Sanae Takaichi, Japan Prime Minister | ইতিহাসের পাতা উল্টে দিল জাপান: দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি

SHARE:

জাপানের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক মুহূর্ত- লিবার‌্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র সানায়ে তাকাইচি হলেন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। জানুন তাঁর জয়ের পটভূমি, বিতর্ক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া।

সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ টোকিও : টোকিওর রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক সকাল, জাপান (Japan) পেল তাদের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের ভোটাভুটিতে জিতে ক্ষমতায় এলেন লিবার‌্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Liberal Democratic Party বা LDP)-এর নেত্রী সানায়ে তাকাইচি (Sanae Takaichi)। ৬৪ বছরের এই অভিজ্ঞ রাজনীতিক স্থলাভিষিক্ত হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা (Shigeru Ishiba) -এর। এই জয়ে জাপানের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হলেও, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্কও, কারণ তাকাইচি পরিচিত একজন রক্ষণশীল, কট্টরপন্থী ও পুরুষতান্ত্রিক মতাদর্শী রাজনীতিক হিসেবে। মঙ্গলবার টোকিও পার্লামেন্টে সকাল থেকেই ছিল উত্তেজনার আবহ। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press) -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভোটাভুটির সময় LDP -এর প্রার্থীর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কনস্টিটিউশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Constitutional Democratic Party বা CDP)-এর প্রধান ইয়োশিকোকো নোদা (Yoshikoko Noda)। মোট ৩৮৬ ভোটের মধ্যে তাকাইচি পান ২৩৭টি ভোট, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের চেয়ে চারটি বেশি। অন্যদিকে নোদা পান ১৪৯ ভোট। উচ্চকক্ষেও তাকাইচি পান ১২৫ ভোটের দৃঢ় সমর্থন। ফলাফল ঘোষণার পরেই উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। পার্লামেন্ট জুড়ে তখন করতালি ও উল্লাসে মুখর দৃশ্য।

গত মাসে পরপর দু’টি নির্বাচনে হারের দায়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন ইশিবা। তাঁর নেতৃত্বে দলের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে, বিশেষ করে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর থেকেই অসন্তোষ তীব্র হয় LDP-এর অভ্যন্তরে। দল তখন নতুন মুখ খুঁজছিল, এমন একজন, যিনি দলের রক্ষণশীল ভাবমূর্তি ধরে রেখে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারেন। সেই সময় তাকাইচির নাম প্রস্তাব করা হয়, যিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রশাসনিক ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছেন। LDP নেতৃত্ব তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনীত করে, এবং মঙ্গলবার ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গেল, দলের এই সিদ্ধান্তে জনগণেরও সমর্থন মিলেছে। অভিনন্দনের বন্যা ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এক্স (X)-এ পোস্ট করে লিখেছেন, “সানায়ে তাকাইচি, জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার এই ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। ভারত-জাপানের বন্ধুত্ব ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমি আশাবাদী। দুই দেশের এই অংশীদারিত্ব শান্তি ও উন্নয়নের প্রতীক।” মোদীর এই বার্তা কেবল কূটনৈতিক শুভেচ্ছা নয়, তা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেছে। তবে তাকাইচির সামনে চ্যালেঞ্জও কম নয়। বিশেষ করে, জাপানের নারী সমাজ ও প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির আস্থা অর্জন তাঁর জন্য বড় পরীক্ষা। কারণ, তিনি পরিচিত এক কঠোর সামাজিক রক্ষণশীল হিসেবে। অতীতে একাধিকবার তিনি বলেছেন, “মেয়েদের প্রথম দায়িত্ব ভাল স্ত্রী ও মা হওয়া।” নারী অধিকার ও লিঙ্গ সমতার নানা বিলের বিরোধিতা করেছেন তাকাইচি। এমনকি সমকামী বিবাহ (Same-sex marriage) নিয়েও তাঁর অবস্থান বিতর্কিত। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, “জাপানের ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে পরিবারব্যবস্থার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।” ফলে তাঁর এই জয়কে অনেকে জাপানের নারীবাদী আন্দোলনের জন্য এক ধাক্কা বলেই মনে করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, তাকাইচির রাজনৈতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় জাপান এখন এক নতুন কিন্তু রক্ষণশীল পথে হাঁটতে চলেছে। তিনি বরাবরই জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদার, সেনা ব্যয় বৃদ্ধি এবং চীন (China)-এর প্রতি কঠোর নীতির পক্ষে। বিশেষজ্ঞ হিরোশি মাতসুদা (Hiroshi Matsuda) বলেন, “তাকাইচি এমন এক নেতা, যিনি জাপানের ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিকে নতুন রূপে পুনরুদ্ধার করতে চান। তবে তাঁর কট্টর অবস্থান দেশের আধুনিক সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংঘর্ষে আসতে পারে।”

সানায়ে তাকাইচির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে, যখন তিনি সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন শক্তিশালী, কঠোর প্রশাসনিক নীতির জন্য। তিনি জাপানের অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে নানা উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য— এই প্রথম তিনি একজন নারী হয়েও এমন এক পদে অধিষ্ঠিত হলেন, যা এতদিন ধরে পুরুষদের দখলে ছিল। তবে অনেক নারী কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠন তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ইউকো হামামাতসু (Yuko Hamamatsu) বলেন, ‘এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কিন্তু একই সঙ্গে উদ্বেগজনকও। কারণ, এক জন নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়া মানেই নারীবান্ধব নীতি আসবে, তা নয়। তাকাইচির অতীত বক্তব্যগুলো তারই ইঙ্গিত দেয়।’ জাপানের জনগণ এখন তাকিয়ে আছেন, কীভাবে এই প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে নতুন অধ্যায় শুরু করেন। ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম ইতিমধ্যেই লিখে গিয়েছে, কিন্তু সেই ইতিহাস উজ্জ্বল না বিতর্কিত, তা বলবে সময়।

ছবি : সংগৃহীত

আরও পড়ুন : PM Kisan Pension Yojana 2025 | কৃষকের বার্ধক্যে ভরসা : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘PM Kisan Pension Yojana 2025’ আনছে বিপ্লব

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

আরো পড়ুন