Sasraya News Sunday’s Literature | 11th May 2024, Sunday| Issue 64 | সাশ্রয় নিউজ, রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ১১ মে ২০২৫, রবিবার | সংখ্যা ৬৪
Sasraya News
Listen
🍂মহামিলনের কথা
শ্রীশ্রীগুরবে নমঃ যেরূপ শ্রীভগবান কৃষ্ণচন্দ্র লোক সংরক্ষণের জন্য ধরাধামে আবির্ভূত হইয়াছিলেন তদ্রূপ তাঁহার সুদর্শনচক্র অবতার ভক্তিসার যোগীশ্বরও পুণ্যভূমি মহীসার ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হন। শ্রীভগবানের ভক্তিকেই একমাত্র সার পদার্থ বুঝিয়াছিলেন বলিয়া তাঁর নাম ‘ভক্তিসার’৷
শ্রীশ্রী ঠাকুর সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ দেব
যে সরোবর তটে বনমধ্যে ভক্তবর বাস করিতেন একদিন শ্রীভগবান শঙ্কর পার্ব্বতীর সহিত তথায় উপস্থিত হইলেন। শ্রীপার্ব্বতীদেবী তাঁহাকে দেখিয়া বলিলেন ‘ইনি কে?’ শ্রীশঙ্কর বলিলেন ‘ইনি শ্রীভগবানের অনন্য বিশ্বাসী ভক্ত’। শ্রীপার্ব্বতীদেবী বলিলেন ‘চল ইঁহার অনন্যতা কেমন দেখি’। উভয়ে তাঁহার সমীপে উপস্থিত হইলেন। যোগীবর তখন একখানি কাপড় সেলাই করিতেছিলেন। শ্রীভগবান শঙ্কর বলিলেন ‘হে ভক্ত কিছু বর গ্রহণ কর—আমার দর্শন বৃথা হয় না’। ভক্তিসার বলিলেন ‘হে দেবেশ্বর শঙ্কর, শ্রীভগবানের কৃপায় আমার তো কোন বস্তুর অপেক্ষা নাই ৷ কোন বরে প্রয়োজন নাই’৷ শ্রীশঙ্কর বলিলেন ‘দেখ আমাকে এরূপ অনাদর করা উচিত নহে—তোমার যাহা ইচ্ছা হয় প্রার্থনা কর’। ভক্তিসার বলিলেন, ‘কি প্রার্থনা করি, আমার চাহিবার কিছু নাই—-আচ্ছা আমার সূচের সুতাটি খুলিয়া গিয়াছে আপনার বরে সুতা সূচীর মধ্যে প্রবেশ করুক’।
শ্রীভগবান শঙ্কর ক্রুদ্ধ হইয়া ‘তুমি আমার প্রভাব জান না, তজ্জন্য এরূপ পরিহাস করিতেছ; অধুনা আত্মরক্ষা কর’ বলিয়া তৃতীয় নেত্র বিস্ফারিত করিলেন। তৎক্ষণাৎ রাশি রাশি অগ্নি নেত্র হইতে বহির্গত হইয়া তাঁহাকে ভস্মীভূত করিবার জন্য তন্নিকটস্থ হইল। তখন শ্রীভক্তিসার পাদপ্রসারণপূর্ব্বক পাদস্থ নেত্র উন্মীলন করিলে তাহা হইতে ঘোর প্রলয় জ্বলিয়া উঠিল। তিনলোক অত্যন্ত তাপিত হইয়া পড়িল। ইন্দ্রাদি দেবতাগণ বলিতে লাগিলেন ‘আজ প্রমথনাথ ত্রিলোক দগ্ধ করিবেন—জগৎ ধ্বংস হইয়া যায় রক্ষা করুন রক্ষা করুন’৷
ভক্তিসারের পাদজাত নয়ন অগ্নি শঙ্করের কোপাগ্নিকে শান্ত করিয়া স্বয়ং শান্ত হইয়া যাইল। শ্রীভগবান শঙ্কর শ্রীপার্ব্বতীদেবীকে বলিলেন ‘প্রিয়ে, অনন্যভক্তের প্রভাব দেখিলে?’ উভয়েই অন্তর্হিত হইলেন। ভক্তের লীলা সাধারণ বুদ্ধির অগম্য।
এই দ্বাপরযুগেই রুদ্রাবতার মহাবীর সুদর্শন চক্রকেই কঙ্কনের ন্যায় হস্তে ধারণ করিয়াছিলেন। কে বড়, কে ছোট বুঝিবার কোন উপায় নাই—ঠাকুরটির লীলার মত তাঁহার ভক্তগণের লীলা অনন্ত অপার অগম্য ৷ জয় ভক্তের জয়।🍁 ঋণ : শ্রীভক্তিসার | আলবার লীলামৃত শ্রী ওঙ্কারনাথ রচনাবলী
🍂গদ্য
বাবা লিখলেন “গীতাতে শ্রী ভগবান বলেছেন কাউকে উদ্বিগ্ন করতে নেই, তোমাদের সাতগুষ্টিকে উদ্বিগ্ন করতে চাই না, আসন যেমন আছে থাক। ঠাকুর ঘরে চল। ওখানেই রাত্রি যাপন করি।”
রসময়ের রসলীলা
কিঙ্কর শরণানন্দ জী
শ্রীশ্রী ঠাকুর সীতারাম দাস ওঙ্কারনাথ দেব
আজকাল অনেক মিশ্র ভাষার প্রয়োগ চারিদিকে। শ্রী শ্রী ঠাকুর এর কাছে শোনা কিছু মিশ্র ভাষার কথা নিয়ে আলোচনা করবো।১৯৭৮ সাল এর কথা। পুরীর শ্রীনিবাস এর যে ঘর টিতে ঠাকুর ছিলেন সেই ঘরটির দেয়াল ও ছাদে ফাটল ধরেছিল, জানালা ও কপাট ঘুনে ধরা। হটাৎ লক্ষ্য পড়লো বাবার মাথার উপর কড়ি কাঠটা ফেটে রয়েছে। মাধব স্বামীজি বাবাকে অন্য ঘরে থাকবার প্রার্থনা জানালে বাবা লিখলেন (আসলে ঠাকুর তখন মৌন ছিলেন) —-“মহারাষ্ট্র দেশের চোখামেলা পাঁচিল ছাপা পড়ে মারা যান। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। নামদেব তার কঙ্কাল উদ্ধার করেন সমাধি দেবার জন্য। সেই কঙ্কাল থেকে বিঠ্ঠল বিঠ্ঠল ধ্বনি উঠতে থাকে। এর ভিতরেও সর্বদা জয় গুরু ওম গুরু চলছে। জয় গুরু ওম গুরু যদি ছাদে চাপা পড়ে স্বধামে যান তাহলে একটা নতুন রেকর্ড হবে।” বলা হলো চোখামেলার ছেলেরা কাছে ছিল না। এ তো দৈব দুর্বিপাক; কিছু বলা যায় না, অন্য ঘরে চলুন। বাবা রাজি নন। “যতক্ষণ কাজ শেষ না হয় ততক্ষণ আসন ত্যাগ করব না। বরাতে যদি অপমৃত্যু থাকে ওম গুরু জয় গুরু শুনতে শুনতে চলে যাব।” “পুরাতন ঘরের নিয়ম হলো যদি জল না পড়ে তাহলে পড়তে পারে না।” ইত্যাদি নানান যুক্তি। স্বামীজিও ছাড়লেন না। শেষ পর্যন্ত বাবা লিখলেন “গীতাতে শ্রী ভগবান বলেছেন কাউকে উদ্বিগ্ন করতে নেই, তোমাদের সাতগুষ্টিকে উদ্বিগ্ন করতে চাই না, আসন যেমন আছে থাক। ঠাকুর ঘরে চল। ওখানেই রাত্রি যাপন করি।”
—–বাবা ঠাকুর ঘরে ভীষণ মশা, হাওয়া নেই, তার থেকে উপরের ঘরে চলুন।
শ্রী শ্রী বাবা —-তোমরা কি রকম সেবক? নারায়ন শিব সীতারাম গুরুদেবকে ঐ মশার মধ্যে রেখে প্রাণ একটুও ব্যথিত হয়নি, আর যার জন্য তোরা ব্যাকুল সে কোনোদিনই হওয়া চায় না, আর মশার সম্বন্ধেও—- waterproof , fireproof ।
——মশার সম্বন্ধে আপনি যে ওয়াটার প্রুফ তা তো দেখতেই পাই। আমরা রাত জেগে বসে থাকি আর আপনি দিব্যি শান্তিতে বিশ্রাম করেন এরই মধ্যে। কিন্তু এতে গোদ ফাইলেরিয়া প্রভৃতি রোগের সম্ভাবনা। শ্রী শ্রী বাবা এর একটি পা খোঁড়া আর একটিতে গোদ হলে কেমন হয় দেখবো। —-যাক তাহলে ঠাকুর ঘরেই যাবেন, না আমরা কেউ আপনার সাথে এ ঘরেই থাকবো? শ্রী শ্রী বাবা —-I am always ready ঠাকুর ঘরে গনতুং।
দাদাজী (শ্রী শ্রী তারক দা) বললেন— মশাদের নিজ রক্ত দিয়ে উদ্ধার করতে চাইছেন তাই তো?
বাবা লিখলেন —-ইউ গণৎকার অহং না জানামি। আর একদিন স্বামীজী আমাকে ডাকতে বললেন আমি পেছন থেকে ডাকতে ঠাকুর বললেন —-“অহং বাই অর্ডার এ না গচ্ছামি।”🍁
🍂ফিরে পড়া | কবিতা
জীবনানন্দ দাশ-এরএকটি কবিতা
সে
আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলোঃ ‘এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল;
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।’
‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’
মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।
সময়ের অবিরল শাদা আর কালো
বনানীর বুক থেকে এসে
মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক— তবু চোখ ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।
তারাপদ রায়-এরএকটি কবিতা
প্রিয়তমাসু
অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে
প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ।
তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি,
ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ,
অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল,
এইসব এঁকে এঁকে তবুও
কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে :
সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু
তার নীচে সবিনয় নিবেদন।
এবং কিছুক্ষণ পরে
সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু।
এবং একটু পরেই বুঝতে পারি
জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম।
প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না।
🍂ধারাবাহিকউপন্যাস | পর্ব ২৬
শুরু হয়েছে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস। কবি তৈমুর খানের জীবন। বাল্য-কৈশোরের দিনগুলি কেমন ভাবে কেটেছিল। মননে চেতনায় কিভাবে বয়ে গেছিল উপলব্ধির স্রোত। কেমন করে প্রকৃতি ও জীবনকে দেখতে শিখেছিলেন। কেমন করে জীবনে এলো ব্যর্থতা। সেসব নিয়েই নানা পর্ব।
একটিবিষণ্ণরাতের তারা
তৈমুর খান
ছাব্বিশ.
ধুস্ শালা, এই জীবন!
কলেজের অংশকালীন শিক্ষক হলেও সারাদিনটি বেশ আনন্দে কেটে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পড়াশোনা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করতে থাকি। কলেজের ক্লাস শেষ হলে টিউশানি পড়াতে বসি কাছাকাছি একটা ভাড়াটিয়া রুমে। ছোট্ট একটা রুম মাসে হাজার টাকা ভাড়া। তালা খুলে ভিতরে শতরঞ্জি পেতে বসার জায়গা। পড়তে আসা বেশিরভাগই ছাত্রী। দুটি ব্যাচের মধ্যে একটি শুধু অনার্স আর দ্বিতীয় ব্যাচটি শুধু পাস কোর্স। ছাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিবাহিতাও রয়েছে। একদিন কথায় কথায় এক ছাত্রীর জীবনের গল্প উঠে এলো। সে নতুনই পড়তে এসেছে সেদিন।
—কী নাম তোমার?
—রুবিয়া।
—বাড়ি কোথায়?
—বড় পোধরা।
পাশ থেকে একজন ছাত্রী বললো, “কিন্তু স্যার এর আসল বাড়ি বড় পোধরা নয়। এখানে ওর শ্বশুর বাড়ি।”
আমি জানতে চাইলাম, “তাহলে আসল বাড়ি কোথায়?”
ছাত্রীটি উত্তরে জানালো, “আমার আসল বাড়ি বৈধড়া।”
আমি বললাম, “তাহলে তো প্রায় আমারই কাছাকাছি ব্রহ্মাণী নদীর তীরে। কতদিন হলো বিয়ে হয়েছে?”
ছাত্রীটি উত্তর দিল না, অনেকক্ষণ পর বললো, “দু’বছর হয়ে গেল।”
তারপর ছাত্রীদের মধ্যেই একটি চাপা গুঞ্জন লক্ষ্য করলাম। ওরা আরো কিছু যেন বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারলো না। সেদিনের মতো আর কিছু জানাও হলো না আমরা পড়াতে মনোযোগ দিলাম।
এই কাজটি করতেও প্রায় মাসখানেক সময় লেগে গেল। খরচ হয়ে গেল প্রায় চার হাজার টাকা। এই ক’মাস যে কী কষ্ট করে এই কাজটি করেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। রামপুরহাট হাইরোডে অবস্থিত আরশাদের কম্পিউটার কেন্দ্রে কাজটি আমাকে করে দিয়েছিল আমারই এক ছাত্র সব্যসাচী। জুলাই মাসে জমা দিতে যাবার জন্য যখন তৈরি হচ্ছি তখনই এলো এই বিপদ।
টিউশান পড়ানোটাও আমার কাছে একটা শ্রমিকেরই কাজ বলে মনে হয়। শিক্ষা শ্রমিক। সপ্তাহে চার দিন পড়াই মাসিক মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে। মাস গেলে চেয়ে থাকতে হয় ওই টাকাটির জন্যই। দিতে হয় ঘর ভাড়া। করতে হয় আনাজপাতি কেনার বাজারও। একটা জামা-জুতো কিনলেও অনেক হিসেব করে তবেই সেটা সম্ভব হয়। বাড়ি থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে ব্রহ্মাণী নদীর তীরে তীরে বাঁশঝাড়, সবজি ক্ষেত, সাঁওতালপাড়া ইত্যাদি পেরিয়ে তবেই পৌঁছাতে পারি কলেজে। বাস ভাড়া ১০ টাকা বাঁচালেই অনেকটাই খরচ কমানো যায়। টানাটানি জীবনের এই হাল হকিকত মানতেই হবে।
আমার পরের বোনটির বিয়ে হলেও আরো দুটি ছোট বোন বাড়িতে রয়েছে, আছে তিনটি ভাইও। দুটি ভাই গোরু চরানোর কাজ থেকে ঘাস কাটা, পরের বাড়িতে মুনিষ খাটার কাজও করে। হাই স্কুলে ভর্তি হয়েও পড়াশোনা করতে পারেনি। অভাবের সংসারে পড়াশোনাটা বিলাসিতা মাত্র। না খেয়ে বিদ্যা অর্জন করা যায়? তাই সামান্য যতটুকু আয় করা যায় তা কাজ করেই করতে হয়। সংসারটিতে সবাইকেই কিছু কিছু করে দিতে হয় যার যেমন সামর্থ্য। বাবা সমবায় ব্যাঙ্কের পিয়ন। মাসিক আয় তখন সর্বসাকুল্যে হাজার টাকা। মুদির দোকানে প্রতি মাসে যা ঋণ হয় তা এই হাজার টাকাতেও পরিশোধ করা যায় না। খেতে হয় নিম্নমানের মোটা চালের ভাত। তরকারি বলতে বুনো কচুর ঝাড় সেদ্ধ। কখনো কখনো মাঠের ধরে আনা খুচরো মাছ। গাছের কদম আর হেলেঞ্চার শাক। ছোট দুটি বোন কখনো কখনো তুলে আনে হেলা গাছ এবং শালুক ও নানা রকম শাকপাতাও। শালুক পোড়া প্রথমত একটু কষাকষা ভাব লাগলেও পরে বেশ মুখটা ভালো হয়ে যায়। হেলা রান্না হয় বিভিন্ন শাকের সঙ্গে। গ্রীষ্মকালে তখনো বাবা মাটি কাটার কাজ করে। রিলিফে মাটি কেটে পাঁচ কেজি গম পাওয়া যায়। মেজো ভাইটি সেই গম পেষাই করে আনে পাশের গ্রাম থেকে। কোনো বেলা তাই দিয়ে হয় রুটি। ভাদ্র মাসে পাকা তাল পাওয়া গেলে তালের রুটিও বেশ সুস্বাদু লাগে। মা কখনো কখনো তৈরি করে তালের পোড়া পিঠা। এসব খেতে খেতেই স্বপ্ন দেখি একদিন এর চেয়েও ভালো কিছু খাবারের। পুরনো রংচটা জামাটি গায়ে দিয়ে চপ্পল পরেই বেরিয়ে যাই কলেজের উদ্দেশ্যে। আজ আবার পড়ানো আছে পরপর দুটি ব্যাচ টিউশানিও।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে যে থিসিস লিখতে শুরু করেছি তাতেও মন বসাতে পারছি না। synopsis অনুযায়ী প্রতিটি চ্যাপ্টার আলাদা আলাদা ভাবে লিখতে শুরু করেছি। কলেজ লাইব্রেরি থেকে তার জন্য যথেষ্ট বইপত্রও পাচ্ছি। ২০০০ সালেই থিসিস কমপ্লিট করে জমা দিতে হবে। ডক্টর ললিতা সান্যাল তা আমাকে আগেই জানিয়েছেন। বেশ কয়েকবার পাটনা থেকে ঘুরে এসেছি। আমার প্রতিটি চ্যাপ্টার দেখে তিনি ভারি খুশিও হয়েছেন। বাংলা কবিতার যত নতুনত্ব তা সবগুলিই প্রায় বিদেশি সাহিত্যের প্রভাব। প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতায় ডি এইচ লরেন্স, ডি কে চেস্টারটন এর প্রভাব যেমন অনস্বীকার্য তেমনি ওয়াল্ট হুইট ম্যান, রবার্ট ফ্রস্ট, টমাস হার্ডি, জেমস সি মরিস, গ্যয়েটে প্রমুখ কবিদের কবিতারও প্রভাব পড়েছে। আবার এঁদের কবিতা নিজেও অনুবাদ করেছেন। এছাড়াও বিশ্ববন্দিত কবি আলিগিয়েরি দান্তে, উইলিয়ামস কার্লস, আন্দ্রেই ভজনে সেনস্কি প্রমুখ কবির কবিতাও দক্ষতার সঙ্গে অনুবাদ করেছেন। সুতরাং প্রেমেন্দ্র মিত্রকে নিয়ে গবেষণা করাও যথেষ্ট পরিশ্রমসাধ্য এবং তা সতর্কতার সঙ্গেই আমাকে করতে হচ্ছে। কিন্তু এইসব গ্রন্থ খুঁজে খুঁজে তথ্যগুলি লিখতে লিখতে মনে হচ্ছে আমার কি ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগবে? বৃথা পরিশ্রম করছি না তো? যেখানে একেবারে সময়ের অভাব, টিউশানি করা, কলেজ করা এবং সাংসারিক জীবনের টানাপোড়েনে রসদ যোগানো সবকিছু বজায় রেখেই এই কাজ কি বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে না? নানা প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। নিজের কাছেই উত্তর খুঁজছি কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না। কলেজের ডক্টর চৈতন্য বিশ্বাস একদিন ডেকে বললেন, “তোমার কাজ তো ভালোই! না না, অবহেলা করো না, ঠিক একদিন কাজে লাগবে। হয়তো এমন সময় আসবে যে এই ডিগ্রিটার জন্যই তুমি যোগ্য হয়ে উঠবে।”
২০০০ সালের আগেই আমার থিসিস লেখা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ললিতা সান্যাল বলেছেন, “চার কপি টাইপ করে বাঁধাই করে নিয়ে আসবে। এক কপি নিজের কাছে রেখে তিন কপি ইউনিভার্সিটিতে জমা দিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দিনে তোমাকে উপস্থিত থেকে একটা সাক্ষাৎকারের সম্মুখীন হতে হবে।”
পিএইচডি থিসিস টাইপ করা প্রতিটি তথ্য সংযোজন করা এবং স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন এটা আমার পূর্বে কখনোই জানা ছিল না। এই কাজটি করতেও প্রায় মাসখানেক সময় লেগে গেল। খরচ হয়ে গেল প্রায় চার হাজার টাকা। এই ক’মাস যে কী কষ্ট করে এই কাজটি করেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। রামপুরহাট হাইরোডে অবস্থিত আরশাদের কম্পিউটার কেন্দ্রে কাজটি আমাকে করে দিয়েছিল আমারই এক ছাত্র সব্যসাচী। জুলাই মাসে জমা দিতে যাবার জন্য যখন তৈরি হচ্ছি তখনই এলো এই বিপদ।
সেবার প্রবল বর্ষণে পাটনার সঙ্গে সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তিস্তাতোর্সা ট্রেনটি এক বুক জলের ওপর ভাঙা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলো দীর্ঘদিন ধরে। এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেও বর্ধমান যেতে পারলাম না ইন্টারভিউ দিতে। আহমদপুর পর্যন্ত গিয়ে ট্রেন থেমে গেল। সাঁইথিয়ার ব্রিজ ভেঙে গেছে। গুসকুরার রেললাইনের ওপর দিয়ে বইছে জলস্রোত। সেই দিনই ছিল ইন্টারভিউ এর তারিখ। মাত্র ১০০ টাকা পকেটে নিয়ে ট্রেনে চেপে যাচ্ছিলাম আমার যাবতীয় শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র নিয়ে। কিন্তু আসা-যাওয়া বন্ধ বলে আহমদপুরেই আমাদেরকে নামিয়ে দিল। সেখানেই প্লাটফর্মে তিন দিন কাটালাম। তারপর বাড়ি ফিরে এসেও যেতে পারলাম না পাটনা। একদিকে থিসিসও জমা হলো না, অন্যদিকে চাকরির আশাও নির্মূল হয়ে গেল। প্লাটফর্মে তিনদিন কাক ও কুকুরের সঙ্গে নিজস্ব বিষণ্ণতা আমাকে আরো জীর্ণ করে দিল। আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিল অনেকটাই। তীব্র হতাশার মধ্যে কোনো আশার আলো দেখতে পেলাম না। খিদে ও তেষ্টায় শরীর অবসন্ন হয়ে পড়লো। চড়া দামে বিক্রি হতে লাগলো একবাটি ভেজা ভাত ও একটি পেঁয়াজ। শেষ পর্যন্ত তাও ফুরিয়ে গেল। পাওয়া গেল না এক কাপ চাও। ধুস্ শালা, এই জীবন! কী করবো এই জীবন নিয়ে? চোখের সামনে ভয়ংকর অন্ধকার। মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম কংক্রিটের ওপরেই।🍁(চলবে)
🍂ফিরেপড়া | গল্প
নতুন মাইনে পেয়ে তিনি আমাদের সবাইকে বারো আনার কুলফি বরফ খাইয়েছিলেন। সবাই তাই মাস্টারকে খুব ভালোবাসত। তাঁকে আদৌ দেখতে পারতুম না কেবল আমি। কেন তা জানি না। তথাপি আমার অনিচ্ছায় তাঁর অধীনে থাকতে হত, কারণ মেজোকাকার হুকুম। মেজোকাকাকে আবার সবারচেয়ে ভয় করি, মায় বাবার চেয়েও। সুতরাং আমি খুঁজতে লাগলুম মাস্টারের ভুল-ত্রুটি, যাতে আমি তাঁর হাত থেকে রেহাই পাই। একদিন আমি জিজ্ঞেস করলুম, মাস্টারমশাই, পাহাড়ের হাইট মাপতে গেলে ব্যারোমিটার কী দরকার লাগে?
বিধুমাস্টার
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
বিধু মাস্টারের কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না। তাঁর স্মৃতি হয়তো আজীবন আমায় বহন করে বেড়াতে হবে। মাত্র ক-টা মাস তিনি আমার কাছে এসেছিলেন, তারপর চলে গেলেন—শুধু এই ক্ষণিকের পরিচয় আজ অমর হয়ে রয়েছে।
বেশ মনে আছে, সে দিনটা ছিল রবিবার। আমি সকাল বেলা কৌমুদী খুলে ধাতুরূপ মুখস্থ করছি চোখ বন্ধ করে দুলে দুলে, এমন সময় বাইরে কে যেন ডাকলেন, হারাণবাবু আছেন? হারাণবাবু!
আমি জানলা দিয়ে মুখ বার করে প্রশ্ন করলুম, কাকে চাই?
—এখানে হারাণবাবু বলে কি কেউ থাকেন?
—থাকেন। তিনি আমার কাকা।
—তাঁকে একবার ডেকে দাও তো।
—কী দরকার?
—তাঁর কি একজন টিউটর চাই?
সত্যিই তো, মেজোকাকা আমাদের জন্য একজন টিউটর চাই বলে খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কথাটা আমি একেবারে ভুলেই গেছলুম। বললুম আপনি বুঝি সেই বিজ্ঞাপন দেখেই আসছেন?
—হ্যাঁ।
—তা ভেতরে এসে বসুন। আমি মেজোকাকাকে ডেকে দিচ্ছি।
ছিপছিপে, লম্বা, কালোপানা লোকটা অত্যন্ত দ্বিধায়, অতিসন্তর্পণে আমাদের বৈঠকখানায় প্রবেশ করলেন। আমি বললুম, বসুন আপনি।
তিনি ভয়ে ভয়ে যেন একবার আমার দিকে তাকিয়ে পাশের একখানা বেঞ্চে বসলেন। আনাড়ি লোকটাকে দেখে আমার মাস্টারের প্রতি সকল শ্রদ্ধা তিরোহিত হল। বললুম, ওই চেয়ারটায় বসুন না!
তিনি প্রথমে বললেন, থাক থাক। তারপর একখানা চেয়ারে গিয়ে বসলেন। আমি ফ্যানটা খুলে দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে চলে গেলুম মেজোকাকাকে ডেকে দিতে। মেজোকাকা উঠে এলেন, আমিও এলুম তাঁর পিছু পিছু, আর এল ঝন্টু, মিন্টু চাঁদু ও রেবা। মেজোকাকা বৈঠকখানায় ঢুকতেই তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে হাতজোড় করে তাঁকে নমস্কার করলেন। মেজোকাকা বললেন, আপনি তো আজ সকালের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে আসছেন?
তিনি বললেন, হ্যাঁ।
মেজোকাকা আবার বলতে আরম্ভ করলেন, এই পাঁচটি ছেলে-মেয়েকে পড়াতে হবে। রাতে তিন ঘণ্টা। মাইনে তো লিখেই দিয়েছি—সাত টাকা। কামাই চলবে না।
তিনি বললেন, না কামাই করবই-বা কেন?
মেজোকাকা বললেন, তা আপনি থাকেন কোথায়?
—শ্রীনাথ দাস লেনে।
—আপনার নাম?
—শ্ৰীবিধুভূষণ চট্টোপাধ্যায়।
—কদ্দূর লেখাপড়া আছে?
—ম্যাট্রিক পাস। কথাটা শুনে মেজোকাকা ঠোঁট কামড়াতে লাগলেন, টেবিলের ওপর বারকয়েক ডান হাত দিয়ে আঘাত করলেন, তারপর বললেন, আপনি ফোর্থ ক্লাসের ছেলেকে পড়াতে পারবেন তো?
ফোর্থ ক্লাসে পড়ি কেবল আমি। এদের দলের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়ো। আমার বুক গর্বে ফুলে উঠল। আমি বিধু মাস্টারের মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলুম। তিনি বললেন, তা আর পারব না কেন?
মেজোকাকা বললেন, বেশ ভালো। সোমবার থেকে কাজে লাগবেন। সন্ধ্যা ছটার সময় ঠিকমতো আসবেন। তারপর আমাদের বললেন, ইনি তোদের নতুন মাস্টার, এনার কাছে মন দিয়ে পড়বি, বুঝলি?
তারপর সোমবার দিন তিনি এলেন ঠিক ছ-টার সময়ে। আমাদের সকলের নাম জিজ্ঞেস করলেন—আমাদের বইগুলো উলটে-পালটে দেখলেন—বেশিক্ষণ দেখলেন আমার ইংরেজি বইখানা। বললেন, বেশ শক্ত বই পড়ানো হয় তো!
তাঁর কথা শুনে আমার কী আনন্দই না-হল। আমি বললুম, আমাদের আবার ইংরেজি ফিজিকস, কেমিস্ট্রি পড়ানো হয়।
তিনি অবাক হয়ে গেলেন, বললেন, তাই নাকি?
আমি তাঁকে আমাদের সায়েন্স বইখানা এনে দেখালুম। তিনি বললেন, কী পড়া হয়েছে?
—প্রপারটিস অব এয়ার আর ব্যারোমিটার।
আমার কথাগুলো শুনে তিনি বেশ চমকে গেলেন, আর আমি খুব কৌতুক বোধ করলুম। তিনি তখন রেবাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী খুকি?
রেবা লজ্জায় মুখ নীচু করে রইল। নতুন লোক দেখলে ওর ওইরকম লজ্জা। আমি বললুম, বল না রে কী নাম?
তিনি তখন রেবার পশমের মতো কোমল চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। রেবাও অনেক কষ্টে বলল, লেবা।
ও ‘র’ উচ্চারণ করতে পারে না। তিনি বললেন, বাঃ বেশ নাম তো তোমার, খাসা নাম তো তোমার!
কিন্তু দিন যত বয়ে গেল রেবার লজ্জাও তত কমে যেতে লাগল আর বিধু মাস্টারও রেবাকে বেশি ভালোবাসতে লাগলেন। শুধু রেবাকেই না, তিনি আমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসতেন। তিনি পড়াতে আসবার পর প্রায়ই একজন ফেরিওয়ালা সুর করে হেঁকে যেত, চাই অবাক জলপান, স্বাধীন ভাজা, ঘুগনিদানা!
মাস্টারমশাইও আমাদের প্রায় ওই কিনে খাওয়াতেন। নতুন মাইনে পেয়ে তিনি আমাদের সবাইকে বারো আনার কুলফি বরফ খাইয়েছিলেন। সবাই তাই মাস্টারকে খুব ভালোবাসত। তাঁকে আদৌ দেখতে পারতুম না কেবল আমি। কেন তা জানি না। তথাপি আমার অনিচ্ছায় তাঁর অধীনে থাকতে হত, কারণ মেজোকাকার হুকুম। মেজোকাকাকে আবার সবারচেয়ে ভয় করি, মায় বাবার চেয়েও। সুতরাং আমি খুঁজতে লাগলুম মাস্টারের ভুল-ত্রুটি, যাতে আমি তাঁর হাত থেকে রেহাই পাই। একদিন আমি জিজ্ঞেস করলুম, মাস্টারমশাই, পাহাড়ের হাইট মাপতে গেলে ব্যারোমিটার কী দরকার লাগে?
তিনি বললেন, দরকার লাগে নাকি? কে বলল?
–স্কুলের মাস্টার।
–তা হবে, কোথায় লেখা আছে বলো তো?
—সায়েন্সের বইতে।
—দেখি সায়েন্সের বই!
আমি তাঁর হাতে বইখানা তুলে দিয়ে বললুম, কিছুই বুঝতে পারিনি মাস্টারমশাই।
তিনি বইয়ের পাতা খুলতে খুলতে বললেন, বেশ, বুঝিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমায় বোঝানো দূরের কথা, তিনি নিজেই হয়তো সেই ইংরেজি অংশটার সঠিক অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারলেন না। অগত্যা অনেকক্ষণ পরে তর্জমা করে দিলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, বুঝতে পেরেছ?
আমি বললুম, কিছুই না। তিনি বললেন, আচ্ছা আমি তোমার বইখানা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, একবার পড়ে ভালো করে বুঝিয়ে দেব।
বইখানা নিয়ে গেলেন সত্যি, সেটা আমায় ফিরিয়েও দিলেন যথাসময়ে; কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। কথাটা কাকাকে বলতে তিনি বললেন, আচ্ছা কেমন পড়ায় তা আমি দেখছি।
পরের দিন থেকে তিনি আমাদের কাছে বসে পড়া শুনতে লাগলেন। মাস্টারমশাইয়ের পড়ানোর তিনি প্রায়ই ভুল ধরতেন। হয়তো বলতেন, লুসি গ্রে’র শেষের স্ট্যাঞ্জা দুটো আরও বিশদভাবে বুঝিয়ে দিন। ওই যে ওর—
O’er rough and smooth trips along And never looks behind; And sings a solitary song That whistles in the wind
ওর ভাবার্থটাও ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, বুঝেছেন কিনা?
এসব ক্ষেত্রে মাস্টারমশাই কোনো কথা বলতেন না বড়ো-একটা। কাকাকে তিনি বেশ সমীহ করে চলতেন।
তিনি বড়ো একটা বুদ্ধির অঙ্ক কবতে পারতেন না। একদিন কাকার সামনে তিনি একটা অঙ্ক এক্স দিয়ে কষছিলেন। কাকা বললেন, সব গোলমাল হয়ে গেল মাস্টারমশাই!
তিনি বললেন, কেন?
কাকা বললেন, ও অঙ্ক তো অ্যালজেব্রার প্রসেস অনুযায়ী আপনি করতে পারবেন না!
যাই হোক, তিনি কিন্তু কোনো উপায়েই আমায় অঙ্কটা বুঝিয়ে দিতে পারলেন। তিনি চলে যাবার পর কাকা বললেন, মাস্টার তত সুবিধের নয়।
এমন সময়ে বিশ্বকর্মা পূজা এল। আমরা বললুম, মাস্টারমশাই, আমাদের ঘুড়ি লাটাই কিনে দিতে হবে।
তিনিও রাজি হলেন, কারণ তিনি সম্প্রতি মাইনে পেয়েছিলেন। তিনি আমাদের সেন্ট জেমস স্কোয়ারের দক্ষিণ কোণের একটা মনিহারি দোকান থেকে এক টাকার প্রায় ঘুড়ি-লাটাই কিনে দিলেন। কিন্তু আমাদের তিনি যা কিনে দিতেন সে সম্বন্ধে কাউকে কিছু বলা নিষেধ ছিল। এসব লুকিয়ে লুকিয়ে আমাদের দিতেন। রেবার জন্মদিনে তিনি তিন টাকা দামের একটা কলের রেলগাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, কাউকে বোলো না যেন ঘুণাক্ষরে।
বিশ্বকর্মা পূজার দিনচারেক পর একদিন শ্রীনাথ দাস লেনে মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে দেখা। আমি নমস্কার করলুম। তিনি বললেন, এই যে, পিন্টুযে! কোথায় চলেছ?
আমি বললুম, আপনি কোথায় থাকেন মাস্টারমশাই?
তিনি বললেন, এইখানেই।
—চলুন না দেখে আসি।
কী জানি কেন মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি দেখবার জন্যে আমি অত্যন্ত উতলা হলুম। তিনি দ্বিধায় আমায় নিয়ে গেলেন তাঁর অপূর্ব গৃহে। টিনের চাল দেওয়া একখানা মেটে বাড়ির দোতলায় একখানা ছোট্ট ঘরে থাকেন। সরু ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে ভয় করে। ফালি বারান্দাটা মানুষের ভারে সামান্য কাঁপে। আস্তে আস্তে তাঁর পিছু পিছু তাঁর ঘরের দিকে গেলুম। তিনি গিয়ে তাঁর ঘরের তালা খুললেন। অপরিষ্কার ও অপরিসর ঘর। দেওয়ালে কতকগুলো ক্যালেন্ডার টাঙানো। একপাশে একখানা বিবেকানন্দের ছবি। মেঝের ওপর একটা খাটিয়া পাতা, তার ওপর আবার একটা কালো ও তেল চিটচিটে বালিশ। মাস্টারমশাই আমায় বসিয়ে ‘আসছি’ বলে কোথায় চলে গেলেন সহসা। আর আমি তাঁর ঘরঘানা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলুম। বড়ো দুঃখ হল তাঁর দারিদ্রক্লিষ্ট অবস্থা দেখে। ঘরের মধ্যে আর একখানা কাপড়ও নেই। যদিও-বা একখানা আছে, তাও শতছিন্ন এবং অত্যন্ত কালো। একটি জামা ও একখানিমাত্র কাপড়ে তাঁকে দিন কাটাতে হয়। আমার বড়ো অনুকম্পা জাগল তাঁর প্রতি। তাঁকে যে আমি এত ঘৃণা করতুম তা একেবারে বিস্মৃত হলুম। হঠাৎ যেন আমি একেবারে বদলে গেলুম।
এমন সময়ে মাস্টারমশাই একঠোঙা খাবার নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। আমি ব্যথিত সুরে বললুম, ওসব আবার কেন মাস্টারমশাই!
তিনি আমার কথা শুনে একটু যেন আশ্চর্যান্বিত হলেন। আমতা আমতা করতে লাগলেন, না-না, এ আর এমনকী!
আমি বুঝলুম যে তাঁর শ্রমের পারিশ্রমিকটা এমন করে অপচয় করা তাঁর শরীরের বিন্দু বিন্দু রক্ত গ্রহণ করার শামিল। আমি তীব্র প্রতিবাদ করলুম, না, এ কখনো হবে না।
আমার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দেখে তাঁর মুখের চিরপ্রফুল্ল হাসি অকস্মাৎ যেন মিলিয়ে গেল। তিনি মুখ চুন করে বললেন, এ কী বলছ পিন্টু?
আর সাহস হল না কিছু বলতে। যাই হোক, বাড়ি ফেরার পথে সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করলুম যে মাস্টারমশাই যাতে আমাদের জন্যে তাঁর মাইনে থেকে কিছু খরচ না-করেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। হাজার হোক বেচারা ওই ক-টি টাকা। সম্বল করে কলকাতায় বাস করছেন।
কিন্তু আমার প্রতিজ্ঞামতো কাজ করবার আগেই একটা বিশ্রী ঘটনা ঘটে গেল। মেজোকাকা একদিন আমার ট্রানস্লেশনের খাতাখানা দেখতে দেখতে মাস্টারমশাইকে বললেন, এসব কী পড়াচ্ছেন মাস্টারমশাই। ইংরেজি আপনি দেখছি কিছুই জানেন না! I live in a boarding সেনটেন্সটার মধ্যে in’ কী এমন অপরাধ করেছে যে ওকে তুলে আপনি at বসিয়ে দিলেন! আসলে ওর ভুল কোথায় তা তো দেখতে পেলেন না। আর Every bush and every tree was in bud সেনটেন্সটার ‘was’ কেটে ‘were’ করলেন কোনgrammar অনুযায়ী? আপনি ফোর্থ ক্লাসের ছেলে পড়াবেন কেমন করে?
মাস্টার লজ্জায় মুখ নীচু করে রইলেন। আর আমি? আমি ভাবতে লাগলুম ভারী বিপদের কথা। মেজোকাকা বললেন, তাই বলি ছেলেরা এত খারাপ হয়ে যাচ্ছে কেন! পিন্টু তোর হাফ-ইয়ারলির প্রোগ্রেস-রিপোর্টটা নিয়ে আয় তো!
আমি ভয়ে ভয়ে আমার প্রোগ্রেস-রিপোর্ট নিয়ে এলুম। মেজোকাকা বললেন, দেখুন কী বিশ্রী রেজাল্ট! ইংরেজিতে তো ফেল! আর সবে রগ ঘেঁষিয়ে পাস করেছে। এর পর আর আপনাকে রাখতে আমি সাহস করি না। তাহলে ওদের পায়ে কুড়ল মারা হয়। আমরা অন্য মাস্টার দেখব। আপনার বাকি মাইনেটা দু তারিখে নিয়ে যাবেন।
মেজোকাকার কথায় মাস্টারমশাই একটি প্রতিবাদ পর্যন্ত করলেন না, নীরবে নিঃশব্দ পদক্ষেপে প্রস্থান করলেন। আমি তাঁর মুখের দিকে তাকাতে পারলুম না। এর জন্যে দোষী তো আমি! আমি তো মাস্টারমশায়ের ভুলগুলো মেজোকাকাকে বলে বলে তাঁর মন একেবারে চটিয়ে রেখেছিলুম!
আমি অপরাধীর মতো বসে রইলুম মুখ নীচু করে।🍁 [বানান অপরিবর্তিত ]
🍂কবিতা
সুদীপ বাগ-এরকবিতাগুচ্ছ
খোলস
ঝরা পাতার মড়মড় ধ্বনি কে আর শোনে? অচ্ছুৎ বর্ণ কাহিনীতে কে আর কান পাতে? এ সব আর্তনাদের মর্মকথা কখনো হৃদয়ের স্পর্শ পায় না। আবর্জনা ভেবে এখনো জলছোঁচ করে।
সমাজপতি অবিবেচক হয়ে সময়ের অস্তিত্ব মাপে। প্রীতি ও ভালোবাসার খেলায় গড়িমসি চলে। দেওয়া কথা সময়ের ঘোরে ভাসিয়ে দেয়। এই খেলায় রাতদিনে নামিয়ে আনে অন্ধকার।
চোখে নিম্নচাপে ঝর্ণা;আর একটা প্রশান্ত মহাসাগর হলেও কার কি আসে যায়। ল্যাংড়া পায়ের লাথিও এখন মিষ্টি লাগে। ও পায়ে অন্য মধু তাই সামলে চলে।
এদিকে সোনার তরী ভেসে গেলে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। মধুর নেশা ঘোর যখন কাটবে, দেখবে সিঁড়ির প্রথম ধাপে তুমিই রয়েছ। ওঠার চেষ্টায় বিভোর হলেও অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছ। এখানে একবার পা রাখলে ওঠানোর চেষ্টা বারেবারেই বিফলে যায়।
এ কোন রাস্তায় হাঁটা? কোন পথ ধরে? কানা গলিতে মুখ থুবড়ে মুষড়ে পড়া। গোলক ধাঁধা বুঝতে বুঝতেই জীবন শেষ। এটা চলতে গিয়ে হোঁচট খাওয়া নয়। পাথরের নীচে চাপা পড়ে আছে জীবনের উৎস।
তোমার স্বপ্নের থলিতে বিষ ঢালে মধুসূদন। পারলে প্রতিরোধে আটকে নিও। এ ছাড়া মুক্তির সহজ উপায় আর কি আছে। এই হতাশা নিয়েই বাঁচা মরা। আবার এই হতাশাই উৎরায়। সমাজের অগ্রগতির তোমরাই তো বাহন।
প্রতীক্ষা
দীর্ঘ দিনের সঙ্গী কুয়াশা ঠেলে হাঁটে। আবার ফিরে আসে। কয়েকটি ঘুণপোকা কড়কড় শব্দে ভাঙ্গা দরজা কাটে। সতর্কতায় থাকি,নড়েচড়ে বসে কান পাতি। অন্য শব্দে ওরা সাময়িক ভয় পেয়ে চুপ করে,আবার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যে অনড় হয়ে ওঠে। শোধরানোর চেষ্টা এখানে বৃথা।
সমাজে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ওরা সব কুড়ে কুড়ে খায়। মুস্কিল আসান করার সময় ঝাঁপ বন্ধ। অন্ধরা লাফায় ঝাঁপায়,লাফালাফি দাপাদাপি করে, চরম বেয়াদপিতেও মুখ বন্ধ। নিজের ধ্বংস স্তূপ নিজেই মাথায় করে ফেলে। এমন দিনও দেখতে হচ্ছে।
হারানো সময়ের ভাবনা চমকে দেয়। সে সময় ফিরিয়ে আনতে অনেক কসরৎ। অনেক ত্যাগ ও তিতিক্ষায় সময় ঘষতে হবে। মাসুল দিতে দিতেই মাসুল নিতে হবে। সময়ে সূর্য তখন কুয়াশা ঠেলে ভাঙ্গা দরজায় কড়া নাড়বে। দীর্ঘদিনের সেই সঙ্গী এটুকু আশাতেই ঘরে ফেরে,পথ হাঁটে।
শহরতলীতে পেল্লাই আবাসন আর অ্যাপার্টমেন্ট,বিনিময় খেলাতে হেলছে দুলছে। বসবাসকারীর তাতা চোখে অন্ধকার। অবাধে নামছে ঝর্ণাধারা। সব আনন্দ হাসি কান্না সুখ দুঃখ এখানে শুকিয়ে কাঠ। ভাগাভাগির আঁচড়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ছাপোষারা সর্বশান্ত হয়ে রাস্তায়। অসময়ে নামা জীবন অন্ধকারে শুধু কানামাছি খেলা। হাপিত্যেশে হাতে আধুলি নিয়ে হাপর গুনছে। রাত কানা চোখ হাতরায়,শুধু কূল খোঁজে। চেনা সুরে বাঁশি বাজে আর আলো আঁধারেতে নেমে আসে অন্ধকার।
গাঁ শহরে সেই একই খেলা। দুঃখের সুরেও স্বপ্নে ভাসে; সূর্য দৃশ্যমান।
বোঝা
গাঁয়ের মানুষ তো ভালোই ছিল
আধুনিক ছোঁয়া তো কোন দোষের নয়
এখন দেশী বিদেশি মদের যোগান বেড়েছে
এই কুপ্রচলনে অনেকটাই আপত্তি ছিল
ভেবেছো রক্ষণশীরা এ কথা বলেই থাকে
যাতে সব ঘোড় লাগে মনেপ্রাণে
সে কথা কি কেউ কানে শোনে
পাউচ সাপ্লাই তো অহরহ ঘরের কোণে কোণে
এখন গাঁয়ে ধর্ষণও ঢুকে যাচ্ছে হুড়মুড়িয়ে
এসব মজাতে তো বুড়ো ঠ্যাংও লাফিয়ে ওঠে
কি আশ্চর্য এটা ভাঙ্গতে বেশ দম লাগে
সমাজ তো আর কোন বস্তু নয়
যে ঘা দিলেই ভেঙ্গে যাবে
সমাজ একটা গতিশীল বহমান ধারা
সে নিজের গতিতেই ভাঙ্গে এবং গড়ে
সমাজ তো আগে থেকেই ভাঙ্গা ছিল
নতুন করে কি আর ভাঙ্গবে শুনি
এ তো নদীর কূলের মতো
একূল ভাঙ্গবে ওকূল গড়বে
এই গতির সামনে যে আসবে সেই তো ভাঙ্গবে
এ সব কাজ তো একা একা গড়া ভাঙ্গা যায় না
তাই সমাজ সমাজ বলে যতই চিৎকার করি
এক সাথে সবাই ধাক্কা দিলে কিছু তো হবেই
অবশ্যই মানুষ যদি চায় কি না হয়
বাবার অবস্থান মায়ে রূপান্তরিত হয়
শহর তলির কথাই শুধু বললে হবে না
এখন সব গাঁয়ে গঞ্জেও দেখতে পাবে
কথায় কথায় খুন খারাপি
উচ্চস্তরের এই সব অপরাধ চুঁইয়ে চুঁইয়ে
শেষমেশ এই গাঁয়ে গঞ্জেও ঘাঁটি হয়েছে
শুধু গুটিকয়েক অপরাধীর ছাতা
গোটা সমাজ মনস্তাপে বয়ে বেড়াবে
এতোটা আর সহ্য করা যায় না নটবর
এই সবের উৎখাত শুধু জনজাগরণে
এ কলঙ্ক ঘুচিয়ে দিতেই সবাই জাগছে
সুদীপা বসু-এরকবিতাগুচ্ছ
হঠাৎ হাওয়া
সকাল বেলায় খবর শুনে
মনটা খুব খারাপ হোল;
চাকরি শেষে নন্দবাবুর পেনশনটাই পুঁজি
মাথা গোঁজার ছোট্ট ফ্ল্যাট সাত তলাতেই ছিল
হঠাৎ নাকি হুড়মুড়িয়ে সেটা গেলো পড়ে
নিন্দুকেরা বলছে নাকি উন্নয়নের জেরে!
গরীব কৃষক বসু দুলের একটু জমি
তাতেই সে খুশি—
কিন্তু কিছু পার্টির নেতার
নজর আছে সেই জমিতে;
একদিন জানতে পারি বসু দুলে
একসিডেন্টে মারা গেছে
ভোর বেলাতে!
রাজমিস্ত্রির গরিব মেয়ে পড়াশোনায় ভালো
আশা ছিল—
বড় হয়ে মানুষ হবে
তাই তো রোজ সাইকেলেতে কলেজ যেতো;
হঠাৎ সেদিন—
সন্ধে বেলায় ফেরার পথে—
নরখাদক জন্তুগুলো ছিঁড়ে খেলো দেহটাকে
স্বপ্ন গুলো হারিয়ে গেলো চিরতরে ফুটপাতেতে!
ঐ যে দূরে ঝিলের পাড়ে
বসত মেলা—
পরিযায়ী পাখিদের সারাবছর আনাগোনা
পাখির ডাকে ঝিলের জল উঠত নেচে;
হঠাৎ দেখি ঝিল বুজিয়ে নতুন শহর
আস্ত ঝিলের শবের উপর
হারিয়ে গেলো কলকাকলি
পরিযায়ীরা আর আসে না
শহর জুড়ে বোমা বন্দুক অন্ধকারের আনাগোনা!
সকাল হলেই নতুন খবর
প্রাত্যহিকে—
বীরপাড়ায় মরলো পুড়ে অ-নে-ক ক’জন
ঘর জ্বালিয়ে দিল কারা যায়নি জানা
পুলিশ বলে, তদন্ত চলছে—
এখন কিছুই বলা যাবে না!
পাশের গ্ৰামের ঐ মেয়েটা
প্রত্যহ যায় কলেজে
হাসিখুশি মিশুকে সে
বড় হওয়ার স্বপ্ন দ্যাখে,
হঠাৎ এদিন খবর এলো খুন হয়েছে
আজও তার বিধবা মা শূন্য চোখে তাকিয়ে থাকে।
আমার বাড়ির ডান দিকে
যে ঘরটা যাচ্ছে দেখা—
একটা ঘরে থাকত বিজয়
পড়াশোনায় খুব -ই ভালো
আমার ছাত্র ছিল
চাকরির আশায় জমি বেচে
টাকা দিয়েছে দালালকে
পরে শুনলাম—
কিছুদিন চাকরি ক’রে কাজটা তার চলে গেছে।
আমার বাড়ির পিছন দিকে—
পুতুলদের যে ঘরটা ছিল
থাকত একা—
দর্জির সে কাজ করত;
সকাল বেলায় উঠে দেখি ঘরটা ভাঙ্গা
পার্টির ব্যানার, পুতুল কোথায় কেউ জানে না!
কথার বাঁধন যত খোলে
হাড়হিম শব্দ
যেন পাঁজর খসায়
বিষন্ন রাত গেল চলে
অহর্নিশি স্নায়ূচাপ বাড়ে
দীর্ঘশ্বাস কি গভীর
থামানো যায়নি তাকে
প্রবাহিত অন্তরে বাহিরে
মনখারাপের ক্ষণ নেই
কখন সে আসে যায়
শরীর ভিজিয়ে—
কথারা হারিয়ে ফেলে খেই
এতো কথা কথার বিস্তার
নমনীয় সহনীয়
আঘাতে আঘাত
তোলপাড় হৃদয়ে ঢেউয়ের পাহাড়
এসব তো দেখে নাকো কেউ
খোঁজ ও রাখে না
ব্যস্ত সময় যায়
সংসার সীমান্তে শুধু ঢেউ আর ঢেউ
জীবনের গতিপথ নদীর মতো
দুকূলেই ভাঙা-গড়া
হাসি কান্নায় ভারী
তোলা পালে হাওয়া অব্যাহত।
এগিয়ে এসো পায়ে পায়ে
চায়ের কাপে উঠলে ধোঁয়া
ভাবছো আছি বেশ
চোরাপথে লুঠ হয়ে যায় তোমার আমার দেশ।
ভাবছো তুমি বেশতো আছি
যাচ্ছে চলে দিন
বাড়ছে বেকার পাচ্ছে না কাজ বেড়েই যাচ্ছে ঋণ।
ভাবছো তুমি আছি সুখে
দুধে ভাতে বেশ
বুদ্ধিজীবী পাল্টি খেয়ে যাচ্ছে হয়ে মেষ!
বোমা বন্দুক চতুর্দিকে
লাশে আর উল্লাসে
সেই প্রবাহে আমরা বাঁচি বিভেদে সন্ত্রাসে।
গোবর থেকে ঘুঁটে পেলাম
এখন শুধুই ছাই
সেই ছাই আজ শরীর জুড়ে জানাচ্ছে গুডবাই!
এখনো তো সময় আছে
নেই কোনো সংশয়
এ লড়াই বাঁচার লড়াই মৃত্যুও পাবে ভয়।
জানতে ইচ্ছে করে
তুমিই যদি সর্বজ্ঞ
তবে জেনে বুঝেও কেন না জানার ভান?
তুমি যদি এতোই মানবিক
তাহলে মর্মন্তুদ হাহাকারেও কেন তুমি চুপ?
তুমি যদি সহজ সরল
মাটির গা বেয়ে মায়েদের চোখে কেন এত জল?
তুমি যদি মানুষেরই পাশে
তবে কেন রাজপথ এতো উত্তাল?
মানুষের কেন ভুখা পেট?
মাটির বুকেতে কেন এতো দ্রোহের আগুন?
জানার ইচ্ছে হলে বুকেতে বুলেট?
এটাই বোধহয় মানবিক রূপ!
সব ঠিক আছে
হারিয়ে যায়
অগুনতি ভালোবাসা ভালো লাগা
কে তার হিসাব রাখে
জীবনও রাখে না!
ঝলসানো পাতাদের দুপুর
এলোমেলো বসন্ত
বসন্ত বিষাদ!
শিকড়বাকড়ে জড়ানো জীবন
ডাস্টবিনে খুঁজে পায় বাঁচার রসদ
রসিদ লাগে না!
গতকাল যে মেয়েটি টিউশন গিয়েছিল
সে আর ঘরে ফেরেনি!
সব ঠিক আছে…
শুধু দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে যারা হারিয়ে গেল
তারা আর ফেরেনি!
যে শ্রমিকগুলোর অকাল মৃত্যু হল
তাদেরও ঘরে ফেরা হল না
যে কৃষক ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হল
তার কথা কে-ই বা ভাবে;
যে অসহায় মেয়েগুলো পণপ্রথার বলি হল
কাল রাতে নিয়ে গেল লাশকাটা ঘরে;
এ ঘটনার ঐতিহ্য রয়েছে!
যে ফসল শুকিয়ে গেল শীষের ডগায়
যে মাটির বুক ফেটে হয়েছে চৌচির
কেউ জানতেই পারলো না
এইসব নিদারুণ ইতিহাস!
সব ঠিক আছে—
রাস্তা ঘাট, পিচ রাস্তার মোড়
রাস্তার মরচে পড়া জলের কল
বাস, ট্রেন, জাহাজ, ঘর— বাড়ি
আকাশ, বাতাস,সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র
সুখ- দুঃখ হাসি- কান্না
স…ব আছে।
শুধু যারা হারিয়ে গেল
তারা আর নেই!
মৌনতাও কথা বলে
জানলার দিকে যে তিনতলা বাড়িটা
উদোম শরীরে—
দেখলে মনে হয় বিবস্ত্রা, লাঞ্ছিতা
যাকে টেনে হিঁচড়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
আমরা দুজনেই দুজনকে দেখি
আর দুমড়ে মুষড়ে যাই শ্রাবণের অভিঘাতে।
দুজনেই নির্বাক বোবা কান্নায়
দুজনেই অভিযোগহীন
পথের ধারেতে বেড়ে ওঠা গাছটির মতো।
প্রতিরোধ প্রতিবাদ, ভেঙ্গে যাওয়া পাঁজর পথের দুপাশে
ঠোঙায় মেয়ানো মুড়ি, আধ – খাওয়া বিড়ি
পোড়া দেশলাই—
সবাই যেন কিছু বলতে চায়
বাদামি সম্পর্ক নদী পাড়ে, রেল গেট-এ
নৌকা বিহারে—
তাদেরও তো নালিশ রয়েছে।
বাদামের খোসা, খোসা আনাজের—
ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া সাদা ভাত
সবাই যেন কিছু বলতে চায়;
অভিযোগ রয়েছে।
করাতের চিৎকার, হাপরের প্রাণপণে শ্বাস
তাদেরও রয়েছে কিছু কথা,
তারাও বলতে চায় কিছু।
পাড় ভাঙ্গে, ঘর ভাঙ্গে, মন ভাঙ্গে
নৈঃশব্দ্যের ঘনঘোরে যে যার মতোন।
নীরব দর্শক সব—
যাতায়াতেও না দেখার ভান।
নীরবতা জড় বস্তুর
আমার মননে ওদের মৌনতার ছবি
কী কঠিন কঠোর বাস্তবে।
স্বপন দত্ত-এরএকটি কবিতা
ভুলেই তো গেছি লাল দাগ দিতে যে বারণ
কোথায়?
ওহহহ… ওই যে কুঁচি দেওয়া বুকে।
হ্যাঁ। ওইখানে বুঝি
কোনও দিন একটা ফের
বোধিবৃক্ষ উঠবে, আলো ছড়াবে…
আর—আর আমি তখন
গৌতম হয়ে—
ওই বোধিবৃক্ষের গায়ে নয়…
ওই যে বললাম, বুকের আঁচড়ে
হ্যাঁ, কবেকার নিরাশার ঘর-দোরগুলো নিয়ে খেলতে-খেলতে
আঁচড় কাটতে-কাটতে
আবার কখন এক সোহাগ নীল নিস্তব্ধতায়
হরিণীর ডাকে তির তির তির…
আমি কী কুশ বইছিলাম?
কিন্তু আমি তো রাজনীতি কখনও করিনি!
তাহলে…
তাহলে…
শেষ হয়ে যাবার বেলায়…
না না শেষ কেন হব!
তবুও যে উল্কাপাত
নাকি আমারই পাত!
ছটফট করতে করতে—
একি নিজের ওপরেই নিজে
আহ! এত হাল্কা হয়ে যাচ্ছি কেন?
ক্রমেই— ক্রমেই কখন
নিজের ভাষাটাই ভুলে যায়।
আসলে কখন যে নিজেকেই গিনিপিগ করেছি
ওই— ওই একটা বিরাট বুককে
বড় করতে করতে
হৃদয়ে স্নান ভুলেছি।
নিজের বাড়িটাকে বাড়াতে-বাড়াতে
সবার বাড়ি থেকে—
দ্যাখো
আমি যে নিজেকে আবিষ্কার করতে
কখন যে নিজেকে গিনিপিগ বানিয়েছি।
না। ভুল হচ্ছে।
নিজেকে লুকিয়ে ফেলেছি।
কেন? কেননা, আমি,
আমি বড় নিজে লজ্জা পাই।
কেননা জানি, স্বপ্নের মধ্যেও
আমাকে *বেওনেট* খুঁজে বেড়ায়!
যদিও, যদিও কখন যে কোনও বেশ্যা
কখন যে কোনও— নাহ—
এই মুহূর্তে আমি যেন পৃথিবীর সাথে নেই।
এই মুহূর্তে আমি যেন একেবারে
শেষ থেকে শেষে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি।
ক্রমেই নিজেকে ভুলে যাই।
ক্রমেই যেন কোন মাসিকের রক্তের ছোপ—
আমার দিকে? নাহ।
আমি কী ওই দিকে?
নাহ! কি রকম যেন লাগছে।
নিজেকে যেন পরপর করে দিচ্ছি।
কোথাও যেন একটা তো তুমি
মাইলস্টোন হয়ে আমাকে জীবনধারণ করাবে!
অন্তত জোনাকির আলোটুকু
টাঙিয়ে আমাকে দিশা দেবে।
কিংবা—কিংবা খোস করে বেঁচে থাকায়—
না। এটা তো হতে পারে না।
এখনও— এখনও গাছ, মাটি, বাতাস, নদী,
আমার ডাকনাম, আমার সাগরের সঙ্গম, আমার লাশ
পাচার হয়ে যাচ্ছে।
কেবল— কেবল— বাঁচা এবং না বাঁচার
সময় প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে।
চিনতে পারি না।
শুধু নিজের বদনামের সাথে কথা বলে যাই, ঘন্টা বাজাই, আজান শুনি
আবার গীর্জায় ঘুরি, ক্রমেই যীশু হই।
কিছুই মনে হয় না
শুধু নিজেকেই বলি, কুশের শব্দে বোবা হয়ে যাই।
রেহানা বীথি-এরএকটি কবিতা
নির্জনতার তরঙ্গ
সম্পর্ক মানেই পরস্পর। সম্পর্ক মানেই একা নয়, একাধিক। এই বোধ আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যায় জানো? ভাবনারও অধিক সেই যাওয়া। যেতে যেতে কখনও আমরা হারিয়ে ফেলি নিজেদের দৃষ্টিশক্তি, কখনও খুলে রাখি পাঁজরের হাড়। খুলতে খুলতে, হারাতে হারাতে নিঃস্ব হয়ে যাই। অথচ বুঝি না। বুঝি না, ঠিক কতটা নিঃস্ব হলাম!
এখানে এসে তুমি হয়তো একটি ছেদ টেনে দিতেই পারো। টেনে দিতে পারো অভেদ্য দেয়াল। কিন্তু তার আগেই তো নিঃস্ব হৃদয়ের হারিয়ে ফেলা দৃষ্টিশক্তি পৌঁছে গেছে অপার অলৌকিকতায়। ওই দৃষ্টির সামনে উন্মুক্ত সবই। দেহ, আত্মা, স্পর্শ, প্রেম— যা কিছু তুমি লুকাতে চেয়েছো, সমস্তই জলরঙে মূর্ত।
সম্পর্কও মূর্ত, একটি কিংবা একাধিক…
***
🍂ধারাবাহিক রহস্যউপন্যাস | পর্ব ২
সাহিত্যিক তাপস রায়। সাম্প্রতিককালের একজন বিশিষ্ট কথাশিল্পী ও কবি। লেখকের প্রকাশিত ভিন্নধর্মী পুস্তকগুলি পাঠকদের মনে জাগরণ তৈরি করে। রহস্য কাহিনিতে লেখক প্রাণের ছোঁয়া পান। তেমনি একটি রহস্য উপন্যাস সাশ্রয় নিউজ-এর রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর পাঠকদের জন্য।
কিষাণগঞ্জেরফেলুদা
তাপস রায়
[আগের পর্বের পরে ] এক লাফে প্রায় ছফুটের গাট্টা-গোট্টা চেহারার সুশান্ত-র ঘাড়ে উঠে এক খাবলা মাংস তুলে তবে ছেড়ে ছিল। ঘাড়ের পেছন দিকে বাটির মতো গর্ত নিয়ে সে যখন ইটভাঁটায় খুব গ্রীষ্মে যখন গেঞ্জি খুলে ঘুরে বেড়ায়, গঙ্গারামের মাস্তানির বেশ প্রচার হলেও ঐ রূপ দেখে কোনও মেয়ে সুশান্তকে বিয়ে করতে আর এগিয়ে আসে না। সুশান্ত ইট বানানো হাতে বাড়ি ফিরে রাতে রুটি বানাতে বসে গামছায় চোখ মুছতে মুছতে মাঝে মাঝেই ভাবে মালবাবুকে কায়দা মতো পেলে মাথায় থান ইট ছুঁড়ে মেরে ফেলবে।
হ্যাঁ, গঙ্গারাম একবার খাতকের বাড়ি গেলে খাতক সবটা না পারলেও যা আছে ঘরে তাই নিয়ে এসে মালবাবুর হাতে দিয়ে দেবে। ফেরাবে না। মানে মানে গঙ্গারামকে বিদেয় করাটা তাদের আশু কাজ হয়ে দাঁড়ায়। অন্য কিছুই দেখে না।
দুই.
খুব তাড়াতাড়ি গুরুকে নিয়ে ফিরতে হবে এখানে। বেলা এগারোটা বেজে গেছে। ছোটোবেলায় লম্বা লম্বা ভূগোল বইয়ের ভেতরে লুকিয়ে ডিটেক্টিভ স্বপনকুমারের বই পড়ে পড়ে বোঁদে হাফ গোয়েন্দা হয়ে গেছে। সে জানে অপরাধীকে পালানোর জন্য বেশি সময় দিতে নেই। বোঁদে মালবাবুর বউ চানুমতির কাছ থেকে গঙ্গারামের একটা ফোটো চেয়ে নিয়ে লজ্ঝরে ভারি রাজদূত বাইকের স্টান্ড তুলে মালবাবুর দিকে আশ্বাসের হাত দেখিয়ে বলল, “এই যাব আর আসব। ফেলুদাকে নিয়ে দুপুরে এখানেই পাত পাততে হবে। না হলে কেস হাতে নিয়ে তো আবার দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি গেলে সে দেরি-টেরি হয়ে অনেক কেলো হয়ে যাবে।”
দুপুরের খাওয়াটা কনফার্ম করে বোঁদে বাইকে গোটা দশেক কিক্ দিতে তবে সে মন্থরতা ত্যাগ করে গাত্রোত্থানে উদ্যত হল। বোঁদে জানে ফেলুদা রবিবারের সকালটা কাটায় মহানন্দার পাড়ে ধোপা-ধোপানীদের সঙ্গে। ইস্টার্ন রেলের বেডিং পরিস্কার করা, মানে চাদর তোয়ালে ধোয়া, ইস্ত্রি করার বরাত পেয়েছে। রবিবার সকালটা ওদের সাথে বিড়ি, চা খেয়ে কাটায় শুধু নয়, কাজেও নজর রাখে।
স্কুলে ঘাড়ধাক্কা খেয়ে লোকজনের সাথে মেশামিশি, মানুষের বিপদে দাঁড়ানো নেশা-পেশা করেছিল ফেলুদা। মর্গ থেকে মৃতদেহ বের করে আনার দায়িত্ব নেয়া, টেলিফোনের বিল, ইলেক্ট্রিক বিল জমা করে দেয়া, খেলতে গিয়ে পা ভাঙলে তাকে খাটিয়ায় চাপিয়ে হাসপাতালে নেয়া—- এসবে ফেলুদার জুড়ি ছিল না। উদ্দেশ্য একটা যে ছিল না তা মুখ বড় করে বলা যায় না। ছিল। স্কুলের হেডমাস্টার সারাজীবনের জন্য যে দুর্নাম এঁকে দিয়েছিলেন, তা থেকে মুক্তি। কিন্তু মুক্তি কোথায় পাবি!
কালে কালে ফেলুদা দেখেছেন নামটা কিছুতেই মুছে যাচ্ছে না। আরও বেশি করে ঘাড়ে চেপে বসেছে। হাটে মাঠে ঘাটে ফেলুদা বলতেই এক ডাকে চেনে কিশানগঞ্জের সব লোকজন। তবে অবশ্য এই লোকজনের উপকার করার কাজের ভেতর দিয়ে তার নিজের উপকারও সুড়সুড় করে যে হয় না, তা নয়। এবার কথা হয়েছে পঞ্চায়েতে ফেলুকে টিকিট দেবে উসমানি সাহেব। তিনি নিশ্চিত, ফেলু দাঁড়ালে ওর বিপরীতে যে-কোনও প্রার্থী নিজের ভোটের বাইরে দু’টি ভোট বানাতে পারবে না। আর সমস্যা সমাধানে ফেলুর যা হাত যশ, ফেলুকে পঞ্চায়েতের জমে থাকা সমস্যাগুলি দিলে নিশ্চিত সে হালকা করতে পারবে।
ফেলুদা-র বড় কাজ আরো আছে। গত বছরই টেলিফোনের কালো কুচকুচে টিডিএম অখিলেশ সাহেবের ততোধিক কুচকুচে মেয়ে পূর্নিমা দেবীর জন্য ধবধবে সাদা পাত্র ঘুঘুমারি থেকে খুঁজে এনে বিয়ে দিয়ে উপহার পেয়েছেন তিস্তা আর করলা নদীর বালির খাদান। একদম নিজের। টিডিএম সাহেবের আরো অনেক বেনামি ব্যবসা ছাড়তে হয়েছে। ভিজিল্যান্স লেগেছিল তার বিরুদ্ধে। নিজেকে বাঁচাতে ফেলুদাকে দিয়ে দিয়েছে যেমন বালির খাদান তেমনি আরো কাছের অনেকের মধ্যে বেটে দিয়েছেন কেবল সাপ্লায়ের কোম্পানি, সিম বেচার ফ্রাঞ্চাইজি— এইসব।
কাপড় সায়া কোমরে ভাঁজ করে তুলে দেয়ায় ধোবিনীর সাদা ধবধবে থাই জলের উপরে জেগে আছে। সে তখন সিমেন্টের পাটায় কাপড় আছড়াতে লেগেছে। বোঁদের চোখ সেদিক থেকে সরছেই না। বোঁদের মনে হল।
মালবাবু একটা তালপাতার পাখা দিয়ে মাছি তাড়াতে তাড়াতে করুণাঘন চোখ মেলে শুধিয়েই চলেছেন, “ও ফেলুদা ভাই, আমার গঙ্গারামকে ফিরে পাব তো?” হাত-মুখ ধুয়ে দাঁতে নিমের কাঠি দিয়ে ঠোকরাতে ঠোকরাতে ফেলুদা আশ্বস্ত করার মুদ্রা তুললেন হাতে। তারপর ঋণ দানের খাতাটাতা কী আছে, চাইলেন। মালবাবু দেবেন না দেবেন না করেও নিরুপায় ভঙ্গিতে দাঁত বের করা ভাঙা লাল-ইটের রেলের কোয়ার্টারের ভেতর ঢুকে যেতেই বোঁদে বলে বসল, “ গুরু, কুকুরটা কোনো মাদী কুকুরের সঙ্গে ভেগে যায়নি তো!” “বেড়ে বলেছিস তো! গঙ্গারাম তাহলে পুরুষ কুকুর। প্রশ্নটা করব করব করে করা হয়নি মালবাবুকে।
ধোবিনী তার প্রাণটাকে নিয়ে যেন আছারি-পিছাড়ি দিচ্ছে। ধোবিনীর বয়স বেশি নয়। তিরিশের কোঠায়। দুটো বাচ্চার মা হলে কি হবে শরীর একেবারে ঝাক্কাস। কিচ্ছুটি ঢিলে হয়নি।
মহানদীতে জল আর কোথায়! ফেলুদাই বুদ্ধিটা বাতলেছিলেন। ধোবিঘাটে জল বাড়ানোর জন্য কচুরিপানা-টানা দিয়ে একটা দিক প্রায় আটকে জলের চলে যাওয়ার ব্যাঘাত ঘটিয়ে, মানে জল খানিকটা ফাঁপিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে ধোবিনীরা বেজায় খুশি। ফেলুদা অবশ্য মদত নিয়েছিলেন উসমানি সাহেবের। বদলে গত ভোটে প্রায় বালতি করে ধোবিঘাটের ভোট উসমা্নি সাহেবের চৌবাচ্চায় গিয়ে পড়েছে। হেসেখেলে বিধান সভায় জয় তার। তারপর তো মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের শরীক হয়ে কিশানগঞ্জের নতুন ফ্লাইওভারের বরাত তুলেছেন উসমানি সাহেব। কনস্ট্রাকশন কোম্পানি তাঁর স্ত্রীর নামে গড়া। সাব কন্ট্রাক্ট দিয়ে কাজও তুলে দিয়েছেন সময়ের আগেই। । কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই কোটি টাকা ঘরে তোলা। সেখানেও ফেলুদাকে শুকনো রাখেননি উসমা্নি সাহেব। এই ব্রীজ বানাতে যত লেবার দরকার তা যোগান দেবার বরাত ছিল তার। এতে উসমানিরও লাভ। লোকাল লোকরা সব কাজ পেয়ে ফেলুর কেনা হয়ে থাকবে। ফেলুর লোক মানে উসমা্নি সাহেবের লোক। তার টার্গেট বিহার ছেড়ে দিল্লির দিকে পাড়ি দেয়া। বিধানসভার গুড় চাখা হয়ে গেছে, একটু দিল্লির লাড্ডু না খেলেই নয়। মানে ২০১৯-এর লোকসভায় দাঁড়ান।
উসমানি সাহেব শুধু নিজের অঞ্চলকেই খুশি রাখেন না, সিএম অফিসকেও তোয়াজ করে চলেন। তাঁর নীতি ভুঁড়ি আর মুড়ি ঠান্ডা রাখলে শরীর গড়্গড় করে চলবে। স্থানীয় মানুষদের মনের ভেতর ঢুকে থাকার জন্য কোনো জায়গা ছাড়েন না তিনি। গরিব , নিঃস্ব মানুষরা খুব অল্পে সন্তুষ্ট তিনি জানেন। আর কিছু না পেলে শুধু এমএলএ সাহেবের মুখের হাসিটুকু পেলেও তারা বর্তে যায়। ওদিকে সিএমও অফিসে নিত্য ভেট যায়। তেমন বড় বড় ফান্ড হয়ত দেন না, কিন্তু এই এক গাড়ি টাটকা পুকুরের মাছ। কি এই নলেন গুড়ের একটা ম্যাটাডর। কচি কাঁঠালের চার-পাঁচটা ঝুড়ি কখনও বা। বা আমের সময় মালদা আর ইসলাম পুরের বিখ্যাত আম— এইসব আর কি। উসমা্নি সাহেব খোঁজ রাখেন এই সবই চিফ মিনিস্টারের হেঁসেলে যায়। মিনিস্টারকে না জানিয়েই যায়। মিনিস্টার খাবার পর আরামের ঢেকুর তুলে যে এর উৎসের খোঁজ-খবর নেন না তা নয়।
উসমানি সাহেব মাঝে মধ্যে প্রমাদ গোনেন। ফেলুর যা জনসংযোগ তাতে কোনওদিন সে যদি উসমা্নিকে চ্যালেঞ্জ করে বসে! নিজের মনেই বলেন, না না তেমন হবে না। ফেলু খুব একটা ভেজাল ছেলে নয়। তবে ও যখন কাজ-কম্ম করে তখন নিশ্চই কোনও জিন, হুরির সাহায্য নেয়। না হলে একশ’ তে একশ’ হয় কী করে!
উসমানি সাহেব নানাভাবে পরীক্ষা যে করেননি তা নয়। একদম কট্টর লালুপন্থী, মানে আরজেডি নেতা, কয়লা আর কাঁচা লোহার কারবারে লালে লাল, নাথুরাম জয়সোয়াল অনেকদিন থেকেই তার মাথা ব্যাথার কারণ। তিনি কিছুতেই নাথুরামের হাতের তলায় থাকা ছয়-সাতটা গ্রাম পঞ্চায়েতকে কাবু করতে পারছিলেন না। আগের বিধান সভা নির্বাচনে নাথুরামের অঞ্চল তাকে মেরে কেটে দুশো-তিনশ’ ভোট দিয়েছিল। খুবই চিন্তায় রেখেছিল। কিন্তু রেল লাইনের পশ্চিম দিক তাঁকে ভরিয়ে দেয়। এই দিকটা মুসলিম অধ্যুসিত। উসমানি সাহেবের ঝুলি পূর্ণ হয়েছে এদিকেই।
সমস্যাটা মাথা থেকে নামানোর জন্য না যতটা ফেলুকে টেস্ট করতে চাওয়া তার ঢের বেশি। উসমা্নি সাহেব একদিন কথায় কথায় সমস্যাটা ফেললেন ফেলুর কাছে। ফেলু হ্যাঁ না কিছুই বলেনি। ঘাড়-গোঁজ করে শুনেছে। চায়ের ভাঁড়ে শেষ চুমুক দিয়ে তিন নং প্লাটফর্ম থেকে রাত নটার দার্জিলিং মেল চলে যেতে দিয়ে কুলি রামশরণের সঙ্গে হাঁটা লাগায় জাতীয় সড়কের দিকে। আর উসমানি সাহেবকে অবাক করে পরের রবিবারই নাথুরামকে নিয়ে চলে আসে তাঁর বৈঠকখানায়। নাথুরাম জানায় ছট পুজোর পরেই হাজার পঞ্চাশ অনুগামী নিয়ে তিনি উসমানি সাহেবের দলে যোগ দেবেন। দিয়েছিলেন ও। এরপর আর ফেলুর ক্যারিস্মায় উসমা্নি সাহেবের সন্দেহ থাকার কথা নয়।
তিন.
“তুই কাকে সন্দেহ করিস বোঁদে?”
বোঁদের বাইকের পেছনে বসে, প্রথম মুখ খুললেন ফেলুদা। বোঁদে পুলকিত। অবশ্য গুরু যে তাকে হেলাফেলা করে তা নয়। বোঁদে তার স্বপনকুমারের সব গল্প পড়ে ফেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। সে কিছুই বলে না। বদলে বাইকের গিয়ার চেঞ্জ করে গতি বাড়িয়ে দেয়। সময় নেয়। ভাবে চানুমতির হাতের রান্না চমৎকার। শুয়োরের মাংস দিয়ে দুপুর বেলায় এক থালা ভাত পেটে চালান করে দিয়ে তবেই সে মুখ খুলবে। এর মধ্যে অবশ্য বুদ্ধির গোড়ায় এক-দুই বার গুটখার নেশা লাগিয়ে নিতে হবে।
আবার হাউমাউ শব্দ স্রোত আছড়ে পড়ল মালবাবুর উঠোনে। এতক্ষণে রগড় দেখতে আসা সকালের পাবলিক সব ভেগে গেছে। সেই নিম গাছের ছায়ায় খাটিয়ার উপর দু’দিকে দুজন বোঁদে আর ফেলুদা বসে দুপুরের খাবার খেতে লেগেছে। মাথা ঝুঁকে আছে ভাতের থালার উপর। মালবাবু একটা তালপাতার পাখা দিয়ে মাছি তাড়াতে তাড়াতে করুণাঘন চোখ মেলে শুধিয়েই চলেছেন, “ও ফেলুদা ভাই, আমার গঙ্গারামকে ফিরে পাব তো?”
হাত-মুখ ধুয়ে দাঁতে নিমের কাঠি দিয়ে ঠোকরাতে ঠোকরাতে ফেলুদা আশ্বস্ত করার মুদ্রা তুললেন হাতে। তারপর ঋণ দানের খাতাটাতা কী আছে, চাইলেন। মালবাবু দেবেন না দেবেন না করেও নিরুপায় ভঙ্গিতে দাঁত বের করা ভাঙা লাল-ইটের রেলের কোয়ার্টারের ভেতর ঢুকে যেতেই বোঁদে বলে বসল, “গুরু, কুকুরটা কোনো মাদী কুকুরের সঙ্গে ভেগে যায়নি তো!”
“বেড়ে বলেছিস তো! গঙ্গারাম তাহলে পুরুষ কুকুর। প্রশ্নটা করব করব করে করা হয়নি মালবাবুকে। কবরখানার লাগোয়া একটা বড় বস্তি আছে। কাজের লোকজন সব ওখান থেকে আসে। শুনেছি ওখানে ঘরে ঘরে্নসব কুকুর পোষে।”
বোঁদে লাফ দেয় ইউরেকার ঢঙে। “হ্যাঁ গুরু,মালবাবুর গঙ্গারামের মতো কুকুর দেশি কেন এই তল্লাটে অমন বিদেশি কুকুরও নেই। ওরকম কুকুর পয়দা করাতে যদি কেউ মাদি কুকুর লেলিয়ে ধরে নিয়ে যায়!”
“হতে পারে। চ’ একবার ওই তল্লাটটা ঢুঁড়েই যাই। আর মনে আছে তো , ইসলামপুরের ইট ভাটার সেই লোকটা! যার কাঁধ থেকে গঙ্গারাম মাংস খুবলে নিয়েছিল, তাকেও একবার শুধোতে হবে। খাতা-ফাতা পরে নেয়া
যাবে।”
বাইকের পেছনের সিটে লাফ দিয়ে উঠে বসে মালবাবুর দেয়া বিড়ির লেজ দাঁতে চেপে অননুকরণীয় কায়দায় ফেলুদা লাল রঙের রেল কোয়ার্টারের বাইরে থেকে চেঁচায়, “মাল বাবু, আপনার হিসেবের খাতা দরকার হলে পরে বোঁদে এসে নিয়ে যাবে। মনে হচ্ছে তার আর দরকার পড়বে না। আপনার গঙ্গারাম এই সন্ধ্যেবেলার ভেতরেই আবার আপনাকে ভৌ বলবে।”
কিন্তু গঙ্গারামের মতো ভৌ কাকে দিয়ে বলাবে ফেলুদা! কবরখানার মাঠে গোল-পোস্টের তে-কাঠির ভেতর পরিস্কার জায়গাটায় পকেট থেকে সকালের পড়ে ফেলা উত্তরবঙ্গ সংবাদ বিছিয়ে ফেলুদা অর্ধশয়ান ভঙ্গি নিলেন। বোঁদে বিড়ি ধরিয়ে হাতে দিয়ে চলে গেছে বস্তির ভেতরটা ঢুঁড়ে আসবে। ওখানে গঙ্গারামের হাঁক-ডাক ভাসে কিনা ছান-বিন করতে চায়। আর ইসলামপুরের চায়না বাজার পাঁজিপাড়া থেকে কেনা সস্তার এন্ড্রয়েড ফোনও আছে বোঁদের পকেটে। কুকুরের ছবি তুলে নিয়ে আসবে। তারপর ফেলুদার সাথে বসে গঙ্গারামের ছবির সাথে মেলাবে। যে ছবিটা কাছাকাছি যায়, সেটাকেই ধরে নিয়ে গিয়ে মালবাবুকে সমর্পণ করবে। কিন্তু চিন্তা হল, সে কি মালবাবুকে দেখে ভৌ বলবে! 🍁(চলবে)
🍂গল্প
বদ্ধ পরিবেশ আর মুক্ত আকাশের মধ্যে সামান্য এক পার্থক্য আছে। ক্ষুধা নিবারণ যদি একমাত্র বাঁচার লক্ষ্য থাকে তাহলে কোনও মানুষ যে-কোনও পরিস্থিতিতেই বসবাস করতে পারে, কিন্তু পাখিটি জানে এই পার্থক্য হল স্বাধীন আর পরাধীনতার মধ্যে এক অলিখিত সীমারেখা।
খাঁচা
সুপ্রিয় চক্রবর্তী
খাঁচায় বন্দি এক পাখি, বাহির আকাশ তার কাছে এক অচেনা জগৎ। উড়তে চায় সে, ডাকে রোজ, চেয়ে থাকে বাইরে উড়তে থাকা পাখিগুলির দিকে, ভাবে মনে মনে সেও উড়বে একদিন। ডানা তারও আছে, উড়তে সেও সক্ষম, বাধা শুধু সাজানো কাঁটাতার। যা সে চাইলেও অতিক্রান্ত করতে অক্ষম। তার খিদে পায় না, তেষ্টা পায় না, ঘুম পায় না, কারণ সব আছে তার কাছে, তবুও কিছু নেই। মৃত্যু হবে এই চার দেওয়ালের মধ্যে, ভেবে হাসে, কারণ তাকে হাসতে বলেছে। আলো আসে, নিঃস্বাস নেয়, কিন্তু বাঁচতে চায় না সে। হাসতে চায় না সে। সে তো খেলনা নয়, প্রাণ আছে তার, ভুলে গেছে আজ। পিছনে তাকায় না সে, জানে কেউ নেই পিছনে তার। সে আছে একা এই খাঁচায়, মৃত্যুর অপেক্ষায়।
বৈশাখের ঝোড়ো হাওয়ায় গতকাল রাতে মালিক তার খাঁচা চাদরে মুড়ে রেখেছিল। সকালে উঠে বাড়ির সামনে পরে থাকে সাদা ফুলের আস্তরণ মন খুশি করে দেয়, মালিক ভাবে আজ সে ছুটি নেবেই।
বদ্ধ পরিবেশ আর মুক্ত আকাশের মধ্যে সামান্য এক পার্থক্য আছে। ক্ষুধা নিবারণ যদি একমাত্র বাঁচার লক্ষ্য থাকে তাহলে কোনও মানুষ যে-কোনও পরিস্থিতিতেই বসবাস করতে পারে, কিন্তু পাখিটি জানে এই পার্থক্য হল স্বাধীন আর পরাধীনতার মধ্যে এক অলিখিত সীমারেখা। ডানা থাকলেও সে আজ আর উড়তে পারবে না, তাকে মুক্ত করলেও পারবে না, কারণ সে আকাশের গতিপথ ভুলে গেছে। একসময় সেও উড়ত, অন্য,পাখিদের সাথে। কিন্তু আজ সে শুধু দেখে, দেখতে থাকে, ভাবে, ভাবতে থাকে। বারবার খাঁচার মধ্যে সে ছটফট করে, পাখনাগুলো মেলে ধরে, কিন্তু দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে পরে যায় সাজিয়ে রাখা খাওয়ার বাটির উপর। মালিক তার খুব ভালো, সেও মালিককে ভালবাসে। মালিকের সাথে কথা বলে, খেলা দেখায়, মাঝেমাঝে খুনশুটি করে। ছুটির দিনে সে আকাশ দেখতে পায়, মালিক তাকে নিয়ে যায় বারান্দায়, পাশে বসিয়ে তার ডাক শোনে। এক টুকরো আকাশ, মনে হয় সে হয়তো খাঁচা খুলে উড়ে যাবে। কিন্তু পারে না, সে জানে পারবেও না। মালিক রোজ তাকে রেখে কোথায় চলে যায় সকালে, সেও ডাকতে থাকে, কিন্তু সে কোনোদিন কাঁদে না, কারণ সে জানে তার কান্নার কোনও গুরুত্ব নেই এই পৃথিবীতে।
বৈশাখের ঝোড়ো হাওয়ায় গতকাল রাতে মালিক তার খাঁচা চাদরে মুড়ে রেখেছিল। সকালে উঠে বাড়ির সামনে পরে থাকে সাদা ফুলের আস্তরণ মন খুশি করে দেয়, মালিক ভাবে আজ সে ছুটি নেবেই। খাঁচার চাদর সরতেই দেখা যায় পরে আছে পাখিটি খাঁচার এক কোনে, তার দু-চোখ খোলা, কারণ সে বৃষ্টি দেখতে চেয়েছিলো শেষবারের মতো। মালিক তাকে শুয়ে রাখে বাইরে ফুলের চাদরের উপর। সে আজ মুক্ত, কিন্তু আজও সে উড়তে পারবে না।🍁
সম্পাদক : দেবব্রত সরকার | কার্যনির্বাহী সম্পাদক : সানি সরকার | অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র:সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
সম্পাদকীয় ঋণ :ফিরে পড়া : কবিতা, বিশেষ গদ্য, এনং মহামিলনের কথা বিভাগের লেখা আন্তর্জাল থেকে সংকলিত।