বাজে, ছুটি নতুন দিশায়
অসুখেরা সর্বরোগহর এক ওষুধেই শেষ
তারপর একদিন চিঠি আসে, বাবার প্রাপ্যগুলো
এসে গ্যাছে আর কোনও হতাশা আসবে না
শুধুই খুশি, নতুন রূপকথায় লেখা হচ্ছে
আলাদিন কথা…
গোপা ভট্টাচার্য
সে প্রথম প্রেম আমার
নিলাঞ্জনারা বাড়ির বারান্দায়
বেলা বোসে’রা ফোনের অপেক্ষায়
কলেজ প্রেমের প্রথম এহ্সাস
রং পেনসিল দিনগুলো বেহিসাব।
দেবদারু গাছটার খসে যাওয়া পাতা
গুঁজে রাখা আজও কবিতার খাতায়
ছোট চিরকূট, অজানা অনুভূতি
লাইটার ব্যাগে আজও গুছিয়ে রাখি।
আগোছালো দিন, এলোমেলো রাত
হারিয়ে যাওয়া সেই অধুরিসি মুলাকাত
চুপি চুপি মায়ায় জড়িয়ে যাওয়া
স্মৃতিগুলো বার বার ফিরে ফিরে চাওয়া।
কাল হঠাৎই দেখা এসপ্লেনেডের মোড়ে
কিছু না বলা অভিমানী কথার দুপুরে
দু’জনের পথ দু’দিকে গেল বেঁকে।
তবু কিছু সম্পর্ক, কিছু কথা, কিছু অমুহূর্ত
আলোতে হারিয়ে, পাওয়া যায় আঁধারে…
মুঠোফোনে আলো জ্বলে উঠল মধ্যরাতে-
“আবার দেখা হলে চিনতে যেন পারিস
আমার নম্বরটা তোর ফোনে
ভালোবেসে রাখিস।”
গোলাম কবির
মানুষের হৃদয়
সব সাপ কী গর্তে বাস করে?
আমি তো দেখি,
কোনো কোনো মানুষের
হৃদয়ের গহীনে সাপের আবাস!
সব মানুষই মানুষ নয়!
যদিও জেনেছি বহু আগেই!
তবুও বড়ো লোভ হয়
সব মানুষই যেনো মানুষ হয়!
মানুষের হৃদয় কেনো যে
খোলা আকাশের মতো হয় না
এই নিয়ে আমার দুঃখ অসীম!
আবার এমনও তো দেখতে পাই,
কখনো কখনো মানুষের হৃদয় এমন হয়
যেনো তা খোলা সবুজের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ।
অবশেষে একদিন বুঝে নিলাম
মানুষের হৃদয়ের মতো
দূর্বোধ্য ও বিচিত্র কিছু নেই পৃথিবীতে!
🦋গল্প /২
সন্ধেবেলায় দাওয়ায় বসে আঁধারে ঘিরে আসা সামনের উঠোনটাকে দেখতে দেখতে আচমকাই বুদ্ধিটা উঁকি দিয়ে গিয়েছিল মাথায়। আর অমনি বেশ একটা মন ভালোলাগা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল তার চোখে মুখে। চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তাদের কামডোবের বিল। জলা ঘাস আগাছার ঝোপ জঙ্গল। ছোট ছোট মাছ ধরা বাঁধ। বাঁশের ফালিতে বানানো খাঁচা।
রাত প্রহরী
গৌতম বিশ্বাস
শীতের রাতটা গাঢ় হতে হতে চারপাশ যখন আরও বেশি নির্জন হয়ে এলো, হিংস্র একটা নৈঃশব্দ্য ঘিরে নিল চারদিক – তখন দাওয়ার এককোণে উপুর করে রাখা এনামেলের সহস্র আঘাতপ্রাপ্ত হাঁড়িটা নিয়ে বেরিয়ে এলো কমলা। এছাড়া তার আর উপায়ই বা কি? এমনিতেই দিন আনি দিন খাই মানুষ তারা। একদিন কাজ না করলে পরদিন পেটে ভাত যায় না- এমনই হতশ্রী অবস্থা তাদের। তার ওপর আজ কতদিন হয়ে গেল স্বামী সুখলাল অসুস্থ। অসুস্থ বলে অসুস্থ? মাস ছ’য়েক হয়ে গেল সে বিছানায় পড়া। কাজে যাওয়া তো পরের কথা বিছানা ছেড়ে দাওয়ায় গিয়ে বসা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। সময় সময় কমলা হাত ধরে তাকে নিয়ে বসায়। বসে বসে সে আকাশ দ্যাখে। রোদ দ্যাখে। ছায়া দ্যাখে। গাছপালা, মানুষ দ্যাখে। দেখতে দেখতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
অথচ একদিন কত কর্মঠ ছিল মানুষটা।সকাল বিকেল কাজ করতো নাদু বিশ্বাসের খেতে।নাদু বিশ্বাসের বাঁধা মুনিশ ছিল সে। এই ভিটেটুকু ছাড়া এক ছটাক মাঠাম জমিও তাদের নেই। বিশ্বাস মশাইয়ের খেতে কাজ করে দিব্যি চলে যাচ্ছিলো তাদের। তার ওপর কমলা ছাগল পুষতো। হাঁস-মুরগি পুষতো। মাঠে ঘুটে দিত। আবার বিশ্বাস মশাইয়ের বাড়িতে ফসল উঠলে কাজের যখন চাপ বাড়তো কমলা গিয়ে করে দিত তাও। একপ্রকার সুখেই ছিল কমলা। কিন্তু হঠাৎ যে কিসে কি হয়ে গেল। দিন দশেকের জ্বরে ভুগে সেই যে বিছানা নিল সুখলাল আর উঠলো না। অনেক জল পড়া- তেল পড়া আনলো কমলা, অনেক তাবিজ মাদুলি পরালো অথচ যে কে সেই। এতটুকু উন্নতি হল না। কেউ কেউ অবশ্য বুদ্ধি দিয়েছিল, “ওরে শহরে নে’ যাও। ভালো কইরে চিকিচ্ছে করাও।দ্যাকপা তাহলি ঠিক হইয়ে যাবে।”
কথা শুনেই মাথায় আকাশ ভাঙার দশা কমলার। বলেছিল, “শহরে নে যাবো? সে যে অনেক খরচ।”
তারা বলেছিল, “খরচ তো হবেই। য্যামন ত্যামন রোগ তো আর না।”
“আমাগের কি আর ত্যামন ট্যাকা পয়সা আছে যে খরচ করবো।”
“তাহলি আর কি। যাও, ও পাড়ার বিশু ডাক্তাররেই দ্যাহাও।”
তা সেই থেকে বিশু ডাক্তারের কাছ থেকেই ওষুধ এনে খাওয়াচ্ছে কমলা। খাওয়াচ্ছে বটে,কিন্তু উন্নতি কই? সেই তো বিছানাতেই পড়া। উঠে বসারও সামর্থ্য নেই। শুকোতে শুকোতে শরীর এখন বলতে গেলে মাংস হীন। হাড়ের কাঠামোর ওপরে পাতলা একটা চামড়ার আচ্ছাদন। না দেখা মানুষ হঠাৎ করে দেখে চমকে ওঠে, “এ কি হাল হইচে চেহারার? ও বৌমা, করো কি? ডাক্তার দ্যাহাও।”
“তা তো দ্যাহাচ্ছি। কিন্তুক-”
“ইস রে, ক্যামন ছেল আর ক্যামন হইচে। ও সুখ ক্যামন ঠ্যায়ে? কিছু খাতি সাধ হয়?”
হাত নেড়ে বিড়বিড় করে কি বলে সুখলাল তা কেউ বোঝে না। বোঝে না কমলাও। সে কেবল অসহায় ভাবে মানুষটার দিকে চেয়ে থাকে। চেয়ে থাকে আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আবারও একদিন গিয়ে দাঁড়ায় বিশু ডাক্তারের সামনে।
“ডাগদার বাবু কিছুই তো উন্নতি দেহি নে।”
ডাক্তার বলে, “চেষ্টা তো আর কম করছি নে। ওষুধও তো ঠিকঠাক দিচ্ছি। কিন্তু কেন যে-”
বলতে বলতে ফের নতুন করে ওষুধের শিশি খোলেন ডাক্তার। প্রয়োজন মত ওষুধ অন্য শিশিতে ঢালতে ঢালতে বলেন,” ওকে তুমি শহরে নিয়ে যাও। বড়ো কোনও ডাক্তার দেখাও।”
আজও এমন করেই কথা বলেছিলেন বিশু ডাক্তার।শেষে বলেছিলেন,” কিছুদিন ওকে তাজা মাছের ঝোল খাওয়াও। তাতে যদি মুখে রুচি ফেরে। যদি বেশি বেশি খায়। তাহলে-”
তাজা মাছ? কোথায় পাবে তাজা মাছ? মাছ কেনার সামর্থ্য কি কমলার আছে? একমুঠো ভাত জোগাতেই হিমশিম অবস্থা তার। ভাগ্যিস একটা ছেলেপুলে হয়নি। হলে কি যে হত। এর ওর এটা ওটা করে দিয়ে যাহোক দুজনের পেট চালাতে পারছে কমলা। পেট তিনটি হলে একবেলা হয়তো না খেয়েই থাকতে হতো। ভগবান মুখ তুলে চেয়েছে। তাই তো-
সন্ধেবেলায় দাওয়ায় বসে আঁধারে ঘিরে আসা সামনের উঠোনটাকে দেখতে দেখতে আচমকাই বুদ্ধিটা উঁকি দিয়ে গিয়েছিল মাথায়। আর অমনি বেশ একটা মন ভালোলাগা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়েছিল তার চোখে মুখে।চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল তাদের কামডোবের বিল। জলা ঘাস আগাছার ঝোপ জঙ্গল। ছোট ছোট মাছ ধরা বাঁধ। বাঁশের ফালিতে বানানো খাঁচা। কত মাছ। চ্যাঙ, পুঁটি, কই, শিঙি, শোল, মাগুর, খলসে। আরও কত।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে পড়েছিল কমলা। উঠে রান্নাঘরে গিয়ে উনুন ধরিয়েছিল।গরম জলে পোয়াটাক চাল, দুইফালি আলু, গোটা তিনেক বেগুন, আর গন্ডাখানেক লঙ্কা ফেলে দিয়ে ফের একবার ভাবতে বসেছিল অতীত। ফেলে আসা দিনযাপন। মানুষটার সঙ্গে কাটানো টুকরো সুখের মুহূর্ত।
তারপর রান্না হয়ে গেলে সুখলালকে খাইয়ে নিজে চাট্টি খেয়ে ফের একবার এসে বসেছিল দাওয়ায়। রাত ততক্ষণে গভীর হতে শুরু করেছে। আকাশের গায়ে গাঢ় হয়ে আসছে কুয়াশার চাদর। ক্ষীণ হয়ে আসছে তারাদের দৃষ্টি। চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে নির্জনতা।
তারপর সেই নির্জনতা যখন আরও বেশি গাঢ় হতে হতে চারপাশ ঘিরে নিল, নৈঃশব্দ্য ছড়িয়ে পড়ল চারদিক তখনই বহুদিনের ব্যবহৃত এনামেলের হাঁড়িটাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কমলা। দাওয়া থেকে নেমে এলো উঠোনে। উঠোন থেকে রাস্তায়। রাস্তা থেকে নেমে সরু পায়ে হাটা পথটায় পৌঁছে চারপাশটা একবার দেখে নিল ভালো করে। না, কেউ কোথাও নেই। কীভাবে থাকে? যা শীত। লোকে বলে, ‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। মানুষ তো সেখানে কিছুই না।সত্যি শীতটা বড়ো বেশি জাঁকিয়ে পড়েছে আজ। গায়ের পোশাক ভেদ করে মাংস ফুঁড়ে হাড়ে গিয়ে ঠেকছে।
গায়ের চাদরটা আরেকবার ভালো করে টেনেটুনে গায়ে জড়িয়ে নিল কমলা। খালি পা কমলার। মাটি তো নয় যেন বরফের উপর দিয়ে সে হাঁটছে। তার ওপর খোলা নাক, মুখ।কুয়াশার গুড়োগুলো বরফকুঁচির মত বিঁধছে সেখানে। একবার মনে হল ফিরে যায়। ভাবতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল কমলা। জায়গাটা ঈষৎ ঝোপ জঙ্গলে ঘেরা। ঘন ঘন বাড়িঘর। ঘরগুলো পেরলেই সামনে খানিক ফাঁকা। তারপরেই বিল। বিল মানে বিলের ঢাল। বর্ষায় জল থাকলেও এখন তা নেমে গিয়ে ফসলের খেত। ফসল বলতে সর্ষে আর খেসারি।
গোটাকতক খেত পেরলেই জলা জমি। এখন এই মাঘে এসেও কোমরের কাছাকাছি জল। আশপাশের পাঁচ ছটা গাঁয়ের মানুষ মাছ ধরে বিলে। জায়গায় জায়গায় ঝোপ জঙ্গল টেনে আলবাঁধ বানানো। বাঁধের গায়ে বসানো সারি সারি বাঁশের খাঁচা। চেড়ো, আটল, ঘুনি, খাদুম- আরও কত নাম। কইজাল, পুঁটিজাল, পোনাজাল, ফাঁসজাল। যার যত জাল তার তত মাছ। মাছ যেমন আছে চোরও তেমন আছে। মাছমারারা তাই রাত পাহারা দেয়। রাতে থাকার জন্য কেউ কেউ টঙ বানিয়ে তাতে কুঁড়ে বাঁধে। কেউ বিলের ভিতরে যেসব পুকুর আছে তার জেগে ওঠা পাড়ে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানায়। বিল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এমন কুঁড়ের কথা ভাবতেই একটা ভয়ে এসে ঘিরে ধরল কমলাকে। আর তখনই মনে পড়ল বিশু ডাক্তারের কথা, “তাজা মাছের ঝোল খাওয়াও। তাতে যদি মুখের রুচি ফেরে। যদি বেশি বেশি খায়। তাহলে-”
না, আর দাঁড়াল না কমলা। বরং আর একটু দ্রুত পা চালাল সে।
কামডোবের বিল জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নির্জন রাত আঠার মত লেগে আছে বিলের জল, জলা ঘাসের জঙ্গল, মাছমরাদের আলবাঁধে। কাছে দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা কুঁড়েঘর গুলো আর চোখে পড়ে না তেমন। গাঢ় একটা কুয়াশার পর্দা ঢেকে নিয়েছে চারপাশ। মাছ চুরির এ এক আদর্শ পরিবেশ।
হ্যাঁ, মাছ চুরি করতেই এসেছে কমলা। না হলে কোথায় পাবে নিত্যদিন এত তাজা মাছ? কি করে রুচি ফিরবে মানুষটার?
কমলার সামনে এখন পূব-পশ্চিমে লম্বা আলবাঁধ। বাঁধের গায়ে সারি সারি আটল। তিনটে আটল তুলেছে কমলা। তাতে দু’টো কই, তিনটে ল্যাটা, একটা বাচ্চা শোল পেয়েছে। এ্যানামেলের হাঁড়িতে তাদের লাফ ঝাঁপ। বিরক্ত হলো কমলা। আলতো করে তালুতে চাপড় মেরে বলল, “থাম।”
থামল কি? অতসব ভাবার সময় কোথায় কমলার? সে এখন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। কীসের একটা নেশা চেপে বসেছে তার ঘাড়ে মাথায়। একটা, দু’টো, তিনটে- সবে তো তিনটে হল। আরও অন্তত গোটা দশেক আটল, খান পাঁচেক ঘুনি তাকে তুলতেই হবে। নিত্যদিন কি আর এভাবে আসা যায়?
চার নম্বর আটলে সবেই হাত দিয়েছে কমলা অমনি জলের উপর ছপ ছপ আওয়াজ। চমকে ঘুরে তাকাতে যেতেই কে যেন আচমকা পেছন থেকে জাপটে ধরলো তাকে। তারপর পাঁজাকোলা তুলে জলছুট হয়ে এনে ফেলল ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া কুঁড়েয়। চেঁচিয়ে উঠতে গেল কমলা। কিন্তু ছ’মাসের উপোসী শরীর তাকে সাথ দিল না। সেই সময়ও দিল না মানুষটা। ঝাঁপিয়ে পড়ল কমলার উপর।
একরাশ ঘূর্ণি হাওয়া কুঁড়েটাকে এলোমেলো করে দিয়ে শেষে শান্ত হয়ে এলে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল কমলা। সঙ্গে সেই মানুষটাও।
কমলার মাথার উপর এখন কুয়াশায় ভরা আকাশ। নিচে আধ শুকনো পুকুরপাড়ের মাটি। সামনে বিস্তৃত বিল প্রান্তর জুড়ে মেছো গন্ধের সাথে মাখামাখি কুয়াশার আঘ্রাণ। বুক ভরে শ্বাস টানতে গেল কমলা। তখনই পাশ থেকে মানুষটা বলে উঠল, “কি দরকার চুরি করার? তুমি পিত্যেকদিন আমার কাছে আসপা। আমি তুমারে মাছ দেবো। যে মাছ চাও, তাই। খালি তুমি আমারে-”
পুব আকাশে কুয়াশার পর্দা ফেটে তখন সবেই উঁকি দিয়েছে আধখানা চাঁদ। সেদিকে তাকিয়ে কমলার মনে হল চাঁদ নয় নতুন দিনের ইশারা নিয়ে সূর্য উঠছে। 🍁
🍂কবিতা
সুশান্ত কুমার দে
অন্তরের কথা
নদীর ঢেউ আছে, আছে তার ব্যথা
শোনে না, বোঝে না – কেউ তার কথা!
আমার মনে ঢেউ আছে, বলিনি তা
খোঁজ কেউ রাখেনি – বলি বলি যা!
আকাশে তারা হাসে, আছে তবু ক্ষোভ
ছিনিয়ে তাকে নিও না,করিও না লোভ?
আমার মুখে হাসি আছে, খুঁজিছ মানে
হাসিতে শাসিতে কেউ কি জানে?
যদি তুমি ভালোবাসো, মুখ ফুটে চাও
যতটুকু পারি দিতে – দু’হাত পেতে নাও?
ভালবাসা অকৃপণ, দিতে পারি সব
নাই দিতে পারি যদি- সমাধিতে স্তব!
চন্দ্রিকা ব্যানার্জী ধর
আপন-আমি
হাসিখুশির সাজ মুখোশে,
সবার কাছে আমি!
গুমোট জমা কান্নাগুলো ;
শুধু আপন- আমি জানি,
সবাই সবার নিজের খোঁজে;
নিজের সাথে ব্যস্ত,
নিজের আমি জানে কেবল;
লুকিয়ে থাকা কষ্ট!
না বলা সব গুমরে ওঠা;
ব্যথার কালো মেঘে,
তবুও বৃষ্টি কোথায় ঝরে!
জোনাক জ্বলা চোখে?
ঠোঁটের কোণে ছদ্মহাসি!
জ্বলছে ভীষণ বুক;
আয়না চোখ আভাস দিলো-
মনে জ্বর এসেছে খুব।
অ্যামেলিয়া দাস
উদ্যমী
তুরন্ত মনের তুরগ
সুভাবে করছে টগবগ,
স্নায়ুর হলকা উপেক্ষা করে
উৎপীড়নের ক্রুদ্ধ খরে;
এ জীবন আবর্তমান
অস্তিত্ব প্রমাণে প্রবর্তমান,
মন-সদ্ম উদ্যমী হয়
সঞ্চয়ে পুরোদস্তুর জয়;
মনস্বী হয়ে উঠি
জয়রঙে ভরুক মনকুঠী।
🍂ধারাবাহিক উপন্যাস /পর্ব ১৬
ঊর্মি উত্তর দেয়নি, শুধু ওর ঐ গজদন্ত বের করা সুন্দর হাসিতে পরিস্থিতি সামলেছে। অনেকক্ষণ ঊর্মি নিজের মধ্যে আত্মস্থ হয়ে ভাবছিল। অমৃতর ডাকে ফিরে আসে হাসপাতালের কেবিনে। সুজিত চট্টোপাধ্যায়-এর লেখা ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’। আজকে পর্ব ১৬।
অনেকটা গল্পের মতো
সুজিত চট্টোপাধ্যায়
“নয় নয় এ মধুর খেলা,
তোমায় আমায় সারাজীবন
সকাল সন্ধ্যাবেলা।
নয় নয় নয় এ মধুর খেলা।
কতবার যে নিভলো বাতি,
গর্জে এলো ঝড়ের রাতি
সংসারের এই দোলায় দিয়ে
সংশয়ের খেলা…
নয় নয় নয় এ মধুর খেলা”…
সকালের জলখাবারটা বেশ মনের মতো করেছিল সোমা। এগরোল, ভিতরে সোয়াবিন গ্রেট করে, পিঁয়াজ, রসুন, একটু ক্যাপসিকাম গ্রেট করা সোয়াবিন, সঙ্গে অল্প গরম মশলা দিয়ে বাদামী করে ভেজে, কাঁচা লঙ্কা আর গন্ধরাজ লেবু টিপে একেবারেই রেস্টুরেন্টের মতোই তৈরি করেছিল। এমনিতেই চিকেন, মাটন অনঙ্গদের বাড়ি বিশেষ চল নেই। আর সকালবেলায় তো প্রশ্নই ওঠে না। রান্নাটা মন ভাল থাকলে সোমা ভালই করে। তারপর না বলতেই এককাপ চা, সকালটা ভাল করে দিল অনঙ্গর। আজ আর বাজার যাবার হ্যাপা নেই। তাই সিগারেট ধরিয়ে অনঙ্গ লেখার টেবিলের সামনে চলে এলেন। অনেকদিন অমৃত ও ঊর্মির কথা কিছু লেখেননি। আজ ষোড়শ পর্ব লিখতে গিয়ে তাই ওদের কথাই সবার আগে মনে হল।
অমৃত তখন হাসপাতালে থাকলেও প্রায় সেরে ওঠার মুখে। ওষুধপথ্যের ওপরেই আছেন। সকালের ব্রেকফাস্ট করা হয়ে গেছে। রুটিন টোস্ট, ডিমসেদ্ধ, কলা আর দুধ। টোস্ট আর ডিমসেদ্ধ খেয়ে কলা আর দুধটা টেবিলের ওপর রেখে দিয়েছিলেন অমৃত। ব্রেকফাস্টের পর অ্যাটেনডেন্টকে দিয়ে বাইরে থেকে চা আনিয়ে খেয়েছেন। অলস সময় কাটতে চায় না, তাই খবরের কাগজে মনোনিবেশ করেছিলেন। বাইরের বাতাসে হিমেল আভাস। দুরের দৃষ্টিপথে পাহাড় আর মেঘে একাকার হয়ে যায়। বোঝা যায় না পাহাড় আর মেঘের ফারাক। সেপ্টেম্বরের শেষাশেষি। জানালা দিয়ে যতটুকু আকাশ দেখা যায় “নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা”। এমনসময় কি মন রাবীন্দ্রিক হয়ে যায়? অমৃত আপনমনে গুনগুন করে গাইতে থাকেন :
“নয় নয় নয় এ মধুর খেলা
তোমায় আমায় সারাজীবন
সকাল সন্ধ্যাবেলা,
নয় নয় নয় এ মধুর খেলা।
কতবার যে নিভলো বাতি
গর্জে এলো ঝড়ের রাতি
সংসারের এই দোলায় দিয়ে
সংশয়ের খেলা,
নয় নয় নয়…”
হঠাৎ সবুজ রঙের পর্দাটা নড়ে উঠতেই অমৃত চুপ করে যান। পর্দার ওপারে সাদা নার্স। অমৃত এখন খুব আশা করে থাকেন ঊর্মির উপস্থিতির জন্য। কিন্তু তাদের তো আর চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি নয়। অমৃতর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে ঊর্মির ডিউটি কবে কখন থাকে। কিন্তু প্রথমতঃ সেটা ভাল দেখায় না, দ্বিতীয়ত, উর্মি যদি খারাপ ভাবে নেয়, তাই ইচ্ছেটাকে পিঠ চাপড়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন। অমৃত শুনতে পান দরজার বাইরে থেকে কোনও পেশেন্ট বা অ্যাটেনডেন্টকে কোনও নির্দেশ দিচ্ছে ঊর্মি। মন ভালো হয়ে যায় অমৃতর। পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকেই খুব নীচু গলায় ঊর্মি বলে, ‘বেশ তো ভাল গাইছিলেন, থেমে গেলেন কেন?’ অমৃত সপ্রতিভ হয়ে উত্তর দেন, ‘জানতাম না তো আপনি আসছেন, এসময় তো গম্ভীর মুখে সিস্টার শর্মা আসেন, আর এসেই একগাদা বকাবকি শুরু করে দেন। একেবারে সকাল খারাপ করে দেওয়া সিস্টার…।’ ঊর্মি হাসতে হাসতে ছদ্ম ভয় দেখিয়ে বলে, ‘দাঁড়ান, উনি আছেন, আমি গিয়ে বলছি ওঁকে’। তারপরই টেবিলের পড়ে থাকা দুধ কলা দেখে বলে, ‘এ কি! এগুলো খাননি কেন? দুপুরে লাঞ্চ দেবে না এমন কেউ বলেছে নাকি? কি জানি! কোনো কালসাপ পুষেছেন কিনা তাই বা কে জানে! আপনার জন্য শর্মাদিই ঠিক আছে, আমাদের দিয়ে হবে না। ডাকবো নাকি শর্মাদিকে?’ বলেই অমৃতর মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে।
তারপরই কাজের কথা মনে পড়েছে এমনভাবে বলতে থাকে, ‘শুনুন মশাই, আপনাকে আর হাসপাতালের ভাত খেতে হবে না। ডাক্তার দ্বিবেদী আপনাকে আজ বিকেলে চেক আপ করে, সব ঠিক থাকলে ডিসচার্জ করে দেবেন। তারপর বাড়ির আদর, বাড়ির ভাত।’
অমৃতর মুখটা হঠাৎ কালো হয়ে যায়, সে মুখ ঊর্মির দৃষ্টি এড়ায় না। হাসপাতাল ছেড়ে যেতে যে এত খারাপ লাগবে, সেটা যেন অমৃত প্রথম টের পান। সব সহবত ভুলে বলেই ফেলেন, ‘আপনার সাথে আর দেখা হবে না?’ ঊর্মি সরাসরি চোখ ফেলে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় অমৃতর দিকে। সে মুখে পড়ে নিতে চায় অমৃতর মনের মধ্যে রয়ে যাওয়া না বলা সব কথা। তারপর বলে, ‘আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা কিসের বলুন তো?’ তারপর নিজেই উত্তর দেয়, পেশেন্ট এবং নার্সের। এটা ভুলে গেলেন নাকি?’ অমৃত আজ মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই সম্পর্ক কিছুতেই শেষ করে দেওয়া যাবে না। কিছুতেই নয়। যা বলার আজই বলে নিতে হবে। যদি কাল ঊর্মি ডিউটিতে না আসে! তাই বলেই ফেলেন, ‘সব সম্পর্ক যে একই জায়গায় থেমে থাকবে এমন কোনো হার্ড অ্যান্ড ফার্স্ট রুল আছে নাকি? ট্রেনের সহযাত্রীর সম্পর্কও তো কখনও কখনও পূর্ণতা পায়। মিস সান্যাল, পৃথিবীতে কিছুই স্ট্যাটিক নয়, এটা ভাবতে ক্ষতি কি? ঊর্মি শুনতে থাকে অমৃতর কথা। কোথায় যেন ঘোর লাগে। এতদিনে ঊর্মিও কি কিছুমাত্র দূর্বল হয়নি অমৃতর প্রতি? পেশেন্ট তো কতই আসে, কতই যায়! কিন্তু এভাবে তো কখনও কারুর প্রতি এমন দুর্বল হয়ে যায়নি। গতকাল ডাক্তার দ্বিবেদী বলার পর থেকেই আনমনা হয়ে পড়েছে ঊর্মি। হোস্টেলে গিয়েও সেই ভাবনা থেকে নিজেকে বের করতে পারেনি। ধরা পড়ে গেছে কলীগ অপর্ণা লাবনীদের কাছে। ওরা হয়ত না বুঝেই মজা করেছে, ‘কি ব্যাপার! সোনামনিকে আজ এত আনমনা লাগছে কেন? কোথাও ফাঁসলে নাকি?’ ঊর্মি উত্তর দেয়নি, শুধু ওর ঐ গজদন্ত বের করা সুন্দর হাসিতে পরিস্থিতি সামলেছে। অনেকক্ষণ ঊর্মি নিজের মধ্যে আত্মস্থ হয়ে ভাবছিল। অমৃতর ডাকে ফিরে আসে হাসপাতালের কেবিনে। অমৃত আজ অগ্রপশ্চাৎ কিছুই ভাবতে নারাজ। যা হবে পরে দেখা যাবে, কিন্তু ঊর্মির সঙ্গে সম্পর্ককে কোনও মূল্যেই ছাড়া যাবে না। অমৃত ডাকে, ‘ঊর্মি’! ঊর্মি অবাক হয় এই নতুন সম্মোধনে। কিন্তু আপত্তি করে না, বরং কোথা থেকে একটা ভাললাগার হাওয়া এসে ওর মনকে উথাল পাথাল করে দেয়।
স্লিপ প্যাডে একটা ফোন নম্বর লিখে অমৃতর দিকে এগিয়ে দেয়, তারপর খুব নীচু স্বরে বলে, ‘এই নম্বরে ফোন করে আমায় ডেকে দিতে বলবেন। এখন যাই, আপনি ছাড়াও আমার আরও পেশেন্ট আছে।’ কেবিন শূন্য করে, অমৃতর বুকের মধ্যে একরাশ ভাল লাগার বাতাস ঢুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় ঊর্মি। 🍁 (ক্রমশঃ)
অঙ্কন : প্রীতি দেব, সানি সরকার ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
