



সম্পাদকীয় নয়…
প্যাহেলগাঁও-এ শহীদ পর্যটকদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি 🙏
🍂প্রচ্ছদ কথা
প্যাহেলগাঁও
প্যাহেলগাঁও পর্যটক শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্যাহেলগাঁ, কাশ্মীর উপত্যকার এক অপরূপ স্বর্গভূমি, যার শোভা পাহাড়, নদী আর সবুজ উপত্যকার মধুর মেলবন্ধনে গড়ে ওঠে। এই প্রকৃতির মনোরম রূপ উপভোগ করতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক ওখানে যায়। প্যাহেলগাঁ শুধু একটি জায়গা নয়; এটি ওখানকার মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও ভালোবাসার অংশ।
পর্যটকরা যখন প্যাহেলগাঁর নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায়, তখন স্থানীয়দের প্রতি আমাদেরও রয়েছে কিছু দায়িত্ব। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, পর্যটকদের প্রতি শ্রদ্ধা মানে শুধু আতিথেয়তা দেখানো নয়, বরং তাঁদের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য এবং অভিজ্ঞতার প্রতি সম্মান জানানও—। তবে বলতে গেলে বলতেই হয় যে, ওখানকার প্রকৃতির মায়ারূপ যেন স্বাগত জানাই হাসিমুখে। জানা যায় যে, পর্যটকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় মানুষ। যখন প্রয়োজন পড়ে, তখন তাঁদের প্রতি সৌজন্য বজায় রাখা হয় প্রতিটি মুহূর্ত।
পাশাপাশি, পর্যটকদেরও উচিৎ প্যাহেলগাঁও-এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান দেখানো। পরিবেশ রক্ষা করা, স্থানীয় নিয়ম মেনে চলা এবং মানুষের অনুভূতিকে মূল্য দেওয়া। সাম্প্রতিক ঘটনার পর আমাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আগামীর প্যাহেলগাঁ হয়ে উঠুক সত্যিকারের এক পৃথিবীর স্বর্গ।
এই লেখাটি পাঠ শুরু করে শেষ করবেন তারপর– প্যাহেলগাঁও পর্যটক শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে আমাদের সাশ্রয় নিউজ এর সমস্ত বন্ধু, শুভানুধায়ী, কর্মী, সাংবাদিক, পাঠক, লেখক… এক মিনিট নিস্তব্ধতা পালন করবেন আশা করি।🍁
🍂মহামিলনের কথা
শ্রীশ্রীগুরবে নমঃ
যে আমাকে সহস্রনামের দ্বারা স্তব করতে ইচ্ছা করে—যদি সব পাঠে সমর্থ না হয়,মাত্র একটি শ্লোক উচ্চারণ করলেও আমি স্তুত হয়ে থাকি। স্তবকারীকে আমি বড় ভালবাসি।
স্তবকারীকে তুমি ভালোবাস কেন?
দেখরে জীব আমার অংশ। আমাকে ভুলে দেহাত্মবোধে উন্মাদ হয়ে কত দুঃখ ভোগ করে। জন্ম-জন্মান্তর ধরে বহু বহু আকাঙ্খা করে কত কষ্ট পায়। সে যা চায় আমি তাই হয়ে তাকে আত্মদান করি।
তুমিই সব হও?
হাঁ,যখন জীব স্ত্রী চায়,আমি স্ত্রী হই ; যখন সে পুত্র,মিত্র,আত্মীয়-স্বজন মান সম্ভ্রম বিদ্যা তপস্যা চায়,আমি তাই হয়ে তার সেবা করি,কিন্তু তাতে অশান্তি ভিন্ন শান্তি পায় না। যতক্ষণ বহুদর্শন থাকে,ততক্ষণ শান্তির আশা করা উন্মাদ কল্পনা। সহস্র সহস্র জন্ম যাতনা পেয়ে যখন সে প্রকৃত আমাকে চায়,তখন আমি তাকে ধরা দিই। প্রকৃতরূপে চাইবার সহজ সরল পথ হল আমার নাম করা,স্তব করা।
বল,তোমার মুখে তোমার স্তব শুনতে বড় ভাল লাগে।
আমার মুখ ভিন্ন আর মুখ কি আছে? জগতে যত মাথা আছে,যত হাত পা জ্ঞান কর্ম্মাদি ইন্দ্রিয় আছে,সব আমার। আমি সব হয়ে সব ব্যাপ্ত করে অবস্থান করি। অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডে অনন্ত অনন্ত কোটি স্থাবর জঙ্গম হয়েও আমি ফুরিয়ে যাই না। পূর্ণ আমি অনন্ত সেজেও স্বরূপে সেই পূর্ণই থাকি। তোর কি আমার এই রূপ দেখতে ইচ্ছা করে না?
আমি তোমার। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা তুমি সব নাও। তোমার যা ইচ্ছা তাই কর। আমি আর তোমায় কিছু বলবো না। আমি তোমার শরণাগত।
হাঁ,এ কথাটি স্মরণ রাখতে চেষ্টা কর,আমি তোর যোগক্ষেম বহন করবো,অনন্য ভক্তের যোগক্ষেম আমিই করে থাকি।
তোমার ‘তবাস্মি’ এ মন্ত্রটি আমাকে চিরদিনের জন্য দাও। আমি যেন একপল মাত্র ‘তবাস্মি’ এই মহামন্ত্রটি না ভুলে যাই।
বল্,কেবল বল্—
কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ! কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ!
আবার বল্—
জয় ব্রজনাথ জয় জয় ব্রজনাথ।
জয় ব্রজনাথ জয় জয় ব্রজনাথ॥
🍁ঋণ : শ্রীশ্রীনামামৃত লহরী
শ্রীওঙ্কারনাথ রচনাবলী
🍂ধারাবাহিক উপন্যাস | পর্ব ২৪
শুরু হয়েছে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। কবি তৈমুর খানের জীবন। বাল্য-কৈশোরের দিনগুলি কেমন ভাবে কেটেছিল। মননে চেতনায় কিভাবে বয়ে গেছিল উপলব্ধির স্রোত। কেমন করে প্রকৃতি ও জীবনকে দেখতে শিখেছিলেন। কেমন করে জীবনে এলো ব্যর্থতা। সেসব নিয়েই নানা পর্ব।
একটি বিষণ্ণরাতের তারা
তৈমুর খান
চব্বিশ.
আনন্দে মনটা ভরে গিয়েছিল
তখন এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক আসতো। কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে ছিল এক্সচেঞ্জ অফিস। সেইখানে গিয়ে নাম লিখিয়ে এসেছিলাম। বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউয়েরও ডাক পেয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও চাকরি পাওয়ার সুযোগ ছিল না। যেখানেই গেছি পশ্চিমবঙ্গে তখন ক্ষমতাবান রাজনৈতিক দল হলো বামফ্রন্ট। সেই দলের জেলা কমিটির সভাপতি কিংবা সেক্রেটারির চিঠি নিয়ে যেতে হবে তবেই তারা গণ্য করবেন। চিঠি নেওয়ার জন্য ক’য়েকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম, কোথাও পাওয়া যায়নি।
—তুমি কি আমাদের দলের লোক?
—না, আমি তো রাজনীতি করি না। তবে ছাত্রজীবনে ফরওয়ার্ড ব্লক দলে বেশ কয়েকবার এসপ্লানেড ময়দান গেছি মিছিল করে।
—সে তো অন্য কথা, আমাদের দলের সুপারিশ চাই।
বেশ কিছুদিন থেকেই টিউশান বন্ধ। হাতে একটা কানাকড়িও নেই। সেই অবস্থাতে কী করেই বা পড়াতে যাব? তবু গেলাম। সকালে একটা ব্যাচ মাত্র পড়িয়েই ‘অধিকার’ পত্রিকার অফিসে গিয়ে বসলাম আশিস মণ্ডলের কাছে। পত্রিকা দপ্তরের টেবিলে রাখা ছিল সাপ্তাহিক ‘ধূসরমাটি’ পত্রিকাটি। ‘ধূসরমাটি’ বামফ্রন্টের একটি কাগজ,কিন্তু বেশ সাহসী ও বলিষ্ঠ লেখায় ভরপুর।
দলের সুপারিশ আমি পাইনি, তাই কাগজপত্র গুটিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। অবশ্য শুধু সুপারিশ থাকলেও চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, প্রায় আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকাও লাগতো যা আমার পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব ছিল না।। সুতরাং চাকরি হবার সম্ভাবনা প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছিল পরিস্থিতির কারণে।
১৯৯৮ সালে তবে যে ঘটনা ঘটে তা আমার কাছে খুবই স্মরণীয়। ব্রহ্মাণী নদীর পাড়ে অবস্থিত হরিদাসপুর হাইস্কুলে এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে চাকরির ডাক পাই। হরিদাসপুর হাইস্কুল আমার বাড়ির কাছাকাছি বলে চাকরির জন্য প্রবল ভাবে যোগাযোগ করি। তখন রামপুরহাট ব্লকের স্কুল এস.আই লেখালেখির সূত্রে আমার বন্ধুর মতোই হয়ে গিয়েছিলেন। তিনিই একদিন আমাকে নিয়ে গেলেন হেডমাস্টারের বাড়িতে। গিয়ে বললেন, “যা শর্ত আছে সব শর্তই মানা হবে শুধু আপনি চাকরিটা দেবেন এই কথা দিন।”
হেডমাস্টার অবাক হলেন একজন স্কুল এস.আইয়ের অভিভাবক হিসেবে আমার জন্য সুপারিশ করার কারণে। তিনি শশব্যস্ত হয়ে যথেষ্ট সম্মান করলেন সেদিন এবং কথাও দিলেন চাকরি যদি হয় তো আমারই হবে।
সেদিন আনন্দে মাথা নিচু করে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম একরাশ আশ্বাস পেয়ে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য সে চাকরিও আমার হয়নি। হেডমাস্টারের প্ল্যান ছিল তিনি আগের কন্যাদের মতোই পাত্র নির্বাচন করে চাকরিতে ঢোকাবেন কারণ এটাই তার সবচেয়ে ছোট কন্যা। স্কুল এস.আইকে এই বিবাহ প্রস্তাবের কথাটি বলতে পারলেন না। অন্যলোকের দ্বারা বলে পাঠালেন বটে কিন্তু তা আর গোপন থাকলো না। সর্বত্র চাউর হয়ে গেল হেডমাস্টার তার মেয়ের বিয়ের বিনিময়ে চাকরি দিচ্ছেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে বামফ্রন্টের জাদরেল নেতা পঞ্চায়েত নমিনি বিশ্বরূপ কাঁঠাল ছিলেন। তিনি সব শুনে বললেন, “আমি বেঁচে থাকতে কী করে ওর চাকরি হয় তা দেখে নেব!” বোর্ডের সব সদস্যরা আমাকে সৎভাবে নাম্বার দিলেও তিনি দিলেন পয়েন্ট জিরো, শুধু জিরো নয়। এতটাই ক্ষিপ্ত হলেন যে, আমি যেন কোনো মতেই কোনো পজিশন না পাই। কিন্তু তবুও দেখা গেল প্যানেলের এক নাম্বারে আমি। তখন বললেন, “কী করে চাকরিতে জয়েন করে সেইটা দেখে নেব!” হেডমাস্টার ভয়ে আর সে পথে আগালেন না। তিনি দেখলেন চাকরি দিয়ে জামাই পেলাম না, আবার ঘুষও পেলাম না। তখন তিনি প্যানেলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা একটি মেয়েকে প্রথম স্থানে নিয়ে এলেন প্রায় ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে। আমার কপাল আবার অন্ধকার হয়ে গেল।
যে আশা নিয়ে দীর্ঘ তিন মাস ধরে প্রবল পরিশ্রম করে যোগাযোগ করেছিলাম এবং স্বপ্ন দেখেছিলাম তা নিমেষের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে গেল। আষাঢ় মাসের বিষণ্ণ দুপুরবেলায় সেদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে আমি প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে কয়েক পান ওষুধ এনে খাব সে সামর্থ্যটুকুও ছিল না। প্রায় সপ্তাহখানেক মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে অচৈতন্য হয়ে কাটালাম। যখন জ্বর ছেড়ে গেল তখন বিছানাও ছাড়তে পারলাম না। সেই ভাবেই কাটতে লাগলো দিন। মা এপাড়া ওপাড়া করে চেয়ে-চিনতে কারো বাড়ি থেকে কাঁচা কলা ও পেঁপে এনে সেদ্ধ করে আমাকে দিতে লাগলো। মুখে কিছুই স্বাদ ছিল না বলে কারো বাড়ি থেকে আচার চেয়েও আনলো। একটু একটু করে প্রাণ ফিরে পেলাম। কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালাম।
বেশ কিছুদিন থেকেই টিউশান বন্ধ। হাতে একটা কানাকড়িও নেই। সেই অবস্থাতে কী করেই বা পড়াতে যাব? তবু গেলাম। সকালে একটা ব্যাচ মাত্র পড়িয়েই ‘অধিকার’ পত্রিকার অফিসে গিয়ে বসলাম আশিস মণ্ডলের কাছে। পত্রিকা দপ্তরের টেবিলে রাখা ছিল সাপ্তাহিক ‘ধূসরমাটি’ পত্রিকাটি। ‘ধূসরমাটি’ বামফ্রন্টের একটি কাগজ,কিন্তু বেশ সাহসী ও বলিষ্ঠ লেখায় ভরপুর। কাগজটি উল্টেপাল্টে পড়তে গিয়েই দেখতে পেলাম কলেজে অংশকালীন অধ্যাপক প্রয়োজন, তার জন্য দরখাস্ত আহ্বান। সময় বেশি নেই তাই সঙ্গে সঙ্গেই দরখাস্ত করতে হবে। আশিস মণ্ডলের কাছে কাগজ নিয়েই লিখে ফেললাম একটি দরখাস্ত, তার সঙ্গে দিতে হলো আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সমূহ জেরক্স কপি।
অংশকালীন অধ্যাপক এর ইন্টারভিউ হয়েছিল বর্ধমান ইউনিভার্সিটিতেই। সেদিন ট্রেন ধরে ইউনিভার্সিটির একটি নির্দিষ্ট রুমে পৌঁছেছিলাম। চেহারায় ছিল যথেষ্ট উদ্বেগের ছাপ। ঘাড়ে ঝোলানো ছিল একটা ঝুল ব্যাগ। মুখে খোঁচা খোঁচা আকাটা দাড়ি। বোর্ডে ছিলেন তিনজন অধ্যাপক। আমার সমূহ সার্টিফিকেট দেখেই আমাকে কতকগুলি প্রশ্নও করেছিলেন।
প্রথম প্রশ্ন ছিল: মঙ্গলকাব্য উদ্ভবের কারণ কী?
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল: সাম্প্রতিককালে কেন আর মহাকাব্য লেখা হয়নি?
তৃতীয় প্রশ্ন ছিল: আধুনিক কবিতার মধ্যে জীবনানন্দ দাশ কেন ব্যতিক্রম?
তিনটি প্রশ্নের উত্তর শুনেই প্রশ্নকর্তাগণ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কিনা বুঝতে পারিনি। তবে শেষ মুহূর্তে বলেছিলেন, “কালকে কলেজে এসেই জয়েন করুন।”
হাইস্কুলের চাকরিতে বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘ রোগাক্রান্ত হয়ে যখন প্রায় অর্ধমৃত অর্ধোন্মাদ হয়ে পড়েছিলাম তখন এই কলেজের সামান্য বেতনের চাকরিটিই আমার কাছে একটি মহার্ঘ্য স্বর্গপ্রাপ্তি মনে হয়েছিল। প্রথম দিন বাংলা অনার্সের ক্লাসেই রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’ পড়াতে হয়েছিল। নামধাম পরিচিতি পর্ব সেরেই ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে অনেকটা ঘরের মানুষেই পরিণত হয়েছিলাম। দুর্বলতার কারণে ক্ষীণ কণ্ঠে সেদিন উচ্চারণ করেছিলাম:
“গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা”
জল, ধান, বর্ষা, ভরানদী, ছোটোখেত, পরপারের তরুছায়া সব রূপক অর্থগুলি ভেদ করতে করতে চল্লিশ মিনিট কবেই অতিক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল আমি টের পাইনি।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে সিঁড়ির কাছেই নামতে নামতেই পেছন দিক দিয়ে ডাকতে শুরু করেছিল একটি ছাত্রী।
—কেন কী বলতে চাও?
— স্যার, আপনি কি টিউশান পড়ান?
—হ্যাঁ পড়াই।
—আমরা স্যার কয়েকজন পড়তে চাই।
—ঠিক আছে তোমরা কয়েকজন পড়লে আমাকে জানাবে, আমি কলেজের কাছাকাছি কোনো রুম ভাড়া পাওয়া যায় কিনা দেখছি।
—তোমার নাম কী
—পাপিয়া।
—বাড়ি কোথায়?
— সাগরদিঘী।
—ঠিক আছে যাও।
যেতে বলার পরও মেয়েটি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। পানপাতার মতো ওর মুখটি একাকী ভালো করে দেখার সুযোগ পেলাম। চোখ দুটি বেশ বড় বড়। কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই মাথাটা নিচু করে নেওয়ার অভ্যাস লক্ষ্য করলাম। এক ঝলক ভালো লাগার বাতাস বয়ে গেল। সেই সঙ্গে টিউশান পড়ানোর সুযোগটাও জুটে গেল। অফিসে ফিরে এসে বোতলের ছিপি খুলে গলায় ঢেলে দিলাম প্রায় এক নিঃশ্বাসে এক বোতল জল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ারে বসে পড়লাম। বাংলা বিভাগের প্রধান ড. চৈতন্য বিশ্বাস জিজ্ঞেস করলেন, “প্রথম ক্লাসটা কেমন লাগলো?”
স্যারকে জানালাম, “অসম্ভব ভালো লাগলো স্যার! ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বেশি রেসপন্স করছে। পড়তে আগ্রহও আছে।”
স্যার বললেন, “অনার্সের ক্লাসগুলো তোমাকেই চালাতে হবে, আমাদের পার্মানেন্ট শিক্ষক নেই বললেই চলে।”
আমি জানালাম, “তা চিন্তা করবেন না স্যার, ইচ্ছা করলেই আমাকে বলবেন, ক্লাস বেশি নিলেও ক্ষতি নেই।”
সেদিন আরও দুটি ক্লাস নিয়ে কলেজ মোড়ে চা পান করেই বাড়ি ফিরেছিলাম। চায়ের দোকানদারকে বলেছিলাম টিউশন পড়াবার মতো একটা বাড়ি দেখে দিতে।
দোকানদার সেদিন আমার কাছে পয়সাও নেয়নি। বলেছিল, “স্যারদের সম্মান করা আমারও কর্তব্য। সব সময় পয়সা দেখলে হয় না।”
আনন্দে মনটা ভরে গিয়েছিল। নিজেকে আর জ্বরাক্রান্ত মনে হয়নি। 🍁(চলবে)
🍂কবিতা
স্বপন দত্ত-এর একটি কবিতা
ভালবাসা আমি তোমার বাচ্চা, শিগগির ফিরে এসো
ধরা যাক, মিটমিট করে জ্বলছে।
ধরা যাক, অনেক আগেই যুদ্ধ, আত্মরক্ষা, নিঃশব্দ অভিসম্পাত।
হ্যাঁ, ধরা যাক, অনেক আগে থেকেই
কল্পনার জগতে গা এলিয়ে ভীতু আমরা।
এবং, কাজেই আবর্জনা সাফ করা হল না।
অতএব, ধরা যাক, সমুদ্র তখন
দেখতে পাচ্ছেন : প্যারেড গ্রাউণ্ড ও দিগন্ত বিস্তৃত অনন্ত মানুষ—
পাহাড়ে উঠছেন, গাছের তলায় গরম রাস্তা ঝুলছে।
ঝুলছে নিঃশব্দ লাশ। কোনও নির্মম
একটা শব্দও কিন্তু ওখান থেকে বার করতে পারেনি।
মৃতের কণ্ঠস্বর থেকে তখনও কেবল
ঝাঁকিয়ে উঠছিল শপথের গান।
একটা রক্তস্নাত শূন্যতা অথচ অভ্যন্তর ঘুরপাক ভালবাসা—
এবং সব শেষে এটাই ধরা যাক, দীর্ঘ সুঠাম
টকটকে ভালবাসা খাওয়ার স্বাদ
অবশেষে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল।
আপনারা, ধরা যাক, সকলেই মাঝে মাঝে শোনেন—
ঝরা গাছ, কথাগুলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়া করে।
ধরা যাক, এই ধারণা জন্মায়
শেষবারের মত কথাগুলো বিদায় জানাচ্ছে!
ধরা যাক, নতুন চিন্তার জন্ম দিতে দিতে
চিন্তার সঙ্গে কথোপকথন শুরু করে দেয়া কিন্তু যায়,
যদিও মুখ খুলানো খুব সহজ কাজ ছিল না!
ঝড়, জল-বৃষ্টি, কিংবা গনগনে সূর্যের উত্তাপ সহ্য করে
পৃথিবীর দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা অর্জন করতে হয়
ছোট-ছোট কথাবার্তা—
ধরাই যাক না, তবেই না ভালবাসা মুখ খুলবে।
রীতা বিশ্বাস পান্ডে-এর একটি কবিতা
তুমি জীবনধারা
তোমার ঐ স্নিগ্ধ চাহনি,
হৃদয়ে জাগায় ঢেউ।
যেন শান্ত নদীর বুকে,
নাচে আনন্দ ঢেউ।
তোমার মিষ্টি মুখের হাসি,
যেন ভোরের আলো ফোটে।
আমার যত ক্লান্তি আঁধার,
এক পলকেই মেটে।
তোমার কণ্ঠের সুধা যেন,
বহে অমৃত ধারা।
আমার শ্রবণ জুড়ায় তাতে,
হারাই দিশাহারা।
তোমার হাতের কোমল স্পর্শ,
যেন ফুলের পাপড়ি ছোঁয়।
আমার সকল শূন্যতাতে,
পূর্ণতা এনে দেয়।
আমার এই ছোট্ট ভুবনে,
তুমি উজ্জ্বলতম তারা।
তোমার প্রেমেই বেঁচে থাকি,
তুমিই জীবনধারা।
বিশ্বজিৎ মণ্ডল-এর একটি কবিতা
আদিলের ঘোড়া
সবুজ সোপানের পাশে নিমগ্ন পথে
একা দাঁড়িয়ে আছে, আদিলের ঘোড়া…
আদিল আর কোনওদিন আসবে না
পর্যটকের ডানা সাজিয়ে মেলে ধরবে না
ভূস্বর্গের আকাশ
অপেক্ষমান পর্যটকেরা খুঁজবে, প্রিয় মানুষটিকে
তার অবয়ব ভেঙে উড়ে যাবে, স্বজন সংলাপ
আদিলেরা এভাবেই চলে যান, অভাবী সংসার ছেড়ে
সন্তানের কনিষ্ঠ আঙুল ছেড়ে
আদিল জেগে থাকুক, পেহেলগাঁও ছাড়িয়ে
অহিংস পৃথিবীর উন্মুক্ত আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে
আদিত্য মুখোপাধ্যায় (আদি)-এর একটি কবিতা
মৌটুসি মন চুঁয়ে
তখনও সন্ধে নামেনি। শীত বসেছে জাঁকিয়ে
তেষ্টা পায়; শরীরে আলো
মৌটুসি মন চুঁয়ে গল গল সংরাগ
ধীর লয়ে হাঁটছে বাতাসী
বুক ভর্তি উঁচাটান
ওই বুঝি উড়ে যাবে পাখি; পরিযায়ী
পাশব শীত; চাদরের ওম চুষে নেয় একনলা বন্দুক
আঁধার মুছে দেয় সাদা খাতা আর কলম
গঙ্গা সাগর আর কুম্ভমেলার ঢেউ আছড়ে পড়ে
টুসুগানে আর পৌষ পার্বণে; মাঝখানে ঝরে পড়ে কত কথার ইতিকথা
পরাণ মাঝি-এর একটি কবিতা
ওয়েলনেস
ঘেন্না নয়
বিষাক্ত ও বদ বাতাস থেকে ছেঁকে নিতে হবে প্রাণ বায়ূ
ওয়েলনেস হল জিয়নকাঠি
মনের গা বেয়ে ঝরছে রক্ত; বিরক্তও
শরীর ও মন খুনের এ শহর এক শ্রাবণ বৃষ্টি চায়
ও মেঘ; বালিকা কিছু তো করো
তাহমিনা শিল্পী-এর একটি চিঠিকাব্য
কৃষ্ণচূড়া বিরহের আরেক নাম
পিদিম,
বৈশাখ এলে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভায় তোমাকে মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই বিকেলের কথা, যেদিন তুমি বলেছিলে—কৃষ্ণচূড়া শুধু সৌন্দর্যের নয়, ভালোবাসাও প্রতীক। তোমার চোখে তখন অদ্ভুত এক দীপ্তি ছিল।
সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলেছে, বদলে গেছে তোমার চোখের সেই দীপ্তি, সেই অনুভব। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার রঙ আগের মতোই সুন্দর, তীব্র। তেমনই কিছু স্মৃতি রয়ে গেছে হৃদয়ের গভীরে। তোমাকে পাওয়া হয়নি আর, কিন্তু বৈশাখের ঝোড়ো বাতাসে, কৃষ্ণচূড়ার লালে, তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি,আজও।
আমার কাছে কৃষ্ণচূড়া এখন বিরহের আরেক নাম!
ইতি,
ঝিঁঝি
🍂কণাগদ্য
মুহূর্তের চিহ্ন বহন করে স্পষ্ট হয়ে বেশ কিছু লেখা। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মিলে মিশে যায় তৈরি হয় এক নব্য স্রোতধারা… তেমনি কিছু লেখা, লিখেছেন : অমিত পাল
কালবৈশাখীর মায়া
আমি আকাশের মেঘ দেখে বৃষ্টির প্রত্যাশা করি না৷ এটা তো শুধু চাতকের প্রত্যাশা৷ তবে জানি কৃষকের প্রত্যাশা অন্য কিছু৷
রঙিন ও গাঢ় ছন্দে কালবৈশাখী আসুক সেটা কিন্তু কেউই চাই না৷ জানিনা আকস্মিক ভাবে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি কীভাবে নামে!
কতটা ধংসাত্মক আবেগ জমে থাকে আকাশের বুকে৷ আমি নিজের হৃদয়ের আবেগের সাথে এর তুলনা করি৷
শুধু মায়া জমে থাকে আমার কটাক্ষ হৃদয়ে৷ তবে কালবৈশাখীর প্রকট ভুঁইয়ের উপরই পড়ে…
সিগারেটের ইতিহাস
একটা সিগারেট খাও৷ মুখ দিয়ে টানো৷ ধোঁয়া ছাড়ো৷ শুধুই ধোঁয়াটাকে প্রত্যক্ষ করো না৷ জ্বলন্ত এক ফুলকি অঙ্গারটাকেও পরোক্ষ করো৷ কতটা পুড়িয়ে খাক করে ছায়ে পরিণত করে সেটা দেখো৷ এবার তোমার অন্তরের বেদনার সাথে তার সংমিশ্রণ ঘটাও৷ সামঞ্জস্য রাখো৷ শেষে তুলনা করতে ছেড়ো না…
বলো এবার তোমার অনুভূতিতে কি পেলে?
স্বার্থের আকাঙ্ক্ষা
ভ্যাবসা গরমে গলদঘর্ম পাঁচ অঙ্গ৷ মেঘকে দেখে আমি চাতক হয়ে যাই মাঝে মাঝে৷ হায়! ক্ষুধাতুর বাঘ যেমন রক্তমাখা শরীর খোঁজে, আমার খোঁজও যেন তেমন হয়ে পড়েছে৷
স্ত্রী-পুরুষের নিজস্ব স্বাধীনতায় আমার কোনও খেদ নেই৷ ভেদাভেদ করি না৷ ভেদ রাখি শুধু লিঙ্গে৷ যৌনকামিতাকে ঘৃণ্য বলে মনে করি৷ তবে সন্ন্যাসী হতে পারি না৷
স্বার্থ মেটাতে চাই সকলে৷ চাই আরও কিছু৷ শুধু ব্যর্থতার সুর গেয়ে চলি প্রকাশে৷ কিন্তু কল্পনার নোংরামিতে বঞ্চিত নই৷
প্রেম বলে কিছু মানি না৷ মানি শরীর৷ মৃত্যুর পর আত্মা তো অন্য শরীর খোঁজে৷ আমার জীবিত শরীরের আকাঙ্ক্ষা কম কিছু নই…🍁
সম্পাদক : দেবব্রত সরকার | কার্যনির্বাহী সম্পাদক : সানি সরকার | অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক | কভার ফটো : আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
