



শুভ্রাংশু চন্দ ★ সাশ্রয় নিউজ, কলকাতা: রাজ্য জুড়ে বর্ষা যেন নিজের স্বরূপে ফিরেছে (Rain in West Bengal)। মৌসুমী অক্ষরেখা সক্রিয়, নিম্নচাপ সরে গেলেও বর্ষার বৃষ্টিধারা কোথাও কমছে না। দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ সর্বত্রই মেঘলা আকাশ। মাঝে মাঝে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার দাপট। আলিপুর হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, এখনই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই। কারণ, পরবর্তী ক’য়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের পশ্চিম অংশে ও উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল।
গত দু’দিন ধরে নিম্নচাপের প্রভাবে একের পর এক জেলা ভিজেছে ঘন বৃষ্টিতে। তবে এখন সেই সুস্পষ্ট নিম্নচাপ সরেছে ঝাড়খণ্ডের দিকে। যদিও, তার ছায়া এখনও টিকে আছে বাংলার আকাশে। কলকাতা সহ পূর্ব ও মধ্য অংশের জেলাগুলিতে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলায় নতুন করে সতর্কতা জারি হয়েছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, “নিম্নচাপ যদিও আর সরাসরি বাংলার উপর নেই, তবে মৌসুমী অক্ষরেখা যথেষ্ট সক্রিয়। তাই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি চলবে। বিশেষ করে পশ্চিমের জেলাগুলি এখন বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর (West Midnapore), ঝাড়গ্রাম (Jhargram), পশ্চিম বর্ধমান (West Burdwan), পুরুলিয়া (Purulia), বাঁকুড়া (Bankura) এই পাঁচ জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি বীরভূম (Birbhum), পূর্ব বর্ধমান (East Burdwan), পূর্ব মেদিনীপুর (East Midnapore), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Parganas), হুগলি (Hooghly) ও মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফ থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। বাঁকুড়ার (Bankura) এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই ব্লক স্তরে সতর্কতা জারি করেছি। নিচু এলাকাগুলি নজরে রাখা হচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তা ও সেতুগুলির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে, যাতে যে কোনও বিপর্যয় এড়ানো যায়।”
অন্যদিকে, বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা হাওয়া বাড়তি চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া দফতরের সূত্র জানায় যে, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার গতিবেগে দমকা ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। বিশেষ করে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে পূর্ব ও দক্ষিণের জেলাগুলিতে। তবে সপ্তাহান্তে কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন আবহবিদরা। শুক্রবার ও শনিবার রাজ্যে কোনও বড় রকমের বৃষ্টির সতর্কতা নেই। কিন্তু আবার রবিবার থেকে বৃষ্টির দাপট বাড়বে বলেই পূর্বাভাস। সেদিন বীরভূম (Birbhum), মুর্শিদাবাদ (Murshidabad), নদিয়া (Nadia), পশ্চিম বর্ধমান (West Burdwan) ও উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) কিছু অংশে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার বৃষ্টি মূলত হতে পারে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে। উত্তরবঙ্গেও পরিস্থিতি সহজ নয়। দার্জিলিং (Darjeeling), কালিম্পং (Kalimpong) ও জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা স্পষ্ট। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ধসের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। মালদহ (Malda), উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর (North & South Dinajpur), কোচবিহার (Cooch Behar) এবং আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলাতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কালিম্পং (Kalimpong)-এর এক স্থানীয় বাসিন্দা মীনাক্ষী রাই (Meenakshi Roy) বলছেন, “গত তিন দিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছে। পাহাড়ে চলাফেরা করাই কঠিন হয়ে উঠেছে। যদি বৃষ্টি এমন চলতেই থাকে, তবে ছোট ছোট ধস নামার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”
কলকাতায় আপাতত ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। তবু সকালের দিকে অথবা বিকেলের পর থেকে এক দফা বৃষ্টি হতে পারে। তার সঙ্গে অল্প থেকে মাঝারি দমকা হাওয়া ও বজ্রপাত থাকবে বলেই জানিয়েছে হাওয়া অফিস। শহরের বাসিন্দাদের উদ্দেশে পরামর্শ, ছাতা বা রেইনকোট না নিয়ে বের হওয়া ঠিক হবে না।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ পাল (Aniruddha Pal) বলেন, “এখন মৌসুমী অক্ষরেখা সক্রিয় থাকার ফলে বৃষ্টির ধারা কিছুদিন চলবে। এটি একেবারে স্বাভাবিক বর্ষার আচরণ। যদিও নিম্নচাপ সরে গিয়েছে, কিন্তু বর্ষা তার নিজের গতিতেই চলবে আগামী সপ্তাহজুড়ে।” সাম্প্রতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কৃষকদের পক্ষেও একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চলের কৃষকদের বীজ রোপণের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে বলা হয়েছে। বর্ধমানের (Burdwan) এক কৃষক বিকাশ মাজি (Bikash Maji) বলেন, “আমরা বীজ ছড়াতে চাইছিলাম, কিন্তু এই বৃষ্টিতে জমি একেবারে কাদা হয়ে গিয়েছে। এখন আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।”
মৌসুমী বৃষ্টির এই দাপট সাধারণ জনজীবনে যেমন অসুবিধা তৈরি করছে, তেমনই প্রকৃতির নিয়ম মেনে তা আবার বহু ক্ষেত্রেই স্বস্তির বার্তা আনছে। শস্যের জমি যেমন জলের অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, এখন সেখানে প্রাণ ফিরে আসছে। বর্ষার এই খেলা আপাতত চলবে শহরে, গ্রামে, পাহাড়ে, সমতলে। আর আবহাওয়া দফতরের পরামর্শ সবাই থাকুন সতর্ক, নিরাপদে থাকুন।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Kalimpong – Sikkim | বৃষ্টির দাপটে বিপর্যস্ত পাহাড়পথ, থমকে গেল কালিম্পং-সিকিম যোগাযোগ
