Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Sasraya News Sunday Special, March 2024 : সাশ্রয় নিউজ সানডে স্পেশাল, মার্চ ২০২৪

Listen

সম্পাদকীয়…

জীবন একমুখী। ভিন্ন রূপভেদ। সময়ের পথ ধরে হাঁটে। সবটাই নিয়মের মধ্যে পড়ে। জীবন সুখ চায়। মানবজীবন রিপুর মায়ায় পড়ে ছয়লাপ হয়ে যায়। সংযম করাই একটি পথ শুধুমাত্র একটি বিশেষ লিঙ্গ ভেদে রয়েছে। জীবনের একটি রূপ মাতৃত্ব। যাঁর তাপে বিশ্ব-জগৎ করুণাময়। আমরা প্রত্যেকেই সুখ-ভোগের জন্য শৈশব থেকে মৃত্যুদিন পর্যন্ত প্রয়াস চালিয়ে যাই। কিন্তু, প্রকৃত সুখের সন্ধান মেলে কই! আসলে প্রকৃত সুখ মোহ থেকে বেরিয়ে এসে চৈতন্যে মিশ্রিত হয়। সেই সুখের সন্ধানে বর্তমান যুগের মানুষ আমরা কামাশ্রিত হয়ে ভুল দিগন্তে বিচ্ছুরিত হচ্ছি।  বিজ্ঞান উন্নত হলেও মানব-সমাজ ক্রমশঃ ধ্বংসের পথে আরও প্রভাবিত হচ্ছি। ফলে দিব্যশক্তির ক্ষয় ঘটিয়ে নিজেদের টেনে নরকের লোভে আক্রান্ত হচ্ছি। আসল পথের সন্ধান আসলেই আমরা নিজেরাই নিজেদের রোধ করছি। জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে গেলে দিব্যদর্শনের প্রয়োজন। নিজেকে নিজেই জানার প্রয়োজন। এ ব্যতীত জ্যোতি লাভ সম্ভব নয়। অনেকেই সময়ের অভাব দেখিয়ে অজ্ঞান হয়ে থাকে। আসলেই শিক্ষকের শিক্ষায় এই সময়ই কর্মব্যস্ততার ফলস্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, নব্যপ্রজন্মের কাছে নিজেদের প্রকাশ ভিন্নমুখী হয়। তাহলে বোঝা যায়, জীবনের শুরু যদি সুর্যোদয় হয় তাহলেই জীবন মনোময় হয়ে ওঠে। যে কর্ম নিয়মের মধ্যে পড়ে। তাকে রূপায়ণ করা সেই কর্মের কর্তার দায়িত্ব। শরীরের আগুনকে দাউদাউ যখন-তখন জ্বলতে দিলে হবে না। এই জ্বলার প্রকাশ ঘটলে রিপুগুলি জ্বালাতন উপভোগ করে। মানবমন টেরও পায় না। টের পেতে গেলে শরীরের আগুনকে শীতল আগুনে রূপান্তর করতে হবে। তখনি দিকের দর্শন পান করবে জ্বলন্ত মন। এতে অবাকের কিছুই নেই। 🍁

 


 

 

🍁নিবিড় পাঠ

 

বিকাশ সরকার-এর উপন্যাস লেন্দু রায়ের জিজীবিষা

 

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বলিষ্ঠ ঔপন্যাসিক বিকাশ সরকার। তাঁর লেখার নিজস্ব ভাঁজ ও স্বকীয়তা প্রকৃত অর্থের পাঠকদের মনে আলোড়ন তৈরি করে। লেখক তাঁর লেখার প্রতিটি ছত্রেই নিবেদিত। কথাসাহিত্যকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে ওঁর আত্ম-খোদিত মনন। একজন লেখকের কাছে নিজেকেই প্রতিনিয়ত উতরে যাওয়া সবসময় খুব যে সম্ভব হয়, তা কিন্ত না। তবে বিকাশ সরকার ওঁর প্রতিটি বইয়ের ভেতরই নতুন নতুনভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। এবং তা অঘোষিতভাবেই। লেখকের ‘লেন্দু রায়ের জিজীবিষা’ একটি ভিন্ন আঙ্গীকে লেখা উপন্যাস। বইটি নিয়ে লিখলেন : সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায় 

 

 

‘..শুধু স্রোতে ভাসা..’

বেশিরকমের বহু-অর্থবোধক বাক্যাংশ। ‘লেন্দু রায়ের জিজীবিষা’ পড়তে পড়তে, বা বলা ভালো বারংবার পড়তে পড়তে, এই অর্থ যে কত রকমের বোধে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তা গুনে শেষ করা যায় না। দৃশ্যমান স্রোত তো বয়েইছে, বয়েছে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চোরাস্রোতও। এই পরেরটি, উপন্যাসের একাধিক জীবনকে ঠেলে দিয়েছে বিপন্ন হাহাকারে। কেউ বুঝে, কেউ বা কিছুই না বুঝে শামিল হয়েছে সেই মারক টানে।

আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাস আবর্তিত হয় একটি হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নিহত, বিশেষত সে যদি মহৎপ্রাণ ব্যক্তি হয় তবে পাঠকের সমস্ত সহানুভূতি ধাবিত হয় তারই দিকে, তার ভরাভর্তি সংসারটির দিকে। আর ঘাতক পায় অবিমিশ্র ঘৃণা। এই ঘৃণা আরও বাড়ে তখন, যখন হত্যার নিমিত্ত হয় কোনও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নয়। কেবলমাত্র সামান্য (?) স্বার্থসাধন। কিন্তু এই উপন্যাস পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেয় ঘাতকেরই পাশে। এমনকি ঘাতক একটা সময়ে নিজে-নিজেকে ঘৃণা করতে থাকে, বিপরীতে পাঠক তাকে ভালোবাসায় বুকে জড়িয়ে ধরে। এমনই এক অসম্ভব জাদু সৃষ্টি করেছেন লেখক– ওই দৃশ্যমান ও চোরা স্রোতের গতায়তে।

____________________________________________

এখানে গোখরো সাপের প্রায় উদ্যত ফনার নিচে ঘুমিয়ে পড়ে লেন্দু-আশমা। হয়তো তা নিশ্চিন্তির ঘুম নয়। প্রকৃতির রুদ্ররোষ যখন তাদের বাধ্য করে খোলা স্টেশনের লোকের ভিড়ের মাঝে চাদর-শাড়ির আড়াল টেনে বাসর সাজাতে তখনও তাই লেন্দু শুনতে পায় অপ্রাকৃত মৃত্যুর ডাক,তার চেতন অবচেতনে।

____________________________________________

 

উপন্যাসে সমাজসচেতনতা, রাজনীতি, লোভ, হিংসা, হঠকারিতা, পরোপকার, অবিমিশ্রকারিতা.. সমস্ত কিছু এগিয়েছে হাত ধরাধরি করে। কিন্তু এসবের হাত ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে ভালবাসা। নরনারীর মধ্যেকার ভালবাসা, যাদের সম্পর্ক এক চরম সংকট মুহূর্তে এসে বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর রূপ পায়, তাকে প্রেম বলাই সঙ্গত। কিন্তু লেন্দুর সন্তানকে ইতিমধ্যেই গর্ভে ধারণকারিণী আশমার সিঁথি যেদিন রাঙিয়ে দেয় লেন্দু, যেদিন আশমা থেকে ঐ নারী আশা হয়ে ওঠে–সেদিন ,এই মানবমানবীর জন্য প্রেম শব্দটা যেন বড় সংক্ষিপ্ত তথা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। আশমা জ্বলে ওঠে আশার প্রদীপ হয়ে, প্রেমিকা স্ত্রী এমনকি জন্মদাত্রী-সব একাকারে মিশে যায় ওই একটিই মাত্র শব্দে। তা হল ভালবাসা।

আশমার

“ ঘুমের বড়ির মত নাভি, তার চারিদিকে চক্রবৎ
আদিমসাঁতার”.. তাই লেন্দুর জীবনকে আবর্তিত করতেই থাকে। লেন্দুর অবচেতন জানে.. ‘ঝাউকাঠ দিয়ে যে ভেলা সে বানিয়েছে– তা হয়তো খুনদরিয়ায় ভাসবে’ – তবু ভেলা বানানোর চেষ্টাটা তার অন্তরের অন্তস্থল থেকেই উৎসারিত।

এই উপন্যাসে ব্যবহৃত ভাষার অধিকাংশকে যদি খাপছাড়া ভাবে তুলে আনা হয় তবে তা অশ্লীল মনে হতে পারে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে, পাঠ যত এগোয় ততই মনে হয় এই ভাষার পরিবর্তে যদি তথাকথিত শ্রাব্য কিছু শব্দের দ্বারা এগুলিকে replace করা হয় তাহলে তা হবে ততোধিক অশ্লীল, বেমানান এক কুৎসিত। একই অনুষঙ্গে উঠে আসে শরীরী মিলনের দৃশ্যাবলী। তারা এত বেশি বাস্তব, এতটাই বেশি তাদের অভিঘাত-যে সেগুলি এড়িয়ে চলতে চাইলে বোধহয় আরও একটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হত। নিহত হত উপন্যাসটি স্বয়ং। সেই বিষম পরিণামে ঠেলে না দেবার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই লেখককে।

এখানে গোখরো সাপের প্রায় উদ্যত ফনার নিচে ঘুমিয়ে পড়ে লেন্দু-আশমা। হয়তো তা নিশ্চিন্তির ঘুম নয়। প্রকৃতির রুদ্ররোষ যখন তাদের বাধ্য করে খোলা স্টেশনের লোকের ভিড়ের মাঝে চাদর-শাড়ির আড়াল টেনে বাসর সাজাতে তখনও তাই লেন্দু শুনতে পায় অপ্রাকৃত মৃত্যুর ডাক, তার চেতন অবচেতনে। উপন্যাসে ফিরে ফিরে আসে সেই নিশির ডাক, লেন্দুর অজাত সন্তানের আহত ও মৃত মুখ, নির্বংশ হবার অভিশাপ ধ্বনি। এখানে লেখককবি সৃষ্টি করেন তাঁর একান্ত নিজস্ব ভঙ্গির অনন্য magic realism.

তবুও লেন্দু ধরে রাখতে চায় বেঁচে থাকার স্বপ্নকে দুহাতের ঘেরে, ‘আশা’ র প্রদীপটিকে নিরন্তর জ্বালিয়ে রেখে। কিন্তু..

“বিবাহ শেষ হলে
কোদাল-বেলচা হাতে কবরখানায় পৌঁছে যাবে
বিতর্ক ও ডোম’’

এ এক নির্মম সত্য!

লেন্দু-আশমা ছাড়াও এই উপন্যাসে আছে আরও অজস্র চরিত্র। যেমন হারাধন, রঘুদা,রমলাপ্রসাদ,
হরকান্ত,গৌর, যাদব, রত্না… এবং, অবশ্যই হারীন্দ্রনাথ বসু তথা হারুদা। প্রত্যেকেই জীবন্ত হয়ে উঠেছে/উঠেছেন লেখকের কলমের টানে। 🦋

[লেখায় ব্যবহৃত কবিতার অংশগুলি লেখকের নিজরচিত পৃথক কবিতার বই থেকে নেওয়া।]

🦋লেন্দু রায়ের জিজীবিষা :: বিকাশ সরকার :: স্রোত প্রকাশন। আগরতলা 

 

 

 


🍁কবিতা


 

 

 

অরুণ কুমার চক্রবর্তী

অন্ধলিপি

 

বন্ধু, তুমি কি মৃত্যুভয়ে জারিত কবি,
কতো সহজেই পৌঁছে যাও
ব্ল্যাকহোল ঘন অন্ধকারে,
তুমি কি জানো না তোমার ডান হাতের মুঠোয় আনন্দ আর বাম মুঠোয় ছিল মৃত্যুর দিনখন লেখা, নির্মম চিঠি, যেমন সবার থাকে,
সেই অন্ধলিপি পড়তে পারে না কেউ, অনেক মেধা, অতিমেধা, এতো ডি, এস, ডি, লিট, নোবেলের স্তুপ, থই থই অহংকারের ঢেউ, কেউই তো পারলো না ছিঁড়তে এই অমোঘ ঘনঘোরা রহস্যের তীব্র জটাজাল!!!
কে হে তুমি ভীত আনজন, সবাই কে কি হারাবে সব জেনে বসে আছো?
এ বড়ো কঠিন ঠাঁই
গুরু শিষ্যএ দেখা নাই
এ বাগানে খেলতে এসেছো, দুই হাতে দুই মুঠি সার, একে একে পেয়ে যাবে সব
একে একে কেড়ে নেবে সব
পরনের লেংটিটুকুও থাকবে না, বাড়ি পাল্টাতে হবে, হবেই,
ওঁ ফট
বাঁ হাতের অন্ধলিপি অন্ধ থেকে যাবে…

 

 

তৈমুর খান

আমাদের সংসার

 

বউ আছে, সন্তান আছে, ইটের গাঁথুনি দেওয়া ঘর
উঠোনে পাখি নামে রোজ, পাখিরা সব বৈরাগ্য খেচর
নিরিবিলি ভিক্ষা চাইতে আসে
আমি তাকে ব্যাকরণ পড়াই
মূর্খ রাত, মূর্খ দিন কিছুই বোঝে না
দুঃখ এসে সংসার চালায়।

ঈশ্বরের দোকান থেকে নুন কিনে আনি
আমাদের আলস্য ভেজাভাত
আমরা সবাই অবতার,অমৃতের স্বাদ পাই
দুঃখ এসে হাসে, ওরাও তো মনখারাপের ভাই!

চারিদিকে কাঁথা বুনছে মা
অনেক শীতে আমাদের কাঁপন থামাবে
স্বপ্নে দুলবে সব ইচ্ছার পোষা ময়ূরেরা
বাতাবি লেবুর গাছে রোদ পড়বে
অলৌকিক বিশ্বাসের সোনালি রোদ্দুরেরা…

 

 

শুভাশিস সরকার

ভালোবাসা পথ খুঁজে নেবে

 

প্রেমিক পাখির সেই ঠোঁট থেকে খসে পড়া
জীবন্ত বীজ ভাসে হাওয়ায় হাওয়ায়
অনির্দিষ্ট পথে, ভেসে চলে আনমনে,
জানে না কোথায় যাবে!কোন ঠিকানায়!

শুধু জানে তার অপেক্ষা করে আছে
অট্টালিকাই, তার প্রাচীর ফাটলে,
সে ঠিক পৌঁছে যাবে নিয়তির আহ্বানে
দুজনে পড়বে বাঁধা প্রেমের আগলে।

বীজ আর ফাটলের জীবন উপন্যাসে
লেখা হলো রূপকথা, শুধু ভালোবেসে —
সালোকসংশ্লেষের প্রেমের ওই উত্তাপে
মহীরুহ হবে বীজও, আয়েশে আবেশে।

 

 


🍁গল্প 


 

 

কালো দাগ

মমতা রায় চৌধুরী

 

 

’য়েকদিনের হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা, মনে হচ্ছিল দার্জিলিংয়ে আছি। সেই রেশটা এখন কাটতে বসেছে। ক’দিন নিম্নচাপের দরুন ঠাণ্ডাটা যেন মনে হচ্ছিল আরও জাঁকিয়ে বসেছে। হঠাৎ করে এই নিম্নচাপ কেটে যাবার পর ঝা চকচকে রৌদ্র। এই রোদের তেজটা যেন হঠাৎ করে গায়ে লাগল। সাধারণত শীতের দুপুরে রোদে পিঠ রেখে আরাম যেখানে ঝিমুনি আসে আজ তার ব্যতিক্রম। শীত মনে হচ্ছে বিদায় নিচ্ছে। আর ক’দিন পরেই শ্রী পঞ্চমী বসন্ত তো দোর গোড়ায় কড়া নাড়ছে। দুপুরবেলা এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে
অনুরণনের মনটা চলে যায় পাশের বাড়ি সুরঞ্জনা বৌদির দিকে। এক পিঠ খোলা চুল ছাদে পায়চারি করছেন। মনে মনে ভাবছিলাম আর কিছুক্ষণ ছাদে থাকলে ভালই হতো। তারপরে মনে মনে ভাবলাম, ছিঃ! এসব মনে জায়গা দেওয়াও পাপ। আসলে সুরঞ্জনা বৌদি তাদের এলাকায় ডাকসাইটে দুর্দান্ত অপরূপা, সুদর্শণা, মনমোহিনী তার জন্য বিবাহিত, অবিবাহিত সকলের মনের ক্রাশ। তার জন্য প্রতি পুরুষের মনেই সবসময় যেন চির বসন্ত বিরাজ করে। অনুরণনের আজকাল যেন কেমন হয়েছে কলেজে কত মেয়ে ওর ক্রাশ ছিল! নীলিমা তো ওকে ভালবাসে। আজ এক বছর হল নীলিমার সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু আজ কেন ওর এই ভাবান্তর। তার হৃদয় তোলপাড় হচ্ছে। একটা অদৃশ্য অস্থিরতা তার মনের ভেতরে কাজ করছে। এই তো সেদিন কলেজ থেকে ফিরছে সঙ্গে তার দুই বন্ধুও ছিল। সেদিন বেশ মেজাজটা ফুরফুরেই ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই সুরঞ্জনা বৌদিকে রিক্সা থেকে নামতে দেখেই চোখ আটকে গেল। বন্ধুদের সঙ্গে কি কথা বলছিল সেটা বেমালুম ভুলেই গেল। একটা স্নিগ্ধ সুন্দর গন্ধ পাগল করে দিল অনুরণনকে। সুরঞ্জনা বৌদির রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া মেটাতে গিয়ে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।

 

____________________________________________

সুরঞ্জনার বুক মুখ, গাল যেন আরও কাছে… আরও কাছে… হঠাৎ করে কি যেন হয়ে গেল! সুরঞ্জনার ঠোঁট দু’টো কিছু একটা চাইছে। অনুরণনের বাঁধভাঙ্গা উষ্ণতার কাছে সুরঞ্জনা হারিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে গেল।

____________________________________________

 

এদিক-ওদিক তাকাতেই হঠাৎ অনুরণনকে দেখতে পেয়ে সুরঞ্জনা বৌদি একগাল হেসে এগিয়ে আসলো। বলল, “এই অনুরণন আমাকে একটু হেল্প করবে?”
অনুরণন একটা ছুঁতোতে কাছে আসতে চাইছিল।
এ-যে মেঘ না চাইতে জল!
“হ্যাঁ, বলুন না বৌদি?”
“বলছি তোমার কাছে ১০০ টাকা খুচরো হবে?”
“কেন বলুন তো?”
“আরে ৩০ টাকা ভাড়া চাইছে আমার কাছে তো খুচরো নেই”।
“ঠিক আছে। ১০০ টাকা ভাঙানো হবে না তবে ত্রিশটা টাকা আমি দিতে পারব।”
“তাহলে তাই দাও আমি তোমাকে পরে দিয়ে দেব ।”
“সে ঠিক আছে, তা হবেখন।”
রিক্সাওয়ালাকে ভাড়াটা মিটিয়ে দিল ও। তারপর বলল,
“বৌদি কোথাও গিয়েছিলেন?”
“আর বোলো না আমার দিদির মেয়েটা এসেছে কিছু মার্কেটিং করবে বলে তাই আমাকে ডেকেছিল সেখানেই গেছিলাম।”
একটু এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল অনুরণন,
“না, না, না ও-এখানে আসেনি। মার্কেটিং করেই ও-বেরিয়ে গেল। আসলে ও-এসেছে ক’য়েক মাস হল, আবার ফিরতে হবে ওর কাজের জায়গায়।”
“ও আচ্ছা।
“বৌদির বাবার বাড়ি কোথায়?”
“ এই তো কল্যাণীতে।”
“তা বেশ তুমি কলেজ থেকে ফিরছিলে?”
“হ্যাঁ, এবার কোন ইয়ার হল?
“এবার ফাইনাল ইয়ার দিলাম।”
“বেশ বেশ কি নিয়ে পড়ছো?”
“ইকোনমিক্স অনার্স।”
“আচ্ছা।”
“বৌদি ব্যাগটা আমার হাতে দিন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
“না না ঠিক আছে, তুমি কলেজ থেকে টায়ার্ড হয়ে ফিরেছ তোমার মা অনেক চিন্তা করবে।”
ওদিকে বন্ধুরা বলল, “ঠিক আছে রে তাহলে আমরা আসছি। বাই…”
“ওকে।”
তারপর ও-বৌদিকে বলল,
“না না না কি চিন্তা করবে, দিন না। একরকম জোর করেই হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে অনুরণন এগোতে লাগল। সুরঞ্জনা একগাল হেসে অনুরণনের পেছনে পেছন ছুটল।
“এই দাঁড়াও গেটটা আমি খুলি। বাপ রে কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে দেখো।
“হ্যাঁ হঠাৎ করে ওয়েদারটা এমন হয়ে গেল।
বৃষ্টি হবে নাকি? হালকা হাওয়াও দিচ্ছে।”
“হ্যাঁ নিম্নচাপ তো আগামী দিন থেকে হওয়ার কথা! আজ থেকে ই শুরু হয়ে গেল।”
অনুরণন ভাবল বৃষ্টি হলে কিছুটা সময় এখানে কাটানো যাবে। সুরঞ্জনা খুব তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসলো, “তুমি এসো আমি গিয়ে লাইটগুলো জ্বালি। আজকে বোধহয় পোটলি আসেনি কাজে।
ওর এই দোষ জানো তো? আমি যদি কোথাও বেরোই ও-ভাবে বৌদি ফিরবে দেরি করে, কাজে না আসলেও চলবে।”
“কাজের লোকের তো এই অবস্থা বৌদি কি আর করবেন।”
“আর ওরাও সেটা জানে ওদের ছাড়া চলবে না এই ভাবেই চালাতে হচ্ছে। দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও ওয়েট করো। এই দেখো কারেন্ট চলে গেল। একটু ওয়েট করো। ইনভার্টারের সুইচটা মারি।”
হঠাৎ করে আসতে গিয়েই অনুরণনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল।
“ সরি গো! কি যে হয় না চলতে গিয়ে!”
সত্যি বৌদির গায়ের থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ পেল। একটা টাটকা বাতাস যেন ও নিতে পারল মনে হচ্ছিল দূষিত পরিবেশে থেকে থেকে যেন হাঁপিয়ে উঠছিল। একটা ভালো লাগার বিষয়, একটু স্বস্তি যেন পেল। ক্লান্তি যেন নিমিষে উধাও।
সুরঞ্জনা বৌদি লাইটগুলো জ্বেলে দিল।
“এই তুমি একটু বসো। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই। তুমি কফি খাবে? টিফিনটা করব তারপরে কিন্তু যাবে বাড়িতে। ওয়েট করবে।”
অনুরণন মনে মনে ভাবছিল, এ কথাটা না বললে হোত। এমনিতেই যেতে ইচ্ছে করছে না। বৌদির দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না এই বয়সেও এত সুন্দর। কলেজে তো ও নীলিমার প্রেমে পড়েছিল কিন্তু নীলিমাকে তো কখনও এত সুন্দর করে দেখেনি। জানে, এটা ঠিক নয় বিবাহিতা নারীর প্রতি মুগ্ধ হওয়াটা ঠিক কথা নয়। কিন্তু কি করবে অনুরণনের যে এটাই হয়েছে আজকাল।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরোনোর পর একটা হাউসকোট গায়ে বুলিয়েছে নীল রঙের তারপরে চলে গেল বৌদি তাড়াতাড়ি কিচেনে। সেখান থেকে কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো বৌদি।
“এবার কফি খাও আমার বাড়িতে এসেছো। এই দেখো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। দাঁড়াও একটু পাপড় ভেজে নিয়ে আসি।”
বাব্বা বৌদি কি চটপটে চটজলদি বনিয়ে
ফেললো।
“খাও কেমন হয়েছে কফিটা?”
“তুমি খাবে না?”
“এই সময় কফি না খেলে ভালো লাগে না জানো তো? কফি খেয়ে যেন ফ্রেশ হয়ে যাই। তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন গো…” হাত বাড়িয়ে কফিটা ওর কাছে দিল। দু’জনার হাতে স্পর্শ হলো।
“কি অসম্ভব অনুভূতি উফ! নীলিমাকে তো এত কাছে থেকে দেখেছে তবু কেন এরকম অনুভূতি হয়নি! ওকি পাগল হয়ে যাচ্ছে, বুঝতে পারছে না। ডাকসাইটে সুন্দরী এই বৌদির প্রতি হৃদয় রাঙ্গা অ্যাপার্টমেন্টের আশেপাশের সকলেরই একটা আলাদা তোলপাড় শুরু হয় পুরুষ হৃদয়ে আজকে আরও বেশি করে হচ্ছে অনুরণনের।
না না না বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। কি হয়ে যায় কে জানে! অঘটন ঘটতে তো বেশি সময় লাগে না! বার কত ঠাকুর দেবতাকে স্মরণ করে নিল “হে ঠাকুর আমাকে উদ্ধার করে দাও আমি কেমন হয়ে যাচ্ছি। নীলিমা যদি কোনও কারণে বুঝতে পারে তাহলে আমাদের এতদিনের সম্পর্কটাই থাকবে না ছিঃ ছিঃ ছিঃ! উনি কি ভাবছেন এসব নিয়ে! বৌদির মনে তো কোনও পাপ নেই। আমারই বা এরকম কেন হচ্ছে হঠাৎ যেন ঘেমে উঠছে…! বৌদি বলল
“কী হয়েছে? তোমার প্রেসার বেড়েছে? তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে? একটা কেমন যেন অস্থির চিত্ত!” বৌদি এসে অনুরণনের কপালে হাত রাখল কিছু বোঝার আগেই বৌদির দুটো হাত চেপে ধরে রইল পাগলের মত হ্যাঁ বৌদি শরীরটা কেমন যেন করছে তুমি কি একটু শোবে চল আমার সাথে এসো।
বৌদি পাশের বেডরুমে নিয়ে গেল ওকে শুইয়ে দিল।
তারপর বৌদি বলল, “আমি একটু ডাক্তারকে কল করব আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।”
না না বৌদি আমি ঠিক হয়ে যাব একটু শুলেই আমি ঠিক হয়ে যাব। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বৌদি হাত দুটো চেপে বলল, “তোমার বাড়িতে একটা খবর দি।
না না না মা চিন্তা করবে।”
“ঠিক আছে তাই হোক বাপরে বৃষ্টিটা জোরালো হল জানালাগুলো দিয়ে দিই।” এ যেন চলে যাবার আগে বসন্ত দোর গোড়ায় আসতেই বর্ষা এসে কাঠফাটা গ্রীষ্মের দুপুরের প্রাণ মনকে যেন ভিজিয়ে দিয়ে গেল।
বৌদি অনুরণনের আরও কাছে বসে ওর মাথা টিপে দিতে লাগল। হঠাৎ করেই বৌদির হাতের ছোঁয়া আর গায়ের গন্ধ অনুরণনকে পাগল করে দিল।
সুরঞ্জনারও মনে হল কেমন একটা অনুভূতি এই অনুভূতি তো অমরের কাছ থেকে কখনও আসেনি। এই মাঝ বয়সে এসে হঠাৎ করে হাতছানি দিল ওর কি লাজ লজ্জা সবই বিসর্জন দেবে আজ বুঝতে পারছে না ওদিকে অনুরণন দুই হাত ধরে চেপে আছে আরও কাছে নিতে চাইছে সুরঞ্জনাকে বুকের কাছে। সুরঞ্জনার বুক মুখ, গাল যেন আরও কাছে… আরও কাছে… হঠাৎ করে কি যেন হয়ে গেল! সুরঞ্জনার ঠোঁট দু’টো কিছু একটা চাইছে। অনুরণনের বাঁধভাঙ্গা উষ্ণতার কাছে সুরঞ্জনা হারিয়ে যাচ্ছে। কেমন যেন সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে গেল। একটা দমকা হাওয়া…! এরকম অবস্থা প্রায় মিনিট দশের পর তারা নিজের জায়গায় ফিরল একটা ফোনের আওয়াজে।
রিং হয়ে যাচ্ছে, “এই মেঘলা দিনে এক্লা ঘরে থাকে না মন …।”
“ছাড়ো ফোন বাজছে।”
সুরঞ্জনা এক দৃষ্টিতে অনুরণন-এর দিকে তাকিয়ে।
অনুরণন তখনও হাত দু’টো ধরে।
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে সুরঞ্জনা টেবিল থেকে ফোনটা তুলে বলল, “হ্যালো।”
“মাম মাম তুমি আমাকে নিতে এসো।”
“হ্যাঁ বাবা। কেন তোমার দীপন কাকু যাননি আনতে?”
না। দীপন কাকু ফোন করেছিল কাকুর ভীষণ জ্বর আসতে পারবে না।”
“ওকে তুমি একটু ওয়েট কর কেমন?”
“তোমার কিছু হয়েছে মাম মাম?”
“কই না তো ঠিক আছে রাখো।”
সুরঞ্জনা বৌদি ওর মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলল “একটি কথাও নয় এটা হবার ছিল না। এটা ঠিক হল না।”
“আমি কিন্তু বৌদি বরাবর তোমাকে ভালোই বাসতাম।”
সুরঞ্জনা বলল, “তুমি এক্ষুনি বাড়ি চলে যাও।”
সুরঞ্জনা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে রেডি হতে গেল।
“আমি কিন্তু আমার ভালোবাসা থেকেই…।”
“আর কোনও কথা আমি শুনতে চাই না
দরজাটা বন্ধ করে যেও। একটা কালো স্মৃতি আমার জীবনে বয়ে বেড়াবো। ছি :ছি :ছি: আর কোনওদিন আমার সম্মুখে আসবে না। সজোরে বাথরুমের দরজাটা লাগালো সুরঞ্জনা।  🦋অঙ্কন : প্রীতি দেব 

 

 

 

 


🍁কবিতাগুচ্ছ  


 

 

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

ঋ-কার উচ্চারণ  

 

খড়পোড়া ছাইয়ের উপর ছায়া পড়তেই কপাটহীন দরজায় দখিনা বাতাস হু হু করে ওঠে, কালসিটে ভারাক্রান্ত শরীরে অব্যয় পদগুলি ঋ-কার উচ্চারণ করতে পারে না আর, ডাহুক পাখির ডাকে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ক্ষয়জাত বিকেলের শিরা উপশিরা, আলপথ পেরিয়ে যায় চিবুকে লেগে থাকা ধানগন্ধ
শেষ হয়ে যাচ্ছে সময় – অথচ আমার কোন হাল খাতা নেই। গাছ থেকে ঝরে পড়ছে বাঁধনহীন ভোকাট্টা কয়েকটা পাতা  – তারপর আমার শরীরের সব মৃত্যু খুলে নাও – হাইড্রোজেন মেঘে সাঁতরাতে সাঁতরাতে শূন্যতা প্রকাশিত হোক প্রতিটি খেয়াঘাটে

ঝাপসা একক

 

আকন্দ ঝোপের পাশে মিতাক্ষর হয়ে উঠেছে ধূসর নারীটি, বাতাসে প্রসারিত ক্লান্তি ছিল কি তার উপহার?
আমি দ্রুতি বাড়িয়েছি মাধুরি ও বেদনায়
ঝোপ জংলার ভেতর থেকে ঝিঁঝিঁ গন্ধের আত্মগোপনে বাড়তে থাকে প্রাহরিক প্যাপিরাস,
যেতে যেতে যদি পাই ঝুরো মাটির প্রোটিন, নিষাদ দৃষ্টিতে প্রান্তপুকুরের জলাদেশে ডাহুকের বিন্দু বিন্দু নিঃসঙ্গ–
নিটোল শ্যামদীর্ঘ তরঙ্গটি এস্রাজের সুরে স্থির
এ আখ্যান পর্বের সঙ্গে আমি এক ঝাপসা একক পার হয়ে যাই সাইকেল চাকার প্রথম ধাক্কা দ্বিতীয় ধাক্কা

 

মীন রোদের ভিতর

 

ঝিঁ ঝিঁ পোকার শব্দ শুনে বিস্মৃত সময়টি মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে, চাতকের অনুনাদে ভাঙাচোরা আপোশ, মৃত নিমপাতার পুবদিক ঘেঁসে লক্ষ্মীপেঁচার করুণ আহ্বান ভাসে ; ভয় অথবা কোনো সন্দেহ নেই যে — আমি বিচরণ করি তার বুকে, আর সর্বাংশে সন্ধ্যা নামাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সজল ক্রান্তিরেখা
আগড়া ওড়ানোর সাথে সাথে কারা যেন উড়িয়ে দিচ্ছে বেগুনি ঘনত্বের ঘনক, উলুঘাসের বিভ্রান্তির ভিতর ভেঙে যাচ্ছে আবেগের অনিত্য খণ্ড; তবুও তুমি ছুঁয়ে যাও নরম মাটির ফাটল ; মীন রোদের ভিতর মুখচোরা ছায়া অনাথ হয়ে যায়

 

হলদেটে হরফ

 

চতুর্দিকে আরোগ্য খোঁজার এই হলদেটে হরফে এখন আর নিমফুল ঝরে না
ধর্ষিত রাস্তার ধারে পার্থেনিয়ামের রোম উড়ে
শিরীষ গাছ ভেঙে খড়কুটো নিয়ে আসছে নিরাকার ঝড়
যেন উরুভাঙা বুদ্ধমূর্তির মৃদুস্বরে ঠোঁট নাড়ে সারি সারি নিঝুম বৃক্ষ
চির শূন্যতম প্রান্তরে উঁকি মারে আলোর ছায়া
তবুও শাদাই চলাচল করে জাগ্রত গ্রীষ্মে
আর অন্ধকার পর্দা ছুঁয়ে যায় চাঁদের বেদনার থৈ থৈ বনবাদাড়
সহস্র বছরের তারাভরা আকাশে ভাসে ঝোড়পোকার ভাষা এই বুঝি দু’হাতে আঁকড়ে ধরি দূর্বাঘাস
ফ্যাকাশে অস্তিত্ব নিয়ে এহাত ওহাত করি মাটি ও শিকড়ের সম্পর্ক

 

পদ্মাসন

 

সাপ জড়িয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে বিপন্ন হয়ে আসছে প্রদীপ

ঝুরি নামছে রাত দুপুরের কোহল থেকে
একফালি নিকোটিন মাখানো উঠোনে নির্ঘুম শব্দেরা অস্থিহীন ভগীরথ
ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে কালপুরুষের ছায়া
সরলরেখা হতে চাওয়া বৈরাগ্য পেতেছি মাটিতে
মহাকালের মুহূর্তরা পড়ে থাকা খইয়ের মতো রংহীন
ওহে ক্লান্তি, পৃথিবীর আকার জেনেও নদীর মতো ভুলে যাই অপরাজিত পুষ্প
টুপটাপ ঝরে অত্রিকা
পদ্মাসন পুড়ে খাক হয়ে যায়

 

নিউরোসিস

 

 

সাদা ইমেজ নিয়ে জলের ফোঁটাগুলি মৃত্যুর কাছাকাছি

দ্যাখো, উত্তাপে ভিজে যাচ্ছে অন্তর্লীন মেঘ
তারই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে ফেনাময় ষড়রিপুর ভূ-কম্পন আর বজ্রপাত
কাকেরা উড়িয়ে আনছে তাদের শিলাজিৎ মাখানো ঠোঁট ও আগুন
উজান বৃক্ষের ছবিতে ঠেস দিয়ে তুমি তখন তৃষ্ণার্ত হওয়ার ভান করছ
চোখের চোখের কোণে হিজল ফুলের রস নিয়ে আঙুল টানছ সুতীব্র শিরায়
দিগন্ত থেকে বহুক্রোশ দূরে এই নিউরোসিস নিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে
এই খণ্ড খণ্ড গ্যালারিতে রেখারং-ই একা – নিরাকার হলেই এ আয়ু তোমার নয়
আমারও কি? ভেবে দ্যাখো–
ভেবে দ্যাখো অবোধ কিলার– নিঃস্ব ফুলের কোন রং পরিবর্তন হয় না –
এরপরও কি কোন কবিতা প্রভাবিত করবে পৃথিবীর ভূমি আর জল

 

 

ঘাস পোড়ার গন্ধ

 

ঝড়লাগা লোকটার কোন বাইপাস সার্জারি নেই– খালি গায়ে চকচকে ঘাম নিয়ে রাস্তার ধার বরাবর হাঁটতে হাঁটতে নুড়ি পাথর কুড়িয়ে ফেলতে চায়, হঠকারী সব সোরগোলের আসা-যাওয়ায় কোন তীর্থযাত্রা নেই তার, তবুও বাহুতে কখনো বা অনর্থক ঘায়েল করে চলে যায় কেউ ; তখন সে নাকের কাছে হাত দিয়ে তাড়াতে চায় ঘাস পোড়ার গন্ধ

চলো নাহয় এবার হাঁটি পিছুপিছু, মেরুদণ্ডের খাঁজ বেয়ে বয়ে যাক উলম্ব সহজ ঘামবোধ

 

 

অপেক্ষাঘর

 

তারপর, ওই দূরত্বে ঝরঝর ঝরে ঈশানী বাতাসের প্রত্যাশা
ওয়েটিংরুমে তখন জমাট সন্ধ্যা
শূন্য হতে চাওয়া বাসস্টপের প্রশ্নগুলো উড়তে থাকে সাদা বলাকার ব্যাকগ্রাউন্ডে
জমাটবদ্ধ মেঘরঙের মেঘ চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে তার ঝরাপাতার আখ্যান

আমার মাথার উপর কৃষ্ণচূড়ার অসুখ , তার কাছে তো আমার জীবন বাঁধা
ব্যাণ্ডেজ় পাল্টাতে পাল্টাতে খামারের ফাটলে খেলে বেড়ায় যবনিকা

 

 

ঠাকুর মাজান

 

হঠাৎই নৈঋত কোনের সন্ধ্যা তারাটি হিজল গাছের ভিতর ডুবে গেল – কোন হাহাকার শোনা গেল না কিংবা দীর্ঘশ্বাসও – কেবল বাঁশতলা দিয়ে মিলনের কৃষ্ণবর্ণের বউ হেঁটে গেল ঠাকুর মাজানের দিকে

অথচ এখানে পড়ে আছি নিদাঘ, কিছু বিরতি থাকলেও নৈঃশব্দের ললিতা থেকে কুড়িয়ে চলেছি বিহঙ্গ বিকাশ , জুঁইফুলের গন্ধে ভাসছে সর্পিল রাতের রিভিউ – ঘাই মারে লিবিডো মাখা নথপরা সিলভার কার্প

আলো কি রাতের সুখ ! আমরা জেগে উঠি, কয়েক প্রকার জন্তু-জানোয়ার, কীট-পতঙ্গ, আর জীবাত্মা – ফণিমনসা ঝোপের ওপাশে পিছলে পড়ার ভয় নেই আর – সপ্তপদী মাটির ঠোঁটে শিশির ফোঁটা হয়ে জেগে থাকি

 

 

নিঃসরণ

 

রাত্রি চলছে অন্ধকার ছাড়িয়ে অন্ধকারের দিকে – পাতা নড়ছে কালো ঘনত্বের সজীবতায় – এ ছাড়া উদ্বৃত্ত আর কিছু নেই

ওদিকে তাকিয়ে গামছায় বাঁধা নিখিলের হাড় যথাসম্ভব নিভৃত এবং নিঃসরণের দিকে প্রবাহিত – ঘাম গন্ধে সোঁদা হতে হতে মৃগশিরা নক্ষত্রের কাছাকাছি

ধানশস্যের পাশে বোয়ালমাছের ঝিলে পচনলাগা জবাফুল ভাসতে থাকে – পাড়ের উপর সাপুড়েটি বাঁশি বাজাতে বাজাতে ফুলটির রঙ ফেরত চায়

সামনে কী আছে দেখতে পাই না আর – পঞ্চ শস্য পোড়া উত্তাপে হাত সেকঁতে সেঁকতে শুয়ে থাকি বাতাসের সোহাগ নিয়ে

 

 

 

 

দেবাশিস সাহা

লাশফুল

 

রক্তের পাশে ফুল রেখো না
ফুল ভিজে গেলে
সংক্রামিত হবে গন্ধ

গন্ধের গভীরে
জীবনের কুয়ো

লজ্জা পেয়ে
আমার মা আমার বোন
আমার বারবণিতা
ঝাঁপ দিচ্ছে কুয়োয়
নতজানু হচ্ছে মৃত্যুর কাছে

তুমি ফুল রেখো না
ওদের পাশে
জল্লাদের উল্লাসে
ওদের যেন ঘুম না ভেঙে যায়

যারা জেগে আছে
তাদের ঘুম ভাঙাও
জেগে উঠুক
তাদের আগুন

ফুলের গন্ধ সংক্রামিত হলে
এই দেশ ভরে যাবে লাশফুলে

 

চোতক্ষ্যাপা

দারুচিনির দেশে
কেউ কেউ নেমেছে দারুর খোঁজে
চিনি নিয়ে আগ্রহ নেই মধুমেহ প্রেমিকের

স্লেট থেকে ভাগ্যরেখা মুছে
দারিদ্র্যরেখা এঁকে দিলো অমাবশ্যা
উড়ালপুল ধরে হেঁটে যায় ভাত
পিছু পিছু ভাই ও আমরা
সিঁড়ি কাকে কি শেখায় জানি না
সেই একই পড়া প্রতিদিন
ফুটপাত টকভাত বমি আর
অন্ধকার ঘরে ভ্যাপসা গন্ধ

নিজের বুকে ভর করে
ব্রিজের নিচে ফিরেছে কামিজ
লতিয়ে লতিয়ে
এ বাড়ি সে বাড়ি
চলে যায় আলো রঙের আনন্দ
সাবান জলে হাত ধুয়ে রাত ঘুমাতে যায়
সাবান জলে ধোয়া ভোর
দিদিমণির চাল আলুর দিকে বাড়িয়ে দেয় হাত
মাস্ক গ্লাভসের কাছে
আরো কিছুটা সময় চেয়ে নেয় জীবন
পুলিশের ইশারার অপেক্ষায়
নরম নরম আলোগুলো বসে থাকে
পাতার আড়ালে
চোতক্ষ্যাপার দল কাদা করছে রেশন দোকান

মানুষ আজ সংখ্যা
পরিসংখ্যানের আড়ালে চলছে অন্য এক খেলা
লাঠির তাড়া খেয়ে
গরম ভাত খুঁজে চলেছে
এক নিরুপদ্রব ঠেক

 

জাগতে রহো
(উৎসর্গঃ শঙ্খ ঘোষ)

 

হামাগুড়ি দিয়ে শিরদাঁড়া
খোঁজাখুঁজি করতে ব্যস্ত বাঙালি

ঋজু সবল শিরদাঁড়া হাতে রেখে
বাংলার ঘরে ঘরে
হেঁকে যায় এক প্রৌঢ় বিকেল
জাগো জাগো
জাগতে রহো

নানা রঙের কলম
ঋতুর ঢঙে রঙ বদলায়

এক অবিচল বিবেক
সদর্পে বলে ওঠেন

‘দেখ খুলে তোর তিন নয়ন
রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে
দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন ‘

 

ইটভাটা

নরম হাড়ের উপর
মাথা রাখে ইটভাটা

এই ভাবে শক্ত হয় খুলি

পাঁজা পাঁজা শ্রম
আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে
নামে আর ওঠে

পছন্দ না হলে
শক্ত খুলি বল ভেবে
পাঠিয়ে দি মাঠের বাইরে

নরম মনের উপর
পা রাখে পিশাচ
লতিয়ে লতিয়ে
ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে
বড়ো হতে থাকে ইটভাটা

 

আত্মা

বেলুনের মধ্যে আত্মা চালান করছে
বেলুনওয়ালা
সে বেলুনের ঈশ্বর

বেলুনের ঘাতক
যে কেউ হতে পারে

যে কেউ কেড়ে নিতে পারে
বেলুনের আকাশ

প্রতিটি ছেলেবেলা
রঙিন বেলুনের বন্ধু

আততায়ী আলপিন
কখন যে কার হাতে এসে যায়

আমাদের আত্মা আর আলপিন
ছদ্মবেশী জাদুকরের দু-হাতে…

 

স্বপ্নডগা

ডানা মেরামত করে
আবার উড়ে যায় মেঘ
অনেক নিচু দিয়ে ওড়ে
বাবা রঙের ছাতা

মেঘ, রোদ, পাওনাদার কে
আড়াল করে
ভাঙা ডানা নিয়ে
ক্যালেন্ডার পেরোচ্ছেন বাবা

কখনো কখনো বৃষ্টির জল
ভাঙা ছাতার ভিতর দিয়ে
বাবার গাল বেয়ে আমার বুক ভেজাতো

বাইরে এতো কষ্টের রোদ
টের পাইনি কোনদিন

রোদ্রে সাঁতার কাটতে কাটতে
পুরানো ডানায় বড় হতে থাকে
স্বপ্নডগা

 

আমাদের মা

ফুটো হয়ে গেছে আমার রাত
ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আলো

গলগল করে বেরিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার

ফুটো দিয়ে দেখা যাচ্ছে
আমাদের গোপন তারা
আমাদের লজ্জার গণতন্ত্র

জনমভর সেই ফুটো সেলাই করার চেষ্টা করছে আমাদের মা

 

একা

একা হয়ে যাওয়া বাড়ির নাম দিলাম তপতী
কলমের ডাক নাম রাখি সু
রাস্তা ছাড়া ভীষণ একা দেবাশিস

এক একটি নি:সঙ্গ সাইকেলরিকশা
অপেক্ষা হাতে দাঁড়ায়

তুমি এক এক করে
সাজিয়ে রাখো একা

আমি একাকার হয়ে যায়
আদরে আদরে শঙখ লাগে
নেমে যায় জোয়ার

আনন্দের আলাদা গন্ধ আছে
একা একা আসে একাকীর কাছে

 

ছায়া

ছায়া কি গাছের বন্ধু
বন্ধু কি টের পায়
গাছের সর্বনাশ

গাছের ভালোবাসার
অন্য নাম ছায়া

টের পায় গাছের মিত্র-শত্রু সকলেই

ছায়া কখনো
ছেড়ে যায় না গাছকে

সর্বনাশ এসে দাঁড়ালো
ছায়ায়
গাছ তাকেও জড়িয়ে
নেয় ভালোবাসায়।

 

২৫শে বৈশাখ

 

সমাজের ফাঁক-ফোকর
ভরাট করছে রবীন্দ্র রচনাবলী

ভাঙাচোরা মুখ নিরলস
মেরামত করছে গীতবিতান

নিরন্ন মুখে অন্নের সংস্থান করছেন
সবার প্রিয় আমার প্রিয়
রবীন্দ্রনাথ

গোপন কান্নাগুলো মুছে দিচ্ছে
এলোমেলো রবীন্দ্রসঙ্গীত

দুঃখী মানুষের আশ্রয়
এই একটা ঠাকুর

খুলে রাখি জোড়াসাঁকোর চৌকাঠ
ঠাকুর বাড়িতে এসে দাঁড়ায়
বাঙালির ২৫শে বৈশাখ।

 

এন আর সি / এক

হলুদ কাগজে
ভয় রঙের গন্ধ
রক্ত দিয়ে লেখা

সুইসাইডাল নোট

মা,
আমি একটা নিজের দেশ
তোমার জন্য
আনতে গেলাম..

 

গোল্লা

গোল্লার ভিতরে
নিরন্ন মানুষের পা

সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রেখে
পর পর গোল্লা

নিরন্ন মানুষের আশ্রয়
এই গোল্লার গভীরে

দূরত্ব রেখে
তুমি গোল্লার ভিতরে
ঢেলে দিচ্ছো টাকা, রেশন আর নীরবতা।

 

মনে পড়ে বাইশে শ্রাবণ

কদম মাস
আকাশের বারান্দায়
মেঘেদের দস্যিপনা

কবির সঙ্গে সঙ্গে
রাস্তাও চলে গেছে
চলে গেছে ভুবনডাঙ্গার ব্যস্ততা

ছাতিম পাতায় বসে আছে
মনখারাপ
কেউ কি টের পেল

দু-হাত জড়ো করে
দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি শান্তি গাছ

গাছে গাছে
একটানা বেজে চলেছে ব্রহ্মসংগীত

কোপাই-খোয়াই
অন্নহীন মুখে খোঁজ রাখছে গুরুদেবের

সংজ্ঞাহীন শরীরে নিঃশ্বাস ক্লান্ত

পাখিদের ঠোঁটে শেষ বাতাসটুকুর বার্তা
অবনীন্দ্রনাথ এর হাতে জলরঙ
অন্দরমহলে ঠাকুর বাড়ির শ্রাবন
রুখা শুখা মানুষের আপনজন
নিয়ে যাচ্ছে বাইশে শ্রাবণ

তারপর থেকেই
হেরে যাওয়া প্রতিটি দিন
২২শে শ্রাবণ

 

 

 

 

 

 


🍁নিবিড় পাঠ


 

 

তৃষ্ণা বসাক এই সময়ের একজন লেখক। অনেকদিন সাহিত্যের সঙ্গে আছেন। কথাসাহিত্যে নিজেকে মেলে ধরেন খুব সুস্পষ্টভাবে। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন পটভূমিই লেখকের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ওঁর ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’ তেমনি একটি বই। সাশ্রয় নিউজ-এর রবিবার স্পেশালে বইটি নিয়ে লিখলেন : সুপর্ণা বোস 

 

 

ম্প্রতি দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হয়েছে তৃষ্ণা বসাকের সাইকো-সোশ‍্যাল-পলিটিক‍্যাল থ্রিলার ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং ‘। বইটি পড়তে গিয়ে আশ্চর্য এক ঘোরের ভিতর আবিষ্ট হয়ে পড়ছি। সমাজ রাজনীতি ও মানুষের মন নিয়ে বুনে চলা এই অক্ষরশিল্প। রচনা শৈলী অ‍্যাপ্লিকের প‍্যাচওয়ার্কের মত। ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা চরিত্র ও পরিস্থিতিকে সুনিপুণ সীবনে গড়ে তোলা এক বহুস্তরীয় আখ‍্যান।

গল্পের ভিতর অজস্র চরিত্র এসেছে। কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিটি চরিত্রই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি চরিত্রের একটি নিটোল গল্প আছে। নিজস্ব দর্শন আছে। লেখকের জীবনবোধ ও যুক্তির আলো সমগ্র কাহিনিকে আলোকিত করেছে। উপন‍্যাসটি যেন আমাদের আশপাশেই ছড়িয়ে ছিল। লেখক তার সংবেদী দৃষ্টি ও মরমী কলমে তুলে নিয়ে অক্ষরে গেঁথে পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন। এর পটভূমি ও চরিত্ররা স্পষ্টতই রাজনৈতিক। প্রতিটি চরিত্র ঘটনা এবং সংলাপের মধ‍্যে দিয়ে ধরা দেয় তাদের মনস্তাত্ত্বিক সঞ্চার।

গল্প মূলত শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতি, রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব ও কুক্ষিভবনকে কেন্দ্র করে পল্লবিত হয়েছে।যেন জ্ঞানের প্রদীপের নিচেই লোভের অন্ধকার ছায়া।নাম ভূমিকায় অজিত সিং। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের একজন গ্রুপ ডি কর্মচারি একই সঙ্গে রাজনৈতিক দুষ্কৃতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। এক কথায় কিং মেকার।সেকারণে অনেকেই তাকে হাতে রাখতে চায়। তাদের মধ‍্যে অন‍্যতম মোহরমালা ধর। তিনি বিশ্ববিদ‍্যালয়ের রেজিস্ট্রার। কিন্ত তার এই হর্ম‍্যচূড়ায় পৌঁছনোর পথ বিভিন্ন প্রকার আপোষের নিট ফল। এই পথেই অজিত হয়ে ওঠে তার friends with benefits.

____________________________________________

ক্ষমতা তাকে একটা খোলস দিলেও ভেতর থেকে সে একা। একমাত্র কৈশোরের একটিমাত্র মুগ্ধতা তার মনের মণিকোঠায় ভালবাসার সুগন্ধের মত রয়ে গেছে। সে প্রফেসর বক্সির মেয়ে দোলনচাঁপা।

____________________________________________

 

মোহরমালার জীবনে পুরুষ সিঁড়ির মতই ব‍্যবহৃত হয়েছে।” তবে নিজের শরীরের যে একটা উপযোগিতা আছে, সেটাকে ব্যবহার করে যে অনেক কিছু পাওয়া যায়, সেই ব্যাপারটা সৈকতের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। “শুরুটা কীভাবে হয়, এ নিয়ে কৌতূহল ছিল শরীর বিনিময়ের ক্ষেত্রেও, কীভাবে একজন শিক্ষিত অধ্যাপক মানুষ, সব বিষয়ে যার সফিস্টিকেশন, তিনি জানান যে আপনার শরীর আমার চাই, পেলেই তবে এই কাজটা করে দেব। কীভাবে এই কথা বলতে পারে মানুষ?” গল্পের নায়ক অজিত সিং আদপে খলনায়ক। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের বিহারী দারোয়ানের নাতি।বিশ্ববিদ‍্যালয়ের কোয়ার্টারেই সেও বড় হয়ে উঠেছে।সমাজের ওপরতলার শিক্ষিত সম্প্রদায়ের স্বার্থপরতা অবহেলা ও উন্নাসিকতাই কি তাকে এই অন্ধকার জগতের দিকে ঠেলে দিল? ঈর্ষা ক্রোধ, ঘৃণা ও হাহাকারে ভরে উঠল তার জীবন। “সবাই অজিতকে ছেড়ে চলে যাবার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছিল। এখন সে একা লড়ে যাচ্ছে, ময়দান ছাড়েনি। কিন্তু তাতে কি? সবাই ভয় করে, সমীহ করে কথা বলে, কিন্তু আড়ালে তো গাল দেয়, বলে শালা বিহারীর বাচ্চা, এসে বঙ্গালে আতঙ্ক ফয়লে রেখেছে”। ক্ষমতা তাকে একটা খোলস দিলেও ভেতর থেকে সে একা। একমাত্র কৈশোরের একটিমাত্র মুগ্ধতা তার মনের মণিকোঠায় ভালবাসার সুগন্ধের মত রয়ে গেছে। সে প্রফেসর বক্সির মেয়ে দোলনচাঁপা।

ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন অত‍্যন্ত মেধাবী ছাত্রী।অথচ সমস্ত যোগ‍্যতা থাকা সত্বেও অধ‍্যাপকের চাকরি হয় না তার। দুর্নীতিপরায়ণ মেরুদণ্ডহীন চারজন মানুষের জন‍্যে সে যোগ‍্যপদ থেকে বঞ্চিত হয়। তবু সবটুকু বুঝেও কোনও অসদুপায় সে অবলম্বন করতে পারে না। তাই তাকে স্পর্শ করতে পারেনি কোনও নীতিহীনতার পাঁক। সততা তার জিনগত। হতাশার গহীন জলে তলিয়ে যেতে যেতে সে চিঠি লেখে।লিখতেই থাকে তার কলেজের বন্ধু বিদিশাকে। সে তার সেফটি ভালভ্। দোলন নিজের কেরিয়ারে যেখানে পৌছতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি সেখানেই পৌঁচেছে বিদিশা। অথচ সেই সাফল‍্য মোহরমালার মত পিচ্ছিল পথে নয়। সমস্ত দৌড় থেকে ছিটকে গিয়ে দোলন অবসাদের রোগী। তারই নিবিড় বিষাদ যেন ব‍্যপ্ত হয়ে আছে সম্পূর্ণ উপন‍্যাসটিতে।

গল্পের প্রবাহমানতায় এসেছে তাজমুল কেতোর মত নেগেটিভ চরিত্রেরা। যারা অ‍্যান্টি সোশ‍্যাল। সুপারি কিলার। তবু তাদের জন‍্যেও পাঠকের মনে মায়ার সৃষ্টি হয়। দেখা যায় তাদেরও বিবেক রয়েছে। তাই তাজমুল সুপারি কিলিংয়ের বরাত পেয়ে প্রশ্ন করে, “এ আমার কাছে ঠিক কিলিয়ার হচ্ছে না। পয়সা পাচ্ছি বলে মারব? এতে কী হবে বলুন তো, লোকটাকে হয়তো মারব, কিন্তু চোখ দুটোর কী হবে? চোখ তো কখনো মরে না।” তাজমুল একজন সমাজবিরোধী। ধর্ষণ ও খুনের অপরাধী। খানিকটা যেন পরাবাস্তবতার মধ‍্যে দিয়ে লেখক তার অবচেতনকে সামনে এনেছেন,  “তাজমুল দৌড়ে চলেছে। ধানক্ষেত, মাঠ, মন্দির মসজিদ, কত কী পড়ল তার রাস্তায়। সে তবু দৌড়ে চলেছে। তার পেছনে তাড়া করে আসছে সেই মেয়েটা, যাকে সে ক’য়েকমাস আগে এরকম একটা ধানক্ষেতেই খুবলে খেয়ে ফেলে এসেছিল। সে-তো একা নয়, আরও তিনজন ছিল তার সঙ্গে। তিনজন না চারজন? ঠিক মনে পড়ে না তাজমুলের। মোট কথা, সে একা নয়, সবাই ভাগ পেয়েছিল, ভাগ করলে কি পাপ কমে যায়? পাপ ভাগ করা যায়?”।

আশ্চর্য ও গভীর রিয়ালাইজেশনের মধ‍্য দিয়ে এভাবেই চরিত্রের চেতন অবচেতনের অন্তর্বয়নে জেগে ওঠে অবচেতনিক জগত। তার মাঝেই এসেছে বাম ও অতিবাম রাজনীতির কথা। সমাজতান্ত্রিক ব‍্যবস্থার দুর্বলতর দিকগুলি। এই রাজনৈতিক মতাদর্শ ব‍্যক্তি মানুষকে আদৌ কি কিছু দিতে পেরেছে? সমাজের ওপর তার প্রভাবই বা কেমন? “বুনো রামনাথের স্ত্রী তেঁতুলপাতার ঝোল রাঁধতেন, সেটাই ছিল বাঙ্গালির প্লেন লিভিং হাই থিংকিংয়ের চূড়ান্ত উদাহরণ।মিনিমালিটিই ছিল বাঙ্গালির অভিজ্ঞান। আজ সেই বাঙ্গালির ছেলেমেয়েকে দক্ষিণে পড়ে থেকে তেঁতুলের ঝোলই খেতে হচ্ছে! পাপটা ঠিক কাদের?” এ রাজ‍্যে চাকরির বাজার বলতে আর কিছুই বেঁচে নেই। “চাকরি নেই তো খাবে কি? দালালি ছাড়া কোনও পেশা নেই।এই পাঁকের মধ্যে এক একটা শপিং মল পদ্মের মতো ফুটে আছে। কিন্তু একদিন মলের বেসমেন্টে গিয়ে দেখো তো। দম বন্ধ হয়ে আসবে। লেডিস টয়লেটে গিয়ে দেখো, মলের মেয়েগুলো ওখানে বসে বিলাপ করছে। ক্যানিং থেকে, বারাসাত থেকে আসা রোগা ভোগা মেয়েগুলো, টিফিনবাটিতে ভাতের মধ্যে একটু কুমড়োর ঘ্যাঁট বা আলুসেদ্ধ নিয়ে আসা মেয়েগুলো…”
পড়তে পড়তে পাঠকের চোখ আলোর বৃত্ত ছাড়িয়ে অন্ধকারের বাস্তবে পৌঁছে যায়। মন আর্দ্র হয়ে ওঠে।

উপন‍্যাসের ছত্রে ছত্রে সমাজের ভয়াবহ অবক্ষয়ের দিকটি উঠে এসেছে, “আজকাল সব টাকাই নাকি গরু আর কয়লার। আর বিছানার। পটা মাঝে মাঝে ভাবে গরু খেলে কি সত্যি জাত যাবে ওর? জাত যাবার হলে এতদিন তো গেছে। গরুখাওয়া মেয়েকে বিয়ে করেছে, তার সঙ্গে শুয়েছে, সন্তান হয়েছে ওর। দূর ওসব বাজে কথা, মুনি ঋষিরা আগে নাকি নিত্যি গরু খেত।” এই উপন‍্যাসে পটা একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে অজিতের শেষবেলার সারথি। তার হাত ধরেই উপন‍্যাসটি সমাপ্তির পথে এগিয়েছে। পটার গাড়িতে চেপেই অজিত চলেছে তার কৈশোরের ভালবাসা দোলনকে খুঁজতে। এক সময় দেখা যায় এই ধুরন্ধর দুনিয়ার মিসফিট মানুষেরা একে একে হারিয়ে যেতে থাকে।কিন্তু তারা হারিয়ে কোথায় যায়? তারা দানা বাঁধতে থাকে। গড়ে ওঠে ‘মিসিং পারশনস পার্টি’। এই পার্টিই কি একদিন নতুন সমাজব‍্যবস্থার জন্ম দেবে? একটা শ্রেণীহীন সমাজে ড. বসু আর তাজমুল তাদের শ্রেণী বৈষম‍্য ঘুচিয়ে পরস্পরের প্রারব্ধ ক্ষয় করে নেবে!শতরূপা যেন সেই জগত কুড়ুনির মা! যে ধ্বংসের ভিতর থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছে সৃষ্টির বীজ! পদ্মনাভই তাহলে শতরূপার মনু! উপন‍্যাসটিতে অপূর্ব অলৌকিক আশাবাদ পরিলক্ষিত হয়ছে। মোহরের স্বামী ভবানী শাস্ত্রী একজন সেলিব্রিটি ভাগ‍্যগনৎকার। আসলে একজন অমানুষ। সমাজের রাক্ষস। সে তার নিজের কন‍্যা কিঞ্জলকে সম্ভোগ করার মত বিকৃত ভাবনা পোষণ করে। শেষপর্যন্ত intellectually disabled গগন তাকে পুড়িয়ে মারে।

যদিও ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ বলে একটি বিধিবদ্ধ ঘোষণা আছে তবু চরিত্রগুলিকে অনেকক্ষেত্রেই পাঠক দিব‍্য চিনে নিতে পারবেন। চেনা চরিত্র ও ঘটনাগুলি যেন ভাঁজ খুলে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বোধের আলোয়। যুক্তির তীক্ষ্মতায়। উপন‍্যাসে যে চরিত্রগুলি এসেছে তার প্রতিটি চরিত্রের জোরালো উপস্থিতি।তাদের বক্তব‍্য ব‍্যক্তিত্ব সমস্ত কিছু নিয়ে উপন‍্যাসটিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। গতিময় করে তুলেছে। এতোটাই গতি দিয়েছে যে পাঠক উর্ধশ্বাসে পড়ে চলেন। গল্পের এমন টান যে সমস্ত চেতনাকে জড়ো করে ছুটে চলতে হয় পাতার পর পাতায়। প্রশ্ন থেকেই যায়, শেষ পর্যন্ত অজিতের কি সত‍্যিই নয়ানজুলিতে মৃত‍্যু হল? জলের নিচে লতাগুল্মের ভেতর একটি প্রজাপতি যা সে প্রফেসর বক্সীর মেয়ে দোলনচাঁপার ফ্রকের ওপর দেখেছিল? দোলন মানে অজিতের কৈশোরের ক্রাশ তার স্বপ্নের তিতলি কি আসবে তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে!

অজিত সিং বনাম অজিত সিং প্রকৃতপক্ষে এক খণ্ডে থেমে যাবার মত উপন‍্যাস নয়। পাঠক হিসেবে আমার আশা এর দ্বিতীয় খণ্ড পড়ারও সৌভাগ‍্য হবে। অজিত সিং শেষ পর্যন্ত আমার অত‍্যন্ত ভাললাগা ও ভালবাসার উপন‍্যাস হয়ে থাকবে। 🦋

🍁 অজিত সিং বনাম অজিত সিং :: তৃষ্ণা বসাক।  দে’জ পাবলিশিং। কলকাতা 

 

 

 

 


🍁 কবিতা 


 

 

 

সৌমিত বসু

হারানো নোলক

 

একটি আত্মনিমগ্নতার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অন্ধকার
তুমি ধীর ধীরে বাইরে এনে ঢালছো।
এখানে কঠিনের গায়ে লেগে থাকা সমস্ত আর্তনাদের কালো
আমরা দু-হাত বাড়িয়ে মুছিয়ে দিচ্ছি মহেঞ্জোদাড়োর চাতাল থেকে।

ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি
কবিতা আর ঈশ্বর সমার্থক।
তাকে স্পর্শ করার জন্য নাকি বারবার
নেচে ওঠে আমাদের অভাবী আঙ্গুল।
যে কথা রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, লালন বলেছেন,
এমনকি আমিও বলেছি যা ‘কৃষ্ণকথা’য়।

দূরে তাকিয়ে দেখি, আকাশ ভ’রে তুমি
এঁকে চলেছ সেই ভয়াবহ আনন্দগান,
তোমার পিঠে ক্রুশকাঠ ,সারাগায়ে রক্তের পেরেক।

আমরা বাঁচাতে পারিনি তোমাকে।
আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ ভেবে বাঁচাতে চাই না তোমাকে।
শুধু তোমার ফেলে যাওয়া কাগজের টুকরোগুলো
গাছের মগডালে বসে
ছড়িয়ে দিতে পারি সারা পৃথিবীতে।

আমাদের হারানো নোলক বারে বারে
লজ্জায় ফেলে দেয় আমাদের।
আমাদের স্বপ্নের ভেতর নোলক খুঁজতে গিয়ে
চোখরাঙানির ভেতর
অজান্তেই স্পর্শ করে ফেলি তোমাকে।

 

পরাণ মাঝি

সন্দেশ ‘– খালি কোথায়?

 

হাত, পা-হীন নরম বালিশের মতো তুলোর হৃদয় ছিল। ডাকলেই পাওয়া যেত। ভয় আর সন্ত্রাসের মতিঝিল…

শিল্পিত হাতের পিঠেপুলি -।এভাবে পিঠে পড়বে তা কে জানতো…
ক্ষত্ গভীরতর ক্ষত্
হঠাৎ বিপরীত বজ্রপাত

কোথায় আছি? সেই সব প্রত্যাশিত শব্দরা কোথায়?
অবশ, পক্ষঘাতে আক্রান্ত নাকি খালি মাথায় তেল দেওয়ার ভয়?
হয়! হয়! এমনই হয়। হচ্ছে তো –

ছিঃ
ইতরামি। আমার সংস্কৃতি। ছিঃ
মানবিকতা এতটুকুও দেখাতে পারলো না কলম?

‘সন্দেশ’- খালি কোথায়? ভরা তো-
খাঁটো আর বেঁটে হতে হতে পিছিয়ে পড়া মানুষ শব্দমুখর হচ্ছে। শুভ এবং শুভ্রতায় মোড়া নারীর হৃদয়। তারাও আজ বেপরোয়া?

পড়ে দেখি তাদের মুখ ঢাকা কণ্ঠস্বর।
তারপর –
নিজেকে নামিয়ে আনি আর মুখ ঢাকি
ভেতর থেকে কে যেন বলে ওঠে – ছিঃ

 

মধুমিতা রায়

একদিন…

 

যে তোমাকে চেনে না
তাকে চেনাতে যেও না কখনও
যে তোমাকে ভেবেছে সহজ ঘাস
একদিন বৃক্ষ হয়ে যেও

যে তোমাকে জানে না
তাকে জানাতে যেও না কখনও
যে তোমাকে ভেবেছে নরম মাটি
একদিন পাথর হয়ে যেও

যে তোমাকে বোঝে না
তাকে বোঝাতে যেও না কখনও
যে তোমাকে ভেবেছে সামান্য মেয়ে
একদিন স্বপ্ন হয়ে যেও।

 

 

ঋতবৃতা মুখোপাধ্যায়

বয়ে যাওয়া সময়ের অ্যালবাম

 

স্মৃতির উঠোনে গেলে কেউ আর ফেরে না কখনো
সময়,
তবুও তো কিছু সুবাতাস রয়ে যায়
রয়ে যায় থোকা থোকা সেগুনের ফুলে
অথবা, অঘ্রাণের ধুলো ধুলো
বাদামি কাশের ঝোপে
উঁকি দেয়
হেমন্তের শিশিরের রিক্ততায়।

চলে যাওয়া সবকিছুই নলেন গুড়ের মত
সে আস্বাদ মুখে লেগে থাকে, আজীবন
মনে পড়ে যায়

নিজেকে আয়নায় দেখি,
স্মৃতিমুখ!
রোজ কাজল পরি, চুল বাঁধি, তবুও
নিজের সঙ্গে কিছুতেই যোগাযোগ করতে পারছি না
স্মৃতির উঠোন থেকে কেউ আর ফেরে না কখনো।

 

শ্রীমতী সুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়

মনের কথা

 

একটি প্রাণ একটি মন
কিন্তু সকলেরই পৃথক
সকলেই ভিন্ন একে অপরের থেকে।
অথচ কথা বলে
একসাথে কাজ করে,
একসাথে ওঠে বসে,
একসাথে লড়াই করে,
একসাথে গল্প করে,
একসাথে সভায় যোগ দেয়,
কিন্তু ভিন্ন মত পোষণ করে।
একসাথেই টিফিন খাওয়া,
একই মানুষের অধীনে একসাথে চলা।
সবার সামনে একরকম ব্যবহার
আবার সবার আড়ালে অন্যরকম।
কেউ জানে না তোমার আমার মনে কি চলছে!
যদি তা দেখা যেত কিংবা বোঝা যেত
তাহলে বোধহয় ভালোই হতো,
শুধরে নেওয়া যেত নিজেদেরকে,
অকারণ আঘাত হয়তো বন্ধ হত,
চোখের জল কম ঝরত।
মুখের কঠিন ভাষায় লাগাম থাকতো,
অকারণ আঘাত হয়তো কমে যেত।
হতাশার হতো অবশান,
অকারণ পরনিন্দা পরচর্চা ভুলে গিয়ে
সকলেই মিলেমিশে নির্ভয়ে থাকতাম।
সত্যি যদি সকলেরই মন হতো একরকম,
কিছু নাহি হারাতাম
কেবলই সরলতা ফিরে পেতাম
মনের কথা হলো সমাপন।

 

পূজা নস্কর

লুকানো ব্যথা

 

লুটিয়ে পড়া সমাজের কাছে
লিখতে কষ্ট হয়
এই মধ্যরাতে কলম হাতে মনে হয়-
‘আমি’ অভিনয় করছি!

তোমার কথাতেই আবার কবিতার কাছে আসা,
বলতে পারো কিছুটা তোমার প্রশ্রয়ে ধৃষ্টতা দেখাতে বসেছি মধ্যরাতে,

হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকছি শব্দদের,
মিটিমিটি করে হাসা তারা’র মাঝে।
তুমি বুঝি পাশ্চাত্যের নতুন বইয়ের মাঝে খুঁজে পেয়েছো নতুন লেখার ধরন?
বাতাসে বারুদের সাথে কীভাবে প্রেম হয় বা পাহাড়িয়া কোনো দাম্পত্য সুখী জীবন।
ভাবনার অবকাশে তুমি সুখী নেই জানি,
সময় হলে ফিরে দেখো অতীতে।
অতীত যে ভবিষ্যতের কাণ্ডারী।

 

 

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক  

 


🌻🦋সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ, প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, উপন্যাস, বইয়ের আলোচনা, ভ্রমণ কাহিনী…  ই-মেল : sasrayanews@gmail.com 
Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment