Sasraya News

Thursday, February 13, 2025

Sasraya News Sunday’s Literature Special | 27 October 2027 | Issue : 37 || সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৭ অক্টোবর ২০২৭ | সংখ্যা : ৩৭

Listen

সম্পাদকীয় 

 

বিতা কখনোই একা বাস করতে পারে না। কারণ কবিতার ঘর এই বিশ্ব সংসার। যতই আমরা একাকিত্ব নিয়ে কবিতা লিখিনা কেন সেখানেও একজনের অলিখিত ইচ্ছার বাস থাকে। বোধের কবিতার সঙ্গে কখনোই কোন কিছুর পরিমাপ করা যায় না। যদি কবিতা নির্মাণ হয় তাহলেই কবিতার কয়েকটি বিচক্ষণতা লুকিয়ে থাকে।

 

 

 

আর বোধের কবিতার মধ্যে চেতনার বাস হয়। যার সঙ্গে মায়ার খেলা হয়। যে ভাবে মায়া ছড়িয়ে আছে এই জগৎ সংসারে। কবিতা একটি অদ্ভুত যাদুশক্তি । যার কোন হার নেই মাংস নেই মজ্জা নেই নেই কোন চামড়া। পুরো মাসহীন। অথচ কবিতার কিছু একটা আছে না থাকলে সেই বিষয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে এর এতো উন্মাদনা এতো আনন্দ এতো তৃপ্তি কি করে হয়। কারণ কবিতার একটা নিজস্ব প্রাণ শক্তি আছে। একটা আত্মা আছে। একটা মন আছে। আমাদের যেমন অদৃশ্য শক্তি আছে। মন আত্মা প্রাণ। এবং এর মূল শক্তি আছে বায়ু। পঞ্চভূতে মিশে আছে সমস্ত শক্তির প্রয়োজনীয় সত্তা। শক্তি দেখতে পাওয়া যায় না। অথচ সেও কোন কিছুর দ্বারা পূরণ।
কবিতা লিখতে এসে কবি যে উচ্চারণ করেন প্রথম শব্দ আত্মা প্রাণ মন ছুঁয়ে প্রকাশ হয় পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে। এই বায়ুমন্ডল একটি বিকেন্দ্রীকরণ  পদ্ধতি। বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে শ্বাস বা শব্দ ভাণ্ডার অপরিবর্তনীয় এবং নিরাপদ। নচেৎ কোন শব্দ মনের দ্বারা একবার মুখ দিয়ে প্রকাশ হলেই তা আর মুছে ফেলা যাবে না। যুগ যুগান্ত্রের সস্মস্ত রেকর্ড এই বায়ুমণ্ডলেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ আমরা প্রত্যেকেই জানি যে রেকর্ডিং পদ্ধতির কথা। কোন শব্দ মাইক্রোফোনের সামনে বা বর্তমান দিনে ভয়েসকল এটাও নির্দিষ্ট পদ্ধতি যা বায়ু দ্বারা অদৃশ্য শব্দ ভাণ্ডার  সংগ্রহ করে কোথাও পাঠানো বা রাখা হয়ে থাকে। এখানেও কিন্তু কোন কিছু দেখতে পাইনা। অদৃশ্য তৃপ্তি। যা ফুটে ওঠে শব্দের ঝংকারে শ্রুতিমধুর হয়ে। এখানেও মানুষের ধারণা কতটা আছে আমার জানা নেই কারণ। আমি ক্ষুদ্রতম অন্ধকার থেকে উৎপত্তি রত এক অধ্যায়ের বাহক রূপেই অনন্তকালের পথ প্রদর্শক আমারই সংসারের। এই কথা বড়োই জটিল মনে হলেও অতি সত্যই যে বা যারা আমার কাছে সবই তো আমারই আমি বিষয়ে আমরা আপনারা সকলে মিলেই তো আমরা হয়! এই বিশ্ময়ের বিশেষ দিক বা যাকে এখন দর্শন শাস্ত্র রূপ দেয়া হয়েছে সেখানেই একটি মজার গল্প লুকিয়ে আছে। যারা এই শাস্ত্রের চর্চা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন তারও তা জয় করতে পারেননি। এমন কি যার দ্বারা এই শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে তিনও। কারণ এই শব্দের অর্থ শুধুই দেখা নয়। এর বৃহৎ অর্থ হল পঞ্চতত্ত্ব। যা সাহিত্যের আলোয় রূপান্তিত এক কল্পনার দ্বারা প্রবেশ নিষিদ্ধ পথের অন্তরে শেষ যে শ্বাস। কিন্তু ততদূর পর্যন্ত যায় কই। যেমন আকাশ বায়ু আগুন জল পৃথিবী এই বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে সমস্ত শাস্ত্র। এই বিষয় যদি কোন এক ব্যক্তি রপ্ত করে ফেলেছেন তিনিই তিনি হয়ে উঠবেন।
যাইহোক যা নিয়ে ছিলাম তা অতি গভীর বিষয়। তেমনি গভীর বিষয় কবিতা। আমরা যারা কবিতাচর্চা করি তারা ব্যতীত এই পৃথিবীতে আরও এক প্রকার ভালোবাসা রয়েছে স্রোতাদের মধ্যে। স্রোতারা এই সৃষ্টির মর্যদা দেন। ইঞ্জিনিয়ার শব্দটি আসলে যান্ত্রপাতির বিষয় দ্বারা যুক্ত। কিন্তু তিনিও সৃষ্টির সঙ্গে রয়েছে। যিনিই সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান ঈশ্বর তাকেই স্রষ্টা বলেছেন। এ এক অতি আশাচর্য বিষয়। অথচ আমরাই খুঁজি। কিছু একটা খুঁজি। আর এই খোঁজের সূত্রধর মন। যার দ্বারা এই জগৎ সংসারের রহস্য এবং অস্তিত্ব রক্ষা হয়ে আসছে।

 

 

 

ভেবে দেখুন তো কারো এক কথায় মন চেয়ে ছিলো রাবণের সীতাকে হরণ করা। মনের দ্বারাই ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে ভিক্ষুক বেসে সীতাকে হরণ করেন। আবার সেই মন দ্বারা রাম সীতাকে উদ্ধার করেন। কৃষ্ণ মনের দ্বারা কংসকে বধ করেন। এমনই বিভিন্ন জাতির পিতা বা দূতেদের গল্পে এক একটি বিষয় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সেখানেও মনই প্রধান বিষয় হয়ে থাকে। যে জিনিস কখনোই কেও দেখতে পাইনা তারই জন্য সমস্ত কিছু ঘটছে অথচ আমরা সাহিত্য নিয়েও দলাদলি করি। বিজ্ঞান নিয়েও দলাদলি করি। সমাজ নিয়েও দলাদলি করি। সংসার নিয়েও দলাদলি করি। কারণ পাঠ্য পুস্তক কিন্তে ব্যস্ত আমরাই কিন্তু ভুলে যায় আসল পাঠের কথা। এই ম্যাজিক ঠিক একই জায়গায় গিয়ে মিলিয়ে দিচ্ছে সমস্তটাই।🍁

 

 

 

 

🍂গদ্য : 

 

হাওড়ার বালিতে আদ্যন্ত শাক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। এগারো জন ভাইবোনের মধ্যে পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন সবথেকে ছোট। তাঁর এক দাদা ছিলেন স্বর্ণযুগের বিখ্যাত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য। লিখেছেন : পিনাকী চৌধুরী 

 

 

ভক্তিগীতি এবং পান্নালাল ভট্টাচার্য

 

 

 

 

জও কালীপুজো এলেই গৃহস্থ বাঙালির ঘরে ঘরে এবং সর্বজনীন পুজো মণ্ডপে বাজতে শুরু করে পান্নালাল ভট্টাচার্যের (Pannalal Bhattacharya) কণ্ঠে বাজতে শুরু করে সেইসব অবিস্মরণীয় শ্যামাসঙ্গীত। ‘মা আমার সাধ না মিটিল, আশা না ফুরিল… ‘অথবা ‘ আমার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠ না ফুটে মন !’ ১৯৩০ সালে হাওড়ার বালিতে আদ্যন্ত শাক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন পান্নালাল ভট্টাচার্য। এগারো জন ভাইবোনের মধ্যে পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন সবথেকে ছোট। তাঁর এক দাদা ছিলেন স্বর্ণযুগের বিখ্যাত গায়ক ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য (Dhananjay Bhattacharya)। প্রথম দিকে পান্নালাল ভট্টাচার্য বাংলা সিনেমার নেপথ্য গায়ক ছিলেন। পরে তাঁর দাদা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের প্রচ্ছন্ন মদতে তিনি আধ্যাত্মিক গানের গায়ক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য একদিন তাঁর ভাই পান্নালাল ভট্টাচার্যকে নিয়ে যান এইচ এম ভি (HMV) -এর অফিসে। সেখানে অডিশন দেওয়ার পর পান্নালালকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। আদ্যন্ত শাক্ত পরিবারের ছেলে, কাজেই তাঁদের পরিবারের অন্দরে পুজো আচ্ছা লেগেই থাকত। তখন পান্নালাল ভট্টাচার্যের বয়স আঠারো কি উনিশ, হাওড়ার বালিতে একটি মাঠে ফুটবল খেলতে গিয়ে পান্নালালের চোখে বল লাগে। চোখটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তদানীন্তন সময়ে ৪৫০ টাকা দামের ২৫ টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। ধীর ধীরে তাঁর চোখ সেরে উঠলেও তাঁর একটি চোখের মণি স্বাভাবিক অবস্থান থেকে কিছুটা সরে যায়। শোনা যায়, কীসের টানে গভীর রাতে পান্নালাল ভট্টাচার্য শ্মশানে গিয়ে হাজির হতেন! এদিকে আবার তিনি মোহনবাগানের কট্টর সমর্থক ছিলেন। মোহনবাগানের খেলা থাকলে তিনি তাঁর যাবতীয় রেকর্ডিং স্থগিত রাখতেন। পাশাপাশি তিনি ধর্মাচরণ করতেও ভুলবেন না। মা ভবতারিণীর প্রতি তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তবে ১৯৬৬ সালে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে পান্নালাল ভট্টাচার্য হঠাৎ কেন আত্মহত্যা করেন, তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি! তিনি তাঁর স্বল্পপরিসরের জীবনে ৩৬ টি আধুনিক, ৩ টি বাংলা সিনেমার গান এবং ৪০ টি ভক্তিগীতি গেয়েছেন। আজও ভক্তিগীতি এবং পান্নালাল ভট্টাচার্যের নাম একবাক্যে উচ্চারিত হয়।🍁

 

 

 

🍂কবিতা 

 

 

 

 

 

 

তৈমুর খান

গোধূলির রাস্তায়

 

যেতে যেতে থেমে যাচ্ছি
আর তোমার কথা মনে পড়তেই
চেয়ে দেখছি
শূন্যে তুমি হাসছ

সমস্ত বিকেল জুড়ে পাখি উড়ছে
ছায়ারা রোদের কাছে সব চাবি দিয়ে
অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে

আমি একাকী মনের সিন্দুক খুলে
বের করছি রঙবেরঙের পোশাক
আজ তবে কোনটা প’রব?

ভিরু হাত, দৃষ্টি কাঁপছে
এক একটা রং এক একটা বয়স
সবাই এসে ভিড় করছে!

এখন আমি শুধু আমি
পাল্টে যেতে যেতে
গোধূলির রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি

 

 

 

 

তবু এজীবন একটি নদীতীর

 

 

একটা শ্লেষ উড়ে এসে কথার মাঝখানে বসে যাচ্ছে
কথাদের যেতে হচ্ছে গোলকধাঁধার মধ্যে দিয়ে
আমি নৌকা পারাপার করছি হৃদয়ের স্রোতে

কতকাল ধরে নৌকায় বসে আছে নারী
নারীকে চিনি না আমি
তবু ওর অদৃশ্য হাত ধরি

সহজ সরল ভাষার বনে
মাঝে মাঝে অন্ধকার নামে
নিজেও হারাই তখন
অনুভূতি ভাষাদের কতটুকু চেনে?

তবু এজীবন একটি নদীতীর
তীরে তার তীর্থ জেগে থাকে
নারীটির ছায়া এসে পড়ে
আমি তাকে ফুল দিই রোজ
মনের অরণ্যে যত শব্দফুল ফোটে

 

 

 

 

সঞ্জয় আচার্য 

বিষাদ গন্ধ

 

কোনও কোনও বিষাদ বেঁচে থাকে পুরোনো তোরঙ্গের সুবাসে
তোরঙ্গ খোলা হলে ছড়িয়ে পড়ে।
আমার ফুসফুসের ভিতর কতকাল সেসব চেনা গন্ধ
ঠিক চোখের ভিতর মায়াবী ঘুম যেমন,
অথবা টুপ করে গড়িয়ে পড়ে একফোঁটা জল
ঊষার মনি কর্নিকার থেকে দূরের বারান্দায়
আবিষ্ট দেহের ভিতর মাঝরাতে নেমে আসে নিপুণ ঠোঁট
আমি পাথরের যৌবনে নৈঃশব্দ্য জ্বালাই তখন
সে আলোয় দেখি অনেকটা পথ আমাকে ছুঁয়ে ফেলেছে
রহস্য থেকে নেমে এসে মুথা ঘাসের সঙ্গে কথা বলি
আর ঘাসের স্পর্শ-সুখ জেনে নেয়,
নষ্ট হতে কতটা বাকি আছে আমার মায়া জীবন।

 

 

 

 

 

শুভমিতা মনার্ক 

বোধের কবিতা

 

চারপাশে মানুষের বড্ড অভাব
হৃদয়ের লাল রঙ এখন বেশিরভাগই কালো

আর কতোদিন সুন্দর জামাকাপড়ের নীচে লুকিয়ে রাখবে
তোমাদের সব কুৎসিত বোধ
কতোদিন?

প্রতিদিন কোটি কোটি গাছের মৃত্যু
কেড়ে নিচ্ছে আশ্রয়
মানুষের হাতে রক্ত
অথচ মানুষ ভাবছে ওসব রঙ

জলে বিষ, বিষে জল
এইভাবেই শেষ হচ্ছে মানবিকতা

চারপাশে মানুষের বড্ড অভাব
বড্ড ভয় হয়
আর কিছুদিন পর
মানুষই হয়তো চিবিয়ে খাবে
মানুষের হাড়
বাগানে ফুটবে কঙ্কালফুল

এখনো সময় আছে
ক্ষমা চাও,ভুল শুধরে
মানুষ হয়ে ওঠো

 

 

 

🍂ধারাবাহিক গদ্য /পর্ব : ৩

 

৯৫৪ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি বিভাগের রিডার বা সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মুহাম্মদ আব্দুল হাই রিডার থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত হন এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন। রেহানা বীথি-এর লেখা ‘ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই’-কে নিয়ে ধারাবাহিক গদ্যের আজ দ্বিতীয় পর্ব।

 

ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই

রেহানা বীথি

 

 

৯১৯ সালের ২৬ নভেম্বর তারিখে মা ময়মুন্নেসার কোল আলো করে এলেন তিনি। পিতা আব্দুল গণি, রাজশাহীর পোরশা গ্রামের “সাহু” পরিবারে শিক্ষকতা ও ইমামতি করতেন। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠেন আব্দুল গণি ও ময়মুন্নেসার পুত্র মুহাম্মদ আব্দুল হাই (Muhammad Abdul High)। দেখতে দেখতে ঘনিয়ে আসে তাঁর শিক্ষালাভের সময়। শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন জন্মস্থল মুর্শিদাবাদ জেলার মরিচা গ্রামে। প্রাথমিক পড়াশোনা বর্ধনপুর জুনিয়র মাদ্রাসায়। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব মেধাবী এই মানুষটি ১৯৩২ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে জুনিয়র মাদ্রাসার পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন রাজশাহী হাই মাদ্রাসায়। বড় ভাই আব্দুল আজিজের কাছে থেকে রাজশাহীতে লেখাপড়া করতেন তিনি। ১৯৩৬ সালে উচ্চ মাদ্রাসা প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন এবং ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন। এবং এই সময়কালে তিনি সান্নিধ্য লাভ করেন বাংলা ভাষা গবেষণার দিকপাল ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ -এর। তাঁরই অনুপ্রেরণায় ওই বছরই মুহাম্মদ আব্দুল হাই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেণীতে। প্রচণ্ড মেধার স্বাক্ষর রেখে ১৯৪১ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় এবং ১৯৪২ সালে এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্র যিনি বিএ ও এমএ উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। মাত্র সতেরো বছর বয়সে ছাত্রাবস্থাতেই ১৯৩৬ সালে ২৮ ডিসেম্বর মরিচা গ্রামের আনিসা বেগমের সঙ্গে আবদ্ধ হন বিবাহবন্ধনে। তাঁদের সুখী দাম্পত্যজীবনে একে একে জন্মলাভ করে তিনটি পুত্র এবং পাঁচটি কন্যা সন্তান।

মুহম্মদ আব্দুল হাই-এর কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে একমাস স্থায়ী শিক্ষকতার মাধ্যমে। এরপর বেঙ্গল জুনিয়র এডুকেশন সার্ভিসে বাংলার লেকচারার পদে যোগ দেন এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এসবই দেশভাগের আগে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সেবছরই ১১ সেপ্টেম্বর তিনি রাজশাহী সরকারি কলেজে লেকচারার হয়ে আসেন। দু’বছর এখানে থাকার পর, ১৯৪৯ সালের ২ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ভাষাতত্ত্বে গবেষণার জন্য যান। সেখানে অধ্যাপক জে আর ফার্থের নির্দেশনায় A Study of Nasals and Nasalization in Bengali শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করেন এবং ১৯৫২ সালে ডিস্টিংশনসহ এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। সেই বছরই ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষক পদে ফিরে আসেন। ১৯৫৪ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি বিভাগের রিডার বা সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মুহাম্মদ আব্দুল হাই রিডার থেকে প্রফেসর পদে উন্নীত হন এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন।

তাঁর শিক্ষা এবং কর্মজীবনে কিছুটা আলোকপাত করেই ধারণা পাওয়া যায়, তাঁর অসাধারণ মেধা সম্পর্কে। এই বিরল মেধার অধিকারি মানুষটি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন বাংলা ভাষা নিয়ে। বাংলা সাহিত্যের নানা দিক নিয়েও করেছেন গবেষণা, যার সুফল আমরা ভোগ করছি আজও। ভাষাতত্ত্ব ও ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা ছাড়াও ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত, দ্রাবিড় প্রভৃতি ভাষা শেখার যে সুযোগ তিনি লাভ করেছিলেন। সে সুযোগকে পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষাকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। (চলবে)🍁

 

 

🍂কবিতা 

 

 

 

 

পরাণ মাঝি 

 শান্তি

 

কাছে পিঠে জ্বালানি নেই; তবু আগুন আগুন আভা

সেই কবে ফাগুন এসে জ্বেলে ছিল আলো ; ফুল ফোটা শ্রেয়সী সকালবেলা
সে আলো এখন কেবলই সাদা

নোনা কাদার ঘামে সে তো ফোটে না; সুরে সুরে গান বাঁধে না ।

পরিচর্যার তোষণ কাটায় অনেক দূষণ ; বেড়ে ওঠে কাণ্ড- কারখানা

পোয়াতি ধানের শীষে শিশির রোদ ঝরে ; টলটল সে সুর
রাতের আকাশে সাদা চাঁদ এই আছে ; এই নেই
তবু শিশির ঝরে পড়ে পৃথিবীর পাত্রে

মা-টি হলে কোনো কথাটি গায়ে ধরে না; জ্বলেও না অন্তর্বাস
মাটি মেখে বোবা আর অন্ধ হলে সংসারে শান্তি মেলে বারোমাস

 

 

 

 

সাদার প্রেম কেবল কালি জানে

 

দূরের খেলা ভালোবাসে দূরবীন। কোনো এক সোনালি চিল ডানা ঝাপটায় চোখের তারায়।পাখায় পাখায় তার আকাশ রঙের প্রেম…

ডানা খুলে দে। অনন্ত উড়ালে যাই

সারসকে বলি – কাদায় কাদায় ফাঁদ পাতা। পাণ্ডুলিপি পুড়ে গেলে কলম বড় একা।

সাদার প্রেম কেবল কালি জানে। বরফ তলায় হরফ আঁকি।

হরপ্পা বলে – কাঁপিয়ে তোল জীবন আঁকা তুলি

 

 

 

 

কাকলি দাস ঘোষ

সে জন্মে

 

 

ভেবেছি ক’য়েকটা জন্ম পার হতে হতে

আবার জীবনের গল্প বলব…

সেই জীবনটা হবে ঘন বনে

একটা আলোর ঘর…

ঘাসে ঘাসে অনেক প্রদীপ জ্বলবে শুধু।

আর জন্মগুলোর যত মুখোশ

সব খসে পড়বে অরণ্যের পাতায় পাতায়।

চেতনা-তুমি কখনো ডুবেছ গভীরে…

কখনো ভেবেছ অজস্র আলোতে আলোতে

অন্ধকার নীরব অনুরণন…

যে আছে শুধু ভীষণ গভীরে।

আসলে স্তর পেরোতে হয়…

একের পর এক স্তর পার হলে

তবেই তো পৌঁছে যেতে পার

বক্ষের গভীরতম দেশে,

যাকে তুমি বল “core of the heart’.

আর সেখানে এতটুকু অন্ধকার পেলে…

এতটুকু ভালবাসার অপ্রাপ্তি হলে,

এতটুকু অবিশ্বাস এর য়ন্ত্রণায়…

রাস্তা হারিও না…

দরজা আছে…

নবজন্ম আছে…

ঘাসে ঘাসে প্রদীপ জ্বলে সেখানে l

শিশিরে তোমার কান্না নয়..

ঝলমলে হীরে জ্বলে ll

 

 

 

 

 

মিতা নূর 

বিষাদ মন্থন

 

জীবন খেলায় হারতে হারতে আমি একদম ক্লান্ত,
এবং হারাতে হারাতে আজ সবটুকু হারিয়ে ফেললাম।
সুখ স্বপ্ন, জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো,
হারালাম পছন্দের তালিকায় যা ছিল সব।
সবকিছু হারিয়ে শূন্য হাতে বসে আছি মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে,
বাদ দিতে দিতে কখন যে নিজেই বাতিলের খাতায় যুক্ত হলাম,
ধুলোবালি মাখা স্টোরে, জানি না কোন অপরাধে।

 

 

 

মোঃ ইজাজ আহামেদ

আর.জি. কর

 

উদাসী শরৎ
মন খারাপী দিন পরে আছে ধূসর পোশাক
আকাশের কাজল চোখে অশ্রু
চাল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে অবিরত

আর.জি. কর কাণ্ডে দুঃখিত শরৎ
দুঃখী জনগণ
জুনিয়ার ডাক্তারদের মুখে বজ্রপাত
তারা বুকে সুর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

অসহায় আর.জি. কর
শয়তান তোমার শরীরে নরকের কবর বানিয়ে গেছে
বলো আমি নরকের আগুনের চেন দিয়ে তোমাকে বাঁধবো

বলো আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না
আমি মৃত্যুর কন্যা

 

 

 

 

রুকসানা রহমান 

রৌদ্দুর তুমি কৈ

 

 

আজও তুমি, আসমানি নিশ্চুপ কেন…?
ঐ-খোলা জানালায় ফের বুজি চাঁদ
হয়েছে নিখোঁজ!
মানেনা-মানা,আজ মন নিশিরাত
তোলপার হাওয়া উড়ায় আঁচল
মেঘপাল।

নির্ঘুম চোখ খুঁজে, চৈতালী রাত
মর্তলোকের ঐ-দ্বীপাধারে।

তুহিন স্বপ্ব,থরথর শিহরণে স্রোতের প্লাবনে
ভেসে যায় দুর-বহুদুর…
তবু অশান্ত চিত্ত বিরহে কাতর কন্ঠে ডাকে
রৌদ্দুর তুমি কই…?

 

 

 

 

সীমা সোম বিশ্বাস

চামুণ্ডা কালী

 

দুর্নীতিগ্রস্ত, নারী দলনকারী-ঘাতক
হে ভীরু কামট পুরুষ,
তোমরা কি ভেবেছ
নারী শুধুই ভোগ্যপণ্য?
নারী মানে একটি দেহসর্বস্ব!
সৃষ্টিশীল সৃজনশীল কর্মে
দাঁড়িয়ে আজ সে আকাশ ময়ুরী,
সে কথা বেমালুম ভুলে
নারী দেখলেই তোমাদের
লালসার জিভ থেকে
লালা ঝরে পড়ে…

এখানেই শেষ নয়,
শুনছি লাশের সাথেও সহবাস হয়
আবার লাশকেও করো পর্ণ!
নরবিশাচের দল, কামটের দল
ধিক্কার, ধিক্কার
তোমাকে , তোমাদের জানাই ধিক্কার!

ভয় তোমাকে পেতেই হবে
ভুলে যেও না-
এ আমার বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ক্ষুদিরাম, বীর সুভাষ
আর নজরুলের বাংলা।
আমাদের উচ্চারণেই
দু’শো বছরের ইতিহাসও
হার মেনেছে।
প্রতিবাদে প্রতিরোধের
প্রাচীর তুলে স্তব্ধ করে দাও
আকাশ-বাতাস
স্তব্ধ হয়ে যাক গঙ্গা যমুনা
সহ সকল স্রোতস্বিনী।

আজ মেয়ে তুই
সুদর্শন হাতে গর্জে ওঠে
চামুণ্ডা কালীরূপে
কাটবি  শুধু কাটবি  অসুর আর
মানুষ খেকো রাক্ষসেরে…!

আজ  খুকু  তুই বুঝিয়ে দে
আর হবি না ভোগ্যপণ্য কিংবা
নরখাদকের শিকার,
বরং তোর বহ্নিতেজে
জ্বলবে শুধু জ্বলবে
আর পুড়তে পুড়তে
ছাই হবে  সব
ভ্রষ্টাচারী-ঘাতক!

তোর আলোতেই আসুক কন্যা
মাঘীপূর্ণিমা,
এক মানবিক আলো
স্নাত হবে পশ্চিমবঙ্গ,
স্নাত হবে ভারতবর্ষ।

 

 

 

 

 

গোলাম কবির

আমার চোখে সুন্দর

 

 

“সুন্দরের জয়গান চিরকাল!”
আমিও জানি তা অন্য সবার মতো
তবুও কেনো যে সবাই
সুন্দর হয় না সবার চোখে!

আমি যাকে ভীষণ সুন্দর বলে মানি
সে হয়তোবা অন্য কারো চোখে
তেমন একটা সুন্দরই নয়,
এখানেই তো সে অনন্য!
মানো আর না মানো!

সুন্দর কী হয় শুধু রূপে?
আমি বলি কখনোই নয় তা কোনো কালে!

সুন্দর হয় কারো চোখে
দেখা রূপের সাথে
যোগ হওয়া মানবিক গুণে।
অন্যথায় ঐ রূপের কী দাম আছে বলো??

 

 

 

 

মুন চক্রবর্তী 

বধূ হব 

 

আমারও তো ইচ্ছা ছিল সাজ ঘর আলো করে বসব

কোনো এক নিঃশব্দ রাতের প্রেমিক বন্ধনে

ইচ্ছার কাছে পরাজিত করেছে নৃশংসতা

এখন আমি কোনো এক অজ্ঞাত স্থানের বাসিন্দা।

লাল শাড়ি, লাল টিপের বদলে,চোখ ফুড়ে বেরিয়েছে লাল রক্ত!!

বিশ্বাস ছিল বধূ হব সাজ ঘর আলো করে

আমার শিরদাঁড়ায় ছিল বিবেক,প্রতারণার ধ্বংস স্তূপে ছাই হয়েছি-

লজ্জার ঢাকার আগেই লজ্জিত হয়েছে সমাজ

শরীরহীন হাঁটছি প্রতিদিন রাজপথে ভয়হীন আন্দোলনে-

দাসত্বের বন্দী দশা থেকে মুক্তির আকাশে তারা

অনেক যন্ত্রণার পর উঠে দাঁড়িয়েছি রাত্রির মশালে,

বধূ হবার শেষ নির্যাতনে ফেলে এসেছি প্রেমিক বন্ধন-

একাত্বীত্বের অসহায়তায় খুঁজে ছিলাম জোছনা

চোখে বড় ঘুম, অন্ধকার করে আসছে,ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কি? ক্লান্তিতে?

তোমারা কিছুই জানো না,জানতে চাইলে পুড়বে আগুণে হবে ছাই- ভাসিয়ে দেবে কোনো পবিত্র নদীর মোহনায়,যার নাম গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী।

 

 

   🍂গল্প / ১ 

 

_____________________________________________

এদিকে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু হয়েছে। আর বাড়ির দিকে মন ছুটে চলেছে সোনালীর। রোজ ভাইয়ে ফোনে দিন গোনার পর্ব। ফোন রাখার পর সে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পুজো শেষ হয় আর বাড়ি ফেরার উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে সোনালীর।

_____________________________________________

 

 

কাহিনী ভাইফোঁটা

বাণীব্রত 

 

 

রুদ্রপুরের গর্ব বছর তিরিশের অবিবাহিত সাহসী মহিলা সোনালী সেন। বাবা পরেশ সেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। বাবা কর্নেল হবার সুবাদে সোনালীর ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান হবার ইচ্ছে ছিল প্রবল। তাই পরেশ বাবুও সোনালীর সেই ইচ্ছেকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। সোনালী বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে বলে খুব আদরের। আর ছোট ভাইটি ওর শুধু ভাই না বন্ধুও বটে।

দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই সোনালীর মাথায় ঘুরতে থাকে কীভাবে সে সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে। বাবাকে অনেকবার বলেও কোনও কাজ হয়নি। বাবার কাছে শুধুই শুনতে হয়েছে নিজে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করো দেখবে চাকরি হবে। পরেশ বাবু কোনও দিন কারও থেকে সাহায্য নেননি তাই মেয়ের জন্যও নেবেন না। বাবার কথা শুনে জেদ চেপে যায় সোনালীর।

একের পর এক পরীক্ষা দিতে থাকে সোনালী। সঙ্গে স্কুলের পরীক্ষা ও। স্কুলের পরীক্ষায় পাস করলেও চাকরির পরীক্ষায় পাস করতে পারে না সে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করে সে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার সময় সোনালীর ভাগ্যদেবতা প্রসন্ন হয়। সে উত্তীর্ণ হয় চাকরির পরীক্ষায়। তারপর শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ হয়। স্বপ্ন এতদিনে পূর্ণ  হল সোনালীর স্বপ্ন।

তারপর থেকে বেশ ভালভাবেই নতুন চাকরি উপভোগ করছিল সোনালী। আর রোজ বাবা মা আর ভাই এর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ চলছিল ওর। এভাবে চলতে চলতে কখন যে তিনটে বছর পার হয়ে গেছে তা খেয়াল ও নেই। এবার সোনালী পেল প্রমোশন। তিন বছর সে যায়নি বাড়িতে। বাবা মা ভাই বারবার ওকে বাড়ি যেতে বললেও সবাইকে বলেছিল, প্রমোশন নিয়ে তবেই যাবে। তাই প্রমোশন পাওয়ার পর ভাইয়ের আব্দার ভাইফোঁটাতে যেতেই হবে সঙ্গে ভাল গিফট ও নিয়ে যেতে হবে। ভাইয়ের আবদার রেখেই কথা দিয়েছে সোনালী। প্রমোশন নিয়ে সোনালী পোস্টিং পায় কাশ্মীরে।

সেখানে বেশ সুনাম করে ফেলেছে সোনালী। এদিকে দুর্গাপূজার আয়োজন শুরু হয়েছে। আর বাড়ির দিকে মন ছুটে চলেছে সোনালীর। রোজ ভাইয়ে ফোনে দিন গোনার পর্ব। ফোন রাখার পর সে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। পুজো শেষ হয় আর বাড়ি ফেরার উৎকণ্ঠা  বাড়তে থাকে সোনালীর।

এদিকে ভাইফোঁটার দিন এসে গেল। বাড়িতে সাজসাজ রব। তিন বছর পর যে আজ সোনালী বাড়ি আসছে। ভাই ঠিক করেছে দিদির পছন্দের এক গোছা গোলাপ দিয়ে দিদিকে স্বাগত জানাবে। সেই মতো গোলাপ কিনে এনেছে। মা রান্না করেছে মেয়ের পছন্দের খাবার। ওর বাবা দীপাবলির আলোতে সুন্দর করে বাড়ি সাজিয়েছে। সোনালীর বন্ধুরা আর ওর পড়ার ক্লাবের থেকে সাজিয়ে রেখেছে তাদের আদরের বীর নায়িকাকে সম্বর্ধনা দেবার সব ব্যবস্থা।

বেলা গড়িয়ে যায় উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে সবার। ফোন করা হয়, ফোন বন্ধ পায়। বাড়ির সবার চিন্তা বাড়তে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয় তবুও সোনালী আসে না। কথা ছিল দুপুরে বাড়ি ফিরে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করবে। তাই ওর দেরী দেখে কারও খাওয়া হয়নি। এক বিষাদের সুর যেন বাজতে থাকে বাড়িতে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যের মুখে বাড়ির সবাই যখন সামনের রাস্তায় দাড়ান তখন দেখে দু’টো সেনাবাহিনীর গাড়ি রাস্তার মুখে ওদের বাড়ির দিকে আসছে। সবাই তাড়াহুড়ো করে সোনালী কে বরণ করার ব্যবস্থা করে। বাড়ির কাছাকাছি গাড়ি দু’টি আসার আগেই শাঁখ বাজতে থাকে চন্দন ফুল মালা নিয়ে বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশীরা দাঁড়িয়ে পরে৷ সবার আগে গোলাপের গোছা নিয়ে দাঁড়ায় সোনালীর ভাই।

গাড়িটা সোনালীর ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। দু’জন কর্নেল গাড়ি থেকে নামে। সবার আগ্রহ এবার তাদের ভালবাসার মানুষ সোনালী নামবে। তাই আগেই সোনালীর বাবা কর্নেলদের নামতে দেখে এগিয়ে এসে মেয়ের সম্পর্কে জানতে চান। মাথা নিচু করে কর্নেল বলেন গত পরশুর রাতে আততায়ীর গুলিতে আহত হয় হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় উনি বলেন ভাইফোঁটাতে আমাকে বাড়ি যেতেই হবে। আমার ভাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে সুস্থ করুন তাড়াতাড়ি। কিন্তু কাল দুপুরে সব শেষ হয়ে যায়। তাই ওনার ইচ্ছে অনুসারে ওনার নিথর দেহটা আজ আমরা নিয়ে এলাম। এদিকে তখন গাড়ি থেকে জাতীয় পতাকায় মোড়া বীর সেনানীর নিথর দেহটাকে সেনাবাহিনীর সেনারা সোনালী বাড়িতে রাখে। গোলাপের গোছাটা দিদির গায়ের উপর ছুড়ে দিয়ে ওর ভাই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, এই ফোঁটাতো তোর থেকে নিতে চাইনি দিদি। সোনালীর মা কান্নায় ভেঙে পড়ল। ওর জীবিত অবস্থায় যারা বরণ করবেন ভেবেছিল তারা বীর সেনানীর মরদেহের উপর বরণ করল অশ্রুসিক্ত নয়নে। ব্যতিক্রম শুধু ওর বাবা ঘর থেকে একটা জাতীয় পতাকা এনে মেয়ের বুকের উপর দিয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ম মতো বিদায়ী স্যালুট জানিয়ে শুধু বলল, “জয়হিন্দ” “বন্দেমাতরম”। 🍁

 

 

 

🍂গল্প /২ 

 

 

_____________________________________________

মন্দিরার বুঝতে অসুবিধে হয় না অলক কেন সিগারেট খাচ্ছে। মন্দিরা ঘরের দরজাটা খুলে ঢুকল তারপর টি-টেবিলের ওপর চায়ের কাপটা রেখে বলল, ‘তোমাকে কি বিস্কিট দেব?’ কোনও সাড়া দেয় না অলোক।
এবার মন্দিরা অলকের কাছে গিয়ে অলককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল তারপর বলল, ‘তুমি কি রাগ করেছ?’ তখনও অলক নিরুত্তর।

_____________________________________________

ভাঙা মগ

মমতা রায় চৌধুরী 

 

 

 

 

নেকদিন পর আজ যেন একটু খোলা জানলার কাছে দাঁড়িয়ে মন্দিরা নিজেকে আবিষ্কার করছে আসলে মন্দিরাকে নিয়ে তো তার পরিবারে সমস্ত গল্পের উৎপত্তি। শুধু পরিবার কেন পরিবারের লোকজন পাড়া-প্রতিবেশীদের এমনভাবে মোল্ড করেছে যে মন্দিরাকে নিয়েই তাদের বেশি চর্চা। মা -কাকিমা, বৌদিরা সবাই মিলে যেন মন্দিরার নাম-কীর্তন না করলে ওদের সকালটা কিছুতেই কাটে না।  সকালটা যেন শীতের কুয়াশার মত। মন্দিরার নাম-কীর্তন হতেই ওদের যেন জীবনে ঠিক কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো প্রবেশ করে।
মন্দিরা এসবই ভাবছিল। তাহলে মন্দিরার কদর আছে বলতে হয়। কে বলবে মন্দিরা একটা ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এসে পড়েছিল শ্বশুরবাড়িতে। শ্বশুর বাড়ি অবস্থা সম্পন্ন কিন্তু মন্দিরা নিজেরগুনেই নিজের ক্রেডিটেই একটা চাকরি করে, যার ফলে এটাই হয়ে গেছে তার পরিবারের বাকি সদস্য এবং তার জায়েদের কাছে চোখের বালি। আর আজকাল চর্চার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা ‘ভাঙা মগ’।
হ্যাঁ, তাই তো এই বাড়ির রান্নাঘরে ওই ভাঙা মগের অস্তিত্ব পরিবারের সদস্যরা মেনে নেবে কেন? তবে যে যতই সমালোচনা করুক না কেন কেউ দাঁত বসাতে পারেনি এখনও পর্যন্ত ওই ভাঙা মগে। তবে মন্দিরাকে এর জন্য প্রতিনিয়ত কম মানসিক যন্ত্রণা পেতে হয় না। কিন্তু সেই মানুষটি যন্ত্রণা থেকে সে যেন নতুন করে নিজেকে রিকভারি করে নেয় ঠিক যেমন কোন ব্যক্তির মাদকাসক্তির মত ঠিক যারা মাদকাসক্ত তারা নেশা করে আবার রিহ্যাব, ফিরে নেশা, আবার রিহ্যাব।এইভাবে তারা জীবন কাটায় অর্থাৎ এক ধরনের আসক্তি। এই আসক্তি হচ্ছে রোগ। এ এমন রোগ যা কখনও নির্মূল হয় না যাকে একবার ধরে তাকে অক্টোপাসের মতো বেঁধে নেয়। যদি কেউ মনে করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে তবে সেই বাঁচানোটা হয় পোশাকি, যার নাম রিকভারি। মন্দিরা সেভাবেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল আবার সেটাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তবে এ আসক্তি মাদকাসক্তির মতো নয় এর ভেতরে রয়েছে এক পরম মমতাময়ী মায়ের স্নেহ,  ভালবাসার স্মৃতি চিহ্ন। কাজের থেকে ফিরে এসে আগে সে ভাঙা মগের সন্ধান করে অর্থাৎ তার ঠিক জায়গাতে সেটি আছে কিনা একবার দেখে নিতে পারলে তার মন যেন চরম ক্লান্তির থেকে এক পরম শান্তির আশ্বাস হৃদয় মনে পায়।

 

**

আজ ছুটির দিনে মন্দিরা সেই ভাঙা মগটাকে নিয়ে আপন মনে সেই খোলা দক্ষিণের জানলার দিকে তাকিয়ে দেখছে মরা নদীটিকে। মরা নদী বটে এই নদী ক্ষীণশ্রোতা তবে আষাঢ়ের জল পেলে সে আবার ফুলে ফেঁপে ওঠে। তখন উন্মত্ত বেগবতী। সে বছরের বাকি দিনগুলোতে যেন জরাজীর্ণ নারী। ঠিক মন্দিরার মতোই। তার জীবনে এই ভাঙা মগ আর তার বাড়ির কাছে যে মরা নদীটি বর্ষার সময় যে ফুলে ফেঁপে ওঠে  ভাঙা মগের দিকে তাকিয়ে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করে, আত্মসন্ধান শুরু হয়। এসব ভাবতে ভাবতে আর নদীর দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের তুলনা করতে গিয়ে কিছুটা যেন খেই হারিয়ে ফেলে। হঠাৎই যেন তাকে কেউ ডাকছে মনে হল। কানটা খাড়া করে ‘বৌমা। ও বৌমা,  ব…উ…উ…উ…ম…আ…
মন্দিরা তাড়াতাড়ি ছুটে আসে বারান্দায়,  ‘কি হয়েছে মা?’
‘ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছ ক’টা
বাজে?’
‘মন্দিরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে ছ’টা বাজে।
মন্দিরা আপন মনে বলে ওঠে। হ্যাঁ অনেক বেজে গেছে। এক্ষুনি যাচ্ছি।’
‘তোমার শ্বশুরমশাই তো বেরোবেন’।
‘তৃপ্তির আবার মাথা ধরেছে, জানো তো ওর মাথা ধরলে সহজে মাথা ছাড়ে না।’
মন্দিরা সব জানে কাজের সময় হলেই ওর অনেক কিছু হয় কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই।
‘হ্যাঁ ,আমি জানি। আমি ওকে চা করে দিলেই ওঠিক হয়ে যাবে।’
‘হ্যাঁ, তাই দাও বাছা।’
হঠাৎ শাশুড়ি মার নজর পড়ে মন্দিরার হাতের হলুদ রঙের ভাঙা মগটার প্রতি।
‘এ কি বৌমা! হ্যাঁ গো তোমার কি লাজ-লজ্জা কিচ্ছুটি নেই। এদিকে শুনি বড় আফিসে তুমি কাজ কর। তাহলে তোমার এই ভাঙা মগটার প্রতি তোমার এত কিসের মোহ বলতে পারো? আর এই মগ নিয়ে তুমি এতক্ষণ চিন্তায় মশগুল ছিলে, যার জন্য আজকে ঘড়িতে দেখো সাড়ে ছটা বেজে গেছে। পাঁচটায় চা খান উনি। সেখানে… ছি:ছি:ছি:
‘আমি এক্ষুনি যাচ্ছি মা।’ ভাঙা মগটাকে হাতে করে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল মন্দিরা।
এদিকে বরদা দেবীর চিৎকারে বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙে যায়, যারা দিবানিদ্রা দিচ্ছিলেন। যদিও এখন এটা সান্ধ্য নিদ্রা বলা যেতে পারে। তবুও যতক্ষণ না পর্যন্ত চা পাওয়া যায় ততক্ষণ অব্দি এনারা বিছানা ছাড়েন না। যদিও অলকের কথা আলাদা। আজকে অফিসে ছুটি তাই একটু সে দেরি করেই ওঠে।
হাই তুলতে তুলতে তৃপ্তি এসে শাশুড়ি মার দিকে তাকিয়ে বলল ‘কি হয়েছে মা? এত চিৎকার করছেন কেন? মাথাটা এমনি ধরে আছে। আর এই চিৎকার নিতে পারছি না।’

‘না গো, মা তোমার অসময়ে ঘুমটা ভাঙালাম সত্যিই তো তোমার মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে তুমি বলেছিলে তারপরেও আমি চিৎকার করে ফেললাম, তা না করে কি আর উপায় আছে? ট্যারা চোখে মন্দিরার দিকে তাকিয়ে বাক্যবাণ বিপর্যস্ত করল।
আসলে এই বাড়িতে যা কিছু ঘটনা ঘটে সবই মন্দিরাকে নিয়ে তাই সকলে বুঝতে পারল আবার কিছু একটা ঘটেছে।
শ্বশুরমশাই বললেন বিরক্ত হয়ে ‘আরে ছাড়ো তো এসব। আমি কি চা পাব আমার কিন্তু ওদিকে দেরি হয়ে যাচ্ছে।’
‘পাবে না মানে। আলবাত পাবে।’
তারপর বরদা দেবী মন্দিরার দিকে তাকিয়ে বলল ‘কি হল কথা কানে যাচ্ছে না বৌমা। তোমাকে বলা মানে আমাদের গলাটাই ব্যথা। যা ভাল বোঝো করো, তবে মাথায় রেখ তোমার শ্বশুরমশাই কিন্তু ওটা খেয়েই বেরোবেন।’
অলক বারান্দায় এসে দাঁড়াল। বুঝতে পারল আবার মন্দিরাকে নিয়ে কিছু ঘটেছে। এবার যেন অলক আস্তে আস্তে কেমন যেন বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে। তাই ওর এই ব্যাপারগুলো ভাল লাগল না।
অলক মন্দিরাকে কিছু কটুক্তি করল।
একটু কি ঘুমোতেও পারব না। আচ্ছা জ্বালা হয়েছে, একটা ছুটির দিনেও শান্তি পাব না। সব সময় চিৎকার চেঁচামেচি।’
মন্দিরা আস্তে আস্তে বলল, ‘আমি এক্ষুনি চা করে দিচ্ছি।’
মন্দিরা ভাঙা মগ নিয়ে নিচে নেমে গেল।
তৃপ্তি হো হো করে হেসে উঠল।
সবাই একবার পেছন ফিরে দেখে নিল শাশুড়ি মা কৌতূহলের সুরে বলল, ‘কি হয়েছে ছোট বৌমা?’
আঙুল দিয়ে মন্দিরা ভাঙা মগটার দিকে দেখাল।
‘তা কি বলছি এতক্ষণ চিৎকার তো এই নিয়ে।
কি বলব বাবা অলক তোমার এই বউয়ের জন্য তো পাড়ায় কত কথা শুনতে হয়। আমাদের পছন্দ করা মেয়েকে তো তুমি করলে না বিয়ে। দেখো সারাটা জীবন তোমাকে একে নিয়ে পথ চলা হাড়ে একেবারে দুব্বো ঘাস গজিয়ে যাবে। এই সন্ধ্যেবেলায় তোমাকে বলে রাখলুম।’
অলক কোন কথা না বলে নিজের ঘরে চলে গেল রাগে অভিমানে একটা সিগারেট ধরাল। তারপর জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। ভাবতে লাগল সত্যিই কি অনেক ভুল করেছে মন্দিরাকে বিয়ে করে। কেন এরকম করে মন্দিরা। সকলের কাছে কেন হাসির পাত্রী হয়ে উঠছে ও দিনকে দিন। ওকি বোঝে না? কি দরকার ওর ওই ভাঙা মগটাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা দেখানো। এ বাড়িতে কি আর কোনও ভালো মগ নেই? নাকি তাদের অবস্থাটা এতটাই খারাপ যেখানে মগ কেনার টাকা পয়সা নেই?
সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘর পরিপূর্ণ।
মন্দিরা ঘরে ঢোকার আগেই বুঝতে পারল, আবহাওয়া খুব খারাপ। অলকের মনটা মোটেই ভাল নেই। যখনই কোনও খারাপ কিছু ঘটে তখনই অলক এরকম ঘনঘন সিগারেট খেতে থাকে।
মন্দিরার বুঝতে অসুবিধে হয় না অলক কেন সিগারেট খাচ্ছে।
মন্দিরা ঘরের দরজাটা খুলে ঢুকল তারপর টি-টেবিলের ওপর চায়ের কাপটা রেখে বলল, ‘তোমাকে কি বিস্কিট দেব?’
কোনও সাড়া দেয় না অলোক।
এবার মন্দিরা অলকের কাছে গিয়ে অলককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল তারপর বলল, ‘তুমি কি রাগ করেছ?’
তখনও অলক নিরুত্তর। *
‘বলো না, তুমি কি রাগ করেছো? এত সিগারেট খাচ্ছ?’
অলোক কিছু বলছে না। মন্দিরাও ছাড়ার পাত্রী নয়। ও জানে অলককে কি করে ঠাণ্ডা করতে হয়।
আরও জোরে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরল অলোককে।
মন্দিরার বুকের ভেতরে যে কতটা যন্ত্রণা ও-জানে এই মগটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার আদি অস্তিত্বের মূল উৎস কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারছে না বললেই হাসির খোরাকের পাত্রী। আজকে ভেবেছে অলক যদি সত্যি এমন তেমন কিছু বলে ঘটনাটা খুলে বলবে।
অলোক আলতো করে মন্দিরার হাত দু’টো ছাড়িয়ে দিল।
‘কিগো তুমি এতটা রাগ করেছ?
দেখি দেখি কতটা রাগ করেছ তুমি। তুমি পারবে আমার প্রতি রাগ করে থাকতে?’
মন্দিরা এবার সামনে থেকে গিয়ে অলককে জড়িয়ে ধরল বুকে মাথা রেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল।
অলকের বুকের ভেতরে যেন কি একটা যন্ত্রণা মোচড় দিয়ে উঠল। কেন মন্দিরা কাঁদছে? মন্দিরা কাঁদলে তো ওর ভাল লাগে না। সত্যিই মন্দিরার সঙ্গে এই বাড়িতে যা হয়, সব সময় অন্যায় হয়। কিন্তু এই ভাঙা মগটাকে নিয়ে কেন মন্দিরার এত আদিখ্যেতা সেটা ও-বুঝতে পারছে না তবে মন্দিরার চোখের জল অলক সহ্য করতে পারে না। অলোক মন্দিরাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, ‘তুমি কেন আমাকে এত কষ্ট দাও মন্দির।’  অলক মন্দিরাকে মন্দির বলে ডাকে।
‘তুমি তো জানো, আমি তোমাকে কত ভালবাসি।
মন্দিরা আরও কেঁদে ওঠে।
এবার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,  ‘তোমার চোখের জল আমার কাছে এক একটা যন্ত্রণার টুকরো। তুমি কেঁদো না।’
মন্দিরাকে খাটের পাশে গিয়ে বসাল। তারপর বলল,  ‘আচ্ছা মন্দির বল তো তুমি বাড়িতে ভাঙা মগটাকে নিয়ে কেন সবার কাছে এত হাসির পাত্রী হয়ে উঠছ? তুমি কি জানো না, তোমাকে বললে আমারও ভাল লাগে না।’
‘আমি জানি।’
‘তুমি জানো তারপরেও কেন তুমি ভাঙা মগ
ফেলে দিচ্ছ না। কেন তুমি ওকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা করছ?’
তখনও মন্দিরা নিরুত্তর।
‘না না তুমি আমাকে বল আমার কাছে তো তোমার কোনও কথা গোপন নেই তবে কেন তুমি এই মগটার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলছ না তোমাকে দরকার হলে আমি আরও ভাল মগ কিনে এনে দেব। প্লিজ মন্দির তুমি এই মগটাকে ফেলে দাও। আমাকে এই যন্ত্রণার হাত থেকে তুমি রক্ষা করো। প্লিজ। জোড় হাত করে মন্দিরার সামনে দাঁড়ালো অলক।
মন্দিরা অলকের হাত দু’টো চেপে ধরে নিজের বুকের কাছে রাখল, ‘ছিঃ তুমি এভাবে আমাকে বোলো না। তুমি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করো না। আমার আশা ভরসা সবই তুমি। তুমি যদি আমার সঙ্গে এরকম করো আমি কোথায় গিয়ে দাঁড়াব বলো। ‘
‘তোমাকে তো আমি কবে থেকে বলছি চলো আমরা দু’জনেই চাকরি করছি এ বাড়িতে পড়ে থেকে কী লাভ! তোমাকে তো কত কথা শুনতে হয় মন্দির আমরা তো একটা অন্য জায়গায়ও থাকতে পারি। সে সামর্থ্যটুকু তো আমাদের আছে।’
‘না আমি সেটা কোনওদিন চাইনি তুমি আমাকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাও। আমি তো শুধু তোমাকে ভালবাসিনি। এই পরিবারের সকলকে সঙ্গে নিয়ে থাকব বলেই আমি এই পরিবারে
এসেছি।’ এর মধ্যে গজরাজ এসে
ভৌউ ভৌউ করতে লাগল।
‘কিন্তু সারাক্ষণ এই তোমাকে এত লাঞ্ছনা, অপমান আমি যে নিতে পারছি না তোমার স্বামী হয়ে।’
‘কেন নিতে পারছ না ওরা তো তোমার পরিবারেরই সদস্য।’
এবার গজরাজ হাত দু’টো বাড়িয়ে অলক আর মন্দিরাকে কিছু বলতে চাইল।
মন্দিরা এবার হেসে ফেলল, ‘ওই দেখো আমাদের গজ এসে গেছে। আর কি বলবে বলো একে ছেড়ে আমি কোথায় যাব?’
‘কেন ওকে নিয়েই যাব তুমি শুধু হ্যাঁ বলো।’
‘মাথা ঠাণ্ডা করো। ওভাবে বলতে নেই। আচ্ছা আমাকে বলতে তোমার এত কেন কষ্ট হচ্ছে।
তুমি কি ধাতুতে গড়া মন্দির বলতে পারো?’
‘গজ তোমার বাপি কি বলছে এসব।’
এতদিন তো গজকে নিয়ে চলেছে বাড়িতে, এখন চলছে এই ভাঙা মগ নিয়ে। উফ! আমি আর পারছি না মন্দির।’
‘দেখেছ এর উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে
গেলে। আসলে কি বল তো এনারা তো বাড়ির বাইরে যান না, ফলে চারপাশে জগত সম্পর্কিত এদের অত চেনা জানা নেই না। এই বাড়িতে থেকে এরা এইসব নিয়ে থাকতেই ভালবাসে। চলুক না।
তারপর গজরাজকে মিষ্টি হামি খেল। যে ক’য়েকটা বিস্কিট ছিল গজরাজকে বিস্কিট খেতে দিল ।
‘যাইহোক মন্দির তুমি আমাকে কথা দাও ওই
মগটা তুমি ফেলে দেবে। আমি তোমাকে দরকার হলে কতগুলো মগ লাগবে বলো ও আমি এনে দিচ্ছি। ওই হলুদ রঙের মগই এনে দেব। কিন্তু এই ভাঙা মগ তুমি ফেলে দাও।’
একটু অবাক হয়ে মন্দিরা অলকের দিকে তাকিয়ে বলল ‘ভাঙা বলে ফেলে দিতে বলছ! যেদিন আমি অকেজো হয়ে যাব আমাকে এভাবে ফেলে দেবে, ছুঁড়ে দেবে?’
‘এসব কি কথা বলছ মন্দির। তোমাকে ছুঁড়ে ‘ফেলে দেব!’
‘তাহলে কেন এই মগটাকে তুমি বলছ ফেলে দিতে? মগের সাথে তোমার তুলনা! কি বলো না মাঝে মাঝে! আমার সত্যি মনে হয় তোমার ভেতরে কোনও একটা ছেলে মানুষই পাগলামি কাজ করে।’
‘হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ।’
কিন্তু না এই বললে চলবে না তোমাকে এই মগটা কিন্তু ফেলতেই হবে আমি বলে দিলাম। এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠল, ‘আমার পরাণ যাহা চায় তুমি তাই…।’
‘এ সময় আবার কে ফোন করল!’
মন্দিরা ফোনটা অলকের কাছে দিল, ‘হ্যালো’।
আমি শুভাশিস বলছি রে।’
‘কোন শুভাশিস?’
‘ব্যাটা শুভাশিসকে ভুলে গেছিস। আমার বাড়ি আইসা ইলিশ মাছ ভাপা খাও আর শুভাশিস ভুইলা যাও।’
এবার অলক হো হো করে হেসে উঠল, ‘আরে বাবা, তুই তো অন্য নম্বর থেকে ফোন করছিস আমি কি করে বুঝব বল তো? আরে গলা শুনেও সব সময় বোঝা যায় না। তোর দেশজ ভাষায় বললে তো আমি বুঝব।’
‘আচ্ছা ক।’
‘কি বলব? তুই ফোন করেছিস তুই বল।’
কইতাছি কি আমাগো বাড়ি একটা গেট-টুগেদারের ব্যবস্থা করছি, তগো দুইজনরে কিন্তু আসতেই হইবো। ‘
‘কবে?’
‘এইতো আজ বাদে কাইল।
‘তোমার মাথা টাথা কি খারাপ হইছে?’ কালকে অফিসে যাব না?’
‘একদিন ছুটিটুটি নাই হাতে?’
‘হ্যাঁ তো আছে।’
‘তাইলে ছুটি ল আর কোনও কথা শুনুম না মন্দিরারে নিয়া অবশ্যই আইসবি কিন্তু ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে ছটায়’। বলেই ফোন কেটে দিল।
‘মন্দির, মন্দির..।’
‘কি বলছ?’
‘আর এদিকে এসো না।’
‘আরে না সন্ধ্যে দেব দেরি হয়ে গেছে।’
‘আরে থামো তো।’
‘না, থামলে হবে না। আমি এসে শুনছি’।
‘আরে কথাটা শুনে যাও না প্লিজ।’
‘আচ্ছা বলো, বলো।’
বলছি, কালকে কিন্তু শুভাশিসের বাড়ি যেতে হবে সেই ভাবে তৈরি থেক।’
‘মানে!’
‘মানে আবার কি? যেতে হবে।’
কথা শুনতে হবে কালকে ছুটি নিয়ে যাব। তুমি বলতে যাবে কেন? অফিসে যাবার নাম করেই যাব না হলে জীবনেও কোথাও বেরোতে পারবে না এই তোমাকে বলে রাখলাম।’
মন্দিরা কি একটা বলতে যাচ্ছিল, ‘যাও, সন্ধ্যে দাও দেরি হচ্ছে না?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ যাচ্ছি গজরাজ পেছন পেছন চলল।’
‘তুই কোথায় যাচ্ছিস এদিকে আয় গজ গজ।’
গজ মন্দিরার দিকেও যেতে চাইছে আবার অলকের কথাও ফেলতে পারছে না। বেচারা কি করে লেজ নাড়ছে। অলোক তা দেখে হেসে উঠল, গজরাজকে অনেক করে আদর করে দিল তারপরে গজরাজ চলে গেল নিচে।

 

**

মন্দিরা সন্ধ্যে দিচ্ছে ঠাকুর ঘরে বসে গজরাজ ঠাকুর ঘরে একপাশে গিয়ে বসে আছে
মন্দিরা জানে গজ ঠাকুর ঘরে প্রবেশ করতে দেখলে শাশুড়ি মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন। কায়দা করে গজরাজকে একটু সন্দেশ দিয়ে বারান্দায় বের করে দিল।
ইতিমধ্যে শাশুড়ি মা ঠাকুর ঘরে আসলো এসে গজরাজকে বারান্দায় দেখতে পেয়ে বলল, ‘সেই আবার ওকে ঠাকুর ঘরের পাশেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বৌমা। হ্যাঁগো তোমাকে নিয়ে আমি কি করি বল দেখি?’
‘কি করব মা অবলা জীব ও তো বারান্দাতেই আছে।’
ঠাকুর ঘর বুঝতে পারছ না রাস্তার একটা কুকুর তাকে নিয়ে কেন তুমি এত আদিখিতা করো তোমার যত আজেবাজে কাজ।’
মন্দিরা কোনও কথা না বলে শাক বাজিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে।
বরদা দেবী বললেন” দাঁড়াও দরজাটা লাগিও না, আমি প্রণামটা শাড়ি রাধা মাধবকে।’ আচ্ছা ঠিক আছে।
গজরাজ লেজ নাড়তে নাড়তে মন্দিরার পাশে এসে দাঁড়াল।
শাশুড়ি মা প্রণাম করে বেরোনোর পর বললেন, ‘ওকে সরাও, সরাও বলছি, আমাকে যেতে দাও।’
মন্দিরা ঠাকুর ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিল।
শাশুড়ি মা গজ গজ করতে করতে নিচে নামছেন আর বলছেন আর পারি না তবু রাধা মাধবকে প্রণাম করতে আমাকে আসতেই হয়।’
ছোট বৌমা বেরিয়ে এসে বলল ‘ও মা
পায়ে একটু মালিশ করে দেব তেল?
‘তুমি মালিশ করে দেবে। না, না তোমার হাত ব্যথা করবে আসুক বড় বৌমা আসুক করে দেবে।।
মন্দিরা জানে কোনওদিনও এসব করবে না শুধু শাশুড়ির মন পাওয়ার জন্য এই কাজটা করে।
মন্দিরা কথাটা না শোনার ভান করে ওপরে নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে ঠিক তখনই বরদা সুন্দরী ডাকলেন, ‘বৌমা’ও বৌমা এদিকে এসো। আহ হাঁটুটা ব্যথায় এত টনটন করছে।’
‘আমাকে ডাকছেন। ‘
আমাকে একটু তেল মালিশ করে দাও তো’।
ছোট বৌমা পাশে দাঁড়িয়ে।
‘ছোট বৌমা দাও দাও আমার তেলের বাটি দাও বড় বৌমাকে।’
মন্দিরা কোনও কথা না বলে হাঁটুতে তেল মালিশ করতে লাগল।
একটু আরাম পেলাম।
বলছিলাম, ‘বৌমা একটা কথা বলি তুমি ওই মগটাকে ফেলে দাও।’
মন্দিরা কোনও কথা বলছে না।
‘দিদি ভাইয়ের মগটার প্রতি খুব মায়া তাই না দিদিভাই? না হলে কোনও স্মৃতি জড়িয়ে আছে।’ একটু টিপ্পনি কেটে কথা বলল তৃপ্তি।
‘ওসব স্মৃতি বুঝি না বৌমা আমাদের বাড়িতে তো মগের অভাব নেই। ওই মগটাকে ফেলে দিও। তুমি এসো।
‘ছোট বৌমা তুমি এখানে বস। আমার কিছু কথা আছে দরজাটা লাগাও। তোমাকে যে জন্য ডেকেছিলাম গয়নাগুলোর ব্যাপারে।’
মন্দিরা বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে ধরাম করে দরজাটা আটকে দিল তৃপ্তি।
‘যেন মন্দিরার বুকের ভেতরে গিয়ে লাগল। বাইরে থেকে শুনতে পেল শাশুড়ি মা বললেন দেখো দেখো কোন গয়না তোমার বেশি পছন্দ?’
‘মন্দিরা জানে এসব কোনদিনও তার প্রাপ্য হবে না ।শাশুড়িমার শুনেছে অনেক গয়না অথচ মন্দিরার জন্য একটাও পারিবারিক ঐতিহ্যের গয়না মেলেনি। যদিও তার কোনও আক্ষেপ নেই কারণ তার স্বামী ভীষণই ভাল।
মন্দিরা চোখের জল নিয়ে উপরে উঠে আসে।
অলক অধীর আগ্রহে মন্দিরার জন্য অপেক্ষা করছিল।
‘মন্দির তুমি এসো আমার পাশে বসো।
তোমার চোখে জল কেন? তুমি তো গেলে ঠাকুর ঘরে পুজো করতে, সন্ধে দিতে। তো হঠাৎ কি মনে হল!’  আমি কি তোমাকে বেশি কিছু বলে ফেলেছি মন্দির?’
‘না ,না তুমি কি বলবে? তুমি আছ বলেই তো এখনও আমার পৃথিবীটা এত সুন্দর।’
‘কি আবার তৃপ্তি কিছু বলেছে তোমায়, নাকি মা?’
চুপ করে থাকে মন্দিরা।
‘শোনো কালকে তাহলে আমরা যাচ্ছি। তুমি তো বলবে না আমাকে কিছু মুখ ফুটে। যাইহোক কালকে যাচ্ছি ।’
মন্দিরা ঘাড় নাড়ে।
‘অফিস যাবার নাম করেই তুমি বেরোবে। একটা ভাল শাড়ি নিয়ে নেবে, পরে চেঞ্জ করে নেবে ওখান থেকে।’
‘তারপর বাড়ি ফেরার
সময়?’
‘সিম্পল ওখান থেকে আবার চেঞ্জ করে নেবে। আরে বাবা এতো ভাবছ কেন, আমি আছি তো তোমার সাথে। তবে তোমার ভাঙা মগটার সাথে নয়। হেসে অলোক মন্দিরার গাল দু’টো টিপে দিল।
‘আচ্ছা আমি একটু বেরোচ্ছি কেমন?’
মন্দিরা ঘাড় নাড়ে।
‘ওই দেখো গজ হাজির।’
‘গজরাজ তোমার মামনিকে তুমি দেখো, আমি আসি’।গজরাজ লেজ নাড়তে লাগল।
এভাবেই এদিনের রাত কাটে।
পরের দিন মন্দিরার ভিতরে একটা বিশেষ উত্তেজনা কাজ করছিল। কতদিন পর আবার একটা গেট টুগেদার। ওদের পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সবার দেখা হবে। কি যে আনন্দ হচ্ছে।
সকাল থেকে মন্দিরার চোখ মুখে যেন একটা আলাদা দীপ্তি কাজ করছিল। মন্দিরের ছোট জা তৃপ্তি সেটা বেশ ভাল মতোই খেয়াল করল। অফিসে বেরোনোর সময় তৃপ্তি আড়চোখে দেখে নিয়ে শাশুড়ি মা’কে কি বেশ দেখাল। সেটা মন্দিরা বুঝতে পারল যে মন্দিরাকে নিয়ে কিছু একটা বলছে কিন্তু মন্দিরা আর এসব তোয়াক্কা না করেই বেরিয়ে গেল।
অলক মাঝ রাস্তায় গিয়ে মন্দিরার জন্য অপেক্ষা করছিল।
তারপর বলল ‘শোনো আজকে তো অফিস ছুটি নিয়েছি। চল আজকে একটু দু’জনা অন্য জায়গায় ঘুরেও নিই। তারপর আমরা শুভাশিসের বাড়িতে যাব।’
মন্দিরা বলল’ তোমার পেটে পেটে এত কিছু ছিল’।
‘না করে কি করব। আমার এই বউটার জন্য তো এইটুকু করতেই হয়।’
‘তো বেশ।’
ওলা এসে দাঁড়াল।
‘একি তুমি ওলা বুকিং করেছ?’
‘কোনও কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে বস।’
মন্দিরা বিয়ের আগে ঠিক যেমন করে অলকের সঙ্গে দেখা করত, আজকের দিনটা যেন মনে হচ্ছে অনেকটা সেরকম। কত কিছুই না কারচুপি করতে হয়েছে জীবনে একটু অলকের সঙ্গে দেখা করবে বলে।
‘কোথায় যাচ্ছ সেটা তো আমাকে জানাবে।’
‘কোথায় আবার দক্ষিণেশ্বর।’
‘দক্ষিণেশ্বর তা তুমি বললে না আমি না খেয়ে থাকতাম। মায়ের ওখানে পুজো দিতাম।’
‘আরে বাবা মা কি বলেছে খেয়ে পুজো দিতে পারা যাবে না। চলো।’
অলক মন্দিরার হাত দু’টো নিজের হাতে নিয়ে মন্দিরার দিকে তাকিয়ে থাকল অপলক দৃষ্টিতে তোমার এই চোখের দিকে তাকিয়েই তো আমি আটকে গিয়েছি। তুমি যে কি করলে আমায়।’
‘সত্যি করাটা ঠিক হয়নি। তুমি এর থেকে আরও কত ভাল ঘরে বিয়ে করতে পারতে বলো? তোমার পরিবারও কত খুশি হত।’
‘আচ্ছা মন্দির আজকে আমরা বেরচ্ছি দু’জনা একসঙ্গে একটু টাইম স্পেন্ড করব বলে আর তুমি সেই পরিবার নিয়ে কথা ধুর ভাল লাগে না।’
‘না তুমি যতই রাগ করো এটা তো ঠিক।’
‘ঠিক বেঠিক আমি জানি না আমি জানি মন্দিরাতেই ঠিক।’
‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো…’
‘বাবা তুমি কান ধরলে।’
আজকে তো গান গাওয়ার দিন।’
মন্দিরে মাকে দর্শন করার পর একটু ঘুরে তারপর বেরিয়ে পড়ল শুভাশিসের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অনেকদিন পর সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে সন্ধ্যাটা বেশ ভাল কাটল। তারপর বাড়িতে ফেরা দু’জনা বেশ হাসিখুশিতেই বাড়ি ফিরেছিল।
কিন্তু হাসির মুহূর্তটুকু ক্ষণিকের জন্য।
কে জানে এরপরে অপেক্ষা করছে আরও অন্য কিছু।
অলক বাইরে থেকেই ফোন করে দিয়েছিল আজকে বাড়িতে খাবার খাবে না।
মন্দিরাও জানিয়ে দিয়েছিল আজকে ওদের অফিসে একটা পার্টি আছে।
ফলে আজকে রান্না ঘরের দিকে মন্দিরার না ঢোকারই কথা।
তবে ফ্রেশ হয়ে মন্দিরা গজরাজকে নিয়ে একটু আদর করছিল ঠিক তখনই তৃপ্তি শাশুড়ি মাকে ইশারায় কি বেশ দেখাচ্ছিল আর কি সব কথা গুজগুজ করছিল।
তবে মন্দিরা বুঝতে পেরেছে যে, আজকে গজরাজের খাবার খাওয়া হয়নি।
তাই রান্না ঘরের দিকে যায় ওর যেন কিছু একটা খাবার বানাবে।
কিন্তু একি পেশার কুকারে একটু চাল আর একটু মাংস দিয়ে জল দিতে গিয়ে সেই ভাঙা মগ সে আর খুঁজে পায় না।
কোনও রকমে অন্য কিছু দিয়ে প্রেসার কুকারে জল দিয়ে গজরাজের খাবারটা বানিয়ে গজকে খেতে দেয় তারপর ইতিমধ্যে না না জায়গায় খোঁজ করতে থাকে। পায় না। হঠাৎই গজরাজ ছুটে যায় প্রাচীরের দিকে সেখান থেকে একটা কি মুখে নিয়ে ছুটে আসে মন্দিরার কাছে। মন্দিরা খেয়াল করে হলুদ মতো কি একটা বস্তু তারপরে আলোতে এসে দেখতে পায় সেটাই তার ভাঙা মগ সেটাকে ভেঙেচুরে ফেলে দেয়া হয়েছে।
এবার মন্দিরা আর যন্ত্রণাটাকে চেপে রাখতে পারে না আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠে।
অলক দ্রুত ছুটে আসে মন্দিরার কাছে। ওদিকে গজরাজ ভৌউ ভৌউ করে কাঁদতে থাকে।
অন্যদিকে শাশুড়ি মাকে তৃপ্তি বলে, ‘ওই দেখুন মরা কান্না শুরু করেছে মা।’
তবে এবার এই কান্নার আওয়াজে বরদা সুন্দরী দেবী একটু ভয় পেয়ে গেলেন ভেতরে ভেতরে। কিন্তু মুখে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘মরণ একটা ভাঙা মগের জন্য কেমন কাঁদছে দেখো।’
অলক এসে মন্দিরাকে জড়িয়ে ধরে, কি হয়েছে তোমার কাঁদছ কেন?’
হাতে ভাঙা মগের টুকরো অলকের বুঝতে অসুবিধা হয় না মন্দিরার কান্নার আসল কারণ কি?
অলক বলে ‘তোমাকে আমি আরও একটা ভাল হলুদ রঙের মগ এনে দেব। মন্দির তুমি কেঁদো না। চলো ভেতরে চলো।’
মন্দিরাকে উপরে নিয়ে যেতে পারছে না অলক।
অলকের মা এসে বলল ‘তোর বউকে সামলা এখন রাত হয়েছে এরপর পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসবে।’
মন্দিরার কান্না কিছুতেই থামছে না।
এবার চিৎকার করে মন্দিরা বলছে, ‘এরা আমার সবকিছু কেড়ে নিল আমার সামান্য একটা ভাঙা মগ ছিল যার সাথে আমার অস্তিত্বের কিছুটা অংশ জুড়ে ছিল। যাকে দেখলে আমি আমার মাকে দেখতে পেতাম। আমার মায়ের হাতে স্পর্শ পেতাম সেটাকে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল। কি এমন দোষ করেছি আমি? আমার কি এইটুকু অধিকার নেই? তুমি বলতে পারো, কেন আমার এইটুকু অধিকার নেই? কি এমন করেছি আমি?’
এবার অলোক বুঝতে পারে এই মগটার প্রতি কেন মন্দিরার এত মায়া, এত ভালবাসা।
মন্দিরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ওপরে নিয়ে চলে যেতে চায়। মন্দিরা তখনও কেঁদেই যাচ্ছে। এ যেন যন্ত্রণা আরো বেশি তীব্রতর হচ্ছে।
তৃপ্তি যখন বলল, ‘দাদা, এই নিন একটা ভাল মগ।’
তবে বরদা সুন্দরী দেবী কথা বলার সাহস পেলেন না।আসলে বড় বৌমাকে কক্ষনও এইভাবে কাঁদতে দেখেননি। সত্যিই বরদা সুন্দরী দেবীর মনেও যেন কেমন একটা কষ্ট হল। এটা কি ঠিক করেছে ওরা।
অলক শুধু বলল, ‘তুমি চুপ করে থাকো। একটা কথা বলবে না তুমি। তুমি মগ দেখাতে এসেছ। মগ কেনার ক্ষমতা আমার নেই। নিয়ে যাও তুমি তোমার মগ।’
ছোট ভাই অরিত্র পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অরিত্র কোনও কথা বলছে না।
তোমাকে একটা স্পষ্ট করে কথা বলি মা। কাল থেকেই এ বাড়ি আমরা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার বউয়ের যদি কোনও সম্মান না থাকে ওর যদি কোন ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনও দাম না থাকে সেখানে আমি কিছুতেই থাকব না থাকো তোমরা এই বাড়িতে তোমার ছোট ছেলে আর ছোট বউ মাকে নিয়ে।’
বরদা সুন্দরী দেবী বুঝতে পারলেন, বড় বৌমা চলে গেলে তার কি দুর্গতিটাই না হবে! শুধু এটুকু বললেন,  ‘বাবা আমি বুঝতে পারিনি।’
‘বুঝতে পারোনি। কারণে অকারণে তোমরা কম কথা বলো কম যন্ত্রণা দাও মন্দিরাকে ওর বাড়ির অবস্থা অতটা ভাল নয় বলে কিন্তু ওর পরিবারে শিক্ষাটাও… 🍁

 

 

🌻অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একাধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতিছবিগল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী

অবশ্যই লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা দয়া করে পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

বি: দ্র:  সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment