



পৃথ্বীশ দত্ত মূলত গল্পকার। কিন্তু গল্পের পাশাপাশি কবিতাও লেখেন। পেশাগত ভাবে ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের অধীনে শিক্ষা দপ্তরে কর্মরত। নেশা, নীরবে লিখে যাওয়া। ওঁর প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ”চাঁদের উল্টো পিঠে’ ও কবিতাগ্রন্থ ‘কবির অকবিতা’। এছাড়াও অনেক যৌথ-সংকলনে লিখেছেন। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির কবিতা গুচ্ছ।
পৃ থ্বী শ দ ত্ত
কৃষাণ
রসুই ঘরের চাল ফুঁড়ে ধোঁয়া উঠছে দেখলেই
একদা ক্ষুধা কোকিয়ে উঠত,
গৃহস্থ কৃষকের ভাদ্র জঠরে।
বউ তার ব্যঞ্জনের মত মাধুর্য মুখে
মুখিয়ে থাকত এক পিণ্ডি ভাতের পাহাড়ে,
সেই গ্রাম আর গ্রাম নেই !
যন্ত্র সভ্যতার অভব্য আচরণ
গিলে খেয়েছে ক্লান্ত কৃষকের উল্লাস,
কৃষকের ছেলেও এখন বৃষ দেখতে যায়-
চিড়িয়াখানায়।
স্তোত্র চলে অন্তর গগনে-
“জয় জোয়ান জয় কৃষাণ”।
স্কুলব্যাগ
একঝাঁক পিট্টু দুরন্ত গতিতে
দীর্ঘশ্বাসে ছুটে চলেছে স্কুলের দিকে,
স্কুল ব্যাগ ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠে,
তারপর চড়ে বসে শিশুদের পিঠে।
স্তুতিঘাতে ছুটে শৈশব ছুটে…
দূরে, বহুদূরে আলাদিনেশ্বর
তার কাছে যাবে চিরাগকুড়োনি
পিঠব্যাগ তাই স্বপ্নের চেয়ে ভারি।
সেলফোন
সারা পৃথিবীটাকে করতলে রেখে,
গলিত সময়ের গায়ে
ঢেউ তুলে অনায়াসে নিজেকে
ভাসান দেওয়া যায়,
পৃথিবীটা ভেসে ভেসে ঠুক্কর খায়
অ্যাপসের প্রলুব্ধ শরীরে !
ধ্যানমগ্ন মানুষেরা ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করে
হাতের মুঠোয়,
শুধু স্বজনের মুখটাই ধোঁয়াশার মত লাগে!
খাতা
নিজের পয়সায় কেনা খাতা
খোলা বুক প্রসারিত করে ডাকে,
আমি মূর্খ কামুক,
তার গায়ে এঁকে যাই
উষ্ণতার তীব্র আঁচড়,
তার অবসাদ আর বিষন্নতাকে
আমন্ত্রণ ভেবে-
আরও বিধ্বস্ত করে
পরের পৃষ্ঠায় গিয়ে পুনরায়,
পুনরায় একই খেলা !
এই ভাবে এক একটা সাদা পৃষ্ঠাকে
বেশ্যার মত উচ্ছ্বিষ্ট করে
ছুঁড়ে ফেলে দেই পৌরুষ প্রবর,
যেহেতু খাতাটি আমারই পয়সায় কেনা।
ধ্যান ভঙ্গ
আমার চারপাশে লাস্যময়ী উর্বশীর
বিচিত্র ছলনার কলা,
প্রতিনিয়ত ধ্যান ভেঙে ভেঙে যায়,
প্রতিনয়ত টেনে হিঁচড়ে
আমার থেকে আমাকেই দূরে সরিয়ে দেয়,
তবু বার বার আমি ধ্যানস্থ হই
কলাসুন্দর উর্বশীর মোহে –
নাকি আমার সংকল্পের নিষ্ঠায়,
এখন সেসব আর বোধগম্য নয় ।
পাটীগণিত
জীবন মানেই পাটীগণিতের বাহন,
সে ঐকিক নিয়ে ঐকান্তিক ভাবনায় ডুবে গিয়ে,
ভাবে,
শতকরা হিসাবে জীবনমানের বৈষয়িক অংক।
হাতের সংখ্যা অংকের সাথে যোগ হয়ে গিয়ে-
জীবনের সব পাটীগণিতে ফলাফল একই দাঁড়ায়,
শূন্য।
প্রবচনধারী
মৃত্যুর পরেও লাভবান হওয়া যায়
নিশ্চিত গ্যারান্টি পেয়ে মানুষই একমাত্র
লাভের রাবের পেছনে দুরন্ত ছুটে!
মৃত্যুর অমৃত কথনে সে মোহিত করে
দ্বি-গুণ ত্রি-গুণ শতগুণী বাক্যফলায় বিঁধে আনে
এক একটা লাভ-লোভী মানুষকে!
মৃত্যু কোনও পরাজয় নয়,
মৃত্যু মানে সমাপ্তি নয়!
অমৃত্যু প্রবচনে প্রলুব্ধ মানুষ
লাভের লালায় আপাদমস্তক জড়িয়ে গিয়ে
শেষতম খাদের পাশে দাঁড়িয়ে,
বীমা কোম্পানীর ছেলেটিকে মনে হয় সন্ত্ মহারাজ !
অন্তিম আশ্রয়।
বাঁধন
সবকিছু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে,
আশা ভরসার ঝকঝকে জামা-
স্বজনের প্রীতি ভাষ্য
গার্হস্থ্যের মরমি অসুখ
পথ হেঁটে হেঁটে ক্লান্তির হিসাব
অনাগত পথের রহস্য দ্যোতনা,
সবকিছু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে
নিতান্ত নিরেট একাকীত্ব চেয়েছি,
তবু বার বার রিনি এসে ভেঙে দিল
ধ্যান ও নির্জনতা।
রিগিং
প্রতিশোধ স্পীহা
বউরা শাশুড়ি হলে
রক্ষিত হয় এক পরম্পরা!
বউয়েরা লালিত করে স্বপ্ন
পুত্রবধূর প্রত্যশা,
তারপর শাশুড়িকালীন প্রমোশনে
অতীতের যাবতীয়
ক্ষোভ ও ক্ষুধার গুপ্ত নখর
বউরাই ব্যবহার করে করে
হয়ে ওঠে শাশুড়ি নামক ইতিহাস!
এই ভাবে রক্ষিত হয়
সভ্যতার অসভ্য রিগিং!
পতাকাবাহী প্রাণী
কিছু মানুষ প্রতিদিন মরে যায়,
প্রতিদিন তারা জন্মও নেয়!
রবীন্দ্ররচনাবলী না জেনেও
বেঁচে থাকা যায়,
তারা জানে না-
শিশু দিবসের মাহাত্ম্য কথন,
সহস্র শিশুর পিতাকে হৃদয়ে ধারণ করে
উড্ডীন রাখতে চায়-
উত্তর-প্রজন্মের স্বপ্নময় পতাকা।
তবু প্রতিদিন মরে যাবে বলে
মানুষ জন্মায় না!
মন্থনের গরল পান করে যারা
সুধাভাণ্ড রেখে যায়
অমরত্বলোভীদের মিনারে গম্ভুজে,
আজও তারাই গণতন্ত্রের ধ্বজা ধরে
আকাশকে সাক্ষী রেখে!
অথচ তারা বুঝতে পারে না
দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কোনও পতাকা
কোনও কালেই আকাশে উড়েনি।
উড়ে না।
🍁সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও দিতে পারেন স্বরচিত স্থানীয় সংবাদ, ফিচার, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, উপন্যাস … ★ ই-মেল : sasrayanews@gmail.com
