Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Sasraya News, Literature Special, May 12, 2024, Issue : 16।। সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল।। মে ১২, ২০২৪, সংখ্যা ১৬

Listen

সম্পাদকীয়র পরিবর্তে… 

 

“কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, ও তার ঘুম ভাঙাইনু রে।
লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন, ওগো, তায় জাগাইনু রে॥
পোষ মেনেছে হাতের তলে যা বলাই সে তেমনি বলে–
দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইনু রে॥
অচল ছিল, সচল হয়ে ছুটেছে ওই জগৎ-জয়ে–
নির্ভয়ে আজ দুই হাতে তার রাশ বাগাইনু রে॥”

[কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে / রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]

 

 

 

 

🍁পত্র-সাহিত্য 

 

নুসরাত সুলতানা

একটি চিঠি

 

 

অনি,

কতদিন তোমাকে লিখি না। আজ সন্ধ্যাটা কেমন রূপকথার মতো একটা পরাবাস্তব সন্ধ্যা। কেমন স্বপ্নের মতো এর রঙ। খুব ইচ্ছে করে এমন রাতে নিজেকে অপার্থিব প্রেমে হারিয়ে ফেলতে যেখানে নিজেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে আরেক আমিকে পাওয়া যায়।

_____________________________________________

এত ভাবো কেন! সুন্দরের হনন কতটা বয়ে বেড়ানো যায় তুমি বল! যদি আমি পাগল অথবা বাউল হতে পারতাম! কিছুই হতে পারিনি কেবল মা হতে পেরেছি।

_____________________________________________

 

যে আমির প্রজাপতির মতো লক্ষ-কোটি ডানা আছে। তারপর ও উড়তে গিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে কেবলই চুপটি করে লেপ্টে থাকব প্রিয়তম পুরুষটির বুকে। আর শুষে নেব বিগত জন্মের সব ক্ষত। নিশ্চয়ই তুমি এখনই বিরক্ত হয়ে বলবে- তোর এসব বকবক থামা নীলা। বাস্তব কথা বল। আমি কবি না যে পরাবাস্তব জগতে বাঁচব। আসলেও অনি, পরাবাস্তব জগতে কতক্ষণ বা বাঁচা যায় বল! সময়ের পিঠে বিষফোঁড়ার মতো জেগে আছে সাদী মোহাম্মদ, অবন্তিকার আত্মহনন। কতটা অসহায় হলে মানুষ নিজেকেই হত্যা করতে পারে বল তো! আমরা কেবল ক্ষুধা, ঘুম, প্রেম আর সুন্দর সকালের দিকে হেঁটে যাওয়ার প্রত্যাশায় বাঁচতে পারি না কেন অনি! সাদী মোহাম্মদ শিল্পের কাছেও ঠাঁই পেলেন না আর অবন্তিকা এত চৌকস একটা মেয়ে! জানো সুখেনও বলে- ছাড়ো ওসব! এত ভাবো কেন! সুন্দরের হনন কতটা বয়ে বেড়ানো যায় তুমি বল! যদি আমি পাগল অথবা বাউল হতে পারতাম! কিছুই হতে পারিনি কেবল মা হতে পেরেছি। আর তোমার সর্বকালের বন্ধু। তবে কোনওদিন যদি সুখেনের প্রেমিকা হতে পারি সেদিন আমিও জন্ম নেব প্রজাপতি দেবী হয়ে। তুমি আমাকে দেখতে আসবে তো অনি! এই যে পেটমোটা ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তোমার বিদেশিনীকে অনুবাদ করে পড়ে শুনিও এই চিঠি। তোমার সবটা সুন্দর হোক সেই শুভ প্রত্যাশা।
-নীলা 🦋

[লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক ]

 

 

🍁কবিতা
 

 

 

 

তৈমুর খান

কল্পনা

 

দূরের পাহাড়ের কাছে
উড়ে যায় আমার নিঃস্ব প্রজাপতি
আজ সে ভিখিরি নয়
অভিমান নেই তার
আজ সে নরম নিগূঢ় পর্যটক

 

 

দূরদর্শী

 

পরজন্মে আমাদের ঘরবাড়ি হবে
বাড়ির উঠোনে বাগান
বিকেলের রোমাঞ্চ আলোয়
তুমি দরজায় দাঁড়াবে
আমি ফিরে আসব
বেল্ বাজবে আমাদের স্বপ্নের সাইকেলে

 

 

অকৃতজ্ঞতা

 

 

অকৃতজ্ঞতা ময়লা হয়ে শরীরের লেপ্টে আছে
যতই সাবান দিই, স্নান করি
আর গেয়ে উঠি পরিশুদ্ধ গান—

অকৃতজ্ঞতা দেখা দেয় না
অথচ বুঝতে পারি তার আগমন।
কিছুতেই ঘুমোতে পারি না—
সে এসে বিশ্বাস ভেঙে
কলঙ্কিত করে যায় চরিত্র আমার!

 

 

 

 

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

বাসক ফুলের সময় চলে যাচ্ছে

 

 

বাসক ফুলের সময় চলে যাচ্ছে নিঃশব্দ প্রার্থনায়
এই সময়টাকে আয়ুর কাছে বসাতে নদীটাকে সঙ্গে নিতে চাই
কয়েক জন রমণীর কীর্তনগান
মগ্ন নদীতে মিশে যাওয়া জরায় দিনের আলো,
এক অসহ্য উত্তাপে পাল্টে দিচ্ছে জীবন, নির্ভর-
ছায়াহীন পিপাসা থেকে বেরিয়ে আসছে রোদ্দুরের ক্ষতচিহ্ন
পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে ঘুম- বুদবুদ স্বপ্নদোষ,
ক্রমশ বাতাস এবং নোনা সময়ের ব্রতকথায় সজাগ কাঁটা
শাড়ি ছিঁড়ে গামছা ছিঁড়ে
বাঁধের এপাশের ঘর উঠিয়ে নিয়ে যায় ওপাশে-
শরীরের রাস্তাটা ছায়া থেকে অনন্ত, পিছুটান হীন
ভিটের সাঁঝবেলায় শব্দ ওড়ে, বিভাবরী

 

 

অনাদি

 

 

মাটির চোখে চোখ রেখে কথা বললে
আলো পাহাড়ের ভাঁজে লতিয়ে ওঠে ঢেউ,
শব্দের সাদারঙে নিঃসঙ্গতা ডাক দেয় ইশারায়
হাওয়া ফুরানো ক্লান্তির কথা ভাবতে নেই-
বিষণ্ণ শিখার হৃদয়ে জন্মান্তরের যত ঋণ
উড়িয়ে দেয় আঁচল,
বাতাসে বাতাসে বিষাদ ভাসে
সেই সরোদ শুষে নিতে মাথার উপর রোদ
নিম্নদেহে গুল্মময় অপরাহ্ন পেরিয়ে কত দীর্ঘ-
খানাখন্দ ভরা মেঘের অভিযান

নিজেকে উজাড় করে দেবার উড়ন্ত পাখির মহিমা
অথবা আলোয় পূর্ণ হয়ে ওঠে বাঁশির শীতকাতর,

সব স্রোতের শব্দ জমিয়ে রাখে মানস বৃক্ষের আনন্দ-

 

 

অনার্য 

 

কালো মেঘের নিচে এক ঝাঁক উদাস তরঙ্গ ঢুকে যায় অনন্তে
বুক সাদা বলাকার নিচে সাঁতারের ইচ্ছেগুলি আকাশের এপার ওপার
সবুজের সীমারেখায় হাওয়ার কাঁপন-

তাই আমার প্রেমিকার নাম আকাশ

সীমাহীন শূন্যতা চলাচল করে তার বুকে- আর শরশর বাতাস
পৃথিবী কাঁপে স্বপ্ন আকূল

আমি কেবল অনার্য উপত্যকায় বৈদিক স্তোত্র নিয়ে
দৌড়তে থাকি ধ্রুবতারা দিকে-

 

 

 

 

 

দীপান্বিতা রায় সরকার

ঢেউ

 

ঢেউ উত্তাল কৌণিক, কে জানে এই নোঙর থামে কই
ভাসতে শেখা জল বিভাজন জানায়, ইচ্ছে মানেই সমস্তটা নয়।
শুধু শুধু ডুবিয়ে দিলো যা, নামতা বিহীন ভুল গাণিতিক পথে।
জলের সঙ্গে সহজ সখ্য নয়, সাঁতার শেখা কৌশলেই তা জানে।
খুব লড়াইয়ে দিনগুলো পশ্চিম, সামনে জানি আর কি কি সব রাখা!
নিজের হাতেই খুলছি সে সব চিঠি, পেন্ডোরার বাক্স করে ফাঁকা।
শুধু শুধু ভুলিয়ে গেল যা, যা ছিলো অপরিমেয় সব
কৌণিক সে স্বপ্ন বোঝাই দিন, মিথ্যে ছিলো, মিথ্যে ছিলো! সব?

 

 

ক্রমে সে বুদ্ধ হবে 

 

নির্বাণ এক নদীর নাম
নিমিত্তে যে ধ্রবক থাকে।
সব প্রকরণ সরিয়ে কেমন
উত্তরণের বুদ্ধ রাখে।

সময় কি সেই সুজাতা
যার বোধই বৃক্ষ হবে
নিবেদনে অর্ঘ্য রাখি,
উত্তরণেই বুদ্ধ হবে।

সমর্পণ সেই নামটি,
রূপালী ছায়ায় মতোন।
নিজেস্ব এক নদীর মায়া,
সমান্তরাল গভীর যাপন।

সে তবে সেই সুজাতা,
যার বুকে স্বর্ণালী ভোর।
কঠোর এক তপস্যায়,
সিদ্ধার্থের রক্ষা কবচ।

আসলে কেউ না হওয়া,
নতুবা গভীর আপন।
গতিময় চলতে থাকা
চক্রব্যুহের এ আবর্তণ।

সময়ের সেই দধীচি
বজ্র যার অলংকারে।
সব ছাপিয়ে এ আয়ুস্কাল
দেখো ঠিক বুদ্ধ হবে।

 

 

 

 

হামিদুল ইসলাম

তুমি এলে

 

 

মন জানান দিচ্ছে বারবার
তবু বাসি কথা সাজিয়ে রাখি বুকের ভেতর

ফুল ফোটে গাছে গাছে
গন্ধ ছড়ায়
পাতার কুটিরে বাস করে আমার স্যাঁতস্যাঁতে দীর্ঘশ্বাস

জানি তুমি আসবে
তুমি এলে না
বৈশাখী নদী থেমে যাচ্ছে আমার গানে ও কবিতায়

তুমি এলে কথা হয়
না এলে মৃত্যু শয্যায় আমি শবের মতো গলে যাই

 

 

সময় 

 

 

আজও দেখি জীর্ণ বসতে কেউ ফিরে আসে
কেউ পাড়ি দেয় নিরুদ্দেশে
বিষণ্ণতা বুক বরাবর

জলের ভেতর ছায়া
অতল দরজায় কড়া নাড়ে সময়

আমরাও দিন গুণি
চাঁদের জোছনায় বিছিয়ে রাখি মায়া
নিঃস্ব রাত বুকে আঁকে জলছবি

লালন ফিরে আসে
চিতার আগুনে পোড়ায় বিদ্বেষের বিবর্ণ রাত

 

 

অসুর 

 

জাত নিয়ে আলোচনা হলে কষ্ট পাই
এখন তো জাতি বিদ্বেষের চর্চার সময় বটে
মানুষ পড়ে না মানুষ কাব্য
কাব্য হয় না মানুষ

জাত চর্চা হলে কিছু গাছে ফুল ফোটে
কোথাও আবার দেখা দেয় খরা
নদীর জলে লাশ। লাশের রক্তে বয়ে চলে নদী

দেবালয়ে আশ্রয় নেয় বিষণ্ণতা
অসুর আজও দাপিয়ে বেড়ায় চারদিক

 

 

 

 

 

গীতা চক্রবর্তী

শিরোনামহীন কবিতা

 


দোদুল্যমান শব্দটিকে বইতে বইতে যে বড়ো ক্লান্ত। কোনোদিন যোগ করতেও পারলাম না
বিয়োগ করতে শিখলাম না।
সবার কাছে বাধ্য বালিকা।
ভেতরের হলাহলে সমুদ্র মন্থন করে নীল হয়ে যাই।

 


ভালোবাসাকে জাহাজ ভেবে পাড়ি দিই ভিন দেশে মাঝপথে ভালোবাসা প্রবাসী হলে।ভাঙ্গাচোরা খোলনলচের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়ায় দুঃস্বপ্ন। তাকে মেরামত করে উঠতে উঠতে সময় পেরিয়ে যায়। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবিতমৃত।

 


সে এক ছেলেবেলা
ভিন্ন রঙের গান চেহারা বদল
আমি আমার মতো তুমি তোমার মতো
জানো কখনও একে অপরের হতে পারিনি
সে যে ছোঁয়া লেগে গেলে স্নানে যেতে হবে গো।
ছবিতে দেখো হুবহু মিল আছে।
এই কথাটাই কখনও কাউকে বোঝাতে পারিনি।
এ ব্যর্থতা আমার।

 


আজ ভেতরটা শুধু কান্নায় ভরা কিছুতেই সরাতে পারছিনা
ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়, একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম
আমি চলে গেলাম । তুমি নিরুদ্দেশ, অবেলার প্রাপ্তি।
ভালো থেকো।

 


কখন ও কখনও অবচেতন মনে জমাট বাসনাকে বাস্পায়িত রূপ দিতেই কলমের শরণাপন্ন, কিছুটা হলেও স্বস্তি।
চেষ্টা খেলায় মাতি। মন তো হৃদয়ের কম্পাস যেদিকে নির্দেশ করে।

 


অনুভবের অতল থেকে খুঁড়ে তুলে আনা অতীতের টুকরো টুকরো জমাট মেঘ যা শব্দে প্রশমিত হয়ে গন্ধরাজ লেবুর সতেজতা দেয় দহনে।

 


অতীতের গহ্বরের আয়তন পরিধির সীমারেখা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ নয় সে উন্মুক্ত অবাধ মন হৃদয়ের কম্পাস সেই পরিচালিত করে যার গতিবেগ বিদ্যুতের চেয়েও গতিশীল।
সংকীর্ণ নয়।

 

 

 

🍁গল্প

 

 

কুণাল কান্তি দে 

লালমোহন মাহুত

 

 

ন্য জন্তু বিশেষ করে হাতির প্রতি মাহুত লালমোহনের অসীম ভালবাসা ছিল। গুরুর নির্দেশ ছিল হাতিকে ছোট্ট থেকে নিজের ছেলের মতন লালন পালন করবি, মানুষ। সেই পথ চলা শুরু। হাতির বাচ্চা অবস্থা থেকে পূর্ণ হাতিকে রূপান্তরিত করে সার্কাসের দলে, বা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দেওয়ার কাজে সুনাম ও যশ হয়েছে।

 

_____________________________________________

জীবনের প্রথম বিমান বন্দরের আধিকারিক উপহার পাওয়া সোনার আংটি, বেশ কিছু অর্থ, বাহারী কাঠের তৈরি করে নিয়েছেন। বিনিময়ে বাড়ি ফেরার সামান্য অর্থম। চোখের কোনে জল।

_____________________________________________

 

ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে ডাক এসেছে। ছুটে গেছে লালমোহন। কখনও লরি, ট্রেনে করেও দক্ষিণ ভারতে গেছে। হাতিকে প্রশিক্ষণ শেষে গন্ত্যব স্থলে পৌঁছে দিয়ে পুরস্কার, স্মারক পেয়েছে।

…গত মাসের ঘটনা। দক্ষিণ ভারত থেকে প্লেনে ফিরছিলাম। একই প্লেনে সহ যাত্রী ছিল লালমোহন। গ্রাম্য দেহাতী চেহারা। এ কথা, সেকথার পর জানলাম দু’জনের গন্ত্যব স্থল উত্তর বাংলায়। আমি শিলিগুড়ি ও ইসলামপুরের গ্রাম শকুন্তলা। জঙ্গলে ওর বাড়ি। হাতি প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরছিল। একরাশ হতাশা, বিষণ্ণতা, মুখভার। অনেক অনুনয়, অনুরোধ করে যা জানলাম, আমি বিস্ময়ে হতবাক। বোবা আশাহত। ইতিবাচক কোনও উত্তর দিতে পারিনি। একমাস পরে বাড়ি ফিরছে। জীবনের প্রথম বিমান বন্দরের আধিকারিক উপহার পাওয়া সোনার আংটি, বেশ কিছু অর্থ, বাহারী কাঠের তৈরি করে নিয়েছেন। বিনিময়ে বাড়ি ফেরার সামান্য অর্থম। চোখের কোনে জল। তার হাহাকারের সমাধান করতে পারিনি। সভ্য মানুষদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ ফুটে উঠছিল। বিমান বন্দরের বাইরে এসে লালমোহনকে সান্তনা বাক্য দিতে পারিনি। 🦋

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

 

শারমিন সুলতানা

পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদটুকু

 

 

নীল আকাশের বুকে
সাদা মেঘের বিচরণ!
চোখ জুড়ানো দৃশ্য
অপরূপ অণুক্ষণ
মুহূর্তেই স্বস্তি পেল
অশান্ত দু’নয়ন।

হাওয়ায় দুলছে গাছের পাতারা
ঠাণ্ডা জলের উপর,
গগন জুড়ে অভিমানী মেঘেরা
পরেছে নীল টোপর।

সন্ধ্যার লালিমায় খুঁজে বেড়াই
খামখেয়ালি ভাবনা যত,
আসমানী রঙ মিশিয়ে দিয়ে
কবিতা লিখি শত শত

মাতাল হাওয়া গায়ে জরিয়ে
হেঁটে গিয়েছি বহুপথ
নিঃস্ব তোমার সাথী হয়ে,
পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদটুকু
তখনো ছিলো দিগন্ত ছুঁয়ে।

 

 

 

 

মোঃ সেলিম মিয়া 

তপ্ত দাবদাহ

 

গাছপালা সব কেটে উজার বিরান মরুভূমি,
আকাশ চুম্বি অট্টালিকা নরকের বাসভূমি!
পাহাড় কেটে ভূমি নিধন ফসলি জমি দখল,
খাল দখলে অসম প্রতিযোগিতা জলবদ্ধতার ফসল।
চোখ থাকতেও অন্ধ দুচোখ কথার বলিতে ধন্য।
কলকারখানার বিষাক্ত বজ্র যান্ত্রিক ধোঁয়ার জন্য,
নিজেই বিপদ আনছি ডেকে বাস ভূমি কি পন্য?
শ্বাস প্রশাসে ঘটায় বিঘ্ন মরণ বিধির ছোঁয়া!
বায়ুমণ্ডল হয়েছে দোষিত তপ্ত গিরির কুয়া।
নদ নদী শুকিয়ে কাঠ সাগরের হুঙ্কার ধ্বনি!
সাগর ফোঁসলে সুনামির আঘাত নরক মৃত্যুপুরি।
অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি উত্তাপের তাপ-দাহ,
বিষিয়ে তুলছে বাস ভূমি সব স্বচেতন হচ্ছি না কেন?
কোথায় আমরা বুদ্ধি জীবি কোথায় জ্ঞানের বীজ?
মানব বসতি হবে নিরচিহৃ এখনি শপথ নিন।
একটি গাছ কাটার আগে দুইটি লাগাই গাছ,
নতুন প্রজন্ম হুমকির মুখে শিক্ষিত মুর্খের নেই যে লাজ?
সাড়া বিশ্বে হোক জাগরণ সবুজ বনায়ন সারি সাজ!

 

 

 

 

কাসেম আলী রানা 

নীল নয়না হরিনী

 

আমি কি শ্রাবণ?
তুমি মেঘের সৈন্য সামন্ত নিয়ে সারাটাক্ষণ,
সারা আকাশ জুড়ে আমার চোখের পাঁপড়ি ভিজিয়ে ভিজিয়ে,
জলধারার ক্লান্তিহীন ঝরো ঝরো মাতমে,
আমাকে বৃষ্টির মতো ভাসিয়ে নেবে সাগর থেকে মহাসাগরে!

আমার শহর জুড়ে এখন দারুণ বৃষ্টি,বৃষ্টিময় অনাসৃষ্টি।
তোমার শহরে ঝলমলে রোদ্দুর। তুমি নরম কোমল মিষ্টি রোদের আরতি সারথি।

তোমার জন্য মুঠো ভরে ছয় প্রহরের বৃষ্টি পাঠলাম। আমার জন্য এক প্রহর রোদ্র দিও।

আমি কতদিন উষ্ণতার কাঙাল হয়ে বিলুপ্ত আরকান গহ্বরে নিমজ্জিত শামুকের মতো বেঁচে আছি।

তুমি যদি মাগন ঠাকুরের কন্যা হতে আমি যদি আদি চম্পক নগরের চাঁদ সওদাগর হতাম, সাত সমুদ্রের প্রমোদ তরীতে ভাসাতাম তোমাকে! ভাসাতাম রমনীয় চন্দ্র জোয়ারের উজানে।

কত জল অবলোকন করেছো তুমি? কতকাল আমাকে ডুবিয়ে রাখবে ল্যাবটারীর ফরমালিন পূর্ণ কাঁচের জারে?

আমাকে ছুঁয়ে দাও, আমাকে মুক্তি দাও, আমাকে উষ্ণতা দাও, আমার এক জীবনে আমি মানুষ হয়ে তোমার নাভীমূলে ডুবে থাকতে চাই।

তুমি আমার নীল নয়না হরিনী প্রিয় রাশিদা বানু,
তুমিই আমার এক জীবনের নীল নয়না হরিনী।

 

 

 

 

মাহাবুব টুটুল 

প্রতিশ্রুতিহীন প্রবাস জীবন

 

 

এলোকেশী দিনগুলো মনে পড়ে
অবাধ্য সময়ের হাতে মন হারায়,
পরিপাটি ব্যস্ততায় উড়াল দেই
ভাবনাহীন কল্পনার দৃশ্যপটে।
না পাওয়ার বেদনা কোনভাবেই
আলোড়িত হয় না হৃদয়ের প্রেক্ষাগৃহ।
এখন অরাধ্য মন এলোমেলো স্বপ্ন
বাধ্য পথিকের ন্যায় ধেয়ে চলে,
ফেলে আসা স্মৃতি,
গহীনে ব্যাথার দহনে
বারবার সুরে সুরে ডাকে।
প্রতিশ্রুতিহীন প্রলাপে মন পুড়ে সর্বক্ষণ,
রেখে আসা, ফিরে দেখার স্মৃতিময়তা
হাতছানি দিয়ে ইশারায় ডাকে বারবার।
সহস্র বাঁধন টুটি, মুহূর্তে ছুটি দিকপ্রাণে
সঞ্চয়ের দাবানল যেখানে জ্বলে সর্বক্ষণ
ভালবাসা, দায়বদ্ধতা, প্রত্যাশায়
পরাজিত প্রেমিক নোঙ্গর তুলে ধরে।

 

 

 

 

লুবনা জাহান 

পিতার স্বাধীনতা

 

 

আমার মুক্তিযোদ্ধা পিতার কালো বাকলে
প্রতিভাসিত হয় স্বদেশ।
তার অমল হৃদয়জুড়ে রয়েছে হিরণ্যদ্যুতি,
নিঃশ্বাসে অহোরাত্র ভাসে বিশ্বাস ও শস্যের খেয়া।
বাবার ভালবাসা বাংলার কোটি তৈলচিত্রে,
শিল্পীর ক্যানভাসে, ইতিহাসের নৈর্ব্যত্তিক
পোড়ামাটির ফলকে আর একটা বৈধ
মানচিত্রের উপর মহাসাগরের আনাগোনায়।
বাবার না আছে মৃগনাভি না আছে পেন্ডুলাম।
সে খোঁজে ঘোলাজলে মাছ ও মাছির আনন্দ
আর পাতায় পাতায় চোখ মহুয়ায় হাওয়ার নাচন।
তার রক্তে মিশে আছে লালন, পাগলা কানাই।
তার মন পাবনে বৈঠা মারে আলাউল আর নজরুল।
আর রবি ঠাকুরের সোনার বাংলায়
আজও সে খোঁজে রাত্রিদিন।

 

 

 

এইচ আলিম 

নীলাত্রিকে চুম্বনের পরে
আমার আর কিছুই থাকে না

 

 

তোমাকে চুম্বনের পরে আমার আর কিছুই থাকে না।
বিকালটা হলুদ হয়ে যায়
সন্ধ্যাটায় রাত,
মধ্যরাতটা ভোর।
সবুজ পাতাটায় প্রজাপতি উড়ে।
চুম্বনের পরে নীল আকাশে ঘুড়ি, সুতা কেটে উড়ে।
গোধূলী বেলায় ধুলো উড়ে।
তোমাকে চুম্বনের পরে কালো ঠোঁটে দাগ উড়ে,
ঘুম হারিয়ে যায়
সকাল হারিয়ে যায়
চায়ের নেশা হারিয়ে যায়
প্রেমিকারা হারিয়ে যায়।
সমুদ্রে ঢেউ উঠে
বৃক্ষরা জেগে উঠে
দোয়েল শিস দিয়ে উঠে।
তোমাকেই চুম্বনের পরে মৃত করতোয়ায় জল উঠে
তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় নীল ঢেউয়ের
তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় মহাস্থান গড়ের
তোমাকে চুম্বনের পরে সমাধান হয় বেহুলার সংসারের
সমাধান হয় কালিদহ সাগরের।
নাীলাত্রি, সত্যি বলতে, তোমাকে চুম্বনের পরে
আমার আর কিছুই থাকে না।
না থাকে ভোরের আলো
না থাকে সন্ধ্যার আভা
দিনদিন হৃদয় ঘরের
জটিল অধ্যায় পেরিয়ে
শুভঙ্করের ফাঁকি নিয়ে
তোমার অপেক্ষায় আছি।

 

 

 

পরাণ মাঝি 

গীতাঞ্জলির ঈশ্বর

 

O.T তেই আছি। একটু বাদে অপারেশন। আজ ২৫ শে বৈশাখের রোদ ডাকছে। মেঘ ডাকছে।

কতবার বললাম- ডাক্তার! অপারেশনের আগে আমি একবার শান্তিনিকেতন যাবো। ২৫ এর গান শুনবো আর গাইবো – “ও আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”।
হল না। টেনেহিঁচড়ে জোর করে মর্গের কাছাকাছি স্বর্গে আনা হল। কাউকে কোনোভাবেই বোঝাতে পারিনি –  শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত না শুনলে মরেও শান্তি পাবো না-র দলে আমি।

মৃদুজ্ঞানে অ্যানেস্থেশিয়ার ঘোরে। এবার যন্ত্র আর মানুষের লড়াই। তবু গীতাঞ্জলির ঈশ্বর কে দেখতে পাচ্ছি। ভয়ডরহীন জননীকেও দেখছি। কত আদর আমার সর্বশরীরে ছড়ানো। সে সময় গুনছে। বাড়ির লোক নামতা পড়ছে। টাকা, টাকা। টাকা টু দি পাওয়া… ইত্যাদি

ডাক্তার অসুখ সারাবেন শরীরাংশ ছিঁড়ে আর আমি মন সারাচ্ছি- শান্তিনিকেতন যাবো বলে। যন্ত্র বলছে-  ধীরে বাপ…

আমি তখন তুমুল বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে দল বেঁধে নদীর বাঁধ থেকে হড়কা খেয়ে জোয়ারের জলে ভাসছি। আর এক মাতাল বলছে- বল্ বাপেরা, আমার সাথে বল্ -” আমরা করবো জয়, নিশ্চয়…”

 

 

 

 

গোলাম কবির

রবীন্দ্রনাথ

 

 

রবীন্দ্রনাথ
আমার সকাল সন্ধ্যায়!
রবীন্দ্রনাথ
আমার নিবিড় জ্যোৎস্না কিংবা
তিমির অন্ধ রাত্রিরে
একলা জেগে থাকায়!
রবীন্দ্রনাথ
আমার সারাদিন সারাবেলায়!

রবীন্দ্রনাথ
আমার দুরন্ত শৈশবের
আনন্দ উচ্ছল দিনগুলোতে !
রবীন্দ্রনাথ
আমার যৌবনের প্রেম ও
অপ্রেমের দহনকালে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার বার্ধক্যে এসে
আত্মার শুভ্রতা অনুসন্ধানে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার সকল বয়সেই!

রবীন্দ্রনাথ
আমার গ্রীষ্মের বৈশাখী ঝড়ে
কিংবা প্রখর তপ্ত দিনে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার সঘন গহন
বর্ষণ মন্দ্রিত দিনে
মেঘেদের লুকোচুরি কিংবা
খেলা ভাঙার খেলায়!
রবীন্দ্রনাথ
আমার শরতের মেঘমুক্ত আকাশে
নদী তীরে কাশবনে ঢেউয়ের দোলায়!
রবীন্দ্রনাথ
আমার হেমন্তের শিশির ভেজা সন্ধ্যায়
শিউলির ঘ্রাণে মাতাল প্রহরে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার শীতের হাওয়ায়
নাচন লাগা আমলকির বনে বনে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার আহা আজি এ বসন্তের দিনে!
রবীন্দ্রনাথ
আমার এই বাংলার সকল ঋতুতেই!

 

 

 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

আর একবার আসুক ২৫শে বৈশাখ 

 

আজ পঁচিশে বৈশাখ-
আমার প্রাণের ঠাকুর
রবি ঠাকুর তোমার জন্মদিন।
তোমাকে ঘিরে তোমার পুণ্যবাণীতে
বাঙালির আবেগ জড়িয়ে
চেতনার পরতে পরতে।
যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক তোমার মানবিকতা
ভরসা জাগায়, প্রাণের মুকুল প্রস্ফুটিত হয়
তোমার জন্মদিন নতুন করে বাঁচতে শেখায়।

তবুও বাঙালি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে
মুখ থুবড়ে পড়ে গলিগুজিতে।
যখন দুর্বৃত্তের দুর্বৃত্তায়ন কেড়ে নেয় ক্ষমতা
দুর্নীতির করাল ছায়া নামে গোটা দেশে
রাহাজানি, শ্লীলতাহানি,নৈতিক অবক্ষয়
বেকারত্বের অভিশাপ মাথায় নিয়ে মাদকাসক্ত লক্ষ্যভ্রষ্ট যুব সমাজ তলিয়ে যায় পাঁকে।

এসব দেখে আঁতকে উঠি আর ভাবি-
এই অমানবিকতার রাশ টানতে,
দুর্দিনের সাইরেন কাটিয়ে-
অন্ধকারের কালো পাহাড় সরিয়ে
আলোর ছটায় ভরিয়ে দিতে,
শ্রাবণের ধারার মতো ঝরে পরতে-
বাঙালি জাতির পুনর্জীবনে,
তুমি ফিরে এসো-
হে, রবি ঠাকুর ২৫শের বৈশাখে।

 

 

 

 

বাণীব্রত

নিরালায় জলছবি 

 

 

সঙ্গী হোক গহীন পথের ভালোবাসা,
খুশির গাঁঙে জোয়ার লাগুক
গোধূলির রাঙানো সাঁঝ, আঁকুক জয়টীকা।

কুয়াশার মায়াবী ললাটে শীতের চুম্বন
কবরীতে জংলী ফুলের মালা
চোখে চোখ রেখে  হাসির খেলাঘর।

ভালোবাসা যেন এক পাড় ভাঙা নদী
কচুরিপানার মতো ভেসে যাওয়ার ক্ষণে
নিরালায়  আঁকে জলছবি।

কবুতরের ডানায় শান্তির আহ্বান
ভাঙা একতারাও বাউলের সুর তোলে
কোন এক খেই হারানো সকাল-বিকেল-সাঁঝে।।

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment