Sasraya News

Sara Ali Khan | ধর্ম নয়, বিশ্বাসই আসল, ট্রোলের মুখেও নিজের পথে সারা

Listen

পলাশ গোস্বামী, সাশ্রয় নিউজ ★ মুম্বাই : বলিউড তারকা সারা আলি খান (Sara Ali Khan) যখন কেদারনাথ বা মহাকালেশ্বর মন্দিরে পুজো দেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। কেউ বলেন ‘নাটক’, কেউ বলেন ‘নির্বোধ ধর্মাচার’, আবার কেউ তাঁর জন্মপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কারণ? তিনি একজন মুসলিম-বাবার কন্যা, যার মা আবার হিন্দু। সেই সূত্রে তিনি হিন্দু মন্দিরে গেলে সমালোচনা যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এমন কটাক্ষের মধ্যেও নিজের বিশ্বাস ও পছন্দের ওপর অটল থেকেছেন সারা। মন্দিরে হোক কিংবা দরগায় ধর্ম নয়, মানুষের বিশ্বাস এবং অনুভবকেই বরাবর তিনি বড় করে দেখেছেন।

সারা আলি খান। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি কেদারনাথে শিবলিঙ্গে জল ঢালতে দেখা যায় সারাকে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর মা অমৃতা সিং (Amrita Singh)। সেই ছবি ভাইরাল হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় ট্রোলের বন্যা। কেউ লেখেন, “ধর্মের অপমান”, কেউবা বলেন, “মুসলিম হয়েও শিবের উপাসনা?” কিন্তু এসব সমালোচনার উত্তরে সারা মুখ খোলেন। জানান, “আমি সবসময় বিশ্বাস করি কাজই মুখ্য। আমি যদি শান্তি পাই কোনও জায়গায়, তাহলে আমি সেখানে যাব। কেউ যদি সেটা নিয়ে ট্রোল করে, করুক। ওসব আসলে পেছনের শব্দ। যদি ভাল লাগে তো ভাল, না লাগলে তাও ভাল। কিন্তু আমি এ জন্য মন্দিরে যাওয়া বন্ধ করব না। এটা আমার নিজস্ব ইচ্ছা।” কিন্তু, এই প্রথম নয়, এর আগেও তাঁকে দেখা গেছে উজ্জয়িনীর (Ujjain) মহাকালেশ্বর মন্দিরে। আবার একইভাবে তিনি গিয়েছিলেন আজমের শরিফ দরগাতে (Ajmer Sharif Dargah)। এমনকী সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরেও (Siddhivinayak Temple) তাঁকে দেখা গেছে অঞ্জলি দিতে। বারবার সোশ্যাল মিডিয়া তাঁকে এই দ্বৈত ধর্মীয় চর্চার জন্য ট্রোল করলেও, সারা নিজের অবস্থানে অনড়।

সারার এই জীবনদর্শনের মূলেই রয়েছে তাঁর পরিবারে পাওয়া উদার মনোভাব। তাঁর ঠাকুমা শর্মিলা ঠাকুর (Sharmila Tagore), নিজে হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম পরিবারে বিয়ে করেছিলেন নবাব পতৌদি (Nawab Pataudi)-কে, একবার স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “আমাদের পরিবারে যে যার নিজের ধর্ম বিশ্বাসে বাঁচেন। এখানে কাউকে বাধ্য করা হয় না কিছু মানতে।” এই উদাহরণেই বেড়ে ওঠা সারা, তাই ধর্ম নিয়ে সংকীর্ণতা তাঁর চিন্তায় কোনও স্থান পায় না।সারার মা অমৃতা সিং নিজেও একজন ধর্মপরায়ণ হিন্দু, যিনি প্রায়শই কাশীতে গিয়েছেন বা বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে দর্শনে যান। আবার সারার বাবা সইফ আলি খান (Saif Ali Khan) একজন মুসলিম, কিন্তু তিনিও কখনও মেয়েকে ধর্মীয় আচার পালন থেকে বিরত করেননি। একবার এক সাক্ষাৎকারে করিনা কাপুর খান (Kareena Kapoor Khan) বলেছিলেন, “আমি কোনও ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আমরা সবাই আগে মানুষ, পরে অন্য কিছু।” সেই উদারতা ও আত্মবিশ্বাসেই বেড়ে উঠেছেন সারা, যে তাঁর ধর্মকে বেছে নিয়েছেন অনুভবে, not by inheritance but by choice। এই ধরনের ধর্মীয় সহাবস্থান এবং সম্মিলিত সংস্কৃতি বাস্তবে ভারতীয় সমাজে নতুন কিছু নয়।

সারা আলি খান। ছবি : সংগৃহীত

কিন্তু যখন কেউ জনপ্রিয়তা বা খ্যাতির জায়গায় থেকে প্রকাশ্যে এমন কাজ করেন, তখন তাঁকে নানাভাবে বিচার করা হয়। সারার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “এই বিষয়গুলোতে আমি কারও অনুমতির অপেক্ষায় থাকি না। আমার কাছে মন্দির, দরগা, গির্জা, সবই এমন জায়গা, যেখানে আমি শান্তি খুঁজে পাই। আমার হৃদয়ের যা টানে, আমি সেটাই করি।”

Read : Karisma Kapoor, Kareena Kapoor | করিশ্মার কান্না আর করিনার নীরবতা! ভেতরের গল্পটি কী?

বলিউডের অনেকে যদিও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাস আড়াল করতে বাধ্য হন, সারা সে পথে হাঁটেননি। তিনি জানেন, তাঁর মত তারকাদের প্রতিটি পদক্ষেপ জনমানসে প্রভাব ফেলে। তাই তিনি সচেতন ভাবেই নিজের বিশ্বাসকে তুলে ধরেন, তাতে যদি কেউ কটাক্ষ করেন তাতেও তাঁর কিছু যায় আসে না। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বা সামাজিক কটাক্ষের মুখে দাঁড়িয়েও নিজের ভাবনাকে অটুট রেখে চলার সাহস দেখিয়েছেন সারা। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভারতের মত দেশে ধর্ম শুধু পরিচয়ের নয়, অনুভবেরও প্রশ্ন। আর সেই অনুভবের জায়গাতেই একজন মানুষ একসঙ্গে শিবলিঙ্গে জল ঢালেন, আবার দরগায় মোনাজাত করেন। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সারা আলি খানের এই জীবনদর্শন শুধু একজন তারকার বার্তা নয়, বহুত্ববাদী ভারতের চেতনাকেই আরও একবার জীবন্ত করে তোলে। তাঁর মত কেউ যখন বলেন, “ধর্ম নয়, শান্তি আসল”, তখন তা শুধু একজন অভিনেত্রীর বিশ্বাস নয়, তা বহু মানুষের নীরব কণ্ঠস্বর। যারা এখনও ধর্মকে বিভাজনের জন্য নয়, মিলনের জন্য ভাবতে চান।

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Sunjay Kapoor Net Worth : সঞ্জয় কপূরের ১০,৩০০ কোটির সাম্রাজ্য: উত্তরাধিকারের প্রশ্নে আলোচনায় সামাইরা-কিয়ান

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read