



রাজা রামমোহন রায় : জীবন, কর্ম ও প্রাসঙ্গিকতা
অভিজিৎ দত্ত : আধুনিক ভারতের জনক, ভারত পথিক, ভারতীয় রেনেশাঁর জনক ইত্যাদি নানা নামে রাজা রামমোহন রায়কে (Raja Ram Mohan Roy) অভিহিত করা হয়। রামমোহন অবিভক্ত বাংলার হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে ১৭৭২ সালের ২২ মে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে। জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রামকান্ত রায়, মাতা ফুলঠাকুরাণী দেবী। রাজা রামমোহন রায় ছিলেন শিক্ষা সংস্কারক, সমাজ সংস্কারক, ধর্ম সংস্কারক, ভারতীয় সংবাদপত্রের পথিকৃৎ ও গণতন্ত্রের পূজারী। তাঁর আয়ত্তে ছিল বহু ভাষা। তিনি বুঝেছিলেন সমাজকে উন্নত করতে গেলে শিক্ষার দরকার। এই কারণে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। ১৮১৭ সালে ডেভিড হেয়ারের সহযোগিতায় কলকাতায় হিন্দু কলেজ (Hindu College) স্হাপন করেন। ১৮৩৩ সালে আলেকজান্ডার ডাফকে কলকাতায় স্কটিশ চার্চ কলেজ স্হাপনে সাহায্য করেছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষার জন্য বেদান্ত কলেজ স্হাপনে করেছিলেন।
রামমোহনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ সতীদাহ বা সহমরণের মত জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এই কাজ করতে গিয়ে ওঁকেকে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়।কিন্ত কোনও বাধাই একনিষ্ঠ রামমোহনকে দমাতে পারেনি। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিকের সহায়তাতে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে এই প্রথা রদ করা হয়।
রাজা রামমোহন রায়ের কাছে ভারতবাসীরা ঋণী যেহেতু ভারতবর্ষের সমাজে ও ধর্মে যে অন্ধকার বিরাজ করছিল তার থেকে তিনিই প্রথম আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার চেষ্টা করেছিলেন। ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্ত, গণতন্ত্রের সমর্থক রামমোহন রায় ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়রা কেন উচ্চপদ পাবে না তা নিয়ে জোর সওয়াল করেছিলেন।
রামমোহন একশ্বেরবাদী ছিলেন। তিনি পৌত্তলিকতার ঘোর বিরোধী ছিলেন। ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে আত্মীয় সভা এবং ১৮২৮ খ্রীষ্টাব্দে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দুধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ও এক ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেবল তা-ই না, তিনি বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিলেন। তিনি বহু পুস্তক প্রণেতা ও সংবাদপত্র বের করেন। ১৮৩০ খ্রীস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর ভারতীয়দের দাবিদাওয়াগুলি তুলে ধরার জন্য বিলেতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাঁকে রাজা উপাধি দেন ও তাঁর প্রতিনিধি করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠান। রাজা রামমোহন রায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সভায় ভারতীয়দের দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। সেখান থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন। ফ্রান্সের জ্যাকোবিন দলকে তিনি সমর্থন করতেন। পরে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ব্রিষ্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রীষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন। আট দিন জ্বরে ভোগার পর ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রামমোহন রায় (Raja Ram Mohan Roy) আজও প্রাসঙ্গিক কেন? সতীদাহের মত ঘৃণ্য প্রথা নিষিদ্ধ করার জন্য নাকি আধুনিক ভারতে উত্তরণের জন্য তিনিই প্রথম সচেষ্ট হয়েছিলেন বলে? রাজা রামমোহন রায়ের কাছে ভারতবাসীরা ঋণী যেহেতু ভারতবর্ষের সমাজে ও ধর্মে যে অন্ধকার বিরাজ করছিল তার থেকে তিনিই প্রথম আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আনার চেষ্টা করেছিলেন। ধর্মীয় কুসংস্কার মুক্ত, গণতন্ত্রের সমর্থক রামমোহন রায় ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়রা কেন উচ্চপদ পাবে না তা নিয়ে জোর সওয়াল করেছিলেন। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। বাংলা ভাষায় বই ও ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন ভাষায় পুস্তক অনুবাদ করেছিলেন। অনেকে তাকে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম বিলাত যাত্রী বলেন। যিনি ভারতবর্ষের নায্য দাবীগুলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে তুলে ধরার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সাহসী, যুক্তিবাদী ও উদার মানসিকতাসম্পন্ন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আমরা ২০২৫ সালে রাজা রামমোহন রায়-এর (Raja Ram Mohan) ২৫৪ তম জন্মদিন পেরিয়ে এলাম।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Sasraya News, Sunday’s Literature Special | 25th May 2025, Issue 66 || সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৫ মে ২০২৫, সংখ্যা ৬৬
