Sasraya News

Thursday, February 13, 2025

Sasraya News, Literature Special, May 05, 2024।। Issue 15।। সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল। মে ০৫,২০২৪। সংখ্যা ১৫

Listen

সম্পাদকীয়

 

সাহিত্য ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন সারা বিশ্বে। এটা আমাদের কম বেশি সকলেরই জানা আছে। সাহিত্য আছে বলেই  আমাদের প্রতিটি জীবনে একটি ছন্দময় গতিবিধি লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্য সামাজিক সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখে। বাঁচিয়ে রাখে আমাদের বিবেক, বোধ, কামনা, বাসনা, স্নেহ, প্রেম প্রভৃতি মূল্যবান বিষয়গুলিকে। 🦋

 

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

অরুণ কুমার চক্রবর্তী

আলোর দরজা

 

 

ধূসর অস্তিত্বের চারপাশে গুনগুন অন্ধকারের গান, গানের ঢেউ, ফেনিল দাঁতে, বাতাস ছিঁড়তে ছিঁড়তে, জলীয় লবণ আর জলজ শ্যাওলার জমাট সবুজ গভীরতায় এলোমেলো অন্ধ হাতের প্রসারিত মুদ্রায় খুঁজতে খুঁজতে স্বজন হত্যার নেশা আঙুলে থেকে ক্রমশঃ ছড়িয়ে ছড়িয়ে শেকড়ে, কাণ্ডে, ডালে, লতায়পাতায় মথিত বিষের রঙে রঙিন জয়োৎসব, সেই ওপর থেকে নীচুতলায়, সিঁড়ি থেকে সিঁড়িতে গড়াতে গড়াতে একটি দরজার কাছে অস্থির…

আমাদের কারুর কাছেই রয়েছে দরজা খোলার মন্ত্র, স্তবগান
আলোর চাবি…

 

 

 

রেহানা বীথি

শোকের খণ্ডচিত্র

 

 

আত্মহননের সুফল জানাতে জানাতে
তুমি আচ্ছন্ন হয়ে গেলে গভীর শোকে
যেন তুমি নিজেই হন্তারক
মুষড়ে পড়লে এমনভাবে

শোকগ্রস্ত ক্লান্তিতে
আমি প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম
তোমার কম্পমান স্বপ্নশরীর যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলল
শব্দে জেগে উঠলাম
দেখলাম, জানালায় ঝড়

উন্মাদ হয়ে ছুটলাম
জানালায় একটি কাগজ ঝুলিয়েছিলাম
লেখা ছিল-
“প্রীতি নাও
প্রীতিতে প্রফুল্ল হও, গন্ধরাজ ফুটবে।”

কাগজটি কী ঝড়ের তাণ্ডবে
ছিন্ন হয়ে উড়ে গেল?

তুমি যে এখনও বিড়বিড় করে গাইছ আত্মহননের সুফল
ক্রমে জড়িয়ে যাচ্ছ
বিচিত্র শোকের খণ্ডচিত্রে

অকারণে!

 

 

 

 

 

কুন্তল দাশগুপ্ত

এলোমেলো

 

 

ঘুমোয় দিঠি।

চিঠি,
যায়, তবু যায়…
পায় কী না পায়
তা কেউ
হরফের ফাঁকে ফাঁকে
এ কথা তাহার
মনে কোনোবার
তোলেই না ঢেউ
কেউ
যদি নাই পড়ে
তারে,
তবে তার
জন্মই সার।

প্রতিবার
এই-ই জেনে
আর মেনে
চুপকথা হয়ে
প্রতীক্ষা বয়ে
ছুঁয়ে ঘুমের নালিশ
আঁকড়ে বালিশ
থাকে পড়ে।
ঘুম ভাঙানিয়া ভোরে
পেলেও উপেক্ষা ঢের…
তবু, তার আনন্দ জন্মের

এই অবেলায় এসে,
স্নানে যেতে যেতে মনে হয়—
জন্ম, হ্যাঁ জন্মই এক দীর্ঘস্থায়ী মৃত্যুর নামান্তর।

 

 

 

 

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল 

সম্ভাবনার আরেকটা দিন

 

[উৎসর্গ:আমার জন্মদিনকে ]

১.
উদ্দাম রৌদ্রতৃষ্ণা ভেঙে এগিয়ে আসছে, ১৮ই বৈশাখ…
অযাচিত এক আগন্তুকের আবির্ভাবের দিন

সেদিনও ঝলমলে রোদ ছিল
আকাশ জুড়ে ছিল বৃষ্টি-মেয়েদের আনাগোনা
মায়ের কথায়, কালবৈশাখীর উদ্দাম দুপুর

 

২.
পৃষ্ঠা উল্টে অন্তরালে চলে যাচ্ছে, ৫১টি বছর
মা আজ পরবাসী, পৃথিবীর সুসজ্জিত উদ্যান ছেড়ে,
রয়ে গেছে অকৃত্রিম তাচ্ছিল্যের প্লাবন

প্রত্যাখ্যাত হতে হতে আমার এখন
প্রান্তিক বিকেল

পৃথিবীর শেষ উজাগর আমি…
ভেঙে পড়া বৈশাখের উত্তপ্ত পৃষ্ঠার নিচে
সাজাচ্ছি- ১৮-ই বৈশাখের সম্ভাবনার রুগ্ন দিন

 

 

 

 

🍁গল্প 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী 

শৈশবের বেড়ি 

 

 

জ অফিসে কিছুতেই কাজে মন বসছে না উর্মীর। সন্তানকে ঘিরেই তো ওর যত স্বপ্ন। মহা সমস্যায় পড়েছে উর্মী একমাত্র সন্তানকে চোখে হারায়। কাজের চাপে ছেলের প্রতি হয়তো সবসময় ধ্যান দেয়াটা সম্ভব হয় না। বাড়িতে আয়া আছে। কিন্তু আজ বুঝতে পারে ছেলে দিনকে দিন কেমন যেন একটা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ও মন খুলে কারও সঙ্গে মিশতে পারে না। কেমন যেন সব সময় চুপচাপ মনে হয়। কোনও কথা বোধহয় তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় অথচ সে কাউকে মন খুলে সে কথা বলতে পারে না। কোথায় যেন একটা শূন্যতা কাজ করছে। আজ কয়েকদিন ধরেই এই বোধটাই কুকুরতাড়া করে বেড়াচ্ছে। ছেলের সঙ্গে তার কিছুটা দিন একসঙ্গে সময় কাটানো দরকার। আসলে জীবনের সব বয়সের একটা বৈচিত্র আছে। কিন্তু জানলে কি হবে। সে জানে, এই বয়সে বৈচিত্রের সঙ্গে
সেটাই করা উচিত কিন্তু বাস্তব জীবনে গড়ার তাগিদে অতলে তলিয়ে যায় সে সবকিছু।হয়তো সেই শৈশবের নানা রঙের দিনগুলি ভালো করে ডানাই মেলতে পারল না। আরজুরও সে রকমই কিছু হচ্ছে।
“কিরে উর্মি কী এত আনমনা হয়ে ভাবছিস?”
“পরাগদার কথা শুনে ধাতস্থ হল।”
“কই কিছু না তো পরাগদা।”
‘না তোকে দেখে মনে হল, তাই বললাম। ঠিক আছে কাজ কর।”

 

_____________________________________________

শুধুমাত্র ছেলেটার জন্য উর্মী অনেক সময় চুপ করে থাকে। কিন্তু এক্সট্রিম পর্যায়ে গেলে উর্মীও ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গত রাতের কথা ভুলে, সে আরজুর কথাই ভাবছে। কী করছে তার ছেলেটা কে জানে!

_____________________________________________

 

অফিস থেকে সে আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে। বসকে অনেক করে রাজি করিয়েছে, তাকে ক’য়েকটা দিন ছুটি দিতেই হবে। কিন্তু অফিসেরও প্রচুর চাপ, শেষ পর্যন্ত অরিন্দমদা রাজি হয়েছেন ছুটি দিতে। তাই সেই খুশিতে সে বাড়িতে ছেলের জন্য একটা খুব সুন্দর কেক নিয়ে এসেছে। আরজু কেক খেতে খুব ভালবাসে। বেশ কালারফুল কেক।
উর্মী ভাবছে আরজু ভীষণ খুশি হবে। অফিস থেকে বেরনোর সময় সে ভাবছে, কত তাড়াতাড়ি আজকে ছেলের কাছে পৌঁছাবে। যদি দু’টো ডানা থাকত পাখির মত উড়ে কখন চলে যেত। উফ্ রাস্তায় তেমনি জ্যাম।
রাকেশকে একটা ফোন করে নিই। মনে মনে ভাবল।  পরক্ষণেই না না রাকেশকে ফোন করে কি হবে? ওর তো ছেলের প্রতি কোনও ধ্যানই নেই। আজকাল কেমন যেন একটা হয়ে যাচ্ছে। রাত করে অফিস থেকে ফেরে, সব সময় ড্রাঙ্ক হয়ে ঘরে ঢোকে। তার যে ছেলে আছে, সে সম্পর্কে তার কোনও আকর্ষণ নেই।
ফোনটা করতে গিয়েও উর্মি ফোনটা করতে পারল না। মনে মনে ভাবছে সিঙ্গেল মাদারের মতোই তো সে তার ছেলেকে বড় করছে। তার বাবার ভূমিকা কতটুকু? এই নিয়ে কতবার তাদের রাগারাগিও হয়েছে। রাত্রিবেলায় এত জোরে জোরে চেঁচামেচি হয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত উর্মী থেমে গেছে। কি হবে রাকেশকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে! ও-তো কোনও কথাই শুনতে চায় না। আজকাল কানাঘুষো একটা কথা শুনতে পাচ্ছে অফিসে ওরই কোনও কলিগের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। এগারো বছর সংসারে তাদের ১০ বছরের আরজু।
গত রাত্রেই তো এত অশান্তি… এত অশান্তি শুধুমাত্র অফিসের অরিন্দমদার ফোন আসাতে। ফোনটা রিসিভ করেছে তখন থেকেই গজগজ করেছে রাকেশ। শুধুমাত্র ফোনটা ছাড়তে বাকি। রান্নাঘরে ঢুকে ছেলের জন্য খাবার তৈরি করছিল আর ঠিক তখনই রাখে একটা বাজে মন্তব্য করে,

“ছেলের জন্য আদিখ্যেতা হচ্ছে, ওদিকে দিব্যি চুটিয়ে প্রেম করছ! আর বাড়িতে  সতী-সাবিত্রী সেজে বসে আছ?
“মুখ সামলে কথা বলবে রাকেশ। তোমার মতন
নই। তোমার কথা কেউ জানে না ভেবেছ! তোমার অফিসে শিলার কথা কেউ জানে না ভাবছ? তাই সপ্তাহখানেক পর পর তুমি চলে যাও ট্যুরের নাম করে। কোথায় যাও তুমি কী ভাবছ আমি তোমার কোনও খবর রাখি না?”
রাকেশ এই কথা শুনে উগ্রমূর্তি ধারণ করে রান্নাঘরে এসে উর্মীর চুলের মুঠি ধরেছে। উর্মীও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয়। হাতের কাছে ছিল রান্না ঘরের খুন্তি। সেটা দিয়ে দুম-দারাক্কা দিয়েছে।”
এটাকে কি আর দাম্পত্য জীবন বলে! রোজই চলছে চুলচেরা অশান্তি। শুধুমাত্র ছেলেটার জন্য উর্মী অনেক সময় চুপ করে থাকে। কিন্তু এক্সট্রিম পর্যায়ে গেলে উর্মীও ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গত রাতের কথা ভুলে, সে আরজুর কথাই ভাবছে। কী করছে তার ছেলেটা কে জানে!
না, ওর ন্যানিকে একটা ফোন করি।
উর্মী ফোনটা বের করে নম্বর টিপল।
রিং হচ্ছে কোথায় গেল ন্যানি?
আবার রিং করল… হ্যালো… ”
“হ্যালো ন্যানি… ‘’
“কে?”
“আমি বৌদি বলছি।”
“ও বৌদি, হ্যাঁ বলো।”
“আরজু কি করছে?”
“ওই যে জানলার কাছে বসে আছে।”
“কিছু খেয়েছে?”
“হ্যাঁ অল্প ভাত খেয়েছে?”
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
“আরজু মাম মাম ফোন করেছে। কথা বলবে?”
উর্মী ন্যানির কথাগুলো শুনছে আর ভাবছে বোধহয় তার ছেলে এক্ষুনি তার সঙ্গে কথা বলবে। একটা অধীর অস্থিরতা কাজ করছে ভেতরে, ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
“নাও আরজু সোনা, মাম্ মাম এর সাথে কথা বলো।”
“না গো বৌদি ও বোধহয় কথা বলবে না।”
“ঠিক আছে তুমি রাখো, আমি বাড়ি ফিরে ওর সাথে কথা বলে নেব ।”
উর্মী ভাবছে তার স্বামী তো পরকীয়ায়
লিপ্ত। ছেলেকে তার থেকে দূরে সরিয়ে দিলে হবে না। যে করেই হোক ছেলের সমস্যাগুলো বুঝতে হবে। দরকার হলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
ইতিমধ্যে জ্যাম কেটে গেছে গাড়ি চলতে শুরু করেছে কিন্তু সেই চলাটাকে মনে হচ্ছে যে গাড়ি চলছেই না ।আসলে মনটা এতটাই উদভ্রান্ত
হয়ে আছে।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
বাস থেকে নেমে হাঁটা পথে ১০ মিনিট। ১০ মিনিটের রাস্তাটাকে ও-মনে হচ্ছে যেন আজকে দশ ঘন্টা লাগছে। কেন এরকম মনে হচ্ছে। হঠাৎই পেছন থেকে কে যেন তাকে ডাকল
“অ্যাই উর্মী অ্যাই…”
উর্মী পেছনে ফিরে দেখল মনোরমা।
একটু অবাক হয়ে গেল মনোরমা এই রাস্তায়!
তবুও মনের গোপন কথাটাকে জানতে দিলো না।
“বাববা কি আনমনা হয়ে হাঁটছিলি রে।”
“তোকে তো ভূত দেখার মত দেখছি, হঠাৎ তুই এখানে।”
”আর বলিস না, একটু এন্টালি থানাতে এসেছিলাম।”
‘’কেন?”
“কেন আবার, যা হয় উঠতি বয়সের ছেলেদের।” বাইকের নেশা। আর কি! গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে।”  গাড়ি থানায় জমা হয়েছে তাই …।”
“তো তোর ছেলে ঠিক আছে তো।”
“হ্যাঁ, ছেলের সামান্য একটু লেগেছে।”
উর্মী ভাবল ছেলের সামান্য লেগেছে, ছেলেকে রেখে গাড়ি নিতে এসেছে। বাপরে।
“তা তোর ছেলের খবর কি?’’
“ওই আছে।”
“আছে মানে?”
“আরে আমার ছেলেটা ইদানীং একটা সমস্যা লক্ষ্য করছি। ও-ঠিক করে মন খুলে কারও সাথে মিশতে পারছে না। কেমন একটু চুপচাপ হয়ে গেছে।”
মনোরমা একটু কৌতুহলী হয়ে বলল, “অবহেলা করিস না। ডাক্তার দেখা।”
“তোর জানাশোনা কোনও ভাল ডাক্তার আছে?”
হ্যাঁ আছে তো, ডক্টর সেন।”
“কোথায় বসেন উনি?”
“নিউমার্কেটের কাছেই। তবে সানডে বসেন হাওড়া ময়দানে।”

“তোর সানডে হলেই তো ভালো হয় নাকি?” 

“হ্যাঁ।”
“তবে আমি ছেলের জন্য ছুটি নিয়েছি ক’দিন।”
“তাহলে তো ভালোই হল কালকেই ডাক্তারের ডেট আছে। দেখাতে পারিস নিউমার্কেটেই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে তুই আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ঠিকানাটা টেক্সট করে দিস।”
“ওকে’।”
“চল না, আমার বাড়ি তো এখানেই।”
“হ্যাঁ, সে তো আমি জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে আর যেতে পারব না রে, এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে।
ঠিক আছে অন্য কোনওদিন।”
“আচ্ছা।”
“ভালো থাকিস।”
“তোরাও।”
মনোরোমার কথাগুলো কানে বাজতে লাগল।”
কলিং বেল টিপল।
“ন্যানি এসে দরজা খুলল।”
আগে কলিংবেলের আওয়াজ শুনলেই আরজু এসে দরজা খুলত। ইদানীং আর সে-সব করে না।
“ও কিছু খেয়েছে?”
“হ্যাঁ সামান্য দুধ খেয়েছে।”
“কি করছে?”
“ওই যে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।”
উর্মী ছেলের দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশ রুমে গেল।
ফ্রেশ হয়ে এসে কেকটা বের করল তারপর ছেলের কাছে গিয়ে কেকটাকে দেখাল।
“দেখো আরজু সোনা, তোমার জন্য কি সুন্দর একটা কেক এনেছি।”
আরজু কেকটা দেখে গাড়িটা থেকে নজরটা কেকের দিকে আনল তারপর আস্তে আস্তে মায়ের কাছে এসে দাঁড়াল।
উর্মী খুব খুশি হল।
আরজুর চোখে মুখে কৌতুহল। আসলে বোঝাতে চাইছিল আজকে তো ওর জন্মদিন নয়, তবে কেক কেন!”
উর্মী সেটা বুঝতে পেরে বলল, “হ্যাঁ আজকে তোমার জন্মদিন নয়। কিন্তু আজকে আমরা কেক দিয়ে সেলিব্রেট করবো। তুমি কেক খেতে ভালবাসো তো।”
ছেলের চোখে মুখে একটা আহ্লাদীপনা খুশির হাওয়া লক্ষ্য করল।
“ন্যানি কেকটা টেবিলে সাজাও।”
“আরজু সোনা কেক কাটো।”
“এবার তুমি খাও।”
আরজু কেক কেটে মাকে একটু খাওয়াল, ন্যানিকেও খাওয়াল।
এরমধ্যে ফোনে মেসেজ ঢুকল। আগামীকাল ডাক্তার দেখাতে হবে। খাওয়া দাওয়ার পর বেশ কিছুটা সময় আরজুর সঙ্গে কাটাল উর্মী। বুঝতে পারল, সত্যিই সমস্যার মধ্যে আছে। ভেবেছে আরজুর ব্যাপারটা নিয়ে রাত্রে রাকেশের সঙ্গে কথা বলবে। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে এখনও রাকেশের দেখা নেই।
আর ফোন করতে ইচ্ছে করে না। ফোন করলেই সব সময় উল্টো-পাল্টা কথা বলে। দাম্পত্য জীবনে এত সমস্যা! তার মধ্যে আবার ছেলেটার ভেতরেও যদি সমস্যা দেখা দেয়! তাহলে কার জন্য সে ভাববে? না, না ছেলের সমস্যাগুলোকেই গুরুত্ব দিতে হবে। এই ভেবে উর্মী শুয়ে পড়ল। সকাল হলে রাকেশকে রাকেশের ঘরে দেখতে না পেয়ে ন্যানিকে জিজ্ঞেস করল,  “তোমাদের দাদাবাবু ফেরেনি?”
“না বৌদি।”
আর কোনও কথা বলল না উর্মী।
আরজুকে সকাল সকাল ঘুম থেকে তুলে দিল ওকে ব্রাশ করিয়ে কিছু খাবার খাইয়ে বেরিয়ে পড়ল ডাক্তারের উদ্দেশ্যে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে উর্মী সব কথা খুলে বলল। ডাক্তার দু’চারটে ওর সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে পারলেন ওর ভেতরে একটা একাকীত্ব কাজ করছে। এটা একটা সমস্যা। তাদের একাকীত্বের মনোভাব। আসলে সঠিক সময়ে কাউকে পাশে না পাওয়া।
“আচ্ছা একটা কথা বলুন তো ম্যাডাম সবসময় কী ছেলেকে বইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রাখেন।”
“কী করব?”
“এটাই তো একটা সমস্যা। আপনারা মা-বাবারা মনে করেন কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যায় একজন সঠিক ব্যক্তির পথ চলার পাথেয় হতে পারে। আর এখানেই সমস্যা। কখনও ছেলেকে নিয়ে খোলা মাঠ, খোলা আকাশ দেখিয়েছেন?”
ও-নিরুত্তর।
“আসলে কি জানেন, ছোট থেকেই আপনারা এদের পায়ে বেড়ি পড়িয়ে দেন। একে তো নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। আজকাল সেই যৌথ পরিবারের মেলামেশা কোথায় পাবে? আবার সব জায়গায় তাদের না নিয়ে যাওয়াটাও একটা সমস্যা। আপনারা ছোট থেকে আলাদা ঘর পড়ার জন্য আলাদা একটা জগৎ তৈরি করে নিজেদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। তাদের কি সমস্যা, তাদের কি চাহিদা, সে সম্পর্কে তো একটু সচেতন থাকতে হবে। বিকেলবেলায় খেলতে না দেওয়া, বেশিরভাগ কথায় তাদের গুরুত্ব না দেওয়া। আবার কোনও বিষয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা সেটাও ঠিক না।”
উর্মীর বলার জায়গা থাকে না ডাক্তারবাবু কথাগুলো তো ঠিকই বলছেন।
“আর একটা বিষয় আপনাকে সতর্ক করে দিচ্ছি বয়ঃসন্ধিকাল যখন পড়বে, সেই সময় আরও বেশি সচেতন থাকবেন।”
উর্মী বয়ঃসন্ধিকালটা নিয়ে সত্যিই চিন্তিত। এক্ষেত্রে তো ওর স্বামী একটু সময় দেয় না। ছেলেটা যেন একটা ওর কাছে বাড়তি বোঝা। শুধু ছেলে কেন উর্মীও তো তাই! একে অপরের কাছে বোঝা। একজন পুরুষ কি যে চায়, একজন নারী থেকে? গড নোস। একজন নারী সংসার সামলাচ্ছে, চাকরি-বাকরি করছে, তাতেও যেন মনের যোগ্য পাত্রী হয়ে উঠতে পারল না। ভেতরে ভেতরে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিল। তারপর বলল, “কি রকম ডাক্তার বাবু।”
“মনে রাখবেন এই বয়সে শিশুরা তারা নিজের একটা অধিকার পেতে চায়। তৈরি হয় তাদের নিজের মতামত প্রদর্শনের ক্ষমতা। এই সময়ে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখা ঠিক নয়।”
“সেটা তো ঠিকই।”
“বাই দ্য ওয়ে, ওর বাবা কতটা সময় দেন ?”
ও বলে, ওর বাবার সময় কোথায়! সারাটা দিন অফিস। বাড়ি ফিরে এসে ক্লান্ত কিম্বা অফিসের কাজই বাড়িতে শুরু করে দেয়… তারপর আবার বাচ্চা…।”
ডাক্তারবাবু ঘাড় নাড়েন তারপর বলেন, “সব ঠিক আছে কিন্তু এগুলো কার জন্য? সবই তো আপনাদের সন্তানের জন্য। এর মধ্যে থেকেই সময় করে বেছে নিতে হবে। আর শুনুন, এই সময় কিন্তু ছেলে-মেয়েরা ভীষণ জেদীও হয় এটা মানেন তো?”
উর্মী ঘাড় নাড়েন তারপর বলে” হ্যাঁ ইদানীং দেখি একটা চাপা রাগও তৈরি হচ্ছে ওর ভেতরে।”
“এক্সাক্টলি এটাই বলতে চাইছিলাম…” ডাক্তারবাবু বললেন।
“আর অধিকাংশই রাগের কারণগুলো কিন্তু আমরা নিজেরাই তৈরি করি। কখনও দেখবেন, ছোট থেকে ওদেরকে মোবাইলের প্রতি একটা নেশা তৈরি হয়। কেন হয় বলুন তো? আপনি নিজেও জানেন না কিন্তু অজান্তে হয়ত আপনি তার পেছনে বা আপনারাই তার জন্য দায়ী বা আমরাই তার জন্য দায়ী। বাচ্চা খাচ্ছে না আপনি ব্যস্ত মানুষ আপনার সময়টাকে সাশ্রয় করার জন্য বাচ্চাকে ফোনটা দিয়ে দিলেন। ও-ফোনের ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর আপনি কাজ করছেন বাচ্চা এসে সমস্যা তৈরি করছে, সেই সময় আপনি তার হাত থেকে বাঁচার জন্য মোবাইল দিয়ে
দিচ্ছেন। এই যে, এই যন্ত্রটা কীভাবে ওর কল্পনার শক্তিটাকে কেড়ে নিচ্ছে, ভাবতেও পারবেন না!”
উর্মী শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
“পরিশেষে কি হয়, আপনি মোবাইল দেবেন
না। তখন তার জন্য রাগ হয়। কিংবা এমনও হয় সারাদিন পর আপনারা দু’জনাই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলেন। বাচ্চার তো কিছু চাওয়া পাওয়া
থাকে। খেলাটা করবে কার সাথে? এখন তো আর সেই একান্নবর্তী পরিবার নেই। যে সে খেলবে। ঠাকুমা গল্প শোনাবে বা দাদু গল্প শোনাবে। হয়ত বা ঠাকুরমা দাদু আছে তারা হয়ত বৃদ্ধাশ্রমে। নয়ত তারাও টিভি নিয়ে বসে আছেন। ফলে কি হয় অটোমেটিক্যালি সেও এইভাবে এইসব যন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। আর এখান থেকেই তৈরি হয় তার সার্বিক বিকাশের অক্ষমতা।”
উর্মী ভাবছে ডাক্তারবাবু সবই ঠিক কথা
বলছেন। সত্যিই তাই। ও- বুঝতে পারে আরজুর ভেতরে কোথাও একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে।
ডাক্তারবাবু অনর্গল বলেই যাচ্ছেন সমস্যাগুলো সম্পর্কে। তারপর বললেন, “তাদের ভেতরে তৈরি হয় এরকম শূন্যতা। যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে চূড়ান্তভাবে প্রভাব ফেলে। প্রয়োজনে হয়ত ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি কিন্তু অধিকাংশ সময় তারা সেই সকল কথা একটু ভরসা পেলেই বলে দেয়। কারণ এই বয়সেই তারা হাত বাড়ায় এমন এক বন্ধুর খোঁজে, যাকে সে সকল কথা বলতে পারে, বিশ্বাস করতে পারে।”
সত্যিই তো, সেই বন্ধু কোথায়? বাড়িতে যতটুকু থাকে ন্যানির কাছেই থাকে।
“আপনি জানেন ম্যাডাম, এই বয়সে মায়ের ভূমিকা সব থেকে বেশি। আর এই জন্য মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
“তাহলে আমি কি করব বলুন?”
“সবার আগে আপনি চেষ্টা করুন আপনার সন্তানের একজন ভালো বন্ধু হওয়ার। এই সময় শাসন নয়। সমস্যাগুলো জানতে হবে কথার ছলে। অযথা গায়ে হাত তুলবেন না। কারণ এই সময় প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধ তাদের ভেতরে থাকে। আর শুনুন,  ওদের মতামতটাকে গুরুত্ব দেবার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে অল্প বিস্তর বাড়ির কাজে লিপ্ত করুন। নতুন কোনও বিষয়ে আগ্রহ দেখালে এড়িয়ে না গিয়ে যথাসম্ভব তাদের প্রশ্নের মার্জিত ভাবে উত্তর দিন।”
‘’ওকে।”
“আর একটা ইম্পর্টেন্ট কথা শুনুন, এই শৈশবে শিশুর পায়ে নিয়মের বেড়ি পড়াবেন না। ছেলেকে অনেক বেশি সময় দিন মিসেস রায়। সন্তানের জন্য যা করবেন, সেটাই সোনার ফসল হয়ে ফিরে আসবে।”
উর্মী বলল, “চেষ্টা করব আপনার কথাগুলো মানার।”
ডাক্তারবাবু হাসলেন তারপর বললেন, “হ্যাঁ চেষ্টাটা করুন।’
উর্মি ডাক্তারবাবুকে নমস্কার জানিয়ে বাচ্চা নিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসলো। আর মনে মনে ভাবল,  তার একটা কঠিন সংগ্রাম শুরু হবে। এই লড়াই এর ময়দানে তাকে জয়ী হতেই হবে। তারপর ছোট্ট আরজুর মনের কষ্টগুলো বোঝার চেষ্টা করল। সত্যিই তো, ওদের শৈশব কত কষ্টের! না আছে খেলার মাঠ, না আছে উদার আকাশ, না আছে সবুজ গাছপালা, না আছে একান্নবর্তী পরিবারের দাদা, ভাই-বোন, দাদু ঠাকুরদা, জ্যাঠা, কাকু।
ডাক্তার বাবু বললেন, “ম্যাডাম শৈশবে শিশুদের
বেড়ি পড়িয়ে রাখবেন না এতে ওদের স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষমতা হারিয়ে যায়।” উর্মি ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে ছেলের হাত দু’টো ধরে ভাবতে লাগল,
এত বড় পৃথিবীতে তার সন্তানকে নিয়ে বাঁচার লড়াই, প্রকৃত মানুষ করার লড়াই। এই লড়াইটা যে বড্ড কঠিন কিন্তু লড়াইটা যে করতেই হবে তাই নিজের মন শক্ত করে লড়াইয়ের ময়দানে নামার জন্য প্রস্তুতি নিল। আরজুকে হাত ধরে গাড়িতে তুলে বলল, “আজ আমরা বেড়াতে যাব। তুমি যাবে তো?”
আরজু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আরজুরও মনে হল, ওর মা যেন ক্রমশ ওর মনের কথাগুলো বুঝতে পারছে। কেমন একটা মৃদু হাসি খেলে গেল ওর ঠোঁটে। তারপর নিজের গলাতেই উর্মি গান গাইতে লাগল, “ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস, ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস। ও ছেলেরা খেলা ভুলে শুধুই কেন পড়তে যাস…” মায়ের এই গান শুনে আরজু হো হো হো করে হেসে উঠল। উর্মী ছেলেকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে গান করছে “ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস, ডাকছে মাঠের সবুজে ঘাস…।”🦋

 

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

 

রোকসানা রহমান

কোন গুপ্ত দ্বীপাধারে

 

 

অনিমেষ
কত কথা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে আমার কন্ঠে
তবু কেন যে স্মৃতিময় স্বপ্নরা ঘুরে চারপাশে
হৃদয়ের স্তোত্রপাঠ বারবার তোমাকে ডাকে
খুঁজে পদ্মার শীতল অবগাহনে।

একি কান্না- না পিপাসা…!?
তবুও মাথার উপর জ্বলে সপ্তর্ষি না কি দেবতা
রুপে মহাকাল।

ঈশ্বর তুমি আমাকে একফালি রৌদ্র তপ্ত আকাশে রক্তাভ এক ভূমি দেখিয়েছিলেন
তুমি কি ছিলে অনিমেষ…!?
দেখেছিলাম ক্রুশবিদ্ধ যীশুর নিরবতার ম্লান হাসি
মানব প্রেমের জ্বালা যন্ত্রনার,ভয়াবহ ইতিহাস।

তবুও কেন মনে পড়ে,বন্ধ্যা শ্রাবণে মুঠো মুঠো বীজ বুনেছিলে বহমান নদীর বক্ষে আবেগে এনেদিতে প্রথম ভোরের সূর্যদ্বয়ে ছড়িয়ে দিতে এক অনন্য মগ্নতার সুবাসিত নিকুঞ্জ বিথীকা…!

সেকি স্বপ্ন না নিছক কল্পনার ভৌতিক রাতে
মেলে দিয়েছিলো যৌবনা প্রজাপতি পাখা।
আজ কেন স্মৃতি চূড়ার কাঁপছে বাসনারা
তুহিন অন্ধকারে।

নেই সেই চাঁদের মিছিলের লণ্ঠনের আলো
যেন অনন্ত শূন্য আকাশের নীল ক্যানভাস।
বলো অনিমেষ
আর কতদুর কতকাল খুঁজবো তোমায়
পদ্মায় চোখের জলজ জ্যোতি নিয়ে নদী পথে।

কেবলই শুনি ঢেউয়ের মায়াবী সুর,সেই সুর খুঁজে, বিষাদমলিন বোবা দুঃখ নিঃসঙ্গতার
নীলিমায়
ধূসর রাতে স্যাঁতস্যাতে হাওয়ায় স্মৃতি থেকে
অন্তহীন দুর দুরান্তরে-
কোথায়, কোথায় তুমি অনিমেষ…?

আর কতদুর,বলো অনিমেষ কতদুর তুমি-
এই মর্ত্যবুকে ছায়াহীন হয়ে থাকবে সেই গুপ্ত দ্বীপাধারে।

 

 

 

হামিদুল ইসলাম

কবিতা

 

 

মনের ভেতর গেঁথে রেখেছি
কবিতা রঙের আকাশ

কবিতা আমার প্রাণ
আমার হৃদয়
কবিতা না লিখলে আমি মরে যাবো নিশ্চয়ই

তাই কবিতা লিখি
জেলে যাই
ছাড়া পাই। কবিতা লিখি। জেলে যাই

এখন জেল আমার কবিতা। কবিতা আমার জেল

তবু লিখি
না লিখলে মরে যাব নিশ্চয়ই

 

 

 

 

অসীম দাস 

নীলকণ্ঠ নৌকায় আয়ুর প্রতিভা

 

 

যতই হাত বাড়াও না কেন
বহুভুজ কখনও বৃত্ত হবে না।
উত্তর আঁকড়ে আছে শেকড়ের মাটি
তবুও উত্তরমেঘে ভেজার আকুতি!
ভীড়ের টুকরো ঠুকে নির্জনে জ্বেলে যাও
পতঙ্গ আয়ুর প্রতিভা।
হ্যাঁ এবং না- এর নিষ্পত্তি কূলে
নীলকন্ঠ নৌকায় দুলে যাওয়া
নিরুপায় মানব নিয়তি।

যদিও ভগ্নাংশে পাওয়া রেঁধে বেড়ে
বেড়ে বেড়ে দ্বিধাহীন শবের পূর্ণতা।

 

 

 

 

আমিনুল ইসলাম 

তানিয়ার এসএমএস

 

 

এতটা সেজেছো কেন? কেন কলপে লুকিয়েছ
শরতের সাদা মেঘ হতে চাওয়া
জুলফিখানি? বাগানে তো মাত্র
একটা রঙ থাকে না !
আর কেনই-বা ঢেকে দিয়েছো
অধর ফাটার চিহ্নটুকু
ম্যাক ভেলভেটের মসলিনে! কী প্রয়োজন তার?
শোনো, খুলেই বলি তোমাকে-
শৃঙ্খলিত শীতাতপ নয়,
আমার অবাধ প্রাণ
আসুক অক্সিজেন,
আসুক কার্বন ডাই অক্সাইড
আসুক ধুলোবালির কণা,
আসুক ফুলের গন্ধ
আসুক চাকার ঘর্ঘর- কুকুরের ঘেউ ঘেউ,
তার সাথে আসুক-
পুরুষ কোকিলের সংগম-আহ্বান:
কুহু কুহু কুহু কুহু;
বৃষ্টির ফোঁটায় প্রণয়ের চুমু
খরার বুকে ভালোবাসার তৃষ্ণা।

আরও জানিয়ে রাখি-
আমাদের গ্রামটি ছিল নদীর পাশে
বিশাল প্রান্তর;
সামিয়ানা বলতে একটাই : আকাশ:
তুমি যদি আসতেই চাও, এসো-
কোনো অক্সিজেন চেম্বার নয়,
আস্ত একটি পৃথিবী নিয়ে এসো।

 

 

 

 

দেবাশ্রিতা চৌধুরী 

গুচ্ছ কবিতা

 

ধরো একটা দ্বীপে শুধু তুমি আর আমি
মাঝে কিছু নেই ক্ষুধা ছাড়া
যৌনতা ভালবাসা মরে গেছে তার কাছে
পরস্পরের মাংসলোভী দৃষ্টি ভয় ডেকেছে

 

মধ্যরাত ঘুমিয়ে আছে চরাচর জুড়ে
তীব্র আগনে পুড়ে যায় দেহ-মন
মধ্যরাত ঘুমিয়ে আছে চরাচর জুড়ে
শীতলতায় জমে যায় দেহ-মন
হাতের অবুঝ লীনতাপ অক্ষম হাসে
অপরিবর্তিত থাকা ছাড়া আর কোন
উপায় খুঁজে না পেয়ে অক্ষম হাসি হাসে

 

জানি, আমাকে অনেকে পছন্দ করে না
না বোঝার ভান করে হাসিমুখে সরে যাই
স্বাভাবিক কথা বলে খুব হাসিখুশি থাকি
ধূর! কে কাকে কি চোখে দেখে তাতে
কার কি! সব বহুবচনে বলা একবচন না

 

যানজট -অ্যাম্বুলেন্স -প্রচার গাড়ি
দুধারে নির্বিকার কিছু অসহায় মানুষ
সময় -পথ আর গন্তব্যের অপেক্ষায়
যে কোনো উৎসবের আড়ালের খণ্ডচিত্র

 

 

 

 

সুশীতল দত্ত 

এগিয়ে চলো

 

 

এখনও অনেকটা পথ…
তা হোক তবুও যেতেই হবে_
একটু একটু করে।
হয়ে ওঠো এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব
তোমার পায়ের ছন্দে আসুক নবজীবনের বার্তা
লাগুক ভালোবাসার পরশ,
মহামিলনের সেতুতে কন্ঠে কণ্ঠ মেলাও।
ভালোবাসো স্বদেশকে
মানবতার জয়গানে এগিয়ে চলো।
মনে রেখো ‘জীবে প্রেম করে যেইজন
সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’।
হাতে হাত মিলিয়ে গেয়ে ওঠো-
‘ও আলোর পথযাত্রী’।
ভোরের আলোয় চেয়ে দ্যাখো
রঙবেরঙের পাখি জাগছে ঐক্যতানে।
বাতাস এসে বলছে কানে কানে-
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও
মানুষের হয়ে মানুষের পাশে।
অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ এ নিয়েই তো জীবন,
জেগে ওঠো সকলে-
কাজের গতিতে।
এগিয়ে চলো পায়ে পায়ে দুর্বার গতিতে,
নচেৎ জীবন হয়ে উঠবে মরুভূমির মতো।

 

 

 

 

রুমানা আকতার 

ফিরতি পথে..

 

 

আমার শহরে বসন্ত আসেনি
কৃষ্ণচূড়া অভিমানী।
রেগে গিয়ে আগুন রাঙ্গা রূপে
তোমাকে মুগ্ধ করেনি।

কারণ – তোমার শহরে বসন্ত এসেছে,
বন পাহাড়ি ফুলের ছোঁয়ায়…

আমার শহর নিস্তব্ধ ভীষণ…!
চুপটি করে কান্না লুকোয়,
মেঘের বুকে মাথা রেখে।

আমার হৃদয়ে উঠছে ঝড় ,
কালবৈশাখীর মতো।
তোমার শহর আগলে রেখে
লুকিয়ে থাকা ঝিনুক মাঝে মুক্তোর মতোন।

জানি সময় শেষে পাল্টে যাবে সব
লুকিয়ে রাখা মুক্তো হবে
রূপের অলংকার।

আমার শহর ভিজবে সেদিন
তোমার শহরে মেঘ আসার পর…

 

 

 

প্রদীপ সেন

একটা সূর্য ওঠার গল্প শোনাতে পারো?

 

 

কত গল্পই তো ‌শোনালে এতকাল
সেই গল্পটা কিন্তু আজও না-বলাই রয়ে গেছে
যে গল্পে প্রাণ আছে, গান আছে
আছে বন্ধুর পথে অভিযানের রক্তাক্ত কাহিনি।
গাছে ফুল ফোটার কথা তো শুনিয়েছ বহুবার
শুনিয়েছ ফুল থেকে ফল বেরোনোর ইতিকথাও
বলোনি যে কথা, বরং বলা ভালো, বলতে চাওনি
কারা কারা গাছেরও খায় আর তলারও কুড়ায়।
বলবেই যদি, অবগুণ্ঠনে কথাকে নাইবা রাখলে।
শুনিয়েছ ঘুমপাড়ানিয়া গান আর অধরা স্বপ্নের কথা।
বলছিলাম নিষ্প্রাণ আর নিষ্ফল কথা না হয় থাক
আমাকে একটা সূর্য ওঠার গল্প শোনাতে পারো?

 

 

 

 

ভুবনেশ্বর মণ্ডল 

অচেনা আমি

 

 

আমাকে আমি কতটুকু চিনি
যদিও আজন্ম লেপটে আছি ক্রোমোজোমে
যত ডিএনএ, আর এন এ বোধের অতীত
দেহকোষে রোজ কত সভা, সম্মেলন, সংক্রমণ
অথচ নীরব দর্শক গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি
জীবন এক আশ্চর্য গোলকধাঁধা
তবু কোন এক সম্মোহণে ভোগেও আছি যোগেও আছি
আজীবন রিফিউজি চিনি না আজও মাটি
অতলে শিকড় কোন দেশে গেছে
কোথায় বেঁধেছে ঘর কিছুই জানিনা
কেবল স্রোতের শ্যাওলা অসহায় ভাসি
সমর্পণ-রাতে শুধু রাধাগান আমার নিয়তি।

 

 

 

গোলাম কবির

তবে কী আমি ঝরে পড়া বিবর্ণ পত্রের মতো হয়ে গেছি

 

 

আমি মনেহয় মানুষ হতে চেয়ে
ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছি!

তা না হলে এই যে এতো সুন্দরের
হত্যা হচ্ছে প্রতিদিন,
কই আমার তো কোনো
বিকারই নেই কেন?

কী সুন্দর খাচ্ছি দাচ্ছি,
নির্বিকার ঘুম যাচ্ছি,
কিনছি প্রয়োজনীয় নিত্য পন্যদ্রব্য!

আমি মনেহয় মানুষ হতে চেয়ে
নিরীহ বোবা প্রাণী হয়ে যাচ্ছি!

তা না হলে কিভাবে এমন সহ্য
করে যাচ্ছি এইসব সুন্দরের হত্যাকাণ্ড! মানুষের এইসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেনো
প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে ফুঁসে উঠি না!

তবে কী আমি ঝরে পড়া
বিবর্ণ পত্রের মতো হয়ে গেছি
যার মধ্যে কোনো প্রাণই নেই!

 

 

 

 

শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত 

ঋণ শোধ

 

 

গোটা একটা আস্ত মন-
খণ্ড খণ্ড করে থালায় সাজিয়ে- তোমায় নিবেদন করে-
নিশ্চিন্ত আমি।
না না তোমার কোনো চাহিদা ছিল না।
এ আমার ঋণ শোধ।
আমার সত্তা সহ সব টুকু নিংড়ে- তোমায় দেওয়ার কথা ছিল –
হে বিপুলা।
ভোরের প্রকাশের মতো সিগ্ধ আলোর অজুহাতে –
না শেষ হওয়া রাতের কালো অন্ধকারে-
আমায় তলিয়ে দাও তুমি।
চেনা মুখ মুখোশ হয়।
বেড়িয়ে আসে অস্নিগ্ধ কটু মুখ।
হারানোর কিছুই নেই,
তবুও তুমি ও যদি হারাও –
হে বিপুলা!
আমি কার অস্তিত্বে অস্তিত্বমান হব!
নাকি তুমি থেকে হারিয়ে গিয়ে-
নব কোনো পৃথিবী হবে আমার –
নব কোলেবরের,নব যাত্রার, সাক্ষী।

 

 

 

পরাণ মাঝি 

নীরব অতি+আচারের প্রেমিক

 

 

 

থই থই গরম বাতাসীর রোদলিপি ; নাকফুল বেজে ওঠে
ঘামের চুমু
চুমুর দরদর ঝর্ণা
ঠোঁট রাখে শরীরের শীর্ষবিন্দু থেকে আনততলে; শিরশির সুড়সুড়ি কেঁদে ওঠে বুকের ঝুমঝুমি

সকালে দুপুরের অধিক ঋতুর নাচন ; আমফল মজে ; ফুটিফাটা ভূমি;
নাভিশ্বাস ঘাস ;এ কেমন তুমি ?

নীরব অত্যাচারের প্রেমিক; ঘামের আম; আমের ঘাম; জামরুল হাসি
কোথায় গেলি রে বৃষ্টির মরমি মাসি?

বর্ণমালাও ভিজে যায়
দেদার ডিগবাজি খায়
বুকভরে শীতলতা চায়

লিচুর লুটোপুটি;সরলা পুঁটি গোলাপি আলাপে জ্বলে উঠি ; কাঁঠাল সবুজে জেগে জেগে ঘুমিয়ে আছে কোনো কথা না বলে ; এ কোন ভ্রুকুটি ?

স্বর বুঝি
সুর বুঝি
শুধু তাল কেটে যায়;
রোদের রাখাল তালপাতার ভেঁপু বাজায় ;
কামরাঙা,কালো সোনা জাম হাতছানি দেয় ; আয় আয়….

চুপি চুপি
শীতল কুচি বৃষ্টির ফণা ; মেঘের বুকে শুকিয়ে বাষ্পকণা
আনমনা
আনমনা
আয় আয় বুকে আয় না শীতল সুমনা

 

 

 

 

ইসমাত মির্যা 

ঠাঁই

 

 

তারস্বরে কেঁদে মহাআগমন
অজানা পৃথিবীটিতে, অসহায়ভাবে-
খুঁজেছি সেদিন ঠাঁই,
জননীর কোল পেয়েও বুঝিনি
কতটা প্রাপ্য; সময় গড়ায় বাড়ে অতৃপ্তি
আরো চাই, আরো চাই, অমুকের মত
বিশাল নিবাস- ঠাট বাট আরো-
ভূমি পেয়ে গেলে আকাশে হাত বাড়াই!

অদৃষ্ট মেনে গড়ায় জীবন
মেয়াদ ফুরিয়ে আসে,
ইত্যোবসরে শিখেছি কত কি
হাঁটা চলা, কথা বলা, কেউবা শিখেছি
খেটেপিটে খাওয়া, কেউ কেউ লেখাপড়া-
বয়সের সাথে বিচিত্র সব প্রজ্ঞা অভিজ্ঞতা;
জ্ঞানের রাজ্যে অন্ধ যে আমি
রহস্যভরা পৃথিবীটা প্রায় রয়ে গেলো অজানাই!

দৃশ্য জগৎ ভ্রমণ ফুরালে
বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে চলে যাই-
ধণী বা গরীব অভিন্ন তবু সবার কামনা
এখানে থাকতে চাই- আরো কিছুকাল
হোক না সে পথে, ছোট কুঁড়েঘরে, অথবা প্রাসাদে,
বিদায় নিতে কে চায় বাসা ছেড়ে?
চেনা আস্তানা ফেলে যেতে মনে জাগে প্রচণ্ড ভয়
প্রকাশ্যে কেঁদে অদৃশ্য দেশে অবশেষে খুঁজি ঠাঁই!

 

 

 

 

রোকসানা রহমান 

কোন গুপ্ত দ্বীপাধারে ২৬/০৪/২০২৪

 

 

অনিমেষ
কত কথা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে আমার কন্ঠে
তবু কেন যে স্মৃতিময় স্বপ্নরা ঘুরে চারপাশে
হৃদয়ের স্তোত্রপাঠ বারবার তোমাকে ডাকে
খুঁজে পদ্মার শীতল অবগাহনে।

একি কান্না- না পিপাসা…!?
তবুও মাথার উপর জ্বলে সপ্তর্ষি না কি দেবতা
রুপে মহাকাল।

ঈশ্বর তুমি আমাকে একফালি রৌদ্র তপ্ত আকাশে রক্তাভ এক ভূমি দেখিয়েছিলেন
তুমি কি ছিলে অনিমেষ…!?
দেখেছিলাম ক্রুশবিদ্ধ যীশুর নিরবতার ম্লান হাসি
মানব প্রেমের জ্বালা যন্ত্রনার,ভয়াবহ ইতিহাস।

তবুও কেন মনে পড়ে,বন্ধ্যা শ্রাবণে মুঠো মুঠো বীজ বুনেছিলে বহমান নদীর বক্ষে আবেগে এনেদিতে প্রথম ভোরের সূর্যদ্বয়ে ছড়িয়ে দিতে এক অনন্য মগ্নতার সুবাসিত নিকুঞ্জ বিথীকা…!

সেকি স্বপ্ন না নিছক কল্পনার ভৌতিক রাতে
মেলে দিয়েছিলো যৌবনা প্রজাপতি পাখা।
আজ কেন স্মৃতি চূড়ার কাঁপছে বাসনারা
তুহিন অন্ধকারে।

নেই সেই চাঁদের মিছিলের লন্ঠনের আলো
যেন অনন্ত শূন্য আকাশের নীল ক্যানভাস।
বলো অনিমেষ
আর কতদুর কতকাল খুঁজবো তোমায়
পদ্মায় চোখের জলজ জ্যোতি নিয়ে নদী পথে।

কেবলই শুনি ঢেউয়ের মায়াবী সুর, সেই সুর খুঁজে, বিষাদমলিন বোবা দুঃখ নিঃসঙ্গতার
নীলিমায়
ধূসর রাতে স্যাঁতস্যাতে হাওয়ায় স্মৃতি থেকে
অন্তহীন দুর দুরান্তরে-
কোথায়, কোথায় তুমি অনিমেষ…?

আর কতদুর,বলো অনিমেষ কতদুর তুমি-
এই মর্ত্যবুকে ছায়াহীন হয়ে থাকবে সেই গুপ্ত দ্বীপাধারে।

 

 

 

 

 

মিতা নূর

আজ আমার মন ভীষণ ভালো

 

 

 

আজ যেনো আমার মন হারিয়েছে ভালোবাসায়,
একটি মানুষের বুক পাঁজরের ঠিকানায়।
আজ আমার মন ভীষণ ভালো,
পুরো কুড়ি বছর ধরে যে-
একাকীত্বের যন্ত্রণা বুকের ভেতর জমাট বেঁধে ছিল!
কুড়ি বছর ধরে পুষে যাচ্ছি বিষাদে ব্যথা,
শূন্য হৃদয়ে।
চোখে বয়ে গেছে জলোচ্ছ্বাস, একটা মানুষের অপেক্ষায়,
একটা মানুষের অপেক্ষা,
মৃত্যুর প্রহর গুনেছি, মিথ্যে হাসি হেঁসে!
একটা মানুষের অপেক্ষা হৃদয়ে জড়িয়ে,
শত-ক্ষত লালন করেছি সযত্নে!
আজ ঠিক সেই মানুষের অপেক্ষা,
একাকীত্বের প্রহর শেষ হয়েছে।
কেটে গেছে গহীন কালো রাত্রির আঁধার,
ফুটে উঠেছে ভোরের আলো।
স্নিগ্ধ শিশিরে ভেজা মন খুঁজে পেয়েছে,
হারিয়ে যাওয়া নীল আকাশ!!

 

 

মৌসুমী ঘোষ 

আদরের কাজল

 

 

ও-আমার গোপন ভালোবাসা, আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে তোমাকে সাজাতে! এসো আমার মনের ময়ূর মহলে যে ময়ূর সিংহাসন হাজার নক্ষত্র ক্ষচিত বসো এখানে, মননে রেখেছি কোহিনূর মণি যেখানে চাঁদ আর রোহিনী র বাস, সে তো তোমার ই জন্য প্রিয়। আমার অন্তরের প্রদীপে, আদরের কাজল পেতেছি তোমার হরিণ নয়নে পরাব বলে,হৃদ বাগানের সদ্য ফোটা ফুলে তোমার মালা গেঁথেছি, তোমার বসন হবে আমার মনের মাধুরী দিয়ে,সে তোমাকে সারাক্ষণ আবেগে আবেশে জড়িয়ে থাকবে। আর তোমার ওষ্ঠ রাঙাব আমার প্রেমের উষ্ণ পরশ দিয়ে। আমার মন পবনের শীতল বাতাস তোমাকে সিগ্ধ করবে। আমার অশ্রু রাশি র ঝর্ণা ধারায় তুমি হবে অশ্রুস্নাত। আমার হৃদয় এর অলিন্দ, নিলয় নিঙড়ে যে রক্তের ফোঁটা টা, ওটা দিয়ে আঁকব তিলক, তোমার দীর্ঘ ললাটে, কি গো, আমার সাজানো তোমার পছন্দ হয়েছে তো?

 

 

 

অভিজিৎ দত্ত

মে দিবস

 

মে দিবস নয়
কোন একটি দিনের নাম
মে দিবস হল, শ্রমিক শ্রেণীর
লড়াইয়ের অপর নাম।

আগেকার দিনে
জন্তু, জানোয়ারের মত করা হত
শ্রমিক শ্রেণীর সঙ্গে ব্যবহার
শ্রমিকরা চাইলো এর প্রতিকার ।
ঠিকমত মজুরি আর নির্দিষ্ট সময় (৮ঘন্টা)
কাজের দাবীতে শ্রমিকরা জমায়েত
হয়েছিল ,আমেরিকার শিকাগো
শহরের হে মার্কেটে, (১লা মে দিনটিতে, ১৮৮৬)
আন্দোলনরত নিরস্ত্র শ্রমিকদের
উপর পুলিশ চালিয়েছিল গুলি
এগারো জন শ্রমিকের প্রাণের বিনিময়ে
আন্দোলন হয়েছিল জয়ী।

১৮৯০ সাল থেকে ঘটা করে ঐ দিনটিতে
শ্রমিকদের অবদানের কথা স্মরণ রেখে
শ্রমিক দিবস রূপে পালিত হয়
ঘটা করে বিশ্বের সব দেশেতে।

মেহনতী মানুষের এই লড়াই
সাধারণ মানুষের চোখ খুলে দেই।
শোষক শ্রেণী যতই হোক শক্তিশালী
মেহনতী মানুষের লড়াই
কখনই যাবে না খালি।

 

 

 

 

আশ্রাফ বাবু 

পথ খুঁজি

 

 

পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন অপেক্ষা করে
চাঁদহীন রাতে যাচ্ছে হৃৎপিণ্ড পুড়ে
উঠে আসে আর উড়ে যায় ভালোবাসায়।
ভালোবাসার মূল্য গোপনে কেঁদে যায়।

তোমার চলে যাওয়া দেখতে পাবে
আলো ফোটার সময় লাগবে ।
আলোর মতো গোধূলিবেলা আসে ঘনিয়ে,
যেতেই মন্দিরে ঘণ্টার শব্দে আমি এগিয়ে।

পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ে স্বচ্ছ বৃষ্টিতে
পাহাড়ের স্তব্ধতায় কিংবা সংকীর্ণ গিরিখাতে,
কেঁপে কেঁপে উঠে আসে আর উড়ে যায়।
গান শুরু করে পাহাড়ের স্তব্ধতায়।

 

 

 

 

বানীব্রত 

শ্রাবণ ধারা অশ্রু ধারা

 

আজও  সেই যে শ্রাবন ধারায় ভেজার ইচ্ছে জাগে
ফেলে আসা স্মৃতিগুলো  মনের ঘরে নাচে,
হাতের উপর নেই  যে হাত,নেই কদমের গন্ধ
মনে পড়ে অনেক  কথাই, হিসেব করা বন্ধ।

শ্রাবন দিনে শ্রাবণ ধারায়  ভিজবে মাটি
আঘাত ভুলে মন যে হবে আগুন পোড়া খাঁটি
ব্যাথা বেদনা সব থাকবে চেপে বুকের মাঝে
অব্যক্ত কথা গুলো পড়ে থাকে লাজে।।

ভিজবে আঁচল ভিজবে মন সেই শ্রাবণেতে
মনের খবর কে বা রাখে,কার এসে যায় তাতে,
মনের মাঝে কষ্ট গুলো শুধুই দলা বাঁধে
চোখের কোণে জল যে শুকায়, ডুকরে শুধু  কাঁদে।

 

 

 

 

ছবি : প্রীতি দেব, দেবব্রত সরকার, সানি সরকার ও আন্তর্জালিক 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment