



🍂সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে…
পৃথিবী সবুজ হোক
🍂মহামিলনের কথা
শ্রীশ্রীগুরবে নমঃ
নামই পরমতীর্থ,পৃথিবীতে যত তীর্থ আছে—নামই সকলের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তীর্থ। একমাত্র নাম অবলম্বন করলে মানুষ সমস্ত তীর্থস্নানের ফল লাভ করে। নামই সত্য, ক্ষমা, দয়া, দম, দান, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, সরলতা,
সন্তোষ, ব্রহ্মচর্য্য, মিষ্টবাক্য, জ্ঞান, ধৈর্য্য, পুণ্য, মনঃশুদ্ধিরূপ মানসিক তীর্থ— নামই পুণ্যপ্রদ ক্ষেত্রসকল। নামই পরম দৈব,পরম ভাগ্য।

নাম আশ্রয় যে করে, তার আর প্রারব্ধ থাকে না; নাম তাঁর নূতন জীবন দান করেন। নাম তাঁকে নামময় করে নিয়ে প্রাকৃত সম্বন্ধ হতে মুক্ত করে দিয়ে অপ্রাকৃত করে দেন। যতপ্রকার তপস্যা আছে, শারীর, বাচিক, মানস, কায়শোষণ অনশন— নামই সকল তপস্যার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তপস্যা। যা লাভ করবার জন্য মানুষ তপস্যা করে,নামই সে লভ্য বস্তু; নামই সেই বাঞ্ছিত,চির অভিলষিত কৌস্তুভমণি। নাম পাওয়া আর আমাকে পাওয়া এক কথা।
হে প্রিয়তম নাথ! তোমার চরণে কোটি কোটি প্রণাম। মরি মরি,নামের কি অপূর্ব্ব মহিমা!
🍁ঋণ : শ্রীশ্রীনামামৃত লহরী ★ শ্রীওঙ্কারনাথ রচনাবলী
🍂বিশেষ গদ্য
মায়ের দেবীরূপ দর্শনের দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী ছিলেন তাঁরই কৃপাধন্য অনেক ভক্ত ও দীক্ষিত সন্তান। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাধু ও গৃহী।
আলতা পরা অপরূপ দুটি চরণ
শ্রীমণীন্দ্র কুমার সরকার
স্বামী মহেশ্বরানন্দ মহারাজ লিখেছেন— ‘মা তো এলেন ভাইঝি রাধুকে নিয়ে। আমি এলাম ওঁদের সঙ্গে। বাঁকুড়া মঠে তখন ঘর-বাড়ি বিশেষ হয়নি। বাইরের লোককে, বিশেষ করে মেয়েদের থাকতে দেবার মতো জায়গা মোঠে ছিল না। তাই ফিডার রোডে একখানি ছোট ঘর ভাড়া নেওয়া হলো। সেখানেই মায়ের ভাইঝির চিকিৎসা হতে লাগল। ঘরে মাত্র দুটি কামরা। একটিতে রাধু আর অপরটিতে মা এবং আমি।
মায়ের ভাইঝি রাধু একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিল। মা তাকে নিয়ে এসেছিলেন বাঁকুড়ায়, সেখানকার মঠাধ্যক্ষ ছিলেন চিকিৎসক স্বামী মহেশ্বরানন্দ মহারাজ, যিনি অপ্রত্যাশিতভাবে মায়ের দেবীরূপ প্রত্যক্ষ করে আপ্লুত হয়েছিলেন।
সেদিন সন্ধ্যার পর ডাক্তার মহারাজ রুগি দেখে ফিরে গেছেন। আমাদের কামরায় একটি ছোট টুল ছিল; মা তার ওপর বসে আছেন। আমার কি মনে হলো, মায়ের দুটি পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। শুষ্ক দুখানি পা। মায়ের শরীর তখন জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। পায়ে হাত বুলাতে বুলাতে হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগল— ‘মা কি সত্যিই জগজ্জননী’?
জগজ্জননীর এমনই শিরা বের করা পা? প্রশ্নটি মনে উদয় হলেও মুখে কিছু বললাম না। পায়ে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে অনুভব করতে লাগলাম, এতো একজন বৃদ্ধার শীর্ণ পা নয়, এক যুবতী নারীর সুপুষ্ট পা।
কাছেই একটি হ্যারিকেন জ্বলছিল; তার আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম, আলতা পরা অপরূপ দুটি চরণ। ঘন সন্নিবিষ্ট অঙ্গুলিতে অর্ধচন্দ্রের মতো পদনখের শোভা। দুই চরণে সোনার নূপুর-নূপুরে নানা ধরণের মণি-মুক্ত। এ কার পদসেবা করছি আমি।
মায়ের দেবীরূপ দর্শনের দুর্লভ সৌভাগ্যের অধিকারী ছিলেন তাঁরই কৃপাধন্য অনেক ভক্ত ও দীক্ষিত সন্তান। এঁদের মধ্যে রয়েছেন সাধু ও গৃহী। তাঁদের দর্শনের কথা প্রকাশিত হয়েছে মায়ের লীলাবিষয়ক বিবিধ রচনায়।
শরীর ভাল যাচ্ছে না মায়ের। তিনি বলছেন— এসেছ মা, বোসো। শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। শরৎ, গোলাপ, যোগীন, সরলা সবাই ব্যাতিব্যস্ত আমাকে নিয়ে, আমার নিজেরই লজ্জা লাগে। ‘তবে কি জান মা, দেহধারণ করলে দেহের ভোগ তো করতেই হবে’।🍁
🍂ফিরেপড়া | কবিতা
প্রেমেন্দ্র মিত্র-এর একটি কবিতা
ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে
ঝড় যেমন করে জানে অরণ্যকে
তেমনি করে তোমায় আমি জানি,
দুরন্ত নদীর ধারা যেমন করে দেখে
আকাশের তারা
-সেই আমার দেখা।
স্থির আমি হই না
আমার জন্যে নয় প্রশান্তির পরিচয়।
কেমন করে আমি বোঝাই আমার ব্যাকুলতা!
বাতি দিয়ে কি হয় বিদ্যুতের ব্যাখ্যা?
সাগরের অর্থ মেলে সরোবরে?
একটা মানে আছে পালিত পশুর চোখে
আর একটা মানে বন্য শ্বাপদের বুকে;
বৃথাই দুইয়ের মাঝে মিল খোঁজা
আমি থাকি আমার উদ্দামতায়;
চেও না আমায় বশ করতে;
সহজ করতে।
কে জানে হয়তো আমার জানাই
সত্যকারের জানা।
দুলে না উঠলে বুঝি আকাশের
মানে হয় না,
পৃথিবীকে নাড়া দিয়ে সত্য করতে হয়
তুমি আমার আকাশ
-আমার দুরন্ত স্রোতে কম্পমান
তোমার পরিচয়!
তুমি আমার অরণ্য!
আমার ঝঞ্ঝাবেগের
প্রশ্রয় ও প্রতিবিম্ব।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর একটি কবিতা
তুমি তো কাঁদো না
কী আশ্চর্য
কখনই তুমি তো কাঁদো না
পুঁটুলি পাকিয়ে রেখে গেছ
এ-বাড়ির আনাচে-কানাচে
যে মনোবেদনা
পুড়ে যাচ্ছি আমি তার আঁচে
এ একরকম ভালো
শুনতে পাই না কানে
কে কী বলল, কে কেন চাইছে বেশি আরও
থাকতে হয় না সাতেপাঁচে কারও
গলিতে তোমার ছোট্ট এক চিলতে বাগানে
লঙ্কাগাছে ফুল ধরেছে সবে
তুমি আসছ কবে
ছেঁড়া সেলাইয়ের ছুঁচে
ভাঙা জোড়া দেওয়ার আঠায়
তুমি আছ
ছুঁলেই টের পাই
লাঠি হাতে উঠে
এ-ঘর ও-ঘর করি খোঁড়াতে খোঁড়াতে
কখনও সাক্ষাতে
বলি নি লজ্জার মাথা খেয়ে মুখ ফুটে
তবু খুব জানতে ইচ্ছে করে
কখনও না-কেঁদে
সমস্ত বর্ষার জল কেন তুমি হাসিমুখে
তুলে নাও দু-চোখের কোলে-
একদিন বাঁধ ভেঙে দিয়ে
আমাকে ভাসিয়ে দেবে ব’লে?
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-এর একটি কবিতা
মন, তুমি
মন, তুমি কোন দিকে চেয়ো না, চেয়ো না…
অনেক ঠকেছ তুমি, তবু সাবধানে
পারো না থাকতে! নীল নয়নের টানে
শুধুই তো সুধা নেই, কিছু নীল বিষ
রয়েছে লুকোনো। মন, এখানে-ওখানে
যা-কিছু সোনালি দ্যাখো তা-ই নয় সোনা,
খানিকটা সোনা তার, খানিক পালিশ।
মন, তুমি কোন দিকে চেয়ো না, চেয়ো না।
মন তুমি কোন দিকে যেয়ো না, যেয়ো না।
কোথায় সোনার দ্বীপ! ঢেউ ভেঙ্গে পড়ে
চারদিকে শুধু ; মন, এই জল ঝড়ে
পথের প্রখর নেশা হারিয়ে গেলেই
নিবু-নিবু আলো লেগে ঢেউয়ের শিখরে
যে সোনা ঠিকরে ওঠে তা-ই খাঁটি সোনা,
তা ছাড়া কোথাও কিছু নেই, কিছু নেই।
মন, তুমি কোন দিকে যেয়ো না যেয়ো না।
পূর্ণেন্দু পত্রী-এর একটি কবিতা
দৈবক্রমেই তোমার সঙ্গে দেখা
দৈবক্রমেই তোমার সঙ্গে দেখা
তখন তুমি সাঁকোর পরে একা
মড়মড়িয়ে ভাঙছে তখন সাঁকো,
সাঁকোর নীচে খরস্রোতা বান
বাঁধ ভেঙেছে নগর ছত্রখান
চেঁচিয়ে বলি, বাঁচতে হলে বাঁকো।
তখন তুমি নিজের দিকে ঝুঁকে
গোপন কিছু লুকিয়ে নিলে বুকে
শুধিয়েছিলে, তুমি কোথায় থাকো?
আমি থাকি বজ্রে, বন্যা-জলে
যেসব ব্যথা অন্ধকারে জ্বলে,
বাঁচতে হলে আমার সঙ্গে বাঁকো।
দৈবক্রমেই তোমার সঙ্গে দেখা
তুমি তখন মৃত্যুকালীন একা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর দু’টি কবিতা

যে আগুন দেখা যায় না
যে আগুন দেখা যায় না সে পোড়ায় বেশি
অণু-পরমাণু ঘিরে ধিকিধিকি জ্বলে
এ যেন তুলোর রাশি বাতাসের উৎসাহ জেনেছে
বৃষ্টি বা নদীও জানে।
তারা সসম্মানে সরে যায়
যে আগুন দেখা যায় না সে পোড়ায় বেশি
জ্বলে তো জ্বলুক, পুড়িয়ে ঝুড়িয়ে সব ছাই করে দিক!

তুমি যেখানেই যাও
তুমি যেখানেই যাও
আমি সঙ্গে আছি
মন্দিরের পাশে তুমি শোনোনি নিঃশ্বাস?
লঘু মরালীর মতো হাওয়া উড়ে যায়
জ্যোৎস্না রাতে
নক্ষত্রেরা স্থান বদলায়
ভ্রমণকারিণী হয়ে তুমি গেলে কার্শিয়াং
অন্য এক পদশব্দ
পেছনে শোনোনি?
তোমার গালের পাশে ফুঁ দিয়ে কে সরিয়েছে চূর্ণ অলক?
তুমি সাহসিনী,
তুমি সব জানলা খুলে রাখো
মধ্যরাত্রে দর্পণের সামনে তুমি—
এক হাতে চিরুনি
রাত্রিবাস পরা এক স্থির চিত্র
যে-রকম বতিচেল্লি এঁকেছেন;
ঝিল্লির আড়াল থেকে
আমি দেখি
তোমার সুঠাম তনু
ওষ্ঠের উদাস-লেখা
স্তনদ্বয়ে ক্ষীণ ওঠা নামা
ভিখারী বা চোর কিংবা প্রেত নয়
সারা রাত
আমি থাকি তোমার প্রহরী।
তোমাকে যখন দেখি, তার চেয়ে বেশি দেখি যখন দেখি না
শুকনো ফুলের মালা যে-রকম বলে দেয়
সে এসেছে
চড়ুই পাখিরা জানে
আমি কার প্রতীক্ষায় বসে আছি
এলাচের দানা জানে
কার ঠোঁট গন্ধময় হবে…
তুমি ব্যস্ত, তুমি একা, তুমি অন্তরাল ভালোবাসো
সন্ন্যাসীর মতো হাহাকার করে উঠি
দেখা দাও, দেখা দাও
পরমুহূর্তেই ফের চোখ মুছি,
হেসে বলি,
তুমি যেখানেই যাও, আমি সঙ্গে আছি।
🍂ধারাবাহিক উপন্যাস | পর্ব ২৫
শুরু হয়েছে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। কবি তৈমুর খানের জীবন। বাল্য-কৈশোরের দিনগুলি কেমন ভাবে কেটেছিল। মননে চেতনায় কিভাবে বয়ে গেছিল উপলব্ধির স্রোত। কেমন করে প্রকৃতি ও জীবনকে দেখতে শিখেছিলেন। কেমন করে জীবনে এলো ব্যর্থতা। সেসব নিয়েই নানা পর্ব।
একটি বিষণ্ণরাতের তারা
তৈমুর খান
পঁচিশ.
নৌকাটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে
কলেজের অংশকালীন অধ্যাপক হয়েও খাতা দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। প্রচুর পরীক্ষার খাতা দেখে কিছু বাড়তি ইনকাম করার জন্য পরিশ্রমও করতে হয়। এমন এমন সময় আসে প্রধান পরীক্ষকের বাড়িতেই দুই-তিন দিন ধরে খাতা দেখেই সময় কাটে। এত দ্রুত খাতা দেখতে হয় যে অনেক সময়ই কেবল লেখার পরিসর বা পরিমাণ আন্দাজ করেই নাম্বার বসাতে হয়। খাতা দেখতে-দেখতেই পরিচয় হয় মৌমিতার সঙ্গে। সেও আমার মতোই অংশকালীন অধ্যাপিকা। সুন্দরী, পিতা-মাতার একমাত্র কন্যা। তার কাছেই শুনি বিগত জীবনের অনেক অভিজ্ঞতার কথা। বি-এড ট্রেনিং করতে গিয়েই সে প্রেমে পড়ে এক যুবকের। প্রেমে এতটাই অন্ধ হয়েছিল যে ছুটি থাকলেও বাড়ি ফিরত না। প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যেত। স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে অনেক হোটেলে রাতও কাটিয়েছে। কিন্তু সেই প্রেমিক চাকরি পেয়ে অন্য আ’রেকজনকে বিয়ে করে তার সঙ্গে আর সম্পর্কই রাখেনি। মৌমিতা সেসব অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদে ফেলেছে। তাহলে প্রেম কি ভুল?
মৌমিতা বলেছে, প্রেম বলে পৃথিবীতে কিছুই নেই, সবই শারীরিক চাহিদা থেকেই সৃষ্টি হয়। মানুষ বড়ই স্বার্থপর। তার স্বার্থ চরিতার্থ হলেই আর কোনও সম্পর্কই থাকে না।
—তাহলে কি শুধু শরীর পাওয়াটুকুই তার স্বার্থ ছিল?
—একেবারেই তাই। উন্মাদের মতো সে শরীর ভোগ করেছে। আমি তাকে মনে মনে স্বামী হিসেবেই সবকিছু সমর্পণ করেছি। সমর্পণ না করলে হয়ত এখনও পর্যন্ত সে আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়াত। কিন্তু সব যখন পেয়ে গেল, তখন আর সম্পর্ক রেখে কী লাভ?
—তাহলে তুমি কি আর প্রেম করবে না?
— সেই প্রথম আবেগ যখন নিঃশেষ হয়ে গেছে, তখন তাকে আর নতুন করে জাগানো যায় না। এখন শুধু শরীর, কিসের প্রেম?
—কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে হয় প্রেম করার। সারাজীবন প্রেমে পড়েছি, আবার প্রেম থেকে ফিরে এসেছি নিজের অবস্থানের কথা ভেবে। কোনও প্রেমকেই সার্থক করে তুলতে পারিনি।
—যাদের হৃদয়ে সামান্যতম বিবেক আছে তারাই বিবেকের দংশন উপলব্ধি করে। অন্যকে কষ্ট দেওয়ার মতো পথে তারা হাঁটতে পারে না। তাই প্রেম থেকে ফিরে আসা ভালো, কিন্তু প্রেমকে কলঙ্কিত করা ভালো নয়।
—হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ, প্রেমকে কলঙ্কিত করা এবং মানুষকে ঠকানো এক ধরনের জালিয়াতি। মন নিয়ে যারা কারবার করে, তাদের এই সূক্ষ্ম বিবেকবোধ কখনওই তাকে সে পথে যেতে দেয় না। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
—আচ্ছা তুমি তো জানো, নারীরা একবার শরীর দিলে কি সত্যিই তারা নষ্ট হয়ে যায়? এক্ষেত্রে পুরুষরা কি হয় না?
—নারীরা নষ্ট হয়ে যায় এটা পুরুষদের দেওয়া ধারণা। শরীর দিলেই যে নষ্ট হয়ে যাবে, তার পবিত্রতা রইল না এমন ধারণা আমি পোষণ করি না। যদি নারীরা নষ্ট হয় তাহলে পুরুষরাও হবে। বেশ্যা শব্দটা শুধু নারীদের জন্যই সৃষ্টি হবে কেন?
ক্লান্ত জীর্ণ অসহায় নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। সেদিন সারারাত অনেক সুন্দরী পরীদের সঙ্গে বহুদূর মহাকাশ পরিভ্রমণ করলাম। যেতে যেতে দেখতে পেলাম এমন একটা বাগান যেখানে বয়ে চলেছে দুধের নদী। নদীতে ছোট ছোট তরণী ভাসছে। সুন্দরী মেয়েরা কোলাহল করছে। আমি একটা তরণীতে একজন সুন্দরীর সঙ্গে ভেসে চলেছি।
নয়ের দশকে একথা মৌমিতা যখন আমাকে বলছে তখনও তসলিমা নাসরিন ‘নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য’ বইটি লেখেননি। আমাদের সমাজ পুরুষশাসিত সমাজ—মৌমিতাও সেটা ভালো করেই বোঝে। তাই পুরুষেরা নিজেদের স্বার্থেই নারীদের ব্যবহার করে এবং সমাজের অনুশাসন তৈরি করে। বেশ্যা শব্দটা তাদেরই দেওয়া। মৌমিতা প্রেমে ব্যর্থ হয়েও অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং যথেষ্ট সাহসী হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে খোলামেলা সব কথা আলোচনা করাও সহজ হয়ে গেছে। খাতা দেখতে দেখতেই মাঝে মাঝে চা খেতে বেরোই। প্রধান পরীক্ষকও আমাদের একবার টিফিনের ব্যবস্থা করেন। টিফিন খেতে খেতেই চলতে থাকে নানা রকম হাসি-ঠাট্টা। মৌমিতার তলপেটটা মাছের মতোই বেরিয়ে পড়ে, উজ্জ্বল চকচকে তার গঠন। বুকের অবাধ্য দুটি চূড়া আর উদ্ধত হয়ে থাকতে পারে না মাথা নুইয়ে ঝুলে পড়ে। মৌমিতা ইচ্ছা করেই সেগুলো আর ঢেকেও রাখে না। যেন বহু ব্যবহৃত পর্বতারোহীর যাত্রাপথের সংকেত দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এখন তাই তারা বিশ্রামে থাকতে চায়। দু’জনে বাসে উঠে বাড়ি ফিরতে ফিরতে পাশাপাশি সিটও পেয়ে যাই। মৌমিতার শরীরের সঙ্গে শরীরের ঘর্ষণও শুরু হয়। তার ফলে শরীরের তাপও অনুভূত হতে থাকে। ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে একটা গভীর চুম্বনের স্বাদ নিতে। কিন্তু এরকম নিষিদ্ধ ইচ্ছাকেও দমন করি। এক সময় বাস থেকে নেমে যাই। মৌমিতাকে আরও অনেকগুলো স্টপেজ ডিঙিয়ে যেতে হবে। ততক্ষণে আমি পৌঁছে যাব বাড়ি।
কলেজে পড়ানোর মধ্য দিয়ে একটা জিনিস উপলব্ধি করেছি, ক্লাসে গেলে প্রতিদিনই মনে হয় ফুলের বাগানে এসেছি। কত সব রঙিন ফুল বাগান ঘিরে আছে। তাদের সৌরভ, গুঞ্জন ও রংয়ের বাহার দেখে চোখ জুড়াতে জুড়াতে মনও ভ্রমর হয়ে যায়। কোনও এক অলৌকিক শক্তি মনের মধ্যে ভর করে। ‘মেঘনাদবধ’ পড়াতে পড়াতে পৃথিবীর সমস্ত মহাকাব্যের মধ্যেই বিচরণ করতে ভালো লাগে। এমনকী দান্তে, বায়রন, কিটস, শেলিও চলে আসে। যেন এক মহাসমুদ্রে সাঁতার কেটে চলেছি। মৌমিতা পড়ায় নাটক ও ছোটগল্প। তবু কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমাকেও আবার সেগুলো পুনর্পাঠ করাতে হয়। এভাবেই কাটতে থাকে কলেজের চাকরি জীবন। যে জীবনের সামাজিক মূল্য কিছুই নেই। কেননা অংশকালীন কোনও অধ্যাপকের সঙ্গে কোনও শিক্ষিত মেয়ের বাপ তার মেয়েকেও তুলে দিতে চান না। মুখের উপর বলে দেন “ওরকম অধ্যাপক আজকাল অনেক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওদের থেকে বেশি রোজগেরে চা-দোকানদার অনেক ভালো।”
সারাদিন খাওয়া-দাওয়া করিয়ে, মেয়ে দেখিয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করে সম্মতি জানার পর বাড়ি ফেরার সময় যখন মেয়ের বাপ ঘিরে দাঁড়াল তখন বুঝতে পারলাম, এদের অন্য কোনও প্ল্যান রয়েছে।
আর সত্যিই সেই প্ল্যান উদ্ঘাটঠিত হল।
এক সহপাঠী বন্ধুর পরামর্শেই তার আত্মীয়ের বাড়ি মেয়ে দেখতে গেছি। মেয়ে শ্যামবর্ণা, আহামরি রূপবতীও নয়। গ্রামে মাটির বাড়িতেই থাকে। ধান সেদ্ধ করে ধান শুকিয়ে ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে চালও বের করতে পারে। মুরগি-হাঁস পোষে। খেজুর পাতা দিয়ে তালাইও বোনে। সুচ-সুতো দিয়ে কাপড়ে ফোড় তুলে কাঁথাও সেলাই করে। হ্যাঁ, এরকম মেয়ে হলেই চলবে। পণ কিছুই লাগবে না। কিন্তু মেয়ের বাপের সাফ কথা: “কলেজের পার্ট টাইম! ভিখারির থেকেও আয় কম! মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে জলে ফেলা!”
সব শুনেটুনে বাড়িমুখী হয়ে যাই। দুই চোখ ভ’রে কান্না আসে। অভিমানে ফুঁসতে থাকি। না, আর বিয়ে করব না।
আবার অনেকদিন পর মদ পান করলাম। এক ছাত্র মিলিটারি। ছুটিতে বাড়ি এসেছে। সঙ্গে এনেছে বেশ ক’য়েকটি বোতল। তার কাছ থেকেই পেয়েছিলাম এক বোতল। ক্লান্ত জীর্ণ অসহায় নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না। সেদিন সারারাত অনেক সুন্দরী পরীদের সঙ্গে বহুদূর মহাকাশ পরিভ্রমণ করলাম। যেতে যেতে দেখতে পেলাম এমন একটা বাগান যেখানে বয়ে চলেছে দুধের নদী। নদীতে ছোট ছোট তরণী ভাসছে। সুন্দরী মেয়েরা কোলাহল করছে। আমি একটা তরণীতে একজন সুন্দরীর সঙ্গে ভেসে চলেছি। আমাকে বলছে:
—তুমি তো এই পথে আসো না! আজ কী মনে করে এলে?
—পৃথিবীতে কোনও উপযুক্ত মেয়ে নেই। যারা আছে তারা সবাই লোভী, ঠক, স্বার্থপর। কেউ ভালবাসতে জানে না।
—তাহলে আমাদের কথা তো ভাবলে না তখন!
—কে তুমি? তোমার কথা তো মনে পড়ছে না!
—তা আর মনে পড়বে কেন? কতদিন তোমার জন্যই কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে গেছি। আর অপেক্ষা করছি শুধু!
—সত্যিই এরকম তুমি! দেখাও তোমার মুখটা!
—না, আমি মুখ দেখাতে চাই না! সেদিন অমন করেই তোমাকে ডেকেছিলাম তুমি আসোনি।
—তাহলে তুমি কি আমার পরিচিত?
পরিচিত হয়েই বা লাভ কী? আমি চিরদিন অপরিচিতই থেকে গেলাম! তুমিতো ভালো করে চিনতেও চাইলে না!
দু’টি হাত দিয়ে নৌকার ওই তরুণীকে জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছি, কিন্তু হাত কিছুতেই উঠছে না। মুখ ঘুরিয়ে তার মুখ দেখতে যাচ্ছি, কিন্তু কিছুতেই মুখ ঘুরাতে পারছি না। নদীর দুই তীরে অনেক গাছ। অনেক পাখির ভিড়। সূর্য উঠছে না ডুবছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনোরম এক স্নিগ্ধতায় ঢাকা আছে সময়টুকু। নিজেকে খুব আরামবোধ হচ্ছে। ভেসে যেতে যেতেই জোর করে বলছি: “দেখাও না তোমার মুখ একবার! শুধু একবার দেখতে চাই!”
কিন্তু কোথা থেকে একটা গোলমালের শব্দ। নৌকাটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কোথায় যাচ্ছি?
তরুণী উত্তর দিচ্ছে না। আমি হাত-পা ছুঁড়ে জলে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছি তখন। আর পা গিয়ে পড়ল চৌকির কিনারায়। চেতনা ফিরে এল ঘুম ভেঙেই। অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকলাম। তাহলে এসব ঘটনা কি মদ পান করার ফল? মেয়েটি কে ছিল রুমা না আরফা? পিংকু না বিনীতা? মৃদুলা না ঊর্মি? ভাবতে ভাবতে অনেকগুলো মুখ চোখের সামনে এসে স্পষ্ট হতে লাগল। আমি ঠিক আন্দাজ করতে পারলাম না।🍁(চলবে)
🍂কবিতা
স্বপন কুমার দত্ত-এর তিনটি কবিতা
আমি অত সব জানি না
পুরুষ, কৃষি, রান্নাঘর, ঔষধ চুরি
আমি অত সব জানি না।
সংসার গল্প, বাজার… সামনে অস্থির
পড়তে থাকতে দেখলেও হাত বাড়িয়ে ধরা
অত সব পারি না
সবাই বলে, পাগল গারদে অথবা বিয়ে
ভাবতে গিয়েও গা শিউরে উঠছে
ব্যাণ্ডেজ় বাঁধতেই পারি না
কোথায় সমাজ বাদ্যি পাগলা গারদে
কীভাবে এই বিশ্ব অন্ধকার চপলতা থেকে
বাসস্টপে তো অসংখ্য অপেক্ষা
সব সেরাদের অপেক্ষার ছন্দ দেখে
ওরা চিনে নেয়— ওরা মানে ওরা—
অত সব জানি না
বাসের টিকিট হাতুড়ি স্বচ্ছন্দে
স্মৃতি ছাঁটা হয়ে যায়
কী ব্যাপার— তুই কে, কে আনল তোকে
অত সব জানি না
নিজেকে-নিজেকেই খুঁজছিলাম আমি আমাতে
মানে এই চাদ্দিকের মতো নয়
অন্য রকম পাহাড়ে
দ্রুত নিঃশ্বাসগুলো এক লহমায় দ্রুতিময় নিঃশ্বাস
তা ওখানে যেতে চাইছিসটা কেন
তোকে কী কেউ ফুসলাচ্ছে
তুই কী কিছু ভয়ঙ্কর শব্দ, সাত-সতেরো লুট করা
মুখে হাত চাপা— ভয়ঙ্কর হন্যে হয়ে
তোলপাড় কণ্ঠ ডুবে গেল
অত সব জানি না
এই সময়ের বাইরে আমায় একটা অন্য সময়
যা-হোক ময়লা, অনেক অনেক ধাতু লাগা আন্ডারওয়্যার
হোক— হোক— নিদারুণ, গোপন, রঙিন, ভয়াবহ, টুকরো-টুকরো—
হাতধরা ধরি, মুখোমুখি—
একটা বিস্ফোরণ
একটা সময়-ডুবি
সব অনেক অনেক ধাতু লাগা
অস্থির, নিদারুণ, ওহ–আহহ—
ওই বিস্ফোরণ, ওই সময় ঢুবি, সব কাচ্ছে
আর কাচা-কাচি করেই চলেছে
কী কী— নিজের ভারী বীর্য, নিজেই বহন
আর পারি না
কেন পারি না—
অত সব জানি না
আমার কোনও বউকে নিয়েই আজ অব্দি লেখা হয়নি
না। কোনও দিন লিখিনি।
কোনও দিন কাছাকাছি কাউকে নিয়ে তো লিখিনি!
নিজেকে নিয়েও নয়…
বলতে পারো– কেন সব তো নিজেকে।
না।
কারণ, এতটা দূর দেখেছি নিজেকে
যার দরুন নিজের নিজের চারপাশে যাঁরা আছে
কেউ বলে : ওনার নাম বাবা
কেউ বলে : ওনার নাম মা
কেউ বলে : ওই যে বউ
কেউ বলে : ওই যে ছেলে
কেউ বলে : ওই যে ছেলের বউ
না…
চারপাশে এত যে নাটকের, আবৃত্তির, টেলিফিল্মের
কত কত বন্ধু— তাদেরকে নিয়ে?
না…
কেন?
ওদের—ওদের ধরতে পারি না।
ওদের—ওদের ছুঁতে পারি না।
কখন যেন এক হয়ে রয়ে গেছে।
তাকাতে গেলেই—
যেমন, আকাশে যতই তাকাই
মনে হচ্ছে দূরে সরে যাচ্ছে
আরও আরও উঠি, রকেটে চাপি;
মনের রকেটে…
ফুসসস! একি কখন ওপরে নয়
নিচের দিকেই যাচ্ছি…
তা-হোক
নিচেই না হয় খুঁজি।
না! সেখানেও নয়
তাই নিজেকে নিয়ে—
কেন না এরা সকলে মিলেই তো নিজেই…
কখনও-ই লেখা হয়নি
একটু আমায় জীবন দিয়ে মাপবে?
আচ্ছা, মৌসুমীকে কী বলে
তোমার নিজস্ব চোখের ভেদ করে কত আমি
যদি জানতে
সব কিছু এলোমেলো—
না। ভেতরে তোমায় মাখি
তোমার ছায়া, তোমার…
না না তোমার নয় আমার আত্মখনন
আমার তোমাতে নিস্ফার আপাদমস্তক
পানশী ভেসে যাওয়া—
আচ্ছা, দ্যাখো, পেটে ভাত নেই
সামনে পেছনে কোনও উৎস গন্তব্য স্পর্শগাছ নেই
তবু— মানে কোনও জীবনধারণই নেই
তবু দ্যাখো, কেমন যেন মনে হচ্ছে
যত সুখ শুধু… শুধু অন্ধ আমি
তোমার সোনার গৌরাঙ্গ
আচ্ছা, তোমাকে প্রকৃতির সংজ্ঞায়
নাকি শুরুর আগে চারপাশে
একটা আমি— আমি রুঢ় দিকটা
তুমি আমায় বলে দেবে
একটু—একটু অলয়—
বৃন্দাবন দাস-এর তিনটি কবিতা
লাইনেই থাকতে হয়
পরবাস থেকে আর কেউ ফিরব না
এ যেন জবানবন্দি
এ যেন অতৃপ্ত চুম্বন
এ যেন ঝুলে থাকা অদূর অবসাদ
যারা নিরাপত্তা জানে
তারা তুতেনখামেনের পিরামিড দেখেনি
নেফারতিতির বিষাদ ও আহ্লাদ জানেনি
এখন অর্থনীতির মদিরাগৃহে গ্লোবাল আকাশ
আর ছায়া ছায়া মানুষের আহ্লাদ
আর শব্দহরিণীর অমূল্য শীৎকার
এ বছর আত্মহত্যার বিবরণী বেশি হলেও
কেউ আরব্য রজনী পাঠ ছাড়বেন না
লাইনেই আছি বললেই হয় না
ক্রমাগত
লাইনেই থাকতে হয়—
ব্রজপুর
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে
হ্যাঁ, চিরকালই লাগে
কাশীপুরে লাগে
পোড়ামাতলায় লাগে
বিবেকানন্দ শীলায় লাগে
শুন্যরা অনর্গল মৃত্যু-উপযোগী
‘অনঘ’ শব্দের মাঝে কাঁচা পাকা কিছুই থাকে না
গলা তুলে কেউ কেউ পদাবলী গায়
কেউবা প্রণয়ের দংশনে মৃত্তিকাময়
এখন তো সাইবার স্পেস থেকে
রাত জাগা আহ্লাদ
নিপুন আত্মহত্যা শিখে নেয়
জ্যোত্স্নার স্বরলিপি না জানলেও
ব্রজপুর
চাঁদ আর চাঁদের সাগর—
নিজের নিজের
‘স্বভাব তো কখনো যাবে না’
না
স্বভাব স্বতসিদ্ধ কোন জ্যামিতি নয়
স্বভাবের সঙ্গে তিলোত্তমা থাকে
স্বভাবের সঙ্গে সিংহাসন থাকে
স্বভাব কোন জ্যোতিষ্ক নয়
স্বভাব কোন সাহিত্য মন্দির নয়
স্বভাবের জন্য শাস্ত্র তোলপাড় করতে হয় না
স্বভাবের জন্য গ্রীস ঘুরে আসতে হয় না
স্বভাবের একাদশী চতুর্দশী পূর্ণিমা
বা অমাবস্যা নেই
স্বভাব নিজে নিজেই
নিজের—
রণজিৎ সরকার-এর চারটি লিমেরিক
নাক গলানো কাকি
১.
থানায় ঢুকে নাক ঠুকে বলল কাকি রেগে
নাক কাটা গেছে আমার লোকটি গেছে ভেগে
সাধের নাক ফেরৎ চাই
রেগে হেঁকে কাকি কাঁই
শান্ত হোন, এই তো নাক আছে চোখে লেগে
২.
গিনেসবুকে নাক ঠুকে বলল কাকি শেষে
আপনাদের জবাব নেই, ইসে আর কীসে
নাকে নথ,নথি দেখুন লম্বা
নাকু-চুখু-মুখু কিসে কম-বা
নাকু সুন্দরী নই কি আমি, মানে লোকে দেশ-বিদেশে!
৩.
প্ল্যানে ছিল চেটেপুটে খাবে এবার দেশটা
আসল কথা চেপে গিয়ে বাজি মারবে শেষটা
ছাগছাগী মিলে
গোটা হাঁড়ি গিলে
হাঁড়ি-হারে সেজে ওরা পালটে নিল বেশটা
৪
ছাগল দুটো পাগল হয়ে চাটছিল যখন হাঁড়ি
পেছন ফিরলে দেখতে পেত দাঁড়িয়ে আছে দ্বারি
জানত না তো চক্রব্যূহের খেল
হাঁড়ি গলায় সকলি গরলি ভেল
লাঠির ঘায়ে বুঝতে পারে খিলাড়ি হো আনাড়ি
মমতা রায় চৌধুরী-এর একটি কবিতা
তুমি চলে গেলে
তুমি চলে গেলে একবারও ভাবলে না
তুমি চলে গেলে একবারও তাকালে না
তুমি চলে গেলে রুক্ষ গ্রীষ্মের পাতার মতো
আমার কোমলতা কেমন যেন মলিন হয়ে গেল।
একটিবারও তুমি ভাবলে না
সেই মায়াবী চাঁদের রাতের নিবিড় উষ্ণতায়
মাখোমাখো ভালবাসা এখনও পরতে পরতে
তবুও সবকিছু ভুলে পারলে যেতে?
তুমি চলে গেলে একবারও মনে হল না
বৃষ্টিগুলো ছুঁয়ে সবুজ অরণ্যের হাতছানি
কেমন নষ্টাজিক সোঁদা মাটির গন্ধ মোহময়রূপে আছড়ে পড়ত আমাদের তটে।
কতবার আমার কোলে মাথা রেখে
কান পেতে শুনেছ ঝর্ণার আওয়াজ
পার্কের পাতা ঝরার মর্মর ধ্বনি।
হঠাৎই কি এমন হল নিঃশব্দে চলে গেলে।
অভিযোগের পাহাড়গুলো যদি থেকেই থাকে
ভুল শোধরানোর সুযোগ তুমি দিলে না।
আজ পাহাড়ের প্রতিটা পাথর আমার বুকের উপর
হয়তো পাথরগুলো সরাতে পারবো, পারব না তোমার উপেক্ষা, পারব না সইতে তোমার নীরব ভৎসনা।
তুমি চলে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে
বাদল বাতাসে আজ আমি বেসামাল।
রীতা বিশ্বাস পান্ডে-এর একটি কবিতা
রবীন্দ্রসাহিত্যে নারী
গভীর নয়নে চেয়ে, রহস্যের পরদা টানি,
এসেছিলে তুমি দেবী, মানসীর প্রতিচ্ছবিখানি।
চোখের গভীরে আঁকা, বিরহের নীরব রাগিণী,
তুমি তো চিত্রাঙ্গদা, অর্জুনের কঠিন সঙ্গিনী।
ক্লান্তিবিহীন পথে, দুয়ারে দাঁড়ায়ে একা,
অপেক্ষার প্রহর গোনে, সেই অভাগিনী বাকা।
অশ্রুজলে গাঁথা মালা, ব্যথার কুসুমে ভরা,
পোড়া হৃদয়ের মাঝে, জাগে শুধু করুণ মিনতি সারা।
কৃষ্ণকলি ওই নামে, কে জানিতো আগে তারে?
মাঠের গভীরে কাঁদে, বাঁশির করুণ স্বরে।
শ্যামলী ধরণী তলে, লুকানো মানিক তুমি,
সহজ সরল রূপে, ভরাও ধরণী ভূমি।
যোগাযোগের বাঁধ ভেঙে, নব পরিচয়ে জাগে,
কুমুদিনী দীপ্ত শিখা, সকল দ্বিধা তো ভাঙে।
আধুনিক নারীর রূপে, দৃঢ়তার প্রতিমা সে,
আপন আলোয় জ্বলে, নাহি মানে পরাজয় এসে।
লবঙ্গলতিকা তুমি, পল্লীর স্নিগ্ধ বাতাস,
অন্তরে লুকানো তব, নীরব গভীর শ্বাস।
বিনোদিনী রূপে জাগে, বিধবার ব্যাকুলতা,
সমাজের কঠিন বাঁধন, সহে সে নীরব ব্যথা।
রবীন্দ্রনাথ তুলির আঁচড়ে আঁকেন,
নারীত্বের মহিমাগাথা, কাব্যে অমরতা দেন।
কখনো সে জননী স্নেহ, কখনো সে প্রেমিকা রাধা,
রবীন্দ্র সাহিত্যে নারী, চিরন্তন মধুরাধা।
বিশ্বজিৎ মণ্ডল-এর একটি কবিতা
ভুল
আমি সাতেও নেই, পাঁচেও নেই
রয়ে গেলাম শুধু, দুই সংখ্যার মধ্যবর্তী পর্বে
শতকিয়ার ভুল ধরার শিক্ষক, আমার পৃষ্ঠায় এঁকে দেন
মস্ত বড় গোল্লা
বিভেদ্য প্রাচীরের পরিসরে আমার এখন তিপান্ন
গোলার্ধ জুড়ে পড়ে আছে, দীর্ঘ অন্ধকার
আমি সাতও শিখিনি, পাঁচও শিখিনি…
কেবল ভুল করতে করতে শিখে গেছি, ভুলের তর্জমা
সংসারে বেঁচে থাকার নিপুন ইতিহাস
মায়ের শেখানো প্রথম উড়ান
কখনো কি, এঁকে দেয় ভুল পৃথিবীর রং?
🍂ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস | পর্ব ১
সাহিত্যিক তাপস রায়। সাম্প্রতিককালের একজন বিশিষ্ট কথাশিল্পী ও কবি। লেখকের প্রকাশিত ভিন্নধর্মী পুস্তকগুলি পাঠকদের মনে জাগরণ তৈরি করে। রহস্য কাহিনিতে লেখক প্রাণের ছোঁয়া পান। তেমনি একটি রহস্য উপন্যাস সাশ্রয় নিউজ-এর রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর পাঠকদের জন্য।
কিশানগঞ্জের ফেলুদা
তাপস রায়
ফেলুদাকে খবর করা হল মানে ভাববেন না ফেলু মিত্তিরের খোঁজ পড়েছে।
এই ফেলু-দা একশ’ আশি ডিগ্রি ঘোরানো অন্য মানুষ। বেশি রহস্যে, মানে জটে মাথা গুবলেট হয়ে যায়। আর সেটা ছোটবেলা থেকেই। সামান্য ক্লাস নাইনেই তিন বার অঙ্কে শূন্য। কিছুতেই যখন টেন হচ্ছে না। স্কুলের হেডমাস্টার আর ওকে রাখতে চাইলেন না। হেডমাস্টার মশাইয়ের ঘরে স্কুলের নামী ছাত্রদের, মানে স্কুল ফাইনালে যারা স্টার, লেটার পেয়ে পাশ করেছে তাদের তালিকার নীচে লাল কালিতে জ্বল জ্বল করে লেখা হল নাম, সোনাই সাহা। ব্রাকেটে ফেলু-দা। পর পর তিন বছর অঙ্কে শূন্য পাবার হ্যাট্ট্রিক এই ফেলুদার দখলে। এর পরে ফেলুদার স্কুল থেকে নিস্ক্রমণে তেমন সময় লাগেনি। আর বাবা-মায়ের দেওয়া সোনাই সাহা নামটিও সেই সঙ্গে ফুস্ করে উবে গেল।
রবিবার অফিস নেই। শীত অল্প এখানে এই নভেম্বরের শেষে। ফেলুদার গুণমুগ্ধ ভক্ত বোঁদেকে দেখতে পেয়ে হাঁউমাঁউ কান্নার ভেতর থেকে যেটুকু উদ্ধার করা গেল তা হল, মালবাবুর প্রাণপ্রিয় মাল সকাল থেকে গায়েব। মাল না বলে মালবাবুর চোখের মণি, প্রাণের ধন, কর্মকাণ্ডের সাকরেদও বলা যেতে পারে। সকালে সেই সাগরেদকে না খাইয়ে দাঁতে নিম ডালও কাটেন না, তো অন্য কর্ম। পুরো ব্যাপারটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। মাঝে মধ্যেই মালবাবু এখন শরীরে জমানো ভারি হাওয়া গন্ধ সহ, শব্দ সহ নির্গত হতে দিচ্ছেন।
কিশানগঞ্জের লাইনপাড়ার কুলি থেকে সবজিওয়ালা, টিকিট-বাবু থেকে কালো কোটের উকিল, প্রাইমারি স্কুলের দিদিমণি থেকে উত্তরবঙ্গ সংবাদের স্টাফ-রিপোর্টার,পুলিশ থেকে ছিঁচকে চোর, এমনকি এমএল এ উসমানি সাহেবও এক ডাকে চেনে এই ফেলুদাকে। অনেকেই হয়ত সত্যজিত রায়ের ফেলু মিত্তিরের নাম না শুনতে পারে, কিন্তু এই তল্লাটের সবাই জানে ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো সোনাই সাহা ওরফে ফেলুদাকে।
ছাই ফেলতে ভাঙাকুলোর তুলনাটা অতি সাধারণ হয়ে গেল। মালদায় ট্রেনে কারো পকেটমারি হয়েছে তো তা যদি সময়মতো ফেলুদাকে জানানো যায় বামাল সমেত পকেটমার ধরা পড়ে যাবে। স্কুলে কারো ফিজিস্ক এর খাতা মিসিং কি কোনো বাড়ির ছাগল হারিয়ে গেছে, ফেলুদা উদ্ধার করে দেবে।
সেবার শিলিগুড়ির পানি ট্যাঙ্কের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল সাদা-কালো গরুটি। ছাগলের বদলে গরু পেয়ে চেপে গেছিল বলাই সামন্ত। নাফা ছাড়া লোকশান তো নেই। ছাগল দুধ দিত, এ-ও দুধেল। গায়েগতরে এট্টুস বড়সড় হলো, এই আর কি!
আজ ভোর ভোর মালবাবু চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করেছে। বেশ রাশভারী আর মুখে অবিরত খিস্তি-খেউড়ের তোড়ে তার চৌহদ্দিতে মাছি মশাও কম বসে। রেলগুদামের মাল রক্ষক তিনি। বেতনের পয়সায় হাত দিতে হয় না। সংসার অন্যান্য আমদানিতেই গড়্গড় করে গড়ায়। তিনি সকাল থেকে কপালে চোখ তুলে চেঁচিয়ে উদোর পিণ্ডি শুধু বুধো কেন, রামশরণ, হরি মুচি, সুশীল সিং, গন্না কাটা বাঈ— সকলের আঠাশ গুষ্ঠির ঘাড়ে তুলে রেলকলোনির রবিবার চাটি করে দিয়েছেন।
উঠোনের নিমগাছের তলায় খাটিয়ায় প্রায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় চিৎ তিনি। শরীরে কোনও সাড় নেই। হ্যাঁ ওখানে বনবিহারীও রয়েছেন। কিশানগঞ্জে অনেকগুলি চা বাগান তৈরি করছেন বনবিহারী। বেশ কিছু চালুও হয়ে গেছে। তিনি নাকি আগে চা-বাগানের প্লান্টেশনের কাজ কর্ম করতেন পাহাড়ে। সেখানে অনবরত বন্ধ,ধর্মঘট আর এক্সটরসনের জ্বালায় চা বাগানের মালিকেরা সব অতিষ্ঠ হয়ে সমতলে নেমে আসছে। চায়ের কোয়ালিটি একটু খারাপ হবে হয়ত কিন্তু গাছ একবার বড় হয়ে গেলে প্রতি মাসে বিঘে প্রতি তিরিশ হাজার নাফা বাঁধা।
ঝপ ঝপ করে ধানের জমি সব চায়ের জমি হয়ে যাচ্ছে। বনবিহারী বড় বড় কোম্পানির জন্য জমি নেয়া থেকে শুরু করে, দু-তিন বিঘের চাষিদের জন্যও চা-বাগান বানানোর যাবতীয় দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। অনেকে বলে বনবিহারীর খুব কাছের লোক এই মালবাবু। বনবিহারীর কাজে নাকি মালবাবুর মালের যোগান আছে।
২
বনবিহারী আজ একটু দেরিতে এসেছেন। তার বাড়ি রেল লাইনের ওপারে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক পেরিয়ে ধরমশালা রোডে। স্কুটারে চেপে শুধুমাত্র রবিবারের সকালেই বনবিহারি আসেন। তা ন’টার আগে নয়। আর প্রতি রবিবারেও নয়। এসেই ভিড়ের ভেতর খাটিয়ায় চিৎ মালবাবুকে দেখে একটু যে ঘাবড়ে আছেন তিনি তা চোখ-মুখ দেখে দিব্যি বোঝা যাচ্ছে।
বনবিহারী বুঝে উঠতে সময় নিচ্ছেন। ঝপ করে বিপদের ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়া তার অভ্যাসে নেই। প্রায় সাড়হীন মালবাবুর বিশাল শরীর খাটিয়ায় পড়ে রয়েছে। যদি মারাই গিয়ে থাকেন, তবে আবার পুলিসের হ্যাপা আছে। আর যদি মরমর হন, সেখানেও হ্যাপা। ডাক্তার বদ্যি ডাকা, গাড়ি-ঘোড়ার খরচ বইতে হবে। তিনি দূর থেকে নজর তীক্ষ্ণ করলেন। দেখলেন মালবাবুর প্রায় দেড় হাত উঁচু ভুঁড়ি যেন কিছুটা ওঠানামারত। তখনই, ঠিক তখনই মালবাবুর কানের কাছে মুখ নামিয়ে সহধর্মিনী চানুমতি ফিসফিস করলেন, “ফেলুদাকে খবর করা হয়েছে।”
পনেরো বিশ জনের ভিড় দেখল, ওই ফিস্ ফিস মন্ত্রে উঠে বসলেন মালবাবু। নিজেকে একটু গুছোলেন। ধুতির খুলে আসা অবস্থা প্রতিরোধ করে ফতুয়া অনেক কষ্টে ভুঁড়ির নিচে নামিয়ে সামনের টিনের মগে রাখা চায়ে প্রথম চুমুক দিয়ে অনাহারের দোষ ভাঙলেন। বিশুদ্ধ পঞ্জিকায় তখন সকাল দশটা কুড়ি গতে শুভ সময় শুরু হয়েছে।
রবিবার অফিস নেই। শীত অল্প এখানে এই নভেম্বরের শেষে। ফেলুদার গুণমুগ্ধ ভক্ত বোঁদেকে দেখতে পেয়ে হাঁউমাঁউ কান্নার ভেতর থেকে যেটুকু উদ্ধার করা গেল তা হল, মালবাবুর প্রাণপ্রিয় মাল সকাল থেকে গায়েব। মাল না বলে মালবাবুর চোখের মণি, প্রাণের ধন, কর্মকাণ্ডের সাকরেদও বলা যেতে পারে। সকালে সেই সাগরেদকে না খাইয়ে দাঁতে নিম ডালও কাটেন না, তো অন্য কর্ম। পুরো ব্যাপারটাই লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। মাঝে মধ্যেই মালবাবু এখন শরীরে জমানো ভারি হাওয়া গন্ধ সহ, শব্দ সহ নির্গত হতে দিচ্ছেন। উপস্থিত লোকজন নাকে হাত চাপা দেয়া ছাড়া অন্য কি বা করতে পারে! তারা বন্ধ নাকে খোলা কানে শুনল, মালবাবুর হাউন্ড সদৃশ্য বিশালাকার পাহাড়ি কুকুর গঙ্গারাম উধাও।
কিশানগঞ্জ বলে কথা নয়, মালবাবুর মালের কারবার, মানে টাকা খাটানোর কারবার-এর সীমানা উত্তরে করোনেশন ব্রীজ, পশ্চিম-এ মেচি নদী, পুবে মালদা আর দক্ষিণে মাথাভাঙায় চলে গেছে। খাতকদের একবার দেখে, ঘর-বাড়ি দেখে সঙ্গে সঙ্গে টাকা মঞ্জুর করেছেন এই সাকরেদের ভরসায়। গঙ্গারাম স্কানারের মতো খাতকের বুকের উপরে দু-পা তুলে মুখে মুখ রেখে একবার গন্ধ নেয়, ব্যাস। টাকা স্যাংসান। ভয় পাওয়াটুকু ছাড়া সেসবে খাতকদের তেমন আপত্তি থাকে না। কারণ অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতাই দশ টাকার ধেনুর পাউচ মেরে দিয়ে, টিপ ছাপ সম্বল করে আসে। মালবাবুর গঙ্গারামের ওটুকু পরীক্ষায় পাশ তো করতেই হবে, না হলে হাতে নারায়ণ আসবে কেন!
গঙ্গারামের আর একটি বিশেষ, সে খাতকের বাড়ির সামনের কোনো গাছ দেখে তার গুড়িতে আঁচড় কাটবে এমন যে পাঁচ-সাত বছরে সে দাগ মুছতে পারবে না গাছ। আর গাছের গোড়ায় হিসু করবেই করবে। খাতক, তার ঘর-বাড়ি, আর সময় মতো টাকা ফেরত না দিলে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের কাজও গঙ্গারামের। ব্যাঙ্ক যেমন অনাদায়ী ঋণ উসুল করতে মাস্তান পোষে। মানে মালবাবুর সুদের কারবারের প্রধান বল-ভরসা এই গঙ্গারামই। ছেলে বাবার কোনও কাজকারবার দেখে না। সে কালিম্পং-এর নামী স্কুলে পড়াশুনো করে। বছরে একবারও আসে কিনা ঠিক নেই।
তা হ্যাঁ, মালবাবুর সুদের কারবারের প্রধান ভরসা ওই গঙ্গারামই। যেমন দেখতে তেমনি ধী সম্পন্ন গঙ্গারাম। একবার খাতকের বাড়ি চিনলে আর দ্বিতীয়বার চিনতে হয় না। মালবাবুর সাথে খেরো খাতার ঠিকানা ধরে নির্দিষ্ট বাস স্টপে নেমে পড়লেই হবে। গঙ্গারাম নিজে নিজে চলে যাবে খাতকের ডেরায়। আঁচড় দেয়া গাছ খুঁজে বাড়ির সামনে গিয়ে একটা ভোউ বলে ডাক ছাড়বে। ব্যাস! ওই একটা ডাকেই যে হিম-শীতল ভয় ছড়ানো তা খাতকেরা জানে। জানে ইসলামপুরের ইটভাঁটার সুশান্ত নন্দীর ঘটনা। তাড়িখেয়ে সকাল সকাল পাড় মাতাল হয়ে সে চেঁচামেচি করে মালবাবুকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়েছিল। গঙ্গারাম একটুকু বুঝে উঠতে মিনিট খানেক সময় নিয়েছিল। তার পর…🍁 (চলবে)
সম্পাদক : দেবব্রত সরকার | কার্যনির্বাহী সম্পাদক : সানি সরকার | অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
সম্পাদকীয় ঋণ : ফিরে পড়া : কবিতা, বিশেষ গদ্য, এনং মহামিলনের কথা বিভাগের লেখা আন্তর্জাল থেকে সংকলিত।
