Sasraya News

Thursday, February 13, 2025

Sasraya News | Sunday’s Literature Special | 2 February 2025 | Issue 50 || সাশ্রয় নিউজ | রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | সংখ্যা ৫০

Listen

সাশ্রয় নিউজ-এর সকল পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের শুভ সরস্বতী পুজোর প্রীতি ও শুভেচ্ছা। সরস্বতী পুজো সকলের আনন্দমুখর হোক

 

 

 

 

 

🍂হামিনেথা

 

ঠাকুরের কাছে কেউ এলে তিনি তাকে নানারকম পরীক্ষা করতেন। তাকে প্রশ্ন করে, তার চালচলন, দেহের গঠন দেখে বিচার করতেন। তারপর ঊর্ধ্বভূমিতে উঠে ভাবদৃষ্টিতে তাকে দেখতেন। আর যে যেমন আধার সেইভাবে তাকে এগিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতেন।

 

শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

 

ঠাকুরের একটি কথা যা স্বামীজীকে বলেছিলেন, ‘দেখ্কারো ভাব নষ্ট করতে নেই, যে যে-ভাবের তাকে সেই ভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে হয়’। স্বামীজী এই শিক্ষাটিকে সমস্ত জীবনে কখনও ভোলেননি ৷ বারবার স্বামীজী বলেছেন, কারো কল্যাণ করতে হলে তোমার ভাব তার উপরে চাপিয়ে দিও না। তাকে তার ভাবে বাড়তে সাহায্য কর ৷ প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে তিনি দাঁড়াচ্ছেন তার চরম গন্তব্য রূপে, চরম লক্ষ্য রূপে।  কিন্তু প্রত্যেকেই তাঁর নিজের নিজের দৃষ্টি দিয়ে তাঁকে দেখছেন।

প্রত্যেককে নিয়ে ঠাকুর খেলা করছেন। এতগুলি ঘুঁটি কিন্তু এমন খেলোয়াড়— জানেন কোন ঘুঁটিকে কিভাবে চালাতে হবে। ঠাকুর নিজে বলেছেন এ-কথা।

আমরা দেখব— আমরা তাঁকে কিভাবে গ্রহণ করলে আমাদের জীবনে পূর্ণতা আনতে পারব। সকলের জন্য সব সম্ভার নিয়ে যেন তিনি বসে আছেন, যে যা চায় তাকে তাই দেবেন ৷ এই কথারই সংক্ষিপ্ত সংস্করণ হল ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’ ৷ তিনি সকলকে পুর্ণত্বে নিয়ে যাবার জন্য যা প্রয়োজন তা দিয়ে যাচ্ছেন এবং ‘চৈতন্য হোক’ এইটি তাঁর সেই আশীর্বাণী ৷ 🍁 — স্বামী ভূতেশানন্দ 

 

 

🍂কবিতা 

 

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় -এদু’টি কবিতা

 

 

 

 

কবিতা এখন 

এই ছেঁড়া বিধ্বস্ত সময়ে যে কথা বলার ছিল
তাও কি হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্ষুদ্র মুঠি থেকে?
গভীর ভিক্ষার চালে এই হাত পুর্ণ হোক ভেবে
আকাঙ্ক্ষার ডানাগুলি অপার মহিমা নিয়ে সর্বগ্রাসী উড়ে যাওয়া বোঝে।

কোন গূঢ় রঙে আজ ভরে যায় চিত্রিত আঁচল?
ঝড়ের উদ্দাম বাহু নেচে ওঠে
এই আর্তনাদ থেকে পাশ ফিরে শুয়ে
প্রবাহিত বেদমন্ত্রে লেখা হয় দেবীর মহিমা।

তবুও শিকড় ছুঁয়ে ভূমিকম্পে একদিন কেঁপে নিজস্ব বিবেক।

 

 

 

 

গাছ

ছায়া ছড়িয়ে দিয়ে কোথায় চলে গেছে
যেখানে সূর্য দাউদাউ করে জ্বলছে
সেখানেই তার পাতায় শ্যামলদাগ
রান্নাঘর
আর লিখে রাখা অজস্র কবিতা

গাছের চেয়ে ভালো কবিতা আর কেউ লেখেনি বলে
আমি তার ছায়ার নিচে বসি।

 

 

 

 

তীর্থঙ্কর সুমিত-এএকটি কবিতা 

প্রতিদিনের অন্তরালে

উঠোনে বটের চারাটা ক্রমশঃ বেড়ে উঠছে
জল না পেয়েও নির্লজ্জের মত
ছড়িয়ে যাচ্ছে তার শেকড়
ডালপালা, পাতা-
আমার টালির চাল জুড়ে
তার অবাধ বিচরণ
বটের ফলে কত বট,
আগামীর সভ্যতার দাঁড়িয়ে

প্রতিদিনের অন্তরালে…

 

 

 

 

গোলাম কবির-এএকটি কবিতা 

পাগলামি

কী দ্যাখো অমন করে?
তোমার চোখে আমার সর্বনাশ!
এভাবে বলো না তো, লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ !
যা সত্যি, তাই তো বলছি।

বলো, কী চাও তুমি?
শুধু এই রক্ত মাংসের তুমি নও
তোমার ভেতরের তুমিকে চাই
আমার অস্তিত্বের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে!

তুমি না আস্ত একটা পাগল!
তাই? বেশ তো হলাম নাহয় তোমার জন্য।

ভয় হয়, এমন পাগলামি
যদি ভালো হয়ে যায় কোনো দিন!
তা হবার আগেই জীবনের সূর্য ডুবে যাবে।
এমন করে বলো না তো!
আমিও তাহলে মিলিয়ে যাবো অপার শূন্যতায়।

 

 

 

বন্দনা ঘোষ-একবিতাগুচ্ছ

ক‍্যাক্টাস

গোলাপের পাপড়ি বিছানো
গালিচার ওপর পা রেখে হেঁটে চলেছি,
সেই রাস্তারই দুধারে- সারি সারি ক‍্যাক্টাস,
কেউবা কাঁটায় জর্জরিত হয়েও…
আমার জন্য সুশোভিত, ফুলে সজ্জিত,
ফিরে চাইবারও সময় হয়নি কখনও।
কয়েকটি অপাংক্তেয় আগাছা,
কখনো কখনো বাধা হয়ে
দাঁড়িয়েছে জীবনের মাঝ পথে…
উপেক্ষার দৃষ্টিতে
দু-হাতে তাদেরকে ঠেলে সরিয়ে…
এগিয়ে এসেছি জীবনের মধ্যগগনে।
অনেক অচেনা মুখের ভিড়ে…
চেনা মুখগুলোও যেন আজ অতলান্ত স্মৃতিতে।।

 

 

 

হৃদয়

হৃদয় ছোঁয়ার আগেই,
শরীর ছুঁতে চাওয়া সেই প্রেমিক,
যাকে তুমি কখনোই,
বিশ্বাস করতে পারোনি…
কী হবে,
তাঁর কথা ভেবে?

মনের গভীরতা না জেনে,
মিষ্টি কথায় মন ভোলানো সেই,
একঘেঁয়ে প্রেমের কবিতা,
যা তোমার মনে,
কোন দাগ কাটতেই পারেনি
কী হবে,
সে কবিতা মুখস্থ করে?

যে সম্পর্কে,
পরস্পরের প্রতি ভরসার দু’টি হাত,
একে অপরের হাতে রাখতে গেলে,
ভাবতে হয় আকাশ- পাতাল,
সে সম্পর্ক সম্পর্কহীন হয়েই থাক।
কী হবে,
সে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে?

 

 

 

ক্লান্তি

সন্ধ্যের নির্জনতা নেমে এলো
অন্ধকার সমুদ্রের বুকে।
তার গর্জনে,
টুকরো টুকরো হয়ে গেল
সমস্ত নীরবতা।
এখন ভয়ঙ্কর ক্লান্তি গ্ৰাস করছে
দুচোখের পেলবতা,
অবসন্ন মনের মসৃণতা।

পোড় খাওয়া মন,
পরিস্থিতির চাপে পরিপক্ক জীবন,
সুপারির মতো শক্ত হৃদয়,
সেখানে আঁচড় কেটে আঘাত দেওয়া,
অতটাও সহজ কথা নয়।
শক্ত হিংস্র দাঁতের ফাঁকে,
এক নিমেষে পিষে,
ফেলাও খুব কঠিন।।

 

 

 

 

বৃষ্টি আনার মন্ত্র 

তুমি বলেছিলে,
তোমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোলাগে।
কিন্তু বৃষ্টি আনার মন্ত্র,
আমার শেখা হয়নি আজও।

আমার মেঘ কালো চুলে,
একদিন ঘনিয়ে আসবে-
অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশের
ভয়ঙ্কর রূপ।

আমার চোখেই নেমে আসবে,
অঝোরে শ্রবণ।
আর তাতেই তোমার চলার পথ
হয়ে উঠবে আরও দূর্গম।

আর একদিন সত্যিই-
শত শত মেঘেদের মন ভেঙে-
বৃষ্টি নেমে আসবে পৃথিবীতে।

তখন না হয়-
দুজনে হাত ধরে,
খানিকটা পথ হেঁটে যাবো
সবুজ ঘাসের উপর পা রেখে।

আর আমার ভেজা
চুলের ডগা থেকে বৃষ্টির ফোঁটা,
খানিকটা এসে পড়বে,
তোমার চোখের পাতা, নাকের ডগা
কিংবা ক্লান্ত শরীরে।

বৃষ্টি থামার পর,
তোমার শ্রান্ত, অবসন্ন চোখে, মুখে-
ফুটে উঠবে,
এক অনাবিল নিঃসঙ্গতা।।

 

 

 

এম এ ওয়াজেদ-এএকটি কবিতা 

আনন্দরজনীর আত্নবিস্মৃত উপাখ্যান

কল্পনার বুদ্ধিদীপ্ত মনিটর ছলনার করাতে বিমোহিত
পত্রমোচী যে সুকেশা অনুভূতি
মনুষ্যত্বের গান গাইবে বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় স্থির ছিল
প্রবল বাসনার দখিনা বাতাস আসবে বলে
কুমারী সজ্জার বসন্তরজনী প্রতীক্ষারত ছিল
ব্যর্থতার ক্রমাংশিক পাতনের খরস্রোতা সাইরেন
দখল করেছে সুখবাসরের সহধ্বনির বিস্ময়বিহ্বলতা

ক্ষমতার নির্লজ্জ বখাটে জগৎসংসার
স্বাক্ষর করে বিশ্রামের বিশ্বাসঘাতক মৈত্রীচুক্তিতে
উন্নত স্তনবিশিষ্টা বিলাসপরায়ণা ভয়াবহ লোভগুলো
আগেই নষ্ট করেছে তত্ত্বজ্ঞানের বিপর্যস্ত বিবর্ধক কাচ
সিদ্ধিলাভের নগ্না বৎসহীনা বিলাসিনীর উদাসীনা কেশগুচ্ছ
সঙ্গম করে অশ্লেষা নক্ষত্রের গ্ৰীষ্মমণ্ডলীয় দৃষ্টিভ্রমে
মৃত্যুঞ্জয়ী এই মৃত্তিকার রোদচশমা দেখতে ভুল করে
রৌদ্রতপ্ত উত্তপ্ততার সাম্প্রদায়িক রীতিনীতির শৌখিন পাঠ

রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্রের অমিতাচারী যন্ত্রণার দুঃখগুলো
ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে
তার চোখের কোটরে অশ্লীলতার বুদ্ধিভ্রষ্ট শিকড়
চেতনার বায়বীয় আকাশচুম্বী লালচে পাউডারে
রং হারায় প্রার্থনার গোলাপবাগ বৃক্ষের গোলাপকুঁড়ি
অস্তিত্বের অপ্রকাশিত ক্রুশবিদ্ধ ক্ল্যাসিক রোমান্টিকতা
পথ হারায় মন্দভাগ্য জিপসিদের অন্ধকার তাঁবুতে
রুচিবাগীশ অসভ্য মুচিরা ধারালো ক্ষুরে কেটে ফেলে
মানবিক বিশুদ্ধির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের ডিজাইন

সমুদ্রের লোনা জলে ভেসে গেছে মননের লতাকুঞ্জ
কণ্টকমুকুটে ধেয়ে আসে দাসত্বযন্ত্রণার পাসওয়ার্ড
অপ্রতিরোধ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পেস্টিং যুদ্ধাগারে
লিখিত হয় আনন্দরজনির আত্নবিস্মৃত উপাখ্যান।

 

 

 

 

তারক মণ্ডল-এএকটি কবিতা 

অভিমান

তুমি অভিমান করেছ
বলেছ, চলে যাবে
আমায় ছেড়ে অনেক দূরে…
বলেছ, কখনও আসবে না আর ফিরে …
তবুও!!
চেয়েছি আমি, বলেছ তুমিও
আমায় নিয়ে – নাকি তোমার অনেক স্বপ্ন!

তবে সে সব কী বৃথাই!
যদি তুমি না-ই চাও
আমার হাত টি ধরে…
আমিই নাকি আছি,
তোমার মনের অনেক অংশ জুড়ে!

হ্যাঁ আমি প্রেমিক খারাপ
দেখতে আমি মন্দ ঠিকই
মনটা তো নয় বাজে…
ভালোবাসি তোমায়

চেয়েছি অনেক মনে মনে

হ্যাঁ আমি জানি
বলতে আমি পারিনি
মনের জমা কথা
তবুও তোমার প্রেমটি দিয়েই
আমার মনে
তোমার প্রেমের মালা গাঁথা।

আমি তো তোমার খারাপ প্রেমিক
একটু আধটু মিথ্যা তোমায় বলি…
ভুলটা একটু বেশিই করি
তবুও আমি দিচ্ছি তোমার কাছেই ধরা।

 

 

 

 

 

🍂ফিরেড়া | গল্প 

 

শেফালি হেসে কুটিকুটি হয়ে খায়। ‘সত্যি, ভারি মজার ব্যাপার। বলি তাহলে। ক-দিন আগে এক-আধটা টুকিটাকি ফেলার জন্য ধর্মতলায় যাবার আমার দরকার পড়ে। আমার ধারণা ছিল আপিসে বেরুবার মুখে কথাটা ওঁকে বলেছিলাম- তাই ভেবে বাজার করতে হলে যেখানটা যেসময়ে আমরা গিয়ে মিলে থাকি সেইখানে গিয়ে আমি উপস্থিত হলাম।

 

 

স্বামী হওয়ার সুখ

শিবরাম চক্রবর্তী

 

 

ন্ধ্যেয় যখন চারুর সঙ্গে আমার কফি হাউসে দেখা, তখন তাকে খুব সুচার বলে মনে হল না। দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে-কিন্তু আগের সে-চারু যেন নয়। কোথায় যেন কী গলদ ঘটেচে। আরামচেয়ারে বসে কফি পান করছে বটে, কিন্তু কফি পেলেও আরাম পাচ্ছে না। বিলক্ষণ বোঝা যায়।
তার ওপরে আরেকটা বৈলক্ষণ্য, বসেছে না বলে বসে আছে বললেই যেন ঠিক হয়। ভূমিকম্পের দ্বারা ধরণি দ্বিধা হয়ে বাড়িঘর যেমন বসে যায়, প্রয়োপবেশনের ফলে কয়েদিরা বসে যায় যেমন অনেকটা সেই রকমের চেহারা আমাদের শ্রীচারুর।
অপরের বিপদে-আপদে অকাতরে উপদেশপ্রবণ আমার মতো লোক এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় কাউকে দেখতে পেলে অযাচিতই এগিয়ে যায়। তা ছাড়া, আরও বড়ো কারণ ছিল। ওই বর্বরটাই আবার আমার মাসতুতো বোন শেফালীর বর।
‘ভারি মুশকিলে পড়েছি ভাই!’ চারু বলল আমায়-‘আর কী করে যে এই মুশকিল থেকে আসান পাব ভেবে পাচ্ছিনে।’
‘শেফালি?’ আন্দাজ করে আমি ঢিল ছুড়ি। ‘শেফালি বুঝি?’
‘শেফালিই।’ মাথা নেড়ে ও সায় দেয়।
‘ও!’ এই বলে ওর আরও বলার আমি অপেক্ষা রাখি।
‘আজকের দুর্ঘটনাটা ঘটেছে।’ বলল চারু- ‘রোজ যেমন দুপুরে আপিস থেকে বেরিয়ে টিফিন করতে যাই আজও তেমনি গেছি আর সেই সময়েই এই বিনামেঘে বজ্রাঘাত!’
‘কীরূপ বজ্রাঘাত?’ আমি জিজ্ঞেস করি।
ব্যাকরণের সীমা লঙ্ঘন করে ভাষার সেঅপপ্রয়োগ করছে বলেই আমার মনে হয়। দধীচির অস্থিতেই বজ্র, এই তো আমি জানি। কিন্তু এখানে যখন তা নয়, তার বদলে ঘৃতাচীর অস্তিত্বই টের পাওয়া যাচ্ছে, তখন বিনা আগুনে ঘি পড়ল, এই জাতীয় কোনো উপমা নির্বাচন করলেই কি সুষ্ঠু হত না?
কিন্তু ভাষার কারুকার্যে নজর দেবার মতন মনের অবস্থা চারুর নয় তখন। অলংকার এবং লঙ্কার মধ্যে ঝালের প্রাচুর্য থাকলেও, আর সব বিষয়েই যে বৈষম্য, এতখানি বোঝার মতো সূক্ষ্ম বোধশক্তি তার আছে তখন আশা করা অন্যায়।
‘সেই কথাই তো বলতে যাচ্ছি।’ বিষণ্ণ সুরে ও শুরু করল- ‘যখন আমি টিফিন করতে বেরিয়েছি সেই সময়ে শেফালি এসেছিল আমার আপিসে।’
‘ও!’ সমঝদারের মতো আমি মগজ নাড়ি।
‘আমার জন্যে আপিসের বাইরে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ অপেক্ষাও করেছিল নাকি!’ চারু জানাল- ‘ওকে নিয়ে কেনাকাটায় বেরোবার কথা ছিল কিনা আমার।’
‘আর তুমি বুঝি তা বেমালুম ভুলে বসেছিলে?’
চারু কোনো উত্তর না দিয়ে মুখখানা মুমূর্ষুর মতো করে রাখে। আমার মতো ভাবগ্রাহীর পক্ষে রূপবাণীর আধখানাই যথেষ্ট। সমস্ত সিনেমাটা না হলেও চলে; সিনের একটুখানিই ঢের। ওইরূপ দেখেই, মুখ ফুটে ও কিছু আর বললেও, ওর অবস্থা জানার আমার কোনো বাধা হয় না।
আমি বললাম-‘কাজটা ভালো করনি ভায়া।’
সঙ্গে সঙ্গে অপরাধ তত্ত্বের একজন বড়ো অথরিটির কথা আমার স্মরণে আসে। অপরাধীরা জন্মায় না, তাদের তৈরি করা হয়ে থাকে। একবার আসামি হবার ফলেই তাদের অপরাধপ্রবণতা দেখা দেয়।
স্বামীদের সম্বন্ধেও ঠিক সেই কথা। স্বামীরাও কিছু জন্মগত নয়। বিবাহের দ্বারা তাদের বানানো হয় এবং তার পরেই তারা চিরদিনের হয়ে পড়ে। সত্য অপরাধী
‘আমার আফিসের পবিত্রর সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল। পবিত্র ওকে বলেছিল, কোথায় আমি টিফিন করতে যাই সেজানে এবং তাকে সঙ্গে করে আমার সন্নিধানে নিয়ে যাবার জন্য তৈরিও হয়েছিল নাকি। কিন্তু শেফালি নাকি বলেছে যে, কোনো দরকার নেই, ও একাই বাজার করতে পারবে।’
‘কথাগুলো কি খুব রূঢ়ভাবে বলেছিল? বেশ রেগেমেগে?… পবিত্র কী বলে?’ রোগজীবাণুর মতো যাবতীয় সভ্য মানুষের অন্তর্গত আমার শার্লক হোমসও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবার। এই অকূলে উত্তীর্ণ হবার দুরাশায় তৃণবৎ ‘ক্লু’-র অনুসন্ধান করে।
‘পবিত্র তো বলে যে- না, তার সঙ্গে শেফালি খুব মধুর ব্যবহার করেছে।
মেয়েরা পরপুরুষের সঙ্গে যেমন নাকি করে থাকে-‘
‘উঁচু, আবার ভাষার শ্রাদ্ধ করছ তুমি কিংবা পবিত্র কে করছ জানি না।’
বাধা দিয়ে আমি বলি, ‘কথাটা ঘুরিয়ে বলা দরকার। পরস্ত্রীরা যেমন সুমধুর ব্যবহার করে থাকে-এমনি করে বললে ঠিক হবে।’
‘পবিত্র কী বুঝবে? আমি তো নিজস্ত্রীর মাধুর্য জানি। এবং তোমার বোন যখন, তখন এই মাধুর্যের কী অর্থ তা বোধ হয় তোমারও অজানা নয়।’
‘ছ। মেয়েরা যখন ভেতরে ভেতরে পুড়তে থাকে, তখনই তাদের মুখে মিষ্ট হাসির উজ্জ্বল আভা দেখা যায়।’ প্রাজ্ঞের মতো আমি মাথা নাড়ি। ‘এই অদ্ভুত কর্ম মেয়েরাই পারে। মেয়েরাই পারে কেবল।’
ঠিক।’ চারু যোগ দেয়, ‘আর হয়তো মোমবাতিরাও কিছুটা।’
ওর মুখে আবার আমি চালচিত্র দেখি।
উভয়ে কিছুক্ষণ কফি পানের পর গ্রাবার ওর আরম্ভ- ‘পবিত্রর কথা শুনে আমার মনে পড়ল আপিস বেরুবার মুখে কেনাকাটার কী একটা কথা যেন ও বলছিল। কিন্তু তাড়াতাড়িতে আমি তাতে ভালো করে কান দিইনি। কান দিতে পারিনি বলাই উচিত। দশটার সময় আপিস যখন কান ধরে টান লাগায়, তখন একটা কান ক-জনকে দেয়া যায়, বলো-না!’
‘আরেকটা তো ছিল।’। আমি বলি। অঙ্গুলিনির্দেশই যথেষ্ট। নাকি, টেনে দেখাতে হবে, ঠিক করতে পারি না।
‘এ পাড়ায় ও বাজার করতে এলে একটা নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত সময়ে আমরা মিলিত হই। বরাবরের মতো এই আমাদের পাকাপাকি ব্যবস্থা। কিন্তু- ও যে আজ কেনাকাটায় আসবে তা আমি একদম খেয়ালই রাখিনি।’
‘যাক, যা হবার হয়ে গেছে। গতস্য শোচনা নাস্তি। ও নিয়ে আর মাথা ঘামিয়ো না।’ ওর মনের বোঝা এক ফুৎকারে উড়িয়ে দেবার আমার আয়াস।
মুখে কিছু বলে না, কিন্তু ওর মাথা আরও ঝুঁকে পড়ে।
‘সেই জন্যেই বুঝি আপিস ফেরতা আর বাড়ি যাওয়া হয়নি? কফি হাউসে রয়েছ এখনও? কিন্তু এমন করে পালিয়ে পালিয়ে ক-দিন থাকবে? এইভাবে কি বাঁচা যায়? আমি তোমায় বাড়ি যেতে বলি।’ খুনের আসামি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করুক এই আমার সাধু ইচ্ছা।
‘বাড়ি তো যেতেই হবে।’ কাঁদো-কাঁদো সুরে ও বলে, ‘বাড়ি তো যাবই, কিন্তু গিয়ে কী কৈফিয়ত দেব তাই আমার ভাবনা।’
‘কী আবার দেবে? স্রেফ হেসে উড়িয়ে দেবে।’
দ্বিজেন্দ্রলালী কায়দায়- ‘এই গোঁফ জোড়াতে দিলে চাড়া তোমার মতন অনেক পাব!’-
ভাবখানা এইরকম করে-বুঝেচ?’
‘কিন্তু আমার যে গোঁফ নেই।’ ও গোঁফে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যেখানে ওর গোঁফ নেই সেইখানে।
অ-দ্রষ্টব্যটা দেখতে হয় আমায়। দেখে শুনে আরেকটা উপায় বার করতে হয় আমাকে-এই আমাকেই।
‘সেএকটা কথা বটে। আমারও নেই যে তোমায় ধার দেব।’ আমি বাতলাই -‘তবে পরচুলার মতো চেষ্টা করলে কি পরের গোঁফ একটা ভাড়া পাওয়া যায় না? জোগাড় করে দিতে পারে না কেউ?’
এ-প্রস্তাব ওর মনঃপূত নয়। ও ঘাড় নাড়ে আর বলে- ‘আমি তোমার মতো, সেকথা কি মিথ্যে কথা বলা হবে না? সেকথা কি এখানে খাটে?’
ওর সত্যাগ্রহ আমাকে বিস্মিত করে। আমি বললাম- ‘সত্যবাদীদের তাহলে বিয়ে করাই উচিত নয়। যুধিষ্ঠিরও একলা বিয়ে করতে হলে অতবড়ো দুঃসাহস করতেন কি না সন্দেহ।
‘ভয়ানক মিথ্যে বলা হবে। শেফালির মতো মেয়ে অনেক পাওয়া যায় না। খুঁজে বার করো দেখি একটা। অমন দুর্ধর্ষ মেয়ে-ওই একটিই আছে।’
স্বামীগত সর্বজনীন সমস্যাকে ও ব্যক্তিগত করে দেখে সকাতর হচ্ছে এই দৃশ্যে আমার হাসি পায়। ওই ধরনের কলত্রাণি কেবল দেশে দেশে বা প্রদেশে প্রদেশে নয়, গৃহে গৃহে বিরাজমান- একপ্রকার আশ্বাসে ওর দুঃখভার লাঘব করার চেষ্টা করি-কিন্তু বৃথা! ওর দীর্ঘনিশ্বাসের তোড়ে আমার সমস্ত যুক্তি আর পটাটো চিপস উড়ে যায়।
‘তুমি বুঝতে পারছ না বন্ধু?’- আমার সমস্ত কথার পরেও ভদ্রলোকের সেই এক কথা- ‘মেয়েদের বিষয়ে একটুও যদি তোমার জ্ঞানগম্যি থাকে তাহলে বুঝতে পারবে যে, যে কাজ আমি করেচি তাদের চোখে তা অমার্জনীয়। মেয়েলি অভিধানে তার কোনো ক্ষমা হয় না। শেফালি এই ভাববে, ভাববে কী, ভেবে বসে আছে যে তার সম্বন্ধে আমার আর কোনো আগ্রহই নেই। তাকে আমি ঘরসাজানো একটা আসবাবের বেশি গণ্য করি না। সেইজন্যই তার কথা আমি এত সহজে ভুলতে পেরেচি।…’
‘এই বিপদে রবীন্দ্রনাথের সাহায্য নিলে হয় না?’ আমি জিজ্ঞেস করি- ‘ভুলে থাকা নয় ভুলে যাওয়া-কবিতা জোরালো করে আউড়ে দিলে কেমন হয়?… না, না, এখানে নয়, শেফালির কাছেই-তাই বলছি।’
চারু সেকথায় কান দেয় না, নিজের কথায় গড়িয়ে চলে- ‘তার সঙ্গে একসাথে বাজার করার মতো এত বড়ো সৌভাগ্য যে কী করে আমি হেলায় হারাতে পারি, কেন যে আমি আপিসে এসে অবধি তার প্রতীক্ষায় হাপিত্যেশে ঘড়ির কাঁটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে প্রত্যেক মিনিট অধীর হয়ে থাকিনি, এই ভেবেই সে আরও মর্মাহত হবে। মেয়েরা ওইরকমই! তাদের মিলনের অপেক্ষায় ছটফট করা ছাড়া আমাদের যে আর কোনো কাজ নেই, থাকতে পারে না এবং থাকা উচিত নয়, শেফালির এই নারীসুলভ ধারণায় অজান্তে আমি কত বড়ো আঘাত যে হেনেছি তা তুমি ভাবতে পারো না।’
আমি ভেবে দেখি। দেখে বলি-‘হুম।’
‘শেফালি একথা কিছুতেই বুঝতে পারবে না’ চারু বলতে থাকে-‘আপিস বেরোবার মুখে কী করে ট্রামে চাপব শুধু এই এক সমস্যা ছাড়া আর কোনো চিন্তা আমাদের মনে স্থান পায় না। এমনকী সেই ভাবনায় ভালো করে আমরা দুটি খেতেও পারিনে। আর তারপর আমরা যন্ত্রচালিতের মতো ট্রামের নির্দিষ্ট স্টপেজে গিয়ে অপেক্ষা করে, পর পর কয়েকটা কেরানি-ভরতি ট্রামে-বাসে পাত্তা না পেয়ে অবশেষে মরিয়া হয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে একটাকে পাকড়াতে পারি। তারপর ঝুলতে ঝুলতে কী করে যে সশরীরে আপিস ঘরে পৌঁছে নিজের টেবিলটিতে গিয়ে বসি সেএকটা মন্ত্রমুগ্ধ ব্যাপার! এমনকী, চোখ বুজে থাকলেও, এই দিনের পর দিন একটানা ঘটে মধ্যে অন্য কিছু ভাববার এতটুকু ফাঁক কোথাও থাকে না। যেখানে রঙিন স্বপ্নদের কিংবা স্বপ্নের রঙ্গিণীদের একটুখানি স্থান দেয়া চলে। কিন্তু এসব কথা শেফালি বুঝবে না। এ জন্মে নয়।’
‘রানির জীবনে তো না।’ আমি ওর সঙ্গে একেবারে একমত- ‘বুঝতে হলে তার জন্যে ওকে কেরানি-জন্ম লাভ করতে হবে।’
‘বলো তো ভাই, আমি কী করি এখন?’ চারু ভেঙে পড়ে-ওর কণ্ঠস্বরের মতোই ভগ্নদশা দেখা যায় ওর।
‘এক কাজ করো।’ আমি উপদেশ দিই; ‘মেয়েরা ভারি ফুল ভালোবাসে। কথায় যখন কুলিয়ে ওঠা যায় না, তখন সৌরভে ওদের কূল মেলে। সামান্য কিছু ফুলের তোড়াটোড়া কিনে নিয়ে যাও- সেই সঙ্গে দু-একটা মুখরোচক গল্প বানিয়ে রাখো- দরকার হলে তাকমাফিক তখন ছাড়বে।’
‘উঁহু! কিচ্ছু হবে না তাতে। শেফালিকে তুমি জান না।’ চারুর সেই এক সুর।
শুনে শুনে আমার রাগ হয়। আমার মাসতুতো বোন- জন্ম থেকে দেখচি- আমি জানিনে! আর দু-দিনের পরিচয়ে উনি জানেন। রেগেমেগে বলি- ‘তাহলে যাও, সটান গিয়ে লেকে ডুবে মরো গে। তাহলেই সে এই অবহেলার দুঃখ ভুলবে। ভুলতে পারবে আমি আশা করি। পা কাটা গেলে আর কাঁটার ব্যথা থাকে না।’- এই বলে আমার কফির দামটাও ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে চটেমটে আমি উঠে আসি। শোকের বোঝা যে বইছে, বোঝার ওপর এই শাকের আঁটিও তার সইবে।
কিন্তু যথার্থই বলেছিল চারু, শেফালিকে সত্যিই আমি চিনিনে। তার একফালিই আমি দেখছিলাম, শেফালি আর সেনেই। মাসতুতো বোনরূপে যার বন্যরূপ একদা দেখেছি, কিছুদিনের সংসারযাত্রায় তার এখন অন্যরূপ- শেফালির দাম্পত্যচেহারা একেবারে আলাদা। অচিরেই তা জানা গেল।
শেফালি বেড়াতে এসেছিল আমাদের বাড়ি। তার দিকে তাকিয়ে চোখ আর ফেরানো যায় না।
‘বাঃ। দিব্যি যে তোকে মানিয়েছে!’ আমি বলি। লেটেস্ট-ভিজাইনের বাজারের সেরা শাড়িটা তার সর্বাঙ্গ জুড়ে যেকথা বলছিল তার উচ্চস্বরের সঙ্গে আমার তুচ্ছ স্বর পাল্লা দিতে পারে না, বলাই বাহুল্য।
‘ভালো লাগছে তোমার?’ শেফালি শাড়ি এবং আমার দিকে তাকায়।
‘ভয়ংকর রকম।’
‘তাহলে যেয়ো আমাদের বাড়ি। আরগুলোও দেখাব। এর চেয়েও সেগুলো আরও চমৎকার। ছ-রকমের ছ-খানা শাড়ি কিনেচি, শাড়ি আর ব্লাউজে জড়িয়ে।’
ভালো করে ওকে তাকিয়ে দেখি।- ‘চারু কিছু বলল না?’ আমি জানতে চাই।
‘উনি?’ বলতে গিয়ে চলকে উঠল শেফালি। ‘উনি বললেন বই কী! উনিই তো বললেন!’
আমার ভুরু কড়িকাঠে গিয়ে ঠেকে-আমি ঠিক বুঝতে পারি না।
‘উনিই তো বললেন কিনতে।’ শেফালী আরও খোলসা করে দেয়, ‘না কিনিয়ে ছাড়লেন না তাই বরং বলা উচিত।’
‘না না। এ হতেই পারে না।’ আমার প্রতিবাদ।
শেফালি হেসে কুটিকুটি হয়ে খায়। ‘সত্যি, ভারি মজার ব্যাপার। বলি তাহলে। ক-দিন আগে এক-আধটা টুকিটাকি ফেলার জন্য ধর্মতলায় যাবার আমার দরকার পড়ে। আমার ধারণা ছিল আপিসে বেরুবার মুখে কথাটা ওঁকে বলেছিলাম- তাই ভেবে বাজার করতে হলে যেখানটা যেসময়ে আমরা গিয়ে মিলে থাকি সেইখানে গিয়ে আমি উপস্থিত হলাম। বিশ মিনিট ওঁর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার পর আমার মনে পড়ল, ওই যা! ওঁকে তো বলাই হয়নি। বলতে ভুলেই গেছি একদম। তখন ওঁর আপিসে গিয়ে হাজির হলাম; গিয়ে জানলাম, জানব আর কী, একটু আগেই উনি টিফিন করতে বেরিয়েছেন।’
‘ও!’ আমি বলি। একই গল্পের অপরার্থ আত্মপ্রকাশ করে আমার ওকারের মতো গোলাকার হয়ে দেখা দেয়।
‘তারপর উনি যখন বাড়ি ফিরলেন’- বলতে বলতে শেফালি হেসে গড়িয়ে পড়ল- ‘দেখলাম উনি ফুলের বাজার সবটা উজাড় করে নিয়ে এসেছেন-‘
‘ফুলস প্যারাডাইস-।’ আমি বলি।
‘এবং যথাসময়ে যথাস্থানে অপেক্ষা না করার জন্যে সেকী মার্জনা ভিক্ষা! ভদ্রলোক এমন কাতরাতে লাগলেন যে, তাঁকে সান্ত্বনা দানের জন্যেই বাধ্য হয়ে আমায়-‘
বুঝেচি। মানে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা বসিয়েছিস। বেচারাকে সেই কাহিল অবস্থায় পেয়ে ওর পকেট ফাঁক করে ঝেড়ে-ঝুড়ে বেবাক বের করে নিয়েছিস। পরিষ্কার করে-এই তো?’ তীক্ষ্ণকণ্ঠে আমি বলি, ‘আমার মতো উচ্চমনা লোকের বোন হয়ে যে একাজ করতে পারলি এই ভেবে আমার ঘাড় হেঁট হচ্ছে। মাসতুতো ভাইরা চোর হয় বলে শুনেচি কিন্তু তাই বলে কি মাসতুতো বোনদের ডাকাত হতে হবে? ছিঃ! ছলনা ছাড়া কী এ?’
‘হল না কি প্রতারণা তা আমি জানিনে।’ শেফালি ঝংকার দিয়ে ওঠে- ‘আমার ধারণায় আমি ঠিকই করেছি। উচিত দন্ডই ওঁর হয়েছে। যদি দেখা যায় ঠিকঠাক করে যথাস্থানে দেখা করতে ভুলে যেতেন সেই তো এক খারাপ হত-ভীষণ খারাপ হত বলতে গেলে। কিন্তু যখন দেখা করবার কোনো কথাই নেই, এই কথাটাও উনি ভুলতে পেরেছেন তখন বুঝতেই পারা যাচ্ছে ওঁর হৃদয়ে আমার কতটুকু স্থান! উঃ, এমন লাঞ্ছনা-এতখানি দুঃখ জীবনে আমি কখনো পাইনি।’
শেফালির কলকল কণ্ঠ, ওর দুই চোখ ছাপিয়ে ছলছল করে ওঠে। বলতে না বলতে।🍁

 

 

🍂ধারাবাহিউপন্যাস | পর্ব ১২

 

শুরু হয়েছে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। কবি তৈমুর খানের জীবন। বাল্য-কৈশোরের দিনগুলি কেমন ভাবে কেটেছিল। মননে চেতনায় কিভাবে বয়ে গেছিল উপলব্ধির স্রোত। কেমন করে প্রকৃতি ও জীবনকে দেখতে শিখেছিলেন। কেমন করে জীবনে এলো ব্যর্থতা। সেসব নিয়েই নানা পর্ব। আজ পর্ব ১২।

 

একটি বিষণ্ণরাতের তারা

তৈমুর খান

 

 

বারো.

একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাচ্ছি 

নের মধ্যে কবিতারা ভিড় করে আসতে লাগলো। এত লিখে যাচ্ছি তবু কিছুতেই কবিতারা থামছে না। কয়েকটি কবিতা রুমাকে লিখে পাঠিয়েছি চিঠিতে। কয়েকটি কলকাতায় একটা লিটিল ম্যাগাজিনের দপ্তরে। কয়েকবার ছাপাও হয়েছে। এদিকে বীরভূম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মাঝে মাঝেই যেতে হচ্ছে সাহিত্যের আসরে। সাইকেল চালিয়ে দীর্ঘ পথে একা একাই চলে যাচ্ছি। এক এক বেলা খাবারও জুটে যাচ্ছে সেইসব আসরে। গান-বাজনা আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে কবিতা পাঠ। সবশেষে সভাপতির ভাষণ। কার কবিতা কেমন হয়েছে তার মূল্যায়ন তিনি করবেন। তাই শেষ পর্যন্ত আসরে বসে থাকতেই হবে। সব বেলা চলে যায়, ফিরতে ফিরতে প্রায়ই অন্ধকার। সেদিন মুর্শিদাবাদের কান্দিতে একটা সাহিত্য বাসরে ছিলাম। বেশ কয়েকটা কবিতা পড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকার সম্পাদক। স্টেজ থেকে নামতেই পরিচয় করতে এলেন সংঘমিত্রা নামে এক কবি। জানতে চাইলেন আমি কতদিন থেকে লিখি। বললাম, সেইতো স্কুল জীবন থেকেই লিখছি। তারপর তিনি বললেন, ‘আজকের কবিতাগুলি সব ভালো লেগেছে।’
আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানালাম। তারপর তিনি বললেন, ‘আমাদের একটা পত্রিকা আছে শ্যামলদা সম্পাদনা করেন। ওই পত্রিকার জন্য কয়েকটা কবিতা চাইবো।’
খুশি হয়ে বললাম, দরকার মতো বলবেন পাঠিয়ে দেবো।
রুমা ছাড়া আমার কবিতার প্রশংসা দ্বিতীয় কোনো মেয়ে করেছিলেন তিনি ওই সংঘমিত্রা। তাঁর চোখ দু’টি ছিল অসাধারণ সুন্দর। ডাগর চোখে সুদূরের হাতছানি। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ পড়তে গিয়ে তাঁর মুখটি আমার চোখের সামনে উদয় হতো। মুর্শিদাবাদের যে কোনো সাহিত্য সভায় গেলে আমি শুধু তাঁকেই খুঁজতাম। কয়েকবার তাঁকে অনুষ্ঠানে পেলেও বাকি সময় আর দেখতে পাইনি। অনুষ্ঠানে থাকলে তাঁর সামনে কবিতা পড়তে ভালো লাগতো। ভালো লাগতো তাঁর মুখের দিকে চেয়ে থাকতে। মনে মনে কল্পনা করতাম, একটা গভীর নদীর পাশে যেন বসে আছি, আর বাঁশি বাজিয়ে চলেছি। কেউ নৌকা নিয়ে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে যাবে। যখন তাঁর আর দেখা পাইনি তখন তাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছিলাম একটি কবিতায়:
এখানে অনেক সূর্য হারালাম
এখানে অনেক অন্ধকারে তোমাকে খুঁজলাম
কালস্রোতে ভেসে গেল নৌকারা
আমাকে নিল না কেউ—
এখন আমি একাই রবীন্দ্রনাথ
মনে মনে সোনার তরী বানাই।”
সেই সোনার তরী বানিয়েই চলেছি। কত পূর্ণিমার চাঁদ অস্ত গেল। মঞ্চে উঠে কবিতা পড়লাম। লিটিল ম্যাগাজিনগুলি আমার কবিতা ছাপালো। কত কত শ্রোতা হাততালি দিল। কিন্তু সেই কাঙ্ক্ষিত শ্রোতাকে আর খুঁজে পেলাম না। সে যদি একবার এসে বলতো, ‘কখন এলেন! কতদিন দেখা হয়নি! আপনার কবিতাও আর নেওয়া হয়নি শ্যামলদার পত্রিকার জন্য। কতদিন আপনার কবিতাও শোনা হয়নি।’ এসব কথা মনে মনেই ভাবি, আর ওই ডাগর চোখের সুদূরের দৃষ্টিকে অনুভব করি। ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকার ভ্রাম্যমান সেইসব আড্ডাগুলি আর হয় না। রাঙাধুলোয় সাইকেলে করে কাঁধে একটা সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে সেসব আড্ডায় গিয়ে উপস্থিত হতাম। পথের মাঝে যেতে যেতেই একবার থামতাম চা খাওয়ার জন্য। কান্দুরি হাইস্কুলের একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম মুর্শিদাবাদের সব কবি-লেখকেরাই আছেন,শুধু নেই সংঘমিত্রা। ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকার সম্পাদককে জিজ্ঞেস করলাম, সংঘমিত্রা আসবেন না?
তিনি জানালেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর, লেখালেখি তিনি একরকম ছেড়েই দিয়েছেন। নিজেও অসুস্থ। তাই আর আসতে পারেন না।’
মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবুও কিন্তু হাল ছাড়লাম না, যদি তিনি সুস্থ হয়ে আবার ফেরেন। তাঁর কষ্টের কথা আবার লেখেন তাহলে কতই না ভালো হয়! এসব ভাবতে ভাবতে অনেক সময় চলে গেল।
রাজগ্রাম থেকে ট্রেনে ফিরছি। ট্রেনে আলাপ হলো এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। এক্সিকিউটিভ অফিসার প্রবীর দত্ত। খুব রাশভারি হোমরাচোমরা মানুষ। আমাদের আলোচনা শুনে বললেন, ‘আপনারা কি কবতা লেখেন?’
ওঁর কথার সংশোধন করে বললাম, কবতা কেন লিখবো, কবিতা লিখি?
তিনি বললেন, ‘আসলে সাম্প্রতিক কালের লেখকদের কবিতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই তাদের লেখাকে আমি কবতা মনে করি। ওরা মনে করে পদে পদে মিল দিলেই, অথবা বক্তব্য থাকলেই তাকে কবিতা বলা যায়।’
আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনার কথাকে ফেলে দেওয়া যায় না। কিছু কবি আছে প্রাচীন ধারার লেখাই কবিতা মনে করে। তাই তারা গতানুগতিক পয়ার ছন্দকেই ব্যবহার করে। আর কিছু কবি আছে, তারা নীতি-নৈতিকতার মিশেল দিয়ে একপ্রকার গদ্যে লেখা বক্তব্যকেই কবিতা মনে করে।
তারপর তিনি ইঙ্গিত করলেন, আমার হাতে থাকা ‘চরৈবেতি’ পত্রিকাটির দিকে। বললেন, ‘দেখি পত্রিকাটি।’
পত্রিকাটি খুলে দেখলেন পাতা উলটে উলটে প্রায় সমস্ত কবিতাই। তারপর পুনরায় বললেন, ‘একটা লিটিল ম্যাগাজিনে প্রায় পঁয়ত্রিশখানা কবিতা ছাপা হয়েছে। বলতে পারেন এর মধ্যে কয়টি কবিতা আছে?’
আমি আন্দাজ করে বললাম, তা প্রায় পাঁচ-ছয়টি হবে। বাকি গুলি অধিকাংশই কবিতা হয়নি।
দত্ত বাবু হিসেব করে বললেন, ‘তা মোটামুটি ঠিকই বলেছেন, আমারও মতামত এটাই। সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক কবিকেই আমরা দেখতে পাই, কিন্তু প্রকৃত হিসেবে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বলুন তো প্রকৃত কবিতা বলতে আপনার কী ধারণা?
তিনি বললেন, ‘একসময় আমিও কবিতা লিখতাম। ‘বীরভূম প্রান্তিক’ নামে একটি পত্রিকা মুরারই থেকে বের হতো। ওখানে অনেক কবিতাই লিখেছি। তারপর কাজের চাপে এখন আর লেখা হয়ে উঠছে না। তবে একেবারেই লিখি না এমন নয়। আসলে আমার কাছে ভালোলাগা কবিতা হলো, যে কবিতা প্রতি মুহূর্তে পড়তে পড়তে যতবার ব্যাখ্যা করতে চাইবো ততোবারই আলাদা আলাদা অর্থ দাঁড়াবে। অথবা একই কবিতা বারবার পড়লেও নতুন বলে মনে হবে। কবিতা পড়লেই এক রকমের ভালোলাগা ভেতরে ভেতরে উপলব্ধ হবে, অনেক সময় তার ব্যাখ্যা ভাষাতেও প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। কবিতার শব্দ ও ইমেজ হবে সংকেতধর্মী অথবা রূপক। যা দেখছি তা-ই লিখছি এমনটি নয়।’
দত্ত বাবুকে সমর্থন না জানিয়ে পারলাম না। কবিতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা স্পষ্ট। শুধু নিজে একটু সংযোজন করে বললাম, তবে ছন্দটাও কবিকে জানতে হবে খুব ভালো করেই। কারণ কবিতা গদ্যেও লেখা চলে, কিন্তু সেই গদ্যের ভাষাতেও ছন্দ থাকবে যাকে রবীন্দ্রনাথ মুক্তক ছন্দ বা গদ্যছন্দ বলেছেন। প্রবন্ধের গদ্য এবং কবিতার গদ্য সম্পূর্ণ আলাদা।
তিনিও সমর্থন করলেন। তারপর বলতে লাগলেন, ‘আবদুর রাকিব কখনো কবিতা লেখেননি, কিন্তু তাঁর গদ্যগুলিকেও কতটা স্বচ্ছ সাবলীল এবং ব্যঞ্জনময় মনে হয় দেখেছেন?’
আমি জানালাম, হ্যাঁ দেখেছি। আজকেও তিনি সাহিত্য অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাঁর ‘প্রতিকূলে একজন’ এবং ‘বাবুই বৃত্তান্ত’ অসাধারণ দুটি ছোটগল্পের বই। সেখানে প্রকৃতি ও মানুষের প্রবৃত্তি নিয়ে মাঝে মাঝে চমৎকার বর্ণনা আছে। কাব্যিক ব্যঞ্জনায় ভরপুর সেসব অধ্যায়গুলি। জীবন রসায়নের এমন তীব্র অথচ মর্মসঞ্চারী প্রজ্ঞাময় উপলব্ধি আমি খুব কমই পড়েছি।
দত্তবাবু আরেকটু সংযোজন করে বললেন, ‘তাঁর ‘চারণ কবি গুমানি দেওয়ান’ খুব উচ্চমার্গের বই। একজন কবিয়াল-এর জীবনী এভাবে লেখা যায় তা তিনিই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন।’
তখনও পর্যন্ত আমার বইটি পড়া হয়নি। তাই দত্ত বাবুকে সেই বইটি সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারলাম না। শুধু জানালাম, আমি পড়ে দেখবো।
ইতিমধ্যেই আমরা গন্তব্যে চলে এসেছি। ট্রেন রামপুরহাট স্টেশনে প্রবেশ করছে। প্রবীরবাবু যাবেন শান্তিনিকেতন। সুতরাং বিদায় নিতেই হলো। নামার সময় জিজ্ঞেস করলেন আমার নাম এবং বাড়ি কোথায়। তা জানালাম। নাম শুনে তাঁর মুখটি রাঙা হয়ে উঠলো। চেঁচিয়ে বললেন, আপনি সেই ব্যক্তি যিনি শান্তিনিকেতনের চারুচন্দ্র রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কবিতায়ন’ পত্রিকায় লিখেছিলেন ‘নারী দেখে দেখে’ কবিতাটি?
—হ্যাঁ, আমিই লিখেছিলাম।
— তাহলে মনে রেখেছি বলুন!
—হ্যাঁ, যথার্থ মনে আছে।
তারপর নমস্কার জানিয়ে নেমে এসেছিলাম। কম বয়সের লেখা সেই কবিতাটি চারুচন্দ্র রায় ছেপেছিলেন তাঁর পত্রিকায়। কবিতাটি সেই সময়ের লেখা বলে পরে আমাকে আর ভালো লাগেনি। তাই কোনো সংকলনেই তাকে রাখিনি। কবিতাটি ছিল এরকম—
“নারী দেখে দেখে, নারী দেখে দেখে
মাটিকেই নারী মনে হয়—
তেমনই সেক্সি মেয়ে,পুজো নিচ্ছে…
লিপস্টিক
রঙিন ভুরু, লোভনীয় কদলী নিতম্ব
আমি প্রণাম করার ফাঁকে গোপনে দেখে নিই
সমুদ্র দেখে এসে যেমন করে পুকুর দেখি
পুকুরের ঢেউ
নারী দেখে দেখে নিজের বউকেই আর
নিজের মনে হয় না—
ও যেন বাইরের মেয়ে, দামি ব্রার নিচে
সাদা নাভি দেখিয়ে মন কাড়ছে
মাছের পুচ্ছের মতো—
কবিতা পড়ে পড়ে, কবিতা পড়ে পড়ে
যেমন নিজের কবিতাকেই আর নিজের মনে হয় না
নিজের আকাশকে নিজের….
নিজের টিকিটখানাই যেন অন্য যাত্রীকে ফিরিয়ে দিয়ে
স্টেশনে অপেক্ষা করছি—
অন্ধকারে কখন আয়ুরও সেক্স জেগে উঠবে
নিজের দেহখানাই ফিরিয়ে দেবো ওকে—
নারী দেখে দেখে, নারী দেখে দেখে
আয়ুকেই এখন নারী মনে হয়…”
ট্রেন থেকে নেমেই অনুভব করলাম চারিদিকেই আঁধার নেমে এসেছে। স্টেশনের বাইরে একটা গ্যারেজে রাখা আছে আমার পুরনো সাইকেলটি। সাইকেলটি নিয়ে দ্রুত ছুটতে হবে বাড়ির দিকে। অনেকটা পথ। গ্যারেজে এসে দেখি সাইকেলের চাকায় হাওয়া নেই। সারাই করার মিস্ত্রীকেও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। গ্যারেজ থেকে সাইকেলটি নিয়ে অন্ধকারে একা হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাচ্ছি আমি।🍁 (চলবে)

 

 

 

🍂ফিরেপড়া | কবিতা 

 

 

 

 

পূর্ণেন্দু পত্রী-এএকটি কবিতা 

খিদে

 

সব খাওয়া হয়ে গেছে, সুখ, শান্তি, ঘাত-প্রতিঘাত
অপমান ও সম্মান
সম্মানের শাঁখ ও করাত
মায়া-মমতার থালা, মাছ দুধ ভাত
আশ্বিনের নীলবর্ণ শরবতে কার্তিকের হিম
কোজাগরী আকাশের পিলসুজে জ্যোৎস্নার পিদিম
পলাশ বনের ছবি, ডালে ডালে ফুলশুদ্ধ ঝাঁপি
পুকুরে ঝিনুক, সেই ঝিনুকেরই মতো ঠোঁট সলজ্জ গোলাপী
সব খাওয়া হয়ে গেছে, তবুও আসন ছুঁয়ে বসে আছি ভীষণ আশায়।
পাহাড়ের মতো খিদে পায়!

 

 

 

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এএকটি কবিতা 

বারবার প্রথম দেখা

 

নীরার হাত-চিঠি এল পড়ন্ত বিকেলবেলায়
আমি তখন হিজিবিজি জট-পাকানো সুতোর মধ্যে আছি
তার মধ্যে একটি সদ্যস্নাত জুঁইফুল
ডুবন্ত মানুষ যেমন নিশ্বাসের জন্য আকুপাকু করে ওঠে
আমিও সূর্যকে বললুম, আজ একটু দেরি করো
নীরা আমায় ডেকেছে, দিগন্তরেখা, আবছা হয়ে যেও না
জানলায় এত ঝনঝন শব্দ কীসের, ছিটকিনি, শান্ত হও
বইয়ের খোলা পৃষ্ঠা, প্রতীক্ষায় থাকো
আঙুলে কালির দাগ, লক্ষ্মীটি, অদৃশ্য হও
জুঁইফুলটি চেয়ে আছে, সদ্য-জন্মানো ঝর্ণার মতন হাসছে
একটি ঝর্ণার পাশেই বারবার নীরাকে আমার প্রথম দেখা
মেঘভাঙা দ্যুতি এসে পড়েছে তার চিবুকের রেখায়
নতুন বসন্ত-বৃক্ষের পাতার মতন তার চোখের আলো
তার বুকে দুলে দুলে উঠছে কৈশোরের সমুদ্র-স্নান
নীরার ডাক এসেছে, মেঘ, নিরুদ্দেশে যাও
দরজায় আর কে এসে দাঁড়াল, আমি কোথাও নেই
শব্দ, তুমি থামো, বাক, তুমি নিশ্চুপ হও
সমস্ত সুতোর পাক লণ্ডভণ্ড করে আমায় উঠে দাঁড়াতে হবে
আমাকে যেতে হবে, আমাকে যেতে হবে…

 

 

 

 

 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এএকটি কবিতা 

ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা

 

ভালোবাসা মানেই কেবলই যাওয়া
যেখানেই থাকি না কেন
উঠে পড়া
পেয়ে গেলে নিকটতম যান
কলকাতা কিছুতেই ফুরতে চায় না
কোনো রাস্তা ফুরতে চায় না
কখনও তুমি মিনিবাস ধরে নেবে
আমি ঝংকার দেওয়া ট্রাম—
তারপর থেকে কেবলই যাওয়া
কাছ থেকে অনেক দূরে
কিংবা সময় ঠিক করা থাকলে কাছে আসা
ক্যাথিড্রালের দুর্লভ ঘণ্টা বাজছে
সখ্যতায় ভরে উঠেছে ময়দান
মাঘের বিকেলে।
এক চিলতে গলি তারই নাম সুখ
তারই অন্ধকারে
আমি স্পর্শ করেছিলাম তোমার দিব্য চিবুক—
সঙ্গে সঙ্গে শৈলসানু আঁধার হয়ে এল
গোলপাতা ছাউনির ঘর
শীতরাত্রির স্বপ্ন ক’টি মুড়িসুড়ি দিয়ে বসে গেছে
শীলাতল
ব্যগ্র হয়ে কেড়ে নিচ্ছে উত্তাপ কোমল
দু’জনের থেকে—
তোমার চিবুক স্পর্শ ক’রে কতদূর আমরা যেতে পারি
এক চিলতে গলি তারই নাম সুখ
তারই অন্ধকারে
স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে প্রস্থান আলবৎ সম্ভব
অথবা দুঃখের ভিতর থেকে আরো দুঃখের ভিতর
নিয়ে যেতে পারে
ভালোবাসা
ভালোবাসা মানে কেবলই যাওয়া
কোলকাতা রোল করা গালিচার মত কেবলই খুলে
যাচ্ছে কেবলই
আমাদের পায়ের নিচে
ফুরোচ্ছে না।
তবু ভালোবাসা ফুরায়ে গেলে
আমি অপ্রেম থেকে চলে যাব ব’লে
অভিমানে বাসস্টপে এসে হাত নেড়ে ডাকি
ভালোবাসা কখনও কখনও চলে যাওয়া
ঘর গ’ড়ে ঘর ভেঙে ফেলা
তারপর উঠে পড়া
পেয়ে গেলে নিকটতম ট্রাম
পড়ে থাক রাজবংশ বৈভব যা কিছু
সব ছেড়ে চলে যেতে পারে শুধু ভালোবাসাই—
সেই কোনোদিন
ফিরে এসে তাকাতে পারে অকপটে অনিমেষ
ক্যাথিড্রালে ঘণ্টা বাজলেই
কিনতে থাকবে মুহূর্ত এন্তার
একরাশ ব্যক্তিগত নীল নক্ষত্রমালা।

 

 

 

 

নির্মলেন্দু গুণ-এএকটি কবিতা 

আমি হয়তো মানুষ নই

 

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম,
হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়,
মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়।

আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি,
গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না,
অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না।
কী করে তাও বেঁচে থাকছি, ছবি আঁকছি,
সকালবেলা, দুপুরবেলা অবাক করে
সারাটা দিন বেঁচেই আছি আমার মতে। অবাক লাগে।

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষ হলে জুতো থাকতো,
বাড়ি থাকতো, ঘর থাকতো,
রাত্রিবেলায় ঘরের মধ্যে নারী থাকতো,
পেটের পটে আমার কালো শিশু আঁকতো।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে আকাশ দেখে হাসবো কেন?
মানুষগুলো অন্যরকম, হাত থাকবে,
নাক থাকবে, তোমার মতো চোখ থাকবে,
নিকেলমাখা কী সুন্দর চোখ থাকবে
ভালোবাসার কথা দিলেই কথা রাখবে।

মানুষ হলে উরুর মধ্যে দাগ থাকতো,
বাবা থাকতো, বোন থাকতো,
ভালোবাসার লোক থাকতো,
হঠাৎ করে মরে যাবার ভয় থাকতো।

আমি হয়তো মানুষ নই,
মানুষ হলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা
আর হতো না, তোমাকে ছাড়া সারাটা রাত
বেঁচে থাকাটা আর হতো না।

মানুষগুলো সাপে কাটলে দৌড়ে পালায়;
অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই,
অবহেলায় মানুষ ভেবে জাপটে ধরি।

 

 

 

🍂ধারাবাহিকদ্য |র্ব ১২

 

অনেক সময় নানা অসহযোগের মধ্যে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি তিনি সবসময়। কিন্তু এসব নিয়ে কখনও কাউকে কিছু বলেননি। নীরবে সহ্য করেছেন সবকিছু। সব কাজ নিজেই করেছেন, বিভাগীয় প্রধান বলে কারও ওপর খবরদারি করেননি কিংবা জোর করে কারও কাছ থেকে কাজও আদায় করে নেননি। তাঁর এই প্রকৃতির জন্য অতি বড় শত্রুও তাঁর বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। তাঁর এই স্বভাবসিদ্ধ ব্যক্তিত্বকে যে কারও পক্ষেই অগ্রাহ্য করা কঠিন। রেহানা বীথি-এর লেখা ‘’ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই’’ -কে নিয়ে ধারাবাহিক গদ্যের আজকে পর্ব ১২।

 

 

ভাষা বিজ্ঞানী প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হাই

রেহানা বীথি 

 

 

[পূর্বে প্রকাশের পরে ]

 

১৯৬১ সালে গবেষণা সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান প্রফেসর আব্দুল হাই। লেখাপড়াই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান। হৈ চৈ পছন্দ করতেন না। লেখাপড়াকেই কাজ বলে মনে করতেন। নিজের লাইব্রেরি রুমে অসংখ্য বইয়ের মাঝে সাহিত্যসাধনায় ধ্যানীবুদ্ধের মত নিমগ্ন থাকতেন।

সুগভীর পাণ্ডিত্যের সঙ্গে নিরুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন প্রফেসর আব্দুল হাই। তিনি ছিলেন নিরাসক্ত ও প্রচারবিমুখ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নিরহঙ্কার ভদ্র, সদাপ্রসন্ন ও বিনয়ী স্বভাব আকৃষ্ট করত সবাইকে। জোরে কথা বলতে তাঁকে কখনও দেখা যায়নি। তাঁর অনুচ্চ কণ্ঠ ও শুদ্ধ বাচনভঙ্গি মোহিত করে রাখত তাঁর ছাত্রসহ অন্যান্যদের। ছাত্র পড়ানোয় তাঁর খ্যাতি ছিল ঈর্ষাযোগ্য। এই খ্যাতি এবং রসিকচিত্তের সরসতা দিয়ে তিনি বাংলা বিভাগকে করে তুলেছিলেন প্রাণোচ্ছল এক আঙিনা। সবসময় সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনা পরামর্শ করেই বিভাগীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। কোনও কারণে সহযোগীদের সঙ্গে বিরোধ উপস্থিত হওয়ার মত পরিস্থিতি হলে রাগ পুষে রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না তিনি। অনেক সময় নানা অসহযোগের মধ্যে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। আশানুরূপ সহযোগিতা পাননি তিনি সবসময়। কিন্তু এসব নিয়ে কখনও কাউকে কিছু বলেননি। নীরবে সহ্য করেছেন সবকিছু। সব কাজ নিজেই করেছেন, বিভাগীয় প্রধান বলে কারও ওপর খবরদারি করেননি কিংবা জোর করে কারও কাছ থেকে কাজও আদায় করে নেননি। তাঁর এই প্রকৃতির জন্য অতি বড় শত্রুও তাঁর বিরুদ্ধে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি। তাঁর এই স্বভাবসিদ্ধ ব্যক্তিত্বকে যে কারও পক্ষেই অগ্রাহ্য করা কঠিন। এই ব্যক্তিত্বকে সম্ভ্রম করা যায়, ভালবাসা যায়, কিন্তু দূরে সরিয়ে রাখা অসম্ভব। বাংলা বিভাগকে তিনি নিজের পরিবারের মত ভালবাসতেন। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে যাওয়ার প্রাক্কালে এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেছিলেন, তাঁর পরিবার আর বাংলা বিভাগের মধ্যে কোনও ফারাক নেই। বিভাগের মধ্যে থাকলে পরিবারের মধ্যেই আছেন বলে তাঁর মনে হয়। এই ভালবাসা দিয়েই বাংলা বিভাগকে এক সুখী, সমৃদ্ধ পরিবার হিসেবে তিনি গড়ে তুলেছিলেন।

শিক্ষক হয়ে তিনি বুঝতেন, একজন শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষক যেখানকারই হোক, সবাই ছিলেন তাঁর কাছে সমান। কোনও ভেদভাবনা তাঁর মনে স্থান পায়নি কখনও। আর শুধু শিক্ষক নয়, সবস্তরের মানুষের প্রতি তাঁর ভদ্রশোভন ব্যবহার ছিল মুগ্ধকর। ছাত্রদের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা ছিল লক্ষ্যণীয়। প্রত্যেক শ্রদ্ধেয় এবং বয়োজ্যেষ্ঠকে সম্মান জানানো ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরই অন্তর্গত। শিক্ষার সোপান তিনটি : প্রণিপাত, পরিশ্রম, সেবা। উপনিষদের ভাষাও অভিন্ন: শ্রমণ, মনন, নিদিধ্যাসন। যথার্থ বিনয় আর শ্রদ্ধাই জ্ঞানলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়, তিনি তাঁর নিজের জীবন চর্চায় তার প্রমাণ রেখে গিয়েছেন।

 

তাঁর সৃষ্টি 

হাই সাহেবের সাহিত্যকর্মকে পাঁচটি ভাগে দেখা যায়। যথাক্রমে :
১. অনুবাদ ও ভ্রমণকাহিনী
২. সাহিত্য আলোচনা
৩. লোকসাহিত্য আলোচনা ও গবেষণা
৪. ভাষাতত্ত্ব
৫. পত্রিকা সমালোচনা।

 

The Historical Role of Islam ( ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান) : 

গ্রন্থাকারে হাই সাহেবের প্রথম গ্রন্থ মানবেন্দ্রনাথ রায় রচিত ‘The Historical Role of Islam’ – এর বঙ্গানুবাদ ‘ইসলামের ঐতিহাসিক অবদান’ ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা থেকে বের হয়। এই অনুবাদ গ্রন্থটি প্রথম পশ্চিমবঙ্গ থেকে বের হলেও সেখানে তেমন প্রচারিত হয়নি। গ্রন্থের প্রকাশক পরে সের দরে বইয়ের ফর্মা বিক্রি করেন। কিন্তু পূর্ববঙ্গে বইটির একাধিক সংস্করণ বের হয়। (তৃতীয় সংস্করণ ১৯৬৯)।

অখণ্ড বাংলাদেশে ইসলামি সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণের কথা দূরে থাক, শিক্ষিত সমাজের মনেও ঔৎসুক্য জাগেনি বরং অজ্ঞতা ও ভুল ধারণায় আচ্ছন্ন ছিল। এবং দেশভাগের পর তা আরও বেড়েই গিয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে চর্চা কিংবা পঠন পাঠনের ভাল ব্যবস্থা নেই-ই বলা যায়। ভারতীয় সংস্কৃতি যে হিন্দু-মুসলমানের ঐতিহ্যের সমন্বয়, এই বোধটুকু শিক্ষিত সমাজের মধ্যে নেই। ভারতীয় সংস্কৃতি বলতে তারা শুধু হিন্দু সংস্কৃতিই বোঝেন। ভারতীয় সংস্কৃতির নামে ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে হিন্দু ঐতিহ্যের চর্চা বিদ্যালয়ের নিচু শ্রেণী থেকে শুরু করে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ শ্রেণী পর্যন্ত সুকৌশলে পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সেকারণে মানবেন্দ্রনাথ দুঃখ করে বলেছেন : No civilised people in the world is so ignorant of Islamic history and contemptuous of the Mohammedan religion as the Hindus…. The Prevailing notions could be laughed at as ridiculous, were They not so pregnant with harmful consequences. These notions should be compbatted for the sake of the Indian people as well as in the interest of science and historical truth. A proper appreciation to the cultural significance of Islam is of Supreme importance in this crucial period of the history of India. ( p. 3, 2nd ed 1943)

এই অংশের অনুবাদ হাই সাহেব করেছেন –

পৃথিবীর কোনও সভ্য জাতিই ভারতীয় হিন্দুদের মত ইসলামের ইতিহাস সম্বন্ধে এমন অজ্ঞ নয় এবং ইসলাম সম্পর্কে এমন ঘৃণার ভাবও পোষণ করে না।… ক্ষতিকর ফলাফলের সম্ভাবনা না থাকলে তাদের এই অজ্ঞতামূলক মনোভাব হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেয়া যেত। ভারতের অদিবাসীদের কল্যানে এবং বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক সততার স্বার্থে, তাদের এ বিরূপ মনোভাবের নিরসন অপরিহার্য কর্তব্য। ভারতবর্ষ ইতিহাসের যে চরম পর্যায়ের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে ইসলামের সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের সম্যক উপলব্ধির গুরুত্ব আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে (পৃ. ৪-৫, প্রথম সং ১৯৪৯)। (চলবে)

 

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একাধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি ও ছবি।) গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী।

অবশ্যই লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা দয়া করে পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব । দায় লেখকের নিজস্ব। কোন বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোন আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন।

সম্পাদকীয় ঋণ : মহামিলনের কথা, ফিরেপড়া গল্প ও ফিরেপড়া কবিতা আন্তর্জাল থেকে সংকলিত। 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment