Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Sasraya News literature : মমতা রায় চৌধুরী এর গুচ্ছ কবিতা

Listen

বি মমতা রায় চৌধুরী -এর জন্ম অবিভক্ত বর্ধমান জেলার জয় কৃষ্ণপুর গ্রামে। পিতা পরেশ চন্দ্র রায় ও মা পুষ্পু রানী রায়। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। এবং একজন সঞ্চালিকা। ছোট থেকেই লেখার প্রতি আগ্রহ। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় কলেজ পত্রিকাতে। তারপর আস্তে আস্তে অসংখ্য কবিতা, গল্প ,পত্র সাহিত্য বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে প্রকাশিত হতে থাকে। স্বপ্নসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকাতে লিখেছেন উপন্যাসও। ‘সাশ্রয় নিউজ ঈদ সাহিত্য ‘-এর পাতায় রইল কবির গুচ্ছ কবিতা। 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

মৃত্যু ১ 

 

দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে একের পর এক মৃত্যু
মিলি গেল তারা গেল পাহাড়ি ঝরণা উচ্ছ্বাস
বন্ধ হল
বাদল চুনু ওরাও আস্তে আস্তে নিস্তেজ…
জ্বল জ্বল করা নক্ষত্রের হাতছানি
জানি আর মন মাতাবে না
মনের উষ্ণ ভূমিতে দাগ কাটবে না।
খুনসুটিরা মুখ থুবড়ে পড়ে
খেলনাগুলো তাকিয়ে শূন্যের দিকে…
নিদারুণ নিঃসঙ্গতা ঘরের আনাচে কানাচে
মনে মনে ভাবি, এই বুঝি এসে ধরবে
গলা জড়িয়ে আদরে আবদারে।
সারাদিনের ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে
আমি মাতি উল্লাসে ওদের সাথে
অবলা জীব ওরা মনে হয়নি কখনও
সব অনুভূতি পাল্লা দিয়ে ছোটে
কী এক অনির্বচনীয় অনুভূতি!
তার অভাব সর্বদা কুরে কুরে খাচ্ছে
নিদারুণ অসহায়তাকে সঙ্গে নিয়ে
কাটছে আমার দিন রাত্রি…
তবু মনকে বোঝাই মৃত্যু এক চরম সত্য
মেনে নিয়ে চলি আগামির পথে।

 

 

মৃত্যু ২

 

 

প্রতি নিয়ত মৃত্যু দেখছি গাছের
প্রচণ্ড ব্যথা কথারা বাকহারা
গাছেরা প্রথম যখন উঁকি দিয়েছিল পৃথিবীর বুকে
হাজারো স্বপ্ন আশা ভরসা নিয়ে প্রাণে
তরতাজা নিঃশ্বাস পৃথিবী জুড়ে
ছিল মানুষ প্রকৃতি মিলেমিশে মহা সুখে
এখন শুধু ধোঁয়াশা আর ধোঁয়ার জগৎ
সব কিছু আবছা আর অস্পষ্ট
বিবেকহীন মানুষ লোলুপ দৃষ্টিতে
ছোবল মারে গাছেদের গায়ে
যন্ত্র দানব যন্ত্র সভ্যতাকে এগিয়ে
মানুষকে করে তোলে ক্রুর
নিজেদের অস্তিত্বের সংকট
বুঝতে পারছি ক্রমশ এগিয়ে
আমরাও কি ভেসে যাব না একদিন
অস্তিত্বহীনতার জগতে।
একবারও কি বিবেকের ঘা লাগে না
এই অসহায়ের মৃত্যু দেখে।
মৃত্যু আর মৃত্যু মৃত্যুর মিছিল
আমরা বইয়ে চলেছি
একদিন মিশে যাবো দূর নক্ষত্রলোকে।

 

 

মৃত্যু ৩

 

 

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষেরও ক্রম পরিবর্তন
পরিবর্তন দাম্পত্য জীবনে চির ধরেছে স্বামী স্ত্রীর বন্ধনে
অসহায় শিশু বলি হয় পিতা মাতার কারণে।
লুপ্তপ্রায় ভালবাসা লুপ্তপ্রায় স্নেহ যেন এক অসহায় মৃত্যু, এক লক্ষ্যহীন ভবিষ্যৎ
ভ্রষ্ট সমাজ ক্রমশ কেড়ে নেয় শৈশবের দিনগুলি।
শৈশবকে করে তোলে জরা গ্রস্ত তিলে তিলে মৃত্যু হয় শিশুর স্বপ্ন
ক্রমশ এভাবেই এগিয়ে চলেছি এখানেও বিবেকের দংশন হয় না
ছোট্ট শিশুকে ফেলে পিতা মাতা স্বার্থসিদ্ধির লড়াইয়ে ব্যস্ত।
আমরা এক কঠিন মৃত্যুর পাশাপাশি কঠিন সত্যের সম্মুখীন
অথচ এটা তার প্রাপ্য নয়, কার কাছে প্রশ্ন করবে… কার কাছে চাইবে… প্রত্যাশা পূরণের হাতিয়ার?

 

 

মৃত্যু ৪

 

 

চোখের সামনে মৃত্যু দেখি যুবসমাজের
জ্বলছে পেট খিদের জ্বালায়, ঢালছে লাল জল
ভিজছে গলা
দেখছে তখন রঙিন স্বপ্ন ,উড়ছে ডানায় ভর করে
বেকারত্ব ধুঁকছে শিক্ষা ডিগ্রি মাথায় করে
শিক্ষা এখন মর্যাদা পায় টাকার অঙ্কে
চাকরিগুলো বিকিয়ে গেছে মনুষ্যত্বহীনতার কাছে
লেখাপড়া নেইকো সম্মান তাই তো স্কুলছুট
স্বপ্নগুলো ফিকে হয়, ভালবাসার হয় অপমৃত্যু।
চোখের সামনে দেখি যুবসমাজের মৃত্যু
ভাবছে নেতা ঢালছে টাকা কিনছে তাদের বেকারত্ব,
স্বপ্নগুলো খাচ্ছে রাস্তায় গড়াগড়ি
চোখের সামনে দেখছি তাদের অপমৃত্যু।

 

 

মৃত্যু ৫

 

 

বন্ধুত্ব শব্দটার মধ্যে আছে
একরাশ বিশ্বাস আস্থা ভালবাসা
বিপদে আপদে একসাথে পথ চলা
অথচ আজ বন্ধুত্ব আটকে নেই
সেই শব্দ বন্ধে মরচে ধরেছে
মৃত্যু হচ্ছে বন্ধুত্বের সম্পর্কে।
বিপদে আপদে যার প্রতি ভরসা করা যায়
হাত বাড়ালে সাহায্যের পাওয়া যায়
আজ স্বার্থন্ধ চোরাবালি র পাহাড় গড়ে
ধসিয়ে দেয় সম্পর্কে সব বাঁধন।
কখনো বন্ধু বন্ধুর প্রাণ নাশ করে
মেতে ওঠে পৈচাশিক উল্লাসে
এমন বন্ধুত্ব ভাবা যায় কি কখনো
আজ এই সহ জ সত্য মেনে নিয়ে ই
পথে চলা
তারি মাঝে যদি খুব ভালো বন্ধু পাওয়া যায়
স্বর্গীয় সুখ ভেবে আনন্দে আত্মহারা হওয়া।

 

 

মৃত্যু ৬

 

 

সম্পর্কগুলো আজ এতই ঠুনকো
বালির বাঁধের মতো
যতই আষ্টেপৃষ্ঠে ধরি না কেন
বালি সরতেই থাকে, পায়ের তলা থেকে
সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয় দ্রুত তালে
মা বাবা ভাই বোন সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধন
আজ সবই দেখি বিনি সুতোর বাঁধন
অজান্তেই আজ গজিয়ে ওঠে বৃদ্ধাশ্রম
যে আশীর্বাদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পথ দেখে
যাঁরা আলোর এক নতুন দিশা
আজ তারাই থাকে অন্ধকারে।
সম্পর্কের অপমৃত্যু বিবেকে লাগে ঘা।

 

 

মৃত্যু ৭

 

 

আজ চোখের সামনে দেখি ভালবাসার অপমৃত্যু
যে ভালোবাসা একে অপরের দোসর হয়
হয় বিশ্বাস আস্থা ভরসা প্রেম প্রীতির বন্ধন
যাকে আঁকড়ে হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটা যায়
আজ সেই ভালবাসায় শুধুই দেহজ
মনের কোথায় যেন উড়ে যায়।
মন ও দেহ ভালবাসার দুটোই অঙ্গ
কিন্তু যখন দেহজ তৃপ্তি মানসিক তৃপ্তি দেয় না
তখনই তো ভালবাসার আত্মা র হয় মৃত্যু
প্রেমিক বা প্রেমিকায় তৃতীয় ব্যক্তির আগমন
ভালোবাসা কেমন ব্যবসায়িক রূপ নেয়।

ভালবাসার যে পথে ঘাস জন্মেছিল ফুল ফুটেছিল,
অচিরেই সে ফুল ঝরে যায় রক্তাক্ত হয় মন
ভালোবসার সংজ্ঞাটা বোধ হয় পাল্টে যায়
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভালোবাসার সংজ্ঞা ও তার মৃত্যু কেমন যেন ভাবায়।
প্রতিনিয়ত ঘটছে এরূপ খেলা
ভয় পেয়ে থমকে যাই ভালবাসতে ভুলে যাই
তবুও পোড়ামন ভালবাসাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চাই।

 

 

মৃত্যু ৮

 

 

চোখের সামনে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যুর মিছিল
মৃত্যুর রকম ফের দেখে হতবাক হই
শিক্ষাঙ্গনেও প্রকৃত শিক্ষার মৃত্যু
শিক্ষা আজ শুধু ধোঁকা, ডিগ্রি অর্জনে প্রতিযোগিতা
এক দুই তিন করে শুধু এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে তারপর সবটাই ফাঁকা।
শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ফাটল
ভবিষ্যতে প্রতিচ্ছবি দেয় এক ভয়াবহ বার্তা
যে শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধার আসনে
আজ তাঁর স্থান পথের ধুলিতে
তাই তো শিক্ষাঙ্গনে চলে অরাজকতা
শিক্ষার্থী অভিভাবকের হাতে শিক্ষক হন প্রহৃত।
লজ্জায় মাথা নত হই বাক শক্তি যায় হারিয়ে
শিক্ষার এহেন অপমৃত্যু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের
রন্ধে রন্ধে ঢুকেছে ক্যান্সার শিউরে উঠি
আর চোখের সামনে দেখি মৃত্যু মিছিল।

 

 

মৃত্যু ৯

 

 

মৃত্যু ঘটছে চোখের সামনে সংস্কৃতি সম্পন্ন মনের
চারপাশে গজাচ্ছে অপসংস্কৃতির ডেরা
মা সরস্বতী যেন আজ নর্তকীর ভূমিকায় ভাটিশালায়
সংস্কৃতির নামে চলছে আজ হইহুল্লোড় মজা
চিল-শকুনরুপী মানুষ ভূলেছে সুন্দরের আরাধনা।

নব বসন্তের ঢেউ যখন দাগ কাটে মনের গভীরে তবুও তাকে সরিয়ে রাখি অপসংস্কৃতির আড়ালে।
মনের ভেতরে জেগে থাকে নীরবে ধ্রুবতারা
জানি একদিন শেষ হয়ে যাবে অপসংস্কৃতিরা
পৃথিবী আবার ভরে উঠবে সত্য সুন্দরের জয়ে
একটা কোকিল গান শোনাবে হাজার শকুন সরিয়ে।

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে।  অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment