Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Sasraya News, Sunday’s Literature Special 55| Issue 55| 9 March 2025 | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | বসন্ত সংখ্যা, ৯ মার্চ ২০২৫ | সংখ্যা ৫৫

Listen

সম্পাদকীয় 

হোলি, ভারতবর্ষের একটি অন্যতম প্রাচীন এবং জনপ্রিয় উৎসব, যা মূলত রং, আবির ও আনন্দের উৎসব হিসেবে পরিচিত। এটি বসন্তের আগমনে বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে এই উৎসবের আরম্ভর এবং কৃষ্ণ ও রাধার প্রেমের সমার্থক হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

 

 

 

এ উৎসবের মূল কাহিনীটি প্রধানত হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ও তার পিতা হিরণ্যকশিপুর প্রতিক্রিয়া সহ ভগবান বিষ্ণুর অবতারের সাথেও যুক্ত।
হোলির উৎসবের পেছনে একটি গভীর ধর্মীয় কাহিনী রয়েছে। শাস্ত্র অনুযায়ী, হিরণ্যকশিপু একজন অত্যাচারী রাজা ছিলেন, যিনি ভগবান বিষ্ণুর প্রতি খুব অমান্য করতেন, বিষ্ণুকে মানতেন না। উল্টো দিকে তারই পুত্র প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর একান্ত ভক্ত ছিলেন। হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে তার বিষ্ণু প্রেমের ধর্ম থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু, তা থেকে হিরণ্যকশিপু ব্যর্থ হন। হিরণ্যকশিপু শেষ পর্যন্ত তার বোন হোলিকাকে দিয়ে নিজের সন্তান প্রহ্লাদকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। হিরণ্যকশিপুর বোন ব্রহ্মার দ্বারা বর প্রাপ্ত ছিলেন যে আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না যদি সে ব্রহ্মার দেওয়া চাদরটি গায়ে দিয়ে থাকে। পরিকল্পনা হেতু এক বিরাট কাট সাজিয়ে চুল্লি তৈরী করা হয়। ঐ কাঠের চুল্লিতে আগুন দিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে প্রহ্লাদকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য সেই আগুনে বসিয়ে দিতে চায়। হোলিকা কোলে নিয়ে আগুনে বসে যায় কিন্তু পরিণামে হোলিকা নিজেই নিজে দগ্ধ হন আর প্রহ্লাদ ভগবান বিষ্ণুর নাম করতে থাকেন। এই ঘটনার মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুর প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তির জয় জয় কার হয়। সেই থেকে এই দিনটিকে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা অর্থাৎ ‘হোলিকা দহন’ হিসেবে উদযাপন করা হয়।

 

 

 

শিব ও পার্বতীর সঙ্গে হোলির সম্পর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপপ্রাচীনকালে এই দিনটি শিব ও পার্বতীর মিলনের উৎসব হিসেবে উদযাপিত হত। শিব, যিনি সর্বদা রঙিন। ধ্যানের মধ্যে বিরাজমান, তিনি এই উৎসবের সঙ্গী। এটাও ভাবতে কেমন যেন মনে হয়। কিন্তু, প্রেম শিবের সজীবতা। বলা হয় যে, দম্পতি শিব ও পার্বতির রঙের খেলা এখনো অনেক অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিব-দেবীর যৌথ উদযাপন করা হয়। রং ও আবিরের সমারোহে সেজে উঠত শিব – পার্বতীর বাসস্থান। নন্দী থেকে গণেশ কার্তিক থেকে বিষ্ণুদেব ব্রহ্মদেব এমনকি সকল দেবদেবী উপস্থিতি। থাকতেন সপ্ত ঋষিগণও উপস্থিত থেকে আনন্দ উপভোগ করতেন বলেই রচিত।
বলা যেতে পারে যে, হোলির উৎসবের অন্যতম পরিচিত কাহিনী হল শিব ও পার্বতীর সাথে সম্পর্কিত। বলা হয়, পার্বতী একবার শিবের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে তাঁর ভক্তরা ঘৃণা ও বিদ্বেষ ভুলে একসাথে মিলিত হতে পারে। শিব জবাব দেন, “বসন্তের এই সময়ে তোমার ভক্ত সবার মধ্যে প্রেম ও সাদৃশ্যের আবেগে একত্রিত হবে, আর এই দিনটিকে পালন করবে রঙের মাধ্যমে।” এভাবেই শিব ও পার্বতীর মহাকাব্যিক প্রেম হোলির উৎসবকে প্রাণবন্ত করে।

 

 

 

হোলির আরও একটি মৌলিক উপাদান হল কৃষ্ণ ও রাধার প্রেম। কৃষ্ণ, যে রংয়ের দেবতা, রাধাকে প্রেমে রাঙানোর জন্য হৃদয়ের প্রেমেররঙ ব্যবহার করতেন। রাধাকৃষ্ণ এটি কেবলমাত্র একটি প্রেমের কাহিনী নয়, বরং গোপীসেনাদের জন্য একটি পরিবেশনাত্মক উৎসব। কৃষ্ণের সঙ্গে রং ও আবির নিয়ে রাধার খেলা, যেখানে তিনি রাধার গায়ে রং মাখিয়ে রঙিন করে তাকে প্রেমের অনুভূতি জানাতে চেষ্টা করেন, হোলির একটি বিশেষ দিক প্রেমাত্ম বোধ। রাধাকৃষ্ণের কাহিনী কৃষ্ণ ও রাধার সঙ্গী হওয়ার আনন্দ উৎসবের মূল আঙ্গিকতা, যা যুগে যুগে ভারতের বিভিন্ন সমাজে প্রচলিত হয়ে আসছে।

 

 

আবার উল্টো দিকে নবদ্বীপে মানে বাংলার নদীয়ার নিমাইকে নিয়েও হোলির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই হোলির উৎসব ও রাধা—কৃষ্ণের প্রেমলীলাকে ঘিরে নিমাই সন্ন্যাস তিনিই প্রথম উৎসব প্রচার করেছিলেন বলে জানা যায়। এর আগেও হয়ত কেউ করতে পারে তার কোনও বিশেষ দিক দর্ষিত নেই আমার বা আমাদের কাছে। তবে নিমাইয়ের ভক্তগণ এখনো এখানে হোলি আনন্দের মণ্ডপ সজ্জিত হয়। কৃষ্ণের সাথে প্রেমিকার রঙের খেলা, হোলির আনন্দ যেমন দেখে আসে, তেমনি সামাজিক বন্ধনও তৈরি হয়। বিশেষ করে নিমায় যখন হোলি উৎসবের আরম্ভ করুন তখন গ্রামের সকল মানুষ একসাথে অংশ নেয়। তরুণ-তরুণীরা শ্রেষ্ঠ রঙ দিয়ে একে অপরকে রাঙায়, গান গায় এবং নাচে, যা পুরো অঞ্চলে উল্লাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই আনন্দময় মুহূর্তগুলো মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য এবং সহযোগিতার আবহ তৈরি করে, যা মূলত হোলির ধর্মীয় সংযোগের মাধ্যমে ঘটনা।

 

 

বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসব চির অমরত্ব লাভ করেছে। বোলপুর জুড়ে এই উৎসব এক নতুন আঙ্গিক ও ঐতিহ্যে ভোরে উঠেছে। সারা বাংলায় এই উৎসব নানান ভাবে পালিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও এই উৎসব দেখা যায় নতুন নতুন সমাহরোহে। গ্রাম শহর এক হয়ে যায় এই রং উৎসবে। বসন্ত এসে প্রেমের দোলা দেয় প্রতিটি মন থেকে মনে সমস্ত মন এক হয়ে রঙের সজ্জ্যায় নিজেদের সাজিয়ে আনন্দ লাভ করে।

হোলির উৎসব শুধুমাত্র এক দিন বা এক সময়ের আনন্দ নয়, এটি সত্যিকার অর্থে মানবতার বন্ধন বৃদ্ধি করে, যেখানে সকল ভেদাভেদ মিটে যায়। প্রেম, আনন্দ এবং সৌহার্দ্য এই উৎসবের মূলমন্ত্র। তাই হোলি আমাদের জীবনকে রঙিন করে তোলে এবং এক নতুন আঙ্গিকে পূর্ণতা দেয়।🍁

 

 

🍂মহামিলনের কথা 

 

 

শ্রীশ্রীগুরবে নমঃ
ওরে অবোধ সন্তান! প্রজ্বলিত পাপ-অনলের জন্য ভীত হসনে। আমার শ্রীকৃষ্ণনামরূপ মেঘসমূহ হতে বারিবিন্দু বর্ষিত হয়ে পাপ-আগুন একেবারে চির-নির্ব্বাপিত করে দিবে। গীতার কথা ভুলে যাসনি— অর্জ্জুনকে বলেছিলাম, —হে অর্জ্জুন! যদি নিরতিশয় দুরাচার ব্যক্তিও অনন্যভাবে আমার উপাসনা করে তবে তাকে সাধু বলেই মনে করবে, কারণ আমি ভগবানের ভজনের দ্বারা কৃতার্থ হব— তার এরূপ অধ্যাবসায় সুন্দর, সে সত্বর ধর্মাত্মা হয়ে, শাশ্বতী শান্তি লাভ করে। হে কৌন্তেয়! তুমি বিবাদকারিগণের সভায় ঢাক-ঢোল আদি বাদ্যসহ উপস্থিত হয়ে বাহু উর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত করে, নিঃশঙ্কচিত্তে প্রতিজ্ঞা করবে যে পরমেশ্বর আমার ভক্ত সুদুরাচার হলেও প্রনষ্ট হয় না। বেশী কি, আমাকে আশ্রয় করে যারা পাপযোনি, নিকৃষ্ট জাতি, স্ত্রীগণ, বৈশ্যসমূহ, শুদ্রসকলও নিশ্চয় পরমগতি প্রাপ্ত হয়।
বড় আশার কথা। আচ্ছা, তোমার নাম যদি কেউ অশ্রদ্ধায় করে, তাহলেও কি তুমি কৃপা কর?
আমার নাম শ্রদ্ধা অশ্রদ্ধার অপেক্ষা রাখে না। যেমন তেমন করে উচ্চারণ করবামাত্র প্রাণকে অন্তর্মূখ করে। বহির্মুখ প্রাণ বৈখরী থেকে মধ্যমায় অবগাহন করে ক্রমে পশ্যন্তী অতিক্রম করে পরায় একীভূত হয়ে যায়।
আচ্ছা, এই যে শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়া হচ্ছে— এই প্রাণই তো তুমি?
হাঁ, প্রাণের স্পন্দনই চিত্তের স্পল্দন। প্রাণ আমার প্রথম রূপ। প্রাণের সঙ্গ করা আর আমার সঙ্গে থাকা— এক কথা।
প্রাণের সঙ্গ কি করে করতে হয়?
শ্বাস-প্রশ্বাসে জপ করা প্রাণের সঙ্গ করা। প্রাণের চাঞ্চল্যই হল জীবভাব।
যারা শ্বাস-প্রশ্বাসে জপ করতে পারে না?
মুখে ‘কৃষ্ণ কৃৃষ্ণ’ বললেও আমার সঙ্গ করা হয়। প্রাণ ব্যতীত বাক্য উচ্চারণ হয় না। তুই কেবল ‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’ কর, তোকে সব বুঝিয়ে জানিয়ে দিব, তোকে আনল্দ-সাগরে চিরনিমজ্জিত করবো।
বল্— কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ রক্ষ মাম্।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ পাহি মাম্॥

🍁 ঋণ : শ্রীশ্রীনামামৃত লহরী || শ্রীওঙ্কারনাথ রচনাবলী
[বানান অপরিবর্তিত ]

 

 

 

🍂প্রচ্ছদ দ্য 

 

প্রথম দিন যেমন তেমন কিন্তু দ্বিতীয় দিন কারোর ছাড় ছিল না। এমনকি এই দুইদিন যদি কেউ রং না খেলতো তাহলে পরে হলেও তাকে রং দেওয়া হতো। রঙের গভীরতা এতটাই বেশি ছিল যে বাড়ির উঠোন থেকে রাস্তা পর্যন্ত রং উঠতে ১০-১২ দিন সময় লেগে যেত এবং পরিবারের সদস্যদের গায়েও সম্পূর্ণ রং উঠতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগত। লিখেছেন : মহাবীর চৌধুরী 

 

 

হোলির সেকাল এবং একাল

 

ফাল্গুন মাসে পূর্ণিমাতে বাংলায় দোল উৎসব হিন্দিতে হোলি পালিত হয় সারা ভারতবর্ষ জুড়ে। হোলি এমন একটা উৎসব রঙের বাহারে মানুষ আকৃষ্ট হয়ে ভেদাভেদ ভুলে সব যেন এক হয়ে যায়। এমনই এক গল্প মনে পড়ে গেল স্মৃতির কণা থেকে।

 

 

আজ থেকে প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে আমার দেখা রঙের বাহাড়ি উৎসব পরিবারের সমস্ত সদস্যদের মধ্যে খুশির হাওয়া বয়ে নিয়ে আসতো। হোলি মানে সবাই এক জায়গায় হওয়া, জমিয়ে রং খেলা তার সঙ্গে সকালের নাস্তা সঙ্গে মালপোয়া এবং দুপুরে ও রাতে কব্জি ডুবিয়ে নানান রকমারি খাবার। তাতে বার যাই হোক না কেন খাসির মাংস ছিল মেন মেনু। পরিবারের বিবাহিত মেয়েরাও চলে আসতো হোলি খেলতে। দুদিন আগে থাকতে বাচ্চারা তৈরি করত বিভিন্ন রকম রং দিয়ে কুমকুম। এখন অবশ্য কুমকুম এর ব্যবহার একদমই দেখা যায় না।কুমকুম বানানোর জন্য আগেকার সেই ডেলা রং যা গরম জলে কিছুক্ষণ রাখার পর হাত দিয়ে গুলিয়ে গুলিয়ে ভালো করে মেশানো হতো তারপর পিতলের পিচকারির মধ্যে দিয়ে লাল,নীল,সবুজ গোলা রং বেলুনের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে টাইট করে বেঁধে বালতির মধ্যে জলে চুবিয়ে রাখা হতো। তখনকার রং মানেই একটা কথাই আমরা জানতাম প্রতাপমল।

 

পরিবারের পূর্ব পুরুষদেরও আবির দিয়ে হোলি উৎসব উদযাপন করা হত। এটাই ছিল পরিবারের রীতি। আসলে এই পরিবারে রং খেলা হত দু’দিন। প্রথম দিন যেমন তেমন কিন্তু দ্বিতীয় দিন কারোর ছাড় ছিল না।

 

ছোটরা তো আনন্দের সঙ্গে কুমকুম বানাত সঙ্গে থাকতো বড়রা কিন্তু হলে কি হবে? রাস্তা দিয়ে যাবার কারোর উপায় ছিল না।যেই সামনে দিয়ে যেত সেই কুমকুম তাদের সামনে পিছনে ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারা হত আর লাগা মাত্রই বেলুন ফেটে লাল,নীল, সবুজ রং একাকার হয়ে যেত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু বিঘ্ন ঘটতো পথচারীদের মধ্যে তবুও সবাই খুশি খুশি সেই আনন্দ উপভোগ করতো। সেই আনন্দে ছিল না কোন ভেজাল বা অকৃত্রিম কিছু যা আজকের দিনে সম্পূর্ণটাই হয়ে গেছে মিলনের নামে সকলকে বোকা বানানোর একটা সুন্দর প্রয়াস। বড়দের কাছে শুনেছি এই বসন্তকালে শরীরে গুটিগুটি কিছু বের হতো আর তার থেকেই রেহাই পেতে শুরু হয়েছিল রং খেলা। মূলত বসন্তকালে এই উৎসব হয় বলে বসন্ত উৎসব ও বলা হয়ে থাকে।
তো যাই হোক রং খেলাকে কেন্দ্র করে উৎসাহ থাকতো সকল সদস্যেরই। ছোটরা যেমনি কুমকুম, পিচকারির মাধ্যমে গোলা রং, আবির এবং সাথে থাকতো প্রতাপমলের মেজেন্ডারের সিসি তেমনি বাড়ির যুবক-যুবতীদের কাছে থাকতো প্রতাপ মলের গোলা রং ও ম্যাজেন্ডার সিসি। সকাল সকাল নাস্তা করে ছোটরা সকাল ন’টার মধ্যে রাস্তার সামনে হাজির হয়ে যেত পথ চলতি মানুষদের কুমকুম ও পিচকারির মাধ্যমে রং দিতে পেরে খুবই আনন্দ উপভোগ করত। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা প্রথমে ছোটদের তারা খেয়াল রাখত এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে তারা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন রঙের সাথে রাঙিয়ে উঠতো সঙ্গে থাকতো ঢোল ও খঞ্জনি। চলতো হিন্দি গানের লড়াই আর মাঝে মাঝে সবাই মিলে চেঁচিয়ে উঠত ‘হোলি হে,হ্যাপি হোলি’। পরিবারের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকার জন্য বাড়ির বউরা কখনোই ভাসুরের সামনে আসতো না বা এলেও ঘুমটা দিয়ে তারা কথা বলত কিন্তু একদিনই কেবলমাত্র এই হোলির দিনেই বাড়ির বউ এরা ভাসুররা বাড়ি ফিরলে তাদের রং মাখাত। দ্বিতীয় দিন বাড়ির ছোটরা বড়দের আবির দিয়ে প্রণাম করার নিয়ম ছিল আর বড়রা কপালে আবিরের টিপ দিয়ে আশীর্বাদ করতেন সঙ্গে মিষ্টি মুখ। পরিবারের পূর্ব পুরুষদেরও আবির দিয়ে হোলি উৎসব উদযাপন করা হতো।এটাই ছিল পরিবারের রীতি। আসলে এই পরিবারে রং খেলা হত দুদিন। প্রথম দিন যেমন তেমন কিন্তু দ্বিতীয় দিন কারোর ছাড় ছিল না। এমনকি এই দুইদিন যদি কেউ রং না খেলতো তাহলে পরে হলেও তাকে রং দেওয়া হতো। রঙের গভীরতা এতটাই বেশি ছিল যে বাড়ির উঠোন থেকে রাস্তা পর্যন্ত রং উঠতে ১০-১২ দিন সময় লেগে যেত এবং পরিবারের সদস্যদের গায়েও সম্পূর্ণ রং উঠতে প্রায় এক সপ্তাহ লাগত।
পরিবারের মধ্যে মতপার্থক্য হতে থাকায় আজ এই হোলির উৎসব আর সেই পূর্ণতা পায় না। আজ পরিবারের সদস্যরা তারা নিজ নিজ পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে পরিবারের রীতি এখনো নিয়ম করে মেনে চলা হয়।
তবে একটা কথা অস্বীকার করা যাবে না, কোন কিছুই থেমে থাকে না । পরিবর্তন তো সর্বক্ষেত্রেই আসে আর তাকে মানিয়ে নেওয়াটাই হচ্ছে জীবন।
পরিবর্তন এসেছে পরিবারের সদস্যদের কিন্তু আজও হোলির রং রামধনুর মত অপরিবর্তিত রয়েছে।
তাইতো গর্ব করে আজও বলতে পারি ‘হোলি হে,হ্যাপি হোলি’।🍁

 

 

 

🍂বিতা 

 

 

গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতা

এই বসন্তে

ভালোবাসি ভালোবাসি বলে
যেদিন দৌড়ে চলে গেলে
সেদিনই কি ফুটেছিল শিমুল পলাশ
আশ্চর্য হাওয়ার রাত
সেদিনই বুঝি স্পর্শ নিয়ে
গেয়েছিল বসন্তের গান
অন্তরতম এ প্রেমের সাম্পান

তুমি জানো
সেদিন নিয়েছ কত বেশি
অভিমান ব্যাকুলতা শেষ পারাবার
স্বপ্ন হয়ে ভেসেছিল কুয়াশায়
কী করে বুঝব এ মনের প্রণতি
এ বসন্তে তুমি কি ভাস্বতি

 

 

 

 

 

স্বপন কুমার দত্ত-এর দু’টি কবিতা

হঠাৎ রঙবেলার বালক বৃষ্টি 

রঙ কী জরাগ্রস্ত
না হলে কি সুন্দর সরণী
রাক্ষস রঙ শিরদাঁড়ায় থাকা বটগাছ কাটে
ঝুরিতে আর তুলতে পারে না

ঝরে পড়া জল— ওহো! রঙ নয়— জল
বটগাছের শাখায় একটি নারীও—

সত্যি বলছি, কীভাবে দেখব–
ভাঙা মসজিদ, ভাঙা গীর্জা, ভাঙা মন্দির
শুধু রাক্ষস রঙ—

ওই রাক্ষস একি আমি
আমারই সংবাদ

আমি যে কখন একটি বালক রঙ থেকে আজ

এ-কোন রঙ— ছুটে আসছে

 

 

 

 

একটিবার বলে দাও বাসন্তী রঙ × খিদের মাপ = কী?

রঙন ওষ্ঠ পাখি নায়িকা চায়।
চায় ময়ূর উত্তুঙ্গ আরণ্যক শেকড়ধ্বনি।
উঠে আসবে আগুন ভাস্কর্য অন্তর-গন্ধ, স্বপ্নমালা, ডালিম বিকিরণ।
নিবিড় বুনো ইচ্ছেডানা নাভিমূলে বিশুদ্ধ রাত
শরীর সীমারেখা বিস্ফোরণ।
এই ঠিক, এ-ই নইলে কী লুকনো রঙের খামারে
আগুন ধরানো রিহার্সল হয়।
ঝগড়া করব, দপদপে তাকাব, নিঃসঙ্গ ঝোপঝাড় নিঙড়ব।
তবেই তো, তবে-ই তো ছোরা উপচে টনটন খিদে
ভারি কবরখানায় অর্ধসমাপ্ত ফেলে রাখা রঙ আঁচে
আপাদমস্তক হেরে যাওয়া মোমবাতি কী— কী করব এবার তুমি-ই বলো—
রেখাপাত নাকি রঙপাত নাকি মৃতের অশ্রুপাত
আশ্রয় করো দুলে ওঠো সোজাসুজি গলিপথ ধরে দোল দাও
কিছু কি— কিছু কী না পারো
অন্তত নেশাখোর করো, জোনাকি নিতিয়ে দিই
এবার বাসন্তী রঙ তাহলে যে এখানেই টেরটি পাব না!

খুব খিদে
বড্ড খিদে।
ওই তো— ওই তো রামধনু রঙ মৃত্যুপূরী
ঠিক খুঁজে নিচ্ছে— খুঁজে নেবে আকণ্ঠ
চলতে থাকা উলঙ্গ এক… দুই… তিন… অগুন্তি পা।

 

 

 

 

অমিত কাশ‍্যপ-এর একটি কবিতা

দোলযাত্রা

কুয়াশা যা ছিল ভোরে কেটে গেছে
দক্ষিণায়ন থেকে সরে যাচ্ছে রোদ
‘আজি দখিন দুয়ার খোলা…’
দূর থেকে ভেসে আসছে ফাগের গন্ধ

তুমি আনমনা হও, বসন্ত বাতাসে অবিন‍্যস্ত চুল
সকাল গড়িয়ে গড়িয়ে কখন বারান্দায়
তোমার পা ছোঁয়ে, তুমি মেখে থাক
সামনের মাঠে পলাশ ছেয়ে আছে রঙিন

পুরোনো পোষ্টঅফিস যাবে, কে যেন বলে ওঠে
দুপাশ জেগে উঠছে চেনামহলে
বোসপুকুর, তালবাগান, বকুলতলা
হারাধনদা এখনো বেঁচে আছেন, রাধামাধব জিউ

দোলে মস্ত চাঁদ পড়ত পুকুরটায়, জ‍্যোৎস্নার জল
জিউর মন্দিরচত্বর ভেসে যেত রঙে রঙে
মহাপ্রভু লীলা করতেন

 

 

 

সুস্মেলী দত্ত-এর একটি কবিতা

রঙ দিয়ে যাও

আজ তোর মতো চিলেকোঠা হতে চাই
বাসন্তী রঙ দেয়ালের কোণে কোণে
পলাশের মতো লালচে দু’ঠোঁট ফাঁক
লজ্জায় মরি আগুন লেগেছে বনে-

কিম্বা ভেবেছি হলুদের মতো টিপ
ফুরসত পেলে আঁচল বিছিয়ে বসা
লক্ষ্মী প্যাঁচার দিব্যি গালছি ছেলে
আমার হয়েছে সাড়ে সাত শনি দশা

হয়ত মিথ্যে তবু হবো রামধনু
মনে মনে রঙ আবিরে আহত হবো
খুঁটে খায় দিন রাতগুলো বাড়ে ওমে
কী জানি স্বপ্ন সত্যি অসম্ভবও!

আদরে সোহাগে রোদগুলো মুড়ে বসি
ফের একবার জোনাকির হাতছানি
বেওকুফ বলো যদিবা পাগল বলো
রঙ দিয়ে যাও বসন্ত আসমানী।

 

 

 

 

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর একটি কবিতা

চন্দ্রাহত

চাঁদ নষ্টের আক্ষেপ নিয়ে বেজে ওঠে একতারা। কিন্তু এলোমেলো মেঠো পথ আর সঙ্গ দেয় না। বৈরাগী হেঁটে যায় অনেকটা রাস্তা প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা ধরে বিডিও অফিসের দিকে।শিল্পী ভাতার পাঁচ নম্বর আবেদনপত্র তার ঝোলায়।

চাঁদ ক্রমশ ষোলোকলা পূর্ণ করে এখন মঞ্চে গায়। তার সাথে সঙ্গত করে ছয়টি ব্যান্ডের ছেলে।

কন্ঠিবদলের মানে এখন বদলে গেছে। একে একে লোক আসে উঠোনে। বলে, গোঁসাই গান শেখাও।

মাঝরাতে বাংলা মদের আসর ছেড়ে উঠে আসে সে।স্কুলমাঠে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়,জ্যোৎস্না মেখে মৈথুন করে এক ব্রাত্যসাধক…

 

 

 

সোমপ্রভা বন্দোপাধ্যায়-এর একটি কবিতা

কুঞ্জ

স্থুল পাওনাগণ্ডার কড়ি গুনতেই
দুয়ার থেকে উল্টোদিকের পথ ধরে সাঁই

মাটির শরীরে লেগে থাকে অভিশাপ

গাভীর দৃষ্টির মতো আপাত সুন্দর হলেও
বৃদ্ধিতে জাবর কাটে দৈন্যতা

অথচ বিন বাজাতে এনেছিলাম বিষধর

আত্ম পরিধি পেরোতেই
অনায়াস খেলে বেড়ায় মায়ামৃগ

অপেক্ষায় কুঞ্জ সাজায় রাধিকা মন।।

 

 

 

 

রণজিৎ সরকার-এর চারটি লিমেরিক

খুড়োর কল

১.
খুড়ো খুড়ি রঙ মেখে রঙিন জলে টোল
খুঁড়োখুঁড়ি বক্ষ জুড়ি শোভে আনমোল
খুড়ো ডেকে কয়
কিসের এত ভয়
জগঝম্প খোল কত্তালে বাজাও দেখি ঢোল

২.
ডুগডা ডুডুক ডুডুক ডুডুক তালে
লাফায় খুড়ো পেট ভর্তি মালে
খ্যাং নানা খ্যাং
খুড়ি নাচায় ব্যাঙ
খ্যাংড়া মতি চ্যাংড়া অতি হচ্ছেটা কি বুড়োকালে

৩.
তালবেতালে কানটি খাড়া থামল কেন বাদ্যি
বুঝল কী, না বুঝল খুড়ো বোঝে কার সাধ্যি
কাতুকুতু বুড়ো
ঢং করো না খুড়ো
মালে ঝোলে ঝাল খেয়ে যাও খুড়ির কথা বাদ দি

৪.
বুড়ো বয়সে খুড়োর দোষে পেট বাধালে খুড়ি
পোড়ামুখো মিনসের মুখে জ্বেলে দিই নুড়ি
সোহাগ নাচিয়ে ধরেন
রঙ-পিচকারি ভরেন
খ্যাপা এখন হ্যাপা সামলা ককিয়ে কয় খুড়ি

 

 

 

 

কাকলি দাস ঘোষ-এর দু’টি কবিতা

নির্জন

রাতের সে কথা তোমাকে বলিনি
যে কথা সেই পাহাড়টার গায়ে লেখা ছিল।

রাত ঝিলমিল ফুল ফুটিয়েছিল …
গাছের চোখে দেখেছি
আকাশের বুকে ফুলেরা আলো হয়ে ঘুমায়।
তুমি কী জান?
আমি তো সেকথাও তোমাকে বলিনি।

পাহাড়টা এসব আগে থেকেই জানত…
শুধু পাহাড়টা এই প্রথম দেখল
একটা ফুটফুটে মেয়ে অনেক দূরে হারিয়ে যাচ্ছে…
অনেক দূরের মোমের আলোয়
পাহাড়টা অদ্ভুতভাবে সেই মুখটাই দেখতে পেল।

তোমাকে বলিনি…
যে পাহাড়টা একদিন মানুষ ভালবাসত…
আজকাল মানুষ দেখলে
নিজেকে গুটিয়ে ছোট করে নেয়।
আসলে ও মানুষ আর পশুর তফাৎ বুঝতে পারে না।

 

অন্তঃস্থল 

ছন্দ আমার স্বপ্ন খুঁজেছে
স্বপ্ন খুঁজেছে ছন্দ
আকাশ-পাখির মিলন কী জানে
কীসে ভাল কীসে মন্দ।

যেখানে গতিরা দুর্দম
আর দুর্বার ছুটে যায়
সেখানে চেয়েছি মিলন কাব্য
পাখিটির চেতনায়।।

 

 

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল-এর একটি কবিতা

উপাস্য

মন্দিরের স্থবিরতা ভেঙ্গে প্রতিদিন বেরিয়ে আসি
অজ্ঞ পূজারির মতো

স্তব্ধ হয় মৃদঙ্গ কিংবা ঘন্টাধ্বনির দুরন্ত প্রহর
উপাসনালয়ে “তিনি” বলে কেউ জেগে নেই
কাতারে কাতারে জমে আছে, নিবেদিত নষ্ট ফুল

বেরিয়ে আসি একা, দৈব অন্বেষণ…
সামনেই সোমত্ত ঈশ্বর; চক্রবর্তী স্বরূপ ঐশ্বর্য নিয়ে
তাঁর পদতলে সমর্পণ করি, আলোকবর্ষের এইসব
নোনা ধরা দিনকাল

তিনি উপাস্য ; আমি উপাসক
মেনেছি, তাঁর চিরায়ত পদধ্বনি…

দেখেছি তার পদতল বেয়ে গড়িয়ে আসা—
পূর্ণ জাহ্নবীর আশীর্বাদী জল

 

 

 

অশোক কুমার রায়-এর একটি কবিতা

মায়া সকাল

‌বিবস্ত্র ছায়ায় ছায়াপথে
উত্তেজিত পুরুষ শয়তানের অনৈতিক পাহারা।
নিত্য সতীত্ব দাহ্যে
নীল আকাশে নক্ষত্র খুঁটে খুঁটে
আঁকে খাদক শিল্পী
বিদ্রুপ কথার রুপ।
যে যোনি দিয়ে গঙ্গা প্রবাহ
পাণ করে প্রসূতির দুষিত দুগ্ধ
জেগে ওঠে অসুর রুপ।
ধর্ষিত হতে থাকে মায়া সকাল।

 

 

 

আমিনা তাবাসসুম-এর একটি কবিতা 

পাখি পড়া বসন্ত

রং নিয়ে উঠে আসি
অন্ধকার খুলে জলপাই রহস্য

যে কোনো পথের দিকে
কিংবা যে কোনো সাঁকো
চরাচর চোখের বাস্তুতন্ত্র

ভৌগোলিক দেখলে
বসন্তে একাদশী থাকতে নেই
উপপাদ্য পরিমিতি
আর যা যা মানুষ ভালোবেসেছে
অনুরাগ প্রেমবৈচিত্ত্য

অভিসারের নদীমুখ হতে
আনত মেরুদণ্ড নিয়ে
আজীবন সমর্পণ

ছোট হতে হতে
নত হতে হতে
আগুনের চিৎকার

ঝরনা, লীন তাপ
রাজা রানী হয়ে যায়

এসবই জড়িয়ে
উঠে বসে আলো
লাল-নীল বসন্তের সংসার

পলাশ ফুলের রহস্য
জাদু মাখা স্নান
আমাদের বুকের মধ্যে
খই ফোটে

কুমকুম আবিরে
ছুটে যায়
মুখোমুখি গাঙ-শালিক
বুলবুলি

 

 

 

বৃন্দাবন দাস-এর একটি কবিতা

খাঁচা

রাতের অন্ধকারে কী সাবলীল মিশে যাচ্ছে দিন

আমাদের অমাত্য নাটক নিরাপদ অরণ্য আর অনাবিল সমুদ্রের জন্যে
দুবেলায় খাঁটিয়ে নিচ্ছি চোখের সামনে নীল লাল হলুদ সামিয়ানা

জানি নির্লিপ্ত ভয় হয় না যেমন উদাসীন সঙ্গম
আরো জানি পল্লবের মতো পা হয় বলেই
পিঁপড়ের দংশনও চুম্বনের গাঢ় অভিজ্ঞতা

এখন তো নিত্যদিন সোনার খাঁচা বানানো হচ্ছে
সুখ কিনে পুষে রাখা হবে—

 

 

মমতা রায় চৌধুরী-এর একটি কবিতা 

চুপ করিয়ে রাখা যাবে না

তারপরেও কিছু বলবো
যতই বাকরুদ্ধ করার চেষ্টা করো না কেন
যতই দল ভারি করার চেষ্টা করো না কেন
আসলে তুমি ভীত তুমি ভয় পাচ্ছো
তোমার দুর্বলতাগুলো যদি ক্রমশ প্রকাশ হয়
তাইতো সব সময় ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে
চুপ করিয়ে রাখতে চাও
কিন্তু উলঙ্গ রাজার দেশে সেই ছেলেটি থেমে থাকে নি।
সেও আঙুল তুলে নির্ভীক কন্ঠে বলেছিল ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়’
যতই তোষামোদকারীরা চাটুকারেরা তোমাকে মহৎ বলার চেষ্টা করুক না কেন
আসলে তুমি দাঁড়িয়ে আছো একটা বালির বাঁধের ওপর
যেদিন মেঘ থেকে বৃষ্টি হবে
অঝোরে বৃষ্টির ধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তোমায় সব ক্ষমতা দম্ভ
তাই বলি তোমার বলার পরেও কিছু কথা থেকে যায়।
সে কথা বারুদের ঘ্রাণের মতো বুকের কাছে এসে বিঁধবে
অস্পষ্ট কুয়াশার চাঁদর সরিয়ে আসল স্বরূপ চিনিয়ে দেবে
একটুখানি সুযোগ একটুখানি সুবিধে একটুখানি আরাম পাবার জন্য যারা অন্যায়ের সাথে হাত মেলায়।
সে হাত একদিন ভেঙে যাবে।
জানি সে পথ বড় কঠিন
অন্যায়কারীরা সব থেকে বেশি দল ভারি করে।

ন্যায়ের রাস্তায় থাকে শুধু কয়েকজন
ঠিক সেই ছেলেটির মতো—
তাইতো গলা টিপে শ্বাস বন্ধ করার চেষ্টা

তারপরেও কথা থাকে
বৃষ্টি পড়বে পাখিরা আনন্দে কলতানে মাতবে
ফাটলে ফাটলে চৌচির ঊষর ভূমিও নতুন করে ফসল ফলাবে
আবারও হাতছানি দেবে দূর দিগন্ত মাঠের কচি কচি সবুজ ফসলের হাতছানি।

 

 

 

কপিল কুমার ভট্টাচার্য্য-এর একটি কবিতা 

বসন্তের রঙ

রাতের আকাশে চাঁদের মুক্ত হাসি,
বসন্ত আজ দেখে বেজায় খুশী,
কুহু তানে গেল দুঃখ-রাশি
রঙের নতুন পরশে মেতে
রয়েছে পৃথিবীবাসী।

 

 

 

 

শুভমিতা-এর একটি কবিতা

চিঠি 

আমি তোমাকে গড়ার পরে জানতে পারলাম
আমার জন্য তুমি নেশা করো,
জীবন নাকি শেষ

আর এই যে পাশে থেকে লড়াইটা করেছিলাম
কখনো বায়না করিনি কিছু
বলিনি আমার এটা লাগবে ওটা লাগবে বা সেটা
নিজেদের স্বপ্নের ঘরের দায়িত্ব যেমন তুমি নিয়েছো
তেমন আমিও
এগুলোকে কি বলবে আমার লোভ নাকি ভালোবাসা?
স্বার্থপরতা নাকি পবিত্রতা—
কি বলবে শুনি

অনেকগুলো দিন সরে গেছে আমি যে দেবতার মতো হৃদয়কে ভালোবেসেছিলাম সে হৃদয় এখন নৃশংস
যাকে ভালোবাসা যায়না

তবুও একসময়ে ভালোবাসতাম বলে
এটুকুই প্রার্থনা করবো
ভালোর বাস হোক তোমার ভিতর

 

 

 

আবদুস সালাম-এর একটি কবিতা

পূর্বরাগ

পলাশ রঙের সন্ধ্যা চুমু খায় নির্জনে
নিরুত্তাপ ফণায় জেগে উঠছে উদ্ভাস

সন্ধিতৃষ্ণা মাথা নত করে অশ্বগন্ধার কাছে
আত্মপীড়িতের বিচ্ছিন্ন লীলা ক্রমাগত মেলে পেখম
অনাবিল সুখের পূর্ব রাগে ঢলাঢলি বিখ‍্যান

আত্মপরিচয়হীন সংসারে পুঁতে দিলাম পতাকা
রঙের উৎসবে সবাই আজ মাতোয়ারা

 

 

 

মুন চক্রবর্তী-এর একটি কবিতা

ফাগুন যখন 

প্রকৃতির পরশে প্রেমাস্পদের আকুলতা
আঁচল বিছায়ে রেখছ নতূন শোভায়
শিমূল পলাশে প্রিয়াকে চিনে নেওয়া
ঝড়া পাতার হলূদ বিকেল প্রেয়সী শোভায়।
বসন্ত উৎসবে ফাগুনের অথকথা জেনেছি
বৃন্দাবনে গোপীদের অভিসারে আবিরে আবৃত
বাতাসে রাগিনীর গুঞ্জন কোকিল মধুস্বরে
ছিন্নবীনায় বেঁধে দিল স্বরগম বসন্ত সমাগমে
হলূদ শাড়িতে শাঁওতালি নাচে চুলের বাঁধনে বাহারি শোভা
বন্ধনহীন হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম আবিরের ভালোবাসা
কুড়িয়ে রেখেছি উড়ে আসা জীবন সন্ধানী
ফাগুন পরশে গৌরাঙ্গ মন, গৈরিক লালন ফকির
বেঁধে রেখেছি প্রেমের পরশ প্রকৃতির আয়োজনে।
অভিষেক বৃন্দাবনে লীলা প্রেমের স্নিগ্ধ জোছনায়
ফাগুন যখন গোপী, নুপুর ছন্দে দোলা দিয়ে যায় দোল, রং বাহারে।

 

 

 

হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়-এর একটি কবিতা 

নদী ও বসতি…

দু’দিকে বসতি
মাঝখানে কুলুকুলু স্রোত।
স্রোত হাঁটতে থাকে,
গাছে গাছে ফুল যেন আগুনের
বন্যা প্রস্তুতি।
এ সবই নিজস্ব হয় একদা
চঞ্চলমতি থিতু হয়ে এলে
থিতু হতে শেখে গর্জন।
মঞ্চে মঞ্চে জীবনের জয়গান হয়,
নিছক কর্তব্যে বদলে যায় গভীর দায়িত্ব। সামান্য দূরত্ব থেকে নদী তার পাট খোলে, আগুনের কোলাহল হয়ে যায়
তপস্যানির্ভর।
আবার বসন্ত ফেরে,শ্রাবণ ও শরৎ ফেরে,আংশিক ঝুলে থাকা ছায়াসত্তা
থেকে মরচে ঝরে যায়-

আবারও বসন্ত লেখে প্রেম-উৎসব…

 

 

 

বানীব্রত-এর একটি কবিতা 

বসন্ত পলাশ

এক মুঠো পলাশ দাও বসন্ত
প্রেয়সীর খোঁপাকে রাঙাবো
শিমুল কৃষ্ণচূড়াও তোমাকে রাঙিয়ে দিয়েছে
আবিরের আঁচল উড়ে যাবে
সোনাঝুড়ি দিয়ে অজানার দেশে
পুর্ণিমার চাঁদটা জোছনা মাখাবে
মোরান রাঙানো মেটো আল পথকে।
আম্রকুঞ্জে একতারার টুং টাং
বাউল ধরে সুর
ভালোবাসার পরশ দিলাম তোমায় বসন্ত,
পলাশ তুমি বাসন্তকে রাঙিয়ে দাও রক্তিম আভায়।

 

 

 

গোলাম কবির-এর একটি কবিতা

আতঙ্কিত ভয়াল রাতে 

আমার এখন আর কোনো দিন বলতে
কিছু নেই আছে শুধু ভয়াল আতঙ্কের রাত!
সবসময়ই একটা ভয়ে থাকি
কখন যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাই!

কী করে থাকবো মাকে ছাড়া!
মা-ই তো আমার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়!
কে চায় বলো এমন নিঃস্ব হতে!

আমার জন্য এখন দিন আর রাতের
কোনো ফারাক নেই,
যেনো সমস্ত সময় একটা
নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে থেমে গেছে!

এখন হৃদগহীনে অদৃশ্যমান শকুনেরা
ডানা মেলে ওড়াউড়ি করে সর্বদাই!

আমি শুধু ওদের হাত থেকে বাঁচতে
চাই, বাঁচার জন্য প্রাণপন প্রয়াস করি।

 

 

 

🍂ধারাবাহিক উপন্যাস | পর্ব ১৭  

 

শুরু হয়েছে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। কবি তৈমুর খানের জীবন। বাল্য-কৈশোরের দিনগুলি কেমন ভাবে কেটেছিল। মননে চেতনায় কিভাবে বয়ে গেছিল উপলব্ধির স্রোত। কেমন করে প্রকৃতি ও জীবনকে দেখতে শিখেছিলেন। কেমন করে জীবনে এলো ব্যর্থতা। সেসব নিয়েই নানা পর্ব। আজ পর্ব ১৫। 

 

 

একটি বিষণ্ণরাতের তারা

তৈমুর খান

 

সতেরো. 

পকেটের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল

তর চাচার ঘর থেকে বেরিয়ে এলোমেলো হাঁটছি। আষাঢ়ের রাত্রি শুনশান অন্ধকার। চোখের সামনে দিয়ে একটা বাছুরের মতো বড় আকৃতির প্রাণী ছুটে পালালো। কিছুদিন আগেই গ্রামে একটা গুজব রটে ছিল, নেকড়ে বাঘ নাকি দেখা গেছে। গ্রামের কারও কারও ছাগল ও গরুর বাছুর খেয়ে ফেলেছে। মানুষকেও একা পেলে তারা আক্রমণ করে এরকমই শুনেছিলাম। প্রাণীটি ছুটে পালালে আমার শরীরেরও রোম খাড়া হয়ে গেল। দ্রুত হাঁটতে লাগলাম ঘরমুখী। আমার বাড়ি থেকে আতর চাচার বাড়িটা অনেকটা দূরে। রাস্তার মাঝে একটা বড় বাঁশঝাড় ও একটা পুকুরের পাড় অতিক্রম করে আসতে হয়। সেদিন নেকড়ে দেখে হয়তো আরো ভয় পেতাম, কিন্তু ভয় পাইনি অন্য কারণে। আতর চাচা কিসমত এর মেয়ের জন্য আমার কথা নাকি বলেছিল। কিন্তু ওরা রাজি হয়নি। বলেছিল, চালচুলো নেই, শিক্ষিত হলেও ওর কী দাম আছে?

 

—-

গঙ্গার তীর থেকে ফিরতে ফিরতে অনেকটাই অন্ধকার করে ফেলেছিলাম। মনটা ভারি বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিল। পকেটের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল। মাসে দুশো টাকা খরচ হলেও সেই টাকা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পাঠাতে পারতো না। মেজো ভাইটি একটু বড় হলে গরুবাছুর চরিয়ে এবং গোবর কুড়িয়ে ঘুসি বিক্রি করে যা আয় করতো তাতেই দুশো টাকা পাঠাবার চেষ্টা করতো প্রতিমাসেই। কিন্তু সেই মাসে দুশো টাকাও আয় হয়নি।

—-

আতর চাচা ওদের বুঝিয়েছিল, তোমাদের তো অনেক জমি জায়গা আছে, সেসব দিয়ে গরিব একটা সৎ ছেলেকে কিছু ব্যবস্থা করে দিতে পারো!
ওরা বলেছিল, ওরকম গরিব অনেক আছে, ভালো না পেলে তখন চিন্তা করবো।
তাদের যে বিয়ে দেবার ইচ্ছে ছিল না তা স্পষ্ট না বললেও পরোক্ষভাবেই বলতে চেয়েছিল। তার কয়েকদিন পরেই হঠাৎ করেই আরফার বিয়ে হয়ে গেল। গ্রামের লোক কেউ জানতেই পারলো না কখন ভেতর ভেতর তারা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল। বিয়ে হলো মুর্শিদাবাদে এক লাঠিয়াল বংশে। বরের বাপ-দাদা চোদ্দ পুরুষেরা নাকি ঘোড়ার পিঠে চড়ে যুদ্ধ করেছে। সেই বংশের একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলো। যৌতুক হিসেবে কয়েক ভরি সোনার অলংকার পাতি আর একটি দামি বাইক। বাস ভর্তি বরযাত্রী এসে সারা গ্রাম হইহল্লা করে তারা জানিয়ে গেল, হ্যাঁ একখানা বিয়ে বটে। আরফার বিদায়ের সময় দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। লাল বেনারসি পরে সে যখন যাচ্ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল পেতলের তৈরি কোনো দুর্গা প্রতিমা। তার তুলনায় তার বরকে মনে হচ্ছিল একেবারে অসুর। কয়েকজন টিপ্পুনি কেটে বলেছিল, “অসুরের জয়! দুর্গাকে নিয়ে পালিয়ে গেল অসুর!”
আতর চাচা সত্যিই নিরুপায় হয়ে গিয়েছিল। তার কিছুই করার ছিল না। সেইদিনই শেষ চিঠি লিখে তার বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। ক্ষীণ স্বপ্নের আশা মনের মধ্যে জেগে উঠলেও তা অচিরেই মিলিয়ে গিয়েছিল। তাই নিজেকে সর্বহারা অসহায় লাগছিল খুব। এই অবস্থায় নেকড়ের ছুটে যাওয়া আমাকে ততটা ভীত করতে পারেনি। বাড়ি ফিরে এসে সেই রাত্রেই লম্ফুর আগুনে পূর্বের লিখে রাখা ‘আরফা, তোমাকে’ শিরোনামে আট পৃষ্ঠা আমার অনুভূতি ও স্বপ্নের কথা পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা সেদিনই প্রথম অনুভব করেছিলাম। পাটনায় গঙ্গার তীরে বসে বসে এসব কথাই ভাবছিলাম। অতীতের স্মৃতি অবশ্যই যন্ত্রণার হতে পারে, কিন্তু সেই যন্ত্রণাকে যে উপভোগ করাও যায় তা দিব্যি অনুভব করছিলাম। একটি ব্যর্থ জীবন বয়ে বেড়াচ্ছি, এই জীবনের ভবিষ্যতই বা কী এই প্রশ্ন আমাকে দিশেহারা করেছিল। তারপর মনে পড়েছিল রুমার কথাও। কোথায় তার বিয়ে হলো, কী অবস্থায় রয়েছে সে, আমার ঠিকানা পেলে সে চিঠি লিখতো কিনা আর, কিংবা এখনো পর্যন্ত বেঁচে আছে কিনা তা কিছুই জানতে পারলাম না। সব ভাবনাগুলো একে একে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলছিল। সারাদিনের ক্লান্তি মেখে সূর্য তখন অস্ত যেতে বসেছিল। লাল শান্ত রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছিল গঙ্গার জলেও। অদ্ভুত এক মায়াবী পরিবেশ মনে হচ্ছিল তখন। কয়েক জোড়া যুবক-যুবতী পরস্পরের কোল আঁকড়ে বসেছিল কাছাকাছি। কত তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, কত তাদের ভালোবাসার উজ্জ্বল স্বপ্ন—সেসব আমার ধারণার বাইরে। দু-একটা ছোটখাটো পাথর নিয়ে জলের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছিলাম। নৌকাগুলো দূরে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছিল। ওপারে শোনপুরের মেলা চলছিল তখন। কয়েকটি বাস ও ট্যাক্সি বোঝাই করে লোকজনও যাতায়াত করছিল ব্রিজের উপর দিয়ে। দূর থেকেই দেখছিলাম সে-সব।
গঙ্গার তীর থেকে কিছুটা দূরেই আমাদের থাকার জায়গা। একটাই রুম হলেও বেশ বড়সড়ো। তিনজনে একটা রুমেই থাকি। নিতাই থাকে অন্য একটা রুমে। নিজেদেরই রান্না করে খেতে হয়। যেদিন রান্না করতে পারি না, সেদিন ফুটপাতের কোনো হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসি। তবে পাটনার আবহাওয়া এতই ভালো যে, বাংলায় দুধ খেলে যে পরিমাণ উপকার পাওয়া যায়, এখানে জল পান করেও সেই পরিমাণ উপকার পাওয়া যায়। তাই মাঝে মাঝে আমরা বিহারীদের খাবারও খেয়ে ফেলি। ওরা যাকে লেট্টি, সমোসা, ছাতু, চানা বটোরা বলে থাকে সেসব অনায়াসে খেয়েও হজম করি। চা খেতে গিয়েও মহিষের দুধের চা বড় গ্লাসের এক গ্লাস। মাঝে মাঝে খোদাবক্স নামের একটি বড় লাইব্রেরি আমরা যাই। সেখানে অঢেল বইয়ের সম্ভার। দুশো আড়াইশো বছর আগেকার বইও পাওয়া যায়। তাছাড়া আমাদের নিজস্ব ডিপার্টমেন্টেরও প্রচুর বই রয়েছে। রেফারেন্স বই তুলে তুলে নিজেরাই আমাদের প্রয়োজনীয় নোটসপত্র তৈরি করতে থাকি। একদিন লাইব্রেরিতে আমি একাই আধুনিক কবিতার উপরে লেখা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বইটিতে মুখ ডুবিয়ে আছি। বইটি এতই আমাকে আকৃষ্ট করেছে যে কিছুতেই ছেড়ে উঠতে পারছি না। এমন সময় পেছন দিক দিয়ে একটি মেয়ে আলুথালু বেশে এসে দাঁড়িয়েছে,আমি কিছুই টের পাইনি। মুখ ঘুরাতেই দেখি আমাকে তীব্রভাবে নিরীক্ষণ করছে।
—কে আপনি চিনতে পারলাম না?
—আমি মানসী সেনগুপ্ত। তোমাকে তো এর আগে কখনো দেখিনি!
— আমি এসে এসেই চলে যাই, তেমন ভাবে থাকি না। আজকেই একটু বসেছি।
—এখানে বাংলা ডিপার্টমেন্টের ছাত্র বুঝি?
—হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, তাই।
—আমি দু-বছর আগেই পাশ করেছি, এখন আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্প নিয়ে পিএইচডি করছি।
—কার কাছে করছেন?
—ড. ললিতা সান্যাল এর কাছে।
—তাহলে তো ভালোই হলো, এবার থেকে দেখা হবে। আপনি থাকেন কোথায়?
—রানিবাগে থাকি। এখানকারই একটি কলেজের পার্টটাইম করি। তুমি কোন জেলার মানুষ?
— আমি তো বীরভূম থেকে এসেছি। আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
— আমার জন্ম তো পূর্ণিয়ায়। বাবা বদলির চাকরি করেন সেই চাকরি সূত্রেই এখানে।
সেদিন সেই সময়টুকু আর পড়াশোনা হয়নি। মানসীর সঙ্গেই লাইব্রেরিতে সময় কাটিয়েছিলাম। খুব কম সময়ের মধ্যেই সে আপন করে নিতে পেরেছিল। আশাপূর্ণা দেবীর ছোটগল্পে মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের নানা ইতিবৃত্ত তার কাছ থেকেই জেনে নিয়েছিলাম।
মানসী ছিল খুব সহজ সুন্দরী ও আন্তরিক। প্রথম দর্শনেই তাকে আমার জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন এর মতো মনে হয়েছিল। পাখির নীড়ের মতো তার উদাসীন চোখ দুটি কতকাল ধরে যেন কার অপেক্ষা করছিল। এলোমেলো চুলগুলি কপালের চারিদিক ঘিরে ছিল কোনো শিল্পীর আঁকা ছবির মতো। তারপর বেশ কয়েকবার তার সঙ্গে লাইব্রেরিতে দেখা হয়েছে। গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার দিন আমাদেরও সে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা যেতে পারিনি। তারপর আর এক বছর ছিলাম পাটনায়। কিন্তু সেই এক বছরে তার সঙ্গে আর একবারও দেখা হয়নি। কোথায় নাকি চাকরি পেয়ে চলে গেছিল সে। তখন আমাদের ফোন নাম্বার ছিল না। স্থায়ী কোনো ঠিকানাও ছিল না। তাই বনলতা সেনকে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখন সে কোথায় আছে তা আর জানা হয়নি।
গঙ্গার তীর থেকে ফিরতে ফিরতে অনেকটাই অন্ধকার করে ফেলেছিলাম। মনটা ভারি বিষণ্ণ হয়ে গিয়েছিল। পকেটের টাকাও প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল। মাসে দুশো টাকা খরচ হলেও সেই টাকা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পাঠাতে পারতো না। মেজো ভাইটি একটু বড় হলে গরুবাছুর চরিয়ে এবং গোবর কুড়িয়ে ঘুসি বিক্রি করে যা আয় করতো তাতেই দুশো টাকা পাঠাবার চেষ্টা করতো প্রতিমাসেই। কিন্তু সেই মাসে দুশো টাকাও আয় হয়নি। বাধ্য হয়েই চিঠি লিখেছিলাম দৌড় পত্রিকার সম্পাদক মধুমঙ্গল বিশ্বাসকে। পোস্ট কার্ড পেয়েই তিনি দুশো টাকা স্পিড পোস্টে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কেবল খাবারের খরচটুকু যোগাড়ই ছিল আমার ভাবনার বিষয়। কিন্তু পরের মাসে কী হবে?
বিশ্বময় বলেছিল, “তোর বাড়ি থেকে টাকা না এলে কী হবে, আমরাই কোনোরকম চালিয়ে নেবো!”
কিন্তু নিজের লজ্জা আর অসহায়তা আমাকে কতটা সংকুচিত করে দিয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে আমি পারিনি। শুধু মুখখানা রাঙা হয়ে উঠেছিল। মাথাটা হেঁট করে তাকিয়ে ছিলাম মাটির দিকে।… 🍁 (চলবে)

 

 

🍂ফিরেপড়া | বিতা

 

 

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর দু’টি কবিতা

এবার বসন্তে

এবার বসন্তে কিছু ফুল ছেঁড়া হল
কোকিলও ডেকেছে খুব বাঁশের খাঁচায়
এবার বসন্ত লাস্যে কিছু দিক ভুল
অন্ধকারে সমুত্থিত তৃতীয় বিষাদ।

এবার বসন্তে গান শুরু হল ঠিকই
মাঝপথে কারা যেন দুন্দুভি বাজাল
কোথাও পাথর ফেটে বেরিয়েছে জল
অনেকেই ছুটে গেল, একজন গেল না।

এবার বাতাসে ছিল কিছুটা অমিয়
একাকী আঘ্রাণ নিলে স্পষ্ট বোঝা যায়
উৎসবের রাতগুলি কে কোথায় একা
হাতে হাত ধরাধরি, সবাই অচেনা।

এবার বসন্তে ঠিক মধ্য যামিনীতে
এল এক ডাকপিওন, অন্ধ, জিভকাটা
সে বড় মজার খেলা, কত হুড়োহুড়ি
সকলেরই চিঠি আছে। কারো নাম নেই।

 

 

 

ইচ্ছে হয়

এমনভাবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নাকি
ভিড়ের মধ্যে ভিখারী হয়ে মিশে যাওয়া?
এমনভাবে ঘুরতে ঘুরতে স্বর্গ থেকে ধুলোর মর্ত্যে
মানুষ সেজে এক জীবন মানুষ নামে বেঁচে থাকা?
রূপের মধ্যে মানুষ আছে, এই জেনে কি নারীর কাছে
রঙের ধাঁধা খুঁজতে খুঁজতে টনটনায় চক্ষু-স্নায়ু।
কপালে দুই ভুরুর সন্ধি, তার ভিতরে ইচ্ছে বন্দী
আমার আয়ু, আমার ফুল ছেঁড়ার নেশা
নদীর জল সাগরে যায়, সাগর জল আকাশে মেশে
আমার খুব ইচ্ছে হয় ভালোবাসার
মুঠোয় ফেরা!

 

 

 

 

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর একটি কবিতা

ভালোবাসা কি?

যদি রূপ দেখে কাউকে ভালোবাসো— সেটা
ভালোবাসা নয়- সেটা বেছে নেওয়া
যদি কারো দেহ দেখে ভালোবাসো— সেটা
ভালোবাসা নয়— সেটা লালসা
যদি কারো টাকা দেখে ভালোবাসো— সেটা
ভালোবাসা নয়— সেটা লোভ
তাহলে ভালোবাসা কাকে বলে?
যদি কারো মন দেখে ভালোবাসো তাহলে-
সেটাই ভালোবাসা।
যদি তুমি এক নজর তাকে দেখার জন্য
ছটফট করতে থাকো তাহলে— সেটাই
ভালোবাসা।

 

 

 

 

🍂ধারাবাহিক গদ্য | পর্ব ১৬

শতাধিক নামে চণ্ডী অনার্য সমাজে পূজিত হতেন। ক্রমে আর্য সমাজে তিনি শিব বা হরগৃহিনীরূপে শিবাণী, উমা, গৌরী, তারা প্রভৃতি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। পৌরাণিক যুগে এঁর মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা অসামান্যরূপে বেড়ে যায়। দশপ্রকার শক্তির আধাররূপে তাঁর দশমহাবিদ্যার দশ মূর্তি পরিকল্পিত হয়েছে।
রেহানা বীথি-এর লেখা ‘’ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই’’ -কে নিয়ে ধারাবাহিক গদ্যের আজকে পর্ব ১৬।

 

ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই

রেহানা বীথি 

 

 

১৬.

বৈষ্ণবের মতে ভগবান রসস্বরূপঃ রসো বৈ সঃ। আবার তিনি সবার প্রিয়, বন্ধু ও আত্মা স্বরূপ। তিনি এক ছিলেন, জীবন-লীলা আস্বাদনের জন্য বহু হলেনঃ ‘একোহম বহুস্যাম’। সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি নানা লীলা-রস আস্বাদন করেছেনঃ পিতা, পুত্র, মাতা, কন্যা, ভগ্নী, জায়া, সখা প্রভৃতি রূপে তিনি প্রেম দিচ্ছেন এবং নিচ্ছেন। এ পর্যায়ে প্রফেসর হাই রবীন্দ্রনাথের উক্তি উল্লেখ করেছেনঃ

‘বন্ধু হয়ে পিতা হয়ে জননী হয়ে
আপনি তুমি ছোট হয়ে এস হৃদয়ে।’

বৈষ্ণবের দ্বাদশতত্ত্ব সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা দেখতে পাই এই গ্রন্থের ভূমিকাতে। এই দ্বাদশতত্ত্বগুলো হলঃ

১. যুগলরূপ
২. প্রকাশ ও বিলাস
৩. রসাস্বাদন
৪. পরস্পর ভজনা
৫. ভগবান ও মানুষ
৬. মানবের সাধ্যবস্তু
৭. মানবের সাধন
৮. পূর্বরাগ-অনুরাগ
৯. অভিসার
১০. বাসকসজ্জা
১১. মিলন
১২. গৌরাঙ্গ

এছাড়া বৈষ্ণব পদাবলীতে পাঁচটি রস- এর কথাও ভূমিকায় বিধৃত করেছেন প্রফেসর হাই।
সেগুলো— শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর।

মধ্যযুগের হিন্দুরচিত বাঙলা সাহিত্য মাত্রেই ধর্ম-সাহিত্য। এ যুগে ধর্মসংপৃক্ত রচনাকে বিশুদ্ধ সাহিত্য বলে না, এসব রচনা কতকাংশে সাহিত্যগুণান্বিত বলে এবং বিশুদ্ধ সাহিত্যিক রচনার অভাবে এগুলোকে সাহিত্যরূপে গ্রহণ করা হয়েছে। পদাবলীও ধর্মসংপৃক্ত রচনা। এগুলো একাধারে ধর্মশাস্ত্র, ধর্মদর্শন, সাধনসংগীত, ভজন, প্রেমগান ও গীতিকবিতা।

বাংলাদেশে বৈষ্ণব ধর্ম তত প্রসার লাভ না করলেও, বৈষ্ণব সাহিত্য একসময় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মনে রসের তরঙ্গ তুলেছিল। বাংলার গীতিকবিতা রচনা এবং অলঙ্কার ও দর্শনশাস্ত্রের আলোচনার সুত্রপাত বৈষ্ণবরাই করেন। চণ্ডীদাসের একটি পদ এখানে উল্লেখ করা হলঃ

‘এই ভয় উঠে মনে এই ভয় উঠে।
না জানি কানুর প্রেম তিলে জনি টুটে।।
গড়ন ভাঙ্গিতে সই আছে কত খল।
ভাঙ্গিয়া গড়িতে পারে সে বড় বিরল।।
যথা তথা যাই আমি যত দূর পাই।
চাঁদ-মুখের মধুর হাসে তিলেকে জুড়াই।।
সে হেন বন্ধুরে মোর যে জন ভাঙ্গায়।
হাম নারী অবলার বধ লাগে তায়।।
চণ্ডীদাস কহে রাই ভাবিছ অনেক।
তোমার পিরীতি বিনে সে জীয়ে তিলেক।।’

শাক্ত পদাবলী

প্রাচীন অনার্য নারী দেবতা চণ্ডী। ইনি শক্তিরূপিনী। শতাধিক নামে চণ্ডী অনার্য সমাজে পূজিত হতেন। ক্রমে আর্য সমাজে তিনি শিব বা হরগৃহিনীরূপে শিবাণী, উমা, গৌরী, তারা প্রভৃতি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। পৌরাণিক যুগে এঁর মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠা অসামান্যরূপে বেড়ে যায়। দশপ্রকার শক্তির আধাররূপে তাঁর দশমহাবিদ্যার দশ মূর্তি পরিকল্পিত হয়েছে। এই দশ মূর্তি হল— কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী ও কমলা। শিব-শবাণী অর্থে চণ্ডচণ্ডী নামের মধ্যেই তাঁদেরকে প্রচণ্ড শক্তির আধাররূপে স্বীকার করা হয়েছে। একসময় ব্রাহ্মণ্য দর্শনে শিব আশুতোষ ও ভোলানাথ নামে যোগী-তপস্বী হিসেবে নির্গুণশক্তি স্বয়ম্ভূরূপে বিশেষ প্রতিষ্ঠা পান। আর চণ্ডী কালো বলে কালিকা, কালি বা শ্যামা নামে শক্তিদেবতা রূপে পূজিতা হতে থাকেন। সম্ভবত বৌদ্ধ প্রভাবের পরে পরে তাঁর উগ্র-রৌদ্ররূপ কমনীয় করুনাময়ী রূপে পরিণত হয়। তখন তিনি অন্নপূর্ণা, কমলা ও দুর্গারূপে বাঙলা দেশে পূজিতা হতে থাকেন। দুর্গারূপে দশদিক রক্ষার প্রতীক দশপ্রহরধারিনী হিসেবে তাঁর দশভুজা মূর্তি পরিকল্পিত হয়। দুর্গারূপে তিনি শ্যামা নন, গৌরী বা উমা। অনার্য প্রভাবে এককালে তিন অনার্য দেবতা— বিষ্ণু, শিব ও কালী (চণ্ডী) সর্বভারতীক দেবতারূপে পূজিত হন। ফলে ব্রাহ্মণ্য সমাজ বৈষ্ণব, শৈব ও শাক্ত সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিষ্ণু অবতার কৃষ্ণের রাধা- প্রণয়লীলাকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠে বাঙলার বৈষ্ণব মত। বৈষ্ণব প্রেমবাদের প্রভাবে বাৎসল্যসাশ্রিত শাক্ত মত তথা সন্তান-বৎসলা জননীরূপণী শ্যামা-ভক্তিবাদ বাঙলা দেশে আঠার শতক থেকে প্রসার লাভ করতে থাকে। এ মতের আদি সাহিত্যিক উদগাতা সম্ভবত ভক্ত কবি রামপ্রসাদ সেন (১৭২৩-৭৫ খৃঃ) । পূর্ববাঙলায়ও একজন শাক্ত কবি রামপ্রসাদ ছিলেন। তিনি বোধহয় রামপ্রসাদ সেনের উত্তর সাধক।

এভাবে চণ্ডীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক চণ্ডীমঙ্গল, কালিকা মাহাত্ম্যসূচক কালিকামঙ্গল গৌরী পরিচায়ক সারদামঙ্গল, দুর্গা মহিমাজ্ঞাপক দুর্গামঙ্গল এবং মাতৃরূপিণী শ্যামার স্তুতির জন্য শ্যামসংগীত রচিত হয়েছে। এবং এই শ্যামাসংগীতকেই বলা হয় শাক্ত পদাবলী। গৌরী, উমা, দুর্গা ও কালী — এই চার স্বরূপে তাঁর মহিমা বর্ণিত হয়েছে। বৈষ্ণব পদাবলীতে যেমন মধুর রসের প্রাধাণ্য, এখানে তেমনি মান-অভিমানের সুরই প্রবল। রকমপ্রসাদ সেন, গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ, ভারতচন্দ্র রায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়, মুক্তারাম সেন, রাজা শিবচন্দ্র রায়, শম্ভুচন্দ্র রায় প্রভৃতি কবি সহ আঠার শতক থেকে মুসলমান কবি আলি রেজা, আকবর আলী, মির্জা হোসেন আলী, কাজী নজরুল ইসলাম এঁরাও শাক্তপদ রচনা করেছেন। এখানে রামপ্রসাদ সেনের একটি শাক্তপদ উল্লেখ করা হল—

‘ওহে প্রাণনাথ গিরিবর হে, ভয়ে তনু কাঁপিছে আমার।
কি শুনি দারুণ কথা, দিবসে আঁধার।।
বিছায়ে বাঘের ছাল, দ্বারে বসে মহাকাল।
বেরোও গণেশ মাতা, ডাকে বার বার।।
তব দেহ হে পাষাণ, এ দেহে পাষাণ-প্রাণ।
এই হেতু এতক্ষণ না হ’ল দিদার।।
তনয়া পরের ধন বুঝিয়া না বুঝে মন।
হায় হায়, একি বিড়ম্বনা বিধাতার।।
প্রসাদের এই বাণী, হিমগিরি রাজরাণী।
প্রভাতে চকোরী যেমন, নিরাশা সুধার।।’

🍁(চলবে)

 

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি।) গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

 

বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment